অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৮

0
86

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৮
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা – ১১৪০

রাত বাড়লো, ঘড়ির কাটা গিয়ে ঠেঁকলো ২.১৫ মিনিট । শহরে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা,নির্জনতায় ঘেরা রাত। রাতের আঁকাশটা বোধহয় আজ ভীষন একা । রাতের আঁকাশটায় দল বেঁধে ছুটে বেড়াচ্ছে মেঘেরা। মেঘের আড়ালে ডুবে আছে চাঁদটা। প্রতিদিনের ন্যায় আকাশে জ্বলজ্বল করা তারকা রাজির দেখাও মিলছে না আজ। থেকে থেকে দূরের আকাশ থেকে ভেঁসে আসছে গুড় গুড় আওয়াজ। চাঁরপাঁশটা নিস্তব্ধতায় ঘেরা।কোলাহলে পরিপূর্ণ শহরে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতায় ঘেরা রাত। সারা শহর, গাছ-পালা, সব যেনো ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকারা রাত জেগে গান গাইছে। আবরার বেলকনির ইজি চেয়ারটায় বসে সিগারেট ফুঁকছে। সিগারেট ছেঁড়েছে প্রায় বছর পাঁচ। পাঁচ বছর পর আজ আবারও নতুন করে সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়ায় নিজেকে পোড়াচ্ছে আবরার। সিগারেটটা ডান হাঁতের আঙুলে চেঁপে টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কারো নাম্বার ডায়াল করতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে ফোনটা পকেটে পুরে নিলো। এতো রাতে নিশ্চয় মেয়েটা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে আর এদিকে তাকে একপলক দেখার তৃষ্ণায়, তার বিরহে তার সদ্য বিবাহিত বর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার কি কোনো খোঁজ রেখেছে ওই মেয়েটা। উহু তা রাখবে কেনো? পারবে তো শুধু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।
আবরার পুনরায় ফোন বের করে গ্যালারি ওপেন করতেই ভেসে উঠলো একটা ছোট্ট মুখ যে এই মুহুর্তে আবরারের ফটোতে চুমু দিতে ব্যস্ত। ছবিটা ২ বছর আগে তোলা।
মাধ্যমিক পরিক্ষার রেজাল্ট জানাতে এসেছিলো ইলমি। সারা বাড়ী মাথায় তুলে নেঁচে নেঁচে জানিয়েছে তার রেজাল্ট। সেদিনই আবরারকে পরিক্ষার রেজাল্ট জানানোর জন্য আবরারের রুমে যায় কিন্তু আবরারকে রুমে না দেখে বাড়ীতে নেই ভেবে চুপিচুপি আবরারের রুমের দেয়ালে টাঙানো আবরারের ফটোতে চু*মু দিচ্ছিলো ইলমি। আবরার রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে বেলকনি থেকে রুমে আসতে নিলেই ইলমিকে দেখে বেশ অবাক হয়। ভ্রু কুচকে ইলমির পাগলামি দেখে কি মনে হতে ইলমির অ-গোচরে ফোন বের করে মুহুর্তটা ক্লিক করে নেই। বিয়ের দিন ছবিটা দেখাতেই ইলমি হতভম্ভিত চকিত হয়ে আকাশ থেকে পড়লো ভয়ে তার কাঁপা- কাপি অবস্থা। এ ছবিটা আবরারের কাছে কখনোই আঁশা করেনি সে এমনকি এই ছবিটা কারো কাছেই থাকার কথা না সে তো রুমে একা ছিলো ছবিটা আবরার কোথায় পেলো?

