অতুলনীয়া পর্ব-৩৬

0
65

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৩৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নুহাশ খন্দকার যথাসময়ে উপস্থিত হলো কাঙ্খিত ঠিকানায় গিয়ে। আশেপাশের পরিস্থিতি ভীষণ শান্ত। নুহাশের মনে সন্দেহ জাগলো। আসলেই কি কেউ এখানে আছে? নুহাশ এদিক ওদিক খুঁজল। না,কারো অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে না। ফিরে যেতে গিয়ে আবারো থমকে দাঁড়ালো নুহাশ। বন্দুকটা বের করে গান পয়েন্ট করলো অজ্ঞান ব্যক্তির মাথায়। অতঃপর বেশ রাগী কন্ঠে বললো,
“একদম কোন আওয়াজ করবি না। চুপচাপ আমাকে তোদের বসের কাছে নিয়ে চল। নাহলে এখানেই তোর লা*শ ফেলে দেব।”

নিজের জীবনের মায়া কার নেই?! সেই ব্যক্তিও ভয় পেলো। ধরে আসা গলায় বললো,
“আসুন আমার সাথে।”

নুহাশ খন্দকার চলতে লাগলো। ব্যক্তিটি তাকে পথ দেখাচ্ছে। নুহাশ তখনো ব্যক্তিটির মাথায় বন্দুক ধরে আছে। ব্যক্তিটি যাতে কোন চালাকি না করে সেদিক পানে সচেতন রইল।

ধীর পায়ে ব্যক্তিটি নুহাশকে সাথে নিয়ে এলো একটি গোপন ঘরের সামনে। অতঃপর বললো,
“এবার অন্তত আমায় যেতে দিন। আমি আপনাকে পথ দেখিয়েছি জানলে বস আমায় জানে মে*রে দেবে।”

নুহাশ বাকা হেসে বললো,
“যে নিজের বসের প্রতি বিশ্বস্ত রইতে পারল না, সেই বিশ্বাসঘাতককে আমি অন্তত সু্যোগ দেব না।”

বলেই গু*লি চালালো ব্যক্তিটির উপর। তার রক্তে ভিজে গেলো আশেপাশের স্থানসমূহ। বন্দুকের শব্দে সতর্ক হয়ে গেলো নাঈমের বাহিনী। একে একে তারা সবাই আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে নুহাশ খন্দকারের মাথায় বন্দুক ধরলো। সবশেষে নাঈম নিজেও বেরিয়ে এলো। নিজের ভাইকে দেখে অবাক হয়ে বললো,
“ভাইয়া! তুমি এখানে! এই তোরা সবাই বন্দুক নামা।”

নুহাশ বললো,
“এই প্রশ্ন টা তো আমার তোকে করা উচিৎ ছিল। তোর তো এখন চট্টগ্রামে থাকার কথা। তাহলে তুই এখানে কি করছিস?!”

নাঈম আমতাআমতা করে বলল,
“কাজ শেষ হয়ে গেছে তাই ফেরত এসেছি।”

“নিহা কোথায়?”

“সেটা আমি কি করে জানবো?”

“আমার সাথে একদম চালাকি করার চেষ্টা করবি না। তুই কিন্তু আমাকে খুব ভালো করেই চিনিস।”

নাঈম বুঝল লুকোচুরি করে আর কোন লাভ নেই। তাই বলতে লাগল,
“নিহা সব কিছু জানতে পেরে গেছিল ভাইয়া, তাই আমার ওকে সরিয়ে দিতে হয়েছে।”

নাঈমের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় তার গালে চ*ড় পড়তে দেরি হলো না। নুহাশ প্রচণ্ড রেগে বললো,
“কার অনুমতি নিয়ে নিহার সাথে এমন করেছিস তুই? নিজেকে কি আমার থেকেও শেয়ানা ভাবতে শুরু করেছিস? তোকে তো আমি পরে দেখছি। আগে বল, ঐ ফাতেমাকে কোথায় বন্দি করে রেখেছিস।”

নাঈম একটা বদ্ধ ঘরের দিকে ঈশারা করে বলে,
“ঐ কক্ষে।”

নুহাশ খন্দকার কক্ষটির সামনে এসে তালা দেখে বলে,
“জলদি এটা খোল।”

“আচ্ছা, ভাইয়া।”

৭১.
ফাতেমার চোখ সবে লেগে গিয়েছিল। এমন সময় হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে সে চোখ খুলে তাকায়। আবারো চোখ বন্ধ করে নেয়, কিছুক্ষণ পরে এক চেনা গন্ধ নাকে আসতেই সে চোখ মেলে চায়। চোখ খুলতেই হতবাক হয়ে যায়। সে কি সত্যি দেখছে? নাকি এসবই তার হ্যালুজিনেশন?! ফাতেমা বারকয়েক চোখ বন্ধ করে আবারো খুলল। কিন্তু ফলাফল একই।

ফাতেমার মনে আশার আলো জেগে উঠল।

ফাতেমাঃআপনি এসেছেন নুহাশ? আমার বিশ্বাস ছিল, কেউ না কেউ আমাকে বাঁচাতে আসবেই। জানেন,আপনার ভাই নাঈম আছে এসব কিছুর পেছনে। সে যে কতটা জঘন্য সেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। অর্পা আপা, ছোট্ট মাসুম নিহা সবাইকে ও নিজের হাতে শেষ করেছে। না জানি আরো কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে ও।

