অতঃপর প্রণয় পর্ব-২১

0
93

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

২১

খুব সাধারণ ভাবে বিদাই হলো মেঘলার৷ আবেগ অনুভূতি হীন একটা মানুষ আপাতত সে৷ মূর্তির ন্যায় বসে আছে৷ মৌনতা যেন তার ভিষণ প্রিয়৷ তার কেমন অনুভূতি হওয়া উচিত সে জানেনা৷ যাওয়ার সময় বড় মা খুব কাঁদলো৷ এখান থেকে এখানে তবুও কাদলো৷ অহনাও মন খারাপ করে ছিলো৷ তবে দু-দিন পর সে ওই বাড়িতেই যাবে৷ আফতাব সাহেব শুধু শূন্য নয়নে তাকিয়ে ছিলেন৷ মাথায় হাত বুলিয়ে শোভনের বাবা কে বললেন,
“মেয়েটাকে এনেছিলাম এক নরক থেকে, ওকে নিয়ে আমার স্বপ্ন ছিলো অনেক৷ সেই স্বপ্ন আমি আপনাকে দিয়ে দিলাম৷ বাকি সবার কথা জানিনা৷ আপনি ওকে মেয়ের মত রাখবেন দয়া করে৷ও যদি ভুল করে ওকে ভালো করে বোঝালেই ও বুঝবে৷ ও হলো কাদা মাটি এখনো যেভাবে আকার দিবেন সেভাই রুপ নিবে৷ আর যদি মনে হয় নাহ ওর সাথে আপনাদের মিলছে না আমার মেয়েকে আমায় দিয়ে দিবেন তবুও ওর চোখের পানি আসে এমন কিছু করবেন না দয়া করে৷ও আমার বোনের রেখে যাওয়া চিহ্ন৷কষ্ট পেতে পেতেই জীবন কেটেছে৷ তার পরের সময় টুকু যেন ভালো থাকে এটাই আমার চাওয়া৷”

আহসান সাহেব ও আস্বস্ত করেন উনি মেঘলাকে সর্বোচ্চ দিয়ে তার মেয়ের মতই আগলে রাখবে৷ আফতাব সাহেব শোভনের সাথে কোনো কথা না বললেও শোভন আফতাব সাহেবের সামনে গিয়ে হাত ধরে বলেন,
“আমি জানি আপনি আমার উপর রেগে, রাগ অস্বাভাবিক না৷ তবে আমি কথা দিচ্ছি আংকেল আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি ওকে আমি আগলে রাখবো৷ এর বেশি নিছু নিজের ব্যাপারে বলবো না আমি৷ আপনার ভাগ্নীই বলবে সে আমার সাথে কেমন আছে৷”

আফতাব সাহেব নিরব তখনো৷ ভাগ্নীকে বুকে জড়িয়ে নিলেন শুধু৷ মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“যদি মনে হয় সে বাড়িতে তুই ভালো নেই তুই আমার কাছে চলে আসবি মা৷”

মেঘলা মাথা ঝুলালো শুধু৷ অতঃপর এক দিক থেকে আলো ফুটলো আরেক দিক থেকে বের হলো ওরা৷ শোভনের মা বেশ যত্ন করেই বরণ করে ঘরে তুললেন ছেলের বউ কে৷ শোভনের ছোটো বোন মেঘলা কে শোভনের ঘরে রেখে গেলেন৷ সাথে একটা শাড়ি ও দিয়ে গেলো নিজের৷ ও বাড়ি থেকে জামা কাপড় আনা হয়নি৷ পুরোনো জামাকাপড় কি বউ রা পরে নাকি? নতুন শাড়ি ছিলো তাই দিয়ে গেলো আপাতত৷

