অতঃপর প্রণয় পর্ব-১০

0
84

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১০
#জেসমিন_জেমি

ইলমি রুমে আসতেই আবরারকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়িটা খুলতে দেখলো। আবরার ইলমির উপস্থিতি টের পেয়েও পিছু ফিরলো না। ইলমি রুমে এসে তার পাঁশে এসে দাঁড়ালো এবারেও আবরার ইলমির দিকে চাইলো না বরং গটগট পায়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ইলমি বিরস মুখে ধীর পায়ে বিছানায় গিয়ে বসে রইলো কিছু সময় পার হতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে বলে উঠলো ,,,
এখানে আমি কি করবো? আম্মাজান কেনো ঠেলে-ঠুলে পাঠালো? ধ্যাত ভাল লাগে না। আহারে আমার সাধের সিরিয়ালটা মিস হয়ে গেলো।

দরজায় খট করে শব্দ হতেই ইলমি উঠে দাঁড়ায়, সেদিকে তাকাতেই দেখে আবরার ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়ানো কপালে বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমে আছে, সিল্কি চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। ইলমির কি যেনো হলো, অবাক চোখে আবরারকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
কি স্নিগ্ধ লাগছে রাক্ষসটাকে । ইলমি নজর সরাতে পারলো না। বিরবির করে বলে উঠলো,,

রাক্ষসরাও এতো সুন্দর হয়? আচ্ছা পুরুষ মানুষ কেনো এতো সুন্দর হবে? কেনো? কেনো? কেনো?
মূহুর্তেই ইলমি আবরারকে নিয়ে সিনেমাটিক ভাবনায় ডুব দিলো যেখানে তারা সুন্দর মুহর্ত কাটাচ্ছে।নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জায় লাল নীল সাদা রং ধারন করছে।

আবরার ভ্রু কুচকে ইলমির ভাবভঙ্গি দেখছে। ইলমিকে বির বির করতে দেখে আবরার গম্ভীর স্বরে ধমকে উঠলো ইলমি ভয় পেয়ে ভাবনা থেকে ছিটকে বাস্তবে ফিরলো সামনে আবরারকে দেখে নিজ মনে বলে উঠলো,,,

শালা করল্লা দিলি তো আমার সুন্দর লুতুপুতু জামাইডারে রাক্ষস বানাইয়া। তোর ভালো হইবো না দেখিস। তোর বউ তোরে কহনো ভালা পাইবো না।

কিন্তু মুখে কিছু বললো না চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। কারন তার আম্মাজান পয়পয় করে বলেছে কোনো রুপ দুষ্টামি না করতে আবরারের সামনে একদম লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকতে। মায়ের কথা রাখতেই ইলমি লক্ষী হয়ে আছে নয়তো উলটে একটা ধমক বসাতো । লোকটাকে দেখে ইদানিং তেমন ভয় পায় না ইলমি। তবে মাঝে মাঝে বেশ লজ্জা পায়, ভীষণ লজ্জা, লজ্জায় লাল,হলুদ, নীল হয়ে যায় আর কি।

আবরার ভাবুক দৃষ্টিতে ইলমিকে পর্যবেক্ষণ করছে। এমন শান্তিতে থাকার মেয়ে আপাদত ইলমি নয় । আবরার ভ্রু কুচকে গম্ভির স্বরে ডেকে উঠলো,,,

আবরারঃ এদিকে আয়।

ইলমি ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় দুজনের মাঝে বেশ দূরত্ব রেখেই দাঁড়ায়। আবরার ভ্রু কুচকে একটু এগিয়ে ইলমির হাত শক্ত হাতে চেঁপে নিজের একদম কাছে টেনে নেয়। ইলমি বেশ চমকালো সেই সাথে লজ্জাও পেলো। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। আবরার ইলমিকে লজ্জা পেতে দেখে ইলমির অগোচরে ঠোট চেঁপে হাসলো ভীষণ সুন্দর সেই হাসি। ইলমি যদি সেই হাসি দেখতে পেতো হয়তো নতুন করে আবার প্রেমে পড়ে যেতো। আফসোস ইলমি দেখলো না। ইলমির লজ্জার পরিমান বাড়িয়ে দিতে মাথা ঝুঁকিয়ে নামিয়ে ইলমির চোখে-মুখে ফুঁ দিয়ে বসলো ইলমি সাথে সাথে চোখ বুজে নিলো। এই লোকটার কাছে আসলে ইদানিং ভয় না পেয়ে লজ্জা কেনো পায় কি অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার ।
হঠাৎ আবরার ধমকে উঠলো ইলমি ছিটকে সরে যেতে নিলেই আবরার ইলমির হাত থেকে তোয়ালেটা কেঁড়ে নিলো। দুহাতে ইলমিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো।

