#অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি ।১৫, শেষ।
#সাইরা_শেখ
সভ্যতা ছাদের এককোণায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেকদিন পর নাকফুল পরেছে তাই ব্যাথায় নাক চিনচিন করছে। মাশহুদ পাশে এসে দাঁড়ায়। সভ্যতা সরুচোখে তাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,
‘সবকিছুর স্পিড বেশি হয়ে যাচ্ছে না? এত দ্রুত বিয়ে? আমার বিয়ের বয়স হয়েছে?’
‘এখন যখন মনের মানুষ ভাবতে শুরু করেছ, তখন শুভকাজে দেরি করা উচিত নয়। পরে তোমার মনের এ্যান্টেনা ঘুরে গেলে সমস্যা..’
প্রীতি সভ্যতাকে গান গাইতে বলছে। সভ্যতা চাপাস্বরে মাশহুদের কাছে জানতে চাইল,’গান জানেন?’
‘একটু আধটু..’
‘শুনতে চাই।’
‘কেমন গান শুনবে? স্পেসিফিক কিছু?’
সভ্যতা মুচকি হেসে বলল, ‘আমাকে ডেডিকেট করতে চাইলে, যেটা আপনার ভালো লাগে সেটা দিয়েই শুরু করুন। সমস্যা নেই, সুর খারাপ হলেও কিছু বলবো না। আমি বরাবরই চেয়েছি আমার বরের গলার সুর আমার থেকে একটু খারাপ হোক। কিছু বিষয়ে আমি এগিয়ে থাকতে চাই।’
মাশহুদ হেসে ফেললো। সভ্যতার চেহারায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে গাইতে শুরু করে,
“কেউ তোমাকে ভীষণ ভালোবাসুক
তুমি আর শুধু তুমি ছাড়া, অন্যকিছু না বুঝুক
কেউ তোমার, কোলে মাথা রেখে, ভীষণ হাসুক
তুমি একটু দূরে গেলে,লুকিয়ে আনমনে ভীষণ কাঁদুক
তুমি তো চেয়েছিলে, ঠিক এমন-ই একজন
এখন আমি পুরোটাই, তোমার ইচ্ছেমতন
তুমি আমার অনেক শখের,
খুজে পাওয়া এক প্রজাপতি নীল
আমি রংধনু রঙে সাজিয়েছি, দেখো এক আকাশ স্বপ্নীল।।”
মাশহুদ থামতেই সকলে সভ্যতাকে ঘিরে ধরলো। সবাই জানে সভ্যতার গানের গলা ভালো, কিন্তু কখনও শোনা হয়নি। আব্বু আম্মু, দাদা-দাদিরাও এসে পড়েছেন। সবাই চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছেন। সভ্যতা সবার দিকে এক নজর তাঁকিয়ে হেসে উঠল। মাশহুদ একটি চেয়ার এনে সভ্যতার সামনে রাখতেই সভ্যতা বসে পড়ে। একগুঁয়ে স্বরে বলে,’চার-পাঁচ লাইন,বেশি না।’ সবাই তাতেই রাজি। মাশহুদ চলে যাচ্ছিল, সভ্যতা ওর হাত টেনে ধরে, মুহিব ভাই সেটা দেখে চেঁচালেন,
‘এখানে আসার দরকার নেই।ওখানেই থাক,এত মানুষ দেখে তোর বাচ্চা বউটা ভয় পাচ্ছে।’
সভ্যতা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল, ‘ভয় নয়,এটাকে রোম্যান্টিকতা বলে। যাকে উদ্দেশ্য করে গাইবো,তার হাত ধরে গাইতে চাচ্ছি। আপনি এসব বুঝবেন না ভাইয়া। আপনি যে অতি মাত্রায় আনরোম্যান্টিক তা মৌশি ভাবিকে দেখলেই বোঝা যায়। কেক কেটে সে প্রথমে আপনাকে খাইয়ে দিল আর আপনি কেক খেয়েই গায়েব। ভাবি যে এখনও কেক খায়নি সেটা জানেন?’
