#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪৮
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
সকাল সকাল সবাই উঠে পড়েছে। ডিসেম্বর মাস শীতের সময়। আদ্রিতার উঠার কোনো ইচ্ছেই হচ্ছে না। তাও বাধ্য হয়ে উঠলো আজ সামিরার বিয়ে বলে কথা। কিন্তু আদ্রিতা ঘুম থেকে উঠে কিছুটা অবাক হলো
যতদূর মনে আছে আমি নিচেই বসে ছিলাম তাহলে বিছানায় আসলাম কিভাবে?মনে হয় বিছানায় পরে শুয়ে পড়েছিলাম কিন্তু এখন মনে নেই। ( আদ্রিতা কথাগুলো মনে মনে ভাবতে বিছানা থেকে উঠলো)
কালকে রাতে আদ্রিতার বাবার কথা মনে পড়তে আদ্রিতার উপর মনে হচ্ছে যেনো কালো ছায়া নেমে এসেছে। পরে মনে পড়লো সাজ্জাদ ত আজকে অন্য কারো হয়ে যাবে। তাহলে আদ্রিতার অন্য কোথাও বিয়ে করতে দোষ কি? হ্যাঁ আদ্রিতা ও বিয়ে করে নিবে।। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আদ্রিতা ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসলো
তাড়াতাড়ি হালকা রেডি হয়ে নে কিছুক্ষণ পর পার্লারে যেতো হবে ( মুন)
আচ্ছা আপু ( আদ্রিতা)
বাড়ির মেয়েরা তৈরি পার্লারে যাওয়ার জন্য। সকলে পার্লারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
আপু একটু ভালো করে সাজিয়ে দিন ত আমার ছোট বোনটাকে ( মুন পার্লারের আপুর উদ্দেশ্য বললো)
সামিরাকে সাজানো শুরু করলো। তখন পার্লারের আপুর কাছে একটা কল আসলো। জয়া ( পার্লােরের আপুর নাম) কল পেয়ে কিছুটা অবাক হলো। জয়া সামিরাকে সাজানোর মধ্যে মধ্যে মুনের সাথে অনেক গল্প করছে।
আপু আপনি কি কনের আপন বোন? ( জয়া)
না আমি ওর কাজিন ( মুন)
ও ওর আপন কোনো বোন নেই? ( জয়া)
এইযে ও হচ্ছে কনের আপন বোন। আদ্রিতাকে দেখিয়ে মুন কথাটি বললো।
কনের আপন বোন হয়ে এতো চুপচাপ বসে আসো যে?
( জয়া)
ও এমনই নতুন জায়গায় গেলে একদম চুপচাপ ( মুন)
তোমরা সাজবে না? ( জয়া)
না বাবা এখন আমি এই ভারি সাজের মধ্যে নাই। বাসায় যেয়ে অনেক কাজ করতে হবে। বুঝোই ত মেয়ে মানুষের বিয়ের সময় কতো কাজ করতে হয়। ( জয়া)
তাহলে কনের বোন সাজবে না? ( জয়া)
হ্যাঁ, ওকে সাজিয়ে দিন এমনি ও ঘরের কোনো কাজ করে না।( মুন)
না আপু আমি সাজবো না। ( আদ্রিতা)
না কনের বোন নাকি সাজবে না এইটা কোনো কথা নাকি? ( জয়া)
কিন্তু.. ( আদ্রিতা)
জয়া আদ্রিতার কোনো কথা শুনলো না সামিরাকে সাজানোর পর আদ্রিতাকে জোর করে সাজিয়ে দিলো।
আদ্রিতা খেয়াল করে দেখলো না মন্দ লাগছে না। খুব বেশি সাজিয়েছে এমনটা নয়। কিন্তু অসাধারণ লাগছে।
মনে ত হচ্ছে আমার ২ বোনেরই বিয়ে। ( মুন)
জয়া হেঁসে উঠলো হ্যাঁ আপু এমনই লাগছে। মুন ওদের বড় খালামনিকে কল দিলো। ওদের বড় খালামনি আসলো। সবাই সেন্টারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। এদিকে জয়া কাউকে কল দিয়ে বললো, ভাইয়া আপনার কাজ হয়ে গেছে কনের ছোট বোনকে ব্রাইডাল সাজ দিয়ে দিয়েছে।
গুড ঠিক সময় তোমার পেমেন্ট পেয়ে যাবে। ( ফোনে থাকক ব্যক্তি)
আচ্ছা ভাইয়া ( জয়া)
অপর পাশের লোকটি ফোন কেটে দিলো। হ্যাঁ জয়াকে কেউ কল দিয়ে বলেছিলো যেনো আদ্রিতাকে সাজিয়ে দেয়। এ জন্য ভালো পরিমাণ টাকা জয়াকে দিবে। তাই জয়া সাজিয়ে দিয়েছে।
*****
দুরররর বিয়ের দিন কে কাজ করতে আসে? ( স্বাধীন)
সাজ্জাদ কাজ থেকে একবার চোখ তুলে তাকালো। কড়া গলায় স্বাধীনকে বলরো, বুঝতে পারছিছ াজকে S.R দেশে ফিরবে। কতটা রিস্ক আমি সিউর আমার বিয়েতে S.R ঠিকই আসবে। (সাজ্জাদ)
সেন্টারের পাশে গার্ডের ব্যবস্থা কর( স্বাধীন)
গার্ডের ব্যবস্থা ত আগেই করেছি। ( সাজ্জাদ)
তাহলে এতো চিন্তা করিছ না। যা হবে ভালোই হবে। কিন্তু আজকে বিয়ের মঞ্চে কি নাটক হয তা বুঝতে পারছি না। ( স্বাধীন)
