#অথৈ জলের পুষ্পমাল্য
কামরুন নাহার মিশু
২৩ / শেষ পর্ব
রীমা বন্ধ ঘরের আয়নার সামনে বসে অধীর আগ্রহে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
খুব কী বোকা মনে হচ্ছে তাকে! সরলতা, সততা আর বোকামী কি এক জিনিস?
রীমা একটু ইতিবাচক মানসিকতা রাখে। সে গোবরেও পদ্ম ফুল দেখতে পায়। খুব সহজে নেতিবাচক কিছু ভাবতে পারে না। সে কারণে সে ভাবতে পারেনি ছোট বোনের বরের সাথে বড় বোনের সম্পর্কে ভাই, বোন ছাড়াও অন্য নোংরামী প্রবেশ করতে পারে!
এটাই কী তার বোকামী! শর্মিলি আহমেদ চাচ্ছেন রীমাকে অন্ধকারে রেখে তিনি একাই সব জানবেন। শাওন চাচ্ছে রীমাকে বোকা বানিয়ে মিথ্যা কথা বলে নিজে সৎ স্বামী সাজবে। রীমা সরল কিন্তু বোকা নয়।
যে খবর তার শাশুড়ি জানেন সে খবর সে জানবে না কেন? হয়তো শর্মিলি আহমেদ তাকিয়ে বুঝতে পেরেছেন। রীমা কি প্রমাণ পেয়েও বুঝতে পারবে না?
অনেক সময় বোকা সেজে থাকার মধ্যেও একটা প্রবল আনন্দ আছে। রীমা তার শাশুড়ির চেষ্টাকে সম্মান করছে, তিনি চাচ্ছেন সব কিছু থেকে রীমাকে অন্ধকারে রেখে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে রীমাকে সংসার করতে দেবেন। এটা কেবল একজন মায়ের পক্ষেই করা সম্ভব।
কিন্তু রীমা তো সবই জানে। সীমার রেখে যাওয়া মোবাইলের সিম চেক করেই রীমা বুঝতে পেরেছে সীমার সাথে শাওনের সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু ছিল।
শাওনের দরজা নক করলে শাওন বের না হয়ে, কেন অন্য রুম থেকে সীমা বেরিয়ে আসতো। তখন তারা সারা রাত ফোনে কথা বলে কাটাতো।
রীমা ইচ্ছে করলে পারতো তাদের কল রেকডিং উদ্ধার করতে, কিন্তু রীমার মন চায়নি। সব কিছু জেনে কষ্টের পাল্লা ভারি করতে।
কিন্তু সে ভাবতে পারেনি, খুব ভোরে শাওনের গোসল করার পিছনে সীমা ছিল। সে ভাবতে পারেনি, তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তার সন্তানের বাবা, তার আপন মায়ের পেটের বড় বোন রঙ্গলীলা করবে।
এতটা নিচেও কি কোনো মানুষের পক্ষে নামা সম্ভব? সম্পর্কের তো কত শ্রেণিবিন্যাস আছে। রীমা ভেবেছে তার গাফলতিতে শাওন হয়তো সীমার উপর মানসিক ভাবে নির্ভরশীল হয়েছে, সে সম্পর্ক যে শারীরিক পর্যন্ত গড়াবে রীমা ভাবতে পারেনি।
রীমারও অনেক ছেলে বন্ধু আছে, ধ্রুব, ইসমাম, রনি। অনেক সময় মন খারাপ হলে রীমা ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের সাথে কথা বলে।
কতদিন শাওনকে পাশে রেখেও রীমা তার বন্ধুদের সাথে কথা বলেছে। সব নারী -পুরুষের সম্পর্কে পাপ থাকবে কেন?
