অতঃপর প্রণয় পর্ব-১৮

0
84

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১৮ (১ম অংশ)
#জেসমিন_জেমি

আবরার বেশ কিছুক্ষণ বেলকনির ইজি চেয়ারটায় বসেছিলো। রাতে আঁকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সাদা ধবধবে গোল থালার মতো এক চাঁদ। পুরো আকাশ জুড়ে ছোট ছোট তারকা রাজির মেলা। চারপাঁশে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে , চারপাঁশটা চাঁদের আলোয় আলেকিত হয়ে উঠেছে। আবরার কারো সাথে ফোন আলাপে ব্যস্ত ছিলো। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে কারো সাথে কথা বলছে সে। কথা শেষ করে রুমে ফিরতেই দেখলো ফুল সজ্জিত বিছানায় একটা সদ্য ফোটা রক্ত জবা বিছানার মাঝখানটায় বাচ্চাদের মতো জড়ো-সড়ো গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। বিয়ের লাল বেনারসি , গহনা এখনো গায়ে জড়ানো বাচ্চা মেয়েটার। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। আবরার গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইলমিকে পর্যবেক্ষণ করলো। ফুল সজ্জিত বিছানাটা যেনো এক সদ্য ফোটা রক্ত জবা শুয়ে আছে। আবরার ধীর পায়ে বিছানার পাঁশটায় বসলো। একহাতে বালিশ টেনে ইলমির মাথার নিচে দিতেই ইলমি নড়ে-চড়ে উঠলো, সাথে সাথে ভ্রু কুচকালো, আবরার হাসলো। এই বাচ্চা মেয়েটা কি না তার অর্ধাঙ্গিনী। ভাবা যায়? আবরারের ভাবনার মাঝেই ইলমি আবরারের হাত জড়িয়ে নেয়, হালকা টান পড়তেই আবরার ইলমির দিকে ঝুঁকে পড়ে। দুজন মানুষের মাঝে কিছুটা দূরত্ব ৷ এতোটা কাছাকাছি সে আসতে চায় না। তাই তো তখন তড়িগড়ি করে বেলকনির দিকে পা বাড়িয়ে ছিলো৷ কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখো ঘুমন্ত অবস্থায় ও মেয়েটা তাকে টানছে, তার প্রতি আকর্ষিত করছে। সব দোষ এই বাচ্চা মেয়েটার, আবরারকে উন্মাদ করে তোলার শাস্তি তো এই মেয়েটাকে পেতেই হবে। আবরার ধীরে ধীরে ঘুমন্ত ইলমির একদম কাছে চলে যায়। ইলমির চোখে মুখে ফু দিতেই ইলমির ঘুমের ঘোরে চোখ পিটপিট করে, বিরক্তিতে চ শব্দ করে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। আবরার বাঁকা হাসে, পুনরায় ফুৃ দিতেই ইলমি নড়ে-চড়ে পাঁশ ফিরে। আবরার ইলমিকে জোরপূর্বক টেনে নিজের দিকে ফিরায়, কপালে গভীর চুমু এঁকে ঘুমন্ত ইলমিকে নিজের বলিষ্ঠ শক্ত-পোক্ত বুকের মাঝ খানটায় ইলমির ছোট দেহখানা জড়িয়ে রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পরে। রুমটা পুরো অন্ধকার হতেই ইলমি চোখ মেলে, অন্ধকারে আবরারের বলিষ্ঠ বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে, আবরার ইলমিকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায়। তড়িঘড়ি করে রুমে লাইট অন করতেই দেখে ইলমি ফুঁপিয়ে কাঁদছে, এক পর্যায়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলো। ঘন কালো আঁখিদ্বয় জলে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে , ফর্সা মুখশ্রী , নাগের ডগা কান্না করার জন্য লাল হয়ে উঠেছে। গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট জোড়া বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবরার ইলমিকে উঠিয়ে বসিয়ে ব্যস্ত-কন্ঠে বললো ,,

কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো? ব্যাথা লাগছে? কোথায়? হাতে? কপালে?

