অতঃপর প্রণয় পর্ব-১৪

0
179

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১৪
#জেসমিন_জেমি

গা ছমছমে পরিবেশ। রাতের আঁধারে ইলমি বুঝতে পারলো মিলি তাকে পদ্ম-পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ইলমির গা ছমছম করে উঠলো, ভয়ে সারা শরীর কেঁপে উঠলো। সে নিজ মনে ভাবতে লাগলো মিলি তাকে এখানে কেনো নিয়ে এলো? নির্জন, অন্ধকার, লোকজন নেই এমন জায়গায় মিলির কি কাজ থাকতে পারে? মনে মনে এক অজানা ভয় জাগলো। তবে কি ইলমি ভূল করলো মিলির সাথে এসে? কাঁপা কাঁপা গলায় ধমকে বলে উঠলো,,
কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায় ?
হঠাৎ মিলি থেমে যায়, নিজের হাত থেকে ইলমির হাত নামিয়ে নিয়ে বলে উঠলো ,,

তোমার শেষ গন্তব্যে ।

ইলমিঃ ম, ম মানে?

মিলি হেসে উঠলো,
আরে আসো তো ইলমি ,

ইলমি চার-পাঁশে চোখ বুলালো, এমন অন্ধকারে ভীষণ ভয় লাগছে তাঁর, দিন দুপুরে এদিকটায় আসলেও রাতের বেলা এখানে কখনোই আসেনি ইলমি। এদিকটায় গাছ লাগানো হয়েছে, জহির মির্জা বেশ অনেক-টুকু জায়গা মিলিয়ে গাছের বাগান আর পুকুর করেছেন। এখানে বড়, ছোট অনেক গাছ রয়েছে । গাছের কারনে এদিকটা দিনের বেলাতেও অন্ধকার অন্ধকার থাকে, জায়গাটা ভীষণ নির্জন এর জন্য আমেনা বেগম ইলমিকে এখানে আসতে বারন করতেন। বাড়ীর পাঁশে হলেও কিছুটা দূরেই। ইলমিদের বাড়ীর চাঁরপাঁশে বাউন্ডারি করা, ওদের বাড়ীটাতে তিনটা গেইট বাড়ীর পিছনে, সামনের গেইট, আর সর্বশেষ পদ্মপুকুর পারে যাওয়ার জন্য মিনি গেইট।

ইলমি কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিলি এক প্রকার জোর করে হাত টেনে পুকুরের বাঁধাই করা ঘাঁটে নামিয়ে সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে দেয়। মিলি কিছু একটা বলতে নিলেই কিছু অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে। মিলি অন্ধকারে বাকা হাসে ইলমি চমকে উঠে। সেদিকে তাকাতেই মিলি তাড়া দিয়ে বলে উঠে,,

ইলমি পালাও, দৌঁড়াও ।
বলেই অন্ধকারে ছুট লাগায় , কি হলো, কি হচ্ছে? বুঝে উঠার আগেই মিলি দৌড়ে চলে গেলো। ইলমি তারাহুড়ো করে এক হাতে পরনের শাড়ী ধরে দৌড়াতে নিলেই ছিটকে পড়লো। কপালে হাতে বেশ ব্যথাও পেলো। ইলমি অস্ফুট-স্বরে উহ বলেই কেঁদে উঠলো। চেঁচিয়ে মিলিকে ডেকে উঠলো কিন্তু তখনিই বিকট আওয়াজে সাউন্ড বক্সে গান বেজে উঠলো। ফর্সা মুখশ্রী ব্যথায় নীল হয়ে উঠলো, কপালে হাত দিতেই হাতে তরল পদার্থের অস্তিত্ব টের পেলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে দুহাতে শাড়ী ধরে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে নিয়ে টের পেলো পায়েও ভীষন ব্যথা পেয়েছে। কোনো রকম ভাবে উপরে উঠে দাঁড়ালো, অন্ধকার হাতরে দু পা এগুতেই অন্ধকারে কারো ছায়ার মতো অবয়ব দেখতে পেলো। ইলমি চমকালো, দু পা পিছাতেই কিছু একটার সাথে পা লেগে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। হাতের ছিলে যাওয়া অংশে কিছু একটা বিঁধে যেতেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো। পরপর আরো কয়েক জনের উপস্থিতি টের পেলো। হঠাৎ কেউ একজন টর্চ জ্বালাতেই, অস্পষ্ট ৫ জন অচেনা পুরুষের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠলো, কিন্তু ইলমি চিনলো না। কখনো দেখেছে বলে মনেও হলো না। ভয়ে তার অর্ন্ত-আত্মা কেঁপে উঠলো। কি হচ্ছে তার সাথে? কেনো হচ্ছে? ইলমির ছোট দেহ খানা ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তার অতি আনন্দের দিনটা এক মুহূর্তেই কেমন কাল রাত্রিতে পরিণত হলো। কেনো এমন হচ্ছে? হিমি কেনো তাকে রেখে চলে গেলো? তাহলে কি এগুলো মিলির প্লান?

