#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১৭
চারোদিকে আঁধার নামছে তখন৷ কমলাটে আলো মেদিনী নিমজ্জিত৷ বিষন্ন এক গধুলী যেন৷ পাখি গুলো নীড়ে ফেরার জন্য দৌড় ঝাপ করছে৷ তাদের আর বাইরে ক্ষানিক সময় থাকলেও যেন বিশাল কিছু হবে৷ যেন কিছু নিয়ে তাদের বড়ই তাড়া৷ দিন ফুরিয়ে আসার আগ মুহুর্ত তখন৷ আলো আবছা হয়ে আছে৷
একেই বোধহয় রাঙা গোধুলি বলে? তবে তবুও কেন এত বিষন্ন তার মন? আকাশে বাতাশে আজ মন খারাপেরা বিচরণ করছে? প্রকৃতি ও কি আজ বিষন্ন? নাকি মেঘলার মনেই মেঘ ঝমেছে? এত সুন্দর আকাশ আজ মেঘলার মনের মেঘ গুলো সরাতে পারছে না৷ আঁধারে ঘনঘটা সব৷ বৃষ্টির দেখা নেই যেন তবুও মেঘলার মনে৷
অঝোরধরা ঝড়বে কখন? সে ও কি সময় অসময় মানে নাকি? হয়তো মানে? নয়তো কিছু হলেই কেঁদে দেওয়া মেয়েটা নিরব কেন? কেন অঝোর ধারায় ঝড়ে আধার কাটিয়ে দিচ্ছে না কেন?
চারো দিকেই বিষন্নতার ছোঁয়া কেমন৷ এমন বিষন্নতা কেন ছেয়ে আছে? এত কেনর উত্তর পাবেকি আদৌ?
আসার সময় রাজ আসতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু এক প্রকার জোর করে একাই এসেছে৷ অই লোকটা আর নিজের মাঝে নেই৷ কেমন অদ্ভুত হয়ে গেছে৷ এ রাজকে ভয় পায় মেঘলা৷ এ রাজের কাছে থাকতে ইচ্ছে হয় না৷ ভয় ঝেকে ধরে৷ অথচ সব থেকে আনন্দ এই মানুষটির কাছেই থাকতো সে৷ রিক্সা থেকে নামলো মেঘলা৷
চুপসে আছে মুখ খানা৷ অদুরে বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে আছে এক জোড়া চোখ৷ যেন এ মানুষটারি অপেক্ষা করছিলো৷ আসতেই রাগে রি রি করে উঠলো সর্বাঙ্গ৷ মেয়েটা অবশেষে এলো৷
যার জন্য সে দিন ওই ছেলেটার সাথে ঝামেলা করেছিলো আজ ওই ছেলেটার সাথেই গিয়েছিলো মেয়েটা৷
রাগ হচ্ছে তার৷ পার্টি অফিসে আজ প্রথম বার মেজাজ হারিয়েছে শোভন৷ তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে৷ হাতে এক খানা ব্যান্ডেজ৷
মেয়েটা মাত্র বাড়ি ফিরলো৷ সে কেন রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? মেয়েটা তো তার পথভ্রষ্ট করতে এসেছে শুধু তার জীবনে৷ মেয়ে জাতই বিচিত্র!
কলিং বেল বাজাতেই তাড়াতাড়ি এসে অহনা দরজা খুললো৷ গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ সে সরে গিয়ে মেঘলা কে প্রবেশ করার জায়গা করে দিলো৷ অতঃপর ঢুকতেই বললো,
“তোর ফোন কোথায়?”
