অতুলনীয়া পর্ব-৩৩

0
55

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৩৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমা নুহাশের অগোচরে ডায়েরিটা লুকিয়ে রেখে স্বাভাবিক স্বরে বলে,
“একটু ড্রয়ারটা দেখছিলাম।”

“চাবি কোথায় পেলে তুমি?”

ফাতেমা আমতা আমতা করে বলে,
“ঐ ছবিটার পেছনে।”

“এরপর থেকে আমাকে না বলে এই ড্রয়ারটা আর খুলবে না।”

নুহাশ এসে ফাতেমার হাত থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে ড্রয়ারটা বন্ধ করে দেয়। নুহাশ ফাতেমার দিকে কিছুটা রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল। আর ফাতেমা ছিল বেশ সাবলীল। নুহাশের সত্যটা যে সে জানতে পেরেছে এটা প্রকাশ করতে চায়না। তাই ডায়েরিটা সযত্নে লুকিয়ে রুমের বাইরে আসে। এ থেকেই অনেক সমীকরণ বদলে যাওয়ার সম্মুখীন।

ফাতেমা বাইরে এসে ডায়েরিটা খুলে দেখে অবাক হয়ে যায়। কারণ সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
“আমি যেসব প্রমাণ পেয়েছি সেসব জানতে আজ আমি পুরান ঢাকার আহসান বিল্ডিং এর স্কোয়ার রেড ডিভিশনে যাচ্ছি। কারণ এখানেই ঐ নারী পাচারচক্র কারীর আস্তানা আছে। যেখান থেকে তারা নারী পাচার করে।”

ফাতেমা দ্রুত সেই ঠিকানার উদ্দ্যেশে যাবে বলে বের হলো। তবে একা যাওয়া ঠিক হবে না। এইজন্য ফাতেমা নাঈমের সঙ্গ নেবে ভাবলো। নাঈমের কাছে গিয়ে বললো,
“আমি অর্পা আপার ডায়েরি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এই ঠিকানায় গেলে আমরা নারী পাচারকারীর সন্ধান পাবো।”

নাঈম বললো,
“তাহলে চলুন আমরা এখানে যাই।”

“কিন্তু একা যাওয়া তো রিস্কি হবে।”

“আপনি চলুন আমার সাথে আমি পুলিশকে ইনফর্ম করে দিচ্ছি।”

ফাতেমা নুহাশের উপর আস্থা রেখে তাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেয়। কিন্তু এটাই যে তার কাল হবে কে জানত!

নাঈমের সাথে উক্ত ঠিকানায় পৌঁছানোর আগেই নাঈম মাঝ রাস্তায় পথ বদলে নেয়। ফাতেমা বলে ওঠে,
“আরে তুমি এদিকে কেন নিয়ে যাচ্ছ? ঠিকানা তো অন্যদিকে!”

নাঈম বাকা হেসে বলে,
“আগের ঠিকানা এটাই ছিল কিন্তু এখন ঠিকানা বদলে ফেলেছি৷ নাহলে যে ভাইয়া আমাদের ধরে ফেলত।”

“মানে?”

নাঈম আচমকা গাড়ি থামায়। গাড়িতে উঠে পড়ে এক রমণী৷ ফাতেমা সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,
“নেহা মির্জা!”

নেহা ফাতেমার মাথায় বন্দুক ধরে বলে,
“তোমাকে আমি এতটা বোকা ভাবিনি ফাতেমা! বড্ড কাচা কাজ করে ফেললে!”

“তার মানে তোমরা আছ এর পেছনে?”

নাঈম অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, আমিই। আমি হলাম মিস্টার এক্স।”

“তার মানে অর্পা আপুকে..”

“হ্যাঁ, বড় ভাবিকে আমিই মেরেছিলাম। এবার আপনার পরিণতিও য়ার মতোই হবে। কারণ আপনিও তার মতো বোকামো করে ফেললেন! সে যেমন আমার কথায় ভাইয়াকে ভুল বুঝে ফেসে গেছিল। তেমন অবস্থা হলো আপনারও।”

৬৫.
ফ্ল্যাশব্যাক~~~
অর্পা তখন নারী পাচারকারী চক্রের ব্যাপারে প্রমাণ খুঁজতে ব্যস্ত ছিল। সেই সময় নাঈম অর্পাকে কিছু মিথ্যা প্রমাণ দিয়ে এটা বোঝাতে পেরেছিল যে নুহাশ খন্দকার এসবের পেছনে রয়েছে। নাঈমের পোষ্য কিছু দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশও তাকে এটা বিশ্বাস করাতে সাহায্য করেছিল।

তবে অর্পা এতটাও বোকা ছিল না। সেদিন সে ডায়েরিটা লেখার পরই…

“এই ঠিকানায় গেলেই আমি জানতে পারব আসল সত্যটা। কেন জানি আমার মন মানতে চাইছে না যে, নুহাশ রয়েছে এসবের পেছনে।”

