#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_১০
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
মেঘের আড়ালে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। ঘন হয়ে এলো কালো মেঘ। হঠাৎ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। তবুও যেন উত্তাপ কমছেনা। রামি এক পা’ও হলের সামনে থেকে নড়লো না। তার আকুল চোখজোড়া সেই জানালায় স্থির হয়ে রইলো। ঘামে ভেজা শরীর এবার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেল। ভেজা চুলের আগা থেকে কয়েক ফোঁটা পানি কপাল ছুঁয়ে চিবুক পর্যন্ত গড়ালো।
অরু একটি ছাতা হাতে ছুটে বেরিয়ে এলো। রামির উপর ছাতার ছাউনি ধরেই দম ছাড়লো। কড়া স্বরে বলল,
“এভাবে বৃষ্টিতে শরীর ভেজাচ্ছ কেন?”
হঠাৎ চমকে উঠলো রামি। জানালায় স্থির চোখজোড়া সামনে তাকিয়ে বিস্মিত নজরে তাকিয়ে বলল,
“তুই নেমে এসেছিস কেন? তোর না পড়া আছে?”
অরু নাক ফুলিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। মুখ ঝামটা মে*রে বলল,
“তুমি পড়তে দিলে কোথায়?”
রামি কপাল কুঁচকে বলল,
“আমি তোকে বাঁধা দিলাম কখন?”
অরু স্বচ্ছ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অকপটে বলল,
“বাঁধা না দিয়েও বাঁধা দিয়ে ফেলেছো। এখন বাসায় চলে যাও।”
রামি অরুর চোখে চোখ রাখলো। ধীর স্বরে বলল,
“যেতে ইচ্ছে করছেনা। তুই পড়তে যা।”
অরু তেজী গলায় বলল,
“আমার হলের সামনে তোমার কী কাজ? যে-কোন সময় জ্বর আসবে। তোমার তো আবার ডিউটিতে ফিরতে হবে।”
রামি মলিন হেসে বলল,
“বৃষ্টিতে ভেজা দেখলি, অথচ পুড়ে যাওয়াটা দেখলিনা!”
অরু থমকে গেল। সত্যিই তো রামি অনেকক্ষণ ধরে তার জন্য তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে ছিল। তীব্র অপরাধবোধ নিয়ে বলল,
“আমি খেয়াল করিনি তুমি রোদে দাঁড়িয়ে ছিলে।”
রামি আলতো হাসলো। পরক্ষণেই বড়ো দম নিয়ে ফিসফিস শব্দে বলে উঠলো,
“রোদে নয়, কারো উত্তাপে প্রতিনিয়ত পুড়ে যাচ্ছি। কেবল এক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায়।”
অরু অবাক চোখে তাকালো। তার চোখজোড়া বিচরণ করছে রামির পুরো মুখশ্রীতে। রামি মিটিমিটি হেসে বলল,
“এভাবে তাকাবি না অরু। নি*র্ঘা*ত আমার প্রেমনদীতে ডুবে ম*র*বি।”
অরু নজর সরিয়ে নিলো। নাক ফুলিয়ে ছাতা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে জ্বরনদী বানাও। আর সেই নদীতে তুমিই ডুবে ম*র।”
রামি ফোড়ন কে*টে বলল,
“আমি নাহয় জ্বরনদীতে ডুবে ম*র*বো। তা তুই কেন আমাকে টে*নে তোলার এতশত চেষ্টা করছিস?”