অহনার এমন কন্ঠে ভরকালো মেঘলা৷ শুকনো ঢোক গিললো৷ খুব রেগে আছে বোঝা গেলো৷ ফোন তো বাড়িতেই ফেলে গেছে সে৷ তার এসব ফোন টোন ভালো লাগে না৷
শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“ফোন ঘরে আপু৷ ”
অহনা আবার কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“ফোন ঘরে? ভালো৷ ফোন শো-কেজে সাজিয়ে রাখার জিনিস৷ তাহলে তুই কোথায় ছিলি সন্ধ্যা অব্দি? দেরি হলে বাড়ির মানুষ চিন্তা করে এটা জানিস তুই? মিনিমাম কমন সেন্স টুকু আছে? নাকি আমাদের বাড়ির লোক মানিসই না? ভাবিস না তোর জন্য আমাদের ও চিন্তা হতে পারে? আর ভাববিই বা কি করে? আমরাতো তোর আপন না৷ নিজের ভাবিস না তাই তোর কিছু আসে যায় না৷”
অহনার কথায় আৎকে উঠলো মেঘলা৷ কি বলছে কি মেয়েটা?কি সাংঘাতিক কথা বার্তা৷ শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে গেলো৷ এবার মেঘ গুলো বৃষ্টি হয়ে এলো যেন৷ বিষাদ মন জমিনে ঝড়ের রুপ নিলো৷ সাথে সাথেই টুপ টুপ করে গড়িয়ে পরলো দু-ফোটা নোনা পানি৷ অহনাকে ঝাপটে ধরে বললো,
“আপু রাগিস কেন? এসব কি বলছিস?তোরাই তো আমার সব৷ নতুন বন্ধু হয়েছে ওদের জোড়াজুড়িতেই ওদের সাথে বের হতে হলো৷ ভুল করে ফোনটাও নিয়ে যাইনি৷ প্লিজ এমন বলিস না৷ ”
বলেই ফুপিয়ে উঠলো৷ অহনার মা এগিয়ে এলো৷ মেয়েকে ধমকে উঠে বললো,
“মেয়েটা মাত্র এসেছে আর শুরু করে দিয়েছিস ধমকা ধমকি৷ এখন শান্ত হলিতো? মেয়েটা কাঁদছে৷ আমিতো তোকে বলেছিলাম হয়তো বন্ধু বান্ধবের আয়াথে বেরিয়েছে৷ ফোন নেয়নি তাই বলতে পারছিলো না ফোন করে৷”
বলে মেঘলার চোখ মুছে দিয়ে মাথায় হাত বুলালো৷ অহনা তা দেখে মুখ কুঁচকে বললো,
“শুনো মা তুমি ওর চোখের পানিতে গললেও আমি গলবো না৷ ও পারেই কিছু হলে ফ্যাচ ফ্যসচ করে কাঁদতে৷”
অহনার কথায় মুখ ফুলিয়ে চাইলো নিজের বড় মায়ের দিকে৷ অহনা এমন প্রায়ই বলে৷ ও না হয় একটু সব কিছুতে কাঁদে তাই এমন বলবে?
অহনার মা ধমকে উঠে বললো,
“চুপ কর অসভ্য মেয়ে৷ কখন থেকে মেয়েটাকে কাঁদিয়ে যাচ্ছে৷ তুই ঘরে যা তো মা৷ ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়৷ ”
মেঘলা একবার অহনার দিকে অভিমান নিয়ে তাকালো৷ তারপর নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো৷
অহনা ভরকালো৷ যাক বাবা এ মেয়ে নিজেই দোষ করে নিজেই আবার অভিমান করছে৷
।।
মেদিনীতে আঁধার নিমজ্জিত তখন৷ নিজের রুমের বারান্দায় গুটিশুটি মেরে বসে আছে মেঘলা৷ আজ অহনার সাথে ঘুমাতে যায়নি৷ অহনা ডাকতেও আসেনি৷ রাতের খাবার খাওয়া হয়েছে সেই কখনই৷ ঘড়ির কাটা একটা ছুঁই ছুঁই৷ মধ্যরাতই বলা যায় প্রায়৷ সামনেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বই খাতা গুলো৷ আজ পড়ায় একেবারেই মন বসছে না৷ অতঃপর কিছুটা দূরে থাকা মুঠো ফোন খানা তুলে নিলো মেঘলা৷ ফোনটা বাসায় এসেই বন্ধ করেছিলো৷ রাজ বার বার কল করছিলো৷
অদুরে বারান্দাটায় হুট করেই আলো জ্বালালো কেউ৷ ঘার ঘুরিয়ে তাকালো ও খানেক৷ তবে মন দিলো না সে দিকে৷ সে বারান্দায় একটা গম্ভীর পুরুষের বসবাস৷
ফোন খানা খুলতেই পর পর নোটিফিকেশনের শব্দ শুর হলো৷রাজ নামক লোকটা এ অব্দি তিনশ বার কল করেছে৷ বেশ অবাক হলো মেঘলা৷ লোকটার কাজ নেই কোনো? এর মাজগেই একটা বাড়ির নাম্বার ও দেখা গেলো৷ এটা যে বড় চাচির নাম্বার বেশ ভালো করেই চেনে মেঘলা৷ তারা তিন বার কল করেছে এ অব্দি৷ কিন্তু কেন? আর নাম্বারই পেলো কই?
