অতঃপর প্রণয় পর্ব-৪+৫

0
348

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

বৃষ্টি যেন আজ বেজায় ছন্নছাড়া৷ কারো চাওয়া না চাওয়ার ধার ধারবে না সে আজ পণ করেছে৷ সে আজ পন করেছে অঝোর ধারায় ঝরবে৷ সে আজ পন করেছে সব ক্লেশকে আজ ধুয়ে মুছে দিবে৷ প্রকৃতি আজ বড়ই শীতল৷ থমকা হাওয়ারাও আজ ধরণীকে শীতল করার জন্য উঠে পরে লেগেছে৷ নভেম্বরে এমন বৃষ্টি যেন চমকপ্রদ কিছু৷
উচ্ছ্বসিত হয়ে মেঘলা আকাশের মেঘ কে সঙ্গ দিয়ে ভিজে চলেছে৷ নিজের দূঃখ গুলো উজাড় করে দিচ্ছে এ বৃষ্টির পানিতে৷ ধরণী বোধহয় ভেবেই নিয়েছে আজ মেঘলার সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দিবে৷

মেঘলা যখন বুঝদার হয় তখন তার মা পৃথিবী ত্যাগ করে দু-মাস পেরোতে না পেরোতে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে৷ অথচ তার বাবা মায়ের ভালোবাসা ছিলো চোখে লাগার মত৷ লোকে হিংসে করতো তা দেখে৷ সেই বউ পাগল লোকটা দু-মাস যেতে না যেতেই যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে মানুষ কে জানায় মেয়েকে দেখভাল করার জন্য৷ মেয়ে যে ছিলো তার বড়ই আদরের৷

চাচিরা ক’দিন তার মেয়ের দেখাশোনা করবে? মেয়ে এক বেলা খায় তো তিন বেলা না খেয়েই থাকে৷ মেয়ের করুন দশা সে সহ্য করতে না পেরে নাকি বিয়ের সিদ্ধআন্ত নেয়৷
অথচ সে বিয়ের মাস পেরোতেই সৎ মা অত্যাচার শুরু হয়৷ দিন শেষে যখন বাবা ফিরিতো তখন বাবা কেও নালিশ করলে তার বাবা কে ও সাতপাঁচ বুঝিয়ে দিতো ওই মহিলা৷ সে নাকি ওই মহিলার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতো৷ তার বাবাও বিশ্বাস করে নিতো৷
মেঘলা বললেও লাভ হতো না৷ যে ভয়ে আরেকটা বিয়ে করেছিলো লোকটা ওটাই হয়েছে৷ এমন ও সময় গেছে বাবার সাথে সকালে নাস্তা করেছে সারাদিন আর কিছু পেটে পরেনি মেঘলার৷ বাবার অঢেল থাকতেও টিউশন করে নিজের খরচ চালাতে হতো৷

মেঘলার মায়ের বাবার বাড়ির জমি বিক্রির টাকা দিয়েই ব্যাবসা শুরু করেছিলো মেঘলার বাবা৷ বেধ নামডাক ও হয়েছিলো৷ এত টাকা থাকতেও সে টাকায় খাওয়া আর মাধ্যমিক অব্দি পড়া ছাড়া কিছুই পায়নি৷ তারপর কলেজে উঠে টিউশন শুরু করলো একটু একটু করে স্বস্তি মিললো৷
ওই যে বলে না রাখে আল্লাহ মারে কে? এর মাঝেই মেঘলার বাবার ব্যাবসায় লস খেয়ে সব হারায়৷ কোনো মতে চলতে পারে শুধু খেয়ে পরে৷ বিয়ের আসর ছেড়ে পালানোর মত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছে৷ সবে উচ্চমাধ্যমিক দিতেই বিয়ে ঠিক করে তার বাবা চাচা৷ তাও একটা বৃদ্ধ লোকের সাথে৷ তপ্ত শ্বাস টানলো মেঘলা৷

