অতুলনীয়া পর্ব-৩৪

0
59

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দেয় নেহা মির্জা। ফাতেমার মুখে খাবার ধরে বলে,
“এই নেও। বেশি নাটক না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।”

“আমি খাবো না, আমাকে প্লিজ এখান থেকে যেতে দিন আপু।”

“আমার সামনে এসব নাটক করে কোন লাভ নেই। এখানে আমার সামনে কত হাজার হাজার মেয়েকে ও পাচার করেছে৷ আমি তো লন্ডনেও গিয়েছিলাম এইসব কাজের জন্যই৷ কারো প্রতি আর মায়া আসে না।”

নাঈম সেখানে উপস্থিত হয়। এসেই বলে,
“কি হলো ভাবি, তুমি এখনো খাওনি?”

ফাতেমা রেগে বলে,
“তোমায় দেখলেই আমায় ঘৃণা হয়৷ এসব অপরাধ করে তুমি পার পেয়ে যাবে ভাবছ? দেখবে নুহাশ ঠিকই আমায় উদ্ধার করবে।”

নাঈম অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“কে উদ্ধার করবে তোমায়? ভাইয়া? তার কাছে তো তুমি মৃত!”

“মানে?”

“আমি অন্য একটা মেয়েকে মেরে তাকে তোমার মতো ড্রেস পড়িয়ে দিয়েছি। তার শরীরের আকৃতি একদম তোমার মতো। তাই, এখন আর কেউ তোমার খোঁজ করবে না।”

“এত বড় চক্রান্ত করেছ তুমি?”

নুহাশ হাসতে থাকে। নেহা মির্জাও তার সাথে যোগ দেয়। ফাতেমা তাদের দেখে ঘৃণায় চোখ নামিয়ে নেয়। মনে মনে বলে,
“আল্লাহ, আমার ভরসা আছে তোমার উপর। তুমি এখান থেকে আমায় উদ্ধারের পথ দেখাও। এই স্থানে থাকতে আমার গা গুলিয়ে যাচ্ছে। না জানি, এখানে আমার ভাগ্যে কি আছে!”

নাঈম বলে ওঠে,
“তোমার হাতে তার বেশিদিন সময় নেই। আগামী সপ্তাহেই তোমাকে বিদেশে পাচার করব। তারপর তোমার জীবন হবে নরক সমতূল্য।”

ফাতেমা ভেঙে পড়ে। না জানি তার সামনে কি অপেক্ষা করছে।

৬৭.
নুহাশের সামনে একটি দেহ। এই দেহটির মুখ এমন ভাবে থেতলে দেওয়া হয়েছে যে বোঝাই যাচ্ছে না এটা কার দেহ। নাজমা খাতুন এবং মোহনা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা ভেবেছে এটা ফাতেমার দেহ। কিন্তু ফাহিম একদম স্বাভাবিক। নুহাশের কাছে যায় ফাহিম। নুহাশ বলে,
“তার মানে আপনিও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন?”

“হ্যাঁ, এটা ফাতেমার দেহ নয়। কারণ..”

“ফাতেমার ঘাড়ের কাছে একটা তিল আছে যেটা এই বডিতে নেই।”

“একদম!”

নুহাশ খন্দকার একটু ভেবে বলে,
“কিন্তু আমাদের এখন এটা কাউকে বুঝতে দিলে চলবে না যে, আমরা সত্যটা বুঝে গেছি। কারণ এতে ফাতেমাকে যারা অপহরণ করেছে তারা সাবধান হয়ে যাবে। আপাতত আমাদের অভিনয় করে যেতে হবে।”

“হুম, ঠিক বলেছ তুমি।”

নুহাশ ও ফাহিমও এরপর কষ্ট পাওয়ার অভিনয় করা শুরু করে।

★★★
ফাতেমাকে বন্দি অবস্থায় রেখে সবাই বেরিয়ে গেছে। কিন্তু ফাতেমা এরমধ্যে একটা চালাকি করেছে। তার শরীরের গোপন স্থানে একটা বাটন ফোন লুকিয়ে রেখেছিল। খাবার জন্য হাত ছাড়া পেতেই কৌশলে সেই ফোনটা বের করে নিয়েছে।

কিন্তু এই ফোনের একটা সমস্যা,এই সিমটায় কারো নম্বর সেভ নেই। ফাতেমার হাত বন্ধ ছিল। অনেক কষ্টে একটা হাত ছাড়িয়ে নেয়৷ ফাতেমার নুহাশদের বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বার মুখস্থ ছিল। তাই সে দ্রুত সেই নাম্বারে ডায়াল করে।

এদিকে নুহাশদের বাড়িতে এখন নিহা ছাড়া কেউ নেই। নাঈম সবাইকে চট্টগ্রামে জরুরি কাজ আছে বলে বাইরে গেছিল। সবেমাত্র সে বাসায় ফেরে। বাসায় এসে দেখে নিহা টেলিফোনে কারো সাথে কথা বলছে। নিহা ফাতেমার ফোনটা রিসিভ করেছিল। নিহা ফোন রিসিভ করতেই ফাতেমা বলে ওঠে,”কে?”

“নতুন মা তুমি কোথায়? আমি নিহা।”

“নিহা, আমাকে তোমার নাঈম চাচ্চু কিডন্যাপ করে কোথাও একটা লুকিয়ে রেখেছে। তুমি প্লিজ তোমার বাবাকে ফোনটা দাও।”

“বাবা তো বাসায় নেই নতুন মা, কেউই বাড়িতে নেই। শুধু আমি আছি।”

“বাড়িতে কেউ এলে কথাটা বলো আর তোমার নাঈম চাচ্চুকে একদম বলবে না।”

ফাতেমা ফোন কে””টে দিতেই নেহা মির্জা সেখানে চলে আসে। সে ফাতেমার হাতে ফোন দেখে বলে,”কার সাথে কথা বলছিলে?”