অর্পা সেই ঠিকানায় রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছে অর্পা অবাক হয়নি যায়। কারণ সেখানে অনেক মেয়ে বন্দি ছিল। অর্পা নিজের ক্যামেরা বের করে সবকিছু রেকর্ড করতে শুরু করে। আজ সে সব অপরাধের পর্দা উন্মোচন করবে। মিস্টার এক্স কিছু বিদেশী ক্লাইন্টের সাথে মেয়েগুলোকে চড়া দামে বিক্রি করার ডিল সাইন করছিল। সে নিজের মুখে মাস্ক পড়ে ছিল জন্য তাকে চেনা যাচ্ছিল না। অর্পা সেই ভিডিও করতে থাকে ক্যামেরায়।

হঠাৎ করে মিস্টার এক্স নিজের মাস্ক খুলে ফেলে। তার চেহারা দেখেই অর্পা অবাক হয়ে যায়। কারণ এটা আর কেউ ছিল না, ছিল নাঈম।

“তার মানে এসবের পেছনে নাঈমের হাত রয়েছে। আর আমি শুধু শুধু নুহাশকে সন্দেহ করছিলাম।”

অর্পা প্রায় সব প্রমাণ সংগ্রহ করে ফেলে। এবার তার গন্তব্য পুলিশ স্টেশন। সেখানে গিয়ে এসব ফুটেজ দিবে তারপর নিউজ চ্যানেলে পাবলিশড করবে। দূর্ভাগ্যবশত অর্পা ফিরে আসতে যাবে এমন সময় নেহা মির্জা তাকে দেখে ফেলে৷অতঃপর নাঈমের উদ্দ্যেশ্যে চিৎকার করে বলে,
“মিস্টার এক্স, একজন আপনাদের সবকিছু গোপনে ভিডিও করে নিয়ে পালাচ্ছে।”

নাঈম নিজের টিমের কিছু লোককে লাগিয়ে দেয় অর্পার পেছনে। অর্পা পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, তারা গিয়ে অর্পাকে ধরে আনে।

অর্পাকে দেখে নাঈম কুটিল হেসে বলে,
“এতটা জানা তোমার ঠিক হয়নি ভাবি। এবার তো তুমি আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছ। তোমাকে তো আর বাচার সুযোগ দেয়া যাবে না।”

অর্পা ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল নাঈমের দিকে।

“আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এত জঘন্য।”

“আমি কতটা জঘন্য সেটা তুমি এবার বুঝতে পারবে।”

বলে সবার সামনে অর্পার সালোয়ার কামিজ ধরে টানতে থাকে নাঈম। অর্পা বলে ওঠে,
“কি করছ এটা?”

নাঈম সবার সামনে টেনে ছিড়ে ফেলে অর্পার বস্ত্র। অর্পা অসহায়ের মতো কাঁদতে থাকে। নাঈম এতেও ক্ষান্ত হয়না। এরপরই ঝাপিয়ে পড়ে অর্পার উপর। অর্পা অনেক করে বলতে থাকে,
“আমি তোমার ভাবি হই নাঈম,আমার সাথে এমন করোনা। প্রয়োজনে আমায় মেরে ফেলো..”

কিন্তু নাঈমের কানে কোন কথা যায়না। সে অর্পাকে ধ**র্ষ**ণ করে। শুধু এতেই ক্ষান্ত হয়না। একে একে নিজের ১০ জন সহকারীকে দিয়েও অর্পাকে রে**প করায়। অর্পার প্রতিটা যন্ত্রণার আর্তনাদ যেন সে উপভোগ করতে থাকে। অতঃপর নাঈম অর্পার মাথায় গু**লি করে তার প্রাণ নাশ করে।

৬৬.
অতীতের ভয়ংকর কথাগুলো শুনে ফাতেমার দেহ শিউরে ওঠে। নাঈম হেসে বলে,
“চিন্তা নেই, তোমাকে আমি এত সহজে মারবো না।অনেক কষ্ট দিয়ে মারব। বুঝলে ?”

ফাতেমা ভাবে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালাবে। নেহা মির্জা সেটা বুঝতে পেরে একটা কিছু স্প্রে করে ফাতেমার মুখে। যাতে করে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।


“আজ তিনদিন হয়ে গেল ফাতেমা মিসিং। তুই কেন এখনো ওকে খুঁজে পাচ্ছিস না নুহাশ?”

নিজের ছেলের উদ্দ্যেশ্যে রাগী কন্ঠে বলেন নাজমা খাতুন। নুহাশ অপারগ সুরে বলে,
“আমি তো নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আম্মু।”

ফারিয়া, নিহা দুজনেরই মন খারাপ। ফারিয়া একদম ঠিকমতো খাচ্ছে না। ফাহিম, মোহনাও এবাড়িতে এসে পড়ে আছে। কারণ আজ তিনদিন হয়ে গেলো ফাতেমার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নুহাশ অনেক খুঁজেও কোন সুরাহা করতে পারছে না।

নুহাশের নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে। এদিকে নাঈম ক্রুর হেসে বলছে,
“তুই আর জীবন্ত অবস্থায় ফাতেমার খোঁজ পাবি না ভাইয়া।”

এমন সময় নুহাশের ফোনে থানা থেকে কল আসে। ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে বলে ওঠে,
“উত্তরা এলাকায় ডোবা থেকে একজন মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরণে আপনার স্ত্রী ফাতেমার ড্রেস।”

নুহাশের হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। নাজমা খাতুন এগিয়ে এসে বলেন,
“কি হয়েছে নুহাশ?”

“আম্মু..ফাতেমা..ও আর নেই আম্মু”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