#অতঃপর_প্রণয়
#পর্ব ২৫
#জেসমিন_জেমি
কেঁটে গেছে কয়েকদিন ।
ইলমি পাঁকা গিন্নীর মতো কোমরে আঁচল গুঁজে কিচেনে হিমি বেগমের থেকে ঝাল ঝাল কষা মাংসের রেসেপি শিখে নিচ্ছে। আবিরা, তূর্ণা তূর্ফা সিরিয়াল দেখছে। ইমরুল তালুকদার ড্রয়িংরুমে আসতেই টিভি অফ করে রুমে চলে গেলো ওরা । ইমরুল তালুকদার গম্ভিরকন্ঠে বললো,
– চা দিস তো আমায় ।
সুফিয়া ভয়ে ভয়ে বললো,
দিতাছি খালুজান।
সুফিয়া কিছুক্ষণ পরেই চা নিয়ে হাজির হলো। ইমরুল তালুকদার চা নিতেই সুফিয়া এক প্রকার ছুঁট লাগালো। ইমরুল তালুকদারকে দেখে সুফিয়ার অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠে। ইমরুল তালুকদার চা খেতে খেতে খবরের কাগজে চোখ বুলালো। বেশ কিছুক্ষন পরে সবাই ড্রাইনিংয়ে এসে বসলো। আবরার বাড়ীতে ফিরে একবারে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। ইলমি পাঁকা গিন্নীর মতো সবাইকে এটা সেটা পরিবেশন করো দিতে লাগলো। হিমি বেগম বললো,
-অ্যাই মাইয়া তরকারিটা দিবি না।
ইলমি থতমত খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করলো। আবরার আড়-চোখে চাইলো। হিমি বেগম বললো,
– যা নিয়ে আয় বেশ মজার হয়েছে। এমনিতেই এটা আবরারের খুব পছন্দের।
ইলমি আবরারের দিকে তাকাতেই আবরার চোখ ইশারায় আনতে বললো। ইলমি গরম গরম ঝাল ঝাল কষা মাংসের বাটিটা টেবিলে রেখে আবরারের পাতে তুলে দিলো। পর পর সবার প্লেটে তুলে দিলো৷ ইমামূল তালুকদার মুখে দিয়েই বললেন,
– বাহ! বেশ হয়েছে ইলমি।
তূর্ফা তূর্ণা বললো,,
ভীষণ মজা হয়েছে ইলমি উপস ভাবি ।
আবিরা চুপচাপ খেয়ে চলেছে। ইলমি এসেছে থেকে দেখছে মেয়েটা ঠিক মতো খায় না। ঘুমায় না হলো কি হলো এই মেয়ের?
আছমা বেগম হেঁসে বললো,
ইলমি তো পাকা গিন্নী হয়ে উঠেছে এবার তাহলে আমার আর হিমির মুক্তি।
সবার এতো এতো প্রশংসায় ইলমি খুঁশিতে নেঁচে উঠলো। গদগদ হয়ে আবরারের দিকে চাইলো । তবে লোকটা একমনে চুপচাপ খেয়ে চলেছে। ইলমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলো আবারারের রান্না সম্পর্কে কিছু বলার তবে লোকটা কিছু বললো বা খেয়ে চলেছে। ইমামুল তালুকদার হেঁসে বললো,
-আবরার খেতে কেমন?
আবরার ধীরকন্ঠে বললো,
হুম ভালো।
ইমামুল তালুকদার বললো,
শুধু ভালো?
আবরার কিছু বললো না চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেলো।
——-
ইলমি কিচেনের কাজ শেষ করে ১১ টায় গাল ফুলিয়ে রুমে ফিরলো । আবরার ডিভানে বসে ল্যাপটবে কিছু একটা করছে। ইলমি সেদিকে একপলক চেয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাঁড়ালো। আবরার ইলমির গাল ফুলানো দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ইলমি ফ্রেশ হয়ে এসে অন্যপাঁশ ফিরে শুঁয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ফুঁসে উঠে বললো,
কারো রাত জাগার ইচ্ছে হলে অন্য রুমে যাক।
আবরার নিঃশব্দে হাসলো। ইলমি আবরারকে হাসতে দেখে বললো,
বিরক্তকর! লাইট অফ করুন আমি ঘুমাবো।
আবরার বললো,
-মহারাণী অন ফায়ার।
আবরার উঠে এলো ল্যাপটব রেখে লাইট অফ করে ইলমির গা ঘেষে পাঁশে শুয়ে পড়লো। ইলমি সরে গেলো আবরার গা ঘেঁষতেই ইলমি বিরক্তিতে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে উঠে বললো,
-ধূর!
বিছানা থেকে উঠে যেতে নিলে আবরার হাত নিজের মুঠোয় পুরে বুকের কাছটায় এনে ফেললো। ইলমি মেঁকি রাগ দেখিয়ে বললো,
ছাড়ুন যত্তসব ঢং!
আবরার বললো,
ঢং?
ইলমি – তা নয় তো কি?
