অতল গহ্বরে নীরবতা পর্ব-২১+২২

0
291

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ২১(বোনাস পার্ট)

কেটে গেছে বেশ কিছুটা সময় কাজি বন্যাকে কবুল বলতে বলছে। অনুভব আর সেই জায়গায় দাঁড়াতে পারলো না। সেখান থেকে খানিকটা দূরে সরে গেল। সাদা পাঞ্জাবীর পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালো।

বন্যা আমায়রার হাত ধরে কাঁপা কন্ঠে কবুল বলে দিলো। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। সুন্দরভাবে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেল। আমায়রার কল আসতেই সে একটু দূরে সরে এলো। কল রিসিভ করে কানে দিতেই অপরপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে ভেসে উঠলো,
“নাম্বার ব্লক করে দিলেই কি বর বউকে ভুলে যযায় বলো তো। বরটাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে তাই না। দেখো এর বদলা আমি নিবো।”

আমায়রা ভ্রুকুচকে ফেলল। এ তো সেই ব্যাটা যে ওকে মেসেজ দিছিলো। আমায়রা রাগে নাক ফুলিয়ে বলল,
“সাহস থাকলে সামনে আয় শালা। কি ফোনে ফোনে বউ বউ করিস ফাজিল ব্যাটা মানুষ।”

বলেই কল কেটে দিলো আমায়রা। আবারো নাম্বারটা ব্লক লিস্টে ফেলল। ধুপধাপ পায়ে সামনে এগোতেই রায়ান এসে দাঁড়ালো তার দিকে। আমায়রা একপলক তাকালো রায়ানের দিকে। আজকে তার পরনে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী সাথে নেভি ব্লু জিন্স। আমায়রা কপাল গুটিয়ে বলল,
“কি চাই আপনার? এক পাগলের জ্বালায় বাঁচি না আবার আরেক পাগল।”

রায়ান ভ্রু কুচকে বলল,
“আরেক পাগল মানে কে আবার তোমাকে জ্বালাচ্ছে।”

আমায়রা ক্ষিপ্ত দৃষ্টি রায়ানের উপর দিয়ে বলল,
“আপনার সতীন হয়েছে।”

বলেই গটগটিয়ে চলে গেল। রায়ান আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো আমায়রার যাওয়ার দিকে।

আজ আমায়রা হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি লেহেঙ্গা স্টাইলে পরেছে। লম্বাচুলগুলো বেনি করে পিঠের উপর ছেড়ে রেখেছে। রাবেয়া বেগম নূরকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু নূর কিছুতেই খেতে চাচ্ছে না। নূরের দৃষ্টি আমায়রার উপর পরতেই সে ডেকে উঠলো,
“বার্বি ডল”

নূরের ডাক কানে আসতেই আমায়রা চোখ ঘুরিয়ে এপাশ অপাশ দেখলো। নূরকে দেখতে পেয়ে তার রাগ সব চলে গেল। সে মিষ্টি করে হেসে নূরের কাছে গেল। নূরও একগাল হাসলো।

রাবেয়া বেগম নূরকে হাসতে দেখে চোখ তুলে তাকালেন আমায়রার দিকে। সত্যিই মেয়েটাকে বার্বি ডলের মতোই দেখতে। হয়তো গায়ের রঙ ধবধবে সাদা নয় তবুও সারা মুখে যেন এক অদ্ভুত মায়া। রাবেয়া বেগম মুচকি হেসে বললেন,
“তোমার কাছে খায় নাকি দেখো তো। অনেকক্ষন চেষ্টা করছি খাওয়া নিয়ে।”

আমায়রা মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা আন্টি আমি দেখছি সমস্যা নেই।”

★★

সময়ের পরিক্রমায় কেটে গেছে বেশ কিছু দিন। গ্ৰাম থেকে সবাই ফিরে এসেছে যে যার ব্যস্ত জীবনে। রায়ান তার বাবার অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। অনুভব কলেজ নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। আমায়রাও ভার্সিটি নিয়ে ব্যস্ত।

আজ ভার্সিটি যাবে রায়ান। রেজাল্ট বের হওয়ার কথা। ইয়াসিন আর আহাদকে নিয়ে রেজাল্ট বোর্ড দেখতে গিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো রায়ানের। সেই প্রথম হয়েছে। আহাদ হাসিমুখে বলল,
“ট্রিট দে মামা”

রায়ান হাসিমুখে দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“চল দিচ্ছি আজ আম্মুর হাতে বিরিয়ানি খাওয়াবো যাহ।”