হুম বাবা আর আংকেলকে সব বুঝিয়ে বলে এসেছি। তাও দেখি কি হয়।, ( সাজ্জাদ)
হুম কিছুক্ষণ পরই বোঝা যাবে যে কি হবে। ( স্বাধীন)
সব থেকে ভয়ের বিষয় আদ্রিতার কালকে জন্মদিন ১৮ বছর পূর্ণ হবে। ( সাজ্জাদ)
সাজ্জাদের শেষ কথাটি শুনে স্বাধীন ও অসেক চিন্তায় পড়ে গেলো।
ওদের সেন্টারে আসার সময় প্রায় হয়ে এসেছে চল আমরা বেরিয়ে পড়ি ( সাজ্জাদ)
ওকে ( স্বাধীন)
সাজ্জাদ আর স্বাধীন সেন্টারে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
*******
আদ্রিতার বাড়ির প্রায় সবাই সেন্টারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেছে। কিছু সদস্য বাকি আদ্রিতার বাবা আদ্রিতার মা কে একটু রুমে আসতে বললো,
হ্যাঁ বলো কি বলবে? বাইরে এতো কাজ এর মধ্যে না ডাকলে চলছে না কি? ( আদ্রিতার মা)
শান্ত হয়ে একটু বসো আমার কিছু কথা আছে। ( আদ্রিতার বাবা)
আদ্রিতার মা বসলো তারপর বললো হ্যাঁ বলো কি কথা? ( আদ্রিতার মা)
তুমি আমাকে ভরসা করো ত?( আদ্রিতার বাবা)
হঠাৎ এমন কথা কেনো? অবশ্যই আমি তোমাকে ভরসা করি। হ্যাঁ গো সামিরার বিয়েতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
( আদ্রিতার মা)
না তেমন কোনো ব্যাপার না। ( আদ্রিতার বাবা)
তাহলে কি হয়েছে?বলো( আদ্রিতার মা)
আদ্রিতার বাবা সব খুলে বললো। আদ্রিতার মার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
এতো সব কাহিনি কবে হয়ে গেলো? ( আদ্রিতার মা)
অনেক আগেই ( আদ্রিতার বাবা)
এখন কি করবে? ( আদ্রিতার মা)
তোমাকে ত বললাম কি করবো আমরা ( আদ্রিতার বাবা)
আদ্রিতার মা আর কথা বাড়ালো না আদ্রিতার বাবার কাজে সম্মতি দিলো।
*****
সাজ্জাদের বাবা ও সাজ্জাদের মাকে সব খুলে বললো। সাজ্জাদের মা সব শুনে দ্বিধায় পড়ে গেলো। কিন্তু খুশি হয়েছে সাজ্জাদের মা যেটি চেয়েছিলেন সেটি পূর্ণ হবে।
******
সাজ্জাদের পরিবারের সবাই স্বাধীন সাজ্জাদ আর স্বাধীনের পরিবার ও এসেছে। আদ্রিতারা সেন্টারে পৌঁছে গেলো। আদ্রিতার পরিবারের সদস্যরাও এসে পড়েছে। বলতে গেলে প্রায়ই মেহমান এসে পড়েছে। সাজ্জাদ একবার ওদের দিকে তাকালো আদ্রিতাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। স্বাধীন পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বললো ব্রো তোমার শালিকার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থেকো না। ওই পাশে তাকিয়ে দেখো তোমার শালিকাকে বিয়ে করার জন্য আদ্র দাঁড়িয়ে আছে। সাজ্জাদ রাগী চোখে স্বাধীনের দিকে তাকালো। সামিরা স্টেজে বসলো। আদ্রিতা পাশেই বসেছে। সাজ্জাদ বন্ধুদের সাথে কথা বলছে ফাঁকে ফাঁকে আদ্রিতার দিকে তাকাচ্ছে। একে একে মানুষ এসে সামিরার সাথে কথা বলছে। এমন সময় আদ্র াসলো,
আপু এখন ত ভাবি বলতে পারি? ( আদ্র)
সামিরা হেঁসে বললো হ্যাঁ বলতে পারো।
আচ্ছা ভাবি ( আদ্র)
মিস বকবক কেমন আছো? ( আদ্র)
ভালো আপনি? ( আদ্রিতা)
বাহ এখন দেখি মিস বকবক বলাতে রাগ করো না। ( আদ্র)
আদ্রিতা হাসলো আর কিছু বললো না। আদ্র আর আদ্রিতা টুকটাক কথা বলে যাচ্ছে। সাজ্জাদ সব বিষয় খেয়াল করছে আর রেগে যাচ্ছে। সেন্টারে আসার পর থেকে একবার ও আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে তাকায় নি।আদ্রিতান বাবা স্টেজে উঠলো হাতে মাইক নিয়ে বললো,
Attention please
সবাই আদ্রিতার বাবার দিকে তাকালো। আদ্রিতার বাবা বললো, একটি বিশেষ ঘোষণা আজকের এই আনন্দের দিনে আমি আমার ছোট মেয়ের বিয়ে ও দিতে চাই একই মঞ্চে।
কথাটি শুনে সবাই চমকে উঠলো। আদ্রিতার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। আদ্রিতার বাবা আদ্রিতার বিয়ে আজকেই দিতে চাইবে তা আদ্রিতা ভাবতে পারে নি….
