#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ১৯
রায়ান পায়ের উপর পা তুলে মাথার নিচে দুহাত রেখে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। পাশেই আবির আর সুরাইয়ার ভাই সুমন। রায়ান ভাবুক কন্ঠে বলল,
“জানিস আমার বউ ছাড়া দিনগুলো না সেন্ডো গেঞ্জির পকেটের মতো হয়ে গেছে। দিন যাচ্ছে কিন্তু প্রয়োজনে লাগছে।”
আবির চোখ সরু করে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাই তুমি কি বিয়া করার চিন্তা করতেছো?”
রায়ান ভ্রুযুগল গুটিয়ে বলল,
“এখন বিয়ের কথা চিন্তা করবোনা তো কখন করবো। বয়স তো আর কম হলোনা। গুনে গুনে ছাব্বিশ বছর পার হতে চললো। এখন চিন্তা করবোনা নাতে কি আশি বছর বয়স হলে চিন্তা করবো বলদ।”
আবির খানিকটা থতমত খেয়ে নড়েচড়ে বলল,
“বড় আব্বুকে কি বলবো তোমার বিয়ার কথা?”
রায়ান কপাল কুচকে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেন রে হারাম*দা আমার কি মুখ নাই!আমার বিয়ার কথা আমি কমু তুই কেন বলবি!”
আবির কাচুমাচু করতে করতে বলল,
“না মানে”
“কোনো মানে নাই চুপচাপ থাক।”
————————
পড়ন্ত বিকেল সবাই বের হয়েছে ঘুরতে। আমায়রা, রায়ান, নূর,নেহা, আবির, তাহসান, নাইমা, অনুভব, রাকিব,বন্যা, সিফাত, সুমন আরো অনেকজন বন্যা আর রাকিবের কাজিন।
আমায়রা নূরে হাত ধরে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটছিলো। তখনি তার পাশে সিফাত এসে দাঁড়ায়। হাসি হাসি মুখ করে বলে,
“গ্ৰাম কেমন লাগছে মিস.?”
আমায়রা সিফাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“ভালোই লাগছে সিফাত ভাই।”
“তুমি এবার কোন ইয়ারে পড়ছো জানি?”
“অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ”
আমায়রা আর সিফাতকে একসঙ্গে কথা বলতে দেখে রায়ানের ভ্রুকুচকে এলো। সে দ্রুত পায়ে ওদের কাছে এসে নূরের অপর হাত ধরে বলল,
“আর আমার মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। এখন রেজাল্টের অপেক্ষা।”
আমায়রা মাথা ঘুরিয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেছে?”
রায়ান ভাবার ভঙ্গি ধরে বলল,
“হুম করেছে তো সিফাতের মন। তাই না বলো সিফাত।”
সিফাতের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল রায়ান। রায়ানের এমন কথায় থতমত খেল সিফাত। কোনো মতে হেসে মাথা নাঁড়িয়ে সামনে চলে গেল। রায়ান সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
আমায়রা সরু চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি আসার পর থেকে সিফাত ভাইয়ের পিছনে লেগে আছেন কেন বলুন তো!”
রায়ান খানিকটা ঝুকে দুষ্টু হেসে বলল,
“কেন যমরানী আপনি কি জেলাসি ফিল করছেন?”
“মানে”
“মানে তো এটাই যে আমি আপনার পিছনে না লেগে সিফাতের পিছনে লাগছি তাই আপনি জেলাসি ফিল করছেন মিস. যমরানী।”
“ভন্ডামি বাদ দিয়ে ঘুরতে আসছেন ঘুরুন। আমার পিছনে লাগতে আসলে ফল ভালো হবেনা।”
রায়ান নিজ মনেই বলল,
“ভন্ডামির আর কি দেখলে গো, এইতো সবে শুরু।”
আমায়রা রায়ানকে বিরবিরাতে দেখে কপাল কুচকে বলল,
“কি এতো বিরবিরাচ্ছেন বলুন তো মশাই?”
রায়ান হেয়ালি করে বলল,
“তোমাকে কেন বলতে যাবো?”
