অতঃপর প্রণয় পর্ব-৬+৭

0
317

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা

নতুন এক ভোরের সূচনা, নতুন এক দিনের সূচনা৷ সূচনা হলো নতুন পথচ এবং বাস্তবতা শেখার৷ নতুন সব কিছুর মাঝে সেই পুরাতন জীর্ণশীর্ণ একখানা হৃ?নিয়ে ছুটে চলবে জীবনের লড়াইয়ের দিকে৷ যে লড়াইয়ে হয়তো অনেক নতুন নতুন মুহুর্তের সম্মুখীন করবে তাকে৷ বাস্তবতাকে গভীর ভাবে পরখবকরতে শেখাবে আর শেখাবে নিজেকে ভালোবেসে একটু বাঁচার আসায় নিজেকে আগলে রাখতে৷ নিজেই নিজের সঙ্গী সে আজ৷ নিঃসঙ্গ হলেও নিজেকেই নিজের বন্ধু করে তুলতে হবে৷ এ শহরটা বড়ই অচেনা যে মেঘলার কাছে৷

চোখ খুলেই নিজেকে শোভনের কাধে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিলো মেঘলা৷ ছিটকে দূরে সরে গিয়েছিলো৷ ক্ষমাও চেয়েছিলো৷ লোকটা টু শব্দ টুকু করেনি৷ কে জানে রেগে আছে নাকি৷ হয়তো রেগে আছে৷ রাগার কথা নয় কি?

ঢাকা প্রবেশ করতেই শোভন কাটকাট কন্ঠে শুধালো,
“কোথায় যাবেন মেয়ে আপনি? আমাকে কি ড্রাইভার মনে হচ্ছে আপনার আমাকে?”
ইতস্তত হলো মেঘলা৷ এক রাশ চিন্তা ভর করলো৷ভারী নেত্রপল্লব ঝাপটালো অবচেতন হয়ে৷ মস্তিষ্কের গৃহপটে ভীর করলো হাজার প্রশ্ন৷ হাজার দ্বিধা কোথায় যাবে সে? সে তো জানে না৷ আনমনে অবচেতন হয়েই মিনমিনিয়ে বললো,
“জানি না”
মেঘলার উওরে ভ্রু কুঁচকালো শোভন৷ শোভনের এমন খামখেয়ালিপনা পছন্দ না৷ সে রেগে বললো,
“কি বলছেন কি?”
চমকালো চিৎকারে৷ হুস ফিরলো পিলে চমকালো৷ আসলেই তো সে জানে না সে কোথায় থাকবে৷ তার তো পড়ার ইচ্ছে ছিলো ঢাকা এসে ছোটো চাচ্চু বলেছিলো বিয়ের পর পড়াবে সে লোক৷ কিন্তু সে তো পালিয়ে এলো৷ মেঘলা বললো,
“আমি আসলে চিনি না ঢাকা শহর৷ আমি কোথায় যাবো আসলেই জানি না৷ ”

শোভন যেন শুনেও না শোনার ভান করে রইলো৷ ঠিকি তো সে কেন তার কথায় পাত্তা দিবে? কে চায় উটকো ঝামেলা? কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে নামিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো শোভন৷ ট্রেনে আসলে তো এখানেই আসতো তাই কিছু শুধালো না৷

মেঘলা প্রাণ ভরে শ্বাস নিলো৷ অদ্ভুত ব্যাপার হলেও এটা সত্যি সে জানে কেন যেন মন খারাপ হচ্ছে না তার৷ মনে হলো পরে কি হবে তা ভেবে মন কেন খারাপ করবে? পরে তো না ও থাকতে পারে৷ এখন আছে প্রাণ ভরে শ্বাস নিক নাহয়৷ মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ুক৷।
হুট করেই মনে পরলো মামার কথা৷ মামা দুই বছর আগে ওকে নিতে গিয়েছিলো কিন্তু ওর ছোটো চাচ্চু আর বড় চাচ্চু দেয়নি৷ তাদের বাড়ির মেয়ে অন্য বাড়ি গিয়ে কেন থাকবে? তাদের মানে লাগবে না?
তারা তাদের মেয়ে দিবে না৷ ওর মামা খালামনি সবাই এসেছে এ পর্যন্ত চার বার প্রতিবারই খালি হাতে ফিরেছে৷ ওর খালামনি তো কথা শুনেও গেছে ওর ছোটো মা থেকে তার পর আর কেউ যায়নি৷ দুই বছরে সবার সাথে ফোনালাপ হলেও আসেনি কেউ৷