সব জেনেও রীমা চুপ করে আছে, কারণ রীমা বুঝতে পেরেছে শাওন ফিরে আসতে চায়। শাওন ফিরে আসতে না চাইলে রীমার জন্য জীবনের অংক জটিল হয়ে যেত।
মিথ্যা অপবাদ নিয়ে পনেরো বছর আগে স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে এসে সীমা না পেয়েছে সম্মান, না পেয়েছে অন্য একটা সংসার। তখন তো বাবা, মাও জীবিত ছিল। সীমা একা ছিল, বয়সও কম ছিল।
মাত্র এইচএসসি পাশ রীমা ত্রিশ বছর বয়সে এক সন্তান নিয়ে স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে কোথায় দাঁড়াবে? এই সমাজে যৌগ্য একটা মেয়েরও একা সারভাইভ করা অনেক কঠিন। সেটা ঘরের বাহিরে পা বাড়ালেই বোঝা যায়। আর সেখানে অযোগ্য হলে তো কথাই নেই।
এই সমাজে সমস্ত অন্যায়, অপরাধ আর পাপের কালিমা গিয়ে লেপ্টে যায় নারীর শরীরে। রীমা হেঁটে, হেঁটে কয়জনকে কৈফিয়ত দিবে, বাবাব বাড়িতে ভাইয়ের সংসারে সে ফিরে আসার কারণ কি!
শাওন যদি রুপাইকে না ছাড়তো, রুপাইয়ের পক্ষে কি মা ছাড়া বাঁচা সম্ভব হতো। বা রীমা যদি রুপাইকে নিয়েও আসতো, যে ভাইয়ের সংসার তার ঠাঁই হতো কি-না তার নিশ্চয়তা নেই, তার ছেলের যে ঠাঁই হতো না এটা নিশ্চিত।
রীমা পারতো শাওনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে, তার কাছে জবাবদিহিতা চাইতে। এতে কি আর সব ফিরে পাওয়া যেত? শাওনের চরিত্র! বরং উল্টো সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা বাড়তো। আজ শাওনের মনে রীমা সব জেনে যাওয়ার যে ভয়, নিজে পাপ করায় রীমার প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ সেটা নষ্ট হয়ে যেত।
তার শাশুড়ি শর্মিলি আহমেদের মনে রীমার প্রতি যে স্নেহ, যে আন্তরিকতা তাঁর ছেলের সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করলে হয়তো সেটা থাকতো না।
জীবনের কঠিন অংকের হিসাব মিলিয়ে রীমা সব জেনেও চুপ করে আছে। তার বোকামির জন্য সে চুপ করে নেই।
তবে এটা ঠিক রীমা কিছু জানতে চায়নি। নিজেকে অন্ধকারে রেখে হলেও আত্মতৃপ্তি নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল।
এখন আর সে নিজের সন্তানের বাবাকে শ্রদ্ধা করতে পারছে না, বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে এটা ঠিক রীমা শাওনকে ভালোবাসে। এটা ভালোবাসা বলে কি-না, কে জানে! হয়তো বলে, হয়তো বলে না।
না ভালোবাসলে কি চরিত্রহীন একটা পুরুষের কাছে প্রতি রাতে নিজেকে উন্মুক্ত করে!
সব মেয়েরা অবশ্য স্বামীকে ভালোবেসে সংসার করে না। কিছু মেয়ে বাধ্য হয়েও সংসার করে। কিছু মেয়ে আবার ভালোবাসা বুঝেও না। শরীর বুঝে, শরীরে চাহিদা বুঝে।
সীমার বিয়ে হয়েছে আজ পনেরো দিন। রীমা নিজ থেকে সীমার সম্পর্কে কিছু জানতে চায়নি। তবে শুনেছে, সে স্বামীর ঘর থেকে একদিনের জন্যও কোথাও বেড়াতে যায়নি। কোথায় যাবে? রীমার কাছে তো আসবেই না। বাবার বাড়িও সীমা যেতে চায় না। পারত স্বামীকে নিয়ে একবার লায়লা খালার বাসা থেকে ঘুরে যেতে। কেন যায়নি! সেটা সীমাই ভালো জানে।
সীমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিরহ শাওন কাটাতে পারেনি। ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে তার ভেতর। শাওনের চঞ্চল চোখের দিকে তাকালে সেটা সহজে অনুমান করা যায়। এই অনুমান শক্তি রীমার একটু কম তাই সে নিশ্চুপ আছে। তবে শর্মিলি আহমেদের আবার একটু প্রবল তাই তিনি রাতের খাবার পর ছেলেকে নিজের রুমে ডাকল কথা বলার জন্য।
” শাওন কী অইছে বাপ? তোমারে ঠিক মনে অইতাছে না।”
” শাওন সাহস করে মাকে বলল,
” মা, আমি সীমার বর আরিফরে চিনি। আমার অফিসে প্রায় আসে। সীমা খুব ঠকছে মা!”
