অতল গহ্বরে নীরবতা পর্ব-২৯+৩০

0
323

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২৯

রায়ান একটা রিক্সা করে চায়ের দোকানে সামনে চলে এলো। যেখানে তারা বন্ধুরা মিলে সেখানেই আড্ডা দেয়। রায়ান নামতেই আহাদ আর ইয়াসিন গাইতে লাগল,
“ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়
বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া
রঙ কইরা হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায়
বুকটা ফাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়
বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া
রঙ কইরা হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায়
বুকটা ফাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”

রায়ান রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ওদের কাছে গিয়ে কাঁধে চাপড় দিয়ে বলল,
“বুক না ফাটিয়ে বিয়ে কর।”

আহাদ জোরে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমাগো কি আর সেই কপাল আছে। ঝগড়া করার কেউ নেই। হুট করেই রাতে তুলে এনে বিয়ে করার মতোও কেউ নেই।”

ইয়াসিন আহাদের কথায় সুর মিলিয়ে বলল,
“আসলে ভাই তুই একদম হক কথা বলছিস।”

রায়ান মুখ বাঁকিয়ে আহাদের পাশে বসে বলল,
“এমন ভাব করছিস যেন আমি কিছু জানি না। ঢং বাদ দিয়ে বল কি বলবি?”

আহাদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“হুট করে বিয়েটা কেন করলি?”

ইয়াসিন রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমায়রাকে কি তুই ভালোবাসিস?”

রায়ান একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলল,
“ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু আমি ওকে চাই। আমার ওকে লাগবে। আর হুট করে বিয়ে করার কারণটা হলো শিহাব।”

আহাদ ভ্রুকুচকে বলল,
“শিহাবের উপর হিংসা করে করেছিস?”

“না হিংসা না। আমি জানি শিহাব কেমন আমি যদি সেদিন রাতেই বিয়ে না করতাম। তাহলে আমায়রার জীবনটা নষ্ট করতে দুদিনও লাগতোনা। আমার কাছে মেয়েটা সুরক্ষিত থাকবে। আর ওর উপর যে আমার ফিলিংস নেই তেমনটাও তো না।”

আহাদ গভীর মনোযোগ দিয়ে রায়ানের কথা শুনল। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলল,
“তুই ঠিক করেছিস, রায়ান। তবে বিয়ে তো একটা বড় দায়িত্ব, শুধুমাত্র সুরক্ষা দিতে গিয়ে যদি ওকে সুখ দিতে না পারিস, তাহলে?”

ইয়াসিনও মাথা নেড়ে সায় দিল,
“ঠিকই বলছিস। আমায়রাকে তুই চাইতে পারিস, কিন্তু ভালোবাসা যদি না থাকে, সম্পর্ক টিকবে কীভাবে?”

রায়ান গভীরভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ভালোবাসা কী, সেটা আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারি না। কিন্তু আমি জানি, আমায়রা আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি তাকে কষ্টে দেখতে পারব না। আমার নিজেরও শান্তি আসবে না।”

আহাদ হালকা হেসে বলল,
“তাহলে তো তুই ভালোবাসতেই শুরু করেছিস, বুঝতে পারিস না। ভালোবাসা মানেই শুধু রোমান্স না, রায়ান। ভালোবাসা মানে দায়িত্ব, সুরক্ষা, আর সবচেয়ে বড় কথা, নিজের ইচ্ছাকে ওর ভালো থাকার জন্য বদলানো।”

রায়ান তপ্ত নিশ্বাস ফেলল। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল। সে নিজেকে জিজ্ঞাসা করল,
“তাহলে কি আমি সত্যিই আমায়রাকে ভালোবাসি? নাকি ওকে রক্ষা করার চেষ্টাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল?”

আহাদ রায়ানের চিন্তায় মগ্ন মুখ দেখে হাসতে হাসতে বলল,
“আরে, এত সিরিয়াস হইস না। আমাদের বললি, এখন তো নিজেই ভাবনায় পড়ে গেলি! ভালোবাসা এমনই একটা ব্যাপার, বুঝতে বুঝতেই জীবন পার হয়ে যায়।”

ইয়াসিন চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
“আচ্ছা, আমায়রা কি জানে তোর এই অনুভূতির কথা?”