মুহিব অপ্রস্তুত বোধ করলো, বিব্রত কন্ঠে বলল,’আমি তো যাস্ট একটা ইম্পর্টেন্ট ফোনকল অ্যাটেন্ড করতে গিয়েছিলাম। ওকে বলেছিলাম খেয়ে নিতে।’
সভ্যতা সে কথার তোয়াক্কা না করে বলল, ‘যে কারণ-ই হোক না কেন, তখন খাওয়াননি মেনে নিলাম কিন্তু ফিরে এসে? আমি শুনেছি আপনি সবসময় কাজ নিয়ে পড়ে থাকেন, অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগী নন। এবার এই অভ্যাসটা বদলাতে হবে ভাইয়া।ভাবি ভালো মেয়ে, তাই কিছু বলে না। আমি এত ভালো নই, আমার সামনে এমন কাজ করলে আমি নির্দ্বিধায় কথা শোনাবো।যখন তখন লজ্জায় পড়বেন, যেটা আমি নিজেও চাইনা। তাই এখন থেকে পরিবার, প্রিয়জনের প্রতি মনেযোগী হোন। এবার ভাবিকে দ্রুত কেক খাওয়ান। ভাবির খাওয়া শেষ হলে আমি গান শুরু করবো।’
মুহিব মৌশির লাজুক চেহারার দিকে তাঁকিয়ে বিরবির করে বলল, ‘এবার মনে হচ্ছে যখন-তখন বাঁশ খেতে হবে।’ মৌশিকে কেক খাওয়ানোর সময় মৌশি ভাব নিয়ে বলল,
‘বাহ, আমার ছোট-জা দেখছি মুহূর্তের মধ্যেই মানুষকে বদলে দিতে পারে। তোমার বদল দেখে আবেগে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু কাজল নষ্ট হয়ে যাবে তাই কান্নাটা স্কিপ করলাম।’
প্রীতি বলল, ‘তবে তুই অনুভব কর ভাইয়া, ভাবি মনে মনে খুব কাঁদছে।হেঁচকি তুলে, হাত-পা ছুড়ে কাঁদছে..’
মুহিব প্রীতির কান টেনে ধরতেই প্রীতি চেঁচাল, ‘ইফাজের আব্বু? একজন তোমার বউয়ের কান ধরে টানছে আর তুমি হাসছ? তোমার কি নিজের জীবনের মায়া নেই?’
সভ্যতা চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল,
‘আমি তাহলে আসি, আমার গানের প্রতি তো কারোর আগ্রহ-ই নেই।’
সবাই দ্রুত নিজেদের জায়গায় বসে বলল, ‘না, না।শুরু করো।’
মাহিন ততক্ষণে গিটার নিয়ে এসেছে। মাহিনের তরফ থেকে সভ্যতার বার্থডে গিফট,এই গিটার।মাশহুদ গিটার নিয়ে বলল, ‘ডু ইউ নিড এ্যানি হেল্প, মিস?’
সভ্যতা গিটার কেড়ে নিয়ে বলল, ‘নো থ্যাংকস,মিস্টার।’
মাশহুদ পাশেই একটা চেয়ার টেনে বসলো। সভ্যতা কড ঠিক করে গিটারে টুংটাং সুর তুলল,পরক্ষণেই মাশহুদের চোখে চোখ রাখলো সে। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাঁকিয়ে আছে।
“চলতি সময়, থমকে দাঁড়ায়
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়..
কি মায়ার কোন, সে নেশায়
বারে বার মন ছুঁতে চায়
চেনা মুখ ঘুরপাক খায়
চোখের পাতায়..