আমায়রা মুখ বাঁকিয়ে সামনে যেতে লাগল।
অনুভব ফোন টিপতে টিপতে হাঁটছিলো তখনি সামনে লাফিয়ে হাজির হলো সুরাইয়া। অনুভব মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো কালো রঙের সালোয়ার কামিজের ওড়না কোমড়ে বাধা পেয়ারে হাতে তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুরাইয়া। অনুভব পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিবে তার আগেই সুরাইয়া পথ আটকে বলল,
“পেয়ারা খাবেন?”
অনুভব ছোট্ট করে বলল,
“না”
সুরাইয়া কপাল কুচকে বলল,
“কেন খাবেন না! গাছ পাঁকা লাল টকটকে পেয়ারা অনেক মজা।”
অনুভব চুপচাপ হেঁটে চলছে। সুরাইয়া বেশ বিরক্ত হলো অনুভবের এমন আচরণে। বিরক্তি নিয়ে হাতের কুনুই দিয়ে অনুভবে পেটে একটা গুতা দিলো। অনুভব নাকমুখ কুচকে একরাশ বিরক্ত নিয়ে তাকালো সুরাইয়ার দিকে। সুরাইয়া অনুভবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনাকে কি কথা বলাতে এখন বম মারতে হবে নাকি। এতো কথা চাপিয়ে রাখলে তো আপনার পেটটা পেশার কুকার হয়ে যাবে।”
সুরাইয়ার আজগবি কথা আর শুনতে না পেরে অনুভব কানে ইয়ারফোন দিয়ে সামনে চলতে লাগল। সুরাইয়া মুখ ভেংচি কাটলো।
—————————
দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেকটা সময়। আর কিছুক্ষণ পর বন্যা আর রাকিবের গায়ে হলুদ। সবাই ব্যস্ত যে যার মতো রেডি হতে। ছেলেরা আজ কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবী আর মেয়েরা আজ কাঁচা হলুদ রঙের পড়বে।
বন্যা আজকে গাঢ় সবুজ রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। সাথে কাঁচা ফুলের গহনা। হালকা মেকআপ এ মেয়েটাকে বেশ সুন্দর লাগছে। আমায়রা নিজ হাতে বন্যাকে সাজিয়ে দিয়েছে। হাতে ফুলের মালা পড়িয়ে দিতেই বন্যা আমায়রার হাত ধরে বলল,
“তুই সাজবি না?”
আমায়রা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“আরে বন্যা আপু এখনো রিমু (বন্যার কাজিন), রিশা(বন্যার কাজিন)নূরকে সাজানো বাকি তো। নূর তো জিদ ধরে বসে আছে আমার কাছেই সাজবে।”
বন্যা আমায়রা টেনে ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“আজকে আমি তোকে সাজিয়ে দিবো।”
“আমি পারবো তো বন্যা আপু।”
“চুপ করে থাক। শাড়ি পরতে পারিস।”
আমায়রা আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে ওতো সুন্দর হয়না কোনোমতে পারি।”
বন্যা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“শাড়ি নিয়ে আয় আমার কাছে।”
“কিন্তু আপু তুমি আমাকে শাড়ি পড়াতে গেলে তো তোমার শাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।”
পাশ থেকে রিশা বলে উঠলো,
“আপু আমি আমু আপুকে শাড়ি পড়িয়ে দেই।”
বন্যা রিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যা তাড়াতাড়ি পড়িয়ে দে।”
আমায়রাকে বেশকিছুক্ষণ সময় নিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দিলো রিশা। শাড়ি পড়ানো শেষে বন্যা বলল,
“এদিকে আয় সাজিয়ে দেই।”
আমায়রা এগিয়ে গেল বন্যার দিকে। বন্যা আমায়রাকে হালকা করে সাজিয়ে দিলে। চুল আছড়িয়ে দিয়ে কানের পিঠে এক টকটকে লালগোপাল সেট করে দিলো। সব সেট করে বন্যা তীক্ষ্মচোখে আমায়রার দিকে তাকিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করে মুচকি হেসে বলল,
“আমু তোকে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আজ তোরও গায়ে হলুদ দিয়ে দেই।”
আমায়রা বন্যার কথায় লজ্জা পেল।
“বন্যা আপু তুমিও না।”
রায়ান নূরকে নিয়ে বন্যার রুমের দরজায় নক করে বলল,
“আসলে পারি?”