” এখন তুমি কি করতে চাইতাছ? তোমার কি মনে অইতাছে তোমারে বিয়া কইরা রীমা খুব জিতছে? তোমারে পেটে ধইরা আমি খুব সৌভাগ্যবতী!”
” মা, তুমি এভাবে বলতেছ! ”
” খবরদার তুমি আর আমারে মা ডাকবা না। আমি ভাবছি তুমি হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পাইরা, নিজেই সইরা আইছ।”
” মা আমি আমার অন্যায় অস্বীকার করছি না। আমারে তুমি ক্ষমা কইরা দাও। এসব বলে আর কষ্ট দিও না।”
” না, তোমার কোনো ক্ষমা নাই। তুমি আর আমারে মা ডাকবা না। আজ থাইকা আমি তোমার বাসায় থাকব, খাব। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলব না। যেদিন মনে অইব তুমি আসলেই অনুতপ্ত সেই দিনই আমি তোমার লগে কতা বলব ।”
শাওন ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মায়ের পা,
” মা, তুমি আমারে এই শাস্তি দিও না। আর যে শাস্তিই দাও আমি মাইনা নিব।”
” তোমারে শাস্তি দিবার কোনো ক্ষমতা বা যোগ্যতা আমার নাই। এটা আমার একটা ক্ষুদ্র চেষ্টা মাত্র।”
” মা তুমি এভাবে বলবে না।”
” আমার সাথে কতা না বলে তুমি থাকত পারবা, এই বয়সে তোমার মায়ের প্রয়োজন নাই। তোমার স্বভাবের পরিবর্তন অয় না। সুরাইয়া এখন থেইকা তোমার বাসায় থাকব। সুরাইয়া তােমার বাপের ঔরসজাত সন্তান, তোমার বইন। অথচ সে তোমার বাসায় তোমার কাজের মানুষ হইয়্যা থাকব। এটাই তোমার শাস্তি। আমি এহনও রীমারে কিছু জানতে দেই নাই। আমি চাই নাই রীমা তোমারে ছাইড়া চইলা যাক। খবরদার তুমি আর একবারও রীমারে ঠকাইবার চিন্তা করবা না। তাহলে আমি রুপাইকে তোমার জীবন থাইকা সরাই দিব।”
শাওন মায়ের এই অগ্মিমূর্তি চিনে তাই আর মায়ের সাথে কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এতক্ষণ পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে রীমা মা ছেলের কথোপকথন শুনছিল। শাওনকে বেরিয়ে যেতে দেখে রীমা আড়ালে চলে গেল।
সে চায়নি শাওন দেখতে পাক রীমা আড়ি পেতে তাদের মা-ছেলের কথা শুনছে।
রীমার অংকটা মিলাতে আর বেশি কষ্ট হয়নি।সুরাইয়ার মুখের সাথে শাওনের এত মিল কেন? সুরাইয়ার ঘাড়ে থাকা জন্মদাগ শাওনের ঘাড়ের জন্মদাগের মতো কেন?
