অতল গহ্বরে নীরবতা পর্ব-২৩+২৪

0
323

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ২৩(বিয়ে স্পেশাল )

আমায়রা রুমে শুয়ে শুয়ে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখা শঙ্খনীল কারাগার বইটা পড়ছিলো মন দিয়ে। আগে পিছে পরীক্ষা নেই। তাই বেশ সময় নিয়েই পড়ছে সে। এর আগে কতবার বইটা পড়েছে তার ঠিক মনে নেই তার। তবুও এমনভাবে মন দিয়ে পড়ছে যে এর আগে পড়েই নি সে।

আমায়রা পড়ছিলো তখনি রুমে প্রবেশ করলো আমেনা বেগম। আমেনা বেগমকে হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে আসতে দেখে আমায়রার ভ্রুকুচকে এলো। আমায়রা জিজ্ঞাসা করলো,
“কি হয়েছে তোমার এমন অস্থির লাগছে কেন?”

আমেনা বেগম বিছানায় আমায়রার কাছে ঘেষে বললেন,
“একটা কথা রাখবি আমার।”

আমায়রার কুচকে যাওয়া কপাল আরো কুচকে গেল। গভীর দৃষ্টিতে তাকালো মায়ের দিকে। আমেনা বেগম কিছু বলতে নিবেন তার আগেই আজিজ সাহেব রুমে এসে বললেন,
“মা আমরা এমন কিছু কখনোই করবোনা যাতে তোমার খারাপ হয়। আমরা সবসময় তোমার ভালো চাই।”

আমায়রা বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“বাবা হঠাৎ করে এমন করে কথা বলছো কেন? আর কি বলবে এমন যে তোমরা দুইজন ইতস্তত করছো? দ্বিধা ছাড়া বলো বাবা। আমি তোমাদের সন্তান বাবা। তোমরা যা করবে অবশ্যই ভেবেই করবে। আমি বিশ্বাস করি তোমাদের।”

আজিজ সাহেব কিছুটা সস্থির নিশ্বাস ফেললেন। খানিকটা দমে গিয়ে বললেন,
“মা আজ যদি তোমাকে বিয়ে করতে বলি তুমি কি করবে?”

আমায়রা থমকালো। কি বলবে কিছু বুঝতেছে না। এমন কিছু আশা করেনি সে। দম মেরে বসে থাকলো আমায়রা।

আজিজ সাহেব আর আমেনা বেগম একে অপরের দিকে তাকাতাকি করলেন। আমায়রা গলা খাদে নামিয়ে বলল,
“এটা কি ছেলেখেলা পেয়েছো বাবা। হুট করে বললে আর হয়ে গেল। সারাজীবনের প্রশ্ন এটা। হ্যাঁ মানলাম তোমরা কখনো আমার খারাপ চাইবে না কিন্তু তাড়াহুড়োর কি আছে বুঝলাম না। না ছেলেকে আমি চিনি না জানি। তাকে হুট করে…,”

রায়ান দরজার বাহিরে থেকে বলে উঠলো,
“ফরজ কাজে বেশি দেড়ি করতে হয় না। বয়স তো আর কম হলোনা।”

তিনজনই চোখ তুলে তাকালো দরজার দিকে। আজিজ সাহেব আর আমেনা বেগম স্বাভাবিক থাকলেও অবাক হলো আমায়রা। নাকমুখ কুচকে বলল,
“আপনি?”

রায়ান মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকে বলল,
“আঙ্কেল আন্টি কাজি চলে এসেছে আপনারা যান আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

আমায়রা আমেনা বেগমের হাত চেপে ধরে বলল,
“পাত্র কে মা?”

