অজানা_সুখপাখি
পর্বঃ১
সামি_আদনান
ভাসুরের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার। তিনদিন পরেই বিয়ে। আমার এখনো ইচ্ছে করছে না ভাসুরের বউ হতে। যে মানুষটিকে এতদিন ধরে ভাইয়া ভাইয়া ডেকেছি, বড় ভাইয়ের চোখে দেখেছি। তাকেই কিনা এখন বিয়ে করতে হবে। উনিও প্রথমে এমন প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। উনাকেও একরকম জোর করেই রাজি করানো হয়েছে।
বাবা-মা নেই আমার। নানা বাড়িতে বড় হয়েছি। দুঃখে দুঃখেই কেটেছে সারা জীবন। একটু সুখের আলো চেয়েছিলাম জীবনে। কিন্তু সে আলো জ্বলার আগেই নিভে গেল। দেড় বছর আগে বিয়ে হয়েছে আমার। মানুষটা খুব পছন্দ করে বিয়ে করেছে আমায়। প্রেম করে নয়। পারিবারিকভাবে দেখতে গিয়েই পছন্দ করেছে আমায়। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও আমাকে পছন্দ করেছিলো ভীষণ। অনেকটা হুট করেই বিয়ে হয়ে যায় আমাদের। বিয়ের পর থেকে স্বামী অনেক ভালোবাসতো। যেন আমি চোখের আড়াল হলেও কষ্ট পেতো। কিন্তু কে জানতো! এমন দুর্ভাগ্য লেখা আছে কপালে! হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে আমার স্বামী মা’রা যায়। বুঝিনি হার্ট অ্যাটাক করেছে। দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। সেদিন অনেক মেহমান এসেছিল বাসায়। আমরা সবাই রাতের রান্নায় ব্যস্ত। বিকেলের চা নিয়ে এসে ঘুম থেকে ডাকলাম। কিন্তু আর জেগে উঠেনি। চলে গেছে চিরতরে। ও মা’রা গেছে তিন মাস হলো।
আমার নাম তিন্নি। বাবা মা মা’রা গেছেন ছোটবেলায়। দুজনেই চাকরি করতেন। অফিস থেকে ফেরার পথে এক এক্সিডেন্ট হলো। সেই এক্সিডেন্টে একসাথে দুজন চলে যান পরপারে। তখন আমার বয়স আড়াই বছর। তারপরে ঠাই হয় নানা বাড়িতে। বাবা-মায়ের চাকরি বেশি দিনের ছিল না। একরকম নতুন চাকরি। সামান্য কিছু টাকা পেয়েছিলাম পেনশন এবং এককালীন টাকা হিসেবে। সে টাকার বিনিময়েই নানা বাড়িতে মামারা আমায় রেখেছে। তবে কখনো কেউ ভালো ব্যবহার করেনি। আশ্রিতার মত বড় হয়েছি। একটা সময় কিভাবে কিভাবে যেন আমার পেনশন বন্ধ হয়ে যায়। কি কি যেন কাগজপত্র নবায়ন করতে হবে, আরো যেন কি কি; এমনটাই বুঝিয়েছে মামা আমায়। নিজে কৌশলে সব টাকা খেয়ে ফেলেছিলেন কিনা সেটাও জানি না। কারণ বাবা-মায়ের মৃ’ত্যুর পরে আমার বয়স কম থাকায় মামা অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এককালীন এবং পেনশনের টাকাও মামার দায়িত্বেই ছিল। তিনি কিভাবে কি করেছেন, জানি না। শুধু বলেছে পেনশন বন্ধ হয়ে গেছে। সেই পেনশনটা বন্ধ হয়ে যাবার পরে চরম অ’বহেলার শি’কার হই নানা বাড়িতে। যখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখনই বিয়ের প্রস্তাবটা আসে। মামা-মামি তো আগে থেকেই বিয়ে দিতে উদগ্রীব ছিলেন। পাত্রপক্ষ আমাকে পছন্দ করলে বিয়ে দিয়ে দেয় তাড়াহুড়ো করে। যেন মাথা থেকে বোঝা নামিয়েছে। শেষ পর্যন্ত স্বামীটাও আমাকে রেখে চলে গেল। আমি এখন অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়ি। ভেবেছিলাম অনার্স কমপ্লিট করে চাকরিতে জয়েন করব। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছেন না। ভীষণ পছন্দ করেন আমায়। মামা বাড়িতেও থাকার মতো অবস্থা নেই। স্বামীর মৃ’ত্যুর পরেও শশুর বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। এখন তো বিয়ে ঠিক করেছে নিঃসন্তান ভাসুরের সাথে।
আমি ভাবছি রিতা ভাবীর কথা। আমার কত ভালো সম্পর্ক ছিল ওনার সাথে! তার স্বামীর সাথে বিয়ে হলে ওনাকেই মুখ দেখাবো কিভাবে? যদিও ভাবির শারীরিক সমস্যা ছিল। সন্তান হতো না। আরো অনেক অন্যায় করে বছরখানেক ধরে দূরে আছেন ভাসুরের কাছ থেকে। এখন তো সেই নিঃসন্তান ভাসুরের সাথেই আমার বিয়ে দেয়া হচ্ছে। রিতা ভাবি ভাবতে পারেন আমার স্বামীর মৃ’ত্যুর পরে এই তিন মাসে ভাসুরের সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছে। কারণ ভাসুরও আমায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। যদিও প্রথমে রাজি ছিলেন না। এখন তো রাজি হয়েছে! আর আমাকেও জোর করে রাজি করানো হয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ি ননদরাই রাজি করিয়েছে আমায়। তবুও কেমন যেন লাগছে! ইচ্ছে করছে পালিয়ে যাই! কোথায় যাব, কি করব; কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কিছু কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রেখেছি। সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাব। যদিও সবাইকে বলেছি বিয়েতে আমি রাজি। সন্দেহের উর্ধ্বে রাখতে এটা বলেছি।
চলবে