ইলমি কিছু না বলে কাঁদতেই লাগলো, আবরার বললো,,
কি হয়েছে বল আমাকে । না বললে বুঝবো কি করে ইলমি?

আবরারের কন্ঠ-স্বর কিছুটা করুন শুনালো, ইলমি হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে জানালো তার আব্বাজান, আম্মাজান, ভাইজানকে খুব মনে পড়ছে৷ আবরার হাতের উল্টো পিঠে ইলমির চোখের জল মুছে দিলো, বুকে জড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা চালালো, আশ্বাস দিলো সকালেই ইলমিকে তাদের কাছে নিয়ে যাবে। ইলমি আবরারের বুকে মুখ লুঁকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কিছুটা থামলো আবরার ইলমির গহনা গুলো নিজ হাতে খুলে দিয়ে ইলমিকে ফ্রেশ হতে পাঠালো। ইলমি ফ্রেশ হয়ে খয়েরি রঙের সূতি থ্রী পিছ পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। থ্রী পিছটা একটু আগেই আবিরা রেখে গিয়েছিলো। এখন কিছুটা ভালো লাগছে তার, ফ্রেশও লাগছে। এতোক্ষণ মাথাটা ভার ভার লাগছিলো। গহনা, শাড়ীতে পাগল পাগল লাগছিলো নিজেকে অথচ সবাই তার কতো প্রশংসা করলো। তাকে এই লাগছে, সেই লাগছে, পরীর মতো লাগছে হেনতেন। হুহ, কচু লাগছিলো, পেত্নীর মতো লাগছিলো। বিরবির করে বলেই ভেংচি কাটলো। আবরার উল্টো দিকে ফিরে চোখের উপর হাত রেখে শুয়েছিলো। ইলমি এক পলকে সে দিকে তাকিয়ে, দাঁড়িয়ে রইলো। ইলমিকে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবরার চোখ মুখ কুচকে ধমকে বললো,,

মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো? দাড়িয়ে থাকার ইচ্ছে থাকলে রুম থেকে বের হ, বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাক বেয়াদপ।

ইলমি এতোক্ষনে মুখ খুললো, সারাদিন সে মুখে কুলুপ এটে ছিলো তার আম্মাজানের আঁদেশে। এবার আর চুপ থাকতে পারলো না মুখ ভেংচি কেটে বললো,,

এই, এই, একদম ধমকাবেন না বলে দিলাম? আমার রুম, আমি দাঁড়িয়ে থাকবো, নাকি বসে থাকবো,নাকি হামাগুড়ি দিবো সেটা আমার ইচ্ছে তাতে আপনার কি?

আবরার ভ্রু কুচকে বললো,
সরি? শুনতে পাই নি? কার রুম?

ইলমি কোমরে হাত গুঁজে চট করে বললো,,
আজ থেকে এই রুম আমার, রুমের সব,সব কিছুতেই আমার অধিকার। এমন কি রুমের মানুষটাও, ওপস সরি রাক্ষসটাও আমার হুহ।

আবরার ভ্রু কুচকে বিরবির করে বললো,,
যাক ম্যাডামের মুখে বুলি ফুটেছে তাহলে? বলেই মুচকি হাসলো , তবে বেশ গম্ভির স্বরে ধমকে বললো,,

এক মিনিট, এক মিনিট সময় দিলাম তোকে , এক মিনিটের মাঝে রুম পুরো অন্ধকার চাই। আর যদি না হয় তাহলে তোর,,

ইলমি ভয় পেলো, তড়িগড়ি করে লাইট অফ করে দিলো। অন্ধকার হাতরে বিছানার দিকে ধীর পায়ে হাঁটলো। বিরবির করে বললো,,