ওর মামি তো প্রতিবার ফোন করে কান্নাকাটি করে৷ অথচ তারা তার রক্ত না কিছু না৷ ওর ছোটো চাচ্চু যখন বিয়ে ঠিক করে ওর তখন ওর খালামনি বলেছিলো,
“এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবি?আমাদের বাড়িতে চলে আয় মা আমি তোকে পড়াবো৷ ”
মেঘলা তখন বলেছিলো,
“বাবার কথা শুনে না হয় বিয়ে করলাম৷ বাবা কে ছোটো করবো খালামনি?”
সেই দিনের পর উনি আর কল করেনি৷ ও জানে রেগে আছে সবাই৷ একটা কল দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কিন্তু তখন তাদের কথা অমান্য করেছে এখন স্বার্থপরের মত কল দিবে?
অদ্ভুত তার জীবন তাই না? মাথা গোজার ছাদ টুকু নেই ভরসার হাত নেই৷ জীবন টা এত কঠিন কেন? তার যেন প্রতি মুহূর্ত একটা চ্যালেঞ্জিং সময় কাটে৷
তাচ্ছিল্য হাসলো নিজের উপর৷ এত বিষাদ ভাবনায় ও যেন এক টুকরো মন খারাপ হানা দিচ্ছে না৷
আজ যেন ফুরফুরে লাগছে মুক্ত লাগছে স্বাধীন লাগছে৷
যা হওয়ার হবে এখনকার সময় টা উপভোগ করুক না হয়?

অতীত আর ভবিষ্যৎ নিয়ে না হয় আজ নাই ভাবুক বর্তমান টা সুন্দর করুক৷
কাল রাতের পর শোভন নামের ছোট্ট অধ্যায় আর আকাশ সমান স্মৃতি তার মস্তিষ্কে যুক্ত হলো৷যুক্ত হলো কৃতজ্ঞতা আর তিক্ত কিছু অনুভতি অপরাধবোধ৷ সৃষ্টি কর্তা ভাবনা বড়ই সুন্দর তাই না?
তবুও কি নিয়ে যেন অপরাধবোধ জাগছে৷ মনে হচ্ছে আপন মানুষ কতটা ভয়ংকর হতে পারে৷ কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না৷
ছোটো চাচ্চু হয়তো তার উপর রেগে আছে? রাগার মত কাজ করেনি কি? তবে সবাই তো বলে৷ আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য৷

মেঘলা ভাবলো তার মামাকে কল করবে৷ তারপর পরিস্থিতি ঠিক হলে এক দিন ছোটো চাচ্চুর সাথে কথা বলবে৷ পা যখন বাড়ির বাইরে রেখেইছে এ পথটাকেই না হয় বন্ধু বানাক?
আচ্ছা ও মামা বাড়ি গেলে কি ওনাদের ঝামেলা বাড়বে না? বেশ দ্বিধায় পরলো মেঘলা৷ একটা চায়ের দোকানে বসলো বেশ খিদে পেয়েছে৷
চা ওয়ালা কে বললো,
“চাচা আমায় একটা চা আর পাও রুটি দিবেন এক পিস৷”
বলে সে বসলো সেখানেই৷ ব্যাগ থেকে একটা নাম্বার বের করলো৷
এটা ওর মামার নাম্বার৷ কল দিবে কি না ভাবলো৷ এর মাঝেই চা আর পাও রুটি দিলো পানি নিয়ে মুখে পানি দিয়ে চা টা খেলো মেঘলা৷ মাথাটা হুট করে বেশ যন্ত্রনা শুরু করলো৷

তারপর না ভেবেই কল লাগালো তার মামাকে৷ ওপাশ থেকে কল ধরতেই মেঘলা মিহি স্বরে দূর্বল চিত্তে বললো,
“মামা আমি কমলাপুর স্টেশনে আছি৷ আমায় নিয়ে যেতে পারবে?”
ওপাশ থেকে ব্যাতিব্যাস্ত কন্ঠ শোনা গেলো,
“মা তুই ঢাকা এসেছিস? তোর না কাল বিয়ে ছিলো? একা এসেছিস? কি হয়েছে মা?”

