অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী ২ পর্ব-৩৪+৩৫

0
227

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_৩৪
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

রামি ছুটি মঞ্জুরের জন্য মেইল করলো। তার ছুটি মঞ্জুর হলো না। মাত্র দুদিন হলো ছুটি কাটিয়ে ডিউটিতে এসেছে। ঠোঁট গোল করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রামি। জেনেশুনেই এই প্রফেশনে এসেছে সে, তবুও মনে হচ্ছে বিয়ের পর হলে সে কখনোই এই প্রফেশনে আসতো না। অরুর স্নিগ্ধ মুখটা চোখের সামনে বারবার ভেসে ওঠে। একহাতে কপালের দু-পাশ চেপে ধরে রাখলো। চোখমুখ শক্ত। সময় দেখে ডিউটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো।

★★★

ইলেকশনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, রাজপথ ততই গরম হয়ে উঠছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝে তুমুল সং*ঘ*র্ষ। আজ পার্লামেন্টে ছোটোখাটো একটা ব্যাপার নিয়ে তর্ক হলো। সেখান থেকে বেরিয়েই হাতাহাতি শুরু। তারপরই মা*রা*মা*রি*র সূত্রপাত। চা*পা*তি, রা*ম*দা, ক্ষুর বের করলো মিঠু আর এমদাদুল হক দুজনের ছেলেরা। কো*পা*কু*পি*র মাঝে এমদাদুল হকের শরীরে আ*ঘা*ত পড়ে। ক্ষিপ্ত হয়ে তার দলের ছেলেরা মিঠুর উপর পাল্টা আক্রমণ করে বসে। হাত আর পিঠে গভীর ক্ষ*ত সৃষ্টি হয়। এখানেই শেষ নয়। এরপর মা*রা*মা*রি আরো মহামারী আকার ধারণ করে। দুদলেরই কয়েকজন নিহত হয়। তৎক্ষনাৎ মিঠু আর এমদাদুল হক দুজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। মিঠুর বাবা আজ একটা কাজে শহরের বাইরে আছেন। উনার কাছেও খবর পৌঁছে গিয়েছে। তিনি ছুটে আসছেন ছেলের কাছে। বাড়ি থেকে অরু, তরী কান্নাকাটি করে মাহমুদের সাথে হাসপাতালে এসে জড়ো হয়েছে। মিঠুর জ্ঞান নেই। মাহমুদ বলল,“তোমরা দুজন বাসায় চলে যাও। এদিকটায় আমি আছি।”

তরী হেঁচকি তুলে কাঁদছে। বলল,
“আমি যাবো না। কত করে করি বলি এসব ছেড়ে দে, আমার কথাই শোনে না।”

মাহমুদ নরম স্বরে বলল,“এখানে থেকে কান্নাকাটি করে কী করবে? যদি তোমাদের প্রয়োজন পড়ে তখন আসতে পারবে।”

অরু কান্না থামিয়ে তরীকে বলল,“আমি থাকছি, তুমি যাও। অমি রাতে কান্নাকাটি করবে।”

মাহমুদ বলল,“তোমাদের কাউকেই থাকতে হবে না। ওঁর জ্ঞান ফিরতে দেরি আছে। শুধু শুধু বসে থেকে কী করবে? কোন কাজ নেই। কাল আসতে পারবে।”

তরীর বাবা ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন হাসপাতালে। হন্তদন্ত হয়ে রিসিপশন থেকে কেবিন নাম্বার জেনে ছুটলেন ছেলের কেবিনের দিকে। অরু, তরী বাবাকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে আবারও হাউমাউ কান্নায় ভেঙে পড়লো। দুহাতে দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাবা। অথচ উনার চোখেরও পানি। ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। মাহমুদ শান্ত স্বরে বলল,“এভাবে কান্নাকাটি করো না। এটা হাসপাতাল, খারাপ দেখা যায়।”

বাবাও অরু আর তরীকে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বোঝালেন। তরী কান্না মাখা গলায় বলল,“আমি যাবো না। মায়ের সময় আমি থাকতে পারিনি। আমি আর আমার মাকে জীবিত ফিরে পাইনি। আমার ভাইকে আমি হারাতে পারবো না।”

মাহমুদ খানিক বিরক্তির সুরে বলল,“কেন অযথা নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করছো।” অতঃপর ঠান্ডা গলায় বোঝালো,“ রাজনীতি করতে গেলে এসব হবেই। তোমাদের আরো শক্ত হতে হবে। এরচেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে শক্ত থাকতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না তরী।”