#চলবে
#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪৯
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
আলো তানহা আবির সেন্টার প্রবেশ করে শুনতে পেলো আজকে আদ্রিতার ও বিয়ে। সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো।
বাবা তুমি কি বলছো? আজকে আদুরির বিয়ে মানে? ( সামিরা)
মা একটু শান্ত থাক আমি বলছি সব ( আদ্রিতার বাবা)
বাবা আমি তোমাকে বলছিলাম আমার কোনো পছন্দ নেই তার মানে এইনয় যে তুমি আজকেই আমার বিয়ে দিবে ( আদ্রিতা)
মা একটু শান্ত থাক আমি বলছি ( আদ্রিতার বাবা)
আদ্রিতার বাবা আবার মাইক নিয়ে সবার উদ্দেশ্য বললেন,
আপনার নিশ্চয়ই বিয়ের কার্ডে পাএ এবং পাএীর জায়গায় দেখেছেন ২ জোড়া পাখির ছবি আঁকা। আর আমি বলেছিলাম বিয়ের দিনই আমার মেয়ের জামাইের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। আমার বড় মেয়ের হাসবেন্ড হচ্ছে স্বাধীন চৌধুরী। আর আমার ছোট মেয়ের হাসবেন্ড হচ্ছে সাজ্জাদ হোসেন। কথাটি শুনে সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো। একজন বলে উঠলো আমরা যে সামিরা আপুর জন্য সাজ্জাদ ভাইয়াকে হলুদ দিয়ে আসলাম?
এইটাই টুইস্ট ছিলো বিয়ের একদম শেষ সীমায় এসে তোমরা জানতে পেরেছো কার সাথে কার বিয়ে হবে। আগে পর্যন্ত সবার জন্যই এটি সারপ্রাইজ ছিলো।( আদ্রিতার বাবা)
দি এই সব কি হচ্ছে? ( আদ্রিতা)
আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। ( সামিরা)
যদি তাদের ইচ্ছে এটি ছিলো তাহলে আমাদের আগে বললো না কেনো? (আদ্রিতা)
কিছুই বুঝতে পারছি না। ( সামিরা)
তোর সাথে এতোদিন সাজ্জাদের বিয়ের কথা হচ্ছিলো আর এখন এক মুহূর্তে সব বদলে গেলো কিভাবে? ( আদ্রিতা)
আদ্রিতা আর ও কিছু বলতে চেয়েছিলো সাজ্জাদ চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলো। আদ্রিতা চুপ হয়ে গেলো।কিন্তু মনে শত শত প্রশ্নের দেখা মিলছে ৷ এদিকে আদ্রর মন ভেঙে গেলো। তানহা আবির আলো আদ্রিতার কাছে আসলো
হ্যাঁ রে আদ্রিতা কি হচ্ছে এসব? ( আলো)
আমি নিজেই বুঝতে পারছি না তোকে আর কি বলবো। ( আদ্রিতা)
আমার আগেই মনে হয়েছিলো সাজ্জাদ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে ( তানহা)
তাহলে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারতো এতো নাটক কেনো করলো? ( আবির)
সেটাই প্রশ্ন একদম শেষ মুহূর্তে এসে সব বদলে দিলো। ( আলো)
সাজ্জাদের সাথে কথা বলা না পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারবো না ( আদ্রিতা)
সবাই আদ্রিতার কথায় সম্মতি প্রকাশ করলো।
শুভ কাজের আর দেড়ি করতে চাচ্ছি না। ( সাজ্জাদের বাবা)
স্বাধীনের মা বাবা ও একই কথা বললো। আদ্রিতা আর সাজ্জাদকে একসাথে আর স্বাধীন আর সামিরাকে একসাথে বসানো হলো। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। ৪টা মানুষ পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো। পূর্ণতা পেলো সবার ভালোবাসা। সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। আদ্রিতা আর সামিরার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। সবার দুপুরের খাবার খাওয়া শুরু হলো। আদ্রিতা, সাজ্জাদ, সাসিরা,স্বাধীন স্টেজে বসে আছে। একে একে মানুষ আসছে আর সাজ্জাদ আর স্বাধীন কথা বলছে।
মা এইসব কি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না (আদ্রিতা)
সাজ্জাদ তোকে পরে সব খুলে বলবে ( আদ্রিতার মা)
কেনো রে মা আমার ছেলেটাকে বুঝি তোর পছন্দ হয় নি? ( সাজ্জাদের মা)
না আন্টি তেমন কোনো ব্যাপার না কিন্তু… ( আদ্রিতা)
আন্টি কি রে? মা ডাকবি এখন থেকে ( সাজ্জাদের মা)