আবরারঃ যা সর ।
বলেই গটগট পায়ে আয়নার সামনে চলে গেলো

এদিকে ইলমি যেনো তাজ্জব বনে গেলো।কি হলো এটা? সব কিছুই মাথার উপর দিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো অপমানে লজ্জায় কিছু বলার ভাষা খুজে পেলো না পরপর রাগে তার শরীর জ্বলে উঠলো। রাগে ফুসফুস করতে করতে নিচে চলে গেলো।
আবরার বাঁকা হাসলো পরপর রেডি হয়ে সেও নিচে চলে এলো ।

———————-

রাত ৮ টা।
বিনা মেঘে, বিনা নিমন্ত্রনে ধরনী কাঁপাতে ঝুম বৃষ্টির আগমন হলো। এসময়ে বৃষ্টির আগমনে কেউ বিরক্ত হলো না বরং সবাই খুশিই হলো। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট হওয়ার পর একমাত্র আল্লাহর রহমতের বৃষ্টিতেই মানুষের শান্তি মিলে। বাহির থেকে বৃষ্টির ঝুপ-ঝাপ শব্দ ভেসে আসছে। ইলমি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উত্তেজিত হয়ে রান্না ঘরের জানালায় উঁকি দিয়ে বাইরে বৃষ্টি দেখছে। আবরার আড়-চোখে ইলমিকে পরখ করে নিচ্ছে। মেয়েটা খাচ্ছে না খাওয়ার প্রতি তার কোনো মনোযোগ নেই, তার সমস্ত মনোযোগ বাহিরের বর্ষণ হওয়া সেই ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য কত উত্তেজনা কত উন্মাদনা এই মেয়েটার মাঝে। যে কেউ দেখেই বলে দিবে মেয়েটা ভীষণ রকমের বৃষ্টি বিলাসিনী । আমেনা বেগম আবরারের চাহনি অনুসরণ করে মেয়ের দিকে তাকাতেই দেখেন মেয়ে তার খাবার প্লেট সামনে রেখে বসে আছে একটা দানাও মুখে তুলছে না।

আমেনাঃ খাচ্ছো না কেনো ইলমি।

ইলমি কোনো রুপ ভনিতা ছাড়াই বলে উঠলো,,
খেতে ইচ্ছে করছে আম্মা। আমি আর খাবো না।
পাশেই ইমির বসা ছিলো বোনের কথায় এতোক্ষণে সে মুখ খুললো।

ইমিরঃ ইলমি বসো এখানে।

ইলমি ভাইজানের আদেশে চুপচাপ বসে পড়লো। ইমির ব্যস্ত হাতে বোনের মুখের সামনে লোকমা তুলে ধরতেই ইলমি মুখে পুড়ে নিলো। আবরার ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,,
আদরে বাঁ*দর হয়েছে একদম।

_______________

জহির মির্জা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ছোট খাটো একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করেই মেয়েকে শশুর বাড়ীতে পাঠাবে এর আগে নয় আর বিয়ের সব কিছুই হবে বড়দের মতামত নিয়ে। আবরার যখন এসেছে থাকুক তবে ইলমিকে নিয়ে যেতে পারবে না। বলেই গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গেছে । এসব শুনে আবরার প্রচন্ড রেগে গেলোও এই মূহুর্তে সে চুপ আছে। বৃষ্টির থামার নাম নেই, ঘড়িতে ১২.৫০।
আবরার ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ইমির, আমেনা বেগম হাজার বলার পরও আবরার বললো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে ডাকে যেতেই হবে । এই তুমুল বৃষ্টির রাতে ছেলেটা ফিরে যাবে বলে আমেনা বেগম চিন্তার শেষ রইলো না। বৃষ্টির রাত এতোটা পথ জার্নি করে যাবে ভাবতেই এবার ইলমির মনেও ভয় কাজ করলো। তার আম্মাজান বিলাপ করে বলছিলো এইতো ১বছর হবে ছেলেটা এমপি পদে জয়লাভ করেছে । রাজনীতিতে সে নতুনই বলা চলে। বাহিরে ছেলের কি শত্রুর অভাব আছে নাকি? এ রাত বিরাতে কেনো যেতে হবে?

