#অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি ।১০।
#সাইরা_শেখ
আজ নম্রতার গায়ে হলুদ। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। সকলের দেখভাল করতে বাবাকে সাহায্য করছে মাশহুদ, অনিক ও নীলয়। মেয়েরা ব্যস্ত নিয়মকানুন নিয়ে। সভ্যতা সবকিছুর ভিডিও করছে। নম্রতার আজ আবারও দুঃখ দুঃখ লাগছে। কিছু ভালো লাগছে না। আগামীকাল বিয়ে করে চলে যাবে সে।এই বাড়ি, ওর পিহু, আব্বু-আম্মু, সবাইকে রেখে কিভাবে যাবে? ওদের ছেড়ে কিভাবে থাকবে? সভ্যতা ক্যামেরা নিয়ে সামনে এসে তাড়া দিয়ে বলল,
‘এই আপু, আমার শাড়িটা ঠিক করে দে। জারা আপু, তুমি ছবি তোলো। ভাবটা এমন, আমার গায়ে হলুদ আর আপু শাড়ি ঠিক করে দিচ্ছে।’
জারা ক্যামেরা নিয়ে বলল, ‘আসলেই তেমন লাগছে। কুহুর সাথে তোমারও বিয়ে দিয়ে দেই? কি বলো?’
‘একদম না।’
জারা ছবি তোলার ফাঁকে বলল, ‘তারপর, আমাদের মাশহুদের সঙ্গে তোমার প্রেম কেমন চলছে?’
‘পাগল নাকি আমি? যে ওনার সাথে প্রেম করবো?’
‘কেন আমাদের ভাই খারাপ কিসে? ইন্টেলিজেন্ট, হট, হ্যান্ডসাম, ক্যাপেবল, ম্যারেজ্যাবল ব্যাচেলর। তাহলে সমস্যা কি? তুমি ওকে বড্ড অবহেলা করো। জানো ওর জন্য কত মেয়ে পাগল?’
‘সেটাই তো বলতে চাচ্ছি। আমি সুস্থ মানুষ, পাগল নই। প্রেম করতে হলে একটু আধটু পাগল হতে হয়। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ প্রেম নামক ভ’য়া’নক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ভাবতে পারে না।’
জারা হেসে ফেললো। উপস্থিত সবাই হেসে উঠল। মা এসে বললেন, ‘হঠাৎ কি নিয়ে এত হাসাহাসি হচ্ছে?’
নোরা আপু বলল, ‘সভ্যতার কথা শুনে। ওকে তোমরা কোথ থেকে পেয়েছ মামি?’
জারা বলল, ‘হ্যাঁ আন্টি। তোমার মেয়ের জন্য ওই কথাটা একদম পার্ফেক্ট..’
মা বুঝতে না পেরে বললেন, ‘কোন কথা?’
জারা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে বলল, ‘ছোট মরিচের ঝাল বেশি।’
সভ্যতা চেহারায় কঠিন ভাব এনে বলল, ‘ইনসাল্ট করছ তো? করো, করো। তোমরা হয়তো ওই প্রবাদটা ভুলে গেছো…’
মিতা বলল, ‘কোনটা?’
সভ্যতা সামনে হাত গুজে, দাম্ভিকতার সঙ্গে, ভাব নিয়ে বলল, ‘একমাঘে শীত যায় না। আমারও দিন আসবে.. এই অপমানের শোধ তুলবো না ভেবেছ? এমন ঝাল লাগাবো, যে বরের মিষ্টি ছাড়া সেই ঝাল কমাতে পারবা না।’
বলেই দৌড় দিল সভ্যতা। জারা বলল, ‘আন্টি দেখলে তো? তোমার মেয়ে দিন দিন কি হচ্ছে? বড় বোনকে কি বলে গেল?’