“ক..কই…নাতো?”

নেহা ফাতেমার মাথার চুল টেনে ধরে। কয়েকটা চড় থা*প্পড় মে*রে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
“সর্বনাশ..এখনই বসকে জানাতে হবে।”

এদিকে নাঈম নিহার সামনে এসে বলে,
“কে ফোন করেছিল?”

“কেউ না।”

এমন সময় নেহা মির্জা নাঈমকে ফোন দিয়ে বলে,
“বস, ফাতেমা আপনাদের বাসায় ল্যান্ডলাইনে ফোন করেছিল। কেউ কি সব জেনে গেল নাকি?”

নাঈম ফোনটা রেখে দিয়ে নিহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তোমার নতুন মা ফোন করেছিল?”

নিহাঃতুমি নতুন মাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ চাচ্চু?

নাঈমঃআমি তোমার নতুন মার সাথে একটা গেইম খেলছি। তুমি খেলবে সেই গেইম?

নিহাঃহ্যাঁ, খেলবো।

নাঈম বাকা হেসে,
“তাহলে চলো আমার সাথে।”

৬৮.
নাঈম নিহাকে নিয়ে তার আস্তানায় চলে আসে। নিহা বলে ওঠে,
“এটা তুমি আমায় কোথায় নিয়ে এসেছ চাচ্চু? এখানে কত অন্ধকার।”

নাঈম লালসার দৃষ্টিতে নিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার তো এরকম ছোট্ট বাচ্চাদের প্রতি আলাদাই চাহিদা আছে। অনেকদিন পর তার ভেতরের রাক্ষসটা আবার জেগে উঠল। নাঈম ভুলে গেল এই সেই নিহা যে চাচ্চু বলতে পাগল। যাকে সে কোলে নিয়ে বড় করেছে।

এক নিমেষেই সে নিহাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেললো। ছোট্ট নিহা ভয় পেয়ে বলল,
“এটা তুমি কি করছ চাচ্চু?”

“একটা মজার খেলা খেলব। তুমি শুধু চুপ করে থাকবে।”

বলেই নাঈম ঝাপিয়ে পড়ল ছোট্ট নিহার উপর। ছোট্ট নিহা কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজের শরীর দিয়ে তার ছোট্ট শরীর পিষে ফেলল। কিছুক্ষণ যেতেই নিহা তার ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে নাঈমকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করল কিন্তু তার মধ্যে যেন আজ পশু ভর করেছে। নিহা চেচাতে লাগল। তার কান্নায় চারিদিক ভারী হয়ে উঠল কিন্তু নাঈম যেন এসবে দ্বিগুণ আনন্দ পেল। অনেকক্ষণ ধরে নরপশুর মতো অত্যাচার চালালো ছোট্ট নিহার উপর। এরপর একসময় নিজের চাহিদা মিটিয়ে সরে এলো।

নিহার ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সে কেঁদে কেঁদে বলছিল,
“তুমি অনেক পচা চাচ্চু। আমি আব্বুকে সব বলে দেব।”

“বেঁচে থাকলে তো বলবি..”

বলেই নিহার গলা চেপে ধরল নাঈম। ছোট্ট নিহা এমনিতেই অনেক দূর্বল হয়ে ছিল। সে পারল না নাঈমকে আটকাতে। একসময় ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করলো। এই নির্মম পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো ছোট্ট একটি প্রাণ।


বিগত কয়েক ঘন্টা যাবৎ ফাতেমার উপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে নেহা মির্জা। তার শ্বাস আটকে এলো। তবুও ফাতেমার নিজের জন্য চিন্তা হচ্ছে না। তার চিন্তা হচ্ছিল নিহার জন্য। না জানি ঐ বাচ্চাটার সাথে কি করবে নাঈম। নেহা তো ওকে সব বলে দিয়েছে। এমন সময় নাঈমের আগমন ঘটলো। তাকে দেখে ফাতেমা সর্বশক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নাঈমের কাছে গিয়ে তার কলার ধরে বলল,
“নিহা কোথায়? তুই কি করেছিস ওর সাথে?”

“বেশি কিছু না। শুধু ওকে সেখানেই পাঠিয়ে দিয়েছি যেখানে ওর পালিত মা আছে।”

ফাতেমার গলা ধরে আসে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট নিহার অববয়। কি মিষ্টি দেখতে ছিল মেয়েটা। ফর্সা দেহ, হাসলে গালে টোল পড়ত। এত মিষ্টি একটা মেয়েকে এভাবে শেষ করে দিতে পারল নাঈম? ওকে তো ও নিজের চোখের সামনে মানুষ হতে দেখেছে। একটুও কি মায়া হয়নি? এতটা অমানুষ কেউ হতে পারে?

ফাতেমা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নাঈমের গলা চেপে ধরে বলল,
“তোকে আজ আমি শেষ করে দেব। তুই একটা অমানুষ,নরকের কিট তুই।”

নেহা মির্জা এসে ফাতেমাকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ফাতেমার শরীরে যেন হঠাৎ অনেক শক্তি এসে গেছে। সে কিছুতেই পারছিল না। অবশেষে নাঈম ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