#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১২
ক্লাসরুমে বসে আছে আয়ানা। কিছুক্ষন আগে আদ্রিশ তাকে দিয়ে গিয়েছে। ভীষণ না’র্ভা’স ফীল হচ্ছে তার। এর আগে কখনো এমন কোচিং এ পড়া হয়নি আয়ানার। আর এখানে ছেলে মেয়ে একসাথে দেখে আরও বেশি না’র্ভা’স হচ্ছে সে। অনেক ছেলে মেয়ে একসাথে বসে গল্প করছে, হাসাহাসি করছে। এদের দেখে অবাক হয় আয়ানা। সে তো মেয়েদের সাথেও এতো হাসাহাসি করে কথা বলতে পারে না। আর এরা সবার সাথেই এতো ফ্রি হয়ে কথা বলছে। তাদের মধ্যে অনেকে আবার তাকে ঘুরে ফিরে দেখছে হয়তো নতুন বলে। কিন্তু তাদের এই দৃষ্টি অনেক অ’স্বস্তিতে ফেলছে আয়ানা কে।
ক্লাস শুরু হতে এখনো বিশ মিনিটের মতো বাকি। তাই আয়ানা মাথা নিচু করে বসে রইলো। সারির মাঝামাঝিতে একটা বেঞ্চে একা বসেছে সে। এর মাঝে বেঞ্চে ধু*প করে একটা শব্দ হওয়ায় বামে তাকালো আয়ানা। দেখলো একটা মেয়ে বসে হাঁ’পা’চ্ছে। মনে হয় দৌড়ে এসেছে। হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম টা মু’ছে আয়ানার দিকে তাকালো মেয়েটা। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেতে লাগলো।
মেয়েটা কে হাসতে দেখে ভালো লাগলো আয়ানার। মিষ্টি একটা মেয়ে। দেখতে খুবই সাধারণ তবে সুন্দর। চি’ক’ন’চা’ক’ন মেয়ে টা, চোখে গোল ফ্রেমের একটা চশমা। তাতে মানিয়েছে ভালো মেয়েটা কে।
মেয়েটা বোতল ব্যাগে রেখে আয়ানার দিকে ফিরে বসলো। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
— তোমাকে নতুন মনে হচ্ছে।
আয়ানাও হালকা হেসে মাথা না’ড়া’লো। মেয়ে টা চশমা পিছনে ঠে*লে বললো,
— এই মাঝামাঝি সময়ে এডমিশন নিলে যে?
আয়ানা মৃদু স্বরে জবাব দিলো,
— সমস্যা ছিলো একটা। তাই সময় মতো ভর্তি হতে পারি নি।
মেয়ে টা দাঁ’ত কে’লি’য়ে বললো,
— আরে পে*রা নাই চিল। আমরা আগে এডমিশন নিলে কি হয়েছে, এখানের বেশিরভাগই তেমন কিছু পারে না। দুই একটা আছে আলাদা ক্ষেতের মুলা। ওগুলো আবার ভালো পারে। সমস্যা নাই আমরা আরও একটা সঙ্গী পেয়ে গেলাম।
মেয়েটার কথা বলার ধরণে কিছুটা জো’রে’ই হেসে ফেললো আয়ানা। মেয়েটাও হাসলো সাথে। আয়ানা বুঝলো মেয়েটা বেশ মিশুক। মেয়েটা হাসি থামিয়ে কৌতূহল নিয়ে বললো,
— আরে তোমার নামই তো জানা হলো না। নাম কি তোমার সুন্দরী?
আয়ানা মেয়েটার এভাবে বলায় আরেক দফা হাসলো। অনেক ক*ষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,
— আয়ানা রহমান।
মেয়েটা উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,
— আমি মিথিলা জান্নাত। কাছের মানুষেরা মিথি বলে ডাকে। তুমিও তাই ডেকো। বাই দা অ’মু’ক ত’মু’ক, আমি কি তোমাকে তুই করে বলতে পারি?
মিথির “অ’মু’ক ত’মু’ক” শুনে ভীষণ ক*ষ্টে হাসি চা’পা’লো আয়ানা। বললো,
— হ্যা, হ্যা অবশ্যই বলতে পারো।
মিথি না*রা’জ কণ্ঠে মাথা নে’ড়ে বললো,
— না, না আমি একা কেনো তুই বলবো, তোকেও তুই করে বলতে হবে।
আয়ানা হেসে বললো,
— আচ্ছা বলবো।
দুইজনের কথোপকথন এর মাঝে আয়ানাদের ডানপাশের সারির তাদের বরাবর বেঞ্চে কেউ একজন ধু*প করে বসলো। কিছুটা জো*রে আওয়াজ করে বললো,
— কিরে ফে*ত্নী আজকে দেখি আগে আইয়া পরসোস। আমি কিন্তু রা*গ করছি। তুই আমারে না নিয়া আইলি কেন বে*দ্দ’প মাইয়া?
আয়ানা অবাক হয়ে ডানপাশ তাকালো। একটা ছেলে মিথি কে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছে। ছেলে টা ফর্সা, দেখতেও ভালোই। কিন্তু চেহারায় দু’ষ্টু দু’ষ্টু ভাব স্পষ্টত। মিথি ছেলেটার কথায় ভেং*চি কেটে বললো,
— হা*দা’রা’ম কোথাকার। আমি আগে আসি নাই তুই লেট করে আইসোস। আর রা*গ তো আমার করার কথা। আধা ঘন্টা তোর বাসার সামনে দাঁড়ায় ছিলাম তাও তোর খবর নাই। তুই ছেলে মানুষ, কই তুই আমারে বাসা থিকা নিয়া আইবি তা না উল্টা প্রতিদিন আমার তোরে নিয়া আসা লাগে। বে*হা’ই’য়া পোলা। আরে মাইয়াদের সাজতেও তো এতো টাইম লাগে না যতো তোর রেডি হইতে লাগে। এতো কি সাজোস তুই আল্লাহ ভালো জানে।
মিথির কথায় ছেলে টা দাঁ’ত কে’লি’য়ে বললো,
— আরে বুঝোস না ভালো মতো রেডি না হইলে মাইয়ারা প*ট’বো না আর তুই ও ভাবী পাবি না।
মিথি মুখ ঝা*ম’টা মে*রে বললো,
— ল’বা, আইসে মেয়ে প*টা’ই’তে।
ছেলেটা এবার আয়ানার দিকে ইশারা করে বললো,
— ওই ফে*ত্নী এইডা কে?
মিথি ভাব নিয়ে বললো,
— দেখ দেখ নতুন বান্ধবী পাইসি। তোর মতো শ*য়’তা’ন না, একদম ভদ্র।
আয়ানা একবার মিথির দিকে তাকাচ্ছে, একবার ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে। যেই মেয়ে তার সাথে এতক্ষন ভদ্র বাচ্চার মতো কথা বলছিলো সে এখন এভাবে কথা বলছে। মিথি হয়তো বুঝতে পারলো আয়ানার মনে কি চলছে। মিথিও দাঁ’ত কে’লি’য়ে বললো,
— আরে পে*রা খাইস না। এটা আমার লে’দা কালের বেস্টু সাথে দু*শ’ম’ন ও। ওর না দ্বীপ। আর দ্বীপ এইডা হইলো আয়ানা। আমার নতুন বান্দুপি। তুই চাইলে তুই ও ফ্রেন্ডশিপ করতে পারোস। কিন্তু তোর মতো শ*য়’তা’নে’র লগে ও ফ্রেন্ডশিপ করবো কিনা কইতে পারতেসি না।
দ্বীপ ক’লা’র উঁচিয়ে ভাব নিয়ে বললো,
— করবো করবো। আমার মতো ভালো ছেলে এই ক্লাসে আর একটা আছে নাকি?
অতঃপর আয়ানার দিকে তাকিয়ে দাঁ’ত বের করে হাই দিলো দ্বীপ। আয়ানাও সৌজন্যতার হাসি দিয়ে হ্যালো দিলো দ্বীপ কে। তার অ’স্বস্তি হচ্ছে দ্বীপের সাথে কথা বলতে। ছেলেদের সাথে কথা বলার এক্সপেরিয়েন্স তার নেই। কিন্তু এদের দুইজন কে দেখে ভালোই মনে হলো আয়ানার। আরও দুই একটা কথা বলার পর টিচার চলে আসায় চুপ হয়ে গেলো তারা।
——-
ক্লাস শেষে আয়ানা, মিথি আর দ্বীপের সাথে টু’ক’টা’ক কথা বলতে বলতেই নিচে নামলো। যদিও সে কথা বলছে কম, দ্বীপ আর মিথির ঝ*গ’ড়া দেখছে বেশি। আয়ানার মনে হলো, এরা কথায় কথায় ঝ*গ’ড়া করে না বরং ঝ*গ’ড়া করে যেকোনো কথা বলে।
নিচে এসে দেখলো গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার আঙ্কেল অপেক্ষা করছে। আয়ানা ওদের বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। ওরা দুইজন নাকি রিকশায় যাবে। ওদের বাসা বেশি দূরে না কাছেই।
আয়ানা বাড়ি ফিরে দেখলো সারা বাড়িতে শু*নশান নীরবতা। এতো নিরব থাকার কারণ বুঝলো না সে। নিজের রুমে যাওয়ার পথে রান্নাঘরে একবার উঁ’কি দিলো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। অনুর রুমেও উঁ’কি দিলো কিন্তু অনুকেও দেখলো না। তাই এবার মীরার রুমে উঁ’কি দিলো। দেখলো মীরা কোনো একটা বই পড়ছে। আয়ানা চিন্তা করলো যাবে কি যাবে না। পরে যাবে না ভেবে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই ডাক পড়লো আয়ানার। মীরার আওয়াজ শুনে মাথা ঘুরালো সে। মীরা বললো,
— কিরে উঁ’কিঝু’কি দিয়ে কই যাচ্ছিস? এদিকে আয়।
আয়ানা ধীর পায়ে মাথা নিচু করে গেলো মীরার কাছে। বেডের কাছে যেতেই মীরা আয়ানার হাত ধরে বসিয়ে দিলো। বললো,
— কেমন ছিলো ক্লাসের প্রথম দিন?
আয়ানা মাথা নে’ড়ে বললো,
— ভালো।
আয়ানা উ’স’খু’স করতে লাগলো বাড়ির সবার কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য। মীরা নিজেই বললো,
— কিরে কিছু বলবি?
আয়ানা কৌতূহলী হয়ে বললো,
— আপু বাড়ির সবাই কোথায়? কাউকে দেখলাম না যে।
মীরা বইটাকে বিছানার উপর উল্টে রেখে বললো,
— বড় মা, আহিল আর বাবা অফিসে গেছেন। কোনো সমস্যা হয়েছে বলে তাই। আর মায়ের কিছু কেনাকাটা করার ছিলো। তাই ম’ল এ গেছে। আনিকা ভার্সিটি তে। আর খালা অ’সু’স্থ তাই রুমেই আছেন।
আয়ানা মৃদু স্বরে বললো,
— ওহ।
মীরা বললো,
— তুই তো ক্লা’ন্ত মনে হয়। যা ফ্রেস হয়ে আয়। ততক্ষনে ওরাও চলে আসবে হয়তো। তারপর সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।
আয়ানা সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে আসলো মীরার রুম। থেকে। রুমে এসে ব্যাগ রেখে cupboard খুললো সে। এক গা*দা কাপড় দিয়ে ঠা*সা cupboard। এছাড়াও যাবতীয় প্রয়োজনীয় সব আছে। এই সব কিছু তার শাশুড়ি আম্মু তার জন্য কিনেছে। নিজের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর আয়ানা এসব দেখে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে আনিকার কাছ থেকে জানতে পেরেছে অনু এসব কিনে গুছিয়ে রেখেছে তার জন্য।
বাবার বাড়ি থেকে মেয়েরা অনেক কিছু নিয়ে আসে। অথচ সে এনেছিল পু’রা’ন কিছু কাপড়। আর তো কিছু তার ছিলো না। আর না তাকে কিছু দেয়া হয়েছে। এসব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যা’গ করে আয়ানা। অথচ তার শাশুড়ি মা বুদ্ধিমত্তার সাথে বিষয় টা এ’ড়ি’য়ে যান, এসব নিয়ে খো*টা দেয়া তো দূরের কথা। আয়ানা বুঝে উঠতে পারে না একটা মানুষ এতোটা ভালো কিভাবে হয়।
আয়ানা হালকা গোলাপী রঙের একটা জামা নিয়ে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।
——–
রুমে প্রবেশ করতেই পা থেমে গেলো আদ্রিশের। তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। সামনে সদ্য শাওয়ার নেয়া আয়ানা উল্টো দিকে ফিরে চুল ঝা*ড়’ছে। তার ওড়না বিছানায় রাখা। একটা ঢো’ক গি’ল’লো আদ্রিশ। এই মুহূর্তে আয়ানা কে দেখে দম ব’ন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে আদ্রিশের। বে*হা’য়া চোখেজোড়া কে বারবার সরাতে চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছে সে। এই দুইদিনে একবারও সে আয়ানা কে এই রূপে দেখে নি। আয়ানা সবসময় মাথায় হালকা পাতলা কাপড় দিয়ে রাখে। প্রথম বার আয়ানার চুল দেখলো সে। বেশ বড় আয়ানার চুল তবে তারচেয়ে বেশি ঘন। সেটাই মনোযোগ সহকারে মু’ছ’ছে সে।
চুল মু’ছ’তে মু’ছ’তে হঠাৎ আদ্রিশের দিকে ফিরলো আয়ানা। আদ্রিশের দিকে চোখ যেতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার। এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
চলবে?