তা নিয়ে ঘাটলো না৷ ফোন খুলতে না খুলতেই ফের কর্কশ শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো৷ রাজ ফোন করেছে৷ রাগে শরীর রি রি করে উঠলো৷
মুখের উপর ফোন্টা কেটে দিলো এবার৷ ফোন কাটার কয়েক সেকেন্ড পরই ম্যাসেজ এলো৷
“আমি নিচেদাঁড়িয়ে আছি জানলা দিয়ে না তাকালে বাড়িতে চলে আসবো৷”
সাথে সাথেই টনক নড়লো মেঘলার৷ তড়িৎগতিতে উঠে দাঁড়ালো বারান্দার রেলিং ঘেষে৷ ওপাশের বারান্দায় থাকা শোভন ও খেয়াল করলো৷ সাথে সাথেই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“এখানে কি করছেন? যান ঘরে যান মেঘলা৷ ”
মেঘলা আরেক দফা চমকালো৷ শুকনো ঢোক গিললো৷ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়৷ ফের নিচে তাকালো৷ লোকটা বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷ সাথে সাথেই ফোন এলো৷ এবারো কেটে দিলো মেঘলা৷ কল কেটে দিতেই রাস্তা থেকে চিৎকার করে উঠলো,
“তোর কত বড় সাহস আমার কল কেটে দিচ্ছিস৷ কল ধর বলছি নয়তো বাড়িতে চলে আসবো৷ ”
রাজ এর বলা শেষ হতেই শোভন বললো,
“ঘরে যান মেঘলা৷ এটা ভদ্র এলাকা৷ ”
মেঘলা ভয়াতুর কন্ঠে বললো,
“কিন্তু উনিতো চিৎকার করছে বলছে বাড়িতে চলে আসবে৷ ”
শোভন দাঁতে দাত চেপে বললো,
“অই ছেলেকে আমি দেখে নিচ্ছি আপনি ঘরে যান৷ ”
মেঘলা তাড়াহুড়ো করে ঘরের দিকে গেলো৷ ঠিক তখন রাজ মেঘলা মেঘলা বলে চিৎকার শুরু করলো৷ শোভন কাউজে ফোন করলো তারপর নিজেও নিচে যাওয়ার জন্য বের হলো৷
শোভন আর রাজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে৷ রাজ তীর্যক চোখে তাকালো শোভনের দিকে৷ এই ছেলেটা এখানেও? এবার ওর খটকা লাগছে৷ শোভন মেইন গেইট থেকে বেরিয়ে বললো,
“এটা ভদ্র লোকের এলাকা এখানে এসে গুন্ডামী করছিস জানিস তোর কি হতে পারে? ”
রাজ অকথ্য একটা গালি দিয়ে বললো,
“তুই এখানেও? আমার বউ এর চামচা হিসেবে আছিস নাকি? আমি যা ইচ্ছে করবো তোর তাতে কি? আমি আমার হবু বউকে ডাকছি৷”
সাথে সাথেই নাক বরাবর ঘুষি লাগালো শোভন৷ বললো,
“আমার কি তাই না? আর ওকে কোন সাহসে বউ বলছিস? পুতে এখানেই রেখে দিবো তখন বুঝতে পারবি আমার কি৷ ওর বিয়ে হয়নি কোন সাহসে বউ বলছিস? বলেছিলাম না ওর থেকে দূরে থাকবি?”