রায়ান মাথা নাড়ল,
“না, জানে না। আর বলার ইচ্ছাও নেই। আমি চাই না ও মনে করুক, আমি ওকে কোনো দয়া বা করুণার জন্য বিয়ে করেছি। আমার চাওয়া শুধু এটুকুই—ও যেন সবসময় নিরাপদ আর সুখী থাকে।”

আহাদ গভীর গলায় বলল,
“তবে একটা কথা মনে রাখ, রায়ান। ভালোবাসা লুকিয়ে রাখলে সেটা বোঝাতে ব্যর্থ হতে পারে। হয়তো ওরও তোকে বলার কিছু আছে। সাহস করে একবার জিজ্ঞেস করিস। জীবন একটা সুযোগ, আর ভালোবাসা সেটা কাজে লাগানোর সাহস।”

অনেকক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর রায়ান উঠে পরলো। দুপুর হয়ে এসেছে। আহাদ আর ইয়াসিন তাদের বাসায় রওনা হলো। রায়ান একটা রিক্সায় উঠে কল করলো আবিরকে। দুবার রিং হতেই রিসিভ হলো। রায়ান বলে উঠলো,
“কাজ হয়েছে?”

আবির ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
“আর একটু বাকি আছে।”

“আমি আসছি শেষ কর।”

—————

সার্ভেন্ট থাকার পরেও রান্না রাবেয়া বেগমই করেন। নাইমা হাতে হাতে কাজ করছিলো দেখে আমায়রারও করতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাবেয়া বেগম এখনি কাজ করতে হবে না বলেছেন। তবুও আমায়রা দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের কাছে। টুকিটাকি কাজ করছিলো আর কথা বলছিলো।

নূর তার বাবার সঙ্গে খেলা করতে ব্যস্ত। শাহানারা বেগম দরজা লাগিয়ে বসে আছেন। সকালের নাস্তা করে দরজা লাগিয়েছে এখনো খোলেনি দুপুর হতে চলল।

রাবেয়া বেগম নরম গলায় বললেন,
“মা আমায়রা গিয়ে গোসলটা সেরে নেও।”

আমায়রা বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁবোধক মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। রুমে আসতেই তার ফোন বাজতে লাগলো। আমায়রা ফোনের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো। তার মা কল করেছেন। আমায়রা কল রিসিভ করে সালাম দিলো। আমেনা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,
“কেমন আসিস মা?সব ঠিকঠাক আছে তো!”

আমায়রা আলতো হেসে বলল,
“মা ভালোই আছি। সবঠিকঠাক আছে। তোমরা কেমন আছো?”

আমেনা বেগমের সাথে বেশকিছুক্ষণ কথা বলে গোসলে গেল আমায়রা।

——————

অনুভব নিজ মনে ফোন টিপতে টিপতে কলেজের বারান্দা দিয়ে হাঁটছিলো। তখন কেউ একজন তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে লাগল,
“আই লাভ ইউ অনুভব স্যার।”

অনুভব ভ্রুগুটিয়ে তাকালো সামনের দিকে। এ তো ফাস্ট ইয়ারের বদ মেয়েটা। সামনের দিকে বসে সারাক্লাস তাকিয়ে থাকে তার দিকে। অনুভব নাকমুখ কুচকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই কে যেন ছুটে এসে মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠলো,
“মাইয়া তোর সাহস তো কম না। আমার প্রেসার কুকার মাস্টারের সঙ্গে লাগতে আছিস। আজকে তোকে আমি দেখাবো মজা। আমার সম্পত্তির দিকে হাত দেওয়া না।”

বলেই চুলোচুলি লেগে গেল দুইজনের মাঝে। অনুভব যেন থমকে গেছে। কি হচ্ছে এসব? কোনোকিছুই বুঝতে পারছেনা সে। চারপাশে মানুষ ভীড় করতে শুরু করেছে। তখনি অনুভব সুরাইয়া টেনে মেয়েটাকে আলাদা করলো। সুরাইয়ার হাত ধরে টেনে সেখান থেকে বের করে আনলো অনুভব।

সুরাইয়া কিছুটা দূরে এনে দাঁড় করালো অনুভব। সুরাইয়া রীতিমতো ফুসছে। ফর্সা গোল মুখটা লাল হয়ে উঠেছে। নীল রঙের হিসাবে বেশ মানানসই লাগছে। অনুভব গম্ভীর গলায় বলল,
“এখানে কি করছিলে তুমি?”