শেষমেষ দু-বোনকে বোঝাতে সক্ষম হলো শশুর-জামাই। তরীর বাবা মাহমুদকে বললেন,“তুমি বরং ওঁদের দিয়ে এসো। আমি থাকছি এখানে।”

মাহমুদ দ্বিরুক্তি করলো না। অরু আর তরীকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই সে আবার আসবে। বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসার সময় ইরা রাতের জন্য দুজনের খাবার দিয়ে দিল। আগে থেকেই সে সব রেডি করে রেখেছিল। মাহমুদ খাবার নিয়ে আবারও বের হলো।

অসহনীয় যন্ত্রণায় শরীর টনটন করে উঠছে। দাঁতে দাঁত পিষে হজম করে চলেছে সমস্ত ব্যথা। ছটফটিয়ে উঠছে যন্ত্রণায়। বিছানায় পিঠ লাগিয়ে শোয়া যাচ্ছে না। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় শরীর অনেকটাই দুর্বল। নিস্তেজ হয়ে আছে দেহ। চোখমুখ কুঁচকে আছে। বাবা মিঠুর এই যন্ত্রণা দেখে নিজেই অস্থির হয়ে উঠলেন। কিছুতেই সন্তানের এমন করুণ পরিণতি তিনি মেনে নিতে পারছেন না। এজন্যই সবসময় একটু গো*লা*গু*লি*র শব্দ পেলে দিশেহারা হয়ে ছেলেকে খুঁজতে বেরিয়ে যেতেন। তিনি অস্থির গলায় মাহমুদকে বললেন,“ডাক্তার ডাকো বাবা। আমার ছেলে ব্যথা সহ্য করতে পারছে না।”

মাহমুদ চেয়ার টে*নে শশুরকে বসিয়ে দিল। গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে ধরলো মুখের সামনে। ধীরস্থির ভাবে বলল,“পানি পান করুন। ডাক্তার ঔষধ দিয়ে গিয়েছেন। উনারা বলেই দিয়েছেন জ্ঞান ফিরলে ব্যথা বাড়বে।”

তারপর হাতঘড়িতে সময় দেখলো। রাত্রি বারোটার চেয়ে একটু বেশি সময়। মাহমুদ বলল,“আপনি বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করুন বাবা। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি আপনাকে বাসায় দিয়ে আসবে।”

তরীর বাবা জেদ ধরলেন তিনি কিছুতেই যাবেন না। মাহমুদ বলল,“আপনি বাচ্চাদের মতো জেদ করবেন না বাবা। আপনার তিন সন্তানের আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। বাবা-মা বেঁচে থাকলে সন্তানের জন্য সবাই থাকে, সবার মায়া-মমতা থাকে। বাবা-মা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেলে সবদিক থেকে অবহেলা বেড়ে যায়। আপনার বিশ্রাম দরকার। আগে নিজেকে ঠিক রাখুন। তবেই না আপনার সন্তানদের আগলে রাখতে পারবেন। আমি ড্রাইভারকে কল দিচ্ছি, জেদ করবেন না।”

তরীর বাবা চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখের পাতা বন্ধ করে নিলেন। উপরে জেদ ধরলেও সত্যিই শরীরটা আর কুলচ্ছে না। বুকের ভেতর হারিয়ে ফেলার ত্রাস। তরীর মা মা*রা যাওয়ার পূর্বে মাহমুদ একজন বড়ো ছেলের অভাব দূর করেছে। তরীর বাবা আজ আবার উপলব্ধি করলেন মাহমুদ সেদিনের মতো আজও বড়ো ছেলের দায়িত্বে অব্যহত আছে। মেয়ের জন্য সুপাত্র পেয়েছেন ভেবেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো। মাহমুদ লক্ষ করছে তরীর বাবার শরীর মৃদু কাঁপছে। সে দ্রুত ড্রাইভারকে কল দিয়ে উনাকে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলেন।