রাজ তেরে আসলো মারতে তখনি পেছন থেকে শোভনের ছেলেরা ধরে ফেললো৷ রাজ ছোটার চেষ্টা করে বললো,
“তুই বলার কে ওর থেকে দূরে থাকার কথা? ওর দূরে থাকবো নাকি তোর সামনে ওর সাথে বাসর করবো তাতে তোর কি? এই তোদের সামনে দিয়ে ওকে আমি তুলে নিয়ে যাবো পারলে আটকে দেখাস৷”
শোভনের শরীর রাগে রিরি করে উঠলো৷ ফের নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে বললো,
“আমার সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে যাবি তাই না? আমি কে জানতে চাস তাই না? যা সাহস থাকলে আমার বাড়ি থেকে ওকে নিয়ে গিয়ে দেখা৷ ওকে নিজের বাড়িতে আনার ব্যাবস্থাই করছি আমি৷ ”
এইটুকু বলে থেকে৷ নিজের ছেলেদের উদ্দেশ্যে বললো,
“ওরে ভালো ভাবে খাতির যত্ন করে রাস্তায় ফেলে দে৷ দেখি ও কি করে৷ ”
চলবে
#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা
১৮
মধ্য রাতে কলিং বেলের শব্দে ঘুম ছুটলো আফতাব সাহেবের৷ একবার দু-বার না৷ বার বার বাজাচ্ছে কেউ৷ আলসে ভঙ্গিতে উঠলো আফতাব সাহেব চশমা খানা বেড সাইড টেবিল থেকে নিয়ে চোখে পরলো৷ সময় দেখে নিলো মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে৷
ঘরিতে তখন তিনটা ছুঁই ছুঁই৷ এত রাতে কে এমন করে ডোর বেল বাজাচ্ছে? খানিকটা চিন্তায় পরে গেলো আফতাব সাহেব৷
দরজা খুলবে কি খুলবে না তা নিয়ে বিড়ম্বনায় পরপ্লো৷ বাড়িতে দুইটা বিয়ের বয়সী মেয়ে আছে৷ যেই চোর ডাকাতের সংখ্যা বেড়েছে৷
কিন্তু চোর ডাকাত হলে তো আর ডোরবেল বাজাবে না? তাহলে কে?
উঠলো আফতাব সাহেব৷ ঘর ছেড়ে বের হতেই অহনা আর মেঘলাকে দেখতে পেলো৷ বাবাকে দেখে অহনা ফিসফিসিয়ে বললো,
“বাবা কে যেন ডোর বেল বাজাচ্ছে কখন থেকে৷”
মেঘলা ঘণ ঘণ নেত্র পল্লব ফেলে বললো,
“মামা নির্ঘাত চোর এসেছে৷”
এর মাঝেই অহনা মেঘলার মাথায় চাটি মারলো৷ ওই দিকে অনবরত ডোরবেল বেজেই চলেছে৷
অহনা বললো,
“হ্যাঁ চোর তো তোর মত গাধা? মানুষ কে জাগিয়ে তুলে চুরি করতে আসবে৷”
মেঘলা ফস করে নিশ্বাস টানলো৷ আফতাব সাহেব বললেন,
“দাড়াও দেখছি আমি কে এসেছে৷”
বলে এগোতে নিলেই মেঘলা বললো,
“দাড়াও মানা দাঁড়াও৷ আমি লাঠি নিয়ে আসি চোর ডাকাত হলে আক্রমণ করা যাবে৷ ”
বকে আর কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে দাড়ালো না৷ রান্না ঘরের দিকে গেলো৷ খুঁজেও কোনো লাঠি পেলো না৷ নিয়ে এলো বট আর খুন্তি৷
দৌড়ে এসে অহনার হাতে খুন্তি টা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“তুই এই খুন্তিটা রাখ আপু আমার কাছে বটিটা থাকুক৷ আজ দেখি ডাকাত কি করে কি করে৷ মামা তুমি এগোও৷”
এর মাঝেই পেছন থেকে অহনার মা বললো,
“হায় আল্লাহ বিয়ের বয়সী দুটো মেয়ে তোরা যাচ্ছিস কেন? যা যা ঘরে যা উনিই যাক৷ এত রাতে কে না কে এসেছে৷ যদি খারাপ কেউ হয় সামনে থেকে আক্রমণ করে৷”
মেঘলা বেশ ভাব নিয়ে বললো,
“ইশ দেখি কে আক্রমণ করে৷ সে আসবে না? এই ব টি দিয়ে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দিবো৷ তুমি চিন্তা করো না তো৷”
আফতাব সাহেব এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
“আহা থামবে তোমরা? দশ মিনিট যাবত বেল বাজিয়ে যাচ্ছে কেউ৷ খুলতে তো দাও আগে?”