।।

ঘরে ঢুকতেই সকাল সকাল ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পেয়ে চমকালো খানেক শোভন৷ তার ঘরে কে এলো? তার ঘিরেতো মা ব্যাতিত তার পার্মিশন ছাড়া কারো ঢোকা নিষেধ৷ তাহলে?
হুট করেই মস্তিষ্ক কিয়ৎ প্রহর আগের ঘটনা স্মৃতিচারণ ঘটালো৷ হুস ফিরলো শোভনের৷ মাথা চুলকে বাকা হাসলো৷ মানুষ অভ্যাসের দাস৷ হুট করে কয়েক ঘন্টায় কিছু প্রয়োজন হলে শুরু শুরুতে কি মনে থাকে এসব? এখন তার এ ঘড় শুধু তার না৷ অর্ধেকটা আরেকজনের দখলদারি চলবে৷
সেই চঞ্চল মেয়েটি এখন তার সব কিছুতে ভাগ বসাবে৷ ফস করে নিশ্বাস নিয়ে বসলো বিছানায় ফোনটা নিয়ে একটা ভিডিও বের করলো৷ বিয়ের সময় করিয়েছে এটা৷ ভিডিওটা দেখলো৷ তারপর কারো নাম্বারে পাঠিয়ে দিলো হোয়াটসঅ্যাপ এ৷
তারপর কল দিলো কাউকে৷ ওপাশে ধরতেই গম্ভীর স্বরে বললো,
“ভিডিওটা ওই ছেলেকে দেখিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে দে ওকে৷ আর বলিস, শোভন বলেছে সাহস থাকলে ওর বাড়ি থেকে মেঘলা কে তুলে নিয়ে যেতে৷ দেখি কেমন বাপের ব্যাটা৷ ”
বলেই বাঁকা হাসলো৷ ফোন কাটলো৷ ঠিক তখনি ওয়াশরুম এর দরজার শব্দ হলো৷ খট করে দরজাটা খুললো মেঘলা৷ পরনে তার গোলাপি রাঙা শিফনের একটা শাড়ি৷ চুল মুছতে মুছতে বেরিয়েছে৷ স্নিগ্ধ এ রুপে যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকালো শোভন৷ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই চেনা গম্ভীরমুখ দেখে জড়সড় হলো মেঘলা৷ মুখ জুড়ে মলিনতা আর অভিমান ছেয়ে গেলো৷ চোখ দুটো যেন প্রতি পলকে বলছে অই লোকটার সাথে আমার ভিষণ অভিমান৷

শোভনের শক্ত হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভূতি খেয়ে গেলো৷ এর মাঝেই শোভনের কন্ঠ কর্ণপাত হলো,
“সকাল সকাল গোসল? আমাদের বিয়েতো রাতে হয়নি একটু আগেই হলো আমিও কিছু করিনি তাহলে ঠান্ডায় এত সকালে গোসল কেন?”

শোভনের কথায় বড় বড় চোখে তাকালো মেঘলা৷ লোকটা স্বাভাবিক ভাবেই আছে৷ যেন সে খুব স্বাভাবিক একটা কথা বলেছে৷ লজ্জার ছিটে ফোঁটাও নেই৷ মেঘলা কঠোর চোখে চোখ পাকিয়ে তাকালো৷
শোভন আপদমস্তক দৃষ্টি বুলিয়ে আবার বললো,
“নতুন বউ সেজে সামনে হাজির৷ বাহ এখন থেকেই ইমপ্রেস করা শুরু? অথচ ভাব নিয়ে বলছিলে বিয়ে করবে না৷”

মেঘলা দাত কটমট করে চাইলো৷ ভেবেছিলো লোকটার সাথে কথাই বলবে না আর৷ কিন্তু এ লোকটা তাকে স্থীর থাকতে দিলো না৷ নেত্র পল্লব তড়িৎ গতিতে ফেলে রাগী স্বরে বললো,
“আপনাকে ইম্প্রেস করার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার৷”

