অতঃপর প্রণয় পর্ব-০১

0
96

#অতঃপর_প্রণয়
#প্রথম_পর্ব
#জেসমিন_জেমি

চলুন না বিয়ে করে নেই এমপি সাহেব। তারপর আমরা দুজনে মিলে সুখে সংসার করবো। আমাদের ছোট ছোট দুটো বিড়ালের ছানার মতো কিউট ছানা হবে। আপনাকে আমার খুব মনে ধরেছে উফফ কত্তো কিউট আপনি, পুরাই মাখন।

ভরা মজলিশে এমন উদ্ভট কথা গুলো আবরারের কর্ণকুহর হতেই ভ্রু কুচকে পাঁশ ফিরে তাকায় ততক্ষণে মেয়েটা তার একদম কাছ ঘেঁষে এসে দাঁড়িয়েছে ভ্রু কুচকে মেয়েটার মুখপানে চাইতেই মেয়েটা দাঁত বের করে ফোঁকলা হেসে বলে উঠে,,

বলুন না, বলুন না এমপি সাহেব বিয়ে করবেন আমাকে? দেখুন আমি কিন্তু আপানকেই বিয়ে করবো। আপনি আমায় বিয়ে না করলে কিন্তু আমি মরে যাবো। আমি, আমি সুইসাইড করবো। উমমম কিভাবে সুইসাইড করবো জানেন?
ইঁদুর, ইঁদুর মারার বি*ষ খাবো। উমমম না না কচু গাছের সাথে ফাঁ*সি দিবো। ধ্যাত কচু গাছের সাথে ফা*সি দিলে কষ্ট বেশি হবে উমম কি করা যায়, কি করা যায়।
আচ্ছা এমপি সাহেব আপনি বলুন না কিভাবে সুইসাইড করবো।

আবরার দাতে দাত চেঁপে সামনে থাকা মেয়েটার আজব আজব কথা শুনে যাচ্ছে। চোখ মুখ যথেষ্ট গম্ভির তার মুখ দেখে মনে কি চলছে বুঝা বড় দায়। পুরো মজলিশের মানুষ উৎসুক চোখে আবরারের মুখপানে চেয়ে আছে, মেয়েটার এমন এমন হাস্যকর কথাগুলো শুনে তাদের হো হো করে হেঁসে উঠার কথা হলেও তারা তা করছে না বরং সবাই ভয়ে চুপসে আছে আর মনে মনে ছোট বাচ্চা মেয়েটার জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে।
ফাহাদ আবরার নামটা শোনা মাত্রই যেখানে সবাই ভয়ে চুপসে যায়। যার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলতেও মানুষ হাজার বার ভাবে সেই মানুষটার সামনে কি না এমন পিচ্চি একটা মেয়ে গড়গর করে এসব বলে যাচ্ছে যেখানে তারা প্রতিনিয়ত তার সাথে থাকছে তার দলের সদস্য হয়েও তার মুখ পানে চেয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময়ও এতোটা সাহস রাখে না। সেখানে এই পিচ্চি মেয়েটা কি না এমন আজব আজব কথা বলে যাচ্ছে। সবাই ভয় পেলেও বেশ অবাক হয়েই আবরারের পানে চেয়ে আছে। হঠাৎ ই আবরার গম্ভীরস্বরে ধমকে উঠতেই মেয়েটা কেঁপে উঠলো সেই সাথে কেঁপে উঠলো পুরো মজলিশের মানুষ গুলো।

আবিরঃ স্যার আসলে ও তো পিচ্চি,,,
আবির এগিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে কথা শেষ করার আগেই আবরার হাত ইশারায় না করতেই আবির থেমে যায়। পিছন ফিরে দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে একটু দূরেই গুটিকয়েক লোকজনের সাথে কথা বলছিলো ইমির আবির কিছু বলতেই ইমির ছুটে এসে পরিস্থিতি বুঝে কিছু বলতে উদ্ধত হতেই আবরার চোখ পাকিয়ে তাকায় ইমির চুপ হয়ে যায়। সাথে সাথেই আবরার ইলমির হাত জোড়া শক্ত হাতে চেঁপে মজলিশ ছেড়ে বের হয়ে যায়। ইমির সহ মজলিশের সবাই ভয়ার্ত চোখে তাদের যাওয়ার পানে তাকায় ইলমি মনে মনে বলে উঠে,,

