অতুলনীয়া পর্ব-৩০

0
54

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৩০(ধামাকা)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, ফাতেমা।”

নুহাশ খন্দকারের মুখে এমন প্রস্তাব শুনে বোকা বনে গেলো ফাতেমা। নিজের অবাক হওয়ার পালা কাঠিয়ে উঠে বললো,
“মানে কি এসবের? কি বলছেন আপনি?”

“আমার সাথে আপনার মেয়ের কিডনির টিস্যু মিলে গেছে। আমি আপনার মেয়েকে নিজের কিডনি দিয়ে বাঁচাতে চাই৷ আর এজন্য আমাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা দরকার৷ এই কারণে আমি চাইছি আপনাকে বিয়ে করতে। যাতে আপনার মেয়েকে আমি নিজের কিডনি দান করে বাঁচাতে পারি।”

ফাতেমা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো নুহাশ খন্দকারের দিকে। অতঃপর বলে উঠল,
“কিন্তু এসব করে আপনার কি লাভ? আমার মেয়েকে বাঁচানোর পেছনে আপনার কি স্বার্থ?”

“একটা বাচ্চা মেয়ের জীবন বাঁচাতে পারলে আমার ভালো লাগত। তাছাড়া, আমার ফ্যামিলি আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। আপনি জানেন কিনা জানিনা, আমি একজন বিপত্নীক। আমার প্রথম স্ত্রী অর্পা কয়েক বছর আগে একটা দূর্ঘটনায় মারা গেছে। তারপর থেকে আমার মা চাইছে আমি যেন দ্বিতীয় জীবন শুরু করে। আমাদের একটা মেয়েও আছে। যাইহোক, আমি চাইছিলাম দ্বিতীয় বিয়ে করলে এমন কাউকেই করতে যে বিধবা বা ডিভোর্সি হবে আর এই মুহুর্তে আপনারও সাহায্যের প্রয়োজন নিজের মেয়ের স্বার্থে। তাই এই বিয়েতে বলতে গেলে আমরা দুজনেই লাভবান হবো। এই বিয়েটা হলে আমি আইনত, ফারিয়ার বাবা হয়ে যাব। তখন আর কিডনি দিতে কোন রকম আইনী জটিলতায় পড়তে হবে না।”

ফাতেমা ভেবে দেখলো নুহাশের কথা গুলো ভুল না৷ সত্যিই তারা দুজনেই এই বিয়ে থেকে অনেক উপকৃত হবে। তবু ফাতেমা একটু সময় নিতে চাইল। এজন্য ফাতেমা বলে উঠল,
“আমাকে একটু ভাবার সময় দিন।”

“জ্বি, নিশ্চিত ভাবেই, আমি আপনাকে সময় দিচ্ছি। তবে আশা করি, আপনি খুব তাড়াতাড়ি মতামত দেবেন। কারণ, আমি দেখে এসেছি আপনার মেয়ের শারীরিক অবস্থা বেশি ভালো না। তাই তাকে বাঁচানোর জন্য আপনার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি।”

বলেই নুহাশ খন্দকার চলে গেলেন। ফাতেমা কিছুক্ষণ ভাবলো৷ সত্যিই কত অদ্ভুত এই পৃথিবী। সোহেল নিজের মেয়েকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে স্বার্থ খুঁজছে আর এমন অল্প পরিচিত একজন মানুষ তার মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে। ফাতেমার না করার তেমন কোন কারণ নেই। তবু সে ভাবলো বাসায় গিয়ে ভাইয়া-ভাবির সাথে এ নিয়ে কথা বলে নেবে।

২৯.
ফাহিম ও মোহনা দুজনেই ফাতেমার কাছ থেকে নুহাশের প্রস্তাবের ব্যাপারে শুনল। মোহনা বেশ খুশি হলো। কারণ সে চাইছিল ফাতেমা নিজের জীবনটা আবার নতুন ভাবে শুরু করুক। তাছাড়া এখানে তো ফারিয়ার জীবনও জড়িয়ে আছে। তবে ফাহিম একটু দ্বিমত প্রকাশ করে বললো,
“কিন্তু আমরা তো ঐ লোকটার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। উনি কেমন লোক সেটাও তো আমাদের জানা দরকার।”

ফাতেমা মলিন কন্ঠে বলেন,
“এখন কি এত খোঁজ নেয়ার সময় আছ? আমার মেয়ের জীবন বাঁচানোটাই তো এখন মূখ্য বিষয়।”

মোহনা বলে ওঠে,
“তবু যদি তোমার খোঁজ নেয়ার থাকে তবে একটা কাজ করতে পারো ঐ নুহাশ খন্দকার তো ফাতেমার বান্ধবী শ্রেয়ার স্বামী প্রত্যুষ চৌধুরীর কাজিন হয়। তোমার কাছে তো প্রত্যুষ চৌধুরীর নাম্বার আছে। তার থেকেই খোঁজ নাও।”

“এটা ভালো বুদ্ধি দিয়েছ তুমি।”


নুহাশ তার খুশির মেজাজে বাড়িতে আসে। এসেই নাজমা খাতুনের রুমে গিয়ে বলে,
“আম্মু, তুমি তৈরি হয়ে নাও। আমাদেরকে এখন যেতে হবে।”

“যেতে হবে মানে কোথায় যাব?”

“কাজি অফিসে?”

“কাজি অফিসে কেন?”

