অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৩

0
72

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৩
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা – ৯৩৫

ঘড়িতে দুপুর ৩.২৫ মিনিট।
এই ভ্যাপসা গরম, সারাদিনের কাঁঠফাটা রোদের পর উত্তপ্ত শহরটাতে দীর্ঘদিন পরে বৃষ্টির দেখা মিললো তবে যেনো তেনো বৃষ্টি নয় একদম তুমুল ঝড়। নিমিষেই তাপমাত্রা কমে গেলো। চাঁরপাশে তুমুল বেগে ঝড় তার সর্বোচ্চ শক্তিতে তান্ডব চালাচ্ছে। ইলমি আবিরা ঘুমাচ্ছিলো । বৃষ্টির শব্দে নিমিষেই ঘুম ছুটে গেলো ইলমির,ঝটপট বিছানা ছেড়ে জানালার কাছটায় গিয়ে জানালা ঘেঁষে দাঁড়ালো। বাইরে ঝড়ো হাওয়ায় বড় বড় গাছগুলো হেলেদুলে পড়ছে তো আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। এ যেনো হাওয়া আর গাছগুলোর মধ্যে নীরব যুদ্ধ চলছে কে কাকে হাঁড়াতে পারে কে টিকে থাকতে পারে। ইলমি বাইরের সেই নীরব যুদ্ধের নীরব দর্শক হয়ে সবটা দেখে যাচ্ছে ।জানালা ভেদ করে বিন্দু বিন্দু জলরাশি তার চোখ মুখে ছিটকে পড়ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। প্রায় ১৫ মিনিট পর ঝড় কমে গেলো তবে আগের ন্যায় বৃষ্টি হচ্ছেই।

ইলমিঃ আবিরা, এই আবিরা উঠ না। চল না বৃষ্টিতে ভিজি। উফফ কতদিন পর বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আবিরা। তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস? এই এই মাইয়া উঠ না।

আবিরা পিটপিট চোখে চেয়ে চোখ মুখ কুচকে বলে,,
উমমম ঘুমাতে দে ইলমি বাচ্চার কলমি।ডাকবি না একদম।

ইলমি অসহায় গলায় বললো,,
উঠ না আবিরা আমার সোনা বোন চল না একটু ভিজি।
এই আবিরা, আবিরায়য়য়য়া।
কে শুনে কার কথা বৃষ্টি পেয়ে ঘুমের রাণী আবিরা যেনো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে তার কোনো হেলদুল নেই। ইলমি মুখ গোমরে চোখ মুখ কুচকে বিছানায় বসে রইলো কিছুক্ষণ পরপর একা একা পা চালালো বাইরে দিকে রুম থেকে বের হয়েই তার আবরারের কথা মনে পড়ে যায়, মনে পড়তেই ইলমি ভয় পায়, শংকা হয়। নিজেকে সাহস দিয়ে ফিসফিস করে নিজ মনে বলে উঠে,,

উনি তো বাসায় নেই, নিশ্চয় এখনো আসেন নি। আরে চিল ইলমি। এতো ভয় পাওয়ার কি আছে উনি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
অবশ্য বাঘ ভাল্লুক না হলেও উনি একজন রাক্ষস, উনি একজন রাক্ষস রাজা। বলেই নিজ মনে হাসতে হাসতে ছাদের দিকে পা বাড়ায়।

_________

ইলমি ছাঁদের মাঝখানটায় রাখা দোলনায় বসে বৃষ্টিতে ভিঁজছে। দীর্ঘদিন পর বৃষ্টি পেয়ে ইলমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে নাঁচতে শুরু করলো। বৃষ্টিতে ভিজে জবুথুবু অবস্থা। প্রায় ২০ মিনিট যাবৎ বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে ইলমি এ বাড়ীতে তার আম্মা নেই আব্বাজান নেই। কেউ নেই যে তাকে বকবে বৃষ্টিতে ভিজতে বারণ করবে আছমা বেগম ও দেখেন নি ইলমিকে বৃষ্টিতে ভিজতে এতে যেনো ইলমির বৃষ্টিতে ভেঁজার শখ ষোলোকলাপূর্ণ হলো।
ইলমির খুশি কে দেখে, খুঁশিতে নাঁচতে শুরু করে দিয়েছে তবে মাঝে মাঝে দু একটা হাঁচিও দিয়ে চলেছে। প্রায় কিছুক্ষণ পরে কোমরে কারো স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে ইলমি, কেঁপে উঠলো বৃষ্টিতে ভেঁজা হিমশীতল ছোট্ট দেহখানা। পরপর ছিটকে সরে গিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় আবরার ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। আবরার ছাঁদে এই মাত্রই এসেছে সাদা পান্জাবিতে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ছাপ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ইলমি ভয় পেয়ে দু পা পিছিয়ে যায়। পরপর নিজেকে ভালোভাবে পরখ করে নেয় দেখতে একদম বাজে লাগছে বৃষ্টিতে ভিজে জামা উড়না শরীরে লেগে গেছে শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লজ্জা, ভয়ে ইলমির মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি দরকার ছিলো এত সময় বৃষ্টিতে ভেঁজার আর এই লোকটারই বা কেন এখনই ছাঁদে আসা লাগবে। বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সঁন্ধ্যা হয়। এই কথাটার মানে ইলমি হারে হারে টের পাচ্ছে ।
ইলমি মনে মনে ছাঁদ থেকে পালানোর চিন্তা এঁটে নেয়। আবরার গম্ভীরমুখে ইলমিকে পরখ করে নিচ্ছে ইলমি দিকবিদিক ভূলে ছাঁদ থেকে পালাতে দৌঁড় দিতেই পা পিছলে পড়ে যেতে নিতেই আবরার ধরে নেয়। আবরার ভ্রু কুচকে বলে,,,