রায়ান ইশারায় চলে যেতে বলল। আজিজ সাহেবও যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন। বাধ্য হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে এলেন আমেনা বেগম। রায়ান তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে তাকালো আমায়রার দিকে। আমায়রার পরনে বাসার সালোয়ার কামিজ। রায়ান গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো,
“বউ স্বামীকে কেউ এতো অপেক্ষা করায় যাও তাড়াতাড়ি একটা শাড়ি পড়ে এসো। সাজা লাগবেনা এখন। যাও তো তাড়াতাড়ি।”

রায়ানের কথায় চক্ষু চড়ক গাছ হলো আমায়রার। চেচিয়ে বলে উঠলো,
“কি আপনার সাথে বিয়ে, আমি এই বিয়ে করবো না।”

রায়ান হুট করে নিজের মুখ শক্ত করে ফেলল। ঝড়ের বেগে আমায়রার কাছে গিয়ে ওর কাঁধ চেপে ধরে বলল,
“তোর সিদ্ধান্ত শুনতে আসিনি। তোকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছি। দেখ ভালো ভালোই বলছি রাজি হয়ে যা। তাছাড়া…!”

রায়ানের কথার মাঝেই আমায়রা বলে উঠলো,
“তাছাড়া কি করবেন মারবেন? আপনি তো ওটাই পারেন কথায় কথায় থাপ্পড়াতে।”

আমায়রাকে অবাক করে দিয়ে রায়ান বলল,
“আরো অনেক কিছুই পারি। আগে থাপ্পড়িয়েছি এখন না হয় চুমু খাবো ক্ষতি কী।”

আমায়রা বিরক্তি নিয়ে বলল,
“সিনেমা পাইছেন আপনি। উল্টাপাল্টা কথা বলবেন আর মেনে গিয়ে বিয়ে করে নিবো। কখনোই না আমি এই বিয়ে করবো না।”

রায়ান আমায়রার কাঁধ ঝাকিয়ে বলল,
“রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী যা চায় তাই পায়। তুই একা একা শাড়ি পরবি নাকি বল।”

আমায়রা মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“শাড়ি পরার প্রশ্নই আসেনা। যেখানে আমি বিয়েটাই করবোনা সেখানে আমি শাড়ি পরতে যাবো কেন। আজব তো।”

রায়ান আমায়রার দুইগাল চেপে ধরে বলল,
“আবারো বলেই পরবি নাকি বল।”

আমায়রার গালে লাগছে জোরে চেপে ধরায় তাও সে দৃঢ় গলায় বলল,
“পরবো না।”

“পরবি না তো”

“না”

রায়ানের রাগ যেন গাঢ় হলো। এতটা সময় স্বাভাবিক থাকলেও আর থাকতে পারলো না। পকেট থেকে একটা ছুরি বের করলো। আমায়রা সেদিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“গ্ৰেট রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী নাকি আমার জন্য হাত পা কাটবে ভাবা যায়। এসব নাটক বাদ দিন। রাত অনেক হয়েছে বাড়ি গিয়ে ঘুমান। আমাকেও শান্তিতে থাকতে দিন।”

রায়ান বাঁকা হেসে হুট করে আমায়রার হাত টেনে এক টান দিলো ছুরি দিয়ে। আমায়রা কুকিয়ে উঠলো। কাটেনি তেমন একটা চামড়া ছিলেছে খালি। রায়ান আবারো বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
“আর যতবার বলবে শাড়ি পরবেনা। হাতে টানের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।”

“আপনি কি মানুষ?”

“না বউ তোমার বর।”

আমায়রা নাকমুখ কুচকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রায়ান আবারো বলল,
“আবারো দিবো নাকি!”

আমায়রা শাড়ি নিতে নিতে বলল যাচ্ছি তো। রায়ান বাঁকা হেসে বলল,
“ওয়াশরুম দিয়ে পালানোর চেষ্টা করোনা বউ। নিচে আমার লোক আছে।”

আমায়রা অবাক হলো রায়ানের কথায়। রায়ান আয়েশ করে চেয়ারে বসলো।

আমায়রা নিজ মনেই রায়ানকে বকাবকি করতে করতে লাগল।

খানিকবাদেই একটা লাল টকটকে শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো আমায়রা। শাড়িটা আবিরকে দিয়েই আনিয়েছে রায়ান। রায়ান রুমেই ছিলো। পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো আমায়রার দিকে। আমায়রা গাল ফুলিয়ে রাখায় বেশ কিউট লাগছে। রায়ান ফোন করে আবিরকে আমায়রার রুমে আসতে বলল।

রায়ানের কথা মতো কিছুক্ষন পরেই আবির এলো রুমে। রায়ান হাতে ছুরি ঘোরাচ্ছে আর আমায়রা তার চুল আছড়াচ্ছে।

আবির অবাক হয়ে বলল,
“ভাই তুমি ছুরি দিয়ে কি করছো?”