লোকটা আস্ত একটা বদমাঁশ, সব সময়,শুধু হুমকি ধামকি। হ্যাঁ সে একজন এমপি, বাহিরের মানুষকে হুমকি ধামকি দিবে বলে ঘরের বউকেও দিবে? কি আজব৷ কখনো ভালো তো কখনো খারাপ। দুমুখো মানুষ কোথাকার। আসলে লোকটা আস্ত একটা করল্লা এর জন্যই তো কথা গুলো এমন তেতো । রাক্ষস একটা হুহ।

বিরবির করতে করতে ধীর পায়ে বিছানার পাঁশে গিয়ে বসলো, বিছানা হাতরে আবরারের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে শুয়ে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ নড়াচড়া করতে লাগলো, এপাঁশ ওপাঁশ করতে লাগলো। আবরার ইলমিকে এভাবে এপাঁশ ওপাঁশ করতে দেখে গম্ভীর স্বরে বলো,,

আরেকবার নড়াচড়া করলে বেড থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।

ইলমি ভেংচি কাটলো, আবরারের মতো করে বললো,,
আরেকবার নড়াচড়া করলে বেড থেকে ধাক্কা মেরে ফেলো দিবো। হুহ মগের মুল্লুক পেয়েছে।

আবরার কিছু বললো না, রুম জুড়ে পিনপিন নিরবতা বিরাজ করলো, ইলমি কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েই পড়লো। ঘুমের ঘোরে নিজেদের মাঝের দূরুত্ব ঘুচিয়ে আবরারের গা ঘেষে আসলো , কিছু সময় পরে ঘুমের ঘোরে নিজের একহাত আবরারের পেটের উপর দিয়ে তুলে দিলো। আবরার সবে মাত্র ঘুমাতে নিচ্ছিলো, ঘুম ছুটে গেলো তার নিজের থেকে ইলমির হাত সরিয়ে দিলো । ইলমি পুনরায় হাত তুলে দিতেই আবরার ইলমির তুলতুলে ছোট দেহখানা নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। অশান্ত, ছটফট করা মনটা একটু হলেও শান্তি পেলো যেনো। ইলমিকে জড়িয়ে পরম শান্তিতে চোখ বুজতেই দু চোখে রাজ্যের ঘুম এসে পাড়ি জমালো। অতঃপর প্রেয়সীকে বুকে জড়িয়ে আবরার এক শান্তির ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো।

চলবে,,,,,,,

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১৮ (২য় অংশ)
#জেসমিন_জেমি

এক সুন্দর, নতুন ভোরের সূচনা হলো। রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ধরনীতে আলো ফুটে উঠলো। জানালার পর্দা ভেদ করে রুমে সকালের মিষ্টি রোদ প্রবেশ করছে। চোখে মুখে রোদ এসে পরতেই আবরারের ঘুম ভেঙে গেলো, নড়তে গেলেই নিজের বলিষ্ঠ বুকের মাঝখানটায় কারো উপস্থিতি টের পেলো, টের পেলো কেউ একজন তাকে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইলমির ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী পানে চাইতেই আবরার মুচকি হাসলো । ঘুমন্ত ইলমির মুখশ্রী খানা সরল, নিষ্পাপ লাগছে আবরারের কাছে। আবরার মুগ্ধ হচ্ছে বারংবার। এই মেয়েটাকে দেখলেই তার চোখ জুড়িয়ে আসে। অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করে। ঘুমন্ত ইলমির কপালে টুপ করে চু*মু এঁকে দিলো তারপর ইলমির থেকে ছাঁড়িয়ে নিলো নিজেকে পর্দা গুলো টেনে দিয়ে রুমটা অন্ধকার দিলো। পরপর ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

————-
ঘড়িতে ৮.০০ ।
ইলমি এখনো ঘুমে বিভর। এদিকে ৮ টা বেজে গেছে সে টের ও পেলো না এমনকি কেউ ডাকলোও না। ইলমির ঘুম ভাঙলো মাত্রই। পর্দা টেনে দেওয়ায় পুরো রুম এখনো অন্ধকার। পাঁশে তাকাতেই দেখলো পাঁশে আবরার নেই। ইলমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো, চোখ মুখ কুচকে বললো,,,
এই ভোরবেলা লোকটা আবার কোথায় গেলো?