আবরার বাঁকা হেঁসে বললো- ভালোবাসা।
ইলমি পারে তো এবার কেঁদে দেয়। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
আপনি আমাকে ভালোবাসেন না ?
আবরার ভ্রু কুঁচকালো। ইলমি ভাঙা কন্ঠে আবারো বললো,
আপনি আমাকে ভালোবাসেন না৷ একটু ও ভালোবাসেন না।
আবরার শব্দ করে হেসে উঠলো । ইলমির হাত টেনে হাতের উল্টো পাঁশে চুমু একে বললো,
মাশ আল্লাহ! বাচ্চা একটা মেয়ে এতো ভালো রান্না কিভাবে পারলি?
ইলমি কাঙ্ক্ষিত মানুষটার কাছে রান্নার প্রশংসা পেতেই হেঁসে উঠলো। বললো,
সত্যি ভালো লেগেছে আপনার?
আবরার ইলমি কোমর জড়িয়ে বললো,
ভীষণ। আমার বাচ্চা বউ দেখছি পাকা রাঁধুনী হয়ে উঠেছে।
ইলমি অন্ধকার ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
বাচ্চা বউ মানে?
আবরার – তুইতো আমার বাচ্চা বউ।
ইলমি বাঁকা হাসলো। বললো,
তাহলে আপনি suger husbend।
বলেই হোঁ হোঁ করে হাসলো। আবরার ভ্রু কুচকে বললো,
মানে?
ইলমি বললো,
মানে কচু।
বলেই শব্দ করে হাঁসলো। আবরার ভ্রু কুচকে ইলমির ছোট দেহখানা একঝটকায় নিজের বুকের নিচে চেঁপে ধরলো । শক্তপোক্ত সুঠাম বুকের নিচে ইলমির ছোট দেহকানা পিষে যাচ্ছে যেনো। চাঁপা পড়ে ইলমি হাঁসফাঁস করতে লাগলো। ইলমি ভয় পেলো আতঙ্কে আবরারের গলা জড়িয়ে বললো,
কি করছেন?
আবরার ফিসফিসিয়ে বললো,
উহু ।
বলেই ইলমির ঠোটে আঙুল ছোঁয়ালো পরপর ইলমির গলায় মুখ গুঁজলো। ইলমি কেঁপে উঠলো। ইলমি নড়ে চড়ে উঠলো কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই আবরার ইলমির ঠোঁট জোড়ায় ঠোঁট ছোঁয়ালো। বেশ কিছুক্ষণ পর আবরার ফিসফিসিয়ে বললো,
আই নিড ইউ চড়ুই।
ইলমি চোখ বুঁজলো কিছু বললো না । আবরার আবারো বললো,
ম্যে আই?
ইলমি আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। আবরার হাঁসলো। তারপর, তারপর একে অপরের ভালোবাসায় গভীর ভাবে ডুবে রইলো। যত সময় অতিবাহিত হচ্ছে দুজন দুজনকে গভীর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলো। আবরার তার ছোট চড়ুই কে ভীষণ ভালোবাসলো। নির্জন, নিস্তব্ধতায় ঘেরা এই অন্ধকার রাত, এই অন্ধকার রুমের প্রতিটা দেয়াল সাক্ষী হয়ে রইলো তাদের ভালোবাসার । দুটো মানুষ যেনো এক অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গেলো৷ যে দুনিয়ায় শুধু ইলমি আর ইলমির এমপি সাহেবের অস্তিত্ব আর কেউ নেই, কেউ নেই তাদের মাঝে।
——–
আবিরা – ভালো লাগছে না তূর্ফা যাবো না ।
তূর্ফা: প্লিজ, প্লিজ বনু তুই আমার সোনা বনু চল না।
আবিরা বিরক্তিতে চ কারান্ত শব্দ করে উঠলো। সকাল সকাল তূর্ফা আবিরার পিছু পিছু ঘুরছে শপিংয়ে যাবে কিছু কেনাকাটা করতে। এদিকে আবিরা যেতেই চাইছে না। তূর্ফা গাল ফুলিয়ে বললো,
-বুঝেছি তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না ভালোবাসলে অবশ্যই যেতিস।
আবিরা ভ্রু কুঁচকালো মেয়েটা এখন ইমোশনাল ব্রেকমেইল করা শুরু করে দিলো। তূর্ফা গাল ফুলিয়ে বললো,
-ওকে যাবি না তো? যেতে হবে না তোকে।
আবিরা হেঁসে উঠলো, বললো,
নাটক কম করো পিও। তুমি যে অভিনয় করতেছো এটা আমি জানি।
তূর্ফা ফিঁক করে হেঁসে উঠলো। বললো,
চল না, চল না আবিরা যাবো আর আসবো প্লিজ।
আবিরা তূর্ফার মাথায় গাঁট্টি মেরে বললো,
যা নাটকবাঁজ যাবো।
তূর্ফা খুশিতে ইয়াহু বলে উঠলো।
——
আবিরা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে। সামনের টেবিলে তন্ময় আর তূর্ফা। আবিরার রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। চোখ পাকিয়ে তূর্ফার দিকে তাকাতেই তূর্ফা হাসার চেষ্টা করে কানে হাত রেখে ধীরকন্ঠে বললো,
স্যরি।
আবিরা বিরবির করে বললো,
রাখ তোর স্যরি।
তূর্ফা চোখ ইশারায় আবারো স্যরি বললো। তন্ময় বলে উঠলো,
কিছু অর্ডার দেই? কি খাবে তোমরা? আবিরা?