অরু তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। অতঃপর তেজ দেখিয়ে বলল,
“আমার না আসাটাই উচিত ছিল। তুমি জ্বর নিয়ে ডিউটি করতে। ভীষণ ভালো হতো।”
ধপধপ পা ফেলে বৃষ্টি মাথায় করে চলে গেল অরু। রামি ছাতা ধরে মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো। মনটা হালকা হয়েছে অনেকটা। অরুর সাথে দেখা করাটা কাজে দিয়েছে।
অরু রুমে ফিরে গায়ের ভেজা জামা হাত দিয়েই ঝেড়ে নিলো। পুরোপুরি ভিজে যায়নি। এখন একটুও জামা পরিবর্তনের ইচ্ছে নেই। জানালায় উঁকি দিয়ে দেখলো রামি গিয়েছে কিনা। তার ফোনের মেসেজ টিউন বেজে উঠলো। পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ অপশন অন করলো।
❝এতটা ভালোবাসা দেখানো উচিত নয় অরু। আমি কিন্তু চাকরি-বাকরি ছেড়ে তোর পড়াশোনা বন্ধ করে বাসায় বসে থাকবো বলে দিলাম।❞
অজান্তেই অরুর গাল দুটো লজ্জায় আরক্তিম হয়ে উঠলো। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখতে পেল রামি চলে যাচ্ছে। ছাতা মাথায় শার্টের পেছন দিকটা দেখা যাচ্ছে। ফোঁস করে উঠে ফিরতি বার্তা পাঠালো,
❝তুমি কে আমার পড়াশোনা বন্ধ করার?❞
অরু অপেক্ষা করলো। কিন্তু প্রত্যুত্তরে আর কোন বার্তা এলোনা।
ফোন রেখে অল্প ভেজা শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ছোটোবেলা থেকেই রামির সাথে প্রতিটি মূহুর্ত কেটেছে দুষ্টুমিতে। কখনো অন্যভাবে তাকে নিয়ে ভাবা হয়নি। কিছুদিন যাবত রামির পরিবর্তনগুলো নজরে পড়ার পরও ভেবে দেখেনি। এমনকি বিয়ের প্রস্তাবটা নিয়েও অরু এতটা ভাবেনি। তার মাথায় কেবল দুষ্টুমিটাই ঘুরপাক খেয়েছে। আজ কেন জানেনা রামিকে দেখে ভাবতে ইচ্ছে করছে। মনে হলো সত্যিই রামির মাঝে তাকে পাওয়ার প্রবণতা আছে। একটু না, অনেক বেশি।
★★★
ইরা সবার জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে। তাকে সাথ দিয়েছে অমি। টুকটুক করে তাকিয়ে রইলো ইরার হাতের দিকে। কী সুন্দর করে লুচি বেলে নিচ্ছে। অমি গুলুমুলু মিষ্টি দেখতে। চিকন ঠোঁট জোড়া ঈষৎ ফুলিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেই বলল,
“মা, আমিও বানাবো।”
ইরা হেসে বলল,
“তুমি বানাতে পারবে?”
“হ্যাঁ, খুব পারবো। আমি সবগুলো বানিয়ে তোমার কষ্ট কমিয়ে দেব।”
ইরা হাত থামিয়ে অমির গালে টুক করে চুমু খেয়ে নিলো। তার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বলল,
“আমার সোনা বাবা, তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। মা বানিয়ে নিচ্ছি।”
অমি বারণ শুনলোনা। সে লুচি বানাবেই। অগত্যা ইরা বাধ্য হয়েই অমির হাতে সবটা ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। অমি নিচে বসে যত্ন করে লুচির জন্য রুটি বেলে নিচ্ছে। একটু পরপরই হাত দিয়ে বারবার ঘুরিয়ে দিচ্ছে। যেন তার ভীষণ পাঁকা হাত। কিন্তু বিধিবাম। রুটি গোল হয়নি। অনেকটা চারকোন আকারের হয়ে যাওয়ায় গাল ফুলিয়ে বলল,
“মা এটা তোমার মতো সুন্দর হয়না কেন?”
ইরা মিষ্টি হেসে বলল,
“খুব সুন্দর হয়েছে। দেখ বালিশের মতো চারকোনা।”
অমির ফোলা গালে হাসি ফোটে উঠলো। রুটি হাতে দৌড়ে গেল ঈশিতার কাছে। সে ড্রইং করছে। রুটি মেলে ধরে অমি উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“দেখ ঈশু, ভাইয়া তোমার জন্য লুচি বানিয়েছি। তুমি কী করছো?”
ঈশিতা বলল,
“জাতীয় মাছ আঁকছি।”
অমি গালে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ভাবুক হয়ে তাকালো। কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
“জাতীয় মাছ কী?”
“ইলিশ। জাতীয় ফল আছে, ফুল আছে, পাখি আছে।”
অমি বুঝলোনা। তবুও জানতে চাইলো,
“এগুলো কী?”
“জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় ফুল শাপলা আর জাতীয় পাখি দোয়েল।”
অমি জিজ্ঞেস করলো,
“তাহলে জাতীয় মা কী?”