রায়ান বাঁকা হেসে আয়নায় আমায়রার দিকে তাকালো। আমায়রা চোখ রাঙাচ্ছে তাকে। রায়ানের বাঁকা হাসি আরো প্রসারিত হলো।

“তুই বুঝবিনারে আবির। তোর বোঝার বয়স হয়নি।”

আবির বেশ বিরক্ত হলো। এই একি কথা রায়ান সবসময় বলে। আবির ধপধপ পায়ে পায়ে পেকেট টা রায়ানের কাছে দিয়ে আবারো ধপধপ পায়ে চলে গেল রুম ছেড়ে।

আমায়রা আড়চোখে দেখেও না দেখার ভাব ধরলো। রায়ান পেকেট থেকে একে একে লালগোলাপে মালা, কানের দুল, হাতের মালা ইত্যাদি বের করলো। আমায়রা বেশ অবাক হলো। এতো গোলাপের বাজার তুলে এনেছে।

রায়ান সবকিছু বিছানায় সাজিয়ে রেখে গলা পরিষ্কার করে বলল,
“আমি চাইলেই বাবার টাকা দিয়ে দামি গহনা আনতে পারতাম। কিন্তু আমার বউয়ের গহনা আমার বাবা কেন দিবে। এই ভেবেই আমার টাকা দিয়ে এগুলো এনেছি। পরে টাকা হলে গহনা কিনে দিবো। এখন এগুলোই পড়ে নেও বউ।”

বলেই আর দেড়ি করলো না রায়ান রুম ছেড়ে চলে গেল। তখনি রুমে অনুভব আসলো।

আমায়রাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অনুভব ওর পাশে এসে ওর মাথায় হাত রেখে বলল,
“রাজি হয়ে যা আমু। এমন ছেলে পাবিনা। ওর মতো সৎ সাহস কারো হয় না। সোজা বিয়ে করতে আসতো না। আর দেড়ি করিস না।”

অনুভব কিছুটা দমে আবারো বলল,
“ছেলেটা ঝগড়ুটে হতে পারে কিন্তু ভালো ছেলে আমু। বাবা মা সবাই অপেক্ষা করছে। আর রায়ান তোকে না নিয়ে যাবে বলে মনে হয়না। আমি আসছি। দেখ কি করবি?”

অনুভব চলে গেল। আমায়রা ধপ করে বসে পরলো বিছানায়। পুরো রুমটা কাঁচা ফুলের গন্ধে মো মো করছে। আমায়রা মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কি করবে বুঝতে পারছেনা। কি করা উচিত তার।

—————

রায়ান টিশার্ট পরেই চলে এসেছিলো। অনুভব তাকে একটা নতুন সাদা পাঞ্জাবী পরিয়ে দিয়েছে। রায়ান অনুভবের রুম থেকে ড্রেস পাল্টে বসার রুমে এসে ধপ করে সোফায় বসে পরলো আবিরের পাশে। আবিরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“এতরাতে তাজা গোলাপ কোথায় পাইলি?”

আবির খানিকটা নড়েচড়ে বসে ফিসফিসিয়ে বলল,
“চুরি করছি”

রায়ান কপাল গুটিয়ে বলল,
“কোথায় থেকে?”

আবির জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“রহমান চাচার গোলাপের যে বড় বাগান আছে সেখান থেকে চুরি করছি আমি আর আমার বন্ধু তন্ময়। পরে তন্ময়ের ছোটবোনকে ঘুষ দিয়ে সব মালা করে নিয়েছি।”

রায়ান হাসলো। আবিরের পিঠ চাপড়ে বলল,
“শাবাস ব্যাটা এই তো বাঘের বাচ্চা।”

“হ তোমার জন্য যে আর কি কি করা লাগবে। ফুল তোমারে দিছি কাঁটা তো আমি খাইছি।”