সুরাইয়া দাঁত কিটমিট করতে করতে বলল,
“কেন অনেক অসুবিধায় ফেলে দিলাম বুঝি। আমি না থাকলে তো ঠিকি নিকনিক করা শুরু করে দিতেন। আমাকে শুধু বলেন আবেগ দমাইতে আবার আমার সমবয়সী মেয়ে আপনাকে হাঁটু গেড়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে।”

অনুভব ফুস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“আরে ওই মেয়ে ওমনি। আর আমার অসুবিধা হবে কেন?তুমি যেখানে খুশি সেখানে যাও। আর কলেজে এসে চুলোচুলি করো। এ কেমন আচরণ?”

সুরাইয়া মাথা ঝাকিয়ে বলল,
“ওহ হ্যাঁ তাই তো আমাকে নিয়ে ভাববেন কেন?আপনার তো ছাত্রী আছে। আমার হিজাব ধরে যে ওই মাইয়া টানলো সেটা কিছু না তাই না।”

অনুভব বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কি আজেবাজে বকছো তুমি এসব?”

“এখন তো আমার কথা আজেবাজেই লাগবে। থাকেন আপনি আপনার ছাত্রী নিয়ে। আমি চললাম।”

বলেই গটগট পায়ে রওনা হলো সুরাইয়া। অনুভব আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো সুরাইয়ার যাওয়ার দিকে।

—————

রায়ান আর আবির দুপুরেই বাসায় ফিরেছে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে বিকাল হয়ে গেছে প্রায়। শীতের দিন হওয়ায় তাড়াতাড়িই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাহসান, আবির, রায়ান একসঙ্গে চা নাস্তা নিয়ে বসে গল্প করছে ছাদের মাঝে পাঁকা করা জায়গায় বসে।

নূর, আমায়রা আর নাইমা মিলে ছাদের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে আর কথা বলছে।

রায়ান চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর আড়চোখে দেখছে আমায়রাকে। আমায়রা আজ একটা হালকা গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। মাথায় ওড়না, কানে ছোটদুল, হাতে চুড়ি, পাক্কা বউ বউ লাগছে মেয়েটাকে। রায়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমায়রার দিকে। আমায়রা যখন কথার মাঝে হুটহাট হেসে উঠছে রায়ানের মনের ভিতরে যেন এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

নাইমা বিস্কুট দিতে আমায়রা তা তুলে নিলো। খেতে খেতে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই রায়ানের চোখে চোখ পরলো তার। আমায়রা দেখলো চশমার ফাঁক দিয়ে গভীর দুচোখ তাকেই দেখতে ব্যস্ত। হুট করেই আমায়রার বিষম উঠে গেল। রায়ান পানির বোতল নিয়ে দৌড়ে এলো আমায়রার কাছে। পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“পানিটা খেয়ে নেও। তুমিও না, ঝগড়া ছাড়া আর কিছুই পারোনা। সামান্য চা বিস্কুট খেতে গিয়ে বিষম তুলো।”

আমায়রা পানিটা খেয়ে কটমট করে তাকালো রায়ানের দিকে। রায়ান মুখ বাঁকালো।

ওদের কান্ড দেখে সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে।

——————
রাতের খাবার শেষ করে রায়ান আবির রুমে গেছিলো কথা বলতে। খানিকবাদে নিজের রুমে আসতেই কপাল কুচকে এলো তার। আমায়রা একটা নতুন কম্বল বের করেছে। তা নিজের গায়ে জড়িয়ে মাঝে একটা কোলবালিশ দিয়ে শুয়েছে। কোলবালিশ আর নতুন কম্বল দেখে মেজাজ খারাপ হলো রায়ানের। রায়ান নিজ মনেই বিরবিরালো,
“এটা কোনো কথা। কোথায় ভাবলাম শীতে বিয়ে করলাম বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুম দিবো। তা না বউ আমার অবিবাহিত পুরুষের মতো রাখতে চায়। ভাবা যায় কত বড় স্পর্ধা। রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী কখনোই এটা মেনে নিবে না । নো নেভার।”