★★★

মিঠুর খবর সুহার কানে যখন পৌঁছায়, তখন রাত। বাড়ি থেকে মামা বের হতে দিলেন না। তাই সকালের আলো ফুটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো মিঠুকে দেখতে যাওয়ার জন্য। তার ভেতরটা বিষ ব্যথায় মুচড়ে উঠছে। রাতটা কীভাবে কেটেছে, একমাত্র সে আর আল্লাহ জানেন। মামা মন থেকে বিয়েতে মত দেন নি। মিঠুর অবস্থার কথা শুনে বেশ হম্বিতম্বি করলেন তিনি। সুহা ঠিক করলো এবার সে লড়ে যাবে সব পরিস্থিতিতে। মামা উল্টে যেতে চাইলেও সে বোঝাবে। প্রয়োজনে পায়ে পড়ে থাকবে মামার। তবুও মিঠুকে সে হারাতে দেবে না। মামিকে বলেই বাসা থেকে বের হলো সে। হাসপাতালে এখন ভীড় নেই বললেই চলে। সুহার পা চলছে না। তবুও টে*নে নিয়ে ছুটে চলেছে। কেবিনে ঢুকতেই রামির পাশে অরুকে নজরে পড়লো। অরু একটু আগেই এসেছে। মিঠু মলিন চোখে তাকিয়ে আছে। কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে সুহার। ঢোক গিলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও যেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে। চেয়েও অনুভূতি লুকাতে পারছে না। সুহাকে দেখে অরু ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে বেরিয়ে গেল। ধীর পায়ে রামির পাশে এসে চেয়ার টে*নে বসলো সুহা। কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। মিঠু ক্ষীণ স্বরে শুধালো,“কেমন আছেন?”

এই পর্যায়ে সুহা ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেললো। বিচলিত হলো না মিঠু। তার ঠোঁটে নিস্তব্ধ গাঢ় হাসি। হাসি থামিয়ে চোখমুখ সরল করলো। সুহার নতমুখের দিকে পলকহীন তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,“কাঁদছেন কেন সুহা?”

সুহা চোখ মুছে নিলো ঝটপট। কাতর স্বরে অনুরোধ করলো,“এসব ছেড়ে দিন না!”

মিঠু শান্ত হয়ে বলল,“ছেড়ে দেব।”

সুহা যেন আশার আলো দেখতে পেল। দু-চোখ জুড়ে রঙধনুর মেলা। মিঠু আবারও বলল,
“মৃ*ত্যু*র পর। তিনটে জিনিস আমি মৃ*ত্যু*র আগ পর্যন্ত ছাড়বো না। এক – আমার পরিবার, দুই – আপনি, তিন- রাজনীতি।”

সুহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। একটু আগের আশারা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে নিরাশায় পরিণত হলো। চোখমুখ শক্ত করে বলল,“বেশ, আপনি যদি রাজনীতি না ছাড়েন তবে আমি দূরে কোথাও চলে যাবো।”

মিঠু অল্প হেসে বলল,“তার আগেই আপনাকে বন্দি করার বন্দোবস্ত করবো।”

সুহা হাল ছেড়ে দিল। এখন আর কঠিন হয়েও থাকতে পারে না। চোখদুটো জলে টইটম্বুর হয়ে এলো। ঠোঁট ভেঙে কান্না আসছে তার। মিঠুর হাতের ক্ষতস্থানে আলতোভাবে হাত ছুঁয়ে দিল। প্রথম নিজ থেকে মিঠুকে স্পর্শ করেছে। সুহার চমক কাটলো মিঠুর মুখে ব্যথা সূচক ‘আহ্!’ শব্দ শুনে। ঝট করে হাত সরিয়ে অপরাধী স্বরে বারবার ক্ষমা চাইলো।
“সরি, সরি, সরি! আমি ইচ্ছে করে ব্যথা দেইনি।”

মিঠু চোখমুখ কুঁচকে নিলো ব্যথায়। ব্যথা হজম করে সুহার কথায় কপাল শিথিল করলো। গম্ভীর স্বরে বলল,“ইচ্ছে করে দিয়েছেন ব্যথা, তাইনা? এর শোধ আমি হিসেব করে নেব। তবে আমার শা*স্তি দেওয়ার ধরণ কিন্তু ভিন্ন। নিজেকে প্রস্তুত করুন।”

বলেই মিটিমিটি হাসলো মিঠু। সাথে যেন চোখদুটোও হাসছে। সুহা ঢোক গিলে আরেকটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো৷ প্রথমে অপরাধবোধ থাকলেও পরক্ষণে লজ্জা পেল বেশ। মিঠু বেশ উপভোগ করছে সুহার এমন পরিণতি। করুণ চোখে মিঠুর দিকে তাকালো সুহা।
দরজায় দুবার নক করলো অরু।
“আসবো?”