সভ্যতা দূর থেকে চেঁচাল, ‘দেখেছে তো কি হয়েছে? শুধু কি আম্মু দেখেছে? সবাই দেখেছে। যে কাউকে জিজ্ঞেস করো। দেখবে সবাই বলবে,আমি যা বলেছি সেটা ঠিক। তুমি যদি চাও, আমি তার নামও বলতে পারি। বলবো নাকি?’
জারা চেঁচালো, ‘আন্টি.. প্লিজ.. ওকে চুপ করতে বলো।’
মা ধমকালেন, ‘মামণি, এবার সব দুষ্টুমি বন্ধ। আয়, আপুকে হলুদ লাগাবো আমরা। জারাদের আর বিরক্ত করবি না।’
সভ্যতা চোখমুখ কুঁচকে বলল, ‘আমি কোথায় বিরক্ত করছি? অদ্ভুত! সবাই শুধু আমার দোষ-ই দেখতে পাচ্ছে আজকাল।’ হঠাৎ পেছন থেকে একটি পুরুষালি হাত এসে গাল ছুঁয়ে গেল। হাতে থাকা হলুদ লেপ্টে গেল ডানগালে। সভ্যতা চেঁচিয়ে উঠল,
‘আপনি চিটিং করেছেন। আমি আপনাকে ছাড়বো না মাশহুদ…’
নোরার হাতে থাকা এক্সট্রা হলুদের বাটি থেকে, দুই হাত ভর্তি করে হলুদ নিয়ে, মাশহুদের পেছনে ছুটে গেল সভ্যতা।
.
.
‘কথা ছিল, আপুর গায়ে হলুদ লাগার পর যে প্রথম হলুদ লাগাতে পারবে তার কথা শোনা হবে। আপনি রুলস ব্রেক করেছেন।’
মাশহুদ একগুঁয়ে স্বরে বলল, ‘একদম না। আন্টি কুহুর গালে হলুদ ছোঁয়ানোর পরই লাগিয়েছি। আমার কাছে প্রুফ আছে।’
‘ওকে, দেখান। কি প্রুফ আছে আমিও দেখতে চাই।’
মাশহুদ পকেট থেকে ফোন বের করে,ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে এগিয়ে আসছে। সভ্যতা রাগান্বিত ভাব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে। মাশহুদ কাছে এসে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই দেখো..’
সভ্যতা প্রমাণ না দেখে আচমকা মাশহুদের সমগ্র মুখে হলুদ মাখিয়ে দিল। মাশহুদ হতভম্ব হয়ে যায়। সভ্যতা খিলখিল করে হেসে ওঠে। সেটা দেখে মাশহুদ মুচকি হেসে বলল,
‘ওকে, তুমি জিতেছ। আমি নিজের হার স্বীকার করছি, এবার বলো আমাকে কি করতে হবে?’
‘আমি চাই না আমার আপু অতিরিক্ত কাঁদুক। বিয়ের পর বিদায়ের সময় সব মেয়েরাই একবার ভরপুর কেঁদে নেয়, ওই কান্না বাদে আগামীকাল সন্ধ্যা অবধি ওর ঠোঁটে যেন হাসি লেপ্টে থাকে।সবাইকে নিয়ে পরিবেশটা এমন বানিয়ে রাখুন যাতে কুহু দুঃখ পাওয়ারও, সময় না পায়।’
‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এর বিনিময়ে আমি কি পাবো? ছোটখাটো কাজ ফ্রিতে করে দেওয়া যায়। কিন্তু এই কাজটি সহজ নয়..’
‘আমি এই কাজের বদলে আপনাকে দুই পয়েন্ট দেব।’
মাশহুদ কুর্নিশের ভাব নিয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে, বুকে হাত রেখে বলল, ‘যথা আজ্ঞা শাহজাদি। পরে যেন পয়েন্ট দিতে ভুলে না যান তাই কথাগুলো রেকর্ড করে নিলাম। আসছি..’
সভ্যতা কপোট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘রেকর্ডের জন্য এক পয়েন্ট কেটে নেওয়া উচিত।’
‘উহু, প্রমাণ আছে। কা’টাকা’টির চ্যাপ্টার বাদ।’
.