ঈশিতা চোখ তুলে তাকালো। বলল,
“জাতীয় মা বলতে কিছুই হয়না।”
অমি জেদ ধরে বলল,
“জাতীয় মা’ও হয়।”
ঈশিতা জানে যে পর্যন্ত জবাব না দেবে সে পর্যন্ত অমি কথা পেঁচিয়ে যাবে। বলল,
“জাতীয় মা ইরা।”
“তাহলে জাতীয় ঘর কী?”
ঈশিতা বলল,
“আমাদের ঘর।”
“জাতীয় পাপা কী? জাতীয় দাদুআপু কী? জাতীয় ঈশু কী? জাতীয় চাচ্চু কী? জাতীয় আম্মু কী? জাতীয় অমি কী?”
“আমার মাথা।”
ঈশিতা বিরক্ত হয়ে জবাব দিতেই অমি গোলগোল চোখে তাকিয়ে বলল,
“জাতীয় মাথা কী?”
রাগে কেঁদে ফেললো ঈশিতা। অমিকে কোলে তুলে রুমের বাইরে রেখেই দরজা বন্ধ করে দিল। অমি এবার তরীর কাছে গেল। মাথায় রুটি রেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মন খা*রা*প করে বলল,
“আম্মু ঈশু তার ভাইয়াকে বের করে দিয়েছে।”
তরী বলল,
“ঈশু কী হয় তোমার? নাম ধরে ডাকে না বাবা। তোমরা কয় ভাই-বোন বলো?”
অমি আঙ্গুল তুলে দেখালো তারা দুই ভাই-বোন। তরী জিজ্ঞেস করলো,
“কে কে?”
অমি বোকা স্বরে জবাব দিলো,
“তুমি আর আমি।”
তরী কপাল চাপড়ে বলল,
“আমি, তুমি ভাই-বোন?”
অমি দ্রুত মাথা নেড়ে বলল,
“নাহ্।”
“তাহলে বললে কেন?”
“আমি ঈশুর ভাই, তুমি খালামনি-মামার বোন। তাই আমরা ভাই-বোন।”
ছেলের লজিক শুনে মাথা ঘুরে উঠলো তরীর। অল্পদিনে পা*গ*ল হয়ে যাবে সে৷
★★★
এমদাদুল হকের সাথে একপ্রকার তর্কাতর্কিতে দু’পক্ষের মাঝে হাতাহাতি লেগে যায়। মিঠুর বেশ কিছু জায়গায় ভীষণ লেগেছে। রিয়াজ বেশি জ*খ*ম হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলো। মাথার আ*ঘা*ত বেশ গভীর। তাকে এডমিট করে পকেট হাতড়ে মুঠোফোন বের করলো। একটা নম্বরে ডায়াল করলো। চোয়াল শক্ত করে বলল,
❝আমি রিয়াজকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। ভালোভাবে আপ্যায়ন করে নাও মেহমানকে।”
ফোন কে*টে বেরিয়ে পড়লো মিঠু। তার কাঁটাছেড়া থেকে রক্ত ঝরছে। দাড়ির পাশটা ক্ষ*ত হয়েছে বেশ। সুহা প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কিছু ঔষধ নিলো। মিঠু হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়েই পাশের ঔষধ দোকানে সুহার দিকে নজর পড়লো। সামনে এগিয়ে সুহা নিজেও লক্ষ করলো মিঠুকে। চেহারা আর হাতে কাঁটাছেড়া দেখে ভুরু কুঁচকে গেল তার। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার এই অবস্থা কেন?”
মিঠু উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করলো। শক্ত গলায় বলল,
“ঝামেলা হয়েছে। রিয়াজের অবস্থা সিরিয়াস। ওঁকে এডমিট করেছি।”
সুহা আৎকে উঠলো।
“সে-কী? এখন দেখা করা যাবে?”
“নাহ্, চিকিৎসা চলছে। আমি অন্যকাজে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর আবার আসবো।”
সুহা বলল,
“তাহলে আমিও অবনির মায়ের ঔষধটা দিয়ে আসি।”
মিঠু তীক্ষ্ণ চোখে ঔষধের দিকে তাকাতেই সুহা বলল,
“আন্টি অসুস্থ। আঙ্কেল বাসায় থাকেন না। অবনি আন্টির কাছে থাকায় আমিই ঔষধ নিতে এসেছি। আপনি কি আমায় সামনে নামিয়ে দিতে পারবেন?”