মিঠু বলার পূর্বেই সুহা তড়িঘড়ি করে বলল,“এসো, এসো।”

তাকে অস্বস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য মনে মনে কয়েকবার কৃতজ্ঞতা জানানো শেষ অরুকে। মিঠু ইশারায় বোঝালো,“পরে দেখে নেব।”

সুহা আপাতত ভাবলেশহীন রইলো। অরু এসে ফোন বাড়িয়ে দিল মিঠুর দিকে। রামি কথা বলতে চাচ্ছে। সে সকালেই খবর পেয়েছে। ডিউটি থেকে ফিরে অরুর মেসেজ চেক করতেই এমন একটা দু*র্ঘ*না*র খবর জানতে পারলো। সুহা অরুকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। রামি আর মিঠুর মাঝে অনেকক্ষণ আলাপ চললো। অরু আসার পর মাহমুদ বাড়ি গিয়েছে। কথা শেষ করে মিঠু ডাকলো অরুকে। ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“নে কথা বল।”

অরু ফোন হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। সকালের মিষ্টি রোদ শরীরে এসে পড়ছে। খানিকটা উষ্ণতা পেয়ে মন চনমনে হয়ে উঠেছে অরুর। রামি নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে বলল,“চোখমুখের কী অবস্থা করেছিস! মিঠুটাকে ধরে বুড়িগঙ্গায় চুবানো উচিত। ওঁর জন্যই আমার বউ কেঁদেকেটে পুকুর বানিয়েছে। বোধহয় আমি সহ আমার চৌদ্দগোষ্ঠী সাঁতার কাটতে পারবে। বাড়ি এসেই ওঁকে একটা গণধোলাই দিতে হবে দেখছি।”

অরু ক্ষেপে গেল।
“আমার ভাইকে নিয়ে আর একটাও কথা বলবে না। তুমি আমার ভাইকে ধোলাই দেবে আর আমি বসে বসে দেখবো?”

রামি বলল, “হয়েছে, আমাকেও মে*রে হাসপাতালে শুইয়ে রাখিস। এখন চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিবি। ভাইয়া খাবার নিয়ে আসছে।”

অরুও বাধ্য মেয়ের মতো বলল,“আচ্ছা। তুমি খেয়েছো?”

“না, একটু পর খাবো। তুই খেয়ে নে। বেশি চিন্তা করিস না। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। মিঠু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। কোন কিছু প্রয়োজন হলে তোর বের হওয়ার দরকার নেই। ভাইয়াকে বললেই এনে দেবে।”

অরু ছোটো করে বলল,“ডিউটি থেকে এসেছো। তুমি খেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও। পরে কথা বলবো।”

#চলবে…….

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_৩৫
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

গভীর ক্ষ*ত শুকাতে বেশ সময় লাগবে। মিঠুকে দীর্ঘদিন রেস্টে থাকার কথা বলা হলেও সে সবার কথা শুনতে নারাজ। বাসায় আসার পর থেকে কয়েকবার বেরোনোর চেষ্টা করেছে। বাবা বলে দিয়েছেন,“তুই বের হলেই আমি বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাবো। আর ফিরবো না।”

বাবার কথায় দমে যায় মিঠু। বিছানা ছেড়ে ধীর পায়ে হেঁটে দরজা চাপিয়ে দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের ক্ষ*ত গুলো নিখুঁত চোখে পর্যবেক্ষণ করলো। ব্যান্ডেজের উপর দিয়েই বাহু ছুঁয়ে দেখলো। ঘাড় কাঁত করে পিঠের ক্ষ*ত দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আয়নার সামনে থেকে সরে এলো। খালি গায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। হু হু করে বাতাস বইছে। কাঁটা দিয়ে উঠছে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ। মুঠোফোন হাতে নিয়ে নড়াচড়া করলো কিছুক্ষণ। গ্যালারি ওপেন করে একজোড়া মুখের ছবি বের করলো। বিষাদমাখা মুখটি জুম করে দেখে হাসলো মিঠু। আড়াল হতে তোলা ছবিটা। হাসপাতালে থাকাকালীন ছবি। এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট অরুর। সুহা এই ছবি সম্পর্কে অবগত নয়। মিঠু ঠোঁট ফাঁক করে আওড়ালো,“আপনার সাথে কেবল আমাকেই মানায়।”