আবিরা হাসার চেষ্টা করে বললো,
আমি কিছু খাবো না ভাইয়া।
তূর্ফা বললো,
সেকি কেনো খাবি না?
আবিরা চোখ পাকিয়ে তাকালো যার মানে তোকে পরে দেখে নিবো। তূর্ফা দাঁত কেঁলিয়ে হাঁসলো। আবিরার এখানে বসে থাকতে একদম ভালো লাগছে না বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ করে উঠলো। বললো,
তূর্ফা তোরা কথা বল আমি একটু আসছি।
তন্ময়- চলে যাবেন মানে?
তূর্ফা- কোথায় যাচ্ছিস
আবিরা- এইতো আঁশে পাঁশেই। কল করিস।
তূর্ফা মাথা নাঁড়ালো। আবিরা চলে যেতেই তন্ময় হেঁসে তূর্ফার হাত দুটো মুঠোয় পুরে হুট করে বললো,
ভালোবাসি।
তূর্ফা হেঁসে উঠলো। বললো,
এর আগে কজন কে বলেছেন?
তন্ময় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
অনেককেই বলেছি।
তূর্ফা চোখ রাঙালো । তন্ময় বললো,
আচ্ছা বাবা স্যরি।
তূর্ফা কিছু বললো না। তন্ময় ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বললো,
ভালোবাসি নাগিনী।
তূর্ফা কপাল কুঁচকে বিরক্তি কন্ঠে বললো,
ধ্যাত।
তন্ময় হেঁসে উঠে বললো,
ভালোবাসি তূফু।
তূর্ফা হাসলো লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। বললো,
ভালোবাসি।
————–
আবিরা একা একা শপিং মল ঘুরে ঘুরে দুটো জামা কিনলো। জামার সাথে ম্যাচিং করে দুটো হিজাব ও কিনলো। শপিংমল থেকে বের হয়ে তূর্ফাকে কল করলো।
আবিরা – আর কতক্ষণ?
তূর্ফা- আর ২০ মিনিট। প্লিজ প্লিজ।
বিরক্তি কঁপাল কুঁচকে ফোন রাখলো। ফোন ব্যাগে পুরে রিঁকশার জন্য দাঁড়াতেই হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,
আবিরা আপনি?
আবিরা পাঁশ ফিরে দেখলো পড়নে মেরুন রঙের শার্ট, ব্লাক জিন্স, মাথার চুল গুলো হালকা এলোমেলো, চোখে কালো শানগ্লাসে মাহিদ দাঁড়িয়ে। মাহিদ মাথা চুলকে হেঁসে বললো,
আপনি এখানে?
আবিরা হাসার চেষ্টা করলো। বললো,
এইতো কিছু কেনাকাটা ছিলো।
মাহিদ হেঁসে বললো,
কেনাকাটা শেষ?
আবিরা মাথা নাড়িয়ে বললো,
হু।
মাহিদ দাঁড়িয়ে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে বললো।
আমরা কি বসে কথা বলতে পারি?
আবিরা পড়লো মহাবিপদে। কি বলবে? মুখের উপর না ও করতে পারলো না। বললো,
জি, আমার একটু তাড়া ছিলো।
মাহিদ বললো,
শুধু এক কাপ কফি।
আবিরা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলো। মাহিদ হেঁসে বললো,
আবিরা এতটুকু সময়ে আমাদের কফি শেষ হয়ে যেতো।
আবিরা হেঁসে উঠলো সাথে মাহিদ ও হাঁসলো। আবিরা লক্ষ্য করলে লোকটার হাসি খুব সুন্দর, একটু বেশিই সুন্দর। আবিরা বেঁশ ভেবে চিন্তে সময় নিয়ে বললো,
আচ্ছা চলুন।
পাঁশেই এক ক্যাফেতে বসলো। মাহিদ দুটো কফি অর্ডার করে হেঁসে বললো,
সামান্য এক কাপ কফির জন্য এতো দ্বিধাদ্বন্দ?
আবিরা কি বলবে ভেবে পেলো না চুপ করে বসে রইলো। মাহিদ বললো,
আবিরা আপনি কি নার্ভাস? কোনো সমস্যা?
আবিরা জোড় পূর্বক হেঁসে বললো,
না, আমি ঠিক আছি।
এরপর দুজনে অনেক কথা বললো। মাহিদ মাঝে মাঝে এমন কিছু বললো। আবিরা না হেঁসে পাড়লো না।
তবে কেউ একজন যে অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে আবিরা বুঝলোই না। কেউ একজন তাদের দুজনকে দেখে জ্বলে পুড়ে মরলো আবিরা সেটাও জানলো না।
চলবে,,,,,,,
(ভূলক্রুটি মার্জনীয় রিচেক করিনি)