অতঃপর প্রণয় পর্ব-১১+১২

0
126

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

১১
হলুদ রঙ এর কাঞ্জিভরম শাড়ি পরে বসে আছে মেঘলা৷ কোমর ছাড়ানো চুল গুলো খোলাই আছে৷ কাঁচা হাতে নিজের বড় চুল গুলো খোপা করলো বেশ যত্ন করে কাজল পরলো৷
সাজগোছ সে খুব একটা পারেনা৷ এই প্রথম সাজলো নিজের হাতে৷
অহনার বান্ধুবির বিয়ে৷ মেঘলার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না অহনা আর ওর মামি জোর করলো৷

মামিই শাড়ি পরিয়ে দিলো তাকে৷ এ শাড়ি চুড়ি সব তার মামিরই৷
রেডি হয়ে বের হলো অহনা আর মেঘলা৷ বাড়ির নিচে আসতেই দেখা মিললো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে৷ অহনাকে দেখেই এগিয়ে এসে বললো,
“এতক্ষণ লাগে রেডি হতে? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোর৷ ”

অহনা বললো,
“আমি তৈরি হয়ে বসেই আছি এই মেয়েটাই তো দেরি করলো৷ ”
মেঘলাকে দেখে হেসে জড়িয়ে ধরলো সোহানা৷ মেয়েটার কথা এত দিন শুনেছে আজ দেখেও নিলো৷ জড়িয়ে ধরেই বললো,
“ইশ কি মিষ্টিরে তোর বোন অহনা৷ ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসিস না কেন?”

অহনা বললো,
“ব্যাস্ততায় পারলাম কই? যাবো যাবো চল এবার যাওয়া যাক৷ ”
অহনা আর সোহানা গাড়িতে উঠলো৷মেঘলা ও গাড়িতে উঠতে যাবে তবে গাড়িতে বসে থাকা লোকটিকে দেখে চমকালো সে৷ এই লোকটা আবার? এ লোক কি করছে এখানে?

-“কিরে উঠছিস না কেন তুই?”

অহনার কথায় স্তম্ভিত ফিরলো মেঘলার৷ ঘণ নেত্রপল্লব ফেললো৷ শুকনো ঢোক গিললো৷ এ লোকটার সাথেই কেন দেখা হচ্ছে তাদের? আশ্চর্য!
“উঠছি৷”
বলে উঠতে যাবে কিন্তু ঠিক তখনই শোভন গম্ভীরমুখে বললো,
“তোদের কি আমায় তোদের ড্রাইভার মনে হয়? ”

সোহানা ভরকালো৷ ভাই তার ভীষণ রাগী পাশাপাশি অহনা আর তার বাড়ি হলেও খুব একটা দেখা হয়না বললেই চলে৷ ইউনিভার্সিটি আলাদা হওয়ায় দু-জনই ব্যাস্ত থাকে এতদিন পর বান্ধুবিকে পেয়ে ভুলেই বসেছিলো প্রায়৷ কত কথা জমে আছে৷
সোহানা এবার বললো,
“মেঘলা তুমি একটু ফ্রন্ট সিটে বসো না পাখি? আমাদের অনেক দিন পর দেখা হলোতো এখন যদি আমি ভাই এর কাছে গিয়ে বসি পেটের কথা পেটেই থেকে যাবে৷ ”

মেঘলা পরলো মহা বিপাকে৷ সব খারাপ কেন তার সাথেই ঘটে সে বোঝে না৷ এই ভাব ওয়ালা লোকটার সাথে বসতে হবে তাকে? এর থেকে তো বাড়িতেই থাকা ভালো ছিলো৷ আর সে এটাই বোঝে না এ লোকটার সাথেই কেন সব রেখে তার দেখা হয়?
অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনা৷ আসলে সৃষ্টি কর্তা চায় কি? মেঘলা মুখ ভাড় করে বসলো সামনে৷ শোভনের দৃষ্টি সামনের দিকে৷ খানিকটা আড়ষ্ট চোখে তাকালো মেয়েটার কাটকাট কন্ঠে বললো,
“সিট বেল্ট বাঁধুন মেয়ে৷ ”
আকস্মিক এমন কাট কাট কন্ঠে মেঘলা নড়ে উঠে৷ মানুষ যখন বেখেয়ালি হয়ে থাকে তখন হুট করেই কেউ যদি এমন কন্ঠে কথা বলে৷ ভয় পাবে না কে? লোকটা কি কোমল স্বরে কথা বলতে পারেই না? আশ্চর্য৷

