#অতঃপর_প্রণয়
#পর্ব ২৩
#জেসমিন_জেমি
ইলমি- কবে ফিরবো?
আবরার – জানি না।
ইলমি- কেনো এমন করছেন?যাবো না আমি।
আশ্চর্য! কি করছেন আপনি? আমি কোথায় যাবো না বললাম তো। যাবো না আমি।
আবরার ইলমিকে ধমকে রুম থেকে বের হতে বললো। ইলমি কেঁদে উঠলো। তখন মুখ ফসকে না হয় কথাটা বলে ফেলেছে তাই বলে তাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিবে? ইলমি রুম থেকে বের হলো না গুঁটি গুঁটি পায়ে আবরারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। সাদা পা-জামা পান্জাবি পড়নে, সিল্কি চুল গুলোতে ব্যস্ত হাতে চিরুনি চালাচ্ছে আবরার। ইলমি শক্ত করে পেছন থেকে আবরারকে জড়িয়ে নিলো। আবরারের হাত আপনা আপনি থেমে গেলো সে শক্ত হয়ে সটান দাড়িয়ে রইলো। ইলমি কান্না গিলে মিউয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,,
-স্যরি বললাম তো আর কখনো হবে না। আর কখনো বলবো না। আমাকে পাঠিয়ে দিবেন না প্লিজ। আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
আবরার কিছু বললো না তবে নিজেকে ইলমির থেকে সরিয়ে নিলো। ইলমির গাল গড়িয়ে অশ্রু কণা ঝড়ে পড়লো তৎক্ষনাৎ। লোকটা তাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিচ্ছে? তার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে। ইলমি কিভাবে থাকবে? এই মানুষটাকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলে না ইলমির। আবরার গম্ভির কন্ঠে বললো,
তারাতারি তৈরি হয়ে নিচে আসবি আবির অপেক্ষা করছে।
ইলমি চেঁচিয়ে উঠলো। বললো,
বললাম তো যাবো না। কোথাও যাবো না আমি।
আবরার ভ্রু কুঁচকালো, বললো,
জেদ করবি না একদম।
ইলমি করুন চোখে আবরারের দিকে চাইলো, আবরার চোখ সরিয়ে নিলো। ইলমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে আবরারকে আবারো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। বললো,,
যাবো না, যাবো না আমি। কেনো এমন করছেন। আপানাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মরে যাবো। আমি, আমি পাগল হয়ে যাবো।
পরপর উন্মাদের মতো কয়েকবার চুমু বসালো আবরারের ঠোঁটে, বুকে শক্ত করে জড়িয়ে আবরারের হাত টেনে রাখলো নিজের কোমড়ে । বললো,,
যাবো না আপনাকে ছেড়ে প্লিজ।
আবরার শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইলমি নিজ অঁধরযোগল এগিয়ে বললো,
চু*মু দিন।
আবরার ভ্রু কুঁচকালো। থমথমে কন্ঠে বললো,
– দিবো না।
ইলমি- দিবেন আর এক্ষুনি।
আবরার চুপ রইলো। ইলমি বললো,,
এক্ষুনি আমার চু*মু চাই।
আবরার পড়লো এক মহা বিপদে বউকে চু*মু খেলেও দোষ না খেলেও দোষ। সব দোষ যেনো আবরার ঘোষ।
ইলমি- চু*মু দিবেন আপনি ?