বিছানা থেকে ঘড়িতে সময় দেখতেই হতভম্ব হয়ে গেলো , ৮ টা বেজে গেছে অথচ সে ভাবছে ৫ টা কি ৬ টা বাজে। ইলমি আতকে বিছানা থেকে নেমে পড়লো বিরবির করে বলে উঠলো,,

ইলমি: আয়হায় এতো বেলা করে ঘুমালাম আমি ?
আম্মাজান পইপই করে বলে দিয়েছিলো শশুরবাড়ীতে পড়ে পড়ে বেলা পর্যন্ত না ঘুমাতে। আপাতত প্রথম দিন যেনো সে বেলা করে না ঘুমায় । যদিও সে এ বাড়ীতে এসেছে, থেকেছে এমনকি বেলা করে ঘুম থেকেও উঠেছে। তবে তখন সেটা ফুপির বাড়ী ছিলো, আর এখন এটা শশুর বাড়ী, আগের মতো করা চলবে না। ইলমির চোয়ালদ্বয় ঝুলে পড়লো৷ এই কথাটা যদি তার আম্মাজানের কানে যায় তার আম্মাজান তাকে কি করবে সেটা শুধু মাত্র সেই জানে। ইলমি তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে ছুটলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখলো ইমামূল তালুকদার সোফায় বসে খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছেন। ইলমি হেঁসে সালাম দিলো। ইলমির আম্মাজান পইপই করে বলে দিয়েছে মুরুব্বিদের সালাম কালাম দিতে । ইমামূল তালুকদার হেঁসে জবাব দিলেন।

ইলমি ধীর পায়ে কিচেনে গেলো। কিচেনে আছমা বেগম ব্যস্ত হাতে রান্না করছে, সুফিয়া ফ্লোরে বসে সবজি কাটছিলো। ইলমিকে দেখতে পেয়েই সুফিয়া পান খাওয়া পাথর পড়া দাঁত গুলো বের করে হেঁসে বললো,,

ঐ যে ইমি আপা উইঠা পরছে। আপা আপনে এনে আইলেন ক্যান কিছু লাগবো? লাগলে আমারে কন আমি দিতাছি।

আছমা বেগম বললো,,
কি রে ইলমি কিছু লাগবে?

ইলমি মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো, আছমা বেগম বললেন,,

-তাহলে?

ইলমি ধীরকন্ঠে বললো,,
আমি রান্নায় সাহায্য করি।

আছমা বেগম হেঁসে উঠলেন, তার সাথে সাথে সুফিয়াও দাঁত গুলো বের করে হো হো করে হেসে উঠলো। ইলমি হকচকিয়ে উঠলো, ফ্যালফ্যাল চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,,
এখানে সে কি এমন বললো যে তাদের দুজনের এতো হাসি পেলো। কি অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার।

আছমা বেগম বললো,,
– রান্না করেছিস কখনো?

ইলমি মাথা নেড়ে না বুঝালো, সত্যিই তো সে কখনো রান্না করেছে? করেনি তো।

সুফিয়া হাসতে হাসতে বললো,,
ইমি আপা আফনে কি রান্দন ঘরে কহনো গেছেন? আপনে কেমনে সাহায্য করবেন কন তো?

ইলমির গায়ে লাগলো বোধহয় কথাটা সে কখনো রান্না করেনি বলে কখনো পারবে না এমন তো আর না? চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবে। ভ্রু কুটি কুঁচকে সুফিয়ার উদ্দেশ্যে বললো,,,

– সুফি আপা কখনো রান্না করে নি বলে কি আমি রান্না পারি না নাকি?

