অধ্যায়টা তুমিময় পর্ব-১০

0
1

#অধ্যায়টা_তুমিময়
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১০

আকাশে বিশাল বড় এক চাঁদ। তাকে ঘিরে আছে হাজারো তারা। ক্ষণেক্ষণে বয়ে চলছে মন প্রাণ শীতল করা বাতাস। বাগান থেকে ভেসে আসছে বকুল আর কামিনী ফুলের সুভাষ। নতুন বরবধূকে ঘিরে বসে রয়েছে সবাই। মেঘ, রুপ, নিঝুম জোনাকি, মনি, শাপলা, নিঝুমের স্বামী জাহিদ। আরো আছে রূপের বন্ধু অর্নব, রাজু। আলিফের বন্ধু আরিফ, বিথি। আলিফের শালি মৈথি। সবাই সবার মতো করে খুশি ভাগ করে নিচ্ছে। কখনো কোন মজার ঘটনা বলে, কখনো কারো সিক্রেট বলে। সব কিছুতেই তারা মজা লুটেপুটে নিচ্ছে। কিন্তু এতো মজার মাঝেও তারা নতুন আনন্দ পেতে নতুন একটি খেলা খেলবে। সেই খেলাটা নিয়েই সবার মাঝে সোরগোল। যখন কে কি খেলবে ভেবে বের করতে পারছিলো না। তখন জোনাকি একটি খেলার নাম বললো৷ সবার পছন্দও হলো। তাই সে খেলার সব কিছু আয়োজন করেই সবার সাথে বসলো জোনাকি। খেলাটা একটু ভিন্ন। জীবনের ফেলে আসা শৈশবকে মুঠোবন্দী করতেই খেলতে হবে এই খেলা। ছোট্ট ছোট্ট কাগজের টুকরের মাঝে যা লেখা থাকবে তাকে তাই করতে হবে। কখনো থাকবে ছোট্ট একটা সূত্র, সেই সূত্র ধরেই বলতে হবে আসলে সেটা কি বা কে? কখনো তাকে গেয়ে শুনাতে হবে ফেলে আসা কিছু কবিতা। তো শুরু হলো খেলা। প্রথমে কাগজের টুকরো তুললো আলিফ। আলিফ একটি কাগজ তুললো। সে কাগজ তুলতেই সেটা কেঁড়ে নিলো নিঝুম।

_ দেখি কি আছে এতে?

নিঝুম কাগজ খুলতেই সেখানে লেখা। একদমে অ থেকে ঔ পর্যন্ত উল্টো গুনতে হবে।

_ কিরে কি আছে কাগজে।
( রূপ )

_ ভাইয়াকে অ থেকে ঔ পর্যন্ত একদমে উল্টো গুনতে হবে।
( নিঝুম)

_ বাহ্, এই না হলে শৈশব। শুরু করুন শালাবাবু দেখি তো আপনার কেরামতি। যদি এটায় সফল হন, বুঝবো বাসর রাতে বিড়ালটি আর ফস্কে যাবে না আপনার হাত থেকে। কি বলো বাকিরা।

জাহিদের সাথে বাকি সবাইও তাল দিলো। বেচারা আলিফ তো অ, আ ভুলেই গেছে সেখানে উল্টো কি করে গুনবে। তবুও চেষ্টা করলো।

_ ঔ, ও, এ, ঐ

_ হয়নি-এএ হবে না হবে না।
বলে ওঠে শাপলা।

_ যাহ্ ফস্কে গেলো তো শালাবাবু।

জাহিদের কথায় আবারও হাসির রোল পড়লো। এবার পালা আলিফের স্ত্রী প্রিয়ার। তাকেও কাগজ তুলতে বলা হলো। সে-ও একি নিয়মে কাগজ তুললো এবং সেখানের লেখাটা পড়লো। কাগজে লেখা জীবনের প্রথম শেখা কবিতাটি আবৃত্তি করো। প্রশ্নটা একপ্রকার সহজ আবার কঠিনও। তারপর প্রিয়া কিছুক্ষণ ভেবে আবৃত্তি করলো।

আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা।
চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।
ধান ভাঙলে কুড়ো দিবো,
মাছ কাটলে—-