পালাচ্ছিস? কোথায় পালাচ্ছিস ইলমি বরের সাথে বৃষ্টিতে ভিঁজবি না? কি রোমান্টিক ওয়েদার আমরা নিউলী ম্যারিড কাপল ওয়েদারটা কিন্তু জোস কি বলিস?
আমাদের জন্য একদম পার্ফেক্ট তাই না?

ইলমি অসহায় গলায় বললো,
ছাড়ুন। আমি নিচে যাবো।

আবরারঃ আরে আমি তো আমার বউয়ের সাথে ভিঁজতে এলাম। নতুন নতুন বিয়ে করেও বরকে রেখে একা একা বৃষ্টিতে ভিঁজতে লজ্জা লাগছে না তোর?
এই তুই বৃষ্টিতে ভিঁজতে এসেছিস কার অনুমতি নিয়ে? আমার অনুমতি নিয়েছিস? জানিস না বরদের অনুমতি ছাড়া কিছু করতে হয় না।

আবরারের কথা শেষ করার আগেই ইলমি আবরার মুখ বরাবর হাঁচি দিয়ে উঠে । আবরার সাথে সাথে চোখ মুখ কুচকে বন্ধ করে নেয় ইলমি নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব। দাঁত দিয়ে জিব কাটে পরপর উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,,
স্যরি স্যরি আসলে, আসলে আমি,, বলেই নিজের উড়না টেনে মুখ মুছে দেয়। আবরার ইলমি হাত শক্ত হাতে চেপে গম্ভিরস্বরে বলে উঠে,,,
আবরারঃ চল আমার সাথে।
ইলমি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,,
কোথায়?

আবরার বাঁকা হাঁসে ,,
এর মাঝেই ভূলে গেলি? তোর না বিড়াল ছানার মতো কিউট ছানা চাই তার বন্দবস্ত করতে। চল বলে হাত টানতেই ইলমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠে
আবরার বাজখাঁই গলায় বলে উঠে,,
ন্যাঁকামো করবি না একদম চল আমার সাথে।

ইলমি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠে,,
আমার ভূল হয়েছে ভাইয়া আমি আর জীবনেও এমন করবো না।

আবরারঃ ভূল যখন তুই করেই ফেলেছিস তার মাশুল তোকে সারাজীবন ভরেই দিয়ে যেতে হবে ইলমি।

আবারো ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে বৃষ্টিতে ভেঁজা থাকায় এবার ইলমির প্রচুর শীত লাগছে তার সাথে ঠান্ডা জ্বর ফ্রী। শীতে ইলমির শরীর গোলাপি ঠোঁট জোড়া কেঁপে কেঁপে উঠছে বার বার। ইলমি এবার অসহায় গলায় কাঁপাকাঁপাকন্ঠে বলে উঠে,,,

এবারের মতো মাফ করে দিন প্লিজ আর জীবনেও এমন ভূল হবে না কথা দিচ্ছি।

ইলমির কথা শেষ হওয়ার আগেই আবরার ইলমির বৃষ্টিতে ভেজা গোলাপি অধরজোড়ায় ঠোঁট চেঁপে ধরতেই ইলমি হতভম্ব হয়ে যায় পরপর ঘটনা বুঝে সরে যেতে নিলেই আবরার শক্তহাতে ইলমির কোমর জড়িয়ে নেয়। আবরারের স্পর্শে ইলমির সারা শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায় পরপর কেঁপে উঠে তার দেহখানা। ইলমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করা সত্ত্বেও আবরারের শক্তির সাথে পেরে উঠে না। আবরারের বলিষ্ঠ দেহখানা বিন্দু মাত্র নিজের থেকে দূরে সড়াতে পারে না। কিছুক্ষণ পর আবরার নিজ থেকে ইলমিকে ছেড়ে নিচে চলে যেতে যেতে গম্ভিরস্বরে বলে যায়,

আমার বাড়ীতে যেনো তোকে না দেখি। তোর মতো মেয়ের মুখটাও আর দেখতে চাই না আমি। ফাহাদ আবরারকে নিয়ে মজা করার মজা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবি।

বলেই গটগট পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। ইলমি অপমান,লজ্জা, ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ধপ করে ছাঁদের মাঝখানটায় বসে রইলো।

চলবে,,,,,