ইয়াসিন কপাল গুটিয়ে বলল,
“শুধু এই ট্রিট নিবো না অন্য ট্রিট চাই।”

রায়ান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো ইয়াসিনের দিকে। আহাদ ইয়াসিনের কথায় সম্মতি দিয়ে বলল,
“হ হ আমরা তোর বিয়া খাইতে চাই।”

রায়ান মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“প্রেম করিস তোরা আর বিয়া করমু আমি এটা কোনো কথা।”

ইয়াসিন মাথা নাড়িয়ে বলল,
“প্রথম হয়েছিস তুই তাই তুই আগে বিয়া করবি।”

রায়ান আহাদ আর ইয়াসিনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আচ্ছা বাবা করবোনি সময় হলে।”

কথা বলতে বলতে খানিকটা সামনে যেতেই থমকে দাঁড়ালো রায়ান।

খানিকটা দূরে আমগাছের পাশে আমায়রার সামনে ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে শিহাব। রায়ানের কেন যেন বেশ রাগ হচ্ছে। ভিতরে যেন আগুন জ্বলছে। রায়ান চোখ বুজে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস ফেলল। শরীর কাঁপছে রাগে। কেন এতো রাগ হচ্ছে জানা নেই তার। ফর্সা মুখ রক্তলাল বর্ণধারন করেছে।

ইয়াসিন আর আহাদ রায়ানকে হুট করে এমন করতে দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগল কি হয়েছে তার। কিন্তু তাদের কথা যেন কানে যাচ্ছেনা রায়ানের। রায়ান এগিয়ে যেতে নিবে তার আগেই আরো বড় ধাক্কা খেল সে। আমায়রা হাত বারিয়ে ফুলগুলো নিয়েছে।

রায়ানের রাগের পরিমাণ যেন আরো বেড়ে গেল। রায়ান যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পরেছে। রায়ান আর দাঁড়ালো না উল্টো পথে হাঁটা দিলো। বাইকে চেপে বাইক স্টার্ট দিলো। ঠান্ডার প্রকোপ থাকলেও রায়ানের কাছে যেন গ্ৰীষ্মকালের উত্তপ্ত গরম অনুভূত হচ্ছে। জ্যাকেটের ভিতরের সাদা টিশার্ট ঘেমে একাকার অবস্থা। কপাল বেয়ে ঘাম পরছে। চোখও লালবর্ণ ধারণ করেছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগল রায়ান।

বেশ জোরেই বাইক চালাতে লাগল রায়ান।

——————

অনুভব ক্লাস শেষ করে বের হতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। অনুভব ফোন বের করে দেখলো অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে। অনুভব ভ্রুকুচকে ফেলল। কল রিসিভ করে কানে ধরেই স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো,
“আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”

অপরপাশ থেকে বেশ বিরক্তি নিয়ে সুরাইয়া বলে উঠলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমারে চেনবেন কেমনে আমি তো আবেগে ভেসে বেরানো আপনার চোখের বিষ।”

অনুভবের কুচকানো কপাল আরো কুচকে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেলে?”

সুরাইয়া মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“তা জেনে কি করবেন?”

অনুভব তাড়া দিয়ে বলল,
“কল রাখো আমি কলেজে আছি।”

সুরাইয়া চটজলদি বলল,
“দাঁড়ান দাঁড়ান কল কাটলে কিন্তু আপনাকে কিল মারবো।”

“আমাকে তুমি কোথায় পাবে যে মারবে?”

সুরাইয়া কুটিল হেসে বলল,
“কাব কেয়া হোতা হে কন জানতা হে মাস্টারমশাই।”

অনুভব ভ্রুকুচকে বলল,
“কল রাখো”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো অনুভব। সুরাইয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামরে হাসলো।

অনুভব একরাশ বিরক্তি নিয়ে কলেজ থেকে বের হলো। মেয়েটা বেশকিছুদিন যাবত তাকে বিরক্ত করছে।

অনুভব বাইকে বসলো। এখন সে কোচিং ক্লাসে যাবে। কলেজ শেষে একটা কোচিং ক্লাসে ক্লাস করায় অনুভব। সেখান থেকেই বাসায় যায়। আমায়রাকে সকালে ভার্সিটি দিয়ে আসলেও নিয়ে আসার সময় করে উঠতে পারেনা সে। রায়ানের কথামতো বন্যার সকল ছবি ডিলিট করে ফেলেছে। কাজ হয়েছে একটু খানি। যতটা সম্ভব বন্যাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে।

——————

তাজওয়ার সাহেব বাসায় ফিরে দেখলেন সোফায় রাবেয়া বেগম চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। পাশেই নাইমাও চিন্তিত হয়ে বসে আছে। তাজওয়ার সাহেব ভ্রুকুচকে গম্ভীর সুরে বললেন,
“কি হয়েছে তোমরা এভাবে বসে আছো কেন?”