আদ্রিতা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। স্বাধীনের মা ও স্টেজে উঠে আসলো। সামিরার থুতনি ধরে সামিরার মুখ উঁচু করলো,
মাশাল্লাহ আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে। ( স্বাধীনের মা)
সামিরা মুচকি হাসলো। আজ সামিরার খুশির সীমা নেই। আদ্রিতা ও খুশি কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
*****
এতোক্ষণ খবর হযে গেছে যে আদ্রিতার বিয়ে হয়ে গেছে। S.R সব ভাংচুর করছে। কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।
তোদের বলেছিলাম সব ঠিক খবর দিতে তোরা থাকতে এমন কিভাবে হলো? (S.R)
বস আমরা ত ছিলাম কিন্তু তবু ও মেডামের বিয়ে কিভাবে হয়ে গেলো আমরা জানি না ( মিন্টু)
রাগে ঘরের টিভিটি ভেঙে ফেললো। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আর আজকে রাতের মধ্যে আদ্রিতাকে আমার কাছে চায়৷ (S.R)
কিন্তু বস মেডাম এখন সাজ্জাদ ওয়াইফ মেডামকে তুলে আনতে গেলে সাজ্জাদ হাত পা ভেঙে দিবে।( মিন্টু)
এইসব কোনো কথা বলবি না আদ্রিতাকে চায় মানে চায়। (S.R)
ওকে বস। (মিন্টু)
S.R এর লোকরা আদ্রিতাকে তুলে আনার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
******
তারপর বলো মিসেস সাজ্জাদ হয়ে কেমন লাগছে? ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা নিশ্চুপ।
রাগ করে আছো বুঝি? ( সাজ্জাদ)
এমন নাটক কেনো করলেন? ( আদ্রিতা)
এই নাটকটি ছাড়া আর উপায় ছিলো না। ( সাজ্জাদ)
কেনো? ( আদ্রিতা)
তুমি অনেক কিছু জানো না। তোমাকে সব বলবো। আমাদের প্রথম দিন দেখা হওয়া থেকে সব তোমাকে আমি বলবো। একটু সময় দেও। ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা নিরবে সম্মতি প্রকাশ করলো। আদ্র সাজ্জাদের কাছে আসলো,
এটা কি করলি ব্রো? আদ্রিতাকে আমি পছন্দ করতাম। ( আদ্র)
আমার পিচ্চি বউয়ের দিকে নজর দিস না ( সাজ্জাদ)
আদ্র নিরাশ হয়ে চলে গেলো।
কালকে আমার ফোন কেটে দিয়েছিলেন কেনো?( আদ্রিতা)
এই কয়েকদিন আদ্রর সাথে বেশি মিশেছো না? তার ফল ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা ভেঙচি কাটলো।
অসময়ী বৃষ্টি ( স্বাধীন)
ডাকটি শুনে সামিরার মধ্যে আলাদা শিহরণ বয়ে গেলো। আপনি আমাকে এই নামে ডাকেন কেনো? ( সামিরা)
পরে জানতে পারবে ( স্বাধীন)
সামিরা মুচকি হাসলো।
মায়াপরী নাম দিয়ে কি আপনি আমাকে মেসেজ দিতেন? ( আদ্রিতা)
হুম ( সাজ্জাদ)
তাহলে ২টি নাম্বার থেকে মেসেজ দেওয়ার দরকার কি ছিলো। একটি নাম্বার থেকে দিলেই পারতেন। ( আদ্রিতা)
আদ্রিতার কথা শুনে সাজ্জাদ কিছু বলবে এর আগে বাকিরা এসে বললো এখন কনে আর বরদের খাবারের সময় হয়ে গেছে।
আদ্রিতা,সামিরা,সাজ্জাদ স্বাধীন সবাই একসাথে বসে খেয়ে নিলো। মেহমানরা আস্তে আস্তে যেতে শুরু করেছে। কান্না কাটির পর্ব শেষ করে। সাজ্জাদ আর আদ্রিতা একটি গাড়িতে উঠলো সাজ্জাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। সামিরা আর স্বাধীন অন্য একটি গাড়িতে উঠলো স্বাধীনের বাসায় যাওয়ার জন্য। এর আগেই সাজ্জাদের বাবা তাদের কাছে অনুরোধ করে বলেছে যেনো তার ২মেয়ের খেয়াল রাখে তারা দু’জন। তারা ভরসা দিয়েছে আদ্রিতা বা সামিরার কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। আদ্রিতার বাবার বিশ্বাস আছে সাজ্জাদ আর স্বাধীনের উপর। গাড়ি চলতে শুরু করেছে সাজ্জাদ আদ্রিতাকে জ*ড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর এটা সেটা বলে যাচ্ছে আদ্রিতা নিশ্চুপে শুনে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় একটা গুলির শব্দ শুনতে পেলো আদ্রিতার আর সাজ্জাদ চমকে উঠলো….