সব বলার পরে ফাতেমা লক্ষ্য করল নুহাশ খন্দকারের মুখভঙ্গি একদম স্বাভাবিক। যেন এসব কিছু নিয়ে সে বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়। ফাতেমা ভেবেছিল নুহাশ এসে তাকে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি করবে। অথচ সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফাতেমার কাছে এবার সবটা সত্য মনে হলো।

এমন সময় নেহা মির্জার আগমন ঘটে। নেহা মির্জা নুহাশের কাঁধে হাত রাখে। নুহাশের শরীরে অযাচিত ভাবে হাত বুলিয়ে বলে,
“কি অবাক হচ্ছ? উনি কে জানো? নুহাশ খন্দকার ওরফে মিস্টার এক্স। এই নারীপাচার চক্রের আসল কিং।”

ফাতেমা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। সবটা কল্পনা মনে হচ্ছে। তার মুখ দিয়ে কথা পর্যন্ত বের হচ্ছিল না। এতটা অবিশ্বাস্য পৃথিবীকে তার কখনো মনে হয়নি।

নেহা মির্জাঃকি হলো কথা যে একদম বন্ধ হয়ে গেল?

ফাতেমাঃএসব মিথ্যা। উনি…উনি কিভাবে…

এমন সময় এক ভারী পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসলো,
“এসব কিছু সত্যি।”

৭২.
ফাতেমা যেন এক ঘোরের মাঝে হারিয়ে গেলো। নুহাশ খন্দকার একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়লো ফাতেমার সামনে। ফাতেমা তখনো হতবিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নুহাশের দিকে। নুহাশ বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল,
“তুমি এই কালো জগত সম্পর্কে কিছুই জানো না, ফাতেমা। এখানে সবাই প্রক্সি রেডি রাখে, ক্লোনও বলতে পারো। নাঈম আমার তেমনই এক ক্লোন। আমার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এমন এক ক্লোন যে এই অপরাধ জগতে আমার প্রতিনিধিত্ব করে। অথচ পেছন থেএ ছড়ি ঘুড়াই আমি।”

ফাতেমাঃআপনি এতটা জঘন্য!

নুহাশঃকেন? বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে?

ফাতেমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তার মন কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না নুহাশ এমন। যেই লোকটা নিজের কিডনি দিয়ে তার মেয়ের প্রাণ বাঁচালো, যার সাথে কয়েক মাস সংসার করে একবারও মনে হলো না লোকটার মাঝে খারাপ কিছু আছে তার পেছনের চেহারা কি করে এতোটা কদর্য হতে পারে?

নুহাশ ফাতেমাকে চুপ দেখে বললো,
“প্রাচীনকালে জলদস্যুদের একটা নীতি ছিল জানো? তারা নিজেদের সাথে খেলতে বেশ ভালোবাসত। প্রথমে তারা কোন জাহাজে সাধারণ যাত্রী হিসেবে প্রবেশ কর‍তো। সেখানকার সব সহযাত্রীদের সাথে বন্ধুর মতো মিশে যেত, বিপদে-আপদে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসত। সবার ভরসার পাত্র হয়ে বসে থাকত। আর সবার শেষে…সেইসব ঘুমন্ত সহযাত্রীদের বুকে ছু’রি চালিয়ে দিত।”

ফাতেমা এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার আর পারলো না। প্রবল ক্ষোভের সহিত বলে উঠল,
“এত অমানুষ আপনি? নিজের স্ত্রী-সন্তানের ব*লি দিতেও দুবার ভাবলেন না?”

“এই পৃথিবীতে কেউ কারো আপন হয় না, ফাতেমা। আমাদের পথে যারা বাধা আসে তারা সবাই আমাদের শত্রু। তাদের মিটিয়ে দেওয়াই আমাদের কর্তব্য!”

“নুহাশ…”

নুহাশ বাকা হাসলো।

“এমনি এমনি আমি মিস্টার এক্স হয়ে উঠিনি। এই যায়গায় আসার জন্য আমি নিজের বাবার গলাতেও ছু*রি বসিয়েছি যিনি আমার গুরু ছিলেন। যার দৌলতে আমার এই অন্ধকার জগতে প্রবেশ। কাউকে পরোয়া করি না আমি, কাউকে না।”

ফাতেমার মনে হঠাৎ কিছুটা খটকা লাগলো। সে মনে করার চেষ্টা করলো নুহাশ, নাঈমের চেহারা কেন তার চেনা চেনা লাগত। ও বাড়িতেও তাদের বাবার কোন ছবি সে দেখতে পায় নি। ফাতেমার কাছে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই পরিস্কার হতে থাকে,

ফাতেমাঃআপনার বাবা…

নুহাশঃনাহিদ মির্জা…

ফাতেমার অবাক হওয়ার সব মাত্রা এবার ছাড়িয়ে যায়। সব কিছু এবার তার কাছে দিনের আলোর মতো পরিস্কার। সব মিথ্যার উপর থেকে পর্দা যেন এক পলকে সরে যায়। ফাতেমা চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এটা হতে পারে না! এত বড় ধোকাবাজি কি করে সম্ভব?”

নুহাশ হেসে বলে,
“সবকিছুই সম্ভব ফাতেমা। তুমি এখনো অজ্ঞ..তবে চিন্তা করো না। তোমার বিসর্জনের আগেই তোমার সব কৌতুহল আমি মিটিয়ে দেব। আর কোন রহস্য থাকবে না তোমার সামনে।”

ফাতেমা অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে নুহাশের দিকে। তাকে যে এখন অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