মেঘলা মলিন স্বরে বললো,
“তুমি এসো মামা ভালো লাগছে না আমার৷ নিয়ে যাও আমায়৷ ”

—-

গুটিশুটি মেরে এক কোণে বসে আছে হিয়া তার সামনেই গম্ভীরমুখে বসে আছে রাজ৷ হিয়া নামক মেয়েটি দেখতে আহামরি সুন্দর না তবে মুখঅভয়ব অত্যন্ত মায়ার৷ তবে সে মায়া রাজ কে বিগলিত করতে পারেনি৷ মেয়েটা রাজ থেকে অনেকটা ছোটো সবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার৷ বিরক্ত হয়ে বসে আছে রাজ৷ মাথায় আকাশ সমান চিন্তা৷
তার মা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে এই মেয়ে কে তার ঘাড়ে চাপাতে চাইছে তার মা তবে এটা সম্ভব না৷ মেঘলা ছাড়া রাজ দু-দন্ড ভাবতে পারেনা৷ মস্তিষ্ক আষাঢ় হয়ে আসে৷
শরীর ও যেন বল হারায়৷ রাজ বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
” তুমি তোমার বাবাকে বলবে তুমি আমায় বিয়ে করবে না৷ ”
রাজের এহেন কথায় গোলগাল চোখে তাকালো হিয়া৷ রাজ ভাই কে তার ভিষণ পছন্দ৷ প্রথম অনুভূতি বলা যায়৷ তবে মানুষ টার মুখে এমন কথা শুনে চমকালো বেশ৷

রাজ ফের বললো,
“আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই না হিয়া৷ তুমি অনেক ছোটো তুমি অনেক ভালো ছেলে পাবে পরে৷ আমায় রেহায় করো দয়া করে৷ ”

হিয়া ফট করে এক অদ্ভুত কান্ড করলো৷ আচমকা বলে ফেললো,
“কিন্তু আমি যে বিয়ে করতে চাই আপনাকে৷ ”

ওমনি রাজের মাথা চাড়া দিলো তীব্র রাগে৷ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো৷ ফটাফট উঠে হিয়ার গাল চেপে ধরলো বললো,
“খুব শখ না আমায় বিয়ে করার? আমি তোকে পছন্দ করি না শুনছিস না? কানে ঢুকছে না কথা? কি ভেবেছিস আমি রাজি হয়ে যাবো? আমি ভালোবাসি আরেকজন কে৷ আমি আমার মেঘলাকে ভালোবাসি তুই যদি বিয়েতে হ্যাঁ বলিস তাহলে পুতে রেখে দেবো তোকে বলে দিলাম৷ ”

চলবে,

#অতঃপর_প্রণয়
#তাফসিয়া_মেঘলা


থমথমে মুখে বসে আছে আফতাব সাহেব তার পাশেই বসে আছে তার স্ত্রী৷ সামনে কাচুমাচু মুখ করে আছে মেঘলা৷ আফতাব সাহেব এবার নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললো,
“ওকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও দিলারা৷ উনি অনেক বড় হয়ে গেছেন আমাদের কথার দাম নেই উনার কাছে৷ উনার বাবা এবং চাচাই সব৷ ওকে সাফ সাফ বলে দাও আমার বাড়িতে এসেছে নিজ ইচ্ছায় এখন থেকে আমি যা বলবো তাই মানতে হবে৷ এখানে এসে পরেছে ও আর এখান থেকে কোথাও কিংবা ওর বাবার কাছে যেতে পারবে না৷ আমি আগেই নিয়ে আসতে চেয়েছি কিন্তু আসেনি৷ আমার বোন বাপ মেয়ের জন্য মরেও শান্তি পাচ্ছে না৷ ”
বলেই উঠে গেলেন তিনি৷ মেঘলা করুন চোখে তাকালো মামার দিকে৷ এই লোকটা এত ভালো কেন? অন্য কেউ হলে নিশ্চিত রাখতো না এ বাড়িতে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতো৷ মুখ ফিরিয়ে নিতো হয়তো?
কিন্তু সে রেখে দিতে চাইছে অথচ অভিমান করে কথা বলতে চাইছে না৷
কমলাপুর থেকে যখন ফোন করলো মেঘলা৷ আফতাব সাহেব টু শব্দ করেনি বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে ভাগ্নীকে নিয়ে এসেছেন৷
বোন যে তার বড়ই আদরের ছিলো আর সেই বোনেরই রক্ত এ মেয়ে৷ এক মেয়ের এক ফোটা চোখের পানি দেখলেও অন্তরআত্মা কেপে উঠে৷ বোনের আমানত তারা রক্ষা করতে পারছেনা এ নিয়ে তাদের কতই না আফসোস কষ্ট হচ্ছিলো৷ মনে হচ্ছিলো তারা ব্যার্থ আর সবার মতই৷ কি করতো তারা?
মেঘলার বাবা মেঘলাকে দিতে চায়নি৷ বিরুদ্ধে গিয়ে তো আর নিয়ে আসা যায় না৷ মেয়েটা কে ও ফুসলিয়ে রেখেছিলো৷ তার ভাগ্নী যে সেখানে কষ্টে ছিলো ঢের বুঝলো৷ মাঝে মাঝে আয়নার নিজের সাথেই নিজে যেন মুখোমুখি হতে পারতো না৷ তার দুই বোন বড় জন তো বেশ বুঝদার ছিলো৷ আর ছোটো জন সবার আদরের ছিলো তাই বোনের অংশ কে নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসেন তারা৷

