অতঃপর প্রণয় পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
301

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

অন্তিম পর্ব

এক হাতে জড়িয়ে নিলো মেঘলাকে৷ মাঝখানে থাকা দুরত্ব টুকু ঘুচলো৷কিঞ্চিৎ ও ফারাক নেই দুজনের মাঝে৷ মিশে গেলো যেন৷ স্পর্শ হলো, আলিঙ্গন হলো৷ অঘোষিত অনুভূতি ভীর জমালো৷ খেই হারালো, নতুন প্রেমের সুর তুললো অনুভূতিরাও সমান তালে উপচে পরলো৷
লজ্জায় যেন খেই হারালো৷ এর মাঝেই মেঘলার কর্ণপাত হলো মাতাল কন্ঠ,
“আমায় কি ভালোবাসা যায় না? হ্যাঁ আমি রাগচটা একটু সামলে নেওয়া যায় না? নিজের করা যায় না?তুমি শুধু হাত বাড়াও আমি তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো আমার ভালোবাসায়৷ আমি অনুভূতি প্রকাশে কাঁচা তাই প্রেম নিবেদন করে কি করে জানি না৷ আমি সবার মত প্রেম নিবেদন করতেও চাই না৷ আমিতো ভালো বেসে যেতেই চাই৷ ভালোবাসা পেতেও চাই৷ আমি মুখে লোক দেখানো প্রেম নিবেদন পছন্দ করিনা৷ তুমি যেন নিজেই আমার ভালোবাসা দেখে নিজেকে বিশেষ ভাবো৷ আমি তোমার প্রতিটা মুহুর্ত বিশেষ করতে চাই৷ তোমার ব্যাপারে সব জানি আমি৷ আমি হয়তো সে দিন গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবো না৷ সে দিন গুলোর ক্লেশ ভুলিয়ে দিতে পারবোনা৷ আপনজন দের দেওয়া কষ্ট ভোলা যায় না৷ তবে আমি তোমার সামনের দিন গুলোর প্রতি মুহুর্ত বিশেষ করে রাখতে চাই৷ যেন নিজের সুখে নিজেই অভিভূত হও৷
আমার উপর তোমার ভিষণ রাগ,ভিষণ অভিমান বিয়েতে এত তাড়াহুড়ো করায়৷ তবে যা করেছি এতে আমি অনুতপ্ত না৷ আমি খুব স্বার্থপর ধাঁচের মানুষ আমার যখন যা করতে ইচ্ছে হয় মাথায় আসে আমার তখন তা করতেই হবে৷ এ নিয়ে আমি বাক বিতর্কে যাবো না তোমার মান ও ভাঙাবো না৷ ”

সুখানুভব হলো মেঘলার৷ চোখ টইটুম্বুর হলো৷ অদ্ভুত নাম না জানা অনুভুতিরা আষ্টেপৃষ্টে ধরলো, রাগ আর অনুভুতিরা অবেলায় ভিড় করা কালো মেঘ এর মত তীব্র বাতাসে মিলিয়ে গেলো৷
ঝকঝকে আকাশের মত হলো যেন অন্তঃকরণ৷ অনুভূতিরা ছন্নছাড়া হলো৷ নিমেষে সব যেন বেমালুম ভুললো!
মস্তিষ্ক তখন ফাঁকা, শোভনের পুরুষালি কন্ঠে বলা গোছালো বাক্য গুলো বিচরণ করছে৷ লজ্জাও বিনা নিমন্ত্রণে এসে হাজির হলো৷ লোকটা বলছে কি সে জানে? কি ভয়ংকর কথা৷ এ ভয়ংকর কথা গুলোর ভার জানে সে?
মেঘলার অনুভূতি জর্জরিত মনে কেমন প্রভাব ফেলছে জানে?

