#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৪(ধামাকাদার পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সোহিনীকে টানতে টানতে ডিএনএ টেস্ট করাতে নিয়ে আসে শাহনওয়াজ। সোহিনী রাগী স্বরে বলে,
“আপনি কিন্তু এবার সব সীমা অতিক্রম করে ফেলছেন! আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে এভাবে নিয়ে আসার? আপনি জানেন আমি এখন এর প্রতিশোধ আপনার থেকে কিভাবে নিতে পারি?”
“কি করবে করবে..আমি সেসবের মোটেই পরোয়া করি না। আমি মানবো না…,আমি করাবো না কোন ডিএনএ টেস্ট।”
সোহিনীর কথা শুনে এবার শাহনওয়াজের মাথায় ভীষণ রাগ উঠে যায়। শাহনওয়াজ নিজের রাগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সোহিনীর গালে। সোহিনী পুরো অবাক হয়ে যায়। সে রাগী স্বরে বলে,
“হাউ ডেয়ার ইউ..”
“আমার সাহসের এখনো কিছুই তুমি দেখো নি। চুপচাপ ডিএনএ টেস্ট করে নাও নাহলে…”
সোহিনী কিছু বলবে তার আগেই আকবর এসে সোহিনীর সামনে কাতর স্বরে বলে,
“স্যারের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে উনি রাগের মাথায়..আর তাছাড়া ডিএনএ টেস্ট তো আপনি চাইলে করাতে পারেন। আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি।”
“এসব অনুরোধের ধার আমি ধারি না। তোমার স্যারের সাহস কিভাবে হলো আমায় থাপ্পড় মারার? আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমাকে থাপ্পড় মারার ফল কি হতে পারে সেটা এবার আমি বুঝিয়ে দেব। সে উনি যতো বড়োই মাফিয়া হোন আর ওনার যতই ক্ষমতা থাকুক। আমিও এই শহরের একজন স্বনামধন্য ডাক্তার..”
বলেই সোহিনী ফোসফাস করতে থাকে। তবে আকবর অনুনয় বিনয় করা অব্যাহত রাখে।আকবরের করুণ অনুরোধে সোহিনী একবার থামল। তার রাগী চোখগুলো একবার আকবর এবং আরেকবার শাহনওয়াজের দিকে ঘুরল। আকবর আবার বিনয়ের সঙ্গে বলল,
“ম্যাডাম, একবার শুধু স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। উনি সত্যিই খুব ভেঙে পড়েছেন। উনি আপনাকে তানহা ম্যাম ভাবছেন। আপনার প্রতি উনার এই আচরণ তানহার জন্যই। আপনার কাছে অনুরোধ, শুধু একবার এই পরীক্ষাটা করিয়ে নিন। আপনি যদি সত্যিই তানহা ম্যাম না হন, তাহলে এই পরীক্ষাটা আপনার জন্য একটা সুযোগ। এটা প্রমাণিত হলে তো স্যার আপনাকে আর বিরক্ত করবে না।”
সোহিনী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আকবরের কথায় যেন কিছুটা যুক্তি খুঁজে পেল। তার মনে হলো, এই পরীক্ষাটা করিয়ে নিলে শাহনওয়াজের ভুল ধারণা ভেঙে যাবে, আর সেও প্রমাণ করতে পারবে যে সে তানহা নয়। তারপর সে ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“ঠিক আছে। আমি এই টেস্ট করাব। কিন্তু একটা শর্তে।”
শাহনওয়াজ এতক্ষণ চুপ করে ছিল। সে এবার এগিয়ে এসে বলল,
“শর্ত? কীসের শর্ত? আমি তোমার কোনো শর্ত মানতে বাধ্য নই।”
সোহিনী তার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল, “আপনি বাধ্য নন, কিন্তু আপনার ভুল ভাঙতে হলে আমার শর্ত মানতেই হবে।”
তারপর সে আকবরের দিকে তাকিয়ে বলল, “শর্তটা হলো, এই ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসার পর যদি প্রমাণিত হয় যে আমি তানহা নই, তাহলে তোমার স্যার আমার কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবেন, এবং আমার সম্মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ দেবেন। আর উনি আমাকে কখনোই আর কোনোভাবে বিরক্ত করবেন না।”
আকবর মাথা নেড়ে বলল,
“আমি আপনার শর্ত স্যারকে বুঝিয়ে বলব।”
শাহনওয়াজ এবার দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“আমি তোমার শর্ত মানতে রাজি। যদি রিপোর্ট প্রমাণ করে তুমি তানহা নও, আমি তোমার সব শর্ত মেনে নেব। কিন্তু যদি তুমি তানহা হও…”
”আমি তানহা নই।”
সোহিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল।
শাহনওয়াজ আর কথা বাড়াল না। সে আকবরকে ইশারা করল। আকবর সোহিনীকে ডিএনএ টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে গেল। নমুনা সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন সোহিনীর মুখে ছিল একরাশ বিরক্তি আর অপমানবোধ। তার মনে হচ্ছিল, এই মাফিয়া ডন তাকে তুচ্ছ মনে করছে, তার ব্যক্তিত্বকে অপমান করছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করল, এই রিপোর্ট আসার পর শাহনওয়াজকে এমন শিক্ষা দেবে যা সে কোনোদিন ভুলবে না।
দু’দিন পর ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট হাতে এল। আকবর রিপোর্ট নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে শাহনওয়াজের সামনে দাঁড়াল। শাহনওয়াজ অস্থির হয়ে বলল,
“কী রিপোর্ট এসেছে? সোহিনীই কি তানহা?”
