#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩
আমায়রা দরজা খুলতেই বন্যা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে আমায়রাকে জড়িয়ে ধরলো। আমায়রা প্রথমে চমকিত হলেও পরে মুচকি হেসে সেও জড়িয়ে ধরলো। ফিসফিসিয়ে কানের কাছে গিয়ে বলল,
“আপু রাকিব ভাইয়া সঙ্গে বিয়ে নাকি!”
বন্যা আমায়রার কথায় লাজুক হাসলো। আমায়রা বিষয়টা বুঝতে পেরে দাঁত বের করে হাসলো।
“কিরে হলো তোদের?বন্যা পরে কথা বলিস আগে ফ্রেশ হয়েনে।”
সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলেন আমায়রার বাবা আজিজ সাহেব। বন্যা ফ্রেশ হতে চলে গেল। আমায়রা ফুপু আর ফুপার সাথে টুকিটাকি কথা বলে তাদের রুমে নিয়ে গেল।
অনুভব বাসায় আসতেই আজিজ সাহেব বললেন,
“কিরে কোথায় গেছেলি? বন্যারা এসে পড়েছে তো।”
অনুভব আস্তে করে বলে উঠলো,
“নিচে গেছিলাম একটু।”
আজিজ সাহেব তাড়া দিয়ে বললেন,
“দেখ তো তোর মায়ের রান্না হয়েছে নাকি। ওরা ফ্রেশ হতে গেছে। এসেই খাবে।”
অনুভব হাতের চিনি আর চাপাতার প্যাকেট নিয়ে রান্নাঘরে গেল। আমেনা বেগমকে রান্নাঘরে দেখা গেল না। তবে সব খাবার টেবিলে সাজানো। অনুভব হাতের জিনিসগুলো সেখানে রেখেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বন্যা একেবারে শাওয়ার নিয়ে কেবলি বের হয়েছে। গামছা দিয়ে লম্বা চুলগুলো মুছতেছে সে। আমায়রার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ আটকে গেল অনুভবের। অনুভব মুহুর্তেই নিজের চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যেতে নিবে তার আগেই বন্যা বলে উঠলো,
“আরে অনুভব ভাই যে, কেমন আছেন?”
অনুভব এড়িয়ে যেতে পারলো না। একটা তপ্তশ্বাস ফেলে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বন্যার দিকে ফিরলো।
বন্যা হাসিমুখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অনুভবের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
“এই তো ভালোই। তুমি কেমন আছো?”
বন্যা মুচকি হেসে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। কিছু কি বলবেন?”
“না তেমন কিছু না। আমায়রা কোথায়?”
“ওয়াশরুমে গেছে আমায়রা।”
অনুভব আস্তে করে বলল,
“ওও, তাহলে আসি।”
বলেই বন্যাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অনুভব চলে। বন্যার কপালে ভাঁজ পরলো অনুভবের এমন কাজেই। বন্যা ভাবনায় পড়ে গেল অনুভবের এমন আচরণে।
বন্যার ভাবনায় ছেদ ঘটলো আমায়রার ডাকে। বন্যা আমায়রার দিকে তাকাতেই আমায়রা বলল,
“কি এতো ভাবছো বলো তো। পরে ভেবো তো সব। আম্মু অনেক কিছু রান্না করেছে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবে না। আগে খেয়ে নেও।”
আমায়রা চলে যেতে নিবে তার আগেই বন্যা ভাবুক কন্ঠে বলে উঠলো,
“অনুভব ভাইয়ের কি কিছু হয়েছে?”
বন্যার প্রশ্নে ভ্রুকুচকে আসলো আমায়রার। আমায়রা বন্যার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল,
“কেন বলো তো! ভাইয়া কি তোমায় কিছু বলেছে?”
বন্যা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তেমন কিছু না হয় তো মন খারাপ। চল খেতে যাই মামি ডাকছে।”
আমায়রা আর কথা না বাড়িয়ে খাবার রুমে গেল।
খাবার টেবিলে সবাই বসেছে রাতের খাবার খেতে। বন্যাদের সন্ধ্যায় আসার কথা ছিলো। কিন্তু জ্যামের কারণে আসতে রাত হয়েছে। খাবার টেবিলে সবাই টুকিটাকি কথা বললেও অনুভব একদম চুপ করে আসে। মাথা নিচু করে খাচ্ছে সে।
বন্যার বাবা ইসহাক সাহেব বলে উঠলেন,
“অনুভব এখন কি করবে কিছু ভেবেছো? চাকরি-বাকরি করবে নাকি বিজনেস।”
ইসহাক সাহেবের কথায় অনুভব মৃদু হেসে বলল,
“বর্তমানে চাচা-মামা না থাকলে চাকরির কথা ভাবা বোকামি। আর চাকরিরের খোঁজ করতে গেলে চাচা-মামারা আর চেনে না। তাই ভেবেছি বিজনেস করবো।”
ইসহাক সাহেব আর কিছু বললেন না। অনুভবও কথা বাড়ালো না।
অনুভবকে চুপচাপ দেখে অনুভবের ফুপু আয়েশা বেগম বললেন,
“তা অনুভব দিনকাল কেমন যাচ্ছে তোমার? এতো চুপচাপ কেন মন খারাপ।”
অনুভব মাথা নিচু করেই বলল,
“না তেমন কিছু না। আসলে মাথা ব্যথা করছে একটু।”
আমেনা বেগম ছেলের কাছে এগিয়ে আসলেন। মাথায় হাত রেখে বললেন,
“বাবা খুব কি চাপ হয়ে যাচ্ছে?”