মেঘলা সিট বেল্ট এর বেল্ট টার দিকে তাকালো একবার৷ ঘুরে অহনার দিকে তাকালো একবার৷ মানে সে পারে না৷ অহনা হাসলো খানিকটা৷ অস্বাভাবিক কিছুই না৷ অহনা বললো,
“ভাইয়া ও তো বাধতে পারে না৷ এ ঠিকঠাক হয়ে বসুক বরং এভাবেই তুমি গাড়ি স্টার্ট দাও৷ ”

শোভন নির্লিপ্ত রইলো ভাবলো খানেক অতঃপর সবাইকে চমকে দিয়ে নিজেই সিট বেল্ট খানা লাগিয়ে দিলো৷ সোহানা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো৷ তার ভাই এ কাজ করেছে? আশ্চর্যবনে গেলো বেশ৷

শোভন বেশ ইগোয়েস্টি ছেলে৷ খুব সহজে তাকে কিছু বলতেও বাড়িতে সবাই ভয় পায়৷ তার উপর বিয়ে ভাঙার পর থেকে তো বাড়ির লোক খুব একটা কিছু বলেও না৷ সে কিনা অন্য একটা মেয়ের সীটবেল্ট বেধে দিলো৷ বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার৷
মেঘলা ও লাজুক হয়ে শক্ত ভাবে বসে আছে৷ শোভন মেঘলার আড়ষ্ট হয়ে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

শোভন খুব একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে এট্যান্ড করেন না বললেই চলে৷ কিন্তু যার বিয়েতে যাচ্ছে এটা ওর বাবার খুব কাছের বন্ধুর মেয়ের বিয়ে৷ বাড়ির সবাই সেই কখন চলে গেছে সোহানা তাকে জোর করে গাড়ি সহ রেখে দিলো৷ বাবার বন্ধুর মেয়ে হলেও ওরা এক সাথেই পড়াশোনা করেছে ছোটো বেলা থেকে৷ সেই সুবাধে তার আর অহনার ও বন্ধু৷ অহনার বাবা মায়ের ও যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু অহনার বাবার শরীর খুব একটা ভালো না তাই দু-জনেরই আসতে হলো৷

দশ মিনিটের পথ অহনাদের বাড়ি থেকে রিশারর হলুদের ভেন্যু ৷ খুব একটা সময় লাগলো না আসতে৷ গাড়ি থেকে নামতেই অহনা আর সোহানা এগিয়ে গেলো৷ প্রায় বেমালুম ভুললো সাথে একজন আছে৷ দু-জন এক সাথে থাকলে দিন দুনিয়াও ভুলে বসে প্রায়৷ অহনা আর সোহানাকে আগে যেতে দেখে হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলো৷ দরজা খুলে বের হতে যাবে কিন্তু এত টানাটানির পরেও দরজাটা খুলতে পারলো না৷

শোভন ফোস করে নিশ্বাস টানলো৷ বিরবির কন্ঠে বললো,
“ইউজলেস মেয়ে৷ ”
অতঃপর নিজে গাড়ি থেকে বের হলো ঘুরে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে সরে গেলো৷ মেঘলো বের হলো গাড়ি থেকে ইতস্তত হলো৷ ইশ মানুষ কে কত জ্বালাচ্ছে সে৷ মেঘলা বের হয়ে ফের দরজাটা আটকে দিয়ে কিছুদূর এগোবে ঠিক তখনি টান খেলো শাড়িটা থমকালো মেঘলা৷ আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো৷
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো৷ গলা শুকিয়ে এলো কেমন৷ শরীরে কম্পন ধরলো৷ মিনমিনিয়ে বললো,

