অতুলনীয়া পর্ব-১৫

0
58

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আজ শ্রেয়া ও প্রত্যুষের বিয়ের দিন। সকাল থেকেই সাজসজ্জা চলছে বাড়িতে। ফাতেমাও অংশ নিচ্ছে সেখানে। বাড়িজুড়ে উৎসবের আমেজ কাজ করছে। ফারিয়াও আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে। ফারিয়াকে দেখে সবাই ভীষণ খুশি। মেয়েটাকে অনেক দিন পর এত উছ্বসিত লাগছে। তার শ্রেয়া আন্টির বিয়ে বলে কথা। ফাতেমাও অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে ফারিয়াকে দেখে। মেয়েটা এমনিতে মন খারাপ করে থাকে। এখন অবশ্য হাসিখুশি লাগছে। শ্রেয়ার ভাই-ভাবিও ফিরে এসেছে। শ্রেয়ার বড় ভাই শাহিন এবং ভাবি আরমীণের তেমন কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না এই বিয়ে নিয়ে। তবে তাদের ছেলে শাহেদকে বেশ উচ্ছ্বসিত লাগছে। ফারিয়ার সাথে বেশ নিজের ফুফুর বিয়েতে আনন্দে মেতে উঠেছে।

বিয়ের আয়োজনের মধ্যে যাতে কোন ফাঁক না থাকে সেটাই খেয়াল রাখছেন শাবানা বেগম। তার বিশ্বাস শুধু ফাতেমার উপরেই। ফাতেমা তার বিশ্বাসের মর্যাদাও রাখছে। শ্রেয়ার বড় বোনের মতো সব দায়িত্ব পালন করছে।

আজ বিয়ে উপলক্ষে ফাহিমও এসেছে মোহনাকে সঙ্গে নিয়ে। মোহনা নিজের সব কৃতকর্ম জন্য এখন ভীষণ ভাবে লজ্জিত। তাই সে আজ ঠিক করেছে ফাতেমার কাছে সব কিছুর জন্য ক্ষমা চাইবে। শুধু তাই নয়, ফাহিম ও মোহনা আজ ফাতেমাকে আবার বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এসব তারা ভেবে নিয়েছে।

ফাতেমা আজ ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে দিন পার করছে। যার কারণে সে কোথাও শান্তিতে বসারও সময় পাচ্ছে না।

দেখতে দেখতে বিয়ের শুভক্ষণ এগিয়ে এলো। খবর এলো বর এসে গেছে। সবাই বড় দেখতে যাচ্ছিল। ফাতেমা কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করছিল। এমন সময় হঠাৎ অসাবধানতার কারণে কারো সাথে ধাক্কা খায়। বিপরীত দিক থেকে কেউ ভীষণ রাগী স্বরে বলে,
‘চোখে দেখতে পারেন না?’

ফাতেমা বলে,
‘দুঃখিত।’

লোকটা কোন কথা না বলেই চলে যায়। ফাতেমাও ব্যাপারটা নিয়ে আর তেমন মাথা ঘামায় না। সে চলে যায় শ্রেয়ার রুমে। শ্রেয়াকে সাজাচ্ছিল পার্লার থেকে আসা কিছু লোক। ভীষণ সুন্দরী লাগছিল তাকে। ফাতেমা তো শ্রেয়াকে দেখেই বলে ওঠে,
‘মাশাল্লাহ, তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে।’

‘তুই তো সবসময় এটাই বলিস। নতুন কিছু বল।’

‘প্রত্যুষ চৌধুরী আজ নতুন করে তোর প্রেমে পড়বে!’

‘দেখা যাবে!’

এভাবেই কথা এগোতে থাকে। ফাতেমা শ্রেয়ার সাজানো শেষ হওয়ার পর বলে,
‘তোর তো সাজ শেষ, তাহলে এখন নিচে চল। ওখানে কেউ নিশ্চয়ই তোর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে।’

শ্রেয়া লাজুক হাসে। ফাতেমাই শ্রেয়াকে নিয়ে যায় বিয়ের আসরে। প্রত্যুষ চৌধুরীর সামনে বসানো হয় শ্রেয়াকে। ধীরে ধীরে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। ফাতেমা একদিকে দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখছিল বিয়ের কার্যক্রম। এরমধ্যে কেউ তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তবে ফাতেমা ব্যাপারটায় এত গুরুত্ব দেয় না। এদিকে শ্রেয়া ও প্রত্যুষ চৌধুরীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। সবাই ভীষণ আনন্দিত হয়৷ ফাতেমা সরে যেতে গিয়ে তার পাশে থাকা লোকটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে লোকটা তাকে ধরে রাগী কন্ঠে বলে,
‘কি সমস্যা?’

ফাতেমা আবারো দুঃখিত বলে। লোকটা আবারো রেগে বলে,
‘তখনো একবার ধাক্কা খেলেন, এখন আবার…চোখ কোথায় থাকে?’