#চলবে
#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৫০
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
সাজ্জাদের গাড়ি থেকে অনবরত গুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে। সামনে দিয়ে কিছু গাড়ি এসে ঘিরে ধরেছে। আদ্রিতা ভয়ে সাজ্জাদের হাত খামছে ধরলো লোকরা বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকতে পারলো না। সাজ্জাদের গার্ডরা চলে আসায় S.R এর অনেক লোক পালিয়ে গেলো আর অনেক লোক আহত হলো সাজ্জাদের গার্ডের জন্য। আদ্রিতা সাজ্জাদের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো
ওরা কারা? কেনো এমন করছে আমাদের সাথে?( আদ্রিতা)
বাসায় চলো তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে ( সাজ্জাদ)
ওকে ( আদ্রিতা)
***** স্বাধীনের বাসায় *****
স্বাধীন, সামিরা প্রবেশ করলো।
এসো মা ( স্বাধীনের মা)
সামিরা ভিতরে আসলো। স্বাধীনের মা সামিরাকে সোফায় বসালো।
মা জানি বিয়েটা তোমার সাজ্জাদের সাথে হওয়ার কথা আছিলো কিন্তু হুট করে স্বাধীনের সাথে হয়েছে মানিয়ে নিতে পারবে ত? ( স্বাধীনের মা)
জ্বি আন্টি পারবো। ( সামিরা)
আন্টি কিরে? মা ডাকবি আর তুই আমার ছেলের বউ না আমার মেয়ে তাই তুই করেই বলছি ( স্বাধীনের মা)
আচ্ছা মা ( সামিরা)
হ্যাঁ বউমাকে পেয়ে নিজের ছেলেকে ভুলে গেছো ভালোই। ( স্বাধীন)
হ্যাঁ আজ থেকে সামিরা আমার মেয়ে ( স্বাধীনের মা)
সামিরা মুচকি হাসলো। স্বাধীনের আত্মীয় স্বজনরা সামিরাকে দেখে অনেক প্রশংসা করছে। সামিরা ও টুকটাক সবার সাথে কথাবার্তা বলছে।
*******
একদিনেই বাড়িটা কেমন খালি হয়ে গেলো। আমার ২ মেয়েই চলে গেলো। ( আদ্রিতার মা)
তুমি চিন্তা করো না ওরা ভালো থাকবে। (আদ্রিতার বাবা)
আমো ওদের মা আমার চিন্তা হয়। ( আদ্রিতার মা)
আমি ২ মেয়ের ভালো বুঝেই ওদের বিয়ে দিয়েছি। S.R এর নজর আদ্রিতার উপর আদ্রিতার ক্ষতি করার জন্য সেদিন রাতে আমাদের বাসায় এসেছিলো সামিরার গলায় ও কিন্তু ছুরি ধরেছিলো বলা যায়না যদি এক মেয়ের জন্য আমরা অন্য মেয়েকে হারিয়ে ফেলতাম তখন? আমি আমার ২ মেয়ে ভালো চাই। আদ্রিতার মাএ ১৮ বছরে বিয়ে দিয়েছি তা একটু ভুল করেছি বুঝলাম। কিন্তু সাজ্জাদ আর স্বাধীনের কাছে ওরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। ( আদ্রিতার বাবা)
আমার ২ মেয়ে ভালো থাকুক তাই আমি চাই। দোয়া করি কোনো কষ্ট যেনো ওদের গ্রাস না করে। ( আদ্রিতার মা)
আমিন ( আদ্রিতার বাবা)
আস্তে আস্তে আদ্রিতাদের বাড়ি থেকে মেহমানরা বিদায় নিলো। কালকে ও যেই বাড়িটি ২টি মেয়ে দ্বারা পরিপূর্ণ ছিলো তা আজ সম্পূর্ণ খালি। মেয়েদের জীবন কতো অদ্ভুত তাই না? নিজের চিরচেনা বাড়ি ছেড়ে সব মেয়েকেই চলে যেতে হয়। যে বাড়িতে এতো ছোট থেকে বড় হয়েছে সেই বাড়ি ছেড়ে নিজের মা বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হয় অন্য একটি পরিবারে। সত্যি অদ্ভুত মেয়েদের জীবন 🌸
***** সাজ্জাদের বাসায় *****
আদ্রিতা সাজ্জাদের বাসায় প্রবেশ করলো।
মেয়ে ত দেখি মাশাল্লাহ কিন্তু সাজ্জাদের থেকে মনে হচ্ছে ভালোই ছোট ( এক আত্মীয়)
আমাদের ধর্মে বিয়ের ক্ষেএে বয়সের কোনো নির্দিষ্টতা দেয় নি। তাই বয়সের দিক দিয়ে আমরা যাচাই না করি? আর এমনি ও ওর মতো লাখে একটি (সাজ্জাদের মা)
অন্য আরেক আত্মীয় বললো,
না মেয়ে দেখতে সুন্দর আছে বলতে হবে।
মাশাল্লাহ ( সাজ্জাদর মা)
আদ্রিতা সোফায় বসে আছে। সাজ্জাদের আত্মীয় স্বজনরা আসছে আর টুকটাক কথা বার্তা বলছে। আদ্র নিরাশ হয়ে চলে গেছে। সাথে অনেক মেহমানরা ও চলে গিয়েছে বিয়ে শেষ তাই।
*****
স্বাধীন সাজ্জাদকে কল দিলো,
ব্রো বিয়ে করে ও লাভ হলো না। ( স্বাধীন)
কেনো কি হয়েছে? ( সাজ্জাদ)
বউকে কাছেই পাচ্ছি না আসার পর থেকে কোথা কোথা থেকে যে মানুষ আসছে জানি না। শুধু মানুষ আসছে আর সামিরার সাথে কথা বলছে। আরে বউ আমার আমাকেও কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ( স্বাধীন)
সাজ্জাদ হো হো করে হেঁসে উঠলো। আমার বাসায় ও একই অবস্থা আসার পর থেকে একবার ও আদ্রিতাকে পাচ্ছি না। ( সাজ্জাদ)