পরের অংশটুকু সে ভুলে গেছে, তাই সে লজ্জায় মুখ নিচু করে রাখলো। আবারও হাসিতে কেঁপে উঠলো ছাঁদ। খুব মজাই পেলো সবাই এমন খেলায়। একে একে এমন ভাবে সবাই নিজেদের শৈশবে ফিরে গেলো। কেউ পারলো কিছুটা, কেউ একটুও না। কেউ আবার পুরোটাই পারলো। বাকি রইলো মনি, রূপ, মেঘ, জোনাকি। এবার টান পড়লো মনির। সে-ও একটি কাগজের টুকরো তুললো। কাগলে লেখা, মানুষটি বৃত্তের মাঝে ছিলো, আমি কয়েকজনকে দৌড় করালাম, যখন আমি বড় হলাম সেই খেলাটির নাম ভুলে গেলাম। মনি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে উত্তর দিলো।

_ মানুষ বুড়িচি।

হুররেএ বলে সবাই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো। মনিই কম সময়ের মাঝে নিজের খেলাটি কমপ্লিট করলো। এবার টান এলো রূপের। একটি কাগজের টুকরো তুলে সে পড়লো। প্রশ্ন ছিলো রঙটা ছিলো সবুজ, ছিলো না কোন সংখ্যা। ইচ্ছে হলেই পড়তাম হাতে তাড়া ছিলো না কাজের, কিন্তু ছিলো খুবই পারফেক্ট। অনেকক্ষণ ভেবেও উত্তর খুঁজে পেলো না রূপ। রূপের সাথে সাথে সবাইও ভাবতে রইলো, আসলে কি সেই জিনিসটা। অনেকক্ষণ ভেবেও কেউ কোন উত্তর পেলো না। সবাই উত্তর খুঁজে না পেয়ে জোনাকিকে বললো। তাকে বলতে তখন জোনাকি বলল।

_ নারকেল পাতার ঘড়ি। রংটা সবুজ। কোন সংখ্যা ছিলো না। সেই ঘড়ির সময় দেখে আমাদের কোন তাড়া ছিলো না কাজে যেতে হবে এমন ভেবে। আর ওই বয়সে ওটা আমাদের পারফেক্ট ঘড়ি ছিলো। কথায় বলে! ছোটবেলার নারকেল পাতার ঘড়িটা পারফেক্ট ছিলো। না ছিলো সময়ের চিন্তা না ছিলো ঘরে ফেরার তাড়া।

জোনাকির উত্তর শুনে সবাই করতালির আওয়াজ তুললো। কি সুন্দর ভাবে সে উত্তর দিলো। আরো একবার মুগ্ধ হলো মেঘ। মেয়েটা তাকে মুগ্ধ করতে করতে একদিন পাগল করেই ছাড়বে। সবার আড়ালে মেঘ জোনাকিকে এক পলক দেখে নিলো। তারপর টান এলো মেঘের। মেঘ হাতে কাগজের টুকরো তুলতেই সেটা কেঁড়ে নিলো মনি।

_ কি করছো ভাবি?

_ নো চিটিং, আমি দেখছি।

তারপর মেঘের কাগজটা খুললো মনি। সেখানে লেখা পড়তে শুরু করলো মনি। “জীবন যদি তোমায় বলে, তুমি কোন সময়ের কাছে ফিরতে চাও! তাহলে তুমি কোন সময়ের কাছে ফিরতে চাইবে।

কোন ভাবান্তর না করেই মেঘ উত্তর দিলো।

_ নিজের বৈবাহিক জীবনের শুরুতে। মানে সাত বছর পিছনে।

মেঘের কথায় তার পরিবার বাদে সবাই একটু অবাক হলো। মেঘের পরিবার বুঝলেও বাকিরা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। তাই মৈথি জানতে চাইলো।

_ সবাই তো নিজের শৈশবে ফিরে যেতে চায়, আপনি কেন নিজের বৈবাহিক জীবনে ফিরে যেতে চান?

একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মেঘ। তারপর বললো।

_ বাবা-মা ছোট বেলায় ছেড়ে গেলেও, ছোট বাবা, ছোট মা কোন কষ্ট বুঝতে দেয়নি। মহান আল্লাহ ছোটবেলায় পূরণ না হওয়া কোন স্বপ্ন রাখেনি! তাই শৈশবে ফিরে যেতে চাই না। কিন্তু যেদিন আমার বিয়ে হয় সেদিন কেউ নিজের চেনা পথঘাট ফেলে আমার হাত ধরে এক অচেনা শহরে পা দিয়েছিলো। তার কিশোরী মনে আমার জন্য, প্রেম, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা ভরপুর আয়োজনে সে আমার ঘরে এসেছিলো। ভয়, দুঃখ, স্বপ্ন, আশা ত্যাগ করে আমাকে আপন করতে এগিয়ে এসেছিলো। নিজের সতীত্ব অটুট রেখে আমাকে সঁপে দেওয়াই তার পণ ছিলো। রাত জেগে, চাঁদের আলোয় ভেজার জন্য, কিংবা মাঝরাতে আমার কাঁধে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে এই শহরের অলিতে গলিতে হাঁটতে চেয়েছিলো। দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে আমার বুকে ঠাই পেতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি তার রাগ, অভিমান, অভিযোগ, ভালোবাসা, প্রেম, ভরসা, বিশ্বাস সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে পারি জমিয়েছিলাম, সুদূর আমেরিকায়। আমি চাইলেও তাকে সেই সময় ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তাই কেউ যদি আমায় বলে, আমি তোমাকে তোমার সেই সময়টা ফিরিয়ে দিতে চাই, যেটা তুমি চাও। তাই আমি আমার বৈবাহিক জীবনের শুরুটা ফিরে পেতে চাইবো।

সবাই মুগ্ধ হয়ে মেঘের কথা গুলো শুনলো। মেঘের কথা গুলো হৃদয়ের গহীনে উঁকি দিলো জোনাকির। সবার অজান্তেই গড়িয়ে পড়লো একফোঁটা নোনাজল। না এই জল কষ্টের নয় সুখের। কিছু সুখ মনকে এতোটাই প্রভাবিত করে যে চোখ বাঁধ্য হয় সবার অগোচরে একফোঁটা জল ফেলতে। এক সময় মেঘের কথার ঘোর কেটে যেতেই খেয়াল হলো সবার জোনাকি এখনো বাকি। জোনাকিকে শেষ কাগজের টুকরো তুলে দিলো নিঝুম। জোনাকি কাগজটি পড়ার আগেই তা কেঁড়ে নিলো নিঝুম। জোনাকির কাগজে লেখা, শৈশবের কোন শিক্ষকের কথা ভেবে এখনো রাগ হয়, মনে হয় কিছু কথা শুনিয়ে দেই। আর কোন শিক্ষকের কথা মনে হলে, ইচ্ছে করে তার পা দু’টো জড়িয়ে ধরি।

এটাই শেষ। তাই সবার কৌতূহলটা একটু বেশি। সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে জোনাকির দিকে, সে কি বলবে তা শোনার জন্য। সবাইকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে জোনাকির কেমন একটা অস্বস্থি লাগতে রইলো। মাথাটা নিচু করে বললো।

_ ইংরেজির শিক্ষক বেলাল স্যার। আমি পড়া পারলেও আমার গাল টেনে দিতো না পারলেও দিতো। গালটা টানতো আর বলতো, কি খাসরে জোনাকি, এতো নাদুসনুদুস কেন তুই। দেখলেই ইচ্ছে করে গালটা টেনে দিতে। আমার টিফিনের খাবার গুলো অর্ধেক তিনি খেয়ে ফেলতেন। খেতেন আর বলতেন, বুঝলি জোনাকি তোর এই টিফিন আমি না খেলে আমার দিনটাই ভালো যায় না। এই কথা বলে আরো একবার আমার গালটা টেনে দিতো। কি যে বিরক্ত লাগতো। মনে মনে অভিশাপ দিতাম। উনার টাক মাথা থেকে আরো চুল পড়ে গিয়ে উনি পুরোপুরি টাক হ’য়ে যাক। উনার ঘরে একটা নাদুসনুদুস মেয়ে হোক। আমি শিক্ষক হবো, আর উনার মেয়ের গালটা সকাল বিকাল দু’বেলাই টেনে দিবো। উনার বউ পৃথিবীর জঘন্যতম রান্না উনাকে খাওয়াবে। অবশ্য এই অভিশাটা দিয়ে আবার ফিরেয়ে নিয়েছিলাম। কারণ উনার বউ যদি জঘন্যতম রান্না করে, সেই তো উনি আমার টিফিনেই ভাগ বসাবে। তাই ওই অভিশাপটা তুলে নিয়ে বাকি গুলো দিয়েছিলাম।