স্বামী গলা পেয়ে রাবেয়া বেগম অস্থির হয়ে বলে উঠলেন,
“রায়ান সকাল থেকে কল রিসিভ করছেনা। ওর কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা। রাত তো অনেক হলো।”

তাহসান ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“দাঁড়া কল করছি।”

নাইমা এগিয়ে এসে বলল,
“লাভ নেই ধরছেনা।”

তাজওয়ার সাহেব কপালে ভাঁজ গাঢ় করে বললেন,
“আজ তো রেজাল্ট দেওয়ার কথা সে ব্যাপারে কিছু জানো?”

রাবেয়া বেগম নাবোধক জবাব দিলেন। সবার চোখ মুখে চিন্তার ছাঁপ যেন বেড়ে গেল।

#চলবে

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ২২(রায়ানের সিদ্ধান্ত)

তাহসান প্যান্টের পকেটে থেকে ফোন বের করে রায়ানকে কল করতে যাবে তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো। আবির দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নেমে বলল,
“রায়ান ভাই এসেছে। তোমরা থাকো আমি দরজা খুলছি।”

বলেই কারো উত্তরের অপেক্ষা না করেই ছুটে গেল দরজা কাছে। দরজা খুলতে হতভম্ভ হয়ে গেল সে। একি অবস্থা রায়ানের। এলোমেলো চুল জ্যাকেট কোমরে বাঁধা, গায়ের টিশার্ট ঘেমে একদম বিধস্ত অবস্থা। আবির কিছু বলতে নিবে তার আগেই রায়ান পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আবিরও ওর পিছু পিছু গেল।

রায়ানকে এই অবস্থায় দেখে সবাই অবাক। রায়ান ধপ করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে বসে রইলো।

সবাই হাজারো প্রশ্ন করছে যে এতক্ষন সে কোথায় ছিলো? কি হয়েছে? ফোন ধরছিলো না কেন? এই অবস্থা কেন তার?

কিন্তু রায়ান নিশ্চুপ। আবির খেয়াল করলো রায়ানের বাম হাত কেটে রক্ত জমে আছে। আবির দ্রুত ফাস্টএড বক্স নিয়ে এসে রায়ানের পাশে বসে ওর হাত ধরতে নিবে তখনি রায়ান ঝট করে চোখ খুললো। হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে রক্তলাল চোখে আবিরের দিকে তাকালো। আবির তার তাকানিতে দমে গেল।

রায়ান এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে তাজওয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আব্বু আমি বিয়ে করবো।”

ছেলের হঠাৎ বলা কথায় তাজওয়ার সাহেব বিষম খেলেন। একজন সার্ভেন্ট তাকে পানি এনে দিলো। উনি পানি খেতেই রায়ান আবার বলে উঠলো,
“কালকেই বিয়ে করবো। এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।”

আবির, নাইমা, রাবেয়া বেগম অবাক। হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে রায়ানের দিকে। তাহসান গলা খাকারি দিয়ে বলল,
“রায়ান এগুলো তুই কি বলছিস, তুই ঠিক আছিস তো।”

রায়ান শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমি একদম ঠিক আছি।”

তাজওয়ার সাহেব ধপ করে সোফায় বসে পরলো। শান্ত কন্ঠে বলল,
“মেয়েটা কে? বাবার নাম কি? আমরা কি চিনি?”

রায়ান একটু নড়েচড়ে বসলো। বারকয়েক চোখ পিটপিট করে বলল,
“মেয়ের নাম আমায়রা রহমান নিশাত। মেয়ের বাবার নাম আজিজ রহমান। তোমরা সবাই চিনো ভালোভাবে।”

রায়ানের কথা শুনে ঘরে যেন পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। তাজওয়ার সাহেব, আবির, রাবেয়া বেগম—সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন পুরো ব্যাপারটা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। নিরবতা ভেঙে হুট করেই আবিরের বিষম উঠে গেল। রাবেয়া বেগম ওকে পানি দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

তাহসান একটু বিরক্তির স্বরে বলল,
“তোর আচরণ ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না রায়ান। তুই যেন হুট করে একটা সিদ্ধান্তে চলে আসলি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না।”