মেঘলা তখনো নিশ্চুপ, নির্বাক, নিস্তব্ধ! মৌনতার সাথে প্রগাঢ় সন্ধী করলো৷ শব্দ ভান্ডারের শব্দ ফুরালো৷ বলার মত একটি বাক্য ও খুঁজে পেলো না৷
এর মাঝেই শোভন আরেকটু এগোলো৷ একেবারে মিশে গেলো৷ এক হাতে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে নিলো৷ গম্ভীর পুরুষ কে ও আজ অনুভূতি রপ্ত করলো বুঝি? রাগচটা লোকটাও অনুভূতি নিয়ে বললো,
“তোমাকে বানানো হয়েছে এক মাত্র আমার জন্য৷ সৃষ্টি কর্তা এ পৃথিবীতে তোমায় পাঠিয়েছেও আমার জন্য৷ আমার বুকের পাজর দিয়ে যেখানে তোমায় সৃষ্টি করা হয়েছে তুমি শত দূরে গেলেও আমার কাছেই ফিরতে হতো৷ তুমি বিয়ের জন্য শত বার না করলেও তোমার আমার সাথেই বিয়ে হতো৷
সৃষ্টি কর্তার পরিকল্পনা বোঝা বড় দায়৷ তোমায় পেয়ে আমি নিজের স্পন্দন খুঁজে পেয়েছি তোমায় কি করে ছাড়ি বলোতো৷ দুনিয়ার সব মানুষ এ বিয়েতে বাধা দিলেও আমি তোমাকেই বিয়ে করতাম৷ আমি যা নিজের করে ভাবি তা আমার করি৷”

মেঘলা থমকালো আরেক দফা৷ হৃদ স্পন্দন তীব্র গতিতে নিজের কার্য চালালো৷ আজ যেন ওর মৃত্যু নিশ্চিত৷ মনে হলো এই বুঝি হার্ট এট্যাক করলো৷ লোকটা ভালো না, একটুও ভালো না৷ এমন ভাড়ী ভাড়ী কথায় ওর সব থমকায় বোঝে না সে?

শোভন ফের বললো ফিসফিসিয়ে,
“প্রেমময় বাক্য শুনলে বেশ লাগে তাই না বউ? আমিও যে শোনার জন্য অপেক্ষায় আছি৷ তবে আমি তোমায় জোর করবো না৷ আমি অপেক্ষা করবো আমার এ অপেক্ষা আমৃত্যু চলবে৷ আমি সেই দিনের অপেক্ষা করবো যে দিন অনুভূতি জর্জরিত হয়ে তুমিও বলবে আমি তোমার অনুভূতির শীর্ষে থাকা মানুষ৷ আমি তোমার হৃদয়ের একমাত্র প্রেমিক পুরুষ৷ তোমার ভালোবাসা৷”

বলেই আকস্মিক এক কাণ্ড ঘটালো ভয়ঙ্কর এক কান্ড, আলতো ভাবে মেঘলার পিঠ স্পর্শ করল শোভনের ওষ্ঠ৷ শিউরে উঠলো মেঘলা শরীর৷ প্রথম ছোঁয়া তাও কোন পুরুষের এ স্পর্শ হালাল৷ সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো৷ নিদারুণ বক্ষ যন্ত্রণা শুরু হলো৷ চোখ অতি মাত্রায় বড় হলো যেন৷ তবে বেশিক্ষণ ঠিক রইলো না৷ ঘোলাটে হলো সব শ্বাস প্রশ্বাস ভারী হলো৷ হীম ধরলো সর্বাঙ্গে, হৃদ যন্ত্র যেন থমকালো৷ আশেপাশে অন্ধকার নামলো জ্ঞান হারালো মেঘলা৷ ঢলে পরলো শোভনের বক্ষেস্থলে৷ ভরকালো শোভন, ঘটনা ঠাহর হতেই হেসে উঠলো৷ মেয়েটা লজ্জায় জ্ঞান হারালো৷ চঞ্চল মেয়েটি নাকি লজ্জাও পায়৷ আগলে নিলো স্ব-যত্নে প্রেয়সীকে৷ মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে আছে৷ এমন লাজুক মানুষ কে লজ্জা দিতে ভারী ভালো লাগে তো৷ ফের দ্বিতীয় বারের মত শোভনের ওষ্ঠ মেঘলার ললাট স্পর্শ করলো৷ ফিসফিসিয়ে বললো,
“এইটুকুতেই জ্ঞান হারালে জান?আরো সংস্পর্শে গেলে তোমাকেতো তাহলে খুঁজে পাওয়াই যাবে না৷ এখন তো তোমায় আমি বেশি বেশি লজ্জা দিবো৷ প্রতিবার খেই হারাতে দেখবো৷ আমার বক্ষ শীতল হবে৷”
উঠিয়ে নিলো কোলে ঘরের দিকে এগোলো৷ বেশ যত্ন করে শুইয়ে দিলো৷ অপলকে তাকিয়ে রইলো কত সময়৷ আকস্মিক ঘামতে শুরু করলো তড়িৎ গতিতে সরে গেলো৷ মেয়েটা ভয়ংকর সুন্দর৷