বন্যা সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“ওও রায়ান ভাই আসো।”
রায়ান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“আসলে নূর সাজার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিলো। বন্যা তোমার বোন কোথায়?”
আমায়রা পিছু ঘুরে তাকাতেই রায়ানের চোখ আটকে গেল। মুখের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে সে। কাজল কালো চোখের সেই গভীরতা যেন রায়ানকে টানছে। গোলাপি লিপস্টিকে রাঙা পাতলা ঠোঁটগুলো আকৃষ্ট করছে ক্ষণ ক্ষণে। কোমর অব্দি ঘন কালো চুলগুলো ছেড়ে রাখায় এক অপরূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে যেন। কাঁচা হলুদ রঙের এককালার শাড়ি পরিহিত নারীর দিক থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পরেছে। বুকের ভিতর যেন হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমেছে। না এখানে আর বেশি সময় থাকা যাবেনা। থাকলেই অঘটন ঘটবে।
রায়ান কোনোমতে নূরকে বন্যার কাছে দিয়ে দ্রুততার সাথে রুম ত্যাগ করলো।
সবাই রায়ানের বিষয়টা খেয়াল না করলেও আমায়রার কপাল কুচকে এলো রায়ানকে এমন অস্বাভাবিক লাগলো কেন? উনি ও অসুস্থ। আমায়রার ভাবনার মাঝেই নূর আমায়রার শাড়ির আঁচল ধরে বলল,
“বার্বি ডল তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
আমায়রা মুচকি হেসে কিছুটা ঝুকে নূরের গাল টেনে বলল,
“তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে কিউটি।”
নূর মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না না আমি তো এখনো সাজিই নি।”
আমায়রা মুচকি হেসে নূরকে সাজাতে লাগলো।
রায়ান দ্রুত পায়ে ছাদে গেল। আবিরের পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে অস্থির কন্ঠে বলল,
“পানি দে আবির। পানি দে। আমি মরে গেলাম পানি দে তাড়াতাড়ি।”
আবির দ্রুত খুঁজে একটা শরবতের গ্লাস নিয়ে এসে রায়ানের দিকে এগিয়ে দিলো। রায়ান এক ঢোকে পুরো শরবতটা খেয়ে হাঁপাতে লাগল। জোর জোরে নিশ্বাস নিতে লাগল। আবির অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
“ভাই তোমার কি শরীর খারাপ করছে?”
“জানিনা”
“বেশি খারাপ হলে বলো ডাক্তার কাছে নিয়ে যাই।”
রায়ান বিরক্তি নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“চুপ যা বলদের ঘরের বলদ।”
#চলবে
#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ২০
আবির বুঝতে পারছেনা কিছু। রায়ানের হাবভাব মটেই ভালো লাগছে না তার। কি সব আজব কারবার করছে।
আবিরের ভাবনার মাঝেই বন্যাকে আনা হলো। বন্যাকে বসানো হলো রাকিবের পাশে। আমায়রা বন্যাকে রাকিবের পাশে বসিয়ে অনুভবকে খুঁজতে চারিপাশে চোখ ঘুরাতে লাগলো। হুট করেই তার চোখ পরলো কলাপাতার রঙের পাঞ্জাবী পরিহিত রায়ানের দিকে। রায়ানের চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে টেবিল ফ্যানের বাতাসে। বারবার নাকের উপর থেকে ঠেলে চোখের উপর রাখছে চিকন ফ্রেমের চশমাটা। ফর্সা গালে চাপ দাঁড়িতে বেশ সুদর্শন লাগছে রায়ান। কাজিনদের সাথে কথা বলছে আর বাঁকা হাসছে। এর আগে তেমন একটা খেয়াল করেনি আমায়রা রায়ানের সেই বাঁকা হাসি। আর করবেই বা কিভাবে যখনি আসে তখনি তো ঝগড়া করে। বদ লোক একটা।আমায়রা এক পলক সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
পুনরায় আমায়রা মন দিলো অনুভবকে খুঁজতে। বেশকিছুক্ষণ অনুভবকে দেখছেনা। মনের মাঝে চিন্তা হচ্ছে বেশ আমায়রার। আমায়রা খুঁজতে খুঁজতে স্টেজের অপর পাশে চলে এলো। ছাদ দুটো লাগালাগা হওয়ার বেশ সুবিধা হয়েছে। একছাদ থেকে অপর ছাদে যেতে বেশি বেগ পেতে হয় না। খুব সহজেই যাওয়া যায়। হলুদের স্টেজটা রাকিবদের ছাদের পুরো অংশটা মিলেই হয়েছে।
আমায়রা বন্যাদের ছাদের দিকে তাকাতেই দূরে একটা আবছা কাউকে দেখতে পেল। পিছন থেকে দেখে চিনতে বেশি সময় লাগল না তার। আমায়রা ধীর পায়ে এই ছাদ থেকে ওই ছাদে চলে গেল। অনুভবের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে নরম গলায় বলল,
“কান্না করছো ভাইয়া!”