ইলমির ছবিটার দিকে তাকিয়ে আবরার বিরবির করে বলে উঠে,,
আমাকে জ্বালনোর শাস্তি ভয়ংকর হবে চড়ুই তৈরি থেকো।

কিছু একটা ভেবে আবরার চড়ুই নামে সেভ রাখা নাম্বারটা ডায়াল করে দু বার রিং হতেই ওপাঁশ থেকে ইলমি ঘুম ঘুম কন্ঠে হ্যালো বলে উঠে। আবরার চট করে চোখ বুঁজে ফোনটা কান থেকে দূরে সরিয়ে নেই। ঠিকই ভেবেছিলো আবরার তার চড়ুই তার চোখের সমস্ত ঘুম কেরে নিয়ে সে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আবরার ভেবে পায় না,,
এই মেয়ের কি সমস্যা কে জানে সব সময়ই নিজ অজান্তে আবরারকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে বসে। এইতো এখনই ইলমির ঘুম ঘুম কন্ঠ-স্বরটা আবরারকে খুব খুব খুব করে টানছে। কি আছে বাচ্চা মেয়েটার মাঝে যা আবরারকে এক মুহূর্তেই উন্মাদ করে তুলে, তোলপাড় করে দেয় আবরারের মতো শক্ত পোক্ত মানুষটাকে।

ইলমি পূনরায় ঘুম ঘুম কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,,,
ইলমিঃ আরে আজব পাবলিক তো, কথা যখন বলবেন না কল কেনো করেছেন? রাত বিরাতে ঘুমের ডিস্ট্রার্ব করতে। ফালতু লোক।

আবরার গম্ভীর-স্বরে হালকা ধমকে বলে উঠে,,,
কার অনুমতি নিয়ে ও বাড়ীতে গেছিস?

কন্ঠস্বরটা চিনতে বেশি বেগ পোহাতে হলো না ইলমির, এতো রাতে আবরারের কন্ঠ-স্বর শুনে ধরফড়িয়ে উঠে বসে দু-হাতে চোখ কচলে ফোনের দিকে তাকাতেই তার চক্ষু চড়ক-গাছ মোবাইলের স্ক্রিনে গোটা-গোটা অক্ষরে লেখা “রাক্ষস,করল্লার বাগান “নামে সেভ করা নাম্বার দেখে বেশ অবাক হয়। এতো রাতে লোকটা তাকে কল করেছে এটাও ভাবা যায়। লোকটা তো রাতা-রাতি পুরোটা চেন্জ হয়ে গেছে। ইলমি মশকরা করে বলে উঠে,,
বাহ বাহ বেটা তো সেই বউ ভক্ত। এতো রাতে বউকে কি মিস-টিস করছিলো নাকি? বলেই মুচকি হাসলো। আবরার পুনরায় ধমকে বলে উঠলো,,,

আবরারঃ কথা বলছিস না কেনো? কার অনুমতি নিয়েছিস?

ইলমিঃ আব্বাজান আর ফুফা ,,

আবরারঃ রাখ তোর আব্বাজান। তোর আব্বাজানরে গুল্লি মারি। তোর আব্বাজানের সাহস কি করে হয় এমপি ফাহাদ আবরারের বউকে তার অনুমতি ব্যতীত নিয়ে যেতে,,
ইমরুল তালুকদারের কথা উঠতেই আবরার বিরবির করে বলে উঠলো,,
সে তো মীর জাফরের বংশধর। না হলে কে নিজের ছেলের সাথে এতো বড় শত্রুতা করে।

ইলমি থতমত খেয়ে বলে উঠে,,,
হু, কি, কিছু বললেন?

আবরার গম্ভীর গলায় বলে উঠে,,
না ফোন রাখ।

ইলমি থতমত খেয়ে বলে উঠে,,,
ফোনটা তো আমি করি নি আপনি করেছেন ?

আবরারঃ অ্যাইইই চুপ একটাও কথা বলবি না দূরে গিয়ে বুলে ফুটেছে তাই না?