★★★

সকাল থেকে অরুর ফোনে প্রায় ত্রিশটা কল এসেছে। এখনো তীব্র শব্দে ফোন বেজে চলেছে। ইচ্ছে করেই তুলছে না সে। ফোন বেজে থেমে যাওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই মিঠুর ডাক শোনা গেল।
“অরু।”

বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে অলস ভঙ্গিতে শুয়েছিল অরু। মিঠুর ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছালেও প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মিঠুর তাকে ডেকে পাঠানোর কারণ সম্পর্কে সে অবগত। তাকে কলে না পেয়ে রামি মিঠুর নাম্বারে কল দিয়েছে। সেজন্যই ডাকছে মিঠু। আরো কয়েকবার মিঠুর ডাক শোনার পরও অরু সাড়া দিলো না। মিঠু ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বলল,“রামিকে কল ব্যাক কর অরু। আমাকে তোর ঘরে যেন উঠে আসতে না হয়। আর একবার আমার ফোনে কল এলে তোকে এসে কে*লি*য়ে যাবো।”

ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো অরু। ফোন হাতে নিয়ে রামিকে কল ব্যাক করলো। সাথে সাথেই তার কানে বিস্ফোরণ ঘটলো।
“বে*য়া*দ*ব সকাল থেকে আমাকে এভাবে অপেক্ষা করানোর মানে কী? কতগুলো কল দিয়েছি তোর হিসেব আছে? হিসেবটিসেব কিছু বুঝিস?”

অরু বলল,“না, আমি জীবনে স্কুলের ধারেপাশে গিয়েছি? সব হিসেব শুধু তুমিই বোঝ। আমি তো হলাম গণ্ডমূর্খ।”

“আসলেই তুই একটা বেকুব মহিলা।”

ছ্যাৎ করে উঠলো অরু। ক্ষ্যাপাটে স্বরে বলল,“এ্যাই তুমি আমাকে বেকুব মহিলা বলছো?”

রামি রাগত স্বরে বলল,“তোর কী মনে হয়, তুই কচি খুকি? তুই তো মহিলাই, তারউপর একটা বেকুব।”

“তুমি তো তাহলে বুইড়া খাটাশ। শেষমেশ আমার কপালে সে বুড়োই জুটলো, আফসোস!”

রামি বলল,“আমি এখনো হাত বাড়ালে মেয়েদের লাইন লেগে যাবে।”

অরু ঠেস দিয়ে বলল,“তো মেয়েদের নিয়েই থাকো না, আমার কাছে কী?”

রামি কড়া স্বরে বলল,“কল ধরছিলি না কেন?”

অরু নিভু নিভু গলায় তীব্র অভিমান নিয়ে বলল,“তাতে তোমার কী? কল না ধরলেই তো তুমি খুশি।”

হুট করেই সমস্ত রাগ উধাও হয়ে গেল রামির। নরম স্বরে বলল,“কাল ইচ্ছে করে কল কাটিনি। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। এজন্য আমার কল ধরবি না? আমাকে তুই না বুঝলে কে বুঝবে, বল।”

অরু কটমট করে বলল,“কেন? তোমার পেছনে না মেয়েদের লাইন লেগে আছে? তারা বুঝি তোমায় বুঝতে চায়না?”

নিঃশব্দে হাসলো রামি। তার প্রতি অরুর এই ব্যাকুলতা তাকে ভীষণ তৃপ্তি দেয়। অরুর অভিমান ভাঙাতে বিবশ কন্ঠে বলল,“আমি তো তাদের চাই না, আমার শুধু অরু হলেই চলবে। তার জন্য বাকিসব ছাড়তে পারি।”

অরু তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,“পরিবারকেও?”

রামি শান্ত কন্ঠে বলল,“সেটা তুই কখনোই বলবি না, জানি আমি।”

অরুর মাথায় দুষ্টুমির ভূত চাপলো। বলল,“আমি ঘুমাবো এখন। পরে কল দিও।”

রামি কিছু বলার আগেই সে কল কে*টে দিল। তার অনেক আগের একটা ফেসবুক একাউন্ট আছে। পাসওয়ার্ডও লিখে রেখেছিল। সর্বপ্রথম একাউন্টের নাম পরিবর্তন করলো। ওই একাউন্ট দিয়ে প্রায় সবার সাথেই এড আছে। কিন্তু এর মালিক যে অরু, সে সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। অরু “হাই” লিখে সেন্ড করলো রামির একাউন্টে। দশমিনিট অপেক্ষা করেও রিপ্লাই পেল না। এভাবে একঘন্টা কে*টে গেল। অরু আবারও মেসেজ পাঠালো “কেমন আছেন?”

