#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১
পরপর দুটো থাপ্পড় গালে পড়তেই আমায়রা অবাক হয়ে তাকালো সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন যুবকের দিকে। চারপাশে অনেক মানুষ দেখছে তাদের।অপমানে আমায়রার মুখ থমথমে হয়ে গেল।
হুট করে এসে এমন থাপ্পড়ের কোনো কারণ খুঁজে পেল না আমায়রা। সে তো চেনেওনা সামনে দাঁড়ানো যুবকটিকে। গালদুটো টনটন করছে তার। এত জোরে কেউ মারে। চোখ বেয়ে দু ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো তার। রাগে,দুঃখে, অপমানে গা রি রি করছে তার।
রক্তলাল চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি আমাকে কোন সাহসে থাপ্পড় মারলেন। আমি তো আপনাকে চিনিও না।”
তখনই একটা ছেলে দৌড়ে এলো। আমতা আমতা করে বলল,
“ভাই এটা কি করলি তুই!”
রায়ান ভ্রুকুচকে বলল,
“কেন কি হয়েছে! এটাই ও ফালতু মেয়ে না। যে তোর সঙ্গ….”
আহাদ রায়ানের মুখ চেপে ধরে বলল,
“থাম ভাই থাম। এ সেই মেয়ে না। হ্যাঁ মানলাম এই মেয়েও সাদা জামা পড়ে আছে। কিন্তু ওর পিছনে ও ছিলো। তুই হুট করে এসে যে থাপ্পড় মেরে দিবি তা কি আমি জানতাম।”
রায়াধ এবার বিষয়টি বুঝতে পেরে কি করবে বুঝতে পারলো না। আমায়রার দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটা গালে হাত দিয়ে ফুসছে তার দিকে তাকিয়ে। রায়ান আহাদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। আহাদ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর দিকে।
রায়ান জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“আসলে পিচ্চি আমি অন্যজনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। বাসায় গিয়ে দুগালে একটু বরফ ঘষে নিও ঠিক হয়ে যাবে।”
রায়ানের কথা শুনে আমায়রার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সে ফুসতে ফুসতে জবাব দিল,
“আপনি কি হ্যাঁ, হুট এসে আমার গালে ঠাটিয়ে থাপ্পড় দিলেন। এখন সরি পর্যন্ত না বলে, বলে দিলেন বরফ ঘষে নিলেই হবে?”
রায়ানের ভ্রু কুঁচকে গেল। সে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই আমায়রা আবার বলল, “আপনার ভুল ছিল। আর সেটা এত বড় একটা ভুল যে সোজা থাপ্পড় মারলেন, তাও কোনো কথা না বলে! আপনাদের মতো মানুষদের এইভাবে সহজেই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।”
রায়ান শার্টের কলার উঁচিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“দেখ মেয়ে এই রায়ান চৌধুরী না কখনো কাউকে সরি বলেছে, আর না বলবে। সো আমার সঙ্গে তর্ক না করে যা করছিলে তাই করো।”
বলেই আহাদকে নিয়ে পিছন ফিরে চলে যেতে নিবে তখনি আমায়রা এদিকসেদিক তাকিয়ে কিছু না পেয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ইশরার ফুচকার প্লেটের টকটা ছুড়ে দিলো রায়ানের গায়ে।
আমায়রার এমন কান্ডে আহাদের চোখ বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা। রায়ান ও হতবাক। ইশরা তো আগে থেকেই অবাকের চরম পর্যায়ে ছিলো। এখন তার মুখ হা হয়ে গেল। রায়ান তে তে উঠে বলল,
“এই মেয়ে এটা কি করলে তুমি! আমার পছন্দের শার্ট..!”