বাড়ি আসার পর মেঘলা সবটা জানায় আফতাব সাহেব কে৷ তার অভিমান হয় ভাগ্নীর উপর৷ কারণ তারা আগেই আনতে চেয়েছিলো৷ মেয়েটা সম্মতি দিলে ওই লোকের কোণো ক্ষমতাই ছিলো না তার ভাগ্নীকে আটকে রাখার৷ কিন্তু মেয়েটা বাবার মুখ চেয়েই রইলো৷
আফতাব সাহেব এটা ভেবেই পায় না একটা বাবা কিভাবে পালটে যেতে পারে? এ মেয়েটা ও তো তার রক্ত৷ কি করে পারলো মেয়েটাকে কষ্ট দিতে? বুক কাপলো না? লোকে বলে বাবারা বটবৃক্ষ হয় কিন্তু সে এমন কেন?

মেঘলা করুন দৃষ্টিতে মুখ ফুলিয়ে তাকালো মামুনির দিকে৷ সে ও চোখ সরিয়ে নিয়ে তার মেয়েকে বললো,
“অহনা তোমার বোনকে নিয়ে যাও তোমার রুমে৷ পাশের রুমটা পরিষ্কার করিয়ে দিচ্ছি উনি যেন সেখানেই থাকে৷ আর ওনার মামা কি বলেছে মাথায় ঢুকেছে নাকি জিগ্যেস করো৷ অনেক বড় হয়ে গেছে তো মামা মামুনি কাউকেই ওনার দরকার নেই৷ কিন্তু এ বাড়িতে যেহেতু নিজের ইচ্ছায় একবার এসেই পরেছে এখন আর তার ইচ্ছেতে কিছু হবে না এখানে৷ আর তাকে এটাও বলে দাও তার মামা গিয়ে তাকে ক’দিন পর গিয়ে তোমার ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে৷ এখন তো আর পাবলিকে পড়ার উপায় নেই৷ এক বছর লস এর ও দরকার নেই এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তার পাকামোতে৷ ”

বলে উঠে চলে যেতে নিবে ঠিক তখনই মেঘলা পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ফুপিয়ে উঠে বললো,
“ও মামুনি তুমিতো আমার আরেক মা৷ তুমিতো মায়ের সই ছিলে মানে মাই৷ তুমি অবুঝের মত কেন করছো? তুমি কি বুঝছো না কেন করেছি আমি? তুমি অন্তত বোঝো মুখ ফিরিয়ে নিও না৷ ”

দিলারা সরিয়ে দিলো মেঘলা কে৷ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“মায়ের মত, মা না৷ তাই তুমি ভরসা করে আমাদের কাছে আসোনি৷ মা হলে ফিরিয়ে দিতে না৷ তুমি বড় হয়ে গেছো নিজের ভালো বোঝো আমাদের আর কি দরকার৷”
বলে মেঘলার সামনে থেকে সরে গেলো৷ মেঘলা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো৷ সবাই কেন তার সাথেই অভিমান করে?
“আমার রুমে আয় মেঘ৷ অনেক জার্নি করে এসেছিস৷ চল এবার”

থমথমে মুখে মেঘলা ও এগোলো অহনার পিছু পিছু৷ বললো,
“আপু তুই ও কি রেগে আছিস? সবাই এমন করছিস কেন আমার সাথে?”
অহনা তাকালো না৷ হাটতে হাটতেই উত্তর দিলো,
“মানুষ রাগ করে কাছের মানুষ এর সাথে আমরা তোকে কাছের ভাবলেও তুই ভাবিসনি৷ তাই আমাদের রাগের কথা তোর চিন্তা করতে হবে না৷ ”
মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷ সে বোঝাতে অক্ষম মাথা ব্যাথায় বেশি কথা বলতেও পারছে না৷ শুধু বললো,
“আমার পরিস্থিতি তুই অন্তত বোঝার চেষ্টা কর আওউ৷ ”
অহনা কিছু বললো না৷ হাটা ধরলো সামনের দিকে৷