আচমকা কারো গলা পেয়ে পেয়ে চমকে উঠলো অনুভব। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
“ধুরু কান্না করতে যাবো কেন? তোরও না যতসব আজগুবি কথা।”
আমায়রা হাসলো। সামনের পুকুরের কালোঘুটঘুটে পানির উপর বিভিন্ন রঙের লাইটের আলোতে এক অদ্ভুত রকম লাগছে। আমায়রা সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলল,
“তোমার কপালে বন্যা আপু ছিলো না। হয় তো আল্লাহ তোর জন্য অন্য কাউকে রেখেছেন। ভুলে যাও না বন্যা আপুকে।”
আমায়রার কথা শুনে অনুভব মলিন হাসলো। খানিকটা দমে গিয়ে বলল,
“ভুলে যাওয়া কি এতোই সহজ!”
অনুভবের কথার পিঠে কি বলবে বুঝতে পারলো না আমায়রা। তার ভাইটা হাসির মধ্যে কতটা কষ্ট পুষে রেখেছে বুঝতে বাকি নেই তার। সে যদি পারতো তাহলে বন্যা আপুকে জোর করে হলেও অনুভবের হাতে তুলে দিতো। কিন্তু রাকিব আর বন্যা যে একে অপরকে ভালোবাসে।
আমায়রা আর অনুভবের নিরবতার মাঝেই এক গম্ভীর ভরাট পুরুষালি কন্ঠে ভেসে এলো,
“যদি বলি ভুলে থাকা যায়।”
আমায়রা আর অনুভব দুইজনই পিছনে ঘুরে তাকালো। আবছা আলোই রায়ানের মুখটা ভেসে উঠলো। রায়ান মুচকি হেসে অনুভবের কাছে এসে বলল,
“অনুভব ভাই সবাইকে অতীত ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। বন্যাকে যেহেতু নিজের করতে পারবেনা। তাহলে এখনি নিজের ফোন থেকে ওর সব ছবি ডিলিট করে দিন। জানেন তো কথায় আছে চোখের আড়াল মনের আড়ালো। আপনি যতই ভালোবাসেন দূরত্ব বাড়লে তা একসময় ফিকে হয়ে আছে। হয় তো একেবারে পারবেন না। তবুও চেষ্টা করতে হবে । বর্তমানে হাজারো একতরফা ভালোবাসা হেরে যায় রাতের আঁধারে। একতরফা ভালোবাসা গুলো সবসমই অবহেলিত।”
রায়ান কিছুক্ষন দমে গিয়ে আবারো বলতে লাগল,
“দুইদিনের জীবনে কষ্ট পুষিয়ে রাখা বোকামি। নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের পছন্দের মানুষকে তো পেলেন না এবার না হয় সবটা সৃষ্টিকর্তার উপরেই ছেড়ে দিন। উনি আপনার জন্য বরাদ্দকৃত সঠিক মানুষটাকে সঠিক সময় এনে দিবেন। সবুর করুন। দেখবেন ফল ভালো হবে।”
হুট করেই অনুভব এসে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো। রায়ান আলতো হেসে অনুভবের পিঠে হাত রাখলো।
আমায়রা কৃতজ্ঞতা দৃষ্টিতে তাকালো রায়ানের দিকে। সে কোনোদিনও এমন করে বোঝাতে পারতো না। মনে মনে দোয়া করতে লাগল তার ভাইটা যেন এই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারে।
খানিকবাদে রায়ান বলল,
“আমাদের এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত। সবাই খুঁজছে হয় তো।”
রায়ানের কথায় সম্মতি দিলো আমায়রা আর অনুভব।
আবিরের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো অনুভব আর রায়ান।
আমায়রা রিমু রিশা ওদের পাশে গিয়ে বসলো।
কিছুক্ষণ পরেই নেহা এসে দাঁড়ালো রায়ানের সামনে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলল,
“রায়ান ভাই, দেখো তো আমায় কেমন লাগছে?”