রায়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই তার চোখ আটকে গেল আমায়রার উপর। লাল শাড়ি খোলাচুল। চুলে, গলায়, হাতে, কানে গোলাপের গহনা, কোনো রকম সাজগোজ ছাড়াই তাকে পরীর মতো লাগছে। রায়ানের মাথা ঘুরে যাচ্ছে আমায়রার এমন রূপে। রায়ান সামনের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগল। বুকটা ধুকপুক করছে তার। রায়ানের এমন অস্থিরতা অনুভবের চোখ এড়ায়নি। অনুভব মুচকি হাসলো।

আমায়রাকে আমেনা বেগম রায়ানের পাশে বসালো। রায়ান হাঁসফাঁস করতে লাগলো। আমায়রা পাশে বসায় রায়ানের হৃদস্পন্দন যেন আরো বেশি বেড়ে গেছে। রায়ান নিজ মনেই বিরবিরালো,
“আস্তে আস্তে বিট করতে থাক শালা। আমার হৃদপিন্ড হয়ে অন্যেকে বিটের শব্দ শুনাবি নিলজ্জ কোথাকার।”

কাজি সাহেব কবুল বলতে বললে রায়ান একটানে বলে ফেলে। ভিডিও কলে থাকা রায়ানের বাবা মা ভাই ভাবি মিটিমিটি হাসছে।

আমায়রার বুক কাঁপছে। এমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে। মাথা ঘুরছে ভনভন করে। অস্থিরতা নিয়েই কাঁপা কন্ঠে কবুল বলে দিলো আমায়রা।

সবাই একসঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। আমায়রার চোখ বেয়ে দুফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো। রায়ান ওর কানের কাছে এসে বলল,

#চলবে

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ২৪

রায়ান আমায়রার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“বউ কান্না করো না তো। তুমি এখন রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরীর বউ। তোমাকে হতে হবে ইউনিক। দাঁত কেলিয়ে হাসবে কত সুদর্শন জামাই পেয়েছো। তার পরেও কান্না মানায় বলো তুমি।”

আমায়রা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সুদর্শন না ছাই। আপনি একটা পান্ডা। নিজের বাঁশ না খেয়ে শুধু আমাকে দেন। অসহ্য..,”

রায়ান মিটমিটিয়ে হাসছে। আমায়রা বিরবিরিয়ে রায়ানকে বকছে। এদিকে পাশে বসে থাকায় সবটাই যে রায়ানের কানে আসছে সেদিকে খেয়াল নেই তার।

কাজি চলে যেতেই রায়ান এখনি আমায়রাকে নিয়ে বাসায় যেতে চাইলো। রাত হওয়ায় আজিজ সাহেব বার কয়েক থেকে যেতে বললেও রায়ানের জিদের কাছে হার মানতে হলো তাদের।

আবির আর আমায়রা ঘুম টুলছে। অনুভব আমায়রার হাত রায়ানের হাতে দিয়ে বলল,
“আমার বোনটা দেখে রেখো।”

রায়ান আলতো হাসলো। আজিজ সাহেব এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে চুমু খেলেন। ভাঙা গলায় বললেন,
“আমার মেয়েটা বড় অবুঝ। তোমার কাছে আমার সবচেয়ে বড় সম্পদটা তুলে দিলাম। তুমি যত্নে রেখো।”

রায়ান আজিজ সাহেবের হাত ধরে বলল,
“ও আমার দায়িত্ব। আর আমি নিজের দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করতে জানি। চিন্তা করবেন একদম।”

আমেনা বেগমের হাত আকড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আমায়রা। সে যেতে নারাজ। কথামতো বিয়ে করেছে তো। এখন যাবে না সে। রায়ান ঘাড় এপাশ অপাশ নাড়িয়ে হুট করে কোলে তুলে নিলো আমায়রাকে। আমায়রা হতবাক হয়ে গেল। হা করে তাকিয়ে রইলো রায়ানের দিকে। আজিজ সাহেব আর আমেনা বেগম তাড়াতাড়ি ভিতরে চলে গেলেন। অনুভব ও চলে গেল পিছু পিছু।

রায়ান বাঁকা হেসে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে থেকোনা বউ। আমার যে তোমাকে চুমু খেতে মন চায়।”

আমায়রা চোখ বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আপনি চুপ করবেন দয়া করে। নামান আমাকে।”

রায়ান মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“আমি আমার বউকে কোলে তুলেছি তোমার কি?”