কোন রেসপন্স নেই। অরু মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। বিপত্তি বাঁধলো সন্ধ্যায়। রামি ফিরতি বার্তা পাঠিয়েছে, “কে আপনি?”

“আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।”

“পরিচয় দিন।”

“পরিচয় দিয়ে কী করবেন? আমি কী বলছি সেটা শুনুন। আপনার বউকে ইদানীং একটা ছেলের সাথে দেখা যায়। ঘুরাঘুরি, হাসাহাসি, হাত ধরে হাঁটা, রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াদাওয়া করে। একে অপরকে মুখে তুলে খাইয়েও দেয়।”

“ধন্যবাদ।”
লিখে আর কোন মেসেজ করলো না রামি। অরু অপেক্ষায় আছে রামি তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলে কি-না! দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। টেনশন হচ্ছে রামি তাকে বিশ্বাস করবে তো! না-কি ফেইক একাউন্টের কথা বিশ্বাস করে বসে থাকবে!
রাতে রামি কল দিল। খুব স্বাভাবিকই তাদের কথা হলো৷ মাঝে একটু দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়াঝাটিও হলো। সব কিছুর মাঝেও অরু একটু অস্বাভাবিক আচরণ করে ফেলেছে। রামি তো জিজ্ঞেস করেই বসলো, “কী হয়েছে তোর? কিছু নিয়ে চিন্তিত?”

অরু ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছে। ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আবার ফেইক একাউন্ট থেকে রামিকে নক করলো।
“স্ত্রীর ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিলেন?”

রামি ফিরতি বার্তা পাঠালো,“আপনি কি সিঙ্গেল আছেন?”

এমন রিপ্লাই আশা করেনি অরু। সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোনভাবে নিজেকে সামলে রিপ্লাই করলো,“হু।”

রামি লিখলো,“আমার একজন মানুষ দরকার, ভীষণ কাছের। যার কাছে আমি নিজেকে উজাড় করে দিতে পারবো। আমার স্ত্রীর মনে তো আমি নেই। আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?”

যত সময় যাচ্ছে অরুর শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। মনে মনে রামির গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলছে। রামি তাকে অবিশ্বাস করে ফেইক একাউন্টের কথা বিশ্বাস করে বসে আছে! তবে সে দেখতে চাইলো জল কতদূর গড়ায়। দাঁত কিড়মিড় করে টাইপ করলো,“কেন নয়! অবশ্যই আমি আপনাকে সাহায্য করবো।” সাথে দুটো লাভ ইমোজি সেন্ড করে দিলো।

রামি আরও এক ধাপ উপরে গিয়ে দুটো কিস ইমোজি ছুড়ে মা*র*লো। তারপর লিখলো,“আপনাকে আমার ব্যক্তিগত মানুষ বানাতে চাই, হবেন? দিনেরাতে একশো একটা চুমু পাবেন।”

ফোঁসফোঁস করে উঠছে অরু। কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না। তবে এই ফেইক প্রেমকাহিনী চালিয়ে গেল। লিখলো,
“আপনি চাইলে আমি এখনই কবুল বলতে রাজি।”

রামি পরপর তিনবার কবুল লিখে পাঠালো। অরুও কবুল বলে দিল।

“আলহামদুলিল্লাহ বিবিজান, এখন থেকে আমাদের মাঝে আর কোন বাঁধা নেই।”

অরু শ্বাস চেপে রেখে লিখলো,“আপনার প্রথম বিবিকে কী করবেন? কিছু ভেবেছেন?”

“তার কথা মনে করে আমাদের সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট করতে চাই না। ওটা তো একটা খাটাশ মহিলা, আমার জীবনটা তেজপাতা করে খিঁচুড়ি রান্না করে ফেলেছে।
আমার মনে এখন থেকে শুধু তুমি থাকবে, শুধু তুমি।”

“আচ্ছা বাই, আমার না একটু কাজ আছে। পরে কথা বলবো।”

“সে-কি? আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো সুপ্রিয়া?”