আমি বার বার বহুবার
তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার
তোমাকে চাই।”
সবাই মৃদু হাসে। খাওয়ার সময় হয়েছে তাই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো টেবিল গোছাতে। মাশহুদ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সভ্যতার কানে কানে বলল, ‘ভালোবাসি।’
সভ্যতা তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, ‘আমি বাসি না।’
‘বাসো না? আচ্ছা যাও, তোমার ভালোবাসতে হবে না। ভালোবাসার জন্য আমি একাই যথেষ্ট।তুমি শুধু আমৃত্যু আমার সঙ্গে থেকো, তাতেই হবে।’
‘ওকে।’
মাশহুদ চাপাস্বরে বলল,’আর আমি যখন ভালোবাসবো তখন একটু সঙ্গ দিও.. তুমি বুদ্ধিমতি, আশা করছি কি বলতে চেয়েছি তা বুঝেছ।’
সভ্যতা চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘আপনি তো যথেষ্ট মেপে বলেছেন। আমি বললে আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। বিয়ে না করে যেতেই, চাইবেন না। সো ডাবল মিনিং কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।’
মাশহুদ অকস্মাৎ সভ্যতার হাত ধরে অনুরোধের সুরে বলল,’প্লিজ বলো, আমার রাতের ঘুম হারাম করে দাও। আমি সত্যি-ই বিয়ে না করে যেতে চাচ্ছি না।’
‘আপনি তো সাং’ঘা’তিক মানুষ।একটু আগে ঘরে লজ্জায় তোতলাচ্ছিলেন, আর এখন?’
‘লজ্জা?কখন লজ্জা পেয়েছি?আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম। তোমাকে দেখে যদি কন্ট্রোললেস হয়ে যেতাম? তখন কি হতো, এটা ভেবে।একবার বিয়েটা হতে দাও, তারপর দেখো তোমার কি করি..’
মাহিন ডাকল, ‘পিহু, খেতে আয়। সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো। মাশহুদ, প্রেম পরেও করা যাবে আগে খেয়ে নাও।’
মাশহুদ সভ্যতার হাত ছেড়ে থ্রেট করে বলল, ‘খাওয়ার পর বাকি হিসাব মেলাবো। এ-কদিন প্রচুর জ্বা’লিয়েছো, আজ সবকিছুর শোধ তুলবো, মিস।’
সভ্যতা হাত ডলে বলল, ‘আমি ছেড়ে দেব ভেবেছেন?’
‘না, তা কেন ভাববো?আমি চাই তুমি আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরো।কখনও ছেড়ে দিও না, এখনই ধরবে? নাকি সবার অগোচরে? দাদি কিন্তু ভালো একটা টিপস দিয়েছে, প্রেম জিনিসটা গোপনে করলেই মজা।’
সভ্যতার গাল লাল হয়ে উঠল। কান দিয়ে যেন ধোয়া বের হচ্ছে। সে দ্রুত নম্রতার পাশে গিয়ে বসলো। নম্রতা তৎক্ষণাৎ উঠে মাহিনের পাশে গিয়ে বসে। নম্রতার চেয়ারে মাশহুদ এসে বসতেই সভ্যতা দাঁতে দাঁত পিষে বসল,
‘কি খারাপ এরা, অথচ এদের জন্য আমি কতকিছু করেছি..’
মাশহুদ সভ্যতার খাবার বেড়ে দিয়ে বলল, ‘নিশ্চিন্তে খাও। খাওয়ার সময় আমি কাউকে বিরক্ত করি না।’
সভ্যতা খেতে পারছে না। সবাই হাসি-তামাশা করছে। মাশহুদকে বাবা-মায়ের যত্ন নিতে দেখে সভ্যতার রাগ কমে গেল। ইফাজ কেঁদে উঠল, সভ্যতার বাদে বাকি সবাই ভাত মেখে ফেলেছে, তাই সভ্যতা উঠে বলল,
‘ওকে আমি কোলে নিচ্ছি।তোমরা সবাই খাও।’
রায়েবা কিছু বলতে যাবেন তার আগেই প্রীতি বলল,
‘তাহলে আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।’
মাশহুদ চোখ রাঙালো, ‘তুই আগে নিজের খাওয়া শেষ কর। কেন বারবার আমার কাজে নজর দিচ্ছিস?’