“কেন আবার? তুমি তো চেয়েছিলে আমি বিয়ে করি। তো সেই জন্যই তো যাচ্ছি।”

“কিন্তু এখনো তো আমি তোর জন্য কোন মেয়ে দেখা শুরু করিনি।”

“কিন্তু আমি দেখে নিয়েছি।”

“এভাবে কিছু না হয় না, নুহাশ। দেখা নেই, শোনা নেই হঠাৎ এভাবে একটা মেয়ের বাড়ির বউ করবো?”

“কাজি অফিসে চলো সেখানে গিয়ে নাহয় দেখে নিও। কিন্তু এখন আপাতত চলো। আর যদি না যেতে চাও ঠিক আছে। তাহলে আমার বিয়ে দেবার কথা ভুলে যাও।”

নাজমা খাতুন আর কিছু বলতে পারলেন না। নিজের মাকে এভাবে জব্দ করতে পেরে নুহাশ খন্দকার বেশ খুশি হলো। তার মা ব্ল্যাকমেইল করে তাকে দ্বিতীয় বার বিয়েতে রাজি করিয়েছে। আজ এভাবেই তার একটা শোধ তোলা গেল।

নাজমা খাতুন এর কাছেও আর কোন উপায় ছিল না তাই অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও তিনি বললেন,
“ঠিক আছে, চল আমরা যাই।”

নাঈম ও নিহাও এসে হাজির হয়৷ সবাই মিলে রওনা দেয়। নিহা তো আজ অনেক খুশি৷ তার বাবার বিয়ে দেখতে পারবে। এদিকে নাঈমের মনেও উত্তেজনা কাজ করছিল নতুন ভাবিকে দেখার জন্য। তার ভাইয়ের পছন্দের মেয়েটাকে দেখার জন্য। কিন্তু সবার মাঝে নাজমা খাতুন বেশ উদাস মনে ছিলেন। এভাবে হঠাৎ ছেলের বিয়ে নিয়ে তিনি প্রচণ্ড পরিমাণে নাখোশ।

৬০.
ফাতেমা একটা লাল বেনারসি পড়ে কাজি অফিসে হাজির হয়েছে। তার দুপাশে ঘিরে রয়েছে মোহনা আর শ্রেয়া। ফাতেমা বেনারসি পড়তে চায়নি কিন্তু শ্রেয়া একপ্রকার জোর করেই তাকে শাড়ি পড়িয়েছে। সাথে যখন থেকে শুনেছে, ফাতেমার সাথে নুহাশ খন্দকারের বিয়ে তখন থেকে আরো খুশি। সে বলে,
“জানিস, আমার শ্বশুর বাড়িতে সবাই নুহাশ খন্দকারের অনেক প্রশংসা করে। ছোট থেকেই নাকি সে অনেক ভালো ছাত্র ছিল। ব্যবহারও ছিল অমায়িক। প্রত্যুষ তো বলে ওদের কাজিনমহলে নুহাশ খন্দকার সবার কাছে অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তি। এমনকি জানিস, লোকটার প্রথম স্ত্রীর মা হবার সক্ষমতা ছিল না। তবুও সে নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করে নি। অনাথ আশ্রম থেকে একটা বাচ্চা দত্তক নিয়েছিল।”

এসব শুনে ফাতেমা মৃদু হাসে। নুহাশ খন্দকার যে ভালো মানুষ এটা বুঝতে তার আর বাকি নেই। নাহলে কি কেউ কোন কারণ ছাড়াই নিজের কিডনি দিয়ে অপর একজনের জীবন বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেয়?

এরমধ্যে নুহাশ খন্দকার সপরিবারে কাজি অফিসে হাজির হয়৷ ফাতেমার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
“ইনি আমার হবু স্ত্রী, ফাতেমা খাতুন।”

নাজমা খাতুন এতক্ষণ উদাস মনে থাকলেও ফাতেমাকে দেখেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার মনে পড়ে যায় এই মেয়েটাই নিহাকে সেদিন দূর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। নিহাও ফাতেমাকে দেখে খুশি হয়ে বলে,
“এটা তো সেই আন্টি যে আমায় সেদিন বাঁচিয়েছিল।”

ফাতেমাও তাদের এখানে আশা করে নি। নাজমা খাতুন সবাইকে সেদিনের ঘটনা খুলে বলেন। ফাতেমাও নিজের ব্যাপারে সব বলে যে সে ডিভোর্সি কিন্তু এতে নাজমা খাতুন কিছু মনে করেন না। তিনি তো শুধু নিজের ছেলের জন্য একটা ভালো মনের মেয়ে চান। আর যেই মেয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের প্রাণ বাঁচায় সে কিভাবে খারাপ হয়?

নুহাশ খন্দকার ফাতেমার কাছে এসে বলে,
“এবার আর আপনি বলতে পারবেন না যে, আপনি আমার কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আপনিও আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছেন। হিসান বরাবর।”

ফাতেমা সামান্য হাসলো।

তবে এসবের মাঝে নাঈমকে মোটেই খুশি লাগলো না। কোন এক অজানা কারণে তার খুশির আমেজ দূর হলো।

এদিকে কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করল। অবশেষে ফাতেমা ও নুহাশের বিবাহ সুসম্পন্ন হলো।

বিয়ের পর ফাহিম ফাতেমাকে নুহাশের হাতে তুলে দিয়ে বললো,
“আমার বোনটা এতদিন অনেক কষ্টে ছিল। এখন ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব তোমার।”

“আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি আমার দায়িত্ব বেশ ভালো ভাবেই পালন করব।”

বলে ভদ্রতাসূচক হাসল নুহাশ খন্দকার।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