আমায়রা বেশ বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলল সে।

আবির পিছু ঘুরে অসহায় কন্ঠে বলল,
“ভাই দয়া করে চলো এখন ঝগড়া বাদ দিয়ে। আমি একটু ঘুমাবো।”

রায়ান আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেরে আমার বিয়া হইছে কেবল। বিয়ের পর প্রথম ঝগড়া। আর তুই বেগড়া দিচ্ছিস। শালা তোর বিয়ে হবে না দেখিস।”

আবির হাত জোর করে বলল,
“ক্ষমা করো ভাই আমার। আমার ভুল হয়ে গেছে। এখন দয়া চলো ভাই। বাসায় সবাই ঘুম বাদ দিয়ে বসে।”

রায়ান ভেংচি কেটে হাঁটা দিলো। গাড়ির সামনে এসে ভ্রুযুগল কুচকে ফেলল। গাড়িটা বেশ চেনা চেনা ঠেকছে আমায়রার কাছে। রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“গাড়িটা কার?”

রায়ান আমায়রাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্ট্রার্ট দিতে বলল আবিরকে। আমায়রা আবারো বলল,
“বললেন না তো?”

রায়ান আমায়রার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“কি বলবো বউ দুষ্টু দুষ্টু কথা?”

আমায়রা নাকমুখ কুচকে ফেলল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
“অসভ্য লোক একটা।”

রায়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।

খানিকবাদেই পাশে তাকালো আমায়রা ঘুমিয়ে পড়েছে। রায়ান মুচকি হাসলো। গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই আবির পিছু ঘুরে তাকালো। রায়ান আবিরকে ফিসফিসের বলল,
“ডাকিস না ঘুম ভাঙলেই আবার পকপক শুরু করবে। দরজা খুলে দে আমি কোলে নিয়েই একেবারে রুমে যা। বাসার সবাইকে ঘুমিয়ে পরতে বল।”

আবির নিজ মনেই বিরবিরালো,
“এহ, বিয়া হতে না হতে ঘুম ভাঙাস না ঢং। বিটকেলগিরি তো শুধু আমার জন্যই তোলা থাকে।”

রায়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কি হলো কি বিরবির করিস?”

আবির মুখ বাঁকিয়ে দরজা খুলে রাখলো। রায়ান আলতো করে আমায়রাকে কোলে তুলে নিলো। আমায়রা খানিকটা নড়ে রায়ানের বুকের পাঞ্জাবীর বুকের অংশ ধরে বুকে মুখ লোকালো। রায়ানের হৃদস্পন্দন ক্রমাগত বাড়তে লাগল। রায়ান চোখ বুজে বড় বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস ছাড়লো। আমায়রার উষ্ণ নিশ্বাস বারি খাচ্ছে বায়ানের বুকের বাপাশে।

রায়ান ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল, আমায়রাকে কোলে নিয়ে। আবির তার পিছন পিছন আসছে আর মিটমিট করে হাসছে। বাড়ির সদর দরজার সামনে পৌঁছাতেই রায়ান একটুখানি থামল, হালকা করে নিজের নিশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করল। আমায়রার মুখ তার বুকে লাগানো, আর সেই কোমল স্পর্শে যেন তার হৃদস্পন্দন থেমে গেছে।

আবির ফিসফিস করে বলল,
“ভাই, এভাবে তো তোমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। একটু শান্ত হও।”

রায়ান মুখে কৃত্রিম রাগ এনে বলল,
“চুপ কর হারাম*জাদা ”

আবির হাসছে। আবির কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো নাইমা। রায়ান ইশরায় শব্দ করতে মানা করলো। নাইমা হাসলো। ফিসফিসিয়ে বলল,
“রুমে যাও তোমরা। বাবা মাকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি। তোমার ভাই নূরের কাছে আছে। আমি এতক্ষন তোমাদেরই অপেক্ষায় ছিলাম। সকালে সব কথা হবে। রাত দুইটা বাজে। যাও তাড়াতাড়ি।”