‘তুই বাকিদের খাবার সার্ভ কর।আমি এখন ইফাজের মামিকে খাওয়াব। তোর কি? তাছাড়া তুই তো রেগুলার খাওয়াবি, আমি না হয় আজ খাওয়ালাম।’
মাশহুদ বিরক্তি নিয়ে বলল,’এই মেয়েটা প্রচুর কথা বলে। ফাইয়াজ?বউকে কেমন শাসন করো? এখনও সোজা করতে পারলে না?’
সভ্যতা চেঁচাল, ‘ভাইয়াকে কি পরামর্শ দিচ্ছেন আপনি? বউকে কি করে সোজা করতে হয়? আপনার মনে হয় না এই পরামর্শ আপনার বেশি প্রয়োজন?’
মাশহুদ ঢোক গিলে বলল, ‘নাহ্ আমি এমন পরামর্শ কেন দেব? প্রীতি কি করবি বলছিলি,যা কর। এখনও বসে আছিস কেন? ওঠ, ওঠ।’
প্রীতি সভ্যতাকে খাইয়ে দিচ্ছে। সভ্যতা মুচকি হাসে। প্রীতি খাওয়ানোর ফাঁকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ভাইকে ভালোবাসো?’
সভ্যতা কিছু বলতে পারলো না। প্রীতি-ই বলতে থাকে,
‘নিরবতাকে সম্মতি ভাবতে পারি?’
‘এই মুহূর্তে ভালোবাসি কিনা জানি না,তবে ভবিষ্যতে ভালোবাসবো আপু।’
‘ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। দেখবে কখনও কষ্ট পেতে দেবে না। তাছাড়া ওকে শা’য়ে’স্তা করার লাইসেন্স আছে তোমার। ও যদি তোমাকে কিছু বলে, সরাসরি আব্বুর কাছে নালিশ করবে। আমাদের যতটা জ্বা’লিয়েছে, তার শোধ কিন্তু তোমাকে তুলতে হবে।ওকে ভীষণরকম জ্বা’লাবে। সবসময় চাপের ওপর রাখবে,দম ফেলার সুযোগ দেবে না। ওই বাড়িতে ওর থেকে বেশি তোমার কথা শোনা হবে তাই সুযোগগুলো অবশ্যই কাজে লাগাবে। ঠিক আছে?’
সভ্যতা হেসে ফেললো। ফাইয়াজ ডাকতেই প্রীতি উঠে যায়। মাশহুদ প্রীতিকে ডেকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। প্রীতি উত্তর দিতেই সে তৎক্ষণাৎ সভ্যতার দিকে তাঁকাল। পরপরই মুহিব ও মৌশি ভাবির রসিকতায় হেসে উঠলো। সভ্যতা মাশহুদের সেই হাস্যজ্জ্বল চেহারা অবলোকন করতে ব্যস্ত। মাশহুদ হঠাৎ সভ্যতার দিকে তাঁকিয়ে চোখ মা’রলো। সভ্যতা সেটা দেখে কপোট রাগ দেখানোর ভান করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরক্ষণেই মাশহুদের দিকে তাঁকিয়ে মৃদু হাসে। মনে মনে বলে,
‘ধন্যবাদ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি!আমার জীবনে আসার জন্য, আমাকে এতটা ভালোবাসার জন্য। এত সুন্দর একটা পরিবার দেওয়ার জন্য, আমার সকল ইচ্ছা, শখ পূরণ করার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য।জানি না আপনি যেমন চান, আমি আপনাকে সেভাবে ভালোবাসতে পারবো কিনা। তবে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।’
মাশহুদ সভ্যতার পাশে এসে, ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। সভ্যতা খানিকটা দূরে সরে গেল।মাশহুদ সেটা খেয়াল করে সভ্যতার দিকে সরে যায়। সভ্যতা আবার সরে গেলে মাশহুদ চিন্তিতকন্ঠে প্রশ্ন করলো, ‘রাগ করেছ নাকি?’
‘করলে?’
‘রাগ ভাঙাতে হবে।’
‘কিভাবে ভাঙাবেন?’