ইলমিঃ আমি কি করলাম আবার।
কথা শেষ করার পূর্বেই আবরার খপ করে ফোনটা কেটে দেয় টুট-টুট শব্দ হতেই ইলমি ফোনটা কান থেকে সড়িয়ে বিছানায় রেখে বলে উঠে,,
আরেব্বাস আমি আবার কি করলাম আজব তো।
লোকটা কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? এমন আজব আচরন কেনো করছে? ইলমিরে তোর কপাল বোধহয় পুঁড়লো শেষ মেষ তোর কপালে বোধহয় একটা পাগল বরই জুটে।
( বলেই শব্দ করে হেঁসে উঠে।)

—————-

কেটে গেছে দু-দিন।
আবরার এ দু-দিন এতো এতো পরিমান ব্যস্ততায় ছিলো যে বাড়ীতে আসার সময়টাও হয়ে উঠে নি ঠিক মতো। ড্রয়িংরুমে ইমরুল তালুকদার প্রতিদিনের মতো সকালের নিউজ পেপারে চোখ বুলাচ্ছিলেন। ১০ টায় আবরার একদম রেডি হয়ে নিচে নামে। ইমরুল তালুকদার আড়-চোখে ছেলের পানে চায় ছেলে তার একদম নতুন জামাই সেজে নেমেছে। আবরার ভ্রু কুচকে ইমরুল তালুকদারের দিকে চাইতেই ইমরুল তালুকদার ছেলের থেকে চোখ নামিয়ে নিউজ-পেপারে মনোযোগ দেয়। আবরার সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ড্রাইনিংয়ে গিয়ে বসে আছমা বেগম ব্যস্ত হাতে ছেলেকে এটা ওটা তুলে দিতে শুরু করেন। আবরার খেতে খেতে গম্ভীর স্বরে বাবার উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,
আবরারঃ শত্রুতা শেষ হয়েছে?
ইমরুল তালুকদার ছেলের কথায় ভ্রু কুচকে নিউজ পেপার রেখে বলে উঠে,,
মানে কি বলতে চাইছো? কি বুঝাতে চাইছো তুমি?

আবরারঃ যা বলতে চাইছি আপনি বুঝেছেন নাটক করার প্রয়োজন নেই।

ইমরুল তালুকদারঃ অসভ্য ছেলে। তোমার মতো অসভ্য, বর্বর, এমন ছেলেকে কেনো যে মানুষ এমপি বানিয়েছে কে জানে। ভদ্র ভাবো কথাটাও বলতে পারো না।

আবরারঃ বেশি কথা আমার পছন্দ নয়,,,

ইমরুল তালুকদার এবার তেড়ে এসে বলে উঠলেন,,,
আমিও তোমার মতো অ-সভ্যের সাথে কথা বলতে চাই না। জহির ভাইজান তোমাদের বিয়েটা মানেন না। সে চায় না ইলমি তোমার মতো এমন অভদ্রের সাথে সংসার করুক। শুধু ভাইজান না আমিও চাই না তোমার মতো এমন অভদ্রের সাথে ইলমির মতো বাচ্চা একটা মেয়ে সংসার করুক। ক্ষমতা আর ভয় দেখিয়ে জোর করে মেয়েটাকে বিয়ে করেছো তুমি।

আবরার খাওয়ার দিকে মনোযোগ রেখে স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠলো,,
ফাস্ট অফ অল, আপনার আর মির্জা সাহেবের বিয়ে মানা বা না মানা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। বিয়েটা আপনাদের করিনি যে আপনাদের মানতে হবে বরং বিয়েটা ইলমিকে করেছি আর সংসার করবো কি করবো না এটা আমাদের ভাবতে দিন এর মাঝে আপনি আর মির্জা সাহেব নাক গলাবেন না দয়া করে। মির্জা সাহেবকে কল করে বলে দিবেন তার একমাত্র মেয়ের জামাই আজ সন্ধ্যায় তার বউকে নিতে যাবে। বলেই খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলো আছমা বেগম হা করে ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন চোখের সামনে কাকে দেখছেন তিনি কে এটা? এটাই কি তার ছেলে নাকি অন্য কেউ? নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না আছমা বেগম । ইমরুল তালুকদারও অবাক চোখে ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খেলো ,,,

এই ছেলে কে? কোথা হতে আসলো এই ছেলে। একে তো ইমরুল তালুকদার চিনতে পারলো না। এই ছেলে কি আসলেই তারই ছেলে নাকি পাবনা পাগলা-গারদ থেকে পালিয়ে আসা এক পাগল যাকে দেখতে হুবুহু আবরারের মতো ?

চলবে,,,,,