যাক ভালোই হয়েছে তার মানে আমরা দুবন্ধু কেউ কারোর বউকে পাচ্ছি না। ( স্বাধীন)
রাতে সামিরাকে সব খুলে বলিস। আর আমাদের আসল পরিচয় খুলে বলার ও সময় চলে এসেছে।( সাজ্জাদ)
হুম আমাদের আসল পরিচয় আজকে রাতেই বলবো। ( স্বাধীন)
সব খুলে বলিছ আমার আর আদ্রিতার কেনো দেখা হয়েছিলো কেনো আমরা এই বিয়ের নাটক করলাম সব কিছু বলিছ। ( সাজ্জাদ)
আচ্ছা সব বলবো। ( স্বাধীন)
ওরা আর ও কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে ফোন রেখে দিলো।
****** রাতের বেলা ******
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে স্বাধীনের কাজিনরা সামিরাকে স্বাধীনের রুমে রেখে আসলো। চারদিকে ফুল সামিরাকে খাটে বসিয়ে স্বাধীনের কাজিনরা চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর স্বাধীন রুমে প্রবেশ করলো, সামিরা কিছুটা কেঁপে উঠলো। স্বাধীন এসে খাটে বসলো। সামিরা তোমাকে কিছু কথা বলার আছে আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন কিভাবে আমাদের বিয়ে হলো। কেনো আমরা এই নাটকটি করলাম। এইরকম অনেক প্রশ্ন তোমান মনে আছে। আজ সব তোমাকে খুলে বলবো। সামিরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সামিরা ও শুনতে চায় সব।
তোমাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম প্রায় ৩ বছর আগে ( স্বাধীন)
৩ বছর আগে প্রথম দেখেছিলাম কথাটি শুনে সামিরা চমকে উঠলো
কোথায় দেখেছিলেন? ( সামিরা)
৩ বছর আগে একদিন অনেক বৃষ্টির সময় হেঁটে যাচ্ছিলাম হাতে ছাতা ছিলো বরাবরই আমার বৃষ্টি অপছন্দ। সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে কি সুন্দর বৃষ্টিতে পথশিশুদের সাথে খেলা করছে। প্রথমে জিনিসটা বিরক্ত লাগলে ওপরে অনেক ভালো লাগলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটির খেলা দেখতে লাগলাম। কখন যেনো ছাতাটি ফেলে দিয়ে আমি ও বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলাম। ততক্ষণে মেয়েটি চলে গেলো। কিন্তু মেয়েটির প্রতি একরাশ ভালোলাগা কাজ করলো। জীবনে প্রথমবার কারোর প্রতি #অজানা_অনুভূতি সৃষ্টি হলো। সেদিন তোমাকে প্রথম দেখার পর আর দেখতে পাইনি। কাজের চাপে কখন ও প্রেম করা হয় নি। কিন্তু মনে মনে তোমাকে ও ভুলতে পারছিলাম না। সাজ্জাদ যেদিন প্রথম তোমায দেখতে এসেছিলো সেদিন সাজ্জাদের কাছে তোমার ছবি দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে সাজ্জাদকে সব খুলে বললাম। যদি ও সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ভালোবাসতো। জাস্ট ছোট একটা কারণে বিযের নাটকটি করেছে। আর আমি তোমাকে পছন্দ করতাম দেখে তোমাকে বিয়ে করে ফেললাম। আর ৩বছর আগে থেকেই তোমাকে আমি একটি নাম দিয়েছি তা হচ্ছে অসময়ী বৃষ্টি ( স্বাধীন)
শেষ কথাটি শুনে সামিরা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আমার বাবা সব কিছু জানতো? ( সামিরা)
হুম আংকেল না মানে বাবা সব জানতো। ( স্বাধীন)
আদ্রিতা আর সাজ্জাদের ব্যাপারটা কি? ( সামিরা)
স্বাধীন সাজ্জাদের সাথে আদ্রিতার কি কি হয়েছে + স্বাধীনের আসল পরিচয় খুলে বললো। সামিরা অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলো।
আপনি তাহলে? ( সামিরা)
হুম ( স্বাধীন)
তার মানে বাবা সব জানতো? ( সামিরা)
হুম আচ্ছা চলো আগের কথা বাদ দেই। ( স্বাধীন)
আমার কিছু বলার ছিলো। আমি জানতাম আদ্রিতা সাজ্জাদকে ভালোবাসে। যখন শুনেছি সাজ্জাদের সাথে আমার বিয়ে হবে বিষয়টি সহ্য করতে পারি নি। আর সাজ্জাদকে আমি বড় ভাইয়ের নজরে দেখেছি। কিন্তু আপনার সাথে কথা বলতে বলতে আপনার উপর দুর্বল হয়ে পড়ি। আর তারপর আপনার বিয়ের কথা শুনে অনেক রাগ হয়েছিলাম। কিন্তু মনে পড়লো আমার রাগ বৃথা। কিন্তু বুঝতে পারে নি আমার ভাগ্য এতো ভালো যে আমি আপনাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। ( সামিরা)
স্বাধীন এক হাত দিয়ে সামিরাকে জড়িয়ে ধরলো। সামিরা পরম শান্তিতে স্বাধীনের কাঁধে মাথা রাখলো।
****** সাজ্জাদের বাসায় ******
আদ্রিতা সাজ্জাদের রুমে বসে আছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো সাজ্জাদ আসার কোনো নাম নেই। কতক্ষণ পর আদ্রিতা দরজা খোলার শব্দ পেলো…..