“ছ ছাড়ুন৷ ”
শোভন সাইডেই দাঁড়ানো ছিলো৷ ফোন করেছে ওর বাবা৷ ওর বাবা কাজে দূরে আছে আসতে দেরি হবে৷ এর মাঝেই মেঘলার কন্ঠে তাকালো৷ অবাক হলো৷ মেয়েটা ফ্যান্টাসিতে বসবাস করে নিশ্চিত৷
দাতে দাত চেঁপে বললো,
“এদিকে তাকান মেয়ে৷ ”
কথাটা এত কঠিন স্বরে বললো মেঘলা তড়িৎ গতিতে পেছন ফিরে তাকালো৷ কিন্তু যা দেখলো বিস্মিত না হয়ে পারলো না৷ ইশ কি কেলেংকারী করলো৷ কি ভাবছিলো মাথাটা নিশ্চিত গেছে শাড়িটা গাড়ির দরজায় আটকে ছিলো৷ করুন চোখে তাকিয়ে বললো,
“স স্যরি আমি ভেবেছিলাম৷ ”

শোভন তেড়ে এসে বললো,
“তোমাদের মত মেয়ে এসব ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনা৷”
বলে দরজা টা খুলে শাড়ি ছাড়িয়ে গাড়িটা নিয়ে পার্কিং জোনের দিকে এগিয়ে গেলো৷

মেঘলার চোখ ভরে এলো৷ “তার মত মেয়ে এসবই ভাবে?”
লোকটা জানে ওকে কতটা ছোটো করে গেলো? সে না হয় ভুল করেছে তাই বলে এমন বলবে? লোকটার সাথে দেখা হলেই অপমান করছে৷ তার সাথে কি ওর শত্রুতা আছে?

“কিরে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস? স্যরিরে আমি ভুলেই বসেছিলাম প্রায়৷”
অহনার কথা চোখ মুখ মুছলো মেঘলা তাড়াহুড়ো করে৷ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করলো৷ অহনার পিছু পিছু গেলো৷

।।

এলাকায় শোভনের বাবার দাপট এ শহরে বেশ৷ মানুষ বেশ সম্মান করেন কাউন্সিলর পদে আছেন আপাতত মানুষ তাকে পরবর্তীতে সংসদ সদস্য হিসেবেও চান৷ তবে আফতাব সাহেব চান তার ছোট পূত্র শোভনই পরবর্তী নির্বাচনে দাড়াক৷ এলআকার মানুষ শোভন কে ও বেশ ভালোবাসে৷
সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছে আফতাব সাহেব ছেলেদের ও সেই শিক্ষাই দিয়েছে৷
ছেলে তার বড়ই রাগী বিয়েতে ছেলের বড়ই অনীহা৷ বড় ছেলের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ বন্ধুর মেয়ের সাথেই ওরা দেশের বাইরে থেকে এলেই বড় ছেলের বিয়ে সারবে৷ সে চেয়েছিলো দুই ছেলেকে এক সাথে বিয়ে দিতে৷ তবে এত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কেলেংকারী ঘটেছে৷ যদিও এলাকার মানুষ জন জানেইনা বললেই চলে৷ শুনেছে মেয়ে এতিম৷ মেয়ে দেখতে নাকি রূপবতী তার সাথে বেশ সুশীল ও৷ তার স্ত্রীর বোনই তাদের জানান৷ তাই ভেবেছিলো মেয়েকে দেখতে যাবে যে দিন সে দিনই বিয়ে পরিয়ে রাখবে৷ ওরা রুপ চায়নি ভালো একটা মেয়ে চেয়েছিলো শুধু তাই ছবিতে দেখেনি ভেবেছে একেবারে গিয়েই দেখবে কিন্তু মাঝপথেই মেয়েটি পালায়৷
ভাগ্যিস কাউকে জানায়নি নয়তো এলাকায় মুখ দেখাতো কি করে? সাথে প্রেস মিডিয়াতো আছেই৷ সে মেয়ের মত মেয়ে কারো কপালে না আসুক৷ তার ছেলে বড় একটা বিপদ থেকে বেঁচেছে৷