আবরার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
না
ইলমি একহাতে কোমড় থেকে শাড়ীর আঁচল সরিয়ে বললো,
তাহলে আমার আপনাকে চাই। হয় চু*মু নাহয় আপনি।
আবরার বিরক্তি ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে উঠলো। ইলমিকে কপাল কুঁচকে তড়িঘড়ি করে ইলমিকে শান্ত করতে হাত মুঠোয় পুরে নিলো পরপর ঠোঁট ছোঁয়ালো ইলমির অঁধরযোগলে। ইলমি দুহাতে জড়িয়ে নিলো আবরারকে৷ কিছুমুহুর্ত পর ইলমি করুন চোখে আবরারের দিকে চাইলো বললো,
যাবো না প্লিজ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই আবরার তার হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ড্রয়িংরুমে আসতেই আছমা থমথমে মুখে বেগম বললো,
সাবধানে যাবি ইলমিকে রেখেই চলে আসবি ।
ইলমির মাথায় যেনো আঁকাশ ভেঙে পড়লো তার মানে বাড়ীর সবাই জানে আবরার তাকে বাড়ীতে রেখে আসছে? আবরারের সাথে সাথে তারাও কি চায় ইলমি চলে যাক? ইলমি চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো তৎক্ষনাৎ থাকবে না সে। সবাই যখন চাইছে ইলমি চলে যাক তবে তাই হবে চলে যাবে সে থাকবে না।
—————-
রাতের আঁকাশ। আঁকাশে বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়েছে রাতের শহর । তারায় ভরা আঁকাশ। রাস্তার পাঁশে শারি শারি লম্বা লম্বা গাছ । গাড়ির সাথে সাথে গাছ গুলোও ছুটছে যেনো । গাড়ীটা যতটা এগুচ্ছে গাছগুলোকে ততটাই পেছনে ফেলে আসছে । ইলমি একমনে পেছনে ফেলে আসা গাছগুলোকে দেখছে। পিনপিন নিরবতায় ঘেরা কোনো এক জোৎস্না ভরা রাতে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে ছিলো ইলমির। ইচ্ছেগুলো আজ পূরন হচ্ছে তবে ইলমির কোনো ভাবাবেগ নেই। সে ভীষণ কষ্টে কান্না আটকে বসে আছে। পাঁশেই আবরার ড্রাইভ করছে। তালুকদার বাড়ী থেকে বের হয়ে একটা কথাও বলে নি ইলমি চুপচাপ গাড়ীতে উঠে বসেছে। ইলমি আড়চোখে পাঁশের মানুষটার পানে চাইলো। সে তো এমন একটা সুখকর মুহুর্ত চেয়েছিলো। এই মানুষটাকে নিয়ে এমন জোৎস্না ভরা রাতে ঘুরে বেড়াবে। চাঁদের মিষ্টি আলো দুজনে গায়ে মাখবে। ঘুরে বেড়াবে গভীর রাত পর্যন্ত। সেই সময়টা, সেই মুহুর্তটা হবে ইলমির জীবনের সবথেকে সুখকর, আনন্দের মুহুর্ত । সেই জোৎস্না ভরা রাত, সেই মুহুর্তটা ঠিকই সে পেলো তবে চাঁদের আলো গায়ে মাখা হলো না দুজনের। মুহুর্তটাও আনন্দঘন হলো না, হলো ভীষণ কষ্টের। এই মুহুর্তটা ইলমির জীবনের সব থেকে কষ্টের, সব থেকে দুঃখের বলে মনে হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে তার, ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ, কান্না । মুহুর্তেই গাল গড়িয়ে দু ফোটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়লো।
————-
মির্জা বাড়ীর সামনে এসে গাড়ী থামতেই ইলমি চমকালো আবরার গম্ভির কন্ঠে বললো,
নামো।
ইলমি মেঁকি হাসলো। কিছু বলতে নিয়েও কথা গিলে নিলো পরপর গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়ালো আবরার গাড়ী সাইটে রেখে নেমে আসলো ।
——-