ইলমিঃ ইলমি তু তো আজ তো গেয়া । রাক্ষস রাজা খেঁপে গেছে আজ তুই শেষ রে ইলমি। আজ তুই শেষ।
করুন চোখে একবার ভাই ইমিরের মুখ পানে চায় পরপর হাতে টান পড়তেই এক প্রকার দৌড়ে
আবরারের হাঁটার সাথে তাল মেলায়।

______

প্রায় আধঘন্টা যাবৎ গাড়ীতে চুপটি করে বসে আছে ইলমি পাশেই গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করছে আবরার নামক রাক্ষসটা। ইলমি আড়চোখে পাশে তাকায় বিরবির করে বলে উঠে,,

কি বিচ্ছিরি তার মুখখানা ছ্যাহ ইলমি কি না এই করল্লার উপর ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে কুপকাৎ হয়েছিলো ভাবা যায়। শুধু বাহ্যিক রুপ থাকলেই কেউ সুন্দর হয়ে যায়? নাহ জীবনেও না এই যে পাঁশে বসা লোকটা দেখতে কত সুন্দর, কত হ্যান্ডসাম,কত্তো ড্যাশিং কিন্তু তার ভেতরটা দেখো কি কুৎসিত। কথা বার্তা কতটা তেঁতো আস্ত একটা করল্লা। নাহ আস্ত একটা করল্লার বাগান হুহ। এমন করল্লার বাগানকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় নাহ। হুহ ইলমি তো ভালো বাসেই নাহ।

ইলমির ভাবনার মাঝেই আবরার গম্ভীরস্বরে বলে উঠে,,
আবরারঃ নাম।

ইলমি চমকায় পরপর তুতলিয়ে বলে উঠে,,
জ, জ জ্বী।

আবরার পূনরায় গম্ভীরস্বরে ধমকে বলে উঠে,,
আবরারঃ গাড়ী থেকে নাম।

ইলমি ভয় পেয়ে যায় ঝটপট গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়ায় পরপর আবরার ও নেমে এসে ইলমির হাত টেনে বড় রাস্তা পার হয়ে রাস্তার ওইপারে গিয়ে দাঁড়ায়। ইলমির হাত ছেঁড়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ট করতে করতে আবরার ব্যস্ত চোখে চারপাঁশে চেয়ে ফোন বের করে কাউকে কল লাগায়। ইলমি আঁশপাঁশ চেয়ে সামনের সাইনবোর্ডে তাকাতেই হতভম্বিত চকিত হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখে সাইনবোর্ডটি গোটাগোটা অক্ষরে লেখা।

‘কাজি অফিস’
এখানে সকল মুসলিম দম্পতির শরীয়তসম্মতভাবে বিবাহ এবং তালাকের রেজিস্ট্রার করা হয়।

ইলমি একবার সাইনবোর্ড তো একবার আবরারের পানে চায় ইলমির ছোট মস্তিষ্ক বিপদের জানান দিলেই পরপর পিছন ফিরে দৌঁড়ে পালাতে চাইলেই আবরার তার হাত ধরে নেয়।

ইলমিঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন আমায় আমি যাবো না আপনার সাথে আমি বাসায় যাবো।

কে শুনে কার কথা আবরার এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে যেতে লাগে। ইলমি পারে তো এখনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। রা’ক্ষস কে সায়েস্তা করতে এসে রাজকন্যা দুষ্টু রা’ক্ষসের হাতে বন্দী হয়ে গেলো। কি করবে কিছুই ভাবতে পারলো না শুধু মনে মনে সয়তান দূর করার জন্য আয়াতুল কুরসী পাঠ করতে লাগলো।