মাশহুদ সভ্যতার হাতটি নিজের শক্তপোক্ত হাতের মুঠোয় ভরে বলল, ‘ভালোবেসে।’
‘সেটা তো সবসময় বাসবেন। কিন্তু রাগ ভাঙাতে হলে যা চাই, তাই দিতে হবে।’
‘কি চাও?’
‘রাতের শহর দেখতে চাই। দেখাতে পারবেন?’
‘কেন নয়? চলো..’
মাশহুদ সভ্যতাকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সবাই জিজ্ঞেস করলো, ওরা কোথায় যাচ্ছে? মাশহুদ উত্তরে বলে, তার প্রাণের অভিমান ভাঙাতে। সভ্যতা হাসছে, পেছন থেকেও সবাই হেসে উঠল উত্তর শুনে। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাশহুদের বাইকে চেপে বসলো সভ্যতা। ঠান্ডা হাওয়ায় মধ্যম গতিতে চলছে বাইক। সভ্যতা এতক্ষণ কিছুটা দূরত্বে বসেছিল, এবার সে মাশহুদের কাঁধে হাত রাখে। মাশহুদ সভ্যতার স্পর্শের অর্থ বুঝে স্পিড বাড়িয়ে দিল। দূর হতে মেঘের গর্জন ভেসে আসে, কয়েকমুহূর্ত যেতে না যেতেই মুশলধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। সভ্যতার হাতের বন্ধন দৃঢ় হয়, মাশহুদের বাইকের স্পিড কমে আসে। সে স্মিতহাস্যে প্রশ্ন করে,
‘ভয় করছে?’
‘কেন?’
‘অ্যাডভান্টেজ নিতে পারি।’
‘আমি জানি আপনি অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার মতো মানুষ নন, তাই ভয় দেখানোর চেষ্টা করে লাভ নেই।’
‘আর কি জানো?’
‘এখন ভিজতে ভালো লাগছে, কিন্তু একটুপরেই জ্বর আসবে।’
‘তাহলে ফিরে যাই?’
সভ্যতা মলিনস্বরে বলল, ‘হুম।’
‘ভিজতে চাও?’
‘যদি বলি, চাই।’
‘তাহলে এই চাওয়াও পূরণ হবে। একবার চেয়ে দেখো।’
‘জ্বর আসলে? আমার পড়ার ক্ষতি হবে, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতে হবে বিছানায়, রেজাল্ট খারাপ হলে সবাই কষ্ট পাবে।’
‘কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো। সেবাশুশ্রূষা করে সুস্থ করার দায়িত্ব নাহয় আমি-ই নেব।’
সভ্যতা আরেকটু কঠিন ভাব নিয়ে বলল,’শুধু সুস্থ হলে তো হবে না। সামনেই পরীক্ষা..’
‘আমি শিক্ষক হিসেবেও খারাপ নই।’
সভ্যতা ফিক করে হেসে দিল। মাশহুদ সভ্যতার হাসির কারণ বুঝতে পারলো না। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই অনুভব করলো সভ্যতা পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে মাশহুদ। সভ্যতা মাশহুদের পিঠে গাল ঠেকিয়ে বলল,
‘মাত্রই আপনার প্রেমে পড়ে গেলাম। বিয়ের আগে এসব ইন্টিমেসি আমার পছন্দ না, তবে আজ ব্যতিক্রম কিছু হলো। তাই অতিসত্বর বিয়ের ব্যবস্থা করুন।আমি যদি আপনাদের বাড়িতে সারাজীবনের জন্য থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারি, আপনি পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি আমাদের বাড়িতে থাকতে পারবেন না? মাসখানেক ঘরজামাই হয়ে থাকলে তেমন সমস্যা হবে না। আগামীকাল শুক্রবার, চলুন শুভ কাজটা দ্রুত সেরে ফেলি।’
মাশহুদ হতবিহ্বল চোখে তাঁকিয়ে বলল,’মজা করছো?’