চলবে,

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

১২

“শরীর যখন দেখাতেই চান শাড়িটা ও খুলে ফেলুন তারপর তো দেখতে বেশি ভালো লাগবে৷ এমন অল্প স্বল্প দেখে তো মন ভরবে না৷ ”
আকস্মিক এহেন কথায় রিনরিনিয়ে উঠলো কর্ণ দ্বয় লোমকূপ দাঁড়িয়ে উঠলো রাগে৷ থমকালো, চমকালো, বিস্মিত হলো মেঘলা৷ সর্বাঙ্গ নিমেষে ঘিন ঘিন করে উঠলো৷ কাপড় চেঁপে ধরলো শক্ত হাতে৷ রাগে দুঃখে ঘৃণায় চোখ ছলছল করে উঠলো৷ চেনা কন্ঠে কথা গুলো শুনে যেন আরো বেশি থমকেছে মেঘলা৷

এটা শোভন নামের লোকটার কন্ঠ না? যে লোকটা ওকে হিংস্র মানুষ নামের পিচাশ থেকে বাঁচিয়েছে৷ সে মানুষটা এসব কি করে বলছে? মুখে বাঁধছে না? লোকোটা পাগল হয়ে গেছে নাকি? একটা মেয়ে কে একটা মানুষ বএল কি করে এসব?
রাগ হলো মেঘলার৷ রাগে রি রি করে উঠলো সর্বাঙ্গ৷ ফস করে শ্বাস নিলো৷
পেছন ফিরে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো৷ যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে সব৷ নাশ করে দিবে এখনই৷ মুখ অবয়বে কঠিনত্ব বিরাজ করছে মেঘলার৷ রণমুর্তি ধারণ করেছে যেন৷ লোকটা বেপরোয়া হেসে সিগারেটে ফুক দিলো৷

যেন কিছু বলেইনি৷ কিছু হয়নি৷ কি নির্লজ্জ মানুষ৷ লোকটা ওকে বাঁচিয়েছিলো ঠিক আছে কিন্তু মাথা কিনে নিয়েছে নাকি? যা খুশি তাই বলবে? যেমন খুশি তেমন আচরণ করবে? ওর কি মান সম্মান নেই? বড়লোক বিত্তশালী বলে যা ইচ্ছে তাই করবে?
ক্ষমতার এত জোর বুঝি? ওকে নিয়ে এমন বলার সাহস পায় কি করে এ লোক? আশ্চর্য৷ ইচ্ছে করছে লোকটার গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিতে৷ কিন্তু সে তো লোকটার মত নিকৃষ্ট না৷ লোকটাকে ভালো ভেবে ছিলো৷ ভেবে ছিলো রাগী তো কি হয়েছে? চমৎকার চরিত্রের মানুষ৷ লোকোতাকে ভালো ভেবেছিলো মেঘলা৷ কিন্তু লোকটা ভয়ংকর খারাপ৷ অত্যন্ত ঘৃণ্য মস্তিষ্কের মানুষ৷

যাতা ব্যাবহার করে মানছে কিন্তু এটা কি ধরণের কথা? মা বোন নেই ঘরে?
ফস ফস করে নিশ্বাস টানলো মেঘলা৷ রাগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রাণপণে চেষ্টা চালালো৷ দাতে দাত চেঁপে বললো,

“কি বলছেন কি? মাথা ঠিক আছে?”

শোভন অদ্ভুত চোখে তাকালো৷ফের সিগারেট ফুক দিলো৷ যে দৃষ্টি দেখে ঘৃনা হলো মেঘলার৷ গা গুলিয়ে এলো৷ কি ভয়ংকর লোক৷ শোভন চোখ সরিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
“আপনি যদি এভাবে সামনে দিয়ে ঘুরেন মাথা ঠিক থাকে কি করে?”