মিঠু না করলোনা। চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। সুহা উঠে বসলো। মিঠুর মুখে গম্ভীরভাব। ড্রাইভিং এর পাশাপাশি আশেপাশে তাকাচ্ছে। সুহা অনেকক্ষণ ধরেই মিঠুর ক্ষ*ত গুলো পরখ করছে। এখনো র*ক্ত ঝরতে দেখে বলল,
“আপনি ট্রিটমেন্ট নেন নি কেন?”
মিঠু ভারী গলায় জবাব দিলো,
“লাগবে না। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।”
সুহা চোখ ছোটো করে তাকালো। মে*জা*জ খা*রা*প হলো তার। তবে খুব একটা প্রকাশ করলোনা। ঠান্ডা গলায় বলল,
“আপনি কি নিজেকে নায়ক ভাবেন? না, তাদের তো আবার চার-পাঁচটা গু*লি লাগলেও কিছুই হয়না।”
মিঠু নির্বিকার রইলো। সামনে তাকিয়ে একমনে ড্রাইভ করছে। অবনির বাসা এসে যাওয়ায় সুহা আর কথা বাড়ালো না। বলল,
“এখানেই নামিয়ে দিন।”
গাড়ি থামতেই সুহা নেমে পড়লো। মিঠু জানালায় মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কি রিয়াজকে দেখতে যেতে চান?”
“হ্যাঁ।”
“তবে এখানেই থাকুন। আমি কাজ সেরে হসপিটাল যাওয়ার পথে আপনাকে তুলে নেব।”
মাথা নেড়ে সায় জানালো সুহা। মিঠু চলে গেল।
ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পরই মিঠু গাড়ি নিয়ে হাজির। হর্ণের শব্দে সুহা নেমে পড়লো। মিঠু তাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে গেল। রিয়াজের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। সুহা বাসায় ফিরে যাবে। মিঠুকে বলে বিদায় নিতে গিয়েও আরেকবার মিঠুর কাঁ*টা স্থানে চোখ পড়লো। মিঠুকে আরেকবার বলল,
“এভাবে না দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষ*ত গুলোর চিকিৎসা নিন।”
সুহা একজন নার্স ডেকে বলল,
“উনার ক্ষ*ত*স্থা*ন ড্রেসিং করে দিন।”
নার্স এগিয়ে এসে তুলোয় মেডিসিন নিতেই মিঠু গমগমে গলায় বলল,
“আমি পারবো।”
সুহা সাহস করে এগিয়ে এসে বলল,
“আপনি দেখবেন না। আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি।”
মিঠু বাঁধা দিলোনা। গালে মেডিসিন পড়তেই জ্বলে উঠলো। চোখ ঈষৎ কুঁচকে এলো। তা দেখে সুহা ফুঁ দিয়ে ধীরগতিতে ড্রেসিং শেষ করলো। মিঠু মনযোগ দিয়ে কিছু দেখলো। তার চোখে মুগ্ধতার ঘোর লেগেছে। সুহা কাজ শেষ করেই বলল,
“আমি যাচ্ছি।”
মিঠু বলল,
“চলুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”
সুহা অবাক হলেও পরক্ষণে হেসে ফেললো। বলল,
“আপনার এখন এখানে থাকা উচিত।”
মিঠু নিজেও অনেকটা অবাক হলো নিজের কাজে। সে রিয়াজের কাছে থাকবে বলেই এখানে এসেছে। যে কোন মূহুর্তে তার জ্ঞান ফিরতে পারে। নিজের সংকোচ আড়াল রেখে বলল,
“ঠিক আছে। সাবধানে যাবেন।”
#চলবে……
#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_১১
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
আজ সাদাদ এলো অরুর সঙ্গে দেখা করতে। দুজনই কফি অর্ডার দিয়ে বসলো। সাদাদ একগাল হেসে বলল,
“তো, দিনকাল কেমন যাচ্ছে আমার দ্বিতীয় বউয়ের?”
অরু সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
“এখনও তোমার শখ যায়নি না? না-কি বুড়ো বয়সে ইরা ভাবির হাতে ম*রা*র শখ হয়েছে!”