লোক গুলো নিজেদের মাঝে বলাবলি শুরু করলো।

-শা*লা খা*কির পোলা। সাপের লেজে পা দিয়েছিস ছোবল তো খেতেই হবে। কি বলিস তোরা?
কেউ একজন বিশ্রী আওয়াজে বলে উঠলো, ইলমি কথা বলার সাহস-টুকুও যেনো পেলো না।

– হ বস।
হুকুম দেন তুইলা নেই শা*লীরে, এই শা*লীরে তুললেই মাদা**দ দৌড়াইয়া যাইবো আপনার পা চাটতে।
কথাটা শেষ করে বিশ্রী সূরে হাসলো।

সিগারেটে টান দিয়ে বলে উঠলে,,
যা করবি তারাতারি কর, শা*লার চামচারা কিন্তু আঁশে পাঁশেই আছে।
ইলমি অসহায়, পলক বিহীন থম মেরে সবটা শুনছে, সবটা শুনে তার ক্ষুদ্র মষ্তিষ্ক জানান দিলো সে বড় কোনো বিপদে পড়তে যাচ্ছে, লোক গুলো ভালো নয় ৷ নিজের বাড়ীর আঁশে পাঁশে এমন লোক কখনোই দেখে নি। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো ইলমি, ঘেমে নেয়ে একাকার, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কখনো এমন বিশ্রী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় নি ইলমি। কি করবে? কিভাবে রক্ষা করবে নিজেকে? মনে মনে খুব করে তার আব্বাজানকে ডাকলো, ডাকলো তার ভাইজানকে, তার এমপি সাহেবকেও, কেউ কি এদিকটায় আসবে না? কেউ কি ইলমিকে দেখবে না?

———–
এদিকে বক্সের গান থেমে গেছে, ইলমির খোঁজ পরেছে। মুহুর্তেই সবাই মিলে পুরো বাড়ী তন্ন তন্ন করে খোঁজা শেষ করে ফেলেছে।কিন্তু কোথাও ইলমিকে পেলো না। বিয়ে বাড়ীর মতো আনন্দঘন বাড়ীটাতে নেমে এলো দুশ্চিন্তা। সবাই ইলমিকে খোঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জহির মির্জার কানে খবরটা যেতেই ভেঙে পড়লেন তিনি। নিজ বাড়ী থেকে তার মেয়েটা উধাও এটা কিভাবে সম্ভব? আমেনা বেগম কেঁদে উঠলো, সবার চোখে মুখে যখন দুশ্চিন্তার ছাপ তখন কেউ একজন তৃপ্তি-দায়ক হাসিতে ফেটে পড়ছে। হিমি বেগম নিরব দৃষ্টিতে, অতি আগ্রহে সবার দুশ্চিন্তায় পরিপূর্ণ মুখ দেখতে ব্যস্ত। পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠলো হিমি বেগম। কি পাচ্ছে সে? কেনো এমন করছে? এই হিমি বেগম কি চাচ্ছে? এসব করে সে কি পাচ্ছে?

___________

ইলমির ছোট দেহখানা নিজের বিপদের শংকা পেয়ে কেঁপে উঠছে বারবার, ইলমি ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,,

কা, কারা আপনারা?

সামনে থাকা লম্বা অবয়বের মানুষটা হঠাৎ বিশ্রী হেসে উঠলো, কিন্তু কিছু বললো না। কেউ একজন এগিয়ে আসতে নিলেই পায়ের কাছে শক্ত কিছু একটা আছে টের পেলো , হাতরে বুঝতে পারে একটা মোটা লাঠি, ইলমি সেটা হাতে তুলে নিলো , ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়, চিবুক গলায় নিয়ে মনে মনে সাহস করে, লোকটা গায়ে হাত দিতে এলেই ইলমি সর্ব শক্তি দিয়ে অন্ধকারে ঠাস করে বসাতেই লোকটার বুকে গিয়ে লাগলো। আকস্মিক এমন ঘটনায় সবাই হক-চকিয়ে উঠে। তারা কেউই ইলমির থেকে এমন আক্রমন আশা করে নি লোকটা বুকে হাত দিয়ে আহ শব্দ করে উঠলো , এক সাথে ৪ জনই ইলমির দিকে এগিয়ে আসতে নিলে ইলমি শাড়ী ধরে নিজের সবটুকু দিয়ে দিক-বিদিক ভূলে ছূট লাগায়। যে রাস্তা ধরে ইলমি ছুটছে সে রাস্তা গিয়েছে বাড়ীর পিছন দিকেটায়।

ধর ধর। শা*লা কু*ত্তার বাচ্চারা তোগো দিয়া একটা কাম যদি হয়তো। এই বা*ন্দীর বাচ্চারে যদি হাত ছাড়া করস তোগো সবটিরে কাইট্রা কুঁচি কুঁচি কইরা কু*ত্তারে খাওয়ামু।

বাকি ৪ জন ইলমির পিছনে ছুটলো, ইলমি প্রাণ-পনে দৌড়াতে দৌড়াতে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলো, এবার আর শরীরে তার শক্তি সঞ্চারিত হলো না, নিজের সর্বশক্তি যেনো ফুরিয়ে এলো। টাল সামলাতে না পেরে পরে যাওয়ার আগেই ব্যস্ত পুরুষালী শক্ত হাত জোড়া ইলমির ছোট কম্পনরত বিধ্বস্ত দেহখানা সযত্নে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। ইলমি হাঁপাতে হাঁপাতে ফুঁপিয়ে উঠলো। পরবর্তীতে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলো। অস্ফুট-স্বরে ডেকে উঠলো,,
এমপি সাহেব?
তারপর, তারপর ঢলে পড়লো লোকটার সুঠাম বুকের মাঝ-খানটায়।

চলবে,,,,,