অনুপম ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
101

#অনুপম_ভালোবাসা(৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

ভার্সিটিতে এক প্রকার লুকিয়ে ঢুকে নজরাত। কিছুতেই রাদ এর সামনে পরা যাবে না এই তার পণ। মা বলেছে এই রাদ ব্যাটার সাথেই তার বিয়ে দিবে! এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা লেগে যেতে যেতে বেঁচে যায় সে। সামনে রাদ বিচক্ষণ চোখে চেয়ে থেকে বলল,
__” কোথায় চুরি করতে যাচ্ছ?
নজরাত সামান্য কম্পিত কন্ঠস্বরে বলল,
__” আজব! ভার্সিটিতে কেউ চুরি করতে আসে নাকি কেউ?
__” তোমাকে দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
নজরাত বিব্রত ও হতচকিত হ‌য়ে বলল,
__” আমাকে যেতে দিন।
রাদ পথ থেকে সরে দাঁড়ালে নজরাত এক প্রকার দৌড়ে চলে যায়।
কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। নজরাতের অবস্থা ও হয়েছে সেরকম।

গতকাল, তরিকা বেগম অফিস থেকে বাসায় ফিরে মায়ের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে বলেন, ছেলে ভালো হলে এখানেই মেয়ে বিয়ে দিবেন।
মেয়েকে নিয়ে বড্ড দুশ্চিন্তা তার। নজরাত এর বাবা নেই তরিকা বেগমের যদি কিছু হয়ে যায় তবে ছেলে মেয়ে দুটোর রাস্তায় থাকতে হবে। তাই তিনি ভয় পান ভালোয় ভালোয় মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান।

লিপি বেগম বাসায় ফিরে বললেন,
__” এই মেয়েকেই আমি এ বাড়ির বউ করে আনতে চাই।
বসার ঘরে সবাই বসে ছিল। মায়ের কথা শুনে রাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
__” আম্মা আমি ঐ মেকআপ সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবো না তাছাড়া ঠিকানা লিখতে গিয়ে কলম ভেঙে ফেলার অবস্থা ঐ মেয়ের। নিশ্চয়ই প্রতি ক্লাসে ফেল করতে করতে অনার্সে ভর্তি হয়েছে।

ফারুক সাহেব ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
__” শান্ত হয়ে বসো। এতো উত্তেজিত হ‌ওয়ার কিছু হয়নি। আমি কথা বলছি তোমার মায়ের সাথে।
বাবাকে খুব সমীহ করে চলে রাদ শাহমাত। তাই শান্ত হয়ে বসে।
ফারুক সাহেব স্ত্রীকে বললেন,
__” তোমার ছেলের যেখানে পাত্রী পছন্দ নয় সেখানে তোমার আগানোটা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ বিষয়টা ওদের ওরা সারাজীবন একসাথে থাকবে।
স্বামীর কথায় লিপি বেগম একটু দমে গেলেন। দমে যাওয়া গলায় বললেন,
__” কিন্তু তোমার ছেলে যা বলছে তার কোন ভিত্তি নেই। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী এবং ব্যবহার অতুলনীয় তোমার বিশ্বাস না হলে আপাকে জিজ্ঞাসা করে দেখো। এখনকার মেয়েরা সুন্দর হলেও মেকআপ করতে পছন্দ করে তাই মেয়েটা একটু মেকআপ করে, এটা বড় রকমের সমