অতঃপর প্রেমের গল্প পর্ব-২৯

0
411

#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#পর্ব___২৯
#কায়ানাত_আফরিন
[রিচেক করা হয়নি। ভুলক্রুটিগুলো ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।]

বিকেলে কোচিং শেষ করে বাসায় ফেরার পথে রৌশিনের আরও একবার দেখা হলো ফাহিমের সাথে। এতে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রৌশিন। কেননা রাস্তায় সাইকেল থামিয়ে মারুফ আর সে রীতিমতো মারামারি না করলেও হাতাহাতি করছিলো। মূল বিষয় ছিলো এটি যে আসলেই সাব্বির ভাই আর ইলার প্রেমের সম্পর্কের আদৌ কোনো পূর্ণতা পাবে কি-না। আর একজন কলেজে পড়ুয়া মেয়েকে যদি রাস্তাঘাটে সমানতালে নিজের সমবয়সী ছেলের সাথে মারামারি করতে দেখা যায় তাহলে সেটা কেউ তৃপ্তিকর নজরে দেখতে চাইবে না। অনেকে হয়তো ওদের পবিত্র বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে নোংরা বানিয়ে ছাড়বে।
অদ্ভুতভাবে এমন কিছুই করলো না ফাহিম।বরংচ ওদের দুজনকে এভাবে দখে হেসে দিলো। সে কি অমায়িক হাসি।খালের ওপর দিয়ে সুন্দর একটি সেতু। নিচ দিয়ে পাহাড়ি পানি বয়ে নদীর সাথে মিশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। গোধূলীর লালচে আকাশের প্রতিরশ্নিটা ফাহিমের ফর্সা মুখমন্ডলে পড়াতে রৌশিনের চোখ কেমন যেন ধাধিয়ে উঠলো। রৌশিন মিহি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

-‘আপনি হঠাৎ এই রাস্তায়?’

-‘তোমার ভাইয়ের কাছেই যাচ্ছিলাম। কিন্ত সেতুর ওপরে পশ্চিমা আকাশের দৃশ্যটা এতটাই সুন্দর যে গাড়ি না থামিয়ে থাকতে পারলাম না। এইযে! এতক্ষণ এ দৃশ্যই উপভোগ করছিলাম।তবে ভাবছি যে আফরাও এখানে থাকলে খুব ভালো হতো। সেই বিদেশিনীও আবার প্রকৃতি প্রেমিকা। ইভেনচুয়ালি আমার থেকেও বেশি।’

‘আফরা’ নাম শুনতেই রৌশিনের আনন্দে ভরা মুখ থমথমে হয়ে এলো এবার । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওই মেয়েকে হিংসের বশে দু’চারটা কথা শুনিয়ে ফেলতে। কি এমন আছে আফরার মধ্যে যে ওর স্বপ্নের রাজকুমার ফাহিম শুধুই আফরা, আফরা করে?রৌশিন এবার তপ্তশ্বাস ছাড়লো। বৃদ্ধাআঙ্গুল দিয়ে কপালের প্রান্ত থেকে মুছে নিলো ঘাম। ফাহিম হঠাৎ মারুফকে প্রশ্ন করলো,

-‘তোমরা দু’জন হঠাৎ সাইকেল থামিয়ে রাস্তায় মারামার করছিলে কেনো?’

-‘আরে আর বইলেন না ভাই, ওইযে ইলা আর…………’

‘সাব্বির ভাই’ নামটা উচ্চারণ করার আগেই ওর মুখ সজোরে চেপে ধরলো রৌশিন। ফাহিম যেহেতু ইলার বড় ভাই সেই সুবাদে ওদের প্রেমের সম্পর্কের কথা ফাহিম কিছুই জানে না।রৌশিনের ইচ্ছে করছে মারুফকে আরও একদন্ড উড়াধুরা পিটিয়ে মারতে। ছেলে মানুষের মুখ যে এত পাতলা হয় মারুফকে না দেখলে রৌশিনের অজানা থাকতো। ভ্রু কুচকালো ফাহিম। নিজের বোনের প্রসঙ্গ উঠাতে সন্দেহবশতই জিজ্ঞেস করলো,

-‘ইলার সম্পর্কে কি বলতে চাইলো মারুফ যে তুমি ছেলেটার মুখ এভাবে চেপে ধরেছো?’

-‘কিছু না ভাইয়া এগুলো আমাদের ফ্রেন্ডসদের সিক্রেট। এসবে কান দিতে হয় না।’

-‘একা কই ,এই মারুফটায় আছে তো। এই মারুফ! (মাথায় বারি দিয়ে) বল, তুই আছিস না?’কফাটি অযৌক্তিক মনে হলেও বিশ্বাস না করেও পারলোনা। কারন রৌশিনকে চোখ বুজে বিশ্বাস করার ক্ষমতা দিয়েছে আল্লাহ তায়ালা ওকে। ফাহিম নিজের হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো ।সূর্য প্রায় ডুবুডুবু অবস্থা। এর মধ্যে রৌশিন চোখ রাঙিয়ে তাকালো মারুফের দিকে। আর উনিশ থেকে বিশ হলেই ইলার গোপন প্রেমের বিষয়টা প্রকাশ পেয়ে যেতো। মারুফ কানে ধরে ইশারায় ওকে সরি বললো। রৌশিনও চোখ রাঙিয়ে ওয়ার্ন করে দিলো যে এমন ভুল যেন আর না হয়,। ফাহিম ব্যস্তসহিত বলে ওঠলো,

-সন্ধ্যে নেমে আসছে প্রায়। রৌশিন ! আমি যেহ‍েতু তোমাদের বাড়িতেই যাচ্ছি তাহলে তুমিও আসো আমার সাথে। এভাবে সন্ধ্যায় একা ঘুরাফিরা করো না।’

-‘একা কই এই মারুফটায় আছে তো। এই মারুফ! (মাথায় বারি দিয়ে) বল, তুই আছিস না?’

-‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোর আর তোর জামাই বাচ্চার পাহারা দিবো।’

ফাহিম স্মিত হেসে বললো,

-‘ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর বরই ওকে পাহারা দেওয়ার মতো যথেষ্ট। আই অ্যাম ড্যাম সিউর ওর মতো মায়াবী একটা মেয়ে অবশ্যই ট্রু লাভড হাসবেন্ট পাবে।’

এই বিরাজমান থমথমে পরিবেশে রৌশিনের সারা দেহে ছড়িয়ে পড়লো আচমকা শীতলতা। ওর হৃদয়ের ধুকপুক বেড়ে ওঠেছে। শরীরে নেমে এসেছে অস্থিরতা। এই অস্থিরতা , তুমুল উত্তেজনা , সবকিছুই কি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির জন্য? হলে হতেও পারে। কেননা সচরাচর ফাহিমকে রৌশিন এ ধরনের কথা বলতে দেখেনি। ফাহিম এবার গাড়িতে বসে পড়লো। সে গাড়ি স্টার্ট করতে রৌশিনও সাইকেল চালিয়ে পেছন পেছন উদ্যত হলো নিজ বাড়ির দিকে।

______________________________________

নেলসন টি এস্টেটের সামনেই গাড়িটা থামিয়ে দিলো ফারহান। হু হু বাতাস বয়ে চলছে। সেই সাথে কেপে কেপে ওঠছে ওদের শরীর। তখন হঠাৎ পানিতে যেমন নেমেছিলো কোনোরূপ কোনো পরিকল্পনা ছাড়া , তেমনি পানি থেকে উঠে দেখলো ওরা কেউই কোনো জামাকাপড় নিয়ে আসেনি। অগত্যাই এভাবে ভেজা জামাকাপড় শুকানোর অপেক্ষায় দুজনে আরও কিছুক্ষণ বিলে সময় কাটালো। আফরা মানতে বাধ্য এই সময়গুলো ওর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কিছু সময়। ফারহানের সাথে একান্তে গড়ে তোলা একটি সুন্দর অতীত। যেটা স্মৃতিচারণ করলেই শুধু আনন্দ পাওয়া যাবে। ফারহান ভেবে নিলো আজ ফাহিম আসলে ওর সাথে একান্তে এই মাছ দিয়ে ইটালিয়ান ডিস রান্না করা যাবে।ছেলেটার সাথে অনেকদিন ধরে ভালোমতো কথাবার্তা হয়না। যা হয় সেটাও পরিমাণে বলতে গেলে খুব কম। ফারহান এবার বলে ওঠলো,

-‘জলদি রুমে গিয়ে একটা হট শাওয়ার নিন। এভাবে থাকলে আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে।’

-‘আপনার বুঝি ঠান্ডা লাগবে না?’

আফরা চোখজোড়া ছোট ছোট করে স্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো ফারহানকে। ফারহান ঠোঁটজোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিলো।কৌতুকস্বরে বললো,

-‘আমি আপনার মতো এত সেনসিটিভ না আফরা যে অল্পতেই ঠান্ডা বাধিয়ে ফেলবো।অ্যামেরিকান মানুষেরা তো অল্পতেই শরীরে অসুখ বাধিয়ে ফেলে। বাধাবে না? জীবনটাইতো পার করে ইন্জয় করতে করতে আরাম আয়েশের মধ্য দিয়ে। আমি জানি আপনিও তেমনি । ফার্মের মুরগির মতো।’

অপমানে আফরার দাঁত রীতিমতো কিড়মিড় করে ওঠলো। ফারহান ইনডাইরেক্টলি ওকে ফার্মের সাথে তুলনা করছে যেটা ওর দুদন্ডও সহ্য হচ্ছেনা। আফরা ঠোঁট কামড়ে বললো,

-‘ফাইন। আমি আজ জামাকাপড় পাল্টে চুপচাপ খাটে শুয়ে থাকবো তবুও হট শাওয়ার নিবো না। দেখি , আমার ঠান্ডা লাগে নি !’

-‘আমার সাথে ইগোতে জেতার জন্য শুধু শুধুই নিজের শরীরের ক্ষতি করেন না ।’

-‘করলে করবো , আপনার কি? ‘

বলেই আফরা হতদন্ত হয়ে বাংলোর দিকে পা বাড়ালো। বরাবরের মতোই ফারহানের ঠোঁটে রম্যাত্নক হাসি। শুরুতে এই মেয়ের অস্বাভাবিক কাজগুলো ওর কাছে চরম বিরক্তিকর লাগলেও এখন সেগুলো ওর ভালোলাগে। জানেনা কেন?

আফরাকে এভাবে দ্রুতপায়ে ঘরে যেতে দেখে বারকয়েকবার ওকে থামানোর চেষ্টা করলেন মিসেস নাবিলা। কিন্ত আফরা ছোট খরে বললো, ‘আমার ভালো লাগছে না। আমি রুমে রেস্ট নিবো।’
এই বলে সেই যে আফরা রুমে গেলো আর বেরিয়ে এলো না। তারপর ডিনারের জন্য মিঃ ইফাজ , মিসেস নাবিলা এমনকি ইলাও ডাকতে গেলো বরাবরের মতই আফরা নিরুত্তর। মিহি কন্ঠে বললো,

-আজ খেতে ইচ্ছে করছেনা।

বিষয়টা ভাবুক করে তুলল সবাইকে। আফরা ওদের অতিথি আর আতিথিকে কখনোই এভাবে অ্যাপায়ন সম্ভব না একজন বাঙালি পরিবারের সাপেক্ষে। ফাহিম রৌশিনদের বাড়ি থেকে নিজেদের বাংলোতে এসেই শুনতে পারলো আফরার ঘটনা। মিসেস ধাবিলা চিন্তিত স্বরে কথাগুলো ওকে বলছে। মিসেস নাবিলা এবার বললো,

-‘এই ফাহিম , তুই একটু দেখে আয়না যে আফরার কি হয়েছে। আমি নিশ্চিত , ও তোকে সব বলবে।’

ফাহিম গলার টাইয়ে ঢিল দিয়ে বলতে থাকলো,

-‘তুমি উনার খাবারটা রেডি করো।আমি খাবারটা নিয়েই যাচ্ছি।’

মিসেস নাবিলার চোখমুখে পরিতৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠলো।তারপর খাবারের ট্রে টা ফাহিমের হাতে দিতেই ফাহিম সেটা নিয়ে উদ্যত হলো আফরার ঘরের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
~চলবে……….ইনশাআল্লাহ

ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।