অনুভব আস্তে করে বলে উঠলো,
“আমি ঠিক আছি।”
আয়েশা বেগম আমায়রার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কিরে আমায়রা তোর গালে কি হয়েছে? এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন?”
আয়েশা বেগমের কথায় চমকে উঠলো আমায়রা। সবাই তাকালো আমায়রার দিকে। আমায়রা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“কোথায় কি হবে আবার!”
আমেনা বেগমও এতক্ষণে খেয়াল করলেন। আমায়রার গালটা ফোলা ফোলা লাগছে খানিকটা। কপাল কুচকে উনি প্রশ্ন করলেন,
“কি হয়েছে আমায়রা সত্যি করে বল তো।”
আমায়রা মুচকি হেসে বলল,
“তেমন কিছুই না। আসলে মেকআপ করেছি তো তাই এমন লাগছে।”
বন্যা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আমায়রার দিকে। তখনি আজিজ সাহেব বললেন,
“হয়েছে এবার খাও তো সবাই। পরে তদন্ত করো।”
আজিজ সাহেবের কথায় সবাই দমে গেল। আমায়রা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। আবারো থাপ্পড়ের কথা মনে করে মনে মনে বকতে লাগল রায়ানকে।
————————-
রায়ানের ঘুম ভেঙেছে সন্ধ্যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতে দেখতে পেল নূর ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে কপাল কুচকে। রায়ান একগাল হেসে ইশারায় কাছে ডাকলো নূরকে। নূর মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
“চাচ্চু তোমার সঙ্গে এই নূরের আর কোনো কথা নেই।”
রায়ান ভ্রুকুচকে নরম গলায় বলল,
“কেন নূর মামণি কি চাচ্চুর উপর রাগ করেছে?”
নূর মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। রায়ান মৃদু হেসে বেড থেকে নেমে ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে চকলেট বের করে নূরকে দিলো। নূর মুখ ঘুরিয়েই আছে। রায়ান এবার হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“চাচ্চুর কি দোষ বলো তো মামুনি।”
নূর গাল ফুলিয়ে অভিযোগের সূরে বলল,
“আমি সেই কখন নানু বাড়ি থেকে এসেছে। তোমার অপেক্ষা করতে করতে আমি তো বুড়ি হয়ে গেলাম। তুমি যে সেই ঘুম দিছো তো দিছো উঠই না।”
নূরের কথায় রায়ান হেসে দিলো। নূরের যেন এতে আরো বেশি মেজাজ খারাপ হলো। রাগী গলায় বলল,
“দোষ করে এখন আবার হাসছো!”
রায়ান কানে হাত রেখে বলল,
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর হবে না।”
“সরি বলো চাচ্চু।”
নূরের কথা শুনে হুট করেই আমায়রার কথা মনে পরলো রায়ানের। মুহূর্তের মধ্যেই মাথা ঝাকিয়ে পুনরায় নূরের দিকে তাকালো। নূরকে কোলে নিয়ে ওর গালে দুটো চুমু খেল। আরো একটা চকলেট বের করতে নিবে তখন আড়চোখে নূর তাকালো। রায়ান হাসছে নূরের কাহিনী দেখে। আরো একটা চকলেট বের করে দুটো চকলেট ওর হাতে দিলো। নূর কাটকাট গলায় বলল,
“এবারের মতো না হয় মাফ করে দিলাম তোমাকে চাচ্চু। এর পরের বার থেকে সত্যি সত্যি আর কথা বলবো না।”
রায়ান মুচকি হেসে নাক টেনে দিলো।
নূরের মা নাইমা সারা বাড়ি নূরকে খুজেঁ অবশেষে রায়ানের রুমে এসে নূরকে দেখে সস্থির নিশ্বাস ফেলল। আস্তে করে বলে উঠলো,
“আসতে পারি।”
রায়ান আর নূর দুইজনই তাকালো। রায়ান বলল,
“আসো ভাবি।”
নাইমা মুচকি হাসি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে বলল,
“ভালো আছো রায়ান?”
“হুম ভাবি ভালো আছি। তা তোমাদের না কালকে আসার কথা ছিলো?”
“তোমার ভাই আজকে গিয়ে বলছে আজকেই নিয়ে আসবে।”
“ওও”
নাইমা নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মাম্মা চলো খেতে হবে না।”
নূর রায়ানের গলা জড়িয়ে বলল,
“না আমি চাচ্চুর সাথে খাবো।”
নাইমা অসহায় দৃষ্টিতে রায়ানের দিকে তাকালো।
রায়ান মুচকি হেসে বলল,
“তুমি খাবার নিয়ে আসো ভাবি। আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
নাইমা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। নূর রাজ্যের গল্প শুরু করে দিয়েছে রায়ানের সাথে। নানু বাড়িতে কি করলো না করলো। রায়ানও মন দিয়ে শুনছে নূরের সব কথা।
খানিকবাদেই নাস্তার প্লেট নিয়ে রুমে এলো নাইমা।
#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)