.
বিয়ের সব নিয়ম শেষ হওয়ার পর থেকে একনাগাড়ে কাঁদছে নম্রতা। আব্বু আম্মুও কাঁদছে। সভ্যতা হাই তুলে বলল, ‘যাচ্ছিস তো পনেরো মিনিটের দূরত্বে। এত কান্নার কি আছে?সকাল বিকাল আমাদের দেখতে পাবি। এভাবে শ্বাসকষ্টের রোগীদের মতো তো আমার কাঁদা উচিত। আমাকে যেখানে পাঠানোর প্লান করেছিস সেখানে পৌঁছাতে সাত-আট ঘন্টা লাগে। ব্যাটা যদি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে বিদেশে দৌড় দেয়, প্লাস আমাকেও সাথে নিয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। বছরেও সামনা-সামনি দেখতে পারবি না। তাই মুড খারাপ না করে দ্রুত বিদায় হ। আব্বুর প্রেশার বাড়ছে।’
নম্রতা সভ্যতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, ‘তুই আম্মুর সব কথা শুনবি পিহু, খাওয়ায় অনিয়ম করবি না, নিজের যত্ন নিবি, আমার জন্য মন খারাপ করবি না।’
সভ্যতা রাগত স্বরে বলল, ‘তোর জন্য মন খারাপ করবো ক্যান? আমার মনের এত দুর্দিন এসে পড়েনি। মাহিন ভাই, এই পাগলটাকে নিয়ে বিদায় হচ্ছ না কেন?’
মাহিন কাছে আসতেই স্বল্পস্বরে বলল, ‘বাসর-টাসর করার প্লান নেই নাকি? দ্রুত এটাকে নিয়ে যাও।এই মাসে যেন এ-বাড়ির সামনে না আসে। নিজের মানুষ নিয়ে দ্রুত বাড়ি ছাড়ো। চারপাশের এত কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।’
মাহিন সভ্যতার মাথায় টোকা দিয়ে বলল, ‘তুই যাবি না সাথে?’
‘আমি কেন যাব? আমি যাব না। ও একা যাক। আচ্ছা আরশান ভাই কোথায়? ওনার সাথে কথা আছে। কি মনে করেছে জুতা পেয়েছে বলে আমার টাকা মে’রে দেবে? প্রয়োজনে টাকা আমি ওনার কাছ থেকে নেব। তাও ত্রিশ হাজার। কুড়ি হাজারের অফার এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে।’
সভ্যতা নম্রতাকে ছেড়ে আরশানকে খুঁজতে চলে যায়। নম্রতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘ও রাতে ভীষণ কাঁদবে মাহিন। আমি থাকবো না, ওকে সামলাবে কে? মাশহুদ তো ওর সব স্বভাব, অভ্যাস সম্পর্কে জানে না।’
‘জানে না, জেনে নেবে। এবার ওদের বিষয়গুলো ওদের বুঝে নিতে দাও। তাছাড়া মাশহুদ ওকে ঠিক সামলাতে পারবে তাই চিন্তা করো না।’
সভ্যতা আরশানের কাছ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা নিয়ে শান্ত হলো। এতটা সময় মাশহুদকে দেখা যায়নি। জানা গেল সে সবার খাওয়ার দিকটা দেখছে। রাত বাড়ছে তাই নম্রতাদের বিদায় জানাতে হবে। নম্রতা যাওয়ার সময়ও হেঁচকি তুলে কাঁদছিল,সভ্যতা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। চেহারায় বিরক্তিভাব, বাবার বুকে ব্যাথা শুরু হতেই সভ্যতা তাড়া দিল। মাহিনদের গাড়ি দৃষ্টির আড়াল হতেই, সভ্যতা বাড়ি ঢুকে বাবাকে ঔষধ দিয়ে বলল,
‘যাচ্ছে তো মোড়ের মাথায়, ওকে নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে? এসব চিন্তা আমার জন্য বাঁচিয়ে রাখো। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখো, ২-৩বছর পর আমাকে কিভাবে বিদায় করবে। এমন অবস্থা দেখলে আমি কিন্তু শ্বশুরবাড়ি যাবো না আব্বু।বিয়ের আগে কথা বলে নিতে হবে, সে ঘরজামাই থাকবে কিনা।’