সুপ্রিয়া! অরুর চোখ চড়কগাছ। কোনদিন তাকে এমন কোন নামে ডেকেছে? সবসময় তো তাকে দেখলেই কানাবগির ছা ছড়াটি শুনিয়ে দেয়। সাথে সাথে মেসেঞ্জার থেকে বেরিয়ে গেল অরু। এখন আর তার কিছুই ভালোলাগছে না। হাতে ধরে নিজের শান্তি নষ্ট করলো।

রামি অরুর নাম্বারে কল দিল। ধরলো না অরু। রাগে তার শরীর রিরি করছে। অনেকক্ষণ ফোন রিং হওয়ার পর মেসেঞ্জারে বার্তা এলো,“বে*য়া*দ*ব কল ধরছিস না কেন? সকালের মতো কী শুরু করলি?”

অরু মেসেজ সিন করে থম ধরে বসে রইলো। রামি তাকে বে*য়া*দ*ব বলে সম্বোধন করে থাকে। তবে ফেইক একাউন্টে কেন বে*য়া*দ*ব বললো? আবার সকালের কথাও উল্লেখ করছে। সে কি টের পেয়ে গেল এটা অরুর একাউন্ট? না-কি ভুলে মেসেজ দিয়ে ফেলেছে। অরু না বোঝার ভান করে লিখলো,“আপনি আমাকে বে*য়া*দ*ব বললেন? আপনার সাথে ব্রেকআপ।”

“ফেইক একাউন্ট থেকে আমাকে উ*ত্ত্য*ক্ত না করে কল ধর, বে*য়া*দ*ব। তারপর তোর সাথে আমি ব্রেকআপ করছি।”

অরু এবার নিশ্চিত হলো রামি তার একাউন্ট সম্পর্কে অবগত। সে রয়েসয়ে টাইপ করলো,“তুমি আমাকে কীভাবে চিনলে?”

“আমি প্রথমে পাত্তা দেইনি। একটু আগে যখন আবার মেসেজ দিলি, আমি একাউন্টের পুরো ডাটা চেক করেছি। স্কুলের নাম আর জন্মদিন পরিবর্তন করতে ভুলে গেলি। সাথে ক্লাস নাইনের একটা ছবি আপলোড করা আছে। এমনি এমনি কি আর বেকুব মহিলা বলি! আমাকে পরীক্ষা করে কিছু পেয়েছিস?”

অরু নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেল। আর রিপ্লাই করলো না। রামিও সাথে সাথে কল দিয়ে বসলো। অরু রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো। তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে রামি বলল,“এবার বল তো, তোর মাথায় দুদিন পর পর এসব ভূত চাপে কোথা থেকে?”

অরু উল্টো রাগ দেখিয়ে বলল,“অন্য কোন একাউন্ট থেকে মেসেজ এলেই রিপ্লাই দিতে হবে?”

“গুরুত্বপূর্ণ কিছুও তো হতে পারে। এখন আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস? আচ্ছা তোকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি। দেখে বলতো কেমন হয়েছে?”

“কী”

রামি ক্যামেরার সামনে একজোড়া ঝুমকা তুলে ধরলো। অরুকে দেখিয়ে বলল,“পছন্দ হয়েছে?”

ঝুমকার গড়ন অরুর ভীষণ মনে ধরলো। বলল,“খুব পছন্দ হয়েছে।”

“আচ্ছা।” বলে দুলজোড়া নামিয়ে রাখলো রামি। দুজনের কথপোকথন চললো বেশখানিক সময়।

★★★

তরীর বাবা আর আয়েশা সুলতানার মাঝে অরু ও রামির বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হলো। দু’দিকের আলোচনায় তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন মিঠু, সুহার সাথে সাথে অরু আর রামির বিয়ের অনুষ্ঠানও সেরে ফেলবেন। মিঠু ঘরে বসেই ফোনে যোগাযোগ করে ছেলেপুলেদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। বাবার জন্য বেরোতেও পারছে না। কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। বিয়ের আগ পর্যন্ত তার বের হওয়া মানা। রামি ফিরবে দুদিন পর। তারপরই বিয়ের শপিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে সকলে। এদিকে অরুকে রামিদের বাসায় আসতে না করে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান না হওয়া অব্দি রামির থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। অরু বাধ্য মেয়ের মতো সবটা মেনে নিয়েছে।

খুশিমনে প্রচুর শপিং করে বাড়ি ফিরছে রামি। প্রতিবারই বাড়ি আসার সময় তার মনে ইদের মতো আমেজ থাকে। এবার খুশিটা দ্বিগুণ হলো। বাড়িতে আসার পরই তার খুশি খুশি মুখখানা চুপসে গেল। অরুর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। বিয়ে হতে এখনো কয়েকদিন বাকি। এতগুলো দিন কীভাবে থাকবে? কিছুতেই সে মানতে চাইলো না। সাদাদ ফিচেল হেসে বলল,“কেমন লাগে?”

