#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
তানহাকে বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে৷ কিন্তু তার মনে নানানো চিন্তা বাসা বাঁধছে। তার পাশেই বসে আছেন মর্জিনা বেগম৷ তানহাকে এত দামী শাড়ি ও গহনায় সাজতে দেখে তার চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে।
আচমকা তানহা উঠে দাঁড়ায়। মর্জিনা বেগম তানহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
“কি হলো তানহা? এভাবে উঠে দাড়ালি কেন?”
“আমার মনটা কেমন জানি করছে আম্মু। বিয়ের দিন উনি কিভাবে বেরিয়ে গেলেন। উনি ঠিক সময় মতোন আসবেন তো?”
“আরে এত চিন্তা করিস না৷ কোন জরুরি কাজ পড়ে গেছে বোধহয় সেজন্যই গেছে। চলে আসবে আবার।”
“আমার কেন জানি খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।”
“এত দুশ্চিন্তা করে তো কোন লাভ নেই। তার থেকে তুই একটু নিশ্চিন্তে থাক তো। সঠিক সময় ও চলে আসবে। এসব বড়লোক মানুষের জীবন এমনই।”
এরইমধ্যে তানহাকে আবারো বসতে বলে পার্লার থেকে আসা মেয়েরা। কারণ তার সাজ এখনো শেষ হয়নি৷ তানহা চুপচাপ বসে পড়ে। তবে তার মনের খচখচানি তখনো দূর হয়নি। খচখচ ভাব তখনো বজায় ছিল। তানহার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে তার ফোনটা বেজে ওঠে। তানহা ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে শাহনওয়াজ বলে ওঠে,
“তোমার বিয়ের সাজ কমপ্লিট?”
তানহা বিষন্ন মনে বলে,
“হুম। কিন্তু আপনি কখন আসবেন?”
“আমি খুব শীঘ্রই আসছি। আমার জন্য একটু অপেক্ষা করো।”
তানহার মন খুশিতে ভড়ে ওঠে। একটু পরই তানহা নিচে নেমে আসে। নিচে বিয়ে উপলক্ষ্য নাচ-গানের আয়োজন চলছিল। মিহি, মর্জিনাসহ আরো অনেক অতিথি এসেছিল তারা সেখানে আনন্দ করছিল। তানহার এসব দেখে ভীষণ ভালো লাগে। সে মনে মনে বলে,
“আমার জীবনে এত সুখ ছিল আমি সেটা ভাবতেও পারি নি। এই সুখে যেন কখনো কারো নজর না লাগে।”
এভাবে সময় এগিয়ে যেতে থাকে। ঘড়ির কাটায় সময় এগোতে থাকে। এক ঘন্টা, দু ঘন্টা করে সময় বেড়ে যায়। রাত যত গভীর হচ্ছিল তানহার চিন্তা তত বাড়ছিল। এখনো শাহনওয়াজের আসার কোন খবর নেই। অনেক অতিথি ইতিমধ্যে বিয়ে হবে না ভেবে স্থানত্যাগ করেছে। অনেকেই কানাঘুষা করছিল। মর্জিনা বেগম তানহার কাছে এসে বলে,
“এসব কি হচ্ছে তানহা? তোর হবু বর কোথায়? আদৌ বিয়েটা হবে তো? সে তো বলেছিল শীঘ্রই আসবে করিব তার তো আসার কোন খবর নেই। ফোনেও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।”
তানহা বলে ওঠে,
“আমার বিশ্বাস, উনি আসবেনই। আসতে ওনাকে হবেই।”
এরমধ্যে তানহার ফোন বেজে ওঠে। তানহা ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে ওঠে,
“যদি নিজের হবু স্বামীর আসল চেহারা দেখতে চাও তাহলে এখনই চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে অবস্থিত নতুন শিপিং সেন্টারে চলে এসো।”
তানহা অবাক হয়ে যায় এই কল পেয়ে। বলে ওঠে,
“মানে কি এসবের?”
মিহি তানহার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
“কি হয়েছে আপু?”
তানহা মিহিকে সব খুলে বলে৷ মিহি সব শুনে বলে,
“তোর এখনই যাওয়া উচিৎ। যাকে বিয়ে করতে চলেছিস সে মানুষ হিসেবে কেমন সেটা তো তোকে জানতে হবে। নাহলে বিয়ের পর যদি কোন সমস্যায় পড়িস তখন? তাছাড়া দেখ, তোকে কথা দিয়েও উনি এখনো বিয়েতে উপস্থিত হন নি।”
তানহা বলে,
“আমার শাহনওয়াজ সিদ্দিকীর উপর ভরসা আছে। আমি জানি, উনি খারাপ মানুষ নন। উনি আমায় বলেছেন,কারো কথায় ওনাকে সন্দেহ না করতে কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করতে।”
“কিন্তু তুই তো ওনাকেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করছিস। যখন একজন তোকে কল করে এমন কথা বলেছে তখন তোর একবার যাওয়া উচিৎ ”
“কিন্তু আমি একা যাব? যদি কোন বিপদ হয়?”