জোনাকির কথায় সবাই হু হা করে হেঁসে দিলো। বেচারি কতটা টর্চার পেয়ে এতো অভিশাপ দিলো শিক্ষককে। হাসতে হাসতে সবার পেটে খিল ধরে এলো। মেঘ চেয়েও জোরে হাসতে পারছে না। যতোই হোক তার স্ত্রী। তার স্ত্রীর শত্রু মানে তারও শত্রু। তাই এখন থেকে ওই বেলাল স্যার মেঘেরও শত্রু। সবার হাসি থামতেই আলিফ প্রশ্ন করলো।

_ পছন্দের শিক্ষক কে ছিলো?

_ বন্দে আলী দাদা। তিনি আমার প্রাইভেট শিক্ষক ছিলেন। তার অমায়িক ব্যবহার আর মোন ভুলানো হাসি দেখে অর্ধেক ছাত্র ছাত্রী পাগল ছিলেন। তার নিয়ম করে পড়ানো, পড়া শেষে শিক্ষনীয় গল্প শোনানো। সপ্তাহের ছুটির দিনে নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খিচুড়ি খাওয়ানো। একসাথে পুকুরে সাঁতার কাটা। চারুকলা পরীক্ষায় সবাইকে ছবি একে দেওয়া, মাটির জিনিস, সুন্দর দেখে বেত তৈরি করে দেওয়া। তার সব কিছুর মাঝেই একরাশ মুগ্ধতা ছিলো। কোন বাচ্চা তার কাছে একদিন পড়তে গেলে, ফিরে দিন আর অন্য কোথাও যেতে চাইতো না। মানুষটা কথার আগেই হেঁসে দেওয়া ব্যপারটা সব থেকে বেশি সুন্দর।

সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলো জোনাকির কথা। কতটা আবেগপ্রবণ হয়ে জোনাকি কথা গুলো বললো, তা যেন চোখেমুখে ফুটে উঠলো। আমাদের জীবনে জড়িয়ে থাকে কিছু মানুষ! যাদের কথা চিন্তা করতেই চোখেমুখে এক তৃপ্তি দেখা যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। আর সেই মানুষ গুলো অল্প কিছু সময়ের জন্য আমাদের জীবনে আসে। হঠাৎ আবার হারিয়ে যায় দূর অজানায়।

খেলা শেষ হতেই সবাই আরেক দফা হেঁসে উঠলো। মজা করতে রইলো একে অন্যকে নিয়ে। আলিফকে নিয়ে মজা বেশি হলো। যেটা জাহিদ করলো। আলিফ কিছু বললো না, আর প্রিয়া লজ্জায় মুখ নিচু করে রাখলো। এক সময় সবাইকে উদ্দেশ্যে করে মেঘ বললো।

_ তো তোমরা কি আরো আড্ডা দিবে, তাহলে দাও আমি রুমে যাচ্ছি।

_ কেনরে এখনি ঘরে গিয়ে কি করবি। আমি তো জানতাম আজ আলিফের বাসর তোর না। তাহলে তোর ঘরে যাওয়ার এতো তাড়া কেন?

রূপের কথায় আবারও সবাই হেঁসে উঠলো। তারপর আর কোন কথা হলো না। একে একে নেমে এলো সবাই ছাঁদ থেকে। সব নিয়ম মেনে আলিফ আর প্রিয়াকে বাসর ঘরে পৌঁছে দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।