তার মানে শাওন বাবার স্বভাব পেয়েছে! সুরাইয়া অন্য কেউ নয় হিন্দু মহিলার গর্ভে জন্ম নেয়া শাওনের সৎ বোন। যার বৈধ বাবার স্বীকৃতি নেই।
রীমা আতংকিত হয়ে ছুটে গেল রুপাইয়ের কাছে। রুপাই এখন দাঁড়াতে শিখে গেছে। দুই এক কদম হাঁটতেও পারে। রীমা বুকের সাথে রুপাইকে আঁকড়ে ধরল।
না সব সন্তান তার পিতা বা দাদার মতো হয় না। কিছু সন্তান তার মায়ের আদর্শে, দাদীর আদর্শেও বড় হয়। রীমা রুপাইকে তার আদর্শে বড় করবে।
স্বামীর আদেশে রাতের আঁধারে নিজেকে নিরাবরন করা সীমা সকালের গোসল সেরে রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়াল। একজীবনে তার একটা নিজের ঘর ছিল না। প্রথম বিয়ের পর অল্প বয়সী বউ ছিল শাশুড়ির অধীনে। বাবার বাড়ি ফিরে এসে ছিল ভাইয়ের বউয়ের হুকুমের কর্মচারী। এককাপ চাও ভাইয়ের বউয়ের অনুমতি নিয়ে বানাতে হতো। নিজের শোয়ার ঘরটাও ভাইয়ের মেয়েদের সাথে শেয়ার করতে হতো।
রীমার সংসারে এসে সংসার করার স্বপ্ন দেখলেও সেটা তার সংসার ছিল না।
সারারাত আরিফ নিজের মর্জি মতো সীমাকে ব্যাবহার করলেও। সীমাকে একটা রান্নাঘর দিয়েছে আরিফ। এখানে সীমা নিজের ইচ্ছে মতো রাঁধতে পারবে। নিজের কতৃত্ব জাহির করতে পারে। চুলার পাশের জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাহিরে স্নিগ্ধ ভোর দেখে গতরাতে ক্লান্তি যেন সীমা নিমিষে ভুলে গেল।
কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে সীমা চায়ের পানি বসাল চুলায়। আরিফ তার বিবাহিত স্বামী। এই সংসার তার। তাকে সব অর্জন করে নিতে হবে। সেটা নিরবতা দিয়ে হোক, ভালোবাসা দিয়ে হোক বা প্রতিবাদ করে হোক। সীমা ধৈর্য ধরবে, স্বামীর বিরুদ্ধে কাউকে অভিযোগ করবে না।
চায়ের পানি টগবগ করে ফুটতে ফুটতে সীমা অন্য মনষ্ক হলো। এমন সময় আরিফ এসে পিছন থেকে সীমাকে জড়িয়ে ধরল।
” কী কাল রাতের ঘটনায় কি ভড়কে গেলে?”
সীমা কোনো প্রতিউত্তর না করে চুপ করে রইল।
” গতকাল রাতে তোমার সাথে একটু ফাজলামো করেছি। আসলে অন্য কোনো বদ স্বভাব নেই আমার। শুধু একটু নারীর প্রতি দুর্বলতা আছে।”
সীমার ভেতরটা যেনে নিমিষে কেঁপে উঠল। নারীর প্রতি দুর্বলতা! মানে ঘরে স্ত্রী রেখে অন্য নারীর সাথে রাত কাটাবে!