সুফিয়া মুখ কুচকে ফেললো, থমথমে কন্ঠে বললো,,

– ইমি আপা আমার নাম সুফিয়া, সুফি না।

ইলমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
– সুফি আপা আমার নাম ইলমি নট ইমি।

সুফিয়া: দেহেন খালা ইমি আপারে তো আমি ভালোবাইসা ইমি ডাহি হে ক্যান আমারে সুফি ডাহে কন তো? সুফি হুনতে আমার ভালা ঠেকে না কিমন জানি লাগে।

ইলমি: দেখো ফুফি সুফি তো আমিও ভালোবাইসা ডাকি এতে আপার কেন এতো লাগে কও তো?

আছমা বেগম মুচকি হাসলেন দুজনের আড়াআড়ি জবাবে পরপর ধমকে উঠলেন।

– এই চুপ করবি তোরা? এই সুফিয়া তোর হলো?

সুফিয়া চোখ মুখ কুচকে বললো,,
হ খালা হইছে দাঁড়ান ধোয়া দিয়া নিয়াই।

ইলমি সুফিয়াকে ভেংচি কাটলো আছমা বেগম বললো,,
খিদে পেয়েছে?

ইলমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো। বিরবির করে বললো, আমার খিদে পেয়েছে ফুফি কিভাবে বুঝলো? ফুফি কি মনের কথা বুঝে যায় নাকি?

আছমা বেগম: তিন বাদরকে ডেকে নিয়ে আয় তো।
ইলমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো এইটা কি আদৌও তার শশুরবাড়ী নাকি এ যেনো সব আগের মতোই চলছে। কোনো পরিবর্তন নেই অথচ ইলমির আম্মা কত কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিলেন। ইলমি মাথা নেড়ে কিচেন থেকে বের হতে নিলেই এমন সময় রান্নাঘরে মিলি ছুটে আসলো। ইলমির সামনে পড়তেই মিলি চমকে উঠলো যেনো ইলমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই দেখলো মিলির চোখ মুখে কেমন যেনো আশংকা দেখলো, যেনো মিলি ভীষণ ভয় পেয়ে আছে। ইলমি মুখ তুলে কিছু বলতে নিলেই মিলি তড়ি-ঘড়ি করে সরে গিয়ে আছমা বেগমকে বলে উঠলো,,

-আব আন্টি আবরার কোথায়? আমাকে আজ চলে যেতে হবে রিসিপশনের দিন না হয় আবার আসবো।

মিলি চলে যাবে চলে যাওয়ার আগেই ইলমিকে সবটা জানতে হবে। ইলমি থমথম মুখে চলে গেলো ওদের সামনে মিলিকে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ইলমি জানতে চায় মিলি কেনো এমন করলো তার সাথে? ওই লোক গুলোর সাথে মিলির কি কানেকশন?

——————

ঘুটঘুটে অন্ধকার বন্ধ পরিত্যাক্ত গোডাউনে ৫ জন লোক (করিম, সেলিম, হাবিব, সাত্তার, রিফাত ) অচেতন, আহত মানুষ চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।চোখে মুখে পানির ছিটা পড়তেই এক এক করে ৫ জনই পিটপিট করে চোখ মেলে চাইলো কিন্তু নিজেদের অবস্থান ঠাহর করতে পারলো না। চোখ মেলে তাকাতেই সব অন্ধকার দেখলো, কোথাও কোনো আলোর ছিটে-ফোঁটাও নেই। হাত পা নাড়াতে গিয়ে বুঝলো তারা বন্ধি, ফাহাদ আবরার নামক মানুষটার হাতে অবশেষে তারা ধরা পড়ে গেছে। করিম হাত পায়ের বাঁধন খোলার হাজার চেষ্টা করেও পারলো না, কিছুক্ষণ পর গর্জে উঠে, চেঁচিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে বললো,,