সাদাদ হেসে ফেললো। আৎকে ওঠা গলায় বলে উঠলো,
“দুই বউই ডে*ঞ্জা*রা*স। দুজনের মতেই আমি বুড়ো। অথচ আমাকে কতটা ইয়াং দেখাচ্ছে। রাস্তায় মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে শুধু আমাকে দেখার জন্য। শুধু তোমরা দুজনই বুঝলেনা।”
অরু মিটিমিটি হেসে খোঁচা দিল,
“পা*গ*ল দেখার জন্য মানুষ রাস্তায় আসবে। নিশ্চয়ই বাড়ি বয়ে কেউ পা*গ*ল দেখতে যায় না।”
সাদাদ হতাশ গলায় বলল,
“কী আর করার, আমাকে তো তোমার পছন্দ নয়! কিন্তু ছোটো সাহেবকে নিয়ে কিছু ভেবেছো?”
অরুর হাসি হাসি মুখে খানিক পরিবর্তন এলো। কাচুমাচু করে বসে রইলো। সাদাদ বলল,
“কাল কিন্তু রামি চলে যাবে। তোমার যা সিদ্ধান্ত তুমি জানিয়ে দিতে পার। আমরা কিংবা রামি কেউই তোমায় জোর করবে না।”
অরু জড়তা নিয়ে শুধালো,
“এখনই জানাতে হবে?”
সাদাদ বলল,
“না এখনই জানাতে হবে না। তবে কাল রামি যাওয়ার আগেই ফোনে জানিয়ে দেবে। হ্যাঁ বা না ছাড়াও উত্তর থাকতে পারে। তোমার যদি আলাদা কোন উত্তর থাকে সেটাও জানাতে পার। শর্তও রাখতে পার।”
কফি এসে পড়েছে। অরু ভেবেচিন্তে বলল,
“আমি ফোনে জানাই?”
“অবশ্যই। নাও কফি নাও।”
সাদাদের সাথে কথা বলে হলে ফিরলো অরু। রামিকে নিয়ে অনেকক্ষণ ভাবলো। কিছুতেই সে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেনা। অরুর রুমমেট জুমান বেশ সময় ধরে অরুকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“এমন পায়চারি করছিস কেন? কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
নখ কামড়ে চলেছে অরু। মাথা নেড়ে বলল,
“না, সেরকম কিছু না।”
জুমান চা বানিয়ে এক কাপ বাড়িয়ে দিল অরুর দিকে। বলল,
“চা খা, ভালোলাগবে।”
অরু চা নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালো। বরাবর নিচে তাকাতেই গতকালের কথা মনে পড়লো। এখানে দাঁড়িয়ে ভিজেছিল রামি। তার কি জ্বর হয়েছে? অরুর মাঝে অস্থিরতা দেখা গেল। ফোন হাতে রামির নম্বরে ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গেল।
রাতে ঘুমাতে গিয়েও রামিকে নিয়ে ভাবলো। সে ছোটোবেলা থেকেই রামিকে চেনে। পরিবারের সবাই রাজি। সবচেয়ে বড়ো কথা পরিবার ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে হবেনা।
ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো তরীর ফোনকলে।
“কেমন আছিস অরু?”
“ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পড়াশোনা কেমন চলে?”
“চলছে।”
বাসায় আসবি?”
“যেতে তো ইচ্ছে করে। কিন্তু গেলে আর আসতে ইচ্ছে করেনা।”
“রামিকে নিয়ে কিছু ভেবেছিস?”
অরু চুপ হয়ে গেল।
তরী শুধালো,
“কী হলো?”
শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো অরু। মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,
“বাবা আর তোমরা যা ভালো মনে কর, সেটাই কর।”
তরী বলল,
“আমরা কী ভালো মনে করছি সেটা বড়ো কথা নয়। তোর মন কী চায় সেটাই বড়ো কথা। অন্যত্র পছন্দ থাকলেও বলতে পারিস।”
তরী কাচুমাচু করে বলল,
“না, তেমন কিছু না।”
“তাহলে কেমন কিছু?”
“জানিনা আমি।”
তরী সন্দিহান গলায় বলল,
“তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস অরু? আমি কি ধরে নেব তুই বিয়েতে রাজি!”