আবরারের উপর রাগ থাকলেও এই মুহর্তে মাথা থেকে তা ঝেঁড়ে ফেলে দিলো ইলমি । মনে মনে পণ করলো যে করেই হোক আজকে লোকটাকে যেতে দিবে না মানে দিবেই না হুহ। কিন্তু এই রাক্ষসটাকে যেতে বারন করলেই কি রাক্ষস টা ইলমির কথা শুনবে নাকি? উলটো দু চারটে ধমক দিয়ে বসবে। ইলমি ভয়ে ভয়ে ধীর পায়ে আবরারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আবরারের দিকে চাইতেই আঁতকে উঠলো।ভয়ে তার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। আবরারের চোখ দুটো ভীষণ লাল । ইলমি বুঝতে পারলো লোকটা ভীষণ রেগে আছে। আবরার রুম থেকে বের হতে নিলেই ইলমি কি করবে, না করবে, কিভাবে যেতে না করবে ভেবো পেলো না পরপর কি মনে করে দৌড়ে পিছন থেকে আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো,,,
প্লিজ প্লিজ প্লিজ আজকে যাবেন না।

আবরারের কি হলো কে যানে মুহূর্তেই সকল রাগ যেনো উধাও হয়ে গেলো। সারা শরীর নিমিষেই ঠান্ডা হয়ে গেলো । হৃদয়ে এক অদ্ভুত শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো যা উত্তপ্ত হৃদয়টাকে মুহূর্তেই শীতল করে দিয়ে গেলো। আবরার ভ্রু কুচকে পেছন ফিরে ইলমির দিকে চাইলো। শুধু মাত্র তাকে আটকানোর জন্য কি অভিনব কৌশল অবলম্বন করলো ভাবা যায়।

আবরার কিছু বলছে না দেখে ইলমি আবরারের বুকে নাক ঘষে আবদার সূরে বলে উঠলো,,,
আমরা নিউলী কাপল তাই না? বাইরের কি সুন্দর ওয়েদাররররর । আমার বর চাই হুহ।

মেয়েটার এমন কথায় আবরার ঠোঁট কামড়িয়ে হেসে উঠে। আবরার এবারো কিছু বললো না তবে সেও শক্ত হাতে ইলমিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। অতঃপর, তার এতো এতো রাগ সামান্য একটা বাচ্চা মেয়ের স্পর্শ পেতেই হাওয়া হয়ে গেলো।

—————

ইমির বেডে আধঁ শোয়া অবস্থায় ল্যাপটপ বুকের উপর রেখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলো ।এমন সময় ফোন টুংটাং আওয়াজ করে বেজে উঠলো। ইমির মেসেজের শব্দে বেশ বিরক্ত হলো, বিরক্তি নিয়ে মেসেজ অপশন অন করতেই দেখে আবিরার মেসেজ। ওইদিন মুখের উপর শক্ত কিছু কথা বলায় দুদিন মেসেজ করলো না। আজকে আবার তার মেসেজ। এই মেয়েটা এতো পাগলামি কেনো করছে ইমির ভেবে পেলো না৷

আবিরাঃ ভাইজান কি আজ আসবেন?
( যদিও আবিরা মায়ের কাছে শুনেছে তার ভাইজান আসবে না কিন্তু কি আর করার কথা বলার জন্য কোনো একটা ওয়্যের দরকার ছিলো)

ইমির সাথে সাথে রিপ্লাই করলো,,
না।

এভাবে মেসেজের সাথে সাথে রিপ্লাই পেয়ে মনটা নেঁচে উঠলো আবিরার পরপর মেসেজ লিখে পাঠালো।

ও আচ্ছা। আপনি কি বিজি?

ইমির বেশ সময় নিয়ে লিখলো,,
হু ।

আবিরার এবার কান্না পেলো দশ বছর পর পর লোকটা রিপ্লাই করে। এই রষকষহীন লোকটা সব সময় তাকে ইগনোর করে । এমন লোককে আবিরা কেনো যে ভালোটালো বাসতে গেলো কে জানে পরপর পাঠালো,

আপনার সাথে কথা ছিলো।

ইমির বেশ কিছুক্ষণ পর পাঠালো,,
ঘুমাও, আল্লাহ হাফেজ।

আবিরা এবার অস্ফুটস্বরে কেঁদে উঠলো ফোনটা ছুঁড়ে মারলো বিছানায়। কেনো এমন করেন ইমির? কি দোষ আমার? আপনাকে ভালোবাসাই কি তবে আমার অপরাধ? যদি তাই হয় তবে আপনিও আমার সাথে সমান অপরাধী ৷ আপনি আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছেন ইমির আর আমি ভালোবেসেছি আর ভালোবেসে যাবো।

চলবে,,,,,,,,,,,,

(ভুলত্রুটি মার্জনীয় )