অতুলনীয়া পর্ব-২৭

0
48

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ২৭(পাপের শাস্তি)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমাকে লক্ষ্য করে নয়না গু*লি চালানোর আগেই কেউ পেছন থেকে নয়নার হাতের কব্জিতে গু*লি করায় নয়না লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। ফাতেমাও ভয় পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। নেহা মির্জা এগিয়ে এসে ফাতেমাকে তুলে বললো,
“তুমি ভয় পেয়ো না, ফাতেমা। আমি এসেছি তোমাকে বাঁচানোর জন্য।”

ফাতেমা ভরসা ও কৃতজ্ঞতার চোখ নিয়ে তাকায় নেহা মির্জার দিকে। নেহা মির্জা ফাতেমাকে টেনে তোলে। সে সাথে করে পুলিশ অফিসারদেরও নিয়ে এসেছে। তারা এখন নয়নাকে গ্রেফতার করতে চায়। নয়না তো এত সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। তার সে সবার অলক্ষ্যে বন্দুক তুলে নিয়ে নেহা মির্জাকে গানপয়েন্ট করে। নুহাশ খন্দকার বলে ওঠে,
“আপনি ভুল করছেন মিসেস নয়না, ভালো চাইলে স্যারেন্ডার করে দিন। নাহলে কিন্তু আমরা একশন নিতে বাধ্য হবো।”

নয়না বলে ওঠে,
“আমি কিছুতেই স্যারেন্ডার করব না, কিছুতেই না। আপনাদের যা করার আপনারা করে নিন। কিন্তু আমি ফাতেমার শেষ না দেখা পর্যন্ত থামব না। আর আপনারা যদি কোন একশন নেন তাহলে আমি নেহা মির্জাকেও শেষ করে দিবো।”

“লিসেন,এমন করবেন না।”

নয়না যেন আজ বদ্ধ উন্মাদ হয়ে উঠেছে। সে নেহা মির্জাকে গানপয়েন্ট করে পুলিশের নজর বাঁচিয়ে পালিয়ে আসে। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না পাপ বাপকেও ছাড়ে না তাই হলো নয়নার সাথে। তার পায়ে গুলি লেগেছিল তাই বেশিদূর পালাতে পারল না। একটু সামনে গিয়েই রাস্তায় পড়ে গেল। আর তার দুই পায়ের উপর দিয়ে একটা গাড়ি চলে গেলো৷ নয়না ব্যাথায় চেচিয়ে উঠলো। তবে এখানেই শেষ নয়৷ কিছুক্ষণ পর একটা মুখোশ পড়া লোক এসে নয়নার গায়ে কেরোসিন ঢালল। অতঃপর তার গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। নয়না যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। তার গা একদম জ্বলে যেতে লাগল। কিন্তু সে কিছু করতে পারছিল না। কিছুক্ষণ পর নুহাশ খন্দকার তার পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে এই ঘটনা দেখে আতকে ওঠে। তারা সবাই নিয়ে পানি এনে নয়নার গায়ে ঢালে। কিন্তু ততক্ষণে নয়নার দেহের অধিকাংশ অংশই পুড়ে যায়৷ আগুন নেভানোর পরেও নয়না যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। নুহাশ খন্দকার কয়েকজন মহিলা পুলিশ সদস্যকে বলে,
“তোমরা এক্ষুনি ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো কুইক।”

তারা তাই করে।

৫৩.
ফাতেমা ও ফাহিম ফিরে এসেছে তাদেরও বাসায়। ফাতেমা নয়নার অবস্থার কথা ভেবে স্বস্তি পায়। সে যা পাপ করেছে তাতে সে এমন শাস্তিই ডিজার্ভ করত। ফাতেমা এখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে নয়নার যেন মৃত্যু না হয়৷ সে যেন বেঁচে থেকে এই যন্ত্রণা তিলে তিলে অনুভব করতে থাকে আজীবন। সে ফাতেমার সাথে আজীবন যেসব অন্যায় করেছে সব কিছুর জন্য যেন এভাবেই কষ্ট ভোগ করতে থাকে।

ফারিয়া তো ফাতেমাকে বাসায় ফিরতে দেখেই তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মোহনাও ইতিমধ্যে সব জেনে গেছে৷ তাই সে ফাহিমের কাছে এসে বলে,
“তুমি কি এখন ভালো আছ? ঐ নয়না ডাইনি তোমার কোন ক্ষতি করে নি তো?”

ফাতেমা বলে ওঠে,
“ও আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারে নি বরং ওর নিজেরই সব থেকে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ওর এমন পরিণতি হয়েছে যা দেখে সবার অন্তরাত্মা কেপে উঠবে।”

এরপরই সব ঘটনা খুলে বলে মোহনাকে। সব শুনে মোহনা তাজ্জব বনে যায়। আর এই তাজ্জব ঘটনাই তালে অবাক করে।

ফারিয়া ফাতেমাকে শক্ত করে ধরেই বলে,
“ঐ শয়তান আন্টি শাস্তি পেয়েছে এটা জেনেই আমি খুব বেশি খুশি হয়েছি আম্মু। উনি এমন শাস্তিই ডিজার্ভ করেন।”

মোহনাও বলে,
“নয়নার সাথে যা হয়েছে সেটা একদম ঠিক হয়েছে।”