“এত প্রশ্ন করো কেন? ভালোলাগছে না।”
বলেই অরু লাইন কে*টে দিল।
কেমন যেন লজ্জা লজ্জা অনুভূতি হচ্ছে। চোখ খুলে রাখা দায়। চোখমুখ খিঁচিয়ে কাঁথা মুড়ি দিলো অরু।
★★
তরী ফোন নামিয়ে হাসছে। অরুটা যতই চঞ্চল হোক, দিনশেষে কিছুটা তার ধারাই পেয়েছে। রামিকে বিয়ে করতে রাজি এই কথাটুকু স্পষ্টভাবে জানাতে পারছেনা। তরীকে মিটিমিটি হাসতে দেখে মাহমুদ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর গলায় শুধালো,
“এত হাসি পাচ্ছে কেন?”
“কনের মুখ থেকে কবুল বলাতে সক্ষম হয়েছি।”
মাহমুদ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। চোখজোড়া ক্ষীণ করে বলল,
“এত সহজে মেনে গেল? অথচ আমাকে কত কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।”
তরী মাথানিচু করে হাসলো। বলল
“অমি উঠে যাবে। আমি যাচ্ছি।”
মাহমুদ বাঁধা দিলো।
“উঁহু, উঠলে তখন যাওয়া যাবে।”
তরী বাঁধা মানলোনা। চলে যেতে উদ্যত হতেই মাহমুদ পেছন থেকে বলল,
“ঠিক আছে, যাচ্ছো যখন একটা কথা শুনে যাও৷ বাসায় থাকলে কেউ যেহেতু আমায় সময় দেয় না, সেহেতু আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তরী পা থামিয়ে দিল। পেছন ঘুরে হাসলো। মাহমুদের বুকে হাত রেখে বলল,
“ঠিক আছে। বিয়ে করুন। তাকে কাজ করতে দিয়ে আমি না-হয় আপনাকে সময় দেব!”
মাহমুদও হাসছে। বলল,
“এতো হিং*সে হচ্ছে কেন? আমি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অন্য কাউকে নয়। যতবার ইচ্ছে হবে, ততবার এই খেয়াতরীকেই বিয়ে করবো।”
তরীর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি লেগে আছে। মাহমুদ হাত বাড়িয়ে টে*নে নিলো তরীকে। ভেতরে যাওয়ার আর সুযোগ পেল না সে।
★★★
সুহা আজ অফিস যাওয়ার পথে বাসা থেকে বেরিয়ে ভীষণ অবাক হলো। ইবতেসাম তার বাসার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুহাকে দেখতে পেয়ে হাসলো। সুহা কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে?”
মিঠু বলল,
“কাজ ছিল এদিকটায়। আপনি কোথাও যাচ্ছেন?
সুহা বলল,
“হ্যাঁ, অফিস যাচ্ছি।”
“চলুন আপনাকে নামিয়ে দিচ্ছি।”
“কোন প্রবলেম হবে না তো আপনার?”
“না।”
সুহা মিঠুর পাশে উঠে বসলো। মাঝেমাঝে মিঠু নিজেই ড্রাইভ করে। আজও তার ব্যতিক্রম হলোনা। লুকিং গ্লাসে বারবার চোখ চলে যাচ্ছে। হুট করে কী হলো জানা নেই। গতকাল হসপিটাল থেকেই মেয়েটার প্রতি কেমন ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয়েছে। রাতে যতবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছে, ততবারই সুহা এসে চোখের সামনে ধরা দিয়েছে। মিঠু আন্দাজ করে নিলো এটা কীসের ইঙ্গিত। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মন মস্তিস্কের খেলায় মনকে জয়ী করে সুহার বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে। মিথ্যে বলেছে সুহাকে। এদিকটায় তার কোন কাজ ছিল না। সুহা মিঠুর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। সুহা নজর ফিরিয়ে নিলেও মিঠু ছিল নির্লিপ্ত। রিয়াজ কেমন আছে জানার আগ্রহ থেকেই সুহা প্রশ্ন করলো,
“রিয়াজ ভাই কেমন আছেন?”
“এখন ভালো আছে। আপনি দেখতে যাবেন?”