রায়ান আমায়রাকে কোলে নিয়েই নিজের রুমে গেল। লাইট জ্বালানোই ছিলো রুমে। রায়ান আমায়রাকে বিছানার একপাশে আস্তে করে শুয়ে দিলো। কিন্তু বিপত্তি বাজলো অন্য জায়গায়। আমায়রা তার পাঞ্জাবী শক্ত হতে ধরে আছে। রায়ান আমায়রার হাতে হাত রাখলো। আমায়রা ঘুমের মাঝেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেলল। রায়ান আলতো হাসলো। আমায়রার ঘুমন্ত চেহারা দেখে তার এক ইচ্ছে জাগলো। রায়ান দেড়ি না করে আমায়রার বুজে রাখা চোখের পাতায় চুমু খেল। আমায়রা ঘুমের মাঝেই কেঁপে উঠলো। হাত আলগা হয়ে এলো। রায়ান আমায়রার থেকে ছাড়া পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। রুমের বড় লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালালো।

ফাস্টএড বক্স নিয়ে আমায়রার বিছানার পাশে মেঝেতে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। যে হাতে ছুরি দিয়ে টান দিয়েছিলো সেই হাত নিজের সামনে ধরলো। বেশি একটা কাটেনি সে। খামছি দেওয়ার মতো ছিলে গেছে শুধু তাতেই তার সাহসী বউয়ের সাহস ফুটো বেলুন হয়ে গেছে। তুলা দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে মলম লাগিয়ে দিলো সযত্নে। চোখ বুজে পর পর কয়েকটা নিশ্বাস ফেলল। এমন জোর করে বিয়ে না করে উপায় ছিলোনা তার। সে যে শিহাবের পাশে সহ্য করতে পারেনি আমায়রাকে। আর সে যে জানে এর আগে শিহাব কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। জেনেশুনে কিভাবে সে আমায়রাকে বিপদে ঠেলে দিতে পারে। এগুলো ভাবনার মাঝেই তার ফোন ভাইব্রেট হতে লাগল।

রায়ান ফোনটা হাতে তুলে দেখে, স্ক্রিনে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল আসছে। তার কপালে ভাঁজ পড়ে। এমন গভীর রাতে কে তাকে কল করতে পারে? হুট করেই বাঁকা হাসে সে। বারান্দায় যেতে যেতে কল রিসিভ করে কানে ধরে বলল,
“কিরে শিহাব এতো রাতে কি মনে করে আমাকে স্বরণ করলি?”

শিহাব ভনিতা করে বলল,
“বাহ, রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী কি সহজেই বুঝে গেলে আমি কল করেছি!”

রায়ান হেসে বলল,
“ভনিতা না করে বল কি বলবি,এমনি এমনি তো আর এতো রাতে তাও আবার আমাকে কল করার মানুষ তো তুই না?”
শিহাব বিকট শব্দে হো হো করে হেসে উঠলো। রায়ান বেশ বিরক্ত হলো। দাঁতে দা্ঁত চেপে বলল,
“কি বলতে কল করেছিস বল না হয় রাখলাম।”

আরে ধীরে ধীরে আগে তো শুনো পুরো কথা। এবারো শালা তুই ফাস্টই হইলি। কিন্তু সোনপাখি তোমার যে ঝগড়ুটে জুনিয়র আছে যার সঙ্গে তোমার ইচিংবিচিং সম্পর্ক তাকে যে আমি আমার করেই দম নিবো। আজ প্রোপজ করেছিলাম। মাইয়া কিন্তু ব্যাটা তোর মতোই ত্যাড়া। ফুল নিয়ে কি সুন্দর কইলো ভাইয়া ফুল প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর জিনিস তাই ফুলটা ফেলে দিবোনা। কিন্তু আমার কাছে এসব ফালতু কথা বলতে আসবেন না তাহলে ভালো হবেনা বলে দিলাম। কি ভাই ওই মেয়ে। যেখানে সবাই এই শিহাব খন্দকারের জন্য পাগল সেখানে ওই মাইয়া আমারে হুমকি দেয়। আর দিবেই না কেন তোর সঙ্গে যে ওর আবার কিসব আছে। যাইহোক যেটা বলতে কল করা, কালকের মধ্যেই আমি ওই মাইয়া তুলমু। আমারে রিজেক্ট করছে না। তোরে জানায় রাখলাম পরে যেন কান্দিস না। ভাবছি একদিনের জন্য বিয়াও করমু।”

রায়ান হাই তুলে বলল,
“হয়েছে তোর ফালতু বকবক। এবার আমার কথা শুন। আজকে রাতে আমি আমায়রাকে বিয়ে করেছি। ও এই মুহূর্তে আমার বউ।”

শিহাব বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
“কিহ?”