————
১০ মিনিট যাবৎ কাজি অফিসে বসে আছে ইলমি উহু সে একা নয় পাঁশেই দুহাত বুকে গুঁজে আবরার রা’ক্ষস বসে আছে। ইলমি আড়চোখে আবরারের পানে চায় গরমে রাক্ষস রাজার অবস্থা কাহিল শ্যামবর্ণ মুখশ্রী,সাথে লম্বা নাকটা লাল হয়ে গেছে আর তাদের চারপাঁশে কালো পোশাক পরা ৭ জন গার্ড। কাজি সাহেব ভয়ার্ত চোখে চশমার ফাঁকফোকর দিয়ে একবার ইলমি তো একবার আবরার, কয়েকবার গার্ডগুলোর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে আর নিজের রেজিস্ট্রার খাতায় কিছু লেখছেন। ইলমি খেয়াল করলো কাজি সাহেবের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ছে, কাঁপাকাঁপা হাতে কিছু লেখছেন। একটু আগে কাজি সাহেব কিছু বিষয় নিয়ে ঝামেলা করছিলো এভাবে বিয়ে হয় না, মেয়ের গার্জিয়ান লাগবে ব্লা ব্লা। আবরার ইশারায় কিছু বলতেই কাজি সাহেব কে নিয়ে দুজন গার্ড বাহিরে চলে গেলো ইলমি তো খুঁশিতে গদগদ হয়ে আবরারের পানে চায় আবরার গরম চোখে চাইতেই ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে যায় তবে সে মনে মনে খুব খুঁশি হয় তার খুশিতে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে কাজি সাহেব ফিরে এসে বিয়ে পড়াতে বসে গেলেন। ইলমি কি করবে কিছুই ভাবতে পারছে না কি এক বিপদে পরে গেলো বাঁজি জিততে গিয়ে না তার জীবনটাই শেষ হয়ে যায়। আবরারের মতো এমন রাক্ষস রাজা, এমন করল্লার বাগানকে না তার বিয়ে করা লাগে। এখান থেকে পালানোর কোনো রাস্তাও নেই, চেয়ার ছেঁড়ে উঠে দাঁড়াতে নিলেই গার্ডগুলো এগিয়ে আসে কাঁদো কাঁদো মুখে আবরারের পানে চাইতেই দেখে রাক্ষস রাজা তার দিকেই তাকিয়ে আছে তার অধরযোগলে ঝুলছে বাঁকা হাসি। কিছুসময় পর কাজি সাহেবের লেখালেখি শেষ হতেই কাজি সাহেব চশমা ঠিক করে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠেন,,
নি, নি নিন আম্মা সাইনটা করে দিন।
ইলমি এবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ শব্দ করে কেঁদেই উঠলো কাজি সাহেব হকচকিয়ে উঠলেন পরপর কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,
আ, আব, আব্বা মাইয়া কি রাজি না? রাজি না থাকলে তো বিয়া পড়ানো যাইতো না। এইডা আমি করবার পারুম না। জোরজবরদস্তি বিয়া পড়াইতে আমি পারুম না।

আবরার চোয়ালদ্বয় শক্ত করে গম্ভীরস্বরে ইলমিকে জিগ্যেস করে উঠে,,

আবরারঃ এই বিয়েতে তোর মত নেই?
ইলমি কাঁদতে কাদঁতে মাথা নাঁড়িয়ে না করতেই আবরার পূনরায় বলে উঠে,

আবরারঃ সত্যি কথা বল এ বিয়েতে তোর মত নেই?

ইলমি চমকায় পরপর মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই আবরার বাঁকা হেঁসে বলে উঠে
আবরারঃ দ্যাটস গুড গার্ল। নে সাইনটা কর।
খাতা এগিয়ে ইশারায় সাইন করতে বলে
ইলমি কাঁদতে কাঁদতেই সাইন করে দেয় পরপর আবরার সাইন করতেই কাজিসাহেব বলে উঠে
আলহামদুলিল্লাহ আজ থেকে আপনারা আইনত ভাবে স্বামী-স্ত্রী।

চলবে,,,,,
শব্দসংখ্যা -১১০৭

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসী ছাড়া কেউ কপি করবেন না।)