রায়ান ফোনে কথা বলছিলো। ইশারায় নেহাকে চলে যেতে বললেও সে যায়না। রায়ান বেশ বিরক্ত হলো। নাকমুখ কুচকে আশেপাশে আবিরকে খুঁজলো। কিন্তু না আশেপাশে তো নেই। কিছুক্ষন ফোন কাটতেই নেহা আবারো একই কথা জিজ্ঞাসা করলো। রায়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,
“সরে যা চোখের সামনে থেকে। যেটা পরতে পারিস না পরতে যাস কেন। শালীনতা বজায় রেখে যদি কিছু নাই পরতে পারিস তাহলে আর পরার দরকার নেই।”
নেহার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে গেল। রায়ান আবারো বলে উঠলো,
“চোখের সামনে থেকে সরতে বললাম না তোকে। এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
নেহা আর কিছু বলার মুখ পেলনা ছুটে চলে গেল। রায়ানের রাগ উঠেছে। এই মেয়েকে দেখলেই তার মাথার রগ গুলো দপদপ করে রাগে। রায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো তখনি তার পাশে এসে বসে আবির।
রায়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তোর বোনকে সামলা তাছাড়া কিন্তু ওরে গুম করে দিবো বলে দিলাম।”
আবির মনের সুখে জুস খেতে খেতে বলল,
“বিয়া করে ফেলো।”
রায়ান হুট করে তাকালো আবিরের দিকে। আবির ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। রায়ান ভ্রুকুচকে জিজ্ঞাসা করলো,
“বিয়া করতে মাইয়া লাগে। মাইয়া কোথায় পামু ক আমারে?”
আবির কিছুটা ভাবুক দৃষ্টিতে এপাশ অপাশ তাকালো। তারপর রায়ানের কানে কি যেন বলল। রায়ান মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“জীবনেও সম্ভব না।”
আবির পাঞ্জাবীর কলার ঝাঁকিয়ে ভাব নিয়ে রায়ানকে ভাঙ্গিয়ে বলল,
“আমি রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী অসম্ভবকে সম্ভব করাই আমার কাজ।”
রায়ান সরু চোখে তাকালো আবিরের দিকে। আবির ভ্রু নাঁচালো। রায়ান বলল,
“দাঁড়া তুই”
আবির ছুটতে লাগলো। পিছনে পিছনে রায়ান ছুটতে লাগলো। আবিরকে আর কে পায়। এখন রায়ান হাতের কাছে পাইলে জ্যান্ত চিবিয়ে খাবে।
আমায়রা ওদের ছুটতে দেখে কপাল কুচকে তাকালো সেদিকে। একটু আগেই তো ভেবেছিলো রায়ান হয়তো ভালো হয়ে গেছে। এই বদমাইশ জীবনেও ভালো হবে না। হবেই বা কেমনে ব্যাটার কোষে কোষে শয়তানি। কোন শেওড়া গাছের পেত্নির আত্মা আছে আল্লাহ ভালো জানে। উহু পেত্নি তো হবে না পেত্না হবে।
“আমার কথা ভাবছো বুঝি, যমরানী!”
আমায়রার ভাবনায় ছেদ ঘটলো রায়ানের কথায়। কপাল কুচকে তাকালো পাশে দাঁড়ানো রায়ানের দিকে। সে একটু ঝুঁকে বাঁকা হেসে তারদিকেই তাকিয়ে আছে।
“আমার তো খাইয়া দাইয়া কাম নাই আপনার মতো বদ লোককে নিয়ে ভাববো। আজব পাবলিক।”
রায়ান হাসলো। আমায়রা খোলাচুলগুলো হাত খোঁপা করে রেখেছিলো। রায়ান টান দিয়ে সেই খোঁপা খুলে দিলে হাসতে হাসতে কেটে পরলো সেখান থেকে।
আমায়রা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো রায়ানের দিকে। কি হলো এটা? বদলোক এটা কি করে গেল। এর প্রতিশোধ সে নিবেই। এই লোক তো ইদানিং বেশ বেড়েছে দেখা যাচ্ছে টাইট তো দিতেই হবে।
অনুভব চুপচাপ বসে ছিলো তখনি সুরাইয়া এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“কি বম মার্কা বোবা মাস্টারমশাই একা একা বসে কি করছেন?”