কয়েক দিন পর,
ফাতেমা আজ নয়নার সাথে দেখা করতে এসেছে। নয়নার অবস্থা দেখে সে অনেক টা স্বস্তি পায়৷ নয়নার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যাওয়ার কারণে সে চিরকালের মতো হাটাচলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে শুধু তাই নয়, তার শরীরের ৭০% পুড়ে গেছে। সে কোনরকমে শ্বাস নিয়ে বেঁচে আছে। ডাক্তার বলেছে তার লাইফ রিস আর না থাকলেও সে চিরতরে কোমায় চলে গেছে। তবে সে তার আশেপাশের সবকিছু দেখতে এবং উপলব্ধি করতে পারছে। সব যন্ত্রণাও অনুভব করছে। কিন্তু কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারছে না। ফাতেমা নয়নার কানের কাছে এসে বলে,
“দেখলি তো আল্লাহর ক্ষমতা? আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেয় না। তোর পাপের সামাজ্য আল্লাহ কিভাবে ধ্বংস করেছে তুই দেখ। কি ভেবেছিলি তুই? জীবনে যত খুশি পাপ করবি আর তোর কিছুই হবে না? আজ দেখ সব পাপের জন্য একসাথে কেমন শাস্তি পেলি। আজীবন তুই আমাকে হিংসা করে গেলি। তবে আজ এই হিংসার জন্য সবথেকে বড় ফল পেলি। এরপরও যদি তোর মনে হিংসা বেঁচে থাকে সেটা তোকে আরো কষ্ট দেবে। কারণ তুই যেই শাস্তি পেয়েছিস তা যথেষ্ট হবে না তখন। আল্লাহ তোকে আরো বেশি শাস্তি দেবে। যাইহোক, এখন তুই নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ কর আজীবন।”

বলেই ফাতেমা বেরিয়ে আসে।

৫৪.
নেহা মির্জা আজ এসেছে ফাতেমার সাথে দেখা করতে। নয়নার হাত থেকে ফাতেমাকে যেহেতু নেহা মির্জাই বাঁচিয়েছে তাই ফাতেমা এখন নেহা মির্জাকে অনেক আপন করে নিয়েছে এবং তাকে অনেক ভরসা করতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয় নেহা মির্জা ফারিয়াকেও আপন করে নিয়েছে। ফারিয়া নেহাকে ভালো আন্টি বলে ডাকে। আজ নেহা মির্জা ও ফাতেমা বসে কিছুক্ষণ খুশগল্প বলল।

কথায় কথায় ফাতেমা বলল,
“আচ্ছা, নয়নার এই অবস্থা কিভাবে হলো আপনি কি সেই ব্যাপারে কিছু জানেন?”

আচমকা এমন প্রশ্নে নেহা মির্জা থতমত খেয়ে গেলো। একটু ভেবে বললো,
“আমি কিভাবে জানবো? আমি তো পুরোটা সময় তোমার সাথেই ছিলাম।”

“তা ঠিক। তবে আপনিই ভেবে দেখুন ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত না? নয়নার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে গেল এমনকি তার গায়ে আগুনও লাগল। এটা তো এমনি এমনি হয়নি। কেউ নিশ্চয়ই ইচ্ছে করেই..যাইহোক যে করেছে ভালোই করেছে। নয়না আজীবন যত জঘন্য পাপ করেছে তাতে ওর জন্য জেল বা মৃত্যু যথেষ্ট ছিল না। ও যেই শাস্তি পেয়েছে সেটাই উচিৎ ছিল। ঐ শয়তান মেয়েটা আমার মা-বাবাকেও শেষ করে দিয়েছে।”

“তুমি একদম ঠিক বলেছ ফাতেমা। ঐ নয়না আমার এবং আমার মার সাথেও অনেক অন্যায় করেছে। ওর এটাই প্রাপ্য ছিল।”

এভাবেই কথা আগাতে থাকে। আলাপ শেষে নেহা মির্জা বাইরে বেরিয়ে আসে। বের হবার সময় নুহাশ খন্দকারের সাথে দেখা। দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঈঙ্গিতপূর্ণ হাসে। বাইরে এসে নেহা মির্জা কাউকে একটা ফোন করে বলে,
“আমি মিশনে অনেকটাই এগিয়ে গেছি৷ ফাতেমা এখন আমায় অনেক বিশ্বাস করে।”

“গুড, ভেরি গুড। তবে তুমি জানো, এরপর তোমায় কি করতে হবে।”

“হ্যাঁ, জানি। তবে…”

“তবে কি?”

“আমার তোমার থেকে কিছু জানার ছিল।”

“কি জানতে চাও?”

“নয়নার এই অবস্থার পিছনে কি তোমার হাত আছে?”

“এটা জানা তোমার জন্য দরকারি না। তোমার যতটুকু জানা প্রয়োজন ততটুকুই জানো। এর বেশি কিছু জানার চেষ্টা করলে তোমার অবস্থাও নয়নার মতোই হবে।”

নেহা মির্জা ভয় পেয়ে ফোন রেখে দেয়।

“তাহলে আমার সন্দেহই ঠিক। ঐ আছে এসবের পেছনে। যাইহোক, এসব ব্যাপার নিয়ে আমি আর মাথা না ঘামাই। আপাতত নিজের মিশন পূরণ করার ব্যাপারে ভাবি। পরেরটা পরেও ভাবা যাবে।”

বলেই নেহা মির্জা সামনের পথে রওনা দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