মাশহুদ মা-কে নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ‘তোমার এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না সভ্যতা। আমি এখানে থাকতে পারলে তো ভালো, আর না পারলে আব্বু আম্মুকে আমাদের কাছে নিয়ে যাব।’
‘একদম না। পরে লোকে বলবে আমার আব্বু-আম্মু আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকে।’
বেখেয়ালি সভ্যতা এবার নিজের শব্দপ্রয়োগে খেয়াল করলো। মুহূর্তেই পাল্টে গেল কথার সুর,’এক মিনিট আমাদের কাছে মানে? আপনি কে? আপনার ২ পয়েন্ট আমি এখনও দেইনি। ৩ পয়েন্টের বদলে ঘোড়ার ডিম নিয়ে এত জল্পনাকল্পনা করে লাভ নাই। আমি আপনাকে বিয়ে করতে, সম্মতি দেব না। বুঝেছেন?’
মা বললেন, ‘আহ্ পিহু। সবসময় ওর সঙ্গে এমন বাজে ব্যবহার করিস কেন?মাশহুদ?বাবা,ওরা কতদূর পৌঁছাল কিছু বলেছে?কত করে বললাম আজ রাতটা অন্ততো থেকে যেতে তারপরও শুনলো না। নীলয়কে একবার ফোন করে দেখো তো,ওদের পৌঁছাতে কতসময় লাগবে? কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা?’
‘কাজ আছে আন্টি।ওদের কালকের মধ্যেই পৌঁছাতে হবে। তাছাড়া বাইকে যাচ্ছে, সমস্যা হবে না। ওদের নিয়ে আপনারা এত চিন্তা করবেন না। আমি বাইরের সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি।তাই আপনারা এবার গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিন, সারাদিন অনেক ধকল গেছে। নিজেদের শরীরের দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে।’
সভ্যতা সায় দিল, ‘হ্যাঁ আম্মু তোমরা গিয়ে ঘুমাও। কাল-পরশুর মধ্যেই তো আপুরা আবার আসবে।এখন কান্নাকাটি করে, না ঘুমিয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে ওদের যত্ন করবে কে? আমি কিন্তু কিছু করতে পারবো না।তোমার বড়মেয়ে আমাকে কোনো কাজ শিখতে দেয়নি।তাই তোমাদেরই সব করতে হবে।’
মা-বাবা উঠে পড়লেন। যেতে যেতে শুনলেন, সভ্যতা মাশহুদকে বলছে, ‘সবাই চলে যাচ্ছে। আপনি যাবেন কখন? আর আপনার বাইক কই?’
‘নীলয় নিয়ে গেছে। বাইক ছাড়া আমি এত রাতে কি করে যাব?’
‘আপনি ইচ্ছে করে বাইক দিয়েছেন যাতে এখন যেতে না হয়, তাইনা?’
‘আশ্চর্য! তুমি এত বুদ্ধি রাখো কোথায় একটু বলবা? সব বুঝে ফেলো কি করে?’
‘আপনার মতো ধান্দাবাজ মানুষ এসব খুব ভালো পারে। সেদিন রিংটাও এভাবে নিয়েছিলেন। অসহ্যকর মানুষ একটা।’
‘এতকিছু জানো, অথচ আমার চরিত্র সম্পর্কে জানো না? এই না জানার ভান কতদিন ধরে চলবে সভ্যতা? তোমার মনে হয় না,এবার এই অযুহাত বদলানো উচিত? আমার সম্পর্কে যতবার কথা উঠেছে ততবার তুমি চরিত্রহীন শব্দটি এমনভাবে বর্ণনা করেছ যে, তুমি বিয়ে না করলে ভবিষ্যতে এসব কথার কারণেই আমার বউ পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। তখন আমার বিয়ে না হওয়ার দায় কে নেবে?’