ভাগ্নীর কান্ডে ফস করে নিশ্বাস টানলেন আফতাব সাহেব৷ আর অহনা ক্যাবলাকান্তর মত তাকিয়ে আছে৷ আফতাব সাহেব কাল বিড়ম্বনা না করে দরজার দিকে গেলেন৷ অহনা মেঘলা পিছনেই আছে৷
আফতাব সাহেব দরজা খুলতেই মেঘলা ব টি নিয়ে এগিয়ে গেলো ওমনি চিরচেনা মুখ দেখে থমকে গেলো মেঘলা৷ এমনকি এখানে থাকা প্রতিটা মানুষ আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো যেন৷
এত রাতে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো সবাই৷ ভুল দেখছে না তো তারা৷ আফতাব সাহেব বেশ ভরকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ মেঘলা পেছনে ব টি উচু করে হা হয়ে তাকিয়ে আছে৷ অহনা কোনো রকম খুন্তিটা নামিয়ে মেঘলার কাছে গিয়ে ওর হাতটাও নামিয়ে দিলো৷ এর মাঝেই অহনার মা বললো৷
“আরে ওনাদের দরজায় দাড় করিয়ে রেখেছো কেন? ভেতরে আসতে দাও৷ কি একটা অবস্থা৷”
আফতাব সাহেব গলা খাকারি দিয়ে সরে গেলেন৷ সামনেই দাঁড়িয়ে আছে শোভনের বাবা এবং মা সাথে শোভন আর বড় ভাই এবং অহনার হবু বর৷ এত রাতে সবাইকে এখানে দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়?
আফতাব সাহেব বললেন,
“আসুন বেয়াই সাহেব ভেতরে আসুন৷ কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”
শোভনের বাবা বেশ ইতস্তত বোঝাই যাচ্ছে কিন্তু সে হেল্পলেস৷ ছেলে তার মহা ঘাড় বাঁকা সে গোটা এলাকা আর শহর সামলাতে পারলেও এই ছেলেকে সামলানো তার কাম্য না৷ সে বেশ লজ্জিত এত রাতে কেউ কারো বাড়িতে আসে? ছেলেটা সকাল হওয়ারো সময় দিলো না৷ একে নিয়ে কি করবে সে? আফতাব সাহেবই বা কি ভাবছেন?
মানুষ এর ঘুম ভাঙিয়ে নাকি এত রাতে কারো বাড়িতে আসে৷
তার এ ঘাড় বাঁকা ছেলে ঠিক হবে কবে? এবার যদি একটু বোঝে৷
এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই বেশ লজ্জিত৷ শোভনের বাবা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“ইশ এত রাতে এসে আপনাদের খুব ঝামেলায় ফেলে দিলাম৷ আনার ছেলেটা এত অবুঝ সকাল হওয়ার অপেক্ষা করতে পারলো না৷”
আফতাব সাহেব বুঝলেন না কিছু৷ সবাইকে ঘরে আসতে দিলেন৷ সোফায় বসলো সবাই৷ শোভনের বাবা আহসান সাহেব বসতেই ইতস্তত কন্ঠে বললো,
“আমরা এত রাতে এসেছি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে৷”
আহসান সাহেব বলে সবার দিকে তাকালেন৷ হুট করে এমন কথায় আহসান সাহেব চমকালো৷ মেঘলা অহনা বড় বড় চোখ করে তাকালো৷ আফতাব ভাবলেন ভুল শুনছে৷ সে বললেন,
“কিসের জন্য? না মানে আমি বুঝতে পারছিনা বেয়াই সাহেব৷”
আহসান সাহেব ফের বললেন,
“আমি এসেছি আমার পূত্র শোভনের বিয়ের জন্য আপনার ভাগ্নী মেঘলার হাত চাইতে৷”
আহসান সাহেব চমকে উঠলেন৷ বিস্মিত হলো মেঘলাও৷ কর্কশ শব্দ করে হাত থেকে ব টিটাও পরে গেলো পায়ের উপর৷ এমন কথায় চমকাবে না কে? বজ্রপাতের মত কথাখানা বাড়ি খেলো কর্ণদ্বয়ে৷ শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম৷ মেঘলা “আহ ” করে আর্তনাদ করে উঠলেন৷ ব টি খানা পায়ের উপরে পরেছে৷ অনর্থ হলো৷ বিস্ময়ের উপর বিস্ময়৷ ওমনি চমকে তাকালেন সবাই৷ অহনা পাশেই ছিলো৷ র ক্ত দেখে “র ক্ত ” বলে চিৎকার করে উঠলো৷ শোভন তড়িৎ গতীততে উঠে আসলন সোফা থেকে মেঘলার কাছে এসে বললেন,
“আশ্চর্য কি করলেন মেয়ে এটা? দেখি দেখি আসুন এখানে৷”
বলে সবার সামনে কোলে উঠিয়ে সোফায় এনে বসালো৷ অদ্ভুত এ কান্ডে সবাই আরো একবার অবাক হলো৷ আজ কি অবাক হওয়ার দিন নাকি? কি হচ্ছে কি?
