অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৯

0
86

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৯
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা- ১০৮০

মির্জা বাড়ীর গিন্নি আমেনা বেগম আজ ব্যস্ত হাতে কয়েক পদের রান্না করছেন। যতই হোক আবরার তার এক মাত্র মেয়ের জামাই। বিয়েটা যেভাবেই হোক বিয়েটা তো হয়ে গেছে আর আবরার তার একমাত্র মেয়ের জামাই। বিয়ের পর প্রথম মেয়ের জামাই তার শশুর বাড়ী আসবে এতটুকু আপ্পায়ন তার পাওনা। এদিকে জহির মির্জা ভ্রু কুচকে স্ত্রীর কার্জ-কলাপ দেখে চলেছেন। যেখানে সে মেয়ের বিয়েটাই মানতে চাইছে না সেখানে তার স্ত্রী কিনা মেয়ের জামাই মেয়ের জামাই বলে নেচে-কুঁদে রান্না করতে বসে গেছে। শেষ-মেশ সব বাজার কিনা তাকে দিয়েই করানো হলো।
ইমরুল তালুকদার বির-বির করে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,,,
ঘরের শত্রু বিভীষণ।

আবরার ছেলে হিসেবে খারাপ নয় এটা জহির মির্জা জানেন। নিজের ভাগনেকে সে আপাদ-মস্তক পুরোটাই চিনেন এবং জানেন । জন্ম নেওয়ার পর থেকে চোখের সামনে আবরারকে বড় হতে দেখেছে। মেয়ের জামাই হিসেবে আবরারের মতো ছেলেই হইতো সব বাবা প্রত্যশা করে কিন্তু আবরার আর ইলমির মাঝে বিস্তর ফারাক, একদিকে আবরার গম্ভির প্রকৃতির মানুষ, ভীষণ রাগী, গোছালো, স্ট্রং পার্সোনালিটির,সব বিষয়ে কথা কম বলা তার স্বভাব, অন্যদিকে ইলমি অ-গোছালো, একটু ধমকেই কেঁদে কুটে তার বেহাল দশা, কথার উপর কথা বলা , সারাদিন নেঁচে বেঁড়ানো তার স্বভাব। এমন উড়ন-চন্ডী, চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে আবরারের মতো গম্ভির ছেলের সাথে কিভাবে সংসার করবে ? যদিও আবরার বুঝদার একটা ছেলে কিন্তু ইলমি? ইলমি তো বাচ্চা একটা মেয়ে,অতোটুকু বাচ্চা মেয়ে কিভাবে সব কিছু সামলাবে? এসব ভেবেই জহির মির্জা বিয়েটাতে না মত করেন৷ বাবা মার কাছে কি সন্তানরা কখনো বড় হয়? তাদের কাছে সন্তানরা সেই প্রথম দিনের মতোই পুঁচকিটাই রয়ে যায়। ঠিক ইলমিও জহির মির্জার কাছে সেই ছোট ইলমিটাই রয়ে গেছেন আর এজন্যই তার রাজ্যের চিন্তা কিন্তু এখন আর তার কিছু করার নেই বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তার মেনে নিতেই হবে। জহির মির্জা দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায় পরপর মেয়ের রুমের দিকে পা বাঁড়ায়। চারঁ-পাশটা বড্ড খালি খালি লাগছে জহির মির্জার । আসলেই কি আঁশ-পাঁশটা খালি খালি লাগছে নাকি বুকের মাঝ-খানটায়? মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই, কোনো কিছুর কমতি রয়েছে । বুকের মাঝ-খানটায় খাঁ খাঁ করে উঠছে অজানা এক ব্যথায়। এমন শূন্য শূন্য কেনো লাগছে? মেয়ের অ-দূর বিদায়ের কথা ভেবে? রাজকন্যা বাবার রাজ্য ছেড়ে যাবে বলে বাবার এমন শূন্য শূন্য লাগছে? তাই হবে হয়তো!

——————-
ঘড়িতে সন্ধ্যা ৭ টা
ইলমি ড্রয়িংরুমে সোফায় দু পা উঠিয়ে আয়েশ করে বসে মুড়ি আর চানাচুর মাখা খেতে খেতে সিরিয়াল দেখছে। আমেনা বেগম রান্না বান্না শেষ করে ব্যস্ত হাতে সব কিছু ড্রাইনিংয়ে গুছিয়ে রাখছেন।
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠতেই ইলমি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে সদর দরজায় চায় তবে উঠে না।

আমেনা বেগমঃ কলিংবেল বাজছে শুনছিস না ইলমি? দেখ কে এলো।

ইলমিঃ আমি পারবো না আম্মা, দেখছো না সিরিয়াল দেখছি।

আমেনা বেগম মেয়ের কথায় ভ্রু কুঁচকালেন। এমন অলস, বাঁদর একটা মেয়ে আল্লাহ যে তাকেই কেনো দিলেন কে জানে। ইলমিকে নিয়ে আমেনা বেগমের চিন্তার শেষ নেই। এই মেয়ে শশুর বাড়ীতে কি করবে কে জানে? এবার যখন কপাল করে আছমা বেগমের মতো একজন শাশুড়ী পেয়েছে আমেনা বেগমের চিন্তা কিছুটা হলেও কমে এসেছে৷ আমেনা বেগমের ভাবনার মাঝে আবার কলিংবেল বেজে উঠতেই আমেনা বেগম রান্না ঘরের দিকে যেতে গিয়েও ফিরে এলেন হালকা চেঁচিয়ে বললেন,,,
ইলমি যাবি নাকি আমি আসবো? আমি যদি ওখানে যাই তোর বংশের ১২ টা বাঁজাবো বলে দিলাম বাঁদর মেয়ে।