শোভন এতক্ষণ বসে দেখছিলো সব৷ এবার যেন অকারণেই রাগ উঠছে তার৷ মেয়েটা এমন করে ভিজছে কেন? শোভন ভারী কন্ঠে বলে,
“ভিজছেন ভালো কথা এ ভেজা শরীরে গাড়িতে উঠলে ধাক্কা মে’রে ফেলে রেখে যাবো বলে দিলাম৷ ”
শোভনের ভারী কন্ঠ কর্ণপাত হতেই মুখ ফুলালো মেঘলা৷ লোকটা নির্দয়, পাষাণ৷ ছোটো ছোটো পা ফেলে এলো ছাউনিতে৷
ভেজা শাড়িতে থরথর করে কাপছে মেঘলা৷ শোভন আড়ষ্ট হয়ে তাকালো৷ তৎক্ষণাৎ চোখ ফিরিয়ে নিলো চোখ বন্ধ করে তপ্ত শ্বাস টানলো৷
কোমর ছাড়ানো চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে৷ শাড়িটা সরে গিয়ে মেদহীন কোমর দৃশ্যমান৷ শাড়িটা শরীরের সাথে লেপ্টে আছে৷ আবেদনময়ী যেন৷ শোভন লক্ষ করলো মেয়েটার গায়ের বরণ খুব বেশি ফর্সা না হলেও অতীব সুন্দরী৷ গরণে এবং মুখঅভয়ব বেশ আকর্ষণীয়৷ সৃষ্টি কর্তা যেন যত্নে বানিয়েছে৷ কেমন যেন কেমন মাথা ধরে আসছে কেমন৷
শোভন এর চোখমুখ কঠিন হলো৷ মেয়ে মানুষ এত বেখেয়ালি একটুও পছন্দ না৷ কাটকাট কন্ঠে বললো,
“শরীরে উর্না জড়ান মেয়ে৷ ”
বলে এদিকে আর দাড়ালো না৷ একটু হেটে অন্য প্রান্তে গেলো৷ মেঘলা ভ্যাবাচেকা খেলো যেনো৷
নিজের দিকে তাকালো৷ নিজের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠলো৷ হায় আল্লাহ কি করে একটা মানুষ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে? কিন্তু এখন তো বৃষ্টি ওর লাগেজ তো গাড়িতে৷ যদিও বৃষ্টি কমেছে কিছুটা৷ নিজের শাড়ি টা দিয়েই আপাতত নিজেকে ঢেকে নিলো৷ চোখ ঘুরিয়ে শোভনের পানে তাকালো৷

লোকটার জন্য সম্মান যেন দ্বিগুণ বাড়লো৷ ইশ মানুষ টা এত ভালো কেন? মানুষ বলে এক দিনে মানুষ চেনা যায় না৷ কিন্তু এইযে কয়েক ঘন্টা হলো সবে সে তো চিনতে পারছে৷ নিসন্দেহে মানুষ টা ভালো৷ সে হলফ করে বলতে পারবে৷ শুধু কি মানুষ এর ব্যাবহার দিয়েই মানুষকে বিচার করা যায়? মুখে মধু অন্তরে বিষ তো থাকতেই পারে৷
লোকটা রাগী কিন্তু অত্যন্ত ভালো৷ মিহি হাসলো আপনমনে৷

।।
মধ্যরাতে তোলপাড় চলছে খান বাড়িতে৷ জিনিসপত্র ভেঙে নিচে পরে আছে৷ এর মাঝে টুলে বসে আছে রাজ৷ হাত থেকে রক্ত ঝরছে টুপ টুপ করে৷ শরীর ভেজা৷ কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে সবাই৷ রিয়ান এবার রিনা বেগম এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
“আমার মেঘ কই ছোটো চাচি৷ শেষ বারের মত জিগ্যেস করছি বলো নয়তো কুরুক্ষেত্র হবে৷ ”
রিনা বেগম তেঁতে উঠলেন৷ এ ছেলের কত বড় সাহস ওনাকে চোখ রাঙাচ্ছে?
রিনা বেগম রাগ নিয়ে বললেন,
“কতবার বলছে তোমারে তোমার মা এই পর্যন্ত? শুনো না? ওই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে৷ পালায়া গেছে নাগরের হাত ধইরা৷ ”
রাজ ফুসছে রাগে৷ পায়ের কাছে টেবিল ছিলো লাথি দিয়ে তা ফেলে চিৎকার করে বললো,
“পালিয়ে গেছে না তোমরা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছো? পালিয়ে গেলে বাড়িতে এমন প্যান্ডেল কেন? খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছিলো কেন? এসব কি?”