মেঘলারএ বাড়িটায় তেমন আসা হয়নি তাই খুব বেশি কিছু চেনেন না৷ অহনা মেঘলা কে নিজের রুমে নিয়ে গেলো৷ ঘরে এসেই তপ্তশ্বাস টানলো মেঘলা৷ ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পালটে এলো৷ সারা রাত ভিজা শাড়ি পরে ছিলো৷ সে শাড়ি শরীরেই শুকিয়েছে৷
তীব্র মাথা ব্যাথা ঝেকে ধরলো যেন৷ এর মাঝেই কাজের লোক এসে বলে গেলো৷ মেঘলা কে ডাকছে নাস্তা খাওয়ার জন্য৷
মেঘলা নিচে গিয়ে নাস্তা করলো৷ ফের ঘরে এলো৷ অহনা ও রেগে আছে কিন্তু আপাতত রাগ ভাঙাতে পারছে না৷ মাথার তীব্র যন্ত্রণায় শুয়ে রইলো সেখানে৷
বিছানায় সুতেই স্মৃতি চারণ হলো রাতের মুহূর্ত গুলো৷ ভাবনারা সমীকরণ মেলাতে ব্যাস্ত৷
জীবন তাকে কোথায় নিয়ে এসে দাড় করিয়েছে সে জানে না৷ সামনে আঁধার ভীষণ৷

নানান কথা ভাবতে ভাবতেই চোখে ঘুম নামলো৷ কখন যে তলিয়ে গেলো ভেবেই পেলো না৷

।।
সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত শোভন বসে আছে৷ তার পাশেই বসে আছে তার বড় ভাই এবং বাবা মা৷ কাচুমাচু মুখ করে বসে আছে বড় ভাই৷ ভাইকে জোর করে সেই রাজি করিয়েছিলো৷ আর সব এত তাড়াতাড়ি ঘটেছে তারা নিজেরাই পাত্রী দেখেনি তার মায়ের প্রাণপ্রিয় বোনের পছন্দের পাত্রী ছিলো৷ তাই আর কাল বিড়ম্বনা না করে এক সপ্তাহর মাঝেই বিয়ে ঠিক করেছে৷ আর বিয়ের দিন পাত্রী পালিয়েছে৷
বেশ খানিক্ষন ধরে কিছু বলবে বলবে বলে বলছে না৷ বেশ বিরক্ত হলো শোভন ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমাদের যদি কিছু বলার থাকে তাড়াতাড়ি বলো৷ আমার পার্টি অফিসে কাজ আছে৷ ”
এর মাঝেই শোভনের বাবা বলে উঠলো,
“কারো কিছু শুনতে হবে না তোমায়৷ তুমি পার্টি অফিসে যাও তোমার মা ভাই সব কিছুতে খামখেয়ালিপনা করে৷ এক তো মেয়ে কে সামনাসামনি না দেখেই বিয়েতে রাজি হয়েছে৷ তোমার মা তো মেয়ে দেখেইনি ব্যাস কার না কার কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো৷ তোমার মা তার বোনেদের কথা শুনে এ পর্যন্ত যা করেছে পস্তাতে হয়েছে৷ ”

বিরক্তের মাত্রা দ্বিগুন বাড়লো শোভনের৷ এবার শোভনের মা বললো,
“দিনা তো বললো মেয়ে অনেক সুন্দর৷ এত গুনগান করলো আর ওরা দেখেছিলো তাই অতদূর গিয়ে আমরা আর দেখতে চাইনি৷ ভাবলাম তোমার ছেলে বিয়েতে রাজি হয়না তাড়াতাড়ি বিয়েটা পড়িয়ে রাখলে দুই-ভাই এর রিসিপশন এক সাথে করতাম৷ কে জানতো এমন হবে? আমি তো চেয়েছি বড় ছেলের আর ছোটো ছেলের অনুষ্ঠান এক সাথে সারতে৷৷ ”

শোভন এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
“তোমাদের এসব কথা বাদে অন্য কথা থাকলে বলো৷ আমার দেরি হচ্ছে আর হ্যাঁ আমার বিয়ের কথা এ বাড়িতে যেন না শুনি আর৷ ”
বলে দাঁড়ালো না আর৷ হনহন করে বেরিয়ে গেলো৷

চলবে,