বলেই গটগট পায়ে বেডের কাছে গিয়ে নিজের কম্বল তুলে নিলো। আমায়রা ভ্রুকুচকে ফেলল। রায়ান আমায়রাকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে কম্বল নিয়ে

#চলবে

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩০

রায়ান আমায়রাকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে কম্বল নিয়ে গটগট পায়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুমে রাখা বালিতে কম্বল চুবিয়ে দিলো।

রায়ানের এমন কাজে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমায়রার।
“একি করলেন আপনি! এখন আপনি ঘুমাবেন কি নিয়ে?”

রায়ান আমায়রার কথার জবাব দিলো না। আবারো বিছানার কাছে এসে কোলবালিশ তুলে নিতে ধরলে আমায়রা আরেকপাশে ধরে বলল,
“এটাকে আবার কি করবে? আপনার মাথা ঠিক আছে তো?”

রায়ান হেচকা টান দিয়ে কোলবালিশটা আমায়রার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে হনহনিয়ে বারান্দায় গিয়ে কোলবালিশটা ফেলে দিলো। আমায়রা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। রায়ান এগুলো কি করছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। রায়ান আবারো রুমে এসে লাইট অফ করে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পরলো। আমায়রা এখনো থম মেরে বসে আছে। রায়ান হুট করেই আমায়রাকে টেনে শুয়ে দিলো। নাকমুখ গুজে দিলো আমায়রার চুলের ভাঁজে। আমায়রার বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগল। আমায়রা রায়ানের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে যাবে তখনি রায়ান গুরু গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“বেশি ছটফট করলে কোলবালিশের মতো তোমাকেও ফেলে দিবো বলে দিলাম।”

আমায়রা মনে মনে বলল,
“কয় কি ব্যাটায় কোলবালিশের মতো ফেলে দিলে আমি বাঁচবো না। আমার প্রাণপাখি তো ঠুস করে উড়ে যাবে।”

রায়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“উড়ে গেলে আমি আবার ধরে আনবো।”

আমায়রা অবাক হলো। তার মনে মনে বলা কথা ওই পান্ডা কিভাবে বুঝলো?
রায়ান ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মনের কথাগুলো এতো জোরে বললে সবাই শুনতে পারবে।”

আমায়রা গাল ফুলিয়ে ফেলল।

“গাল ফুলিয়ে লাভ নেই। আমি ছাড়ছিনা।”

আমায়রা ঘুরে রায়ানের দিকে ফিরলো। রায়ান চোখ বুজে আছে। আমায়রা দুষ্টু হেসে রায়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো। রায়ান কপাল কুচকে ফেলল। ঝট করে চোখ খুলতেই রায়ানের বুকে একটা কামড় বসিয়ে দিলো আমায়রা।

রায়ান আহ করে আমায়রাকে ছেড়ে উঠে বসলো। রায়ান হাত বাড়িয়ে বেড সাইট লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো। টিশার্ট ভেদ করে ছোপ ছোপ রক্ত দেখা যাচ্ছে।

আমায়রা মুখ হাসছে। রায়ান কটমটিয়ে আমায়রার দিকে তাকালো। আমায়রা মুখ ভেংচি কেটে অন্যপাশ হতে নিবে তখনি রায়ান দুহাত দিয়ে আমায়রাকে আটকে ধরলো। আমায়রা এবার সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। রায়ানের চোখে অদ্ভুত এক ঝলক, যেন সে প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছে। রায়ানের ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো, কিন্তু সেটা মধুর নয়, বরং শয়তানির।

“তুমি ভেবেছিলে, এভাবে পালিয়ে যেতে পারবে?” রায়ান ফিসফিস করে বলল, যেন শিকার ধরার আগে শিকারির সতর্কতা।

আমায়রা গলাটা শুকিয়ে গেল। সে অসহায় কণ্ঠে বলল,
“আমি তো মজা করছিলাম।”