শুকনো ঢোক গিললো রাজের মা৷ রাজ মেঘলার বড় চাচার ছেলে৷ চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক রাজ মেঘলার কিন্তু রাজের মা মেঘলা কে পছন্দ করে না৷ তাই রাজি ছিলো না৷ রাজ ব্যাবসার জন্য ঢাকা যেতেই সেই তো তোরজোর করে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে ঠিক করলো সবার সাথে কথা বলে৷ মেঘলা কে ও তো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলো কিন্তু শেষমেষ মেয়েটা পালিয়েছে৷
রাজের মায়ের ভাবনার মাঝেই রাজের বাবা গম্ভীর স্বরে বললো,
“শান্ত হও রাজ৷ তুমি যা করছো এসব কি কোনো ভদ্র বাড়ির ছেলের কাজ? এমন ভাঙচুর করেছো কেন? পাগল হয়ে গেছো তুমি?”
রাজ এবার আরো রেগে গেলো৷ শান্ত ভদ্র ছেলেটা হুট করেই রণচণ্ডী রুপ ধারণ করলো যেন৷ জীবনের প্রথম বাবার মুখের উপর চিৎকার করে বললো,
“হ্যাঁ আমি পাগল হয়েছি৷ তোমরা আমায় পাগল বানিয়ে দিচ্ছো মেরে ফেলতে চাইছো৷ প্রথম থেকেই তোমরা আমাদের সম্পর্ক টা মানতে নারাজ ছিলে৷ আমিতো তোমাদের কাছে চাইনি কিছু৷ ওই মেয়ে টা কে চেয়েছি৷ তোমরা কি করলে? তার পর ও একের পর এক মিথ্যা বলছো৷ বলছো পালিয়ে গেছে৷ পালিয়ে গেলে বাড়ি এমন সাজানো কেন? কি করলে তোমরা৷ আমার মেঘকে ফিরিয়ে দাও বাবা আমার মেঘকে চাই আমি৷ ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না বাবা৷ তুমি ওকে ফিরিয়ে দাও আমায় দয়া করে৷ ওকে তোমরা জোর করেছো তাই না? টর্চার করেছো তাই না?”

বলে নিজের চুল চেঁপে ধরলো৷ রাগে শরীর রিরি করছে তার৷ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে বাড়ির সাজ সজজা গুলো৷ আজ রাজের আসার কথা ছিলো না৷ মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বাবা তাড়াহুড়ো করে বাইরে পাঠালো এক সপ্তাহের জন্য৷ এক সপ্তাহের কাজ ও তিনদিনে শেষ করে রাতেই রওওনা হয়েছে৷ আর এসে দেখে মেঘলা কোথাও নেই বাড়িতে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান হয়ে গেছে যেন৷
রাজের ভাবনার মাঝে গম্ভীর কঠোর কন্ঠে রাজের বাবা বললো,
“শান্ত হও৷ তোমার মা ঠিক বলছে মেঘলা পালিয়েছে….!!”