আকবর হতাশ হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না স্যার। রিপোর্ট বলছে… সোহিনী ম্যাডাম তানহা ম্যাম নন। ডিএনএ মেলেনি।”
শাহনওয়াজের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল। তার সারা শরীর কাঁপতে শুরু করল। তার চোখের সামনে তানহার মুখ ভেসে উঠল। তার এত দিনের বিশ্বাস, এত দিনের চেষ্টা, সব মিথ্যে হয়ে গেল? তানহা তাহলে কোথায়? সে কি সত্যিই বেঁচে নেই?
শাহনওয়াজের চোখে জল চিকচিক করে উঠল। সে আকবরকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি নিশ্চিত? রিপোর্ট কি সত্যি বলছে?”
আকবর রিপোর্টটা শাহনওয়াজের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি ল্যাবের সাথে কথা বলেছি স্যার। রিপোর্ট শতভাগ সঠিক। তাদের কোনো ভুল নেই।”
শাহনওয়াজ রিপোর্টটা নিয়ে নিজের হাতে দেখল। প্রতিটি অক্ষর যেন তার বুকে শেল বিঁধিয়ে দিচ্ছে। সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এই মেয়েটি তানহা নয়, অথচ তার চালচলন, কথা বলার ধরণ, এমনকি তার চোখেও তানহার ছায়া দেখতে পাচ্ছিল। তাহলে এত মিল কেন? এটা কি শুধু কাকতালীয়? না কি সে সত্যিই এত বড় ভুল করেছে?
শাহনওয়াজ ধীরে ধীরে চেয়ারে বসে পড়ল। তার মাথাটা ঝুঁকে পড়ল। আকবর তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“স্যার, আপনি ভেঙে পড়বেন না।”
”আমি কি করে এত বড় ভুল করলাম আকবর? তানহাকে চিনতে কি আমার এত বড় ভুল হতে পারে?”
শাহনওয়াজের গলায় অনুশোচনা আর হতাশা মিশে ছিল।
এদিকে সোহিনী তার ক্লিনিকে বসে অপেক্ষা করছিল। ডিএনএ রিপোর্টের কথা তার মনে পড়তেই তার মুখে এক বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল। সে জানত রিপোর্ট তার পক্ষেই আসবে। এবার সে শাহনওয়াজকে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করবে। সে ফোনটা হাতে নিয়ে আকবরকে ফোন করল। আকবর ফোন তুলতেই সোহিনী ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“রিপোর্ট কি এসেছে? আমি জানি রিপোর্ট আমার পক্ষেই এসেছে। এবার তোমার স্যারকে আমার সাথে কথা বলতে বলো। তাকে তার প্রতিজ্ঞা মনে করিয়ে দাও।”
আকবর দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে শাহনওয়াজের দিকে তাকাল। শাহনওয়াজ তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। আকবর ফোনটা শাহনওয়াজের দিকে বাড়িয়ে দিল। শাহনওয়াজ কোনো কথা না বলে ফোনটা ধরল।
”হুম।”
”কী হলো? আপনার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না কেন? রিপোর্ট হাতে পেয়ে মুখটা কি বন্ধ হয়ে গেল? মনে নেই আপনার প্রতিজ্ঞা? আপনি প্রকাশ্যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। আমি এই শহরের একজন স্বনামধন্য ডাক্তার। আপনার এই কাজের জন্য আমার সম্মানহানি হয়েছে।”
শাহনওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি জানি। আমি আমার প্রতিজ্ঞা রেখেছি। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইব। আর ক্ষতিপূরণও দেব। আমি সব কিছু মেনে নিচ্ছি।”
সোহিনী অবাক হলো। সে ভেবেছিল শাহনওয়াজ সহজে মেনে নেবে না, আরও কিছু ঝামেলা করবে। কিন্তু সে শান্তভাবে সব মেনে নিল। এরপরে সোহিনী কী বলবে, তা যেন খুঁজে পেল না।
ফোনটা রেখে দিতেই তানহার ফোনে আবার কল এলো। ফোনের স্ক্রিনে আফনান সিদ্দিকী নামটা জ্বলজ্বল করছে। সোহিনী ফোনটা রিসিভ করতেই আফনান সিদ্দিকী বলে ওঠে,
“তো ডাঃ সোহিনী..সরি মিস তানহা..কি নামে ডাকব আপনাকে?”
“আমায় সোহিনী নামেই ডাকুন…তবে ডাক্তার সোহিনী নয় ক্রাইম ব্যাঞ্চের স্পেশাল অফিসার সোহিনী..”
“তাহলে তানহা কে?”
“যে তানহা সেই তো সোহিনী…”
বলেই দুজনে সমস্বরে হেসে ওঠে। আফনান সিদ্দিকী বলে,
“ডিএনএ রিপোর্ট এসেছে?”
“হুম, সেটা দেখে ঐ মাফিয়া ভালোই ঘোল খেয়েছে।”
“বাহ, তুমি তো পাক্কা অভিনয় করেছ।”
“সেটা তো একদম শুরু থেকেই করছি..তানহা নামের কারো তো অস্তিত্বই ছিল না দুনিয়ায়….তানহা সেজেই তো যা ঘোল খাওয়ানোর আমি খাইয়ে দিয়েছি।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