জা*নো*য়া*রের বাচ্চারা বাইন্ধা রাখছোস ক্যাঁ? কই পালাইছোস কু*ত্তার বাচ্চারা। কই আনছোস? কই রাখছোস আমগোরে? বান্দন খুইলা দে।
কথা শেষ করার আগেই গোডাউনের দরজা খুলে গেলো, বাহিরে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা এনার্জি বাল্বের আলো অন্ধকার গোডাউন ঘরটায় প্রবেশ করলো এতে অন্ধকার কিছুটা কমলো।

দরজায় এক কালো অবয়ব দেখা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে ছায়া রুমের ভিতরে চলে এলো। ৫ জন অন্ধকারে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো আস্তে আস্তে ছায়াটা কাছে আসতেই দেখলো এটা আবরার আর তার সাথেই আবির।
আবরার পান্জাবির হাতা ফোল্ট করতে করতে চেয়ার টেনে বসলো। আজকের আবরার যেনো অন্য আবরার । আবরার পাঁচ জনের মুখের দিকে চেয়ে অদ্ভুদ ভাবে শব্দ করে হাসলো। নির্জনতায় ঘেরা গোডাউনে আবরারের হাসির ঝংকার শোনা গেলো। আবির সবটা দেখছে ভয়ও লাগছে আবিরের৷ পাঁচজন ভয় ভয় চোখে আবরারের হাসি দেখছে চিবুক গিলে করিম চেঁচিয়ে বললো,,

শালা তোর ময়না পাখির গায়ে হাত লাগছে বইলা আগুন লাগছে গায়ে? আগুন? হা হা
এই যে যে হাত বাইন্ধা রাখছোস এই হাতে, এই হাত তোর ময়নার গায়ে পড়ছে হা হা।

আবরার হাসি থামালো, চোখে মুখে গম্ভীরতা দেখা গেলো পরপর আবারো হাসলো হাসি থামিয়ে আবরার করিমের নাক বরাবর ঘুষি দিতেই করিম পেছন দিকে হেলে পড়লো। নাক মুখ ছুটে গলগল করে র*ক্ত পড়তে লাগলো। আবির আঁতকে উঠলো এই সেই আবরার যাকে দেখে নিজের কাছের মানুষরাও ভয়ে জমে যায়। এই সেই আবরার যার সামনে কথা বলতে কয়েকবার ভাবতে হয়। আর এই আবরারের সামনে গড়গড় করে যত আজগুবি কথা বলে যায় বাচ্চা মেয়েটা। এই আবরার কিনা একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে অসহায় হা হা। আবির আগে থেকেই সবটা জানতো, বুঝতো তবে কখনো সাহস করে বলে উঠতে পারতো না কিন্তু আবরার কি করলো শেষে কিনা বিয়ে করে নিলো তাও কাউকে না জানিয়ে হা হা। আর সেই বাচ্চা মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে ওরা ওদের কপাল পুড়িয়েছে এখন ওদের কি হবে একমাত্র স্বয়ং ফাহাদ আবরার বলতে পারবে।

আবরার কপালে আঙুল ঘেঁষে গম্ভীর স্বরে বললো,,

– কে সাহায্য করেছে তোদের? তোদের মতো পাতি লোকদের কাজ এগুলো না সত্যি বল শাস্তি কম পাবি।

করিমের অবস্থা দেখে বাকি চারজন ভয়ে কাঁপতে লাগলো। সবটা বলেও দিলো । আবরার সবটা শুনে রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো, কপালের রগটা ফুলে ফেঁপে উঠলো চোখ দুটো মুহুর্তেই লাল বর্ণ ধারন করলো৷ চেয়ারে লাথি বসাতেই চেয়ার ছিটকে পড়লো দূরে। আবির সহ সবাই আঁতকে উঠলো। আবির ভয়ে ভয়ে বললো,,
– শান্ত হোন ভাই।
আবরার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুম থেকে বের হতে গিয়ে বললো,,
– ওদের ব্যবস্থা কর।
আবির শুধু দুদিকে মাথা নাড়লো।

চলবে,,,,,,