“এখন তো অফিস যাচ্ছি।”
“তবে আমি বিকেলে আপনার অফিসের সামনে অপেক্ষা করবো।”
সুহা বলল,
“আপনাকে আসতে হবে না। আমি যেতে পারবো।”
মিঠু জোর গলায় বলল,
“না আপনি একা যাবেন না।”
অবাক হলো সুহা। বলল,
“কেন? আমি তো একাই চলাফেরা করি।”
মিঠুর স্বচ্ছ দৃষ্টি গ্লাস ভেদ করে রাস্তা ছুঁয়েছে। দক্ষ হাতে ড্রাইভ করছে। শান্ত গলায় বলল,
“এখন থেকে আপনাকে একা চলাফেরা করতে হবে না। আমি আছি।”
সুহা কিছু একটা আঁচ করে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“কেন আপনি থাকতে চান?”
টনক নড়লো মিঠুর। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সুহার দিকে একপলক তাকিয়ে জবাব দিলো,
“আপনি একা, তাই।”
“আমি একাই যথেষ্ট। আমার পাশে কাউকে দরকার নেই।”
“একা জীবন চলে না সুহা।”
সুহা কঠিন গলায় বলল,
“আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।”
মিঠু বলল,
“ঠিক আছে, আপনাকে নিয়ে ভাববো না, কিন্তু আমাদের নিয়ে ভাবতে তো সমস্যা নেই।”
নাকের ডগায় রাগ খেলা করছে। সুহা নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে মিঠুর দিকে ফিরলো।
“আপনি কী চাইছেন বলুন তো? আমাকে অসহায় ভেবে সুযোগ নিতে চাইছেন?”
মিঠু বিন্দুমাত্র রাগ দেখালোনা। অথচ তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাগ। সে শান্ত স্বরে বলল,
“আমি সুযোগ নিতে চাইছি না। তবে কিছু একটা নিশ্চয়ই চাই।”
“কী চান?”
“জানিনা।”
“আমাকে নামিয়ে দিন।”
“উঁহু, অফিসের সামনেই নামবেন আপনি।”
সুহা তেজী গলায় বলল,
“বললাম না নামিয়ে দিন!”
একগুঁয়ে মিঠু শুনলোনা সুহার কথা। সে একধ্যানে ড্রাইভ করে গেল। সুহা দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। মিঠুকে গাড়ি না থামাতে দেখে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। মিঠু আড়ালে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।
সুহার অফিস আসতেই সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো দরজা লক। মিঠুর দিকে তাকাতেই মিঠু বলল,
“আমি সুযোগ চাইনা, তবে প্রেমিকা হিসেবে আপনাকে চাই।”
রাগে ক্রমশ সুহার নাকের পাটা ফুলে উঠছে। চোয়াল শক্ত করে বলল,
“আপনার আশা কখনোই পূরণ হবার নয়।”
“কেন?”
মিঠুর সরাসরি প্রশ্নে সুহার স্পষ্ট জবাব,
“আপনি আমার প্রেমিক, তবু আমি আপনার প্রেমিকা নই।”
“আমি এত কঠিন ভাষা বুঝিনা সুহা। কেবল আপনাকে বুঝতে চাই।”
“দরজা খুলুন।”
“যদি না খুলি?”
বলতে বলতেই মিঠু লক খুলে দিল। সুহা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে অফিসের ভেতর চলে গেল। একটিবার পিছু ফিরে তাকালো না। মিঠু তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ পর্যন্ত সুহাকে দেখা যায়।
সুহা দুপুরের পর অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেল। রিয়াজকে আর দেখতে গেল না। সেখানে গেলেই মিঠুর মুখোমুখি হতে হবে।
★★★
সকালে তরী নাস্তার টেবিলে বসে আয়েশা সুলতানার উদ্দেশ্যে বলল,
“অরুর সাথে কাল কথা হয়েছে আমার।”
রামি উৎসুক হয়ে তরীর মুখের দিকে তাকলো। তরী বলল,
“আমি বাবাকেও জানিয়েছি, অরু বিয়েতে অমত করেনি।”
মূহুর্তেই রামির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তবে মা উপস্থিত থাকায় কিছু বললোনা। আয়েশা সুলতানা মিষ্টি হেসে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ।”
খাবার দ্রুত শেষ করে উঠে পড়লো রামি। তরী আর ইরা কাজ গুছিয়ে নিতেই তাদের সাথে বসলো। ইরা বলল,
“কী বলবি, তাড়াতাড়ি বল।”
রামি বলল,
“আমি আজই বিয়ে করতে চাই।”
বিস্মিত নজরে তরী, ইরা দুজনই তাকিয়ে রইলো। তরী বলল,
“অরু রাজি হয়েছে বিয়েতে। এত তাড়াহুড়ো কীসের?”