#চলবে
#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৫১
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
সাজ্জাদ রুমে প্রবেশ করলো। আদ্রিতা গুটিশুটি মেরে খাটে বসে রইলো।
ড্রেস চেঞ্জ করো নি কেনো? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা নিশ্চুপে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সাজ্জাদ ও ফ্রেশ হয়ে নিলো।
রাতে খেয়েছো? ( সাজ্জাদ)
হুম মামনি ( মানে সাজ্জাদের মা) খাইয়ে দিয়েছে। আপনি খেয়েছেন….? ( আদ্রিতা)
হুম। আস্তে আস্তে একটু দেরি হয়ে গেলো। ( সাজ্জাদ)
নতুন বউ রেখে বাইরে এতো কিসের আড্ডা? ( আদ্রিতা)
বাহ একদিনে এসেই শাসন শুরু করে দিয়েছো?( সাজ্জাদ)
কালকে রাতে যখন বললাম বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে ফোন কেটে দিলেন কেনো? ( আদ্রিতা)
আদ্রর সাথে এতো কথা এতো দুষ্টামি কেনো করেছিলে? ( সাজ্জাদ)
বেশ করেছি এইটা করে আপনি ত আমার দিকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন। ( আদ্রিতা)
হুম করতাম পরে ভাবলাম তোমার দি ভদ্র আছে যেকোনো কেউ বিয়ে করবে। কিন্তু তোমার মতো পাগল মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না তাই আমি শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করে নিলাম ( সাজ্জাদ)
সত্যি করে বলুন না আপনার দির সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। তাহলে এগুলো কিভাবে হলো আর বাবা আগে থেকে সব কিছু জানতো?বাবা কেনো মেনে নিলো সব কিছু? আর আমাদের পরিবার সবাই যদি সব জানতো তাহলে আমাদের কেনো কিছু বলা হয় নি ? ( আদ্রিতা)
এতো প্রশ্ন একবারে কিভাবে করো?সামিরার সাথে বিয়ে হলে খুশি হতে বুঝি? ( সাজ্জাদ)
না কিন্ত কিভাবে কি? আপনি আমাদের বিয়ে করবেন তা আগে থেকে বলেন নি কেনো? ( আদ্রিতা)
তোমাকে বলছি সব শুরু থেকে খুব নাটকীয় ভাবেই বলতে গেলে আমাদের দেখা হয়েছে। ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা মন দিয়ে কথা বুঝার চেষ্টা করছে।
আমি আর স্বাধীন ২জনই আর্মির সিক্রেট অফিসার।( সাজ্জাদ)
কথাটি শুনে আদ্রিতা চমকে উঠলো। মানে কি বলছেন আপনি না বিজনেসম্যান? ( আদ্রিতা)
সেটি দুনিয়ায় সামনে। আমি সিক্রেট অফিসার। তাই কাউকে পরিচয় দিতে পারি না। আমি জানি তোমার মনে অসেক প্রশ্ন রয়েছে আমি একে একে সব বলছি একটু অপেক্ষা করো। ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। সাজ্জাদ বলা শুরু করলো,
আজ থেকে ২ বছর আগে যেদিন প্রথম তোমার সাথে দেখা হয়েছিলো সেদিন মাফিয়া S.R এলাকায় এসেছিলো। ( সাজ্জাদ)
মাফিয়া S.R কথাটি শুনে আদ্রিতা কেঁপে উঠলো। সাজ্জাদ এক হাত দিয়ে আঁকড়ে নিলো তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
সেদিন রেস্টুরেন্টে আমার একটা মেয়ে ফ্রেন্ড এসেছিলো তোমার মনে আছে? ওর নাম মিম(সাজ্জাদ)
হুম মনে আছে আগে বলুন ত আপনার মেয়ে ফ্রেন্ড কয়টি? কতোজন এইভাবে এসে আপনাকে জড়িয়ে ধরে? ( আদ্রিতা)
আরে ও কানাডায় ছিলো আর ওইখানের পরিবেশ ত জানোই তাই আর কি ( সাজ্জাদ)
জড়িয়ে ধরার পর আপনাকে ত অনেক খুশি খুশি লাগছিলো ( আদ্রিতা)
আরে উল্টো পাল্টা কিছু ভেবো না মিমের হাসবেন্ড আছে। ( সাজ্জাদ)
ও আচ্ছা🥲 ( আদ্রিতা)
আর মিম ও একজন আর্মি সিক্রেট অফিসার। ( সাজ্জাদ)
কি আপু ও অফিসার? ( আদ্রিতা)
হুম এখন শুনো কি হয়েছিলো আগে ( সাজ্জাদ)
হুম বলুন ( আদ্রিতা)