আফতাব সাহেবের সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ এত রাতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে? ভাগ্নী অতি বিস্ময়ে অঘট ঘটিয়ে বসলো৷ এ মেয়েটা ও কি যে করে না৷ সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হলো মেঘলাকে নিয়ে৷ ভাগ্যক্রমে ক্ষত খুব বেশি হয়নি৷ মেয়েটা সব কিছুতেই খাম খেয়ালিপনা৷ এমন কেউ করে?
অহনা দৌড়ে গিয়ে ফার্স্ট এইড আনলো৷ অহনা গিয়ে মেঘলার পায়ের কাছে বসতে যাবে তার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে শোভন নিচে বসে পরলো৷ মেঘলা সরে যেতে চাইলো৷ বললো,
“কি করছেন কি?”
শোভন ধমকে উঠে বললো,
“স্থীর হয়ে বসুন মেয়ে৷ কি করলেন এটা? অঘটন না ঘটালে ভালো লাগে না?”
সবাই তাকিয়ে দেখছে শুধু৷ সন্তপর্ণে বেশ যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিলো মেঘলার পা৷ পুরোটা সময় অস্বস্তিতে ছিলো মেঘলা৷
শোভনের ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই শোভন ফস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
“ও ঠিক আছে বাবা৷ তুমি এখন তোমার কাজ শেষ করো৷”
আহসান সাহেব কেশে উঠলেন৷ ছেলেটা হুট করেই নির্লজ্জ হলো কি করে? সবেই একটা বিয়ে ভাঙলো৷ ভেবেছে এ ছেলে আর বিয়ে করবেই না কারণ আগের বার ও রাজি হয়নি৷ জোর করে রাজি করিয়েছে৷
আজ সে ছেলে বিয়ের জন্য পাগল? কি করে অসম্ভব সম্ভব হলো?
একটু আগের কথা মনে পরতেই রাগ হয়৷ হুট করেই ঘুমের মাঝে কড়া নাড়ে কেউ ঘরের৷ দরজা খুকেই নিজের ছেলেকে দেখে চমকায়৷ সে কিছু জিগ্যেস করবে কি তার ছেলেই তাকে চমকে দিয়ে বলে,
“বাবা আমি বিয়ে করতে চাই, অহনার ফুপাতো বোন মেঘলাকেই করবো৷ আর এখনি তুমি ওই বাড়িতে যাবে৷ না গেলে সকালে আমি বাড়ি ছাড়বো৷”
খানিক্ষন বিস্ময় নিয়ে ছিলেন৷ তারপর আধঘন্টা বাক বিতর্কের পর মা ছেলে নিয়ে এলো এ বাড়িতে৷ এবং রাতেই৷ সকালের কথা বললেও শুনলো না শোভন৷
আহসান সাহেব এবার বললেন,
“এত রাতে আসায় সবাই বিব্রত বুঝতে পারছি আমি৷ কিন্তু আমি হেল্পলেস৷ আমি কাল ঠান্ডা মাথায় আসতে চেয়েছি কিন্তু ছেলেটা মানতে নারাজ৷ ওকে তো চেনেনই৷ না অএরে এখনি আসলাম৷ আফতাব সাহেব আমি আপনার ভাগ্নীর হাত চাইছি আমার ছেলের জন্য৷ দয়া করে না করবেন আফতাব সাহেব নয়তো এ ছলে তুলে নিয়ে বিয়ে করবে৷ আমি প্রস্থাব নিয়ে না৷ আমি সোজাসুজি মেয়েটাকে আমার মেয়ে করার জন্য চাইতেই এসেছি৷”
চলবে,