‘তাহলে চলে যান,চলে গেলেই এসব বলা বন্ধ হয়ে যাবে। দেখি সরুন, আমাকে ঘরে যেতে হবে। রেস্ট নিতে হবে। উফ! এত কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেছি।’
সভ্যতা নিজের ঘরে চলে গেল। অনিক-রা চলে গেলে মাশহুদ বাড়ির গেট, দরজা বন্ধ করে সোজা ছাদে চলে আসে। ছাদের এককোণায় অন্ধকারে বসে আছে সভ্যতা। থেকে থেকে ফুঁপিয়ে উঠে কাঁদছে। সারা-দিন মেয়েটা নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছে, সবাইকে কাঁদতে মানা করেছে, ধমকেছে, চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলেছে, নম্রতাকেও এটা-সেটা বলে বিদায় করেছে কিন্তু নিজের চেহারার ওপর, চোখের পানির ওপর কত সময় নিয়ন্ত্রণ রাখবে?তখন ঘরে যাওয়ার সময় আন্টি সভ্যতার দিকে যেভাবে তাঁকাচ্ছিলেন, সেটা দেখেই মাশহুদ বুঝেছিল সভ্যতা সবার সামনে কাঁদবে না। এভাবে কান্না চেপে রেখে তাদের মেয়ে যেন অতিরিক্ত কষ্ট না পায় তাই তারা দ্রুত ঘরে চলে যান।মাশহুদ পাশে এসে দাঁড়াতেই সভ্যতা চোখমুখ মুছে বলল,
‘আপনি এখানে কি করছেন?’
‘আমার পয়েন্ট নিতে এলাম।’ বলেই সভ্যতার পাশে বসে পড়ল সে।পকেট থেকে সভ্যতার পছন্দের চকলেট বের করে সেটা সভ্যতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘কান্না থামালে কেন? কাঁদো। মন হালকা হবে।’
সভ্যতা নাক টেনে বলল, ‘আমি কেন কাঁদবো? কাঁদছি না আমি।’
‘তুমি জানো সভ্যতা? তুমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর এবং চমৎকার মনের মেয়ে? আমাদের বিয়ে না হলেও, আমি তোমাকে ততটাই পছন্দ করবো যতটা এখন করি। তবে চেষ্টা করবো যেন বিয়েটা হয়, তোমাকে হারাতে না হয়। এই শক্ত মনের,একরোখা,জেদি,পরোপকারী,ব্রিলিয়ান্ট, মেয়েটা যেন আমার হয়। আমার বাচ্চাগুলো যেন তাদের মায়ের মতো হয়।’
সভ্যতা ওরনায় নাক মুছে বলল, ‘বিরক্ত করবেন না। যান এখান থেকে..’
মাশহুদ নিজের সঙ্গে আনা একটি ডায়েরি বের করলো। নম্রতার গহনা সভ্যতার আলমারিতে ছিল, আন্টির কথায় গহনার বাক্স আনতে গিয়ে মাশহুদ জামা-কাপড়ের নিচে ডায়েরিটি পেয়েছে। এই ডায়েরিতে সভ্যতা অনেক কিছু লিখে রেখেছে।যা পড়ে ভীষণ অবাক হয়েছে সে।সভ্যতা চকলেটের প্যাকেট খুলে একটুকরো চকলেট মুখে পুরে মাশহুদের দিকে তাঁকাল। মাশহুদের হাতে নিজের ডায়েরি দেখে মুহূর্তেই চমকে উঠল, ভয়ে আতঙ্কে মৃদু চিৎকার করে বলল, ‘আপনি এটা কোথায় পেলেন?’
চলবে…