চমকে উঠলো মেঘলা৷ রাগ আশ্চর্যে পরিনত হলো৷ কি বলছে কি লোকটা? মেঘলা কঠিন স্বরে বললো,
“মুখ সামলে কথা বলুন৷ বিত্তবান মানুষ আপনারা তাই বলে ভাবেন যা ইচ্ছে তাই বলতে পারবেন? আপনাকে আমি….!!”

এইটুকু বলতেই থামিয়ে দিলো শোভন হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে সাইডে নিয়ে এলো৷ এ দিকটায় কেউ নেই৷ ছিটকে ফেললো দেয়াল ঘেঁষে তাতে পিঠে সাংঘাতিক ভাবে ব্যাথা পেলো৷ সাথে সাথেই কিছু টের পেলো৷ চমকে উঠলো৷ ব্যাথার থেকে বেশি অন্য দিকে মনোনিবেশ করলো৷ শোভন এবার বললো,
“আপনি দেখালে দোষ না আমি বললেই দোষ? আপনাদের মত মেয়েরা না বুঝেই এক লাইন বেশি বলেন৷ শরীর দেখিয়ে ঘুরছেন৷ ”
বলে মেঘলার কাছে গেলো৷ ওর হাতে থাকা জলন্ত সিগারেট টা উন্মুক্ত কোমরে চেপে ধরলো৷ ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করলো মেঘলা৷ অস্ফুট স্বরে বললো,
“ছ ছাড়ুন৷ ”

শোভন বললো,
“যখন শাড়ি সামলাতেই পারিস না পরিস কেন? কোমর আর পিঠ দেখিয়ে কি ছেলেদের পটাতে চাইছিস? তোদের ভালোটা বলতেই নেই৷ ”

বলে ছিটকে সরে এলো৷ কঠিন চোখে কয়েকবার তাকিয়ে সিগারেট টা নিজের হাতের মুঠোয় চেঁপে ধরে স্থান ত্যাগ করলো শোভন৷
মেঘলা এখনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে৷ পোড়া জায়গাটায় হাত দিলো৷ কোমর টা উন্মুক্ত ছিলো? তার উপর পেছনে ব্লাউজের হুকটাও খোলা ছিলো৷ সে এতক্ষণ এ অবস্থায় ঘুরছিলো? কি সাংঘাতিক৷ সবাই কি ভাবছিলো৷
ইশ লোকোতাকে সে কত কি বলেছে৷ দোষ তার ও তো কম না৷

চোখ মুছে শাড়িটা ঠিক করলো মেঘলা৷ হুকটা তো লাগাতে পারছে না৷ পিঠে ব্যাথা পেয়েছে খুব বেশি৷ হুক আর শাড়ি ঠিক ছিলো না লোকটা ভাল ভাবে বললেই পারতো৷ অদ্ভুত লোক৷ সে ও তো ভুল বুঝে বসলো৷ শাড়িটা কোনো মত পিঠ ঢেকে এগিয়ে গেলো সামনে৷
এদিকে আসতেই অহনার দেখা মিললো৷ অহনার কানে কানে বলল,
“আপু একটু ওই দিকটায় আসবি? আমার হুকটা লাগিয়ে দে না? খুলে গেছে৷ ”

অহনা এলো আড়ালে৷ ব্লাউজটা ওর ঢিলা তাই এমন হয়েছে৷ ফর্সা পিঠ লাল হয়ে আছে তা দেখে অহনা চমকে উঠে বললো,
“হায় আল্লাহ পিঠ টা এমন লাল হয়ে আছে কেন?”
মেঘলা মলিন স্বরে বললো,
“আপু খানিকটা ধাক্কা খেয়ে ব্যাথা পেয়েছি৷ তেমন কিছুই না৷ ”
অহনা তাকালো মেঘলার দিকে বিশ্বাস করলো না৷ কি হয়েছে মেয়েটার বুঝলো ও না৷

।।

আঁধারে নিমজ্জ সব৷ রাত বেরেছে তবে কোলাহল বাড়ছে বই কমেনি৷ শহরে কত কি ঘটে, এইযে মেঘলা এই প্রথম অভিজ্ঞতা করলো৷ এত বড় বিতেয়ে এট্যান্ড করেনি কখনো৷ বাড়ির সবাই গেলেও ও বাড়িতেই ছিলো৷ খুব একটা বের হওয়াই হতো না৷ আর আশেপাশে যদি কোনো বিয়ে হতো এসবের গ্রামে খুব বেশি রাত অব্দি তেমন আর গানবাজনা করা হয় না৷ সমাজের লোকজনের নিষেধাজ্ঞা আছে৷
আর এখানে বারোটার কাছাকাছি প্রায়৷ সবে হলুদ দেওয়া খাওয়াদাওয়া শেষ হলো৷ এখনো গান বাজনা বন্ধের নাম নেই৷ এখন নাকি নাচগান চলবে শুনেছে শহরে এসব শেষ রাত অব্দি চলে৷ তবে তারা আর শেষ রাত অব্দি থাকবে না৷

এতসব চাকচিক্যতা আর এত সাজগোছ এর মাঝে নিজেকে সাধারণ মনে হচ্ছে৷ এতে যদিও তার মাথা ব্যাথা নেই৷
অহনারা এখন চলে যাবে তাই উঠলো চেয়ার ছেড়ে মেঘলা৷ অহনার বন্ধুবীর বিয়ে যেহেতু বেশ ছোটাছুটি করেছে৷ ওকেও সাথে রাখতে চেয়েছিলো মেঘলা এক কোণে চুপটি করে বসেছিলো৷ এবার উঠলো৷ মেঘলা উঠতেই মধ্য বয়সী একটা মহিলা এগিয়ে এলো৷ মহিলাটা ওই লোকের কিছু হয় হয়তো৷ মা হয়তো মেঘলা জানে না৷ লোকটার সাথে দেখেছিলো৷ নিজেকে গুটিয়ে নিলো মেঘলা৷ ভীত চোখে তাকালো কেমন৷ খুব করে চাইলো মহিলাটা যেন তার কাছে না আসে৷
তাহলে কেলেংকারী হবে হয়তো? মহিলাটা তাকে চিনে ফেলেনি তো? মেঘলা অন্য দিকে ভলে যেতেও পারছে না৷ মহিলাটা এগিয়ে এলো অহনা গেছে ওর বন্ধুবীকে বলতে৷
শুকনো ঢোক গিললো৷

তবে তার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে মহিলাটি মিষ্টি হেসে বললো,
“তুমি অহনার বোন হও?”
মেঘলা হাফ ছেড়ে বাঁচলো৷ অবাক ও হলো বটে ইতস্তত কন্ঠে বললো,
“জ্বি৷ ”
রুমানা বেগম মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কি মিষ্টি দেখতে তুমি৷ আমাদের বাড়িতে যেও অহনাকে নিয়ে৷ তা ছাড়া অহনাকে তো আমাদের বাড়িতেই আনবো দেখা সাক্ষাৎ হবেই৷ ”
অপ্রস্তুত হাসলো মেঘলা বুঝলো না কিছুই৷ রুমানা বেগম বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো৷ কেন যেন বুঝলো না কিছু তারপর অন্যদিকে চলে গেলো৷ মেঘলা অবাক হলো কেমন৷ ব্যাপার গুলো অদ্ভুত লাগছে৷ যেন সমীকরণ মিলাতে পারছে না৷

অহনা আর মেঘলা বের হলো সে তখনকার মতই শোভনের গাড়িতেই যাবে তারা৷ শোভন নামক লোকটার সাথে তার মা কি যেন ফিসফিস করলো যাওয়ার সময় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে গেলো৷ তবে যাওয়ার সময় মেঘলা কৌশলে পেছনেই বসলো অহনা ও কিছু বললোনা৷ রাত হয়েছে সবাই ক্লান্ত প্রায়৷ বাড়ির সামনে আসতেই তাড়াহুরো করে নেমে ভেতরে চলে এলো মেঘলা৷ মেঘলার এহেন কান্ডে অহনা বুঝলো না কিছুই৷

চলবে,