“মীরজাফর, কোন কথা বলবে না তুমি। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছো? এসব যে তোমার কারসাজি, সেটা কি আমার অজানা?”

“তোর লজ্জা করে না বড়ো ভাইয়ের সামনে বউ বউ করছিস? ছিঃ!”

“এমনভাবে নাক ছিঁটকাচ্ছো, যেন আমি পঁচা ডোবা থেকে ডুব দিয়ে এসেছি! তোমার লজ্জা কোথায় থাকে, যখন আমার বউ নিয়ে টা*না*হেঁ*চ*ড়া করো। তুমি ছিঃ! তোমার চৌদ্দগোষ্ঠী ছিঃ!”

সাদাদ হুহা করে হেসে বলল,“তুই কি আমার চৌদ্দগোষ্ঠীর বাইরে না-কি!”

“বাইরেই তো। তোমাকে দেখে তো কোনদিন মনে হয় নি তুমি আমাদের বংশের। তোমার মাঝে একটা প্লে-বয় ভাব। যা আমার বাপ, দাদা, তাঁর বাবা, তাঁর দাদা, কারো মাঝে আমি দেখিনি।”

“থাম্ তুই, যে ব্যাটা দাদাকেই দেখেনি, সে চৌদ্দ পুরুষ দেখবে কীভাবে? আর আমি প্লে-বয় না। আমার মন বিশাল। সবাইকেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ইরাটার জন্য পারিনা বুঝলি! পান থেকে চুন খসলেই আমাকে আর ঘরে জায়গা দেয়না। নয়তো গিয়ে মেয়ের সাথে ঘুমিয়ে পড়ে।”

রামি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“আমার বারোটা বাজানোর জন্য তোমার একটা আমি ঠিকই বাজিয়ে ছাড়বো। শিওর থাকো, আজও তুমি ঘরে জায়গা পাচ্ছো না।”

“ভালো হবে না রামি! অরু কিন্তু আমার এককালের বউ। আমি তাকে তোর জন্য স্যাক্রিফাইস করেছি। আর সে তুই কি-না আমার জন্য বাঁশঝাড় রেডি করছিস? খবরদার ইরার কানে বি*ষ ঢালবি না।”
রামি ক্রুর হেসে সাদাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

অফিস থেকে ছুটি নেওয়া হয়নি। নিজের ডেস্কে বসে কাজ করতে করতে মিঠুর কথা ভেবে আনমনে হেসে উঠলো সুহা। অবনি সূঁচালো চোখে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলল,“আজকাল নেতাসাহেব কি কারো মনের ঘরেও রাজনীতি শুরু করলো না-কি!“

সুহা সচকিত হয়ে বলল, “কী উল্টোপাল্টা কথা বলছিস? আমি কি হাসতেও পারবো না?”

“সে আমি বলেছি না-কি! তবে হাসির কারণটা যে নেতাসাহেব, তা আমি বুঝে গিয়েছি।”

“বাজে বকিস না তো। চল ক্যান্টিনে যাই।”

অবনিকে নিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো সুহা। দুটো কফি অর্ডার দিয়ে টুকটাক কাজ নিয়ে আলাপ করলো। কফি এসে গিয়েছে। অবনির কল আসায় সে কফি হাতে উঠে একপাশে দাঁড়ালো। সুহা কফি মগে ঠোঁট ভিজিয়ে হঠাৎই ফোন বের করলো। ফটাফট হাতে কফি মগ নিয়ে একটা ছবি তুলে মিঠুর ইনবক্সে পাঠিয়ে লিখলো “কফি খাবেন?”

পরক্ষণে নিজের এমন ভিত্তিহীন কাজে লজ্জা পেল। মিঠু কী মনে করবে ভেবে ডিলিট করে দিল ছবি, মেসেজ দুটোই।

#চলবে…….