শোভনের আকস্মিক রাগ হলো৷ কি বললো মেয়েটা? ওকে ইম্প্রেস এর ইন্টারেস্ট নেই? তাহলে অই রাজ কে ইম্প্রেস করবে নাকি? রাজের কথায় রাজের সাথেই তো ঘুরে৷ মেঘলা এখান থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি সামনে গিয়ে দাঁড়ায় শোভন৷ হাত পেঁচিয়ে ধরে৷ কর্কশ স্বরে দাতে দাত চেপে বলে,
“আমাকে ইমপ্রেস করার ইচ্ছে নেই? তাহলে কি সেই রাজ কে করতে চাও মেয়ে? অই রাজ কে নিয়ে ভাবতে চাও? যে মস্তিষ্ক দিয়ে অই রাজের কথা ভাববে অই মস্তিষ্কের সব স্মৃতি ভুলিয়ে দিবো বলে রাখলাম৷ তুমি ভেবোনা জোর করে বিয়ে করেছি তাই সব মানবো৷ এখন থেকে তুমি সম্পূর্ণ আমার৷ তোমার নিকের প্রতিও নিজের এত অধিকার নেই৷ আমি যা বলবো সেভাবেই চলতে হবে৷”

মেঘলার চোখ ভরে এলো৷ লোকটা সব সময় এমন করে৷ কেন তার এ লোকের সাথে দেখা হলো আবার? কেন বিয়ে হলো? সৃষ্টি কর্তা তাকে কোথায় এনে ফেললো আবার?
মেঘলা ফুপিয়ে উঠে বললো,
“আপনি এই জোর করা ছাড়া আর কি পারেন বলেন তো? সব কিছুতেই জোর৷”

বলে মেঘলা এখানে দাড়ালো না৷ বড় বড় পা ফেলে অলিন্দের দিকে পা বাড়ালো৷ এ লোকটার সাথে তার ভিষণ অভিমান যে তা ঘোষিত হলো৷
ভ্রু কুঁচকে চাইলো শোভন৷ মেয়েটা তাকে ইগনোর করলো? কথা শুনালো? মেয়ে মানুষ সব কিছুতে এমন ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদে কেন? আশ্চর্য৷ তপ্ত শ্বাস টেনে সে ওয়াশরুমে গেলো৷ ফ্রেশ হলো তাতে বেশ সময় পার ও হলো৷ তবে বেরিয়েও অবাধ্য মেয়েটিকে ঘরে পেলো না৷

দৃঢ় পায়ে ফের কাছে পাশে দাড়ালো, পাশাপাশি৷ চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে৷ শোভন দেখলো তা৷ ফের সরে গিয়ে ঘেঁষে দাড়ালো৷ মেঘলার মাথা ঠেকলো শোভনের বুকে৷ লোকটার আকস্মিক পরিবর্তন চোখে লাগার মত৷ মেঘলা এবারো সরে যেতে নিলো৷ শোভন মেঘলার পেট চেপে নিজের সাথে আকড়ে ধরলো৷ পিঠে আছড়ে থাকা চুল গুলো সয়াতে সরাতে বললো,
“পালাও কেন মেয়ে?আর সারা রাত জেগে এখনো এখানে বসে আছো কেন? রেস্ট নাও গিয়ে৷”
মেঘলা চুপ করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে৷ কম্পিত কন্ঠে বললো,
“কি করছেন কি?”
শোভন হাসলো খানেক৷ হুট করেই মেঘলাকে চমকে দিয়ে চুল মুছতে শুরু করলো৷ বললো,
“বাহ আমার বউ আমার থেকে এডভান্স৷ যদিও এখন রোম্যান্সের মুডে নেই তুমি চাইলে শুরু করবো৷”

মেঘলা ভরকালো৷ বললো,
“অসভ্য লোক৷”
বলে আবার সরে যেতে নিলে শোভন আটকে ধরলো৷ মোছা শেষ অনেকটা সময় পেরো৷ ঠিক তখনি কি যেন কি ভেবে মেঘলা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“আমার কিছু কথা আছে৷”

শোভন বললো,
“বলো৷”
মেঘলা কাল বিড়ম্বনা না করে ফট করে বললো,
“সে দিন আপনার বিয়ের আসর থেকে যে মেয়েটি পালিয়েছে ওটা আমিই ছিলাম৷”

চলবে,