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

প্রকৃতি এখন শান্ত বেশ৷ অম্বরটা ও পরিষ্কার, মেঘের চিহ্ন মাত্র নেই৷ সব মেঘ কেটেছে৷ থমথমে নিরবচ্ছিন্ন চারোপাশ৷ মেঘলার মন ও বেজায় ভালো৷ যেন ওর মনেরো সব ক্লেশ দূর হয়েছে৷
নিজেকে তো এখন নিজেরই সামলাতে হবে৷ এখন তো রাজ নেই আর৷ এই বিশাল পৃথিবীতে ওই মানুষ টা আর ওর ছোটো চাচ্চুই ছিলো যারা কিনা ওর জন্য ভাবতো৷ কিন্তু ওর ছোটো চাচ্চুও রঙ পাল্টালো৷
বৃদ্ধ লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করলো ভাগ্যিস ওকে সাহায্য করলো বড় চাচার মেয়ে রাইসা৷
সে তো বিয়েতে রাজি হয়েই ছিলো কিন্তু সে কি এতই বার্তি হয়ে গেছে বৃদ্ধ লোকের কাছে বিক্রি করে দিবে তাকে৷ রাইসা বলেছে ওর বাবা মোটা অংকের টাকা নিয়েছে সেই লোকের কাছে৷
তপ্ত শ্বাস টানলো মেঘলা৷ রাজ নামক অধ্যায় টা তার জীবনে অতীব রঙিন৷ লোকটা তাকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে রেখেছে৷ সবাই তো জানে তাদের চার বছরের সম্পর্ক৷ যদিও এমন কিছুই না৷ রাজ যখন প্রথম তাকে প্রেম নিবেদন করে সরাসরি না করে দেয় মেঘলা৷ রাজের জন্য অদ্ভুত একটা টান কাজ করলেও তা কখনো প্রশ্রয় দেয়নি মেঘলা৷
ওরা যে ওকে আশ্রয় দিয়েছে এই তো অনেক৷ হোক না তার নিজের বাবার বাড়ি কিন্তু কখনো তো তা মনেই হয়নি৷ বড় চাচি বরাবর বলতো
“আমার ছেলের থেকে দূরে থাকবি৷ ”
তাই মানার চেষ্টা করেছে৷ সত্যি তো ওর মত অভাগীকে কেন নিজের জীবন সঙ্গী করবে রাজ? ও তো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে৷ তাই না? বড় চাচার টাকা পয়সা অঢেল তা তো সব তার ছেলেরই৷ সবাই তো চায় নিজের ছেলে কে ভালো কোথাও বিয়ে দেওয়া৷
কিন্তু রাজের পাগলামির কাছে হার মানতেই হয়েছে সে জানতো রাজের সাথে ওর বিয়ে কখনোই হবে না কিন্তু এমন ভালোবাসা যদি পাওয়া যায় একটু তো লোভ জাগেই তাই না?
ভালোবাসা পেতে কে না চায়? কে না চায় নিজের চারোপাশ টা রঙিন দেখতে৷ তা ক্ষনিকের হোক মন কষ্ট পাক বর্তমান টা না হয় সুন্দর থাকুক?
তবে সে সুখ ও যে তার কপালে বেশি দিন ছিলো না৷ বছর খানেক পর হুট করেই বড় চাচি বুঝে ফেলে৷সেই হয় নানান কান্ডের সূচনা৷ কত অপমানিত হতে হয়৷ ওর ছোটো মায়ের হাতে মা’র পর্যন্ত খায়৷ সে বার তার বাবা তার গায়ে হাত তোলে সবার সামনে সে দিন রাজ বাড়িতে ছিলো না৷
বড় চাচি তার মাথা ছুঁইয়ে কসম কাটায় যেন রাজের সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখে দূরে দূরে থাকে এবং সে দিন এর ঘটনা রাজ কে না জানায়৷
মেঘলা সে দিন থেকে রাজের থেকে দূরে দূরে থাকা শুরু করে৷ সে না জানালেও রাজ দ্বিগুণ পাগলামি শুরু করে এক পর্যায়ে ওর বাবাকে গিয়ে বলে মেঘলা কে বিয়ে করতে চায়৷ রাজের বাবা সাফ সাফ না করে দেয়৷ সে জানায় তার বন্ধুর এক মাত্র কন্যা হিয়ার সাথে তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে৷ তারপর যেন শুরু হয় রাজের আরো পাগলামি শুরু হসপিটাল অব্দি কাটাতে হয়েছে বেখেয়ালি হয়ে এক্সি’ডেন্ট এর জন্য৷
হসপিটালেও পাগলামি শুরু করে এক পর্যায়ে তার বাবা রাজি হয় বলে মেঘলার অনার্স শেষ হলে তাদের চার হাত এক করবে৷
কিন্তু তা শুধু বোঝানোর জন্য ছিলো৷ রাজ কে বললেও তারা মেঘলাকে অগোচরে সতর্ক করতো যেন রাজ কে বোঝায় ওই রাজ কে অপছন্দ করে৷

সব কিছুর মাঝে যেন মেঘলা অসহায় বনে যায়৷ তার জীবনটাই কেন এমন হওয়ার ছিলো? একটু খানি ভালোবাসাও তার কপালে সয় না কেন? মেঘলা রাজের সাথে কথা বললেও আগের মত আর কাছাকাছি যেতোনা৷ দূরে দূরে থাকতো৷
তারপরই হুট করে একদিন তার বন্ধু সূলভ ছোটো চাচ্চু বিয়ের কথা বলে ওকে৷ বোঝায় বিয়ের জন্য মেঘলা রাজি হয় তবে জানতো না তার আড়ালে এত কিছু হচ্ছে টাকার বিনিময়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷

রাইসা তাকে অপছন্দ করতো সব সময় দূর দূর করতো কিন্তু এই প্রথম বড় একটা সাহায্য করলো৷ দীর্ঘশ্বাস টানলো মেঘলা৷ রাজ এর জন্য আকাশ সমান অভিমান হচ্ছে কেন যেন৷
লোকটা যদি তার জীবনে এভাবে না আসতো তাহলে বোধহয় সব কিছু উলট পালট হতো না তাই না? হয়তো তাই৷ সে মুহুর্ত গুলো সুন্দর হলেও সেই মুহুর্ত গুলোর জন্য বিষাদ নেমে এসেছে জীবনে৷

হুট করেই বেশ ফুরফুরে লাগছে মনে হচ্ছে সব ক্লেশ দূর হয়ে গেছে৷ অথচ সে অজানা এক গন্তব্যে পা বাড়িয়েছে৷ সে জানে না কি হবে পরবর্তীতে৷ সে জানে না কোথায় গিয়ে থাকবে সে জানে না কি করবে তবুও প্রশান্তি কাজ করছে৷ মনে হচ্ছে যা হবে যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