২ বছর আগে তুমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে একটি চেইন বের করেছিলে হঠাৎ একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা থেয়ে তুমি পরে যাও। মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে তোমাকে সরি বলে উঠে দৌঁড় দেয়। এ বিষয়টি মনে আছে?( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা একটু মনে করার চেষ্টা করলো কতক্ষণ পর মনে পড়লো হ্যাঁ কোচিং থেকে বেরিয়ে আলোর বাসায় যাওয়ার আগে আদ্রিতার একটি ফেভারিট চেইন ছিলো সেটি পড়তে নিয়েছিলো ঠিক তখনই একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে আদ্রিতা পরে যায়।মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে সরি বলে চলে যায়। ( আদ্রিতা)
তুমি নিচ থেকে উঠে S.R যেই দিকে ছিলো ওইদিকে হাঁটা শুরু করো। আর আমি ও S.R এর জন্য সেদিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম তুমি খু*ন করার দৃশ্যটি দেখে ফেলেছো। S.R লোকরা ও তোমাকে দেখে ফেলেছিলো সেদিন আমি না থাকলে হয়তো সেদিনই তোমার শেষ দিন হতো। কিন্তু তুমি আমাকে ও দেখে ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলো। সেদিন আমার সাথে কিছু মহিলা পুলিশ ছিলো তারা তোমাকে গাড়িতে শুইয়ে দেয়। তোমার নাম ঠিকানা না পেয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। আমি সারারাত হসপিটালে ছিলাম। মিম কিছুক্ষণ ছিলো তারপর চলে যায়। পরেরদিন তোমার জ্ঞান ফিরলে আমি তোমাকে তোমার স্কুলে পৌঁছে দিয়ে চলে আসি। মিমের কাছে একটি চেইন ছিলো যেটিতে একটি ছোট ক্যামেরা ফিট করা ছিলো। যাতে আমরা খুন হওয়ার দৃশ্যটি রেকর্ড করতে পারি আর S.R কে ধরতে পারি। তোমার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় তোমার আর মিমের চেনটি বদলে যায়। তুমি যখন খুন হওয়ান দৃশ্যটি দেখছিলে তখন সেইটি তোমার চেইনে রেকর্ড হয়ে যায়। অজান্তেই তুমি এক বিশাল প্রমাণ নিয়ে ঘুরছিলে। কারণ সেদিন S.R আমাদের সিক্রেট হেড অফিসারকে খু*ন করে। তোমার থেকে যেইভাবেই হোক না কেনো সেই চেইনটি আমার নেওয়া লাগতো তাই তোমাদের কোচিংএ স্যার হিসেবে আসি। তুমি প্রথমে আমাকে ভয় পেলে ও আস্তে আস্তে অনেক ফ্রি হয়ে উঠো আমার সাথে। তোমার বয়স তখন মাএ ১৫ বছর চলছিলো তুমি তখন খুনের সাক্ষী দিতে পারতে না।এর জন্য তোমার ১৮ বছর হওয়ার অপেক্ষা করতে হতো। আমি চারদিকে গার্ডের ব্যবস্থা করেছিলাম তোমার জন্য তুমি আমার কাছাকাছি থাকতে বলে সহজেই S.R তোমার খবর পাচ্ছিলো। তারপর পিকনিকের ঘটনাটি ঘটলো এক পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলাম আমরা। সেদিন তুমি এতো চাপ সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে পড়ে যেতে নিলে আমি তোমাকে আঁকড়ে ধরি। প্রথম স্পর্শ ছিলো সেটি। তখন এক #অজানা_অনুভূতি গ্রাস করে আমাকে। বাধ্য হয়ে তোামকে উঠিয়ে নিয়েছিলাম। দিন যেতে থাকলো হয়তবো পবিএ বন্ধনের কারণেই তোমার প্রতি আমার অনুভূতি তীব্র হতে থাকলো। সেই ১৫ বছর কিশোরীর প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রকাশ করতে পারি নি। কারণ ততদিনে শুনলাম S.R নাকি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে S.R এর কথা যেই মেয়ে একা একা S.R এর হাতে খু*ন হতে দেখেছে সেই মেয়ে অনেক সাহসী তাকেই S.R জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই। ( সাজ্জাদ)
সাজ্জাদ একটু থামলো আদ্রিতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। একজন মাফিয়া আমার প্রেমে পড়েছিলো?( আদ্রিতা)
হুম কেনো? একজন আর্মির সিক্রেট অফিসার ও তোমার প্রেমে পড়েছিলো। ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা গাল ফুলিয়ে বললো কিন্তু আপনি আমাকে সেদিন অনেক অপমান করেছিলেন। ডিভোর্স দিয়েছিলেন। ( আদ্রিতা)
শেষ কথাটি বলার সময় আদ্রিতার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। সাজ্জাদ সযত্নে তা মুছিয়ে দিয়ে বললো আমাদের কখনো ডিভোর্স হয় নি…
#চলবে