রায়ান কণ্ঠ দৃঢ় করে বলল,
“আমি যা বলেছি, ভেবেই বলেছি, ভাইয়া। কালই বিয়ে করবো। এটাই চূড়ান্ত।”

তাজওয়ার সাহেব নরম কন্ঠে বললেন,
“দেখো ইশতিয়াক বিয়ে কিন্তু ছেলেখেলা নয়। মন চাইলো করলাম। পরে আবার মন চাইবে ছেড়ে দিবো।”

রায়ান দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,
“আমি কখনোই না ভেবে ডিসিশন নেই না। আমি জানি বিয়েটা কি। আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না।”

তাজওয়ার সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
“কিন্তু বিষয়টা তে তো সময় দরকার। কালকে বললেই তো কালকে হবেনা। আগে ওদের বাসায় প্রস্তাব দিতে হবে। তারা রাজি হলে ডেট ঠিক করতে হবে। কত কাজ আছে।”

রায়ান নাক মুখ কুচকে বলল,
“তোমরা এই বিয়েতে রাজি নাকি তাই বলো।”

“রাজি হবোনা কেন? মেয়ে ভালো পরিবারও বেশ ভালো। রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

রায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে আবারো হনহনিয়ে বাড়ির বাইরে যেতে যেতে বলল,
“আবির হা করে বসে না থেকে আয় তাড়াতাড়ি তোর ভাবি আনতে যাবিনা।”

আবির রায়ানের পিছু পিছু ছুটে যেতে লাগল। সবাই শুধু হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রায়ানের দিকে।তাজওয়ার সাহেব কিছু বলার আগেই ছেলে তার চলে গেছে। সময় সময় মনে হয় ছেলে তার অদলবদল হয়ে গেছে হাসপাতালে। কত স্বাভাবিক ভাবে এসে বলে দিলো সে বিয়ে করবে। এখন আবার কত বড় সাহস কারো কথা না শুনেই বেড়িয়ে গেল আবিরকে নিয়ে। অবশ্য সেও রাবেয়া বেগমকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু রায়ানের মতো আর পরিবারকে সব জানিয়ে এমন করে যায়নি।

তাজওয়ারসাহেব রাবেয়া বেগমের দিক তাকিয়ে বললেন,
“এ কার মতো হয়েছে? যখন যা মন চায় তাই করে।”

রাবেয়া বেগম সরু চোখে তাকালেন তাজওয়ার সাহেবের দিকে তাকালেন। তাজওয়ার সাহেব আমতা আমতা করে চোখ ঘুরালেন।

তাহসান চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“কিন্তু রায়ান এখন কি করতে গেল?”

তাজওয়ার সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“বলেই তো গেল। এখন পরবর্তী ধাক্কা খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেও।”

নাইমা বলে উঠলো,
“তাহলে এখন আমরা কি করবো বাবা?”

“এখন ও ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করা ছাড়া উপায় নেই।”

রাবেয়া বেগম খানিকক্ষণ পর বললেন,
“আমরা তো আগে আজিজ সাহেব আর আমেনা ভাবির সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলাম ছেলে মেয়েকে নিয়ে। আমাদের কি উচিত না সবটা ওনাদের জানানো।”

তাজওয়ার সাহেব ভাবুক কন্ঠে বললেন,
“জানাবোটা কি যে ছেলে হুট করে বিয়ে করতে গেছে আপনার মেয়েরে দিয়ে দেন।”

রাবেয়া বেগম দমে গেলেন। আসলেই তো কি বলবেন কল দিয়ে।

———————

রায়ান তার কালো গাড়িটা বের করেছে। নিজেই ড্রাইভিং করছে সে। পাশেই আবির কাচুমাচু করে বসে আছে। রায়ান গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,
“কাজি ব্যাটারে কল দিয়ে আমার শশুর বাড়ি আইতে ক। আজ রাইতেই আমি বিয়া করে বউ ঘরে তুলমু।”

আবির খানিকটা ইতস্তত গলায় বলল,
“কিন্তু ভাই তোমাদের তো আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। তোমরা বিয়ে করবে।”

রায়ান সরু চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তো আমার বিয়া আমি করমু। তোরে তো বিয়া করতে বলিনি। তোর কিসের সমস্যা।”

“আসলে ভাই…, ”

আবিরকে থামিয়ে দিয়ে রায়ান বলল,
“কাজির আসতে যদি দেড়ি হয় তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে বলে দিলাম।”