অনুভব ভ্রুকুচকে তাকালো সুরাইয়ার দিকে। মেয়েটা আজ হলুদ রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। চুলগুলো বেশি বড় না পিঠ অব্দি ছেড়ে রেখেছে। আমায়রার মতো কানের পিঠে গোলাপ গুজেছে। গোল মুখটায় এখনো বাচ্চা বাচ্চা ভাব রয়েই গেছে। অনুভব গম্ভীর কন্ঠেই বলল,
“কোন ক্লাসে পড় তুমি?”
অনুভবের এই কথাটা হয় তো পছন্দ হয়নি সুরাইয়ার। নাকমুখ কুচকে বলল,
“সব বাদ দিয়ে আপনার পড়াশোনা নিয়ে কেন কথা বলা লাগবে?”
অনুভব হাসলো।
“এই মিয়া আপনি হাসছেন কেন?”
অনুভব কিছু বললো না। সুরাইয়া তীক্ষ্মচোখে অনুভবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সুন্দর দেখে ভাব দেখাচ্ছেন?”
অনুভব এবার তাকালো সুরাইয়ার দিকে। মেয়েটার তীক্ষ্মদৃষ্টি বারংবার থতমত খাওয়াচ্ছে তার মতো স্ট্রং পুরুষকে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে অনুভব বলে উঠলো,
“তোমার বয়স এখনো কম। আবেগ কে দমিয়ে রেখে পড়ালেখায় মন দেও। জীবনে কিছু করতে পারবে।”
বলেই অনুভব উঠে গেল সেখান থেকে। অনুভব যাচ্ছিলো তখনি পিছন থেকে ইসহাক সাহেব ডেকে বললেন,
“অনুভব তুমি হলুদ মাখাবে না?”
অনুভব নিজ মনেই বিরবিরিয়ে বলল,
“নিজের মাইয়ারে আমারে হাতে দিলোনা। এখন আবার কয় হলুদ দিবা না। ঢং যতসব।”
অনুভব পিছনে ঘুরে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে এগিয়ে গেল।
হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে হলুদ ছোঁয়ালো বন্যার গালে। ভিতরে তার তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। হায়রে ফাটা কপাল প্রিয়সীর গায়ে হলুদ লাগিয়ে অন্য ব্যাটারে দিয়ে দিচ্ছে।
বন্যার পাশ থেকে সরে এসে রাকিবের গালে হলুদ ছুঁয়ে মনে মনে বলল,
“হালার কপাল কি ভালা ভাবা যায়। আমার বন্যারে পাইলো। অবশ্য আমি ছাড়লে পাইতে কেমনে। যাক গে খাক খেলুক খুশি থাকুক।”
অনুভবের এসব আজগুবি ভাবনার ছেদ ঘটলো সুরাইয়ার ডাকে। সুরাইয়া অনুভবের পেটে কুনিই দিয়ে গুতো দিয়ে বলল,
“আবেগ নিয়েই থাকবো আপনি কে বলার?”
অনুভব কপাল গুটিয়ে তাকালো সুরাইয়ার পানে। সুরাইয়া ভেংচি কাটলো। সাহস কত বড় এই পুচকি মাইয়ার এই দামড়া পোলারে হুমকি দেয়, গুতা দেয় আবার কিল ও দিছিলো ভাবা যায়। অনুভবকে চুপ করে কপাল গুটিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুরাইয়া ভ্রুকুচকে বলল,
“নেহাত ক্রাশ খাইছি দেখে কথা কইতে আসি। তাছাড়া জীবনেও আপনার মতো বম মার্কা পেশার কুকারের সাথে জীবনেও কথা বলতাম না।”
বলেই আবারো মুখ ভেংচে চলে গেল সুরাইয়া। অনুভব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সুরাইয়ার যাওয়ার দিকে।
#চলবে