ফাতেমা কিছু বলার আগেই লোকটা চলে যায়। ফাতেমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভুল বশতই তো হয়েছে। সে তো আর স্বেচ্ছায় কিছু করে নি। এত রাগ দেখানোর মানে কি!

২৯.
শ্রেয়া শাবানা বেগম ও ফাতেমাকে জড়িয়ে অনেক কান্না করে। নিজের ভাই শাহিনের কাছেও যায়। ভাই যতই পর ভাবুক সে তো আপন ভাবে। আরমীণের কাছেও বিদায় নিতে যায়। শাহেদ এবং ফারিয়াকে কোলে নিয়েও অনেক কান্না করে। অতঃপর বিদায় নেয়। শাবানা বেগম শ্রেয়ার সামনে তো নিজেকে শক্ত রাখে কিন্তু শ্রেয়া চলে যাবার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন, মেয়েটাই তো তার সব ছিল। ফাতেমা তাকে সামলানোর চেষ্টা করে। দূর থেকে দুটো চোখ পর্যবেক্ষণ করছিল ফাতেমাকে। হঠাতই কেউ তাকে পেছন থেকে বলে ওঠে,
‘কিরে নাঈম, তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যাবি না?’

নাঈম চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
‘হ্যাঁ, চল। বাসায় তো কেউ আমার জন্য ওয়েট করছে।’

‘সেটাই তো বলছি। চল, জলদি।’

নাঈম আরো একবার তাকায় ফাতেমার দিকে। অতঃপর মৃদু হেসে বলে,
‘আমার নতুন শিকার!’

৩০.
সোহেল প্রাণপনে দৌড়াচ্ছিল। দুদিন আগেই সে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। এরমধ্যে আর নেহার সাথে সে যোগাযোগ করে নি। আজ রাতে বার থেকে ফিরছিল। এমন সময় হঠাৎ কেউ তার পিছু নেয়। তাও আবার ছু’রি হাতে নিয়ে। সোহেল নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছিল। না জানি কে এভাবে তার পিছে পড়েছে।

সোহেল দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় হাপিয়ে ওঠে। তার পা আর চলতে চাইছিল না। দম নেয়ার জন্য সে একটা গাছের নিচে বসে পড়ে। আশেপাশে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সে ভেবে নেয় আগন্তুক তার পিছু ছেড়ে দিয়েছে। এই ভেবে সোহেল গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে সামনে আসে। এমন সময় পেছন থেকে কেউ তার গলায় ছু’রি ধরে। ভয়ে সোহেলের অত্মরাত্মা কেপে ওঠে। সে কাপা কাপা গলায় বলে,
‘কে তুমি? কি চাও আমার থেকে?’

আগন্তুক বলে,
‘তোর জীবন।’

সোহেলের কাছে এই কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগে। সে বলে,
‘তুমি কে? তোমার গলাটা এত চেনা চেনা লাগছে কেন?’

‘নিজের বিয়ে করা বউকে ভুলে গেলি?’

‘বিয়ে করা বউ মানে…ফাতেমা তুমি..’

সোহেল আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই আগন্তুক তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। সোহেলের উপর উঠে তার হাতে ছু’রিকাঘাত করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। একসময় তার পুরুষাঙ্গ কে’টে দেয়। সোহেল চিৎকার করে ওঠে। আগন্তুক সোহেলের বুক বরাবর ছু’রি চালায়। সোহেলের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় তার দেহ। সে হেসে বলে ওঠে,
‘এটা তোর কৃতকর্মের ফল। এখন আমি তোর রক্তে গোসল করব।’

বলেই অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে আগন্তুক। সোহেলের প্রাণপাখী ততক্ষণে উড়াল দিয়েছে।


নেহা মির্জা সোহেলের এপার্টম্যান্টে এসে তাকে খুঁজে না পেয়ে রেগে যায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘এই লোকটা আবার আমায় ঠকাল না তো? আজই তো আমাদের বিয়ে করার কথা ছিল তাহলে এ কোথায় চলে গেল?’

নেহা মির্জা বাইরে বের হয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। হঠাৎ করেই কিছুটা দূরে এসে সে রাস্তায় তরল জাতীয় কিছু পড়তে থাকতে দেখতে পায়। ভয়ও লাগে খুব। ভালো করে দেখে বুঝতে পারে রক্ত।
‘এখানে রক্ত কি করে এলো!’

বলেই নেহা সেই রক্তকে অনুসরণ করতে থাকে। কিছুটা দূরে গিয়েই ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। কারণ সেখানে সোহেলের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে ছিল। নেহা এই দৃশ্য দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পেছন থেকে কারো অট্টহাসির শব্দ শোনা যায়।

‘প্রথম প্রতিশোধ নেওয়া শেষ। এবার আরেক জনের পালা।’

বলেই সে চলে যায় দূর অজানায়। এদিকে নেহা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেও তার চিৎকার কিছু জনের কানে আসে। সেই শব্দে কয়েকজন ছুটে আসে। এসে এই দৃশ্য দেখে গোটা এলাকায় হুলস্থুল পড়ে যায়। গা শিউরে দেয়ার মতো ঘটনা!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