সজোরে ধাক্কাচ্ছে কেউ শোভনদের দরজা৷ তাড়াহুড়ো খুললো কাজের মেয়ে৷ তড়িৎ গতিতে ঢুকে পরলো রাজ৷ চিৎকার করে বললো,
“মেঘলা বেরিয়ে আয়, তুই এখানে? মেঘলা?
অই ভিডিও কিসের ছিলো? ওই ছেলে মিথ্যা বলছে বল জান?”
আকস্মিক চিৎকারে ঘুম ভাঙলো মেঘলার৷ রাজের কন্ঠে ভীত হয় সে৷ অয়াশে তাকিয়ে দেখে সোফায় বপ্সে আছে শোভন তার দিকেই তাকিয়ে৷ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বসে আছে৷ মেঘলা যাবে কি যাবে না ভাবলো৷ তার মাঝেই ডাক পরলো ফের৷ কর্কশ কন্ঠে ডাকছে৷ মেঘলা শোভনের পানে তাকালো৷ শোভন অদ্ভুত রকম হেসে উঠতে উঠতে বলে,
“চলো জান তোমার আশিক এর সাথে দেখা করে আসি৷”
বলেই মেঘলার হাত ধরলো এক প্রকার টানতে টানতেই নিজের সাথে নিয়ে এলো৷

মেঘলাকে দেখেই দৌড়ে এলো৷ইতমধ্যে এখানে বাড়ির সবাই এসেছে৷ মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ বললো,
“তুই এ বাড়িতে কি করছিস? চল আমার সাথে তোর কোথাও থাকা লাগবে না৷ ”
বলে হাত ধরতে যাবে শোভন নিজের দিকে টেনে নিলো৷ বললো,
“যেখানে আছিস সেখানেই থাম, এদিকে হাত বাড়ালেই এ হাত আর থাকবে না৷ ও এখন আমার বউ৷”

চমকে উঠলো রাজ৷ শুকনো ঢোক গিললো অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলো সব৷ বললো,
“মেঘলা বল ও মিথ্যা বলছে? তুই তো আমার, ওর হবু কেন? বল না জান? বল?”

মেঘলা কাটকাট কন্ঠে বললো,
“ঠিক করে কথা বলুন আমার ভাই আপনি৷ আর উনি ঠিক বলছে৷ দয়া করে আপনারা আমায় বাঁচতে দিন আমি একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই৷”

রাজ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে৷ যেন আগুন ঝরছে৷ হুট করেই একটা রিভলবার বের করলো৷ তাক করলো মেঘলার দিকে৷
“তুই আমার না তো কারো না৷ কি ভেবেছিস বলবি মেনে নিবো? তোকেও বাঁচতে দিবো না আমিও বাঁচবো না৷”
বলেই হুট করে নিজের বুকে গু ‘লি চালালো তারপর মেঘলার দিকে তাক করলো৷ শুট ও করলো সবটা এত তাড়াতাড়ি হলো কিছু করতে পারলো না শোভন৷ তবে মেঘলাকে ধাক্কা দিয়েছে৷ তবুও শেষ রক্ষা হয়নি, হাতে লেগেছে৷

পরিশিষ্ঠঃ

সময় পেরিয়েছে মেঘলা সুস্থ আছে৷অনেক কিছু পাল্টেছে৷ এক বসন্ত ফুরিয়ে আরেক বসন্ত এসেছে৷ তবে রাজ কে বাঁচানো যায়নি, নিজের কর্মের ফল পেয়েছে৷ ভালোবাসা কি আসলেই এত সহজ? মেয়েটার ও যদি এমন হতো ভাবতেই বুক কাঁপে৷ আচ্ছা ভালোবেসেছিলো যেহেতূ মেয়েটার দিকে বন্দুক তাক করলো কি করে?
আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী এবং প্রথম বারের মত বউ সেজেছে মেঘলা এবং বর সেজেছে শোভন৷ নতুন অনুভূতি পুরোনো হয়নি এখনো লজ্জা কমেনি এখনো৷ অনুভূতি, লজ্জা, আর ভালোবাসা দিয়েই দ্বিতীয় বারের মত নতুন অধ্যায়ের সূচনা৷

সমাপ্ত