———–

ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভারি নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। সামনে তাকালে কালো রঙের ছোঁয়া ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়। দু’দিকে দুজন শুয়ে আছে। মাঝখানে বিস্তার ফারাক। দু’জনেই জানে দু’জনার চোখে ঘুম নেই, তবুও কারো মুখে বলার মতো কোন ভাষা নেই। কিছু সময় নীরব ভাবেই কেটে গেলো। তারপর নিজের গলা খাঁকারি দিলো জোনাকি। কিন্তু তাতে কোন ভাবান্তর নেই মেঘের মাঝে। সেটা দেখে জোনাকি আবারও গলা খাঁকারি দিলো। তবুও কোন শব্দ এলো না খাটের ওপাশ থেকে। জোনাকি বুঝতে পারলো কথা না বললে মেঘ কোন উত্তর দিবে না। তাই সে বাম পাশ থেকে ফিরে ডান পাশে তাকালো! যেখানে মেঘ শুয়ে আছে। অন্ধকারে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না মেঘ কোন দিকে ফিরে শুয়ে আছে। নিজেকে যথেষ্ট সামলে জোনাকি প্রথমে কথা বললো।

_ জেগে আছেন?

_ হুম, কেন কিছু বলবে?

_ আসলে–

_ এতো দ্বিধা না করে বলো কি বলবে।

_ ভাইয়াকে তখন ওভাবে না বললেও পারতেন।

_ খুব খারাপ বলেছি কি?

_ না, ভাবিকে নিয়ে বলা কথার জন্য বলছি না।

_ তাহলে?

_ আসলে আমার জন্য নিজের ভাইকে এতো গুলো কথা না বললেও পারতেন।

_ সে যেমন আমার ভাই, তুমি আমার স্ত্রী। দুজনেই আমার আপন মানুষ! তাই কেউ কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলুক আমি সেটা চাই না। তার বুঝতে হবে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।

_ তবুও সে আপনার ভাই, তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলা আপনার উচিৎ।

_ আর আমার স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। আমার স্ত্রী যেমন আমার অগোচরে তার পরিবারের কাছে আমাকে বড় করে, আমার উচিত তার সম্মানের খেয়াল রাখা।

_ আমি কিন্তু সেভাবে বলিনি কথাটা।

_ তোমার নিশ্চয়ই আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে না কিভাবে তোমার হয়ে আমি কথা বলবো। কই তুমি তো একবারও জানতে চাওনি সেদিন! যেদিন তোমার মা জানতে চাইলো, তোমার আর আমার মাঝে সব ঠিক হয়েছে কিনা। কই সেদিন তো বড় মুখ করে বললে সব ঠিক হয়ে গেছে তাহলে।

_ কারণ আপনি তো সব ঠিক করেই নিয়েছেন, আমিই তো আপনার সাথে সব কিছু ঠিক করে নিতে পারছি না। তাহলে এখানে দোষ কার আপনার না আমার! যে আমি মা’কে আপনার দোষ দেখাবো।

_ তুমি যখন আমার দোষ দেখোনি তাই বলেছো, তাহলে আমিও তোমার কোন দোষ দেখিনি তাই প্রতিবাদ করেছি। তাহলে তো হলোই সমান সমান।

_ আচ্ছা এসব বাদ, আপনি কি করে জানলেন ভাইয়া তার কলিগের সাথে প্রেম করছে। আমি বা ভাবি কেউ তো বলিনি এই কথা।

_ গায়ে হলুদের দিন তোমার সাথে রাগ করে যখন আমি ছাঁদে যাই, তখন ভাইয়াকে কথা বলতে শুনেছি। তাদের খোলামেলা কথায় সব বুঝে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। কিন্তু তার মাঝেই তো এতো কিছু ঘটে গেলো।

_ আপনার যুক্তিপূর্ন কথা গুলো সত্যি খুব অসাধারণ।

_ যেটা সত্যি সেটা সত্যিই। মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যি ঢাকা যায় না। সেটা ভাইয়াকে বুঝতে হবে। আর তাকে বুঝাতে যদি এমন কঠিন কথা আমাকে আবারও বলতে হয়, তো আমি বলবো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো। সারাদিন তো কম ধকল যায়নি। রাত তো অনেক হলো।

তারপর মেঘ উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। জোনাকি চেয়েও বলতে পারলো না! কথা বলি না আরো কিছুটা সময়। আমার ভালো লাগছে আপনার সাথে কথা বলতে। কিন্তু কথায় আছে, বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না, এমনটাই হলো। জোনাকিও অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। চোখ বুঁজে অনুভব করতে রইলো পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার অস্তিত্ব।

ইনশাআল্লাহ চলবে…….