ইলমি দাঁত দেখিয়ে হেঁসে বলে উঠে,,,
আরে আরে আরফুর মেয়ে চেইত্তা যাইতেছে কেনো? যাচ্ছি তো বাবা যাচ্ছিহ।
( ইলমির নানুর নাম আরফান মাঝে মাঝে আমেনা বেগমকে রাগাতে ইলমি এমন বলে)

আমেনা বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,,
বাঁদর মেয়ে আসলে তোকে বলে লাভ কি? দোষ তো তোর বংশের। সব দোষ তোদের মির্জা বংশের।

ইলমি যেতেই যেতেই মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,,,
হ্যাঁ হ্যাঁ আর তোমাদের বংশ তো খুবই ভালো। একদম দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা, তার জল-জ্যান্ত প্রমান চোখের সামনে দেখছি হুহ।

আমেনা বেগম মেয়ের দিকে চেয়ে চোখ পাকালেন পরপর রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।

_______

ইলমি সদর দরজা খুলতেই হতভম্ব হয়ে যায়, চোখ বড় বড় করে সামনে তাকায় , দরজা খুলতেই দেখে ব্লাক স্যুট, হোয়াইট শার্ট, যার হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ট করা, চোখে ব্লাক সানগ্লাস, হাতে দামি ঘড়ি, ব্লাক স্নিকাস পরিহিত সুদর্শন পুরুষ মানুষ আবরার দাঁড়িয়ে। ইলমি মাথা উপর নিচ করে অবিশ্বাস্য চোখে আবরারকে দেখতে ব্যস্ত, সুঠামদেহী শ্যামবর্ণের এই পুরুষটাকে ভীষণ ভীষণ সুদর্শন লাগছে। প্রতিদিনের থেকে আজ যেনো একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। চোখের সামনে এ কাকে দেখছে? আগে ছিলেন নেতা আর এখন হয়েছে হিরো। এতো পুরাই চেন্জ। ইলমি মুহূর্তেই টাশকি খেয়ে বসলো। দুদিন আগেও যাকে বিয়ে করবেনা, বিয়ে করবেনা বলে কাঁদছিলো আজ তাকে নিজের বর বলতে ভিষণ ভিষন ভালো লাগছে? লোকটা এত্তো কিউট। এই কিউট লোকটা কিনা ইলমির বর ভাবা যায়?

সেই সাথে বেশ অবাক ও হলো এ সময় আবরাকে এখানে আশা করে নি ইলমি। আবরার আসবে এটা ইলমিকে জানানো হয় নি। তবে ইলমি কিছু একটা আন্দাজ করেছিলো মায়ের এমন রান্না বান্নার আয়োজন দেখে তবে আবরার আসবে এটা সে কখনোই ভাবেনি। গত ৫ বছরে আবরার মাত্র একবার এ বাড়ীতে এসেছিলো তাও শুধু মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য।

আবরার চোখ থেকে স্লান-গ্লাসটা নামিয়ে বুকের কাছে শার্টে লাগিয়ে ভ্রু কুচকে ইলমির ভাব-ভঙ্গি দেখে, পরপর গম্ভির-স্বরে ধমকে বলে উঠে,,,
কি সমস্যা? এভাবে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কি চাইছিস ভিতরে যেতে দিবি না নাকি? দরজা থেকে সর বে*য়া*দব।

ইলমি ভড়কালো পরপর দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো থতমত খেয়ে বলে উঠলো,,
আপনিইই ?

আবরার ভ্রু কুচকালো, কিছু না বলেই ভিতরে ঢুকে পড়লো ইলমি দরজা আটকাতে নিলেই রহমত (আবরারের ড্রাইভার) একগাদি ফল-মূল, মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়। দরজা খোলা রেখেই ইলমি আবরারের পিছু পিছু ছুটলো ড্রয়িংরুমে যেতেই আমেনা বেগম রান্না ঘর থেকে ছুটে আসলেন। জহির মির্জা স্ত্রীর ডাকে নিচে নেমে এলেন। আবরার কৌশল বিনিময় করতেই জহির মির্জা গম্ভীর স্বরে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,,,
জার্নি করে এসেছো, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

আমেনা বেগমঃ যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে তারপর এসো। ইলমি আবরারকে রুমে নিয়ে যা।

ইলমি পুতুলের ন্যায় দু-বার মাথা দুলিয়ে এগিয়ে গেলো সাথে সাথে আবরার ও চলে গেলো। জহির মির্জা দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে সোফায় গিয়ে বসলেন। আমেনা বেগম ছুটে গেলেন রান্না ঘরে।

———
ইলমিঃ আরে আরে ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? ওদিকে তো আমার রুম।
আবরার ভ্রু কুচকে বলে উঠে,,
তো?

ইলমিঃ তো মানে আপনি কি আমার রুমে যাবেন ? আপনি তো ভাইয়ার রুমে যাবেন ভাইয়ার রুম তো এদিকে।
আবরার দাঁতে দাত চেঁপে গটগট পায়ে ইলমির রুমে চলে যায়। ইলমি যেনো তাজ্জব বনে গেলো মনে মনে ভাবতে লাগলো এখানে সে ভূলটা কি বললো? এভাবে চটে কেনো গেলো হুয়াই ফাঠকক হুয়াইইইই।

চলবে,,,,,,,,