রামি বলল,
“সেটাই তো ভয়। তোমার বোন দেখা যাবে বেঁকে বসলো!”
ইরা বলল,
“পা*গ*লা*মি করিস না রামি। আম্মা, আঙ্কেল সবাই কী ভাববেন?”
রামির একরোখা জবাব,
“সেটা আমি জানিনা। আমি আজ বিয়ে করবো মানে আজই।”
ইরা বলল,
“তুই সবাইকে রাজি করাতে পারলে আমাদের কোন সমস্যা নেই।”
“তোমরা ব্যবস্থা করো।”
তরী বলল,
“ভাইদের বলতে পারলি না?”
“কী করবে, সেটা তোমরা জানো।”
বলে রামি স্থান ত্যাগ করলো। ইরা, তরী দুজনই কথা বলে সাদাদ আর মাহমুদকে জানালো। মাহমুদকে কলেজ যেতে হবে বলে সে বেরিয়ে পড়লো। সাদাদ ডাকলো রামিকে। মাথানিচু করে বসে আছে সে।
সাদাদ জিজ্ঞেস করলো,
“আজই বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ কী? অরুতো পালিয়ে যাচ্ছে না!”
নতমুখী হয়েই গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো রামি,
“অরু যে-কোন মূহুর্তে মত বদলে নিতে পারে।”
“আচ্ছা এটাই ভয়?”
চুপ করে রইলো রামি। সাদাদ বলল,
“এর দায়িত্ব আমি নেব। তবে আমার একটা শর্ত আছে।”
চোখ তুলে তাকালো রামি। উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো,
“কী শর্ত?”
“বিয়ে হলেও দুজন একই বাসায় একসাথে সংসার করতে পারবিনা। তোর ভয় দূর করার জন্য শুধু বিয়েটা হবে। তবে যাবতীয় অনুষ্ঠান, সংসার সব পরে হবে।”
রামি ত্যাড়াভাবে বলল,
“মানে কী? আমার বউ আর আমি তার থেকে দূরে থাকবো?”
“তাহলে তোর বিয়ে করার দরকার নেই।”
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়েই সাদাদের কথায় সম্মতি দিলো রামি। সে কেবল অরুকে ধরে রাখার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছেনা।
সাদাদ দায়িত্ব নিয়ে মা আর অরুর বাবাকে রাজি করালো। রামির পা*গ*লা*মি*র কথাটা তাদের কাছে চাপা পড়ে রইলো। জরুরীভাবে খবর দিয়ে অরুকে বাসায় আনা হলো। মোটামুটি পরিবারের সকলেই বাসায় উপস্থিত। তরী অরুকে বিয়ের কথা বলতেই সে বেঁকে বসলো।
“মানে কী? এখনই কীসের বিয়ে? সময় তো চলে যাচ্ছে না।”
তরী বোঝালো,
“বিয়েটাই শুধু হবে। তুই হলে থেকেই পড়াশোনা করবি। এই মুহুর্তে বেঁকে বসিস না প্লিজ!”
অরু কোনমতেই এখন বিয়ে করবেনা। গতকালই মত দিয়েছে। মনে হচ্ছে খুব বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে।
তরী মিঠুকে ডেকে আনলো। দুই ভাই-বোন মিলে অরুকে রাজি করালো। সাধারণ একটা শাড়ি পরেই ঘরোয়াভাবে অরু আর রামির বিয়ে হয়ে গেল। একটু পরই রামি বাসা থেকে চলে যাবে। তার ছুটি শেষ। সাদাদ আর মাহমুদ আগেই শর্ত দিয়ে রেখেছে অরুর সাথে আজ আর দেখা করা চলবে না।
মাসখানেকের জন্য চলে যাচ্ছে রামি। সদ্য বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা না করে থাকবে কীভাবে? তার তো এখন যেতেই ইচ্ছে করছেনা। চুপিচুপি অরুর ঘরে ঢুকতে নিলেই পেছন থেকে কলার চেপে ধরে সাদাদ তাকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে এলো। সাবধান করে বলল,
“শর্ত লঙ্ঘন করলে বউয়ের মুখ যাতে না দেখতে পারিস, সেই ব্যবস্থাই করবো। যা তাড়াতাড়ি ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হ।”
#চলবে…..