‘না। এমন সিরিয়াস ম্যাটার নিয়ে মজা করবো কেন? আপনার হয়তো জড়াজড়ি করার অভ্যাস আছে কিন্তু আমার নেই। আমি একবার যাকে ধরি, তাকে কখনও ছাড়িনা। আজ আবেগের বশে জড়িয়ে ধরলাম, এই ভুলের খেসারত তো দিতেই হবে।’
মাশহুদ চেহারায় কাঠিন্যভাব বজায় রাখে, সভ্যতার কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। একটু আগেই সভ্যতা প্রীতিকে বলেছে সে মাশহুদকে এই মুহূর্তে ভালোবাসে কিনা জানেনা, তাহলে হঠাৎ প্রেমে পড়ার কারণ কি? সভ্যতা প্রেমে পড়লেও স্বীকার করার মেয়ে নয়, মাশহুদের কি কোনো ভুল হয়েছে? তাই সভ্যতা এভাবে কথা বলছে? সভ্যতা বাইক থামাতে বলল, মাশহুদ বাইক থামাতেই সে নেমে যায়। মাশহুদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাঁকিয়ে বলে,
‘আপনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাই না? কি করলে বিশ্বাস করবেন আমি আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? দু-চারটা চুঁমু খেয়ে নেব? যাকে তাকে চুঁমু খাওয়া যায় না, তাই নিঃসন্দেহে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ। এরপর আর সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকবে না কিন্তু এমন খোলামেলা পরিবেশে চুঁমুর ব্যাপারটা বেশ অস্বস্তিকর। তাহলে আর কি করা যায় বলুন তো? শর্টকাটে বলুন, দু-মিনিটের মধ্যে এমন কি করলে মেনে নিবেন যে, আমি সত্য বলছি।’
মাশহুদ সভ্যতার রসিকতাকে একপাশে রেখে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করে, ‘হঠাৎ প্রেমে পড়লে কেন?’
সভ্যতা চোখ ছোট ছোট করে বলল, ‘ট্রাস্ট মি, আমার এইমাত্র পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস হলো আপনার চরিত্র সাদা কাগজের মতো। একটা দাগও নেই। এমন সুযোগ যে লুফে নিল না, তার চরিত্রে দাগ থাকতেই পারে না। এবার আসি কেন প্রেমে পড়লাম? উত্তর হচ্ছে, আপনার যত্ন, ভালোবাসা, আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা, আমার সব শখ পূরণ করার একটা মোক্ষম উপায় আপনি, আপনাকে বিয়ে করলে আমি যা যা চাইব সব পাব। আমাকে কিছুটা স্বার্থপর মনে হতে পারে, কিন্তু এসব সত্য।’
‘যদি কিছু দিতে না পারি? তখন আমাকে ছেড়ে দেবে?’
‘আমার আগের কথাটা ভুলে গেলেন নাকি? বলেছি না, আমি একবার যাকে ধরি তাকে ছাড়ি না। প্রেমে পড়ার কারণ হয়তো এগুলো কিন্তু জড়িয়ে ধরার পর এসব বাদ। নাও আই যাস্ট নিড ইউ, ইউর অ্যাটেনশন, ইউর লাভ অ্যান্ড ওয়ান্না স্টে উইথ ইউ আনটিল মাই ডেথ।’
মাশহুদের চোখে পানি চলে আসে।সভ্যতা এগিয়ে এসে মাশহুদের চেহারায় হাত বুলিয়ে,চোখের পানি মুছে বলে, ‘সবসময় কাঁদেন কেন?আমার ভালো লাগে না আপনাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে। আপনার অকারণে কাঁদার অনুমতি নেই, আজকের পর থেকে আমি যখন কাঁদাতে চাইব শুধু তখন-ই কাঁদবেন। এই মুহূর্তে আপনার হাসি দেখতে চাই। তার আগে..’