ভাবতে ভাবতে আড় চোখে শোভনের পানে তাকালো৷ লোকটা অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির৷ হুট করেই লোক টা কে নিয়ে কৌতুহল জাগলো৷ কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না জিগ্যেস করে বসলো,
“আপনার বাড়ি কি ঢাকা? এখানে এসেছিলেন কেন?”
শোভন শুনলো৷ গম্ভীর স্বরে বললো,
“বিয়ে করতে এসেছি বললাম না৷ ”
অবাক হলো মেঘলা৷ তাহলে লোকটা সত্যি বলেছিলো? কৌতুহলতা আরো বাড়লো বই কমলো না৷ বিয়ে করতে গিয়েছিলো তাহলে রাস্তায় রেল স্টেশনে কি করছিলো? মানে টা কি? সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷
মেঘলা কৌতুহলী হয়ে অবাক কন্ঠে শুধালো,
“বিয়ে করতে এসেছেন মানে? তাহলে স্টেশনে এত রাতে কি করছিলেন? আপনার বউ কোথায়?”

মেঘলার প্রশ্নে মুঠো খানা শক্ত করে স্টেয়ারিং ধরলো শোভন দাতে দাত চেঁপে কঠিন স্বরে বললো,
“পালিয়েছে৷ ”
চমকালো থমকালো অবাক হলো৷ কি জানি কি ভাবলো কাঁপা স্বরে শুধালো,
“ক কোথায় সে মেয়ের বাড়ি?”
শোভন কঠিন স্বরে সে ঠিকানা বললো৷ শুকনো ঢোক গিললো মেঘলা৷ চমকানো ভীত চেহারায় অন্য দিকে ফিরে রইলো৷ কি হচ্ছে কি হলো? সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ তাহলে রাই সা যে বললো৷ নানা ভাবতে পারছে না সব ঘোলাটে লাগছে৷ কিছু একটা ভুল হচ্ছে তার সাথে৷ অনর্থ এবং ব্যাঠিক হচ্ছে৷ সে যে মস্ত ভুল করেছে বেশ বুঝলো৷ হুট করেই সব অন্ধকার হয়ে এলো ঢলে পরলো শোভনের কাঁধে৷

একটা চিরকুট নিয়ে নিজের ঘরের কপাটের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আছে রাজ৷ চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে৷ সব কেমন থমকে যাচ্ছে যেন সব যেন উলট পালট হয়ে যাচ্ছে৷
চিরকুট টা দেখে নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে৷ সে এক ব্যার্থ প্রেমিক ব্যার্থ মানুষ৷ কাগজ খানায় স্পষ্ট লেখা,
“আপনি আমার জীবনে আকাশ সমান রঙ নিয়ে এসেছিলেন রাজ ভাই কিন্তু বিষাদে ভরিয়ে দিলেন৷ আমি বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি আমায় আর খুঁজবেন না৷ ”
চিরকুট টা ওর বিছানায় রেখে গিয়েছিলো৷ চিরকুট টা কেউ দেখেনি৷ অথচ সবাই কি না কি অপবাদ দিচ্ছে৷
মেয়েটা কোথায় গেছে কি করছে কিছু বুঝতে পারছে না রাজ৷
নিজের চোখ মুখ মুছে উঠলো রাজ৷ ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ছিটে দিলো৷ তার এখনই বের হতে হবে৷ পরিবার মানুষ দের সাথে এসপারওসপার পরে হবে আগেতো মেয়েটার খোঁজ নিতে হবে৷

তাড়াহুড়ো করে কপাট খুললো রাজ৷ কপাট খুলতেই হুরমুরিয়ে প্রবেশ করলো সবাই৷ ছেলেকে এমন হন্তদন্ত হয়ে বের হতে দেখে রাজের বাবা প্রশ্ন ছুড়লো,
“কোথায় যাচ্ছ?”
রাজ থমথমে কন্ঠে বললো,
“তোমাদের বলতে বাধ্য নই৷ ”
রাজের বাবা কঠিন স্বরে বললো,
“এ বাড়িতে ওই মেয়ে এলে আমি ব্রিয়ে যাবো বলে রাখলাম৷ ”
রাজ করুন চোখে তাকালো বাবার দিকে৷ বললো,
“বাবা তুমিতো বোঝো অন্তত? মেয়্বটা একা কোথায় আছে কি করছে কিছু জানি না৷ তোমরা কি করবে তা আমি ভাবতে পারবো না আমি যাচ্ছি৷ ”
বলে বের হতে নিলেই ঘটলো এক কান্ড হুট করেই রাজের মা অসুস্থ হয়ে পরলো৷ দিক বেদিক না বুঝে মায়ের দিকে ছুটে এলো৷

চলবে,