সীমা অন্য দোষ মানতে পারবে, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
সীমার চোখে জল উপচে পড়ল গাল বেয়ে নিমিষে।
আরিফ হেয়ালি করে বলল,
” কাঁদছ? তবে একটা আশার কথা হলো দক্ষ, অভিজ্ঞ প্রেয়সীর মতো গতরাতে যেভাবে আমাকে শান্ত করেছ, সত্যি কথা বলতে বিগত দশ বছরেও তোমার মতো এমন নারী সংস্পর্শ পাইনি। তুমিই পারবে আমাকে বাঁধতে। সত্যি বলিছি। ”
আরিফের মুখ্য ব্যঙ্গ হাসি।
” চুপ করে আছ কেন? চা নিয়ে আসো। একসাথে শপিং করতে যেতে হবে। বাসায় চা পাতা আর চিনি ছাড়া আসলেই কিছু নেই।”
আরিফ অন্য নারীর সাথে রাত কাটানোর কথা বলায় এই প্রথম সীমা রীমার কষ্টটা ভেতর থেকে অনুভব করতে পারল।
সীমা মনে মনে ভাবল,
রীমাকে ঠকানোর শাস্তিই সৃষ্টিকর্তা তাকে এভাবে সুদে-আসলে দিয়েছে।
কয়েক বছর পর, সীমা তার ধৈর্য আর ভালোবাসা দিয়ে আরিফের সংসারে টিকে থাকলেও আরিফকে নারী দেহের লোভ থেকে ফিরাতে পারেনি। আরিফ সীমার ধৈর্য আর ভালোবাসা দেখে তাকে আর ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করেনি।
সীমা এক কন্যা সন্তানের মা হয়ে এখনো চেষ্টা চালিয়ে চাচ্ছে অন্য নারী শরীরের লোভ থেকে আরিফকে ফিরাতে। ব্যার্থ হয়ে সীমা অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে সমাজে সুখী স্ত্রী হিসাবে, সৌভাগ্যবতী নারী হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আরিফের বোনেরাও এখন নিয়মিত ভাইয়ের বাসায় যাতায়ত করে। একমাত্র সীমাই পেরেছে তাদের উডনচন্ডি ভাইকে এক ডালে স্থির করতে। তাই তাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সীমার প্রতি। কতটুকু পেরেছে সেটা সীমাই জানে। আর সীমা সবটা সেচ্ছায় মেনে নিয়েছে। কারণ তার মন বলছে এটা তার প্রাপ্য শাস্তি। কারণ সে রীমাকে ঠকিয়েছে।
যে শরীরে উত্তাপে একটা সময় শাওন সমস্ত বিবেক, বুদ্ধি,বিবেচনা, শিক্ষা ভুলে নিজের স্ত্রীর আপন বোনের সাথে অপকর্ম করতে দুইবার ভাবেনি।
আজ সেই শরীরের উত্তাপ হারিয়ে শাওন হয়ে আছে নিস্তেজ।শাওন মদ্যপান করে না, তবে ধুমপানের স্বভাব আছে, গত কয়েক বছরে সেটা বেড়েছে কয়েকগুন। সে কারণে নাকি মানসিক অবসাদ আর অপরাধবোধের কারণে শাওন এখন আর রীমা চাইলেও সপ্তাহে একদিন স্ত্রীর কাছে যেতে পারে না দুই মিনিটের জন্য। সে অন্য নারীর কাছে যাবে কোন মুখে।
শাওনের মতো শৌর্য-বীর্য, সুঠাম, সুপুরুষের যৌন আগ্রহ হারোনো নিশ্চয় কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। আজ পর্যন্ত একটা ডাক্তারের কাছে গিয়ে শাওন সে কারণটা জানতে চায়নি। তার শুধু মনে হচ্ছে সে প্রায়শ্চিত্য করছে।
গতসপ্তাহে শাওন নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে দিয়েছে তার অফিসের এক সহকর্মীর কাছে। যাওয়ার সময় সুরাইয়া শাওনের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার মাকে নিয়ে গেছে। শর্মিলি আহমেদও নিজের বাক্স-পেটরা নিয়ে সুরাইয়ার সাথে চলে গেছে।
একসপ্তাহ পর আজ সকালে শর্মিলি আহমেদ সরাসরি শাওনের মোবাইলে কল দিয়ে বলল,
” আশ্চর্য তুমি আমারে এহনো নিতে আইলা না! তুমি জানো না আমি আমার দাদা ভাই রুপাইরে ছাড়া থাকতে পারি না। তাড়াতাড়ি আসো। আজ আমি তোমার সাথে হোটেলে বইসা রসগোল্লা দিয়ে পরোটা খাব।”
ফোনের অপর প্রান্তে থাকা শাওন কোনো কথা বলেনি। আজ তার দুচোখে আনন্দের অশ্রু। অনেক বছর আগে বুকের ভেতর চেপে বসে থাকা ভারি পাথরটা যেন আস্তে আস্তে নামতে শুরু করেছে।
( দয়া করে মতামত জানাবেন।)