আমায়রা দাঁত বের করে হেসে গিজগিজিয়ে বলল,
“বাড়ি গিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। আমি আবার ছুচো মেরে হাত নোংরা করি না।”
আমায়রার কথায় রায়ান চটে উঠলো। কিছু বলার জন্য এগোতে নিবে তার আগেই আমায়রা মুখ ভেংচি কেটে ইশরার হাত ধরে সেখান থেকে হনহনিয়ে চলে গেল।
আহাদ রায়ানকে আটকে বলল,
“থাক যেতে দে। হয়েছে আর ঝামেলা করতে হবেনা।”
রায়ান ফুসতে ফুসতে বলল,
“কি আমি ঝামেলা বাড়াচ্ছি! আর ওই মাইয়া কি করলো তুই দেখতে পেলিনা। ও যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। তোর জন্যেই তো এমন হলো।”
আহাদ কিছু বলতে নিবে তার আগেই রায়ান ওকে ঝারি দিয়ে বাইকে উঠে চলে যায়।
আহাদ রায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলে।
অন্যদিকে ইশরা আর আমায়রা রিক্সায় উঠেছে। আমায়রার গাল দুটো লাল হয়ে আছে। ইশরা আমায়রার দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
“তুই ঠিক আছিস তো!”
আমায়রা নাকে নিচে আঙুল ঘষে বলল,
“জানিস আমার এখন মন চাইছে ওই বেডারে ধরে ড্রেনে চুবাই। কত বড় সাহস এই আমায়রার গায়ে হাত তুলে। আমার বাবা মাও এ পর্যন্ত কখনো আমার গায়ে হাত তুলেনি। আমার নরম গালগুলো।”
বলেই গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টালো আমায়রা। ইশরা আমায়রার ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
“থাক আর কান্দিস না বাসায় গিয়ে বরফ ঘষে নিস।”
ইশরার কথায় আমায়রা ফুসে উঠলো। চেচিয়ে বলে উঠলো,
“তুই ও ওই চামচিকার মতো কথা বলছিস। মন তো চাচ্ছে তোরে ধরে থাপ্পড়াই।”
ইশরা জিভে কামুড় বসিয়ে বলল,
“সরি রে আমু আর জীবনেও বলবো না। তুই শান্ত হ।”
আমায়রা নাক টেনে বলল,
“টিস্যু দে!”
ইশরা ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে আমায়রাকে দিলো। আমায়রা ছোঁ দিয়ে টিস্যুটা নিয়ে নাক মুছতে লাগল। ইশরা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“গালে তো দাগ পড়ে গেছে। আন্টিকে কি বলবি কিছু ভেবেছিস!”
আমায়রা চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“আসলেই তো। এ কথা তো ভাবিনি। বাসায় গেলেই তো আম্মু আমাকে ধরবে রে ইশু।”
“আমিও তো সেটাই বলছি।”
আমায়রা গালে হাত রেখে ভাবতে লাগল। কিছুক্ষণ বাদেই বলল,
“বলবো তোর সঙ্গে থাপড়াথাপড়ি করছি।”
ইশরা কপাল কুচকে বলল,
“ধুর এইটা তো আন্টি জীবনেও বিশ্বাস করবেনা। আমি তোরে এতো জোরে থাপড়া দিবো।”
আমায়রা কপাল ধরে বসে রইলো। আসলেই তো কি বলবে সে, তার আম্মুকে।
আমায়রার ভাবনার মাঝেই রিক্সা এসে থামলো ইশরার বাসার সামনে। ইশরা রিক্সা থেকে নামতে নামতে বলল,
“আন্টি কোনোমতে বুঝিয়ে দিস। পরে জানাস কি হয়।”
আমায়রা হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো। রিক্সা চলতে লাগলো আমায়রার বাসার দিকে।
রিক্সা এসে বাসার সামনে আসতেই আমায়রার ভাবনা যেন আরো বেড়ে গেল। গালে হাত রেখে কলিংবেল চাপলো সে। দুবার বাজাতেই আমেনা বেগম এসে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলেই ব্যস্ত চিত্তে রান্নাঘরে ছুটলেন তিনি।
আমায়রা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো। দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল। চেঁচিয়ে বলল,
“আম্মু কি করছো? তুমি কি ব্যস্ত?”
আমেনা বেগম চটজলদি বললেন,
“বেশি কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কাজে লেগে পড়। মেহমান আসবে বাসায়।”
#চলবে কি?