সভ্যতা হাতের আংটি খুলে মাশহুদের হাতে দিয়ে বলল,
‘একা একা পরেছিলাম।এখন চটপট প্রপোজ করে, এটা পরিয়ে দিন। আমি কি ফেলনা নাকি?যে প্রপোজ ছাড়াই, প্রপোজাল রিং পরে বসে থাকবো।’
মাশহুদ কিছু বলতে পারলো না। সভ্যতাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো, সভ্যতার চোখেও পানি। অবশেষে সভ্যতা বলেই ফেললো, যা সে এতদিন ধরে বলতে চাচ্ছিল।
সভ্যতাকে ছেড়ে মাশহুদ চোখ মুছে হাটু গেড়ে বসলো। সভ্যতা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়।মাশহুদ বিনাবাক্যে আংটি পরিয়ে দিল সভ্যতার আঙ্গুলে। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে, মাশহুদ শার্টের ওপর থাকা ব্লেজার খুলে সভ্যতার গায়ে জড়িয়ে দিল। সভ্যতা আজ বিরোধ করলো না। বাইকে উঠে পড়ে দুজন, সভ্যতা পুনরায় মাথা রাখে মাশহুদের পিঠে,দুহাত সামনে এনে জড়িয়ে ধরে মাশহুদকে। মাশহুদ মৃদু হেসে বাইক স্টার্ট দিল। দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে, সবাইকে জানাতে হবে বিয়েটা পরীক্ষার পর নয়, আগামীকাল হতে চলেছে।
সমাপ্ত।
____________________________________
নোটঃ
১। পর্ব ০২ ও ০৬ পড়লে বুঝতে পারবেন, দ্বিতীয় পর্বে উল্লেখ করা যুবকটি মাশহুদ। ষষ্ঠ পর্বে এসে সভ্যতা সরাসরি মাশহুদকে যে কথাগুলো বলেছে, মাশহুদ সেটা ইঙ্গিতে তার মা-কে বলেছিল ফোনে।
২। পর্ব ০৫, সভ্যতা ঘরে ঢুকে মাশহুদকে অপছন্দ করার কারণ বলছিল যখন তখন সে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিল ‘সেখানে চাকরি করা, থাকতে চাওয়া..’ কারণগুলো। অর্থাৎ সভ্যতা শুরু থেকেই জানতো সে কেন মাশহুদকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। চরিত্র নিয়ে কথা বলার টপিকটা কেবল অযুহাত।
এমন বহু ছোটখাটো তথ্য আমি প্রথম পর্ব থেকেই দিয়ে রেখেছি। কিন্তু কিছু মানুষ গল্পটি মনোযোগ দিয়ে না পড়ে, স্রেফ কয়েকটা লাইন পড়ে হ্যারাস করার চেষ্টা করেছেন। আপনাদের শুধু এটুকু বলবো, কাউকে কিছু বলার আগে, দেখে-শুনে, জেনে-বুঝে কথা বলবেন। এমন কিছু বলবেন না বা করবেন না যাতে আপনাদের জন্য অন্যকেউ কষ্ট পায়।
গল্পটি মাশহুদ নামক অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি কিভাবে সভ্যতার আকাঙ্ক্ষিত মনের মানুষে পরিণত হয়, সে সম্পর্কে লেখা।গল্পটিতে কিছু ভুলত্রুটি আছে, অনেক ঘটনা, কাহিনি অসম্পূর্ণ। যখন লেখা শুরু করি, তখন ৬-৭ পর্বের একটি ছোটগল্প লেখার পরিকল্পনা ছিল আমার কিন্ত আজ ১৫পর্বে এসে শেষ করলাম। অনেককিছু লিখেও সেটা বাদ দিতে হয়েছে গল্পের প্লটের খাতিরে।
এই গল্পটির কোনো সিজন আসবে না।তবে আশা করছি আপনারা মাশহুদ ও সভ্যতার পরিপূর্ণ প্রণয়ের অধ্যায় পড়ার সুযোগ পাবেন। যা কিছু বাদ দিয়েছি সব লেখা হবে নতুন কোনো গল্পে কিন্তু এটা শুধু মাত্র তাদের জন্য লিখব যারা গল্পটি পছন্দ করেছেন।❤️