“ঠিক আছে, তোকে একা যেতে হবে না। আমিও যাব তোর সাথে।”
“আচ্ছা, চল।”
তানহা বের হতে নেবে এমন সময় শাহনওয়াজের ঠিক করে রাখা কিছু গার্ডস এগিয়ে এসে বলে,
“কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম? স্যার আপনাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছে।”
তানহা বলে,
“আমায় যেতে দিন। আমার জরুরি কাজ আছে।”
তারা আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় মিহি বলে ওঠে,
“যদি তোমরা আরো বাহাদুরি করো তাহলে কিন্তু মিস্টার শাহনওয়াজ সিদ্দিকীকে বলে তোমাদের সবাইকে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হবে।”
গার্ডসরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
★★
তানহা মিহির সাথে শিপিং সেন্টারে চলে আসে। তানহা মিহিকে বলে,
“এখানে তো কিছুই দেখতে পারছি না। তাহলে কি আমাকে বোকা বানানো হলো? আমি আগেই ভেবেছিলাম যে, শাহনওয়াজ লোকটা খারাপ নন।”
এমন সময় চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ পাওয়া যায় একটা কন্টেইনারের ভেতর। মিহি তানহাকে বলে,
“চল তো ওখানে গিয়ে দেখি।”
তানহা ও মিহি সেদিকে এগিয়ে যায়। সেখানে যেতেই দুজনের চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম হয়। কারণ বাইরে থেকে তারা দেখতে পারে শাহনওয়াজ সিদ্দিকী কন্টেইনারের ভেতর থাকা চারজন মানুষের সামনে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ ৪ জন ব্যক্তি বারবার তার কাছে নিজেদের প্রাণভিক্ষা চাচ্ছে কিন্তু শাহনওয়াজের চোখে বিন্দুমাত্র দয়া নেই। তার চোখে ভয়ংকর ক্ষোভ। চোখের পলকে সে ধারালো অস্ত্রটা দিয়ে একজনের গলায় কোপ বসায়। তার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায়। চারিদিক রক্তে ভেসে যায়। এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে তানহা চিৎকার করতে নেবে এমন সময় মিহি তার মুখ চেপে ধরে বলে,
“কি করছিস আপু। যদি শুনে ফেলে তোকেও এভাবে শেষ করে দেবে।”
বলেই সে তানহাকে টানতে টানতে দূরে নিয়ে আসে। তানহা এদিকে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“কি ছিল এটা? উনি এটা কিভাবে করতে পারলেন? ঐ নীরিহ মানুষদের এভাবে মারলেন। ওনারা নিজের প্রাণভিক্ষা চাচ্ছিলেন।”
মিহি বলে,
‘আমার তো ভীষণ খারাপ লাগছে আপু। সবার ঘরে নিশ্চয়ই বউ বাচ্চা ছিল৷ ওনারা হয়তো অপেক্ষা করে আছে আর..’
তানহা কেদে ফেলে।
“উনি এতটা জঘন্য হবেন আমি ভাবতে পারি নি৷ ভাগ্যিস সবটা এখন আমার সামনে চলে এসেছে। নাহলে এই জঘন্য মানুষটাকে আমায় বিয়ে করতে হতো।”
“কিন্তু তোকে কে সাবধান করল আপু? কে তোর ঐ শুভাকাঙ্ক্ষী?”
এমন সময় একজন পুরুষ এগিয়ে এসে বলে,
“আমি!”
তানহা সেদিকে তাকিয়ে আফনান সিদ্দিকীকে দেখে বলে ওঠে,
“আপনি?”
“হ্যাঁ, আমি। সেদিনও আমি আপনাকে এভাবে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি বুঝতে পারেন নি। তাই আজ আবার সতর্ক করতে চলে এলাম। আমি মুখে বললে বিশ্বাস করতেন না তাই লাইভ দেখালাম। এটাই হলো শাহনওয়াজ সিদ্দিকীর আসল রূপ। উনি কতোটা ভয়াবহ মানুষ আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার বাবা..যিনি ওকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছেন, এত বড় সাম্রাজ্যের মালিক করেছেন তার মৃত্যুর পরও আমায় দেখতে দেয়নি ও জানেন। এতটা জঘন্য ও। প্রতিদিন নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করে এভাবে, চাদাবাজি করে, কত নারীকে ধ*।।”
তানহা নিজের কানে হাত দিয়ে বলে,
“চুপ করুন। আমি আর শুনতে চাই না।”
আফনান সিদ্দিকী বলে,
“এটাই সত্য। আপনাকে বিয়ে করার পেছনেও নিশ্চয়ই ওনার কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্য আছে। আপনি যদি নিজের ভালো চান তাহলে…চলে যান অনেক দূরে কোথাও। এত জঘন্য কাউকে বিয়ে করবেন না।”
“কোথায় যাব আমি?”
“এই চট্টগ্রাম থেকে অন্তত দূরে কোথাও যান। তাহলে শাহনওয়াজ সহজে আপনার নাগাল পাবে না।”
“কিন্তু কিভাবে?”
মিহি বলে,
“আপু আমি কোন ব্যবস্থা করে দিচ্ছি চল।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