আবির ঢক গিলে তাড়াতাড়ি কাজির নাম্বার খুঁজতে লাগল।কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। ভীতু চোখে রায়ানের দিকে তাকাতেই রায়ান ব্রেক কষলো। কাটকাট গলায় বলল,
“গাড়ি থেকে নাম। কাজি খুঁজে আধা ঘন্টার মাঝে আমার শশুরবাড়িতে হাজির হবি। আর ভালো কথা মিষ্টি আর ফুলে মালাও আনবি।”

আবির অসহায় দৃষ্টিতে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাই রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। এতক্ষনে হয় তো সব বন্ধ হয়ে গেছে।”

রায়ান নাক মুখ কুচকে বলল,
“এসব আমি কিছু জানিনা। তোরে আনতে কইছি তুই আনবি। তাছাড়া তুই হাউন আঙ্কেল।”

আবির মাথা চাপড়ালো। রায়ান ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। আবির সেদিকে তাকিয়ে দাঁত পিষে বলে উঠলো,
“তুই শালা হাউন আঙ্কেল। এত রাতে আমারে কিসব কাম দিয়া গেল আমারে। আগে নিয়া কইতো মানুষ তুলতে এখন বউ তুলতে নিয়া আইছে। তোর বউ তোর ঝাটা ধরবে বলে রাখলাম। বদ ব্যাটা, বিয়া করতে চাইছিস তো বিয়া কইরাও শান্তি পাবিনা। ওই ঝগড়াই করবি জানি তো আমি। আমার থেকে ভালো তোরে কে চেনে। নেহাত তোরে ভয় পাই দেখে তোর কথা শুনি। তাছাড়া জীবনেও শুনতাম না।”

আবিরের বিরবিরানোর মাঝে তার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন পকেট থেকে বের করতেই দেখলো ফোনে জ্বলজ্বল করছে বিটকেল নামটা।

আবির নাকমুখ কুচকে কল রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে রায়ান বলে উঠলো,
“অবতারের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যে কাজ দিছি ওইটা কর। এখনো অনেক কাজ আছে। আজকে যদি আমার বউ ঘরে তুলতে না পারছি তাহলে তোর বউও জীবনে ঘরে উঠবেনা বলে দিলাম।”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো রায়ান। আবির ফোনটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে নিজ মনেই বলল,
“শালা কিছু হলেই আমার বউ সংসার নিয়ে টানাটানি করে। এমনি কি আর বিটকেল নাম দিছি। আরো নাম দেওয়া উচিত। হিটলারের নানা শশুর হলেও কম হয়ে যায়।

————————

সবার জোরাজোরিতে তাজওয়ার সাহেব কল করলেন আজিজ সাহেবকে। আজিজ সাহেব রাতের ঔষধ খাচ্ছিলেন। তাজওয়ার সাহেব কল পেয়ে মুচকি হেসে কল রিসিভ করে সালাম দিলেন। দুইজনই একে অপরের খোঁজখবর নিয়ে তাজওয়ার সাহেব বললেন,
“ভাই বড় বিপদে পড়ে আপনাকে ফোন করেছি। এই বিপদের একমাত্র সবাধান আপনি।”

আজিজ সাহেব খানিকটা অবাক হয়ে বললেন,
“কি বলছেন ভাই?কি বিপদ? আমার সাধ্যমতো থাকলে আমি অবশ্যই তা করার চেষ্টা করবো।”

তখনি আমায়রাদের বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। আশেপাশে কাউকে না দেখে আজিজ সাহেবই গেলেন দরজা খুলতে। আজিজ সাহেব দরজা খুলে থতমত খেলেন। ফোনের অপরপাশ থেকে তাজওয়ার সাহেব বললেন,
“ইশতিয়াক বুঝি আপনার দরজায়।”

আজিজ সাহেব অবাক হয়েই বলে উঠলেন,
“হুম ভাই আপনার ছোট ছেলেই এসেছে। কিন্তু এতো রাতে!”

রায়ান মুচকি হেসে বলে উঠলো,
“কারণটা না হয় আমিই বলি।”

তাজওয়ার সাহেব তপ্ত নিশ্বাস ফেললেন ছেলের গলা শুনে। ফোন লাউড স্পিকারে থাকায় সবাই শুনতে পারছে।

“ভিতরে আসতে দিবেন না?”

আজিজ সাহেব তাড়াতাড়ি করে বললেন,
“আসো বাবা ভিতরে আসো।”

আজিজ সাহেব আর রায়ান সোফায় বসলো।

#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন।)