রায়ান বাঁকা হেসে বলল,
“আরে পাগলা, তুমি ভুল মানুষের সঙ্গে পাঙ্গা নিতে এসেছো। তুমি যখন প্রোপজ করেছিলে তখন আমার রাগ হয়েছিলো। ও যখন ফুল হাতে নিছিলো আমি তখন বেশ অবাক হয়েছিলাম। রাগ হচ্ছিলো তোর উপর। তুই আবার বেশি ভালো কিনা। যাইহোক তুই যে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলি আমি সেটা দেখেছি। আমার পিছনে তোর লোক লাগিয়েছিলি তাও দেখেছি তাই তো পাগলামি করা। তোর জন্য আমার হাতটাও আজ আহত হয়ে বেডরেস্টে আছে। বউকে ঠিকমতো কোলেও নিতে পারছিলাম না। আর তুই যে ইচিংবিচিং বললি ওটা ইচিংবিচিং নারে সোনাপাখি ওটা তো মিষ্টি যমগিরি। তুই বুঝবিনা। তোর বোঝার বয়স হয়নি।আর কি যেন বললি, ওহ, মনে পরেছে, ওকে কালকে তুলে একদিনের জন্য বিয়ে করবি। হাহ, ভুলে যাসনা এখন ও শুধু আমায়রা না ও মিসেস রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী।”

শিহাব চেচিয়ে বলে উঠলো,
“রায়াননন…”

রায়ান কানে হাত চেপে বলল,
”আস্তে চিল্লা শালা বাসরের আগে আমায় কানে কালা করবি নাকি। এত রাইতে বিবাহিত পুরুষকে কল করতে হয়না জানিস না। ফোন রাখ।”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো রায়ান। শিহাব রাগে পাশে থাকা কাঁচের ফুলদানিটা আছাড় মারলো। সঙ্গে সঙ্গে ফুলদানিটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

রায়ান মৃদু হাসলো। বিরবিরিয়ে বলল,
“খেলায় তুই এখনো বেশ কাঁচা শিহাব। আগে আগে দেখ কি হয়।”

রায়ান বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখলো আমায়রা বিছানার মাঝ বরাবর গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। রায়ান হাসলো।

চারপাশে আজান পরতে লাগলো। রায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিছানায় গা এলিয়েই দিতে পারলো না তার আগেই আজান দিয়ে দিলো।

———————

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেল আমায়রার। আশেপাশে তাকাতেই দেখলো একটা বড় রুমে সে আছে। যার সবকিছু সাদা রঙের। সামনে একটা বড় বুক সেল্ফ আছে। যাতে নানারকমের বই, ড্রেসিং টেবিল, কাবার্ট, সোফা দিয়ে রুমটা ভরা থেকেও যে ফাঁকা। তখনি আমায়রার ভাবনায় এই বড় সাজানো গোছানো রুমটা তাহলে ওই পান্ডা। রুমটা পছন্দ হলেও রায়ানের কথা মনে পরতেই মেজাজ খারাপ হলো আমায়রার। তখনি রুমে প্রবেশ করলেন রাবেয়া বেগম। হাতে তার শাড়ি গহনা। তার পিছু পিছু খাবার প্লেট হাতে নিয়ে প্রবেশ করলো নাইমা। তাদের আসতে দেখে আমায়রা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। রাবেয়া বেগম মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,
“খাবারটা খেয়ে নেও মা। ছেলেটা যে আমার কি পাগলামি করে না। হুট করে বিয়ে করে আনলো। তাই আজ দুপুরে অনুষ্ঠান করা ছোট খাটো। নাইমা তোমাকে রেডি করিয়ে দিবে।”

আমায়রা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।

#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন।)