কলিংবেল চাপতেই আমেনা বেগম দরজা খুলে দিলেন। পুরো দু মাস পর মাকে দেখে ইলমি জড়িয়ে নিলো মাকে হু হু করে কেঁদে উঠলো। জহির মির্জা ছুটে আসলেন মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন পরম আবেশে। বাবার বুকটা যেনো হালকা হলো বুকের উপর থেকে কষ্টের পাহাড়টা যেনো নেমে গেলো। দু মাস পর মেয়েকে চোখের সামনে দেখছেন জহির মির্জা তবে তার মনে হচ্ছে হাজার খানেক বছর পর মেয়ের চাঁদ মুখখানা দেখছেন। মেয়ের আদলে শব্দ করে চুঁ*মু খেলেন পরপর বললেন,
আমার আম্মাজান।
আবরার পাঁশে দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো। আছমা কান্নার মাঝে হেসে উঠলেন মেঁকি রাগ দেখিয়ে বেগম বললেন,
কি করছেন ভিতরে তো আসতে দিন।
জহির মির্জা হাসলেন,
হ্যাঁ হ্যাঁ ভিতরে আসো তোমরা ।
————–
ড্রয়িংরমে কিছুক্ষণ আবরারের সাথে আলাপ করলেন জহির মির্জা। ইমির তখনি বাড়ীতে ফিরলো। ইলমি আসবে যেনে অফিস থেকে তারাতাড়ি বাড়ীতে ফেরা। ভাইজানকে দেখে ইলমি ছুটে গেলো। ইমিরও জড়িয়ে নিলো বোনকে। ইলমি সবাইকে যেনো কতবছর পর দেখছে। এই তো সপ্তাহ খানেক আগেও ভাইজান গিয়ে দেখে এসেছে অথচ তার মনে হচ্ছে এক যুগ পড়ে তার ভাইজানকে দেখছে। ইমির বোনকে জড়িয়ে আবরারের উদ্দেশ্য বললো,
ভালো আছিস?
আবরার – এইতো, তুই?
ইমির- হুম ভালো।
আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি একটু ওয়েট কর। আবরার একবার ইলমির দিকে চাইলো ইলমি চোখ ফিরিয়ে নিলো পরপর নিজ রুমের দিকে পা বাঁড়ালো। সবাই আশ্চর্য হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো৷ সব থেকে অবাক হলেন আছমা বেগম মেয়েটাকে কেমন যেনো লাগছে তার কাছে৷ চোখ দুটো ফোলা ফোলা মেয়েটা কি কান্না করেছে নাকি? শুকনো মুখ। কেমন যেনো লাগছে দেখতে।
মায়ের মন কেমন করে উঠলো যেনো ৷ আসলে একজন মা তার সন্তানের মুখ পানে চেয়েই বুঝে যান তার সন্তান, তার নাড়ি ছিঁড়া ধঁন ভালো নেই৷ মায়েদেরকে মুখ ফুঁটে বলার প্রয়োজন পড়ে না কখনোই ৷ মায়েরা বোধহয় এমনই তাই না?
আবরার গম্ভিরস্বরে বললো,
১০ টায় ফ্লাইট।
ইমির ঘড়িতে সময় দেখলো। ব্যস্ত কন্ঠে বললো – অলরেডি ৯ টা ৫ মিনিট।
আবরার উঠে দাঁড়ালো বললো,
আমাকে যেতে হবে।
জহির মির্জা বিনাবাক্যে মেয়ের জামাইকে বিদায় দিলেন। অন্য সময় হলে হয়তো বা ধমকে দিতো কিন্তু এসময়ে ধমকে লাভ নেই। ইমির আবরারের সাথে বের হলো। আছমা বেগম আহাজারিতে ফেঁটে পড়লেন।
———-
গাড়ীর হর্ণ বাঁজতেই ইলমি দৌঁড়ে বেলকনিতে গেলো। নিচে তাকাতেই দেখলো আবরার জহির মির্জার সাথে কথা বলছে। ইলমি বার বার চাচ্ছিলো আবরার একবারের জন্য হলেও যেনো বেলকনিতে তাকায় কিন্তু ইলমির ইচ্ছাতে এক বালতি পানি ঢেলে আবরার চট করে গাড়ীতে উঠে বসলো। একবারের জন্যও ইলমির দিকে তাঁকালো না ইলমি ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। রাগে দুঃখে হাতের কাছের টবটাকে তুলে পাঁশেই ঢিল ছুড়লো সাথে সাথেই মাটির টবটা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো।
বিরবির করে বললো,
আপনার থেকে দূরে থাকার চেয়ে বরং আমার মৃত্যু হোক।
চলবে,,,,,,,,
(ভুলক্রুটি মার্জনীয়)