রায়ান তার মুখের খুব কাছে নেমে এল।
“তোমার মজা করার মূল্য এবার যে দিতে হবে,যমরানী।”

কথাগুলো বলেই আমায়রার শরীরের চারপাশে তার হাতগুলো শক্তভাবে আটকে ফেললো। আমায়রা ছটফট করার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হলো না।

আমায়রা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“আপনি যা করছেন এটা কিন্তু অন্যায়।”

রায়ান মুখ বাঁকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তুমি যখন কামড় বসিয়েছ, তখন কি ভেবেছিলে এটা অন্যায়?”

আমায়রা মাথা নিচু করে বলল,
“আমি তো একটু মজা করতে চেয়েছিলাম।”

রায়ান হালকা হেসে বলল,
“ঠিক আছে, আমিও একটু মজা করবো।”

তারপর, সে হঠাৎ করে আমায়রাকে ছেড়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। আমায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আর একটু হলেই ভয়ে তার জান বের হয়ে যেতো।

রায়ান হাসতে হাসতে বলল,
“তোমার মুখের ওই ভয়ের অভিব্যক্তি দেখার জন্যই এত কিছু করেছিলাম।”

আমায়রা রাগে ফুঁসতে লাগলো।
“আপনি খুব বাজে!”

রায়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে শুয়ে পড়ে বলল,
“আমি জানি। এখন শয়তানি বাদ দিয়ে ঘুমাও। কাল আমার অফিস আছে।”

আমায়রা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তো আমি কি করবো? আপনার ঘুম আপনি ঘুমান।”

রায়ান কিছু না বলে আমায়রাকে আবারো জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো। আমায়রা বিরবিরিয়ে রায়ানকে বকতে বকতে ঘুমিয়ে গেল।

আমায়রা ঘুমিয়ে যেতেই রায়ান চোখ খুললো। মুচকি হাসি দিয়ে আমায়রার কপালে একটা চুমু খেল অনেকটা সময় ধরে।

রায়ান চোখ বুজে ফেলল আমায়রাকে জড়িয়ে ধরলো।

——————

অনুভব বাসায় ফিরতেই দরজা খুলে দিলো রাকিব। অনুভব কিছুটা অবাক হলো। রাকিব এখানে কি করছে? অনুভব সৌজন্যমূলক হেসে বলল,
“আরে রাকিব যে কেমন আছো?”

রাকিব মুচকি হেসে বলল,
“এই অনুভব ভাই ভালোই আছি। আপনার অপেক্ষায় ছিলাম এতক্ষন।”

অনুভব ভিতরে ঢুকে দেখলো বন্যা আর সুরাইয়া সোফায় বসে আছে। অনুভবকে দেখেই সুরাইয়া মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকালো। বন্যা অনুভব দেখে মুচকি হেসে সালাম দিয়ে বলল,
“অনুভব ভাই কেমন আছো?”

অনুভব একপলক বন্যার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেলল। অনুভব ধীর কন্ঠে সালামের উত্তর দিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?”

বন্যা হাসি মুখেই জবাব দিলো,
“ভালোই”

অনুভব একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। সুরাইয়ার মুখের ভঙ্গি তার নজর এড়ালো না। সে বুঝতে পারল, পরিস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক। রাকিব তখন কথার শুরু করল,
“অনুভব ভাই, আজ একটা বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের এখানে আসা।”

অনুভব চেয়ার টেনে বসে বলল,
“বলো রাকিব, কী বিষয়?”

রাকিব কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, যেন সঠিক শব্দ খুঁজছে। সুরাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনুভবের দিকে তাকালো। বন্যা তখন নরম গলায় বলল,
“রাকিব, তোমার যা বলার, তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।”

আমেনা বেগম নাস্তার প্লেট নিয়ে আসতে আসতে বললেন,
“অনুভব হাত মুখ ধুয়ে আয় বলছি তোকে।”

অনুভব গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“সমস্যা নেই শুনেই যাচ্ছি।”

রাকিব বলতে শুরু করলো,
“আসলে অনুভব ভাই আপনি তো জানেন সুরাইয়ার বাবা মা ওর ছোটবেলায় মারা যায়। আমরা ওকে নিজের বোন হিসেবেই একসঙ্গে বড় হয়েছি। গ্ৰামের কলেজে পড়ার থেকে আমি মনে করছি আমার আর বন্যার কাছে থাকলে ভালো সুরাইয়াকে রাখলে ভালো হয়। বন্যাও সারাদিন বাসায় একা থাকে।”

অনুভব চায়ের কাপ তুলে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল,
“হুম, তা এখন কি করতে চাচ্ছো?”

বন্যা বলে উঠলো,
“এখন আমরা চাচ্ছি তো তোমার কলেজে ভর্তি করতে চাচ্ছি। তুমি যদি একটু ব্যবস্থা করে দিতে।”

অনুভব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কিছুটা ভেবে বলল,
“আচ্ছা আমি দেখছি।”

অনুভবের কথায় রাকিব হালকা হাসি দিয়ে বলল,
“তাহলে দায়িত্বটা আপনার উপরই দিলাম, অনুভব ভাই। সুরাইয়ার পড়াশোনার ব্যাপারে আপনি খেয়াল রাখলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকব।”

সুরাইয়া চুপচাপ বসে ছিল, কিন্তু তার চোখের ভাষায় কিছু একটা না বলা অভিমান স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। অনুভব তার দিকে তাকাতে চেয়েও না তাকিয়ে রাকিবের দিকে ফিরে বলল,
“তুমি চিন্তা করো না, আমি ব্যবস্থা করে দেব। তবে ওর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। আশা করি, তোমরা সাপোর্ট করবে।”

বন্যা কোমল স্বরে বলল,
“অবশ্যই আমরা চাই ও এগিয়ে যাক।”

অনুভব চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা বসিয়ে বলল,
“আচ্ছা এখন তাহলে উঠি। আর তোমরা আজ থেকে যাও রাত হয়ে গেছে। এখন না যাওয়াই ভালো।”

আমেনা বেগমও অনুভবের কথায় সম্মতি দিলেন। রাকিবও ভেবে চিন্তে আজ রাতটা এখানে থেকে কাল সকালে যাওয়ার কথা ভাবলো।

অনুভব নিজের রুমে চলে এলো।

——————

আমায়রাকে ঘুমের মাঝে ধাক্কাচ্ছে রায়ান। আমায়রা নাকমুখ কুচকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“সমস্যা কি আপনার? বিরক্ত করবেননা একদম আমি ঘুমাবো।”

রায়ান যেন নাছোড়বান্দা আমায়রাকে উঠিয়েই দম নিবে। আমায়রা আর থাকতে না পেরে উঠে বসে ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
“হয়েছেটা কি?”

রায়ান মুচকি হেসে বলল,
“হাঁটতে যাবো একসাথে।”

আমায়রা ধপ করে শুয়ে পড়ে বলল,
“আমি যাবোনা। আপনি যান গা।”

আমায়রার কথা রায়ানের পছন্দ হলোনা। আমায়রা বাহু ধরে ওকে উঠিয়ে বসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“বেশি কথা বলো না তো বউ। জানোনা স্বামীর কথা শুনতে হয়। তাড়াতাড়ি একটা গায়ের চাদর নিয়ে রেডি হয়ে নেও।”

আমায়রা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
“বললাম না যাবোনা।”

রায়ান তীক্ষ্ণচোখে চশমার ফাঁক থেকে আমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ঠান্ডা পানি দিয়ে কি গোসল করার শখ জেগেছে তোমার বউ।”

আমায়রা ভ্রুগুটিয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানে”

রায়ান কিছু না বলে ওয়াশরুশ থেকে একমগ পানি নিয়ে এলো। রায়ানের ভাবভঙ্গি বুঝতে পেরে আমায়রা বলল,
“উঠছি তো এতো তাড়া কিসের?”

আমায়রার কাজে বাঁকা হাসলো রায়ান। আমায়রা দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল। ওয়াশরুম ঢুকতে রায়ান বলল,
“তাড়াতাড়ি বের হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে যদি বসে থেকে সময় নষ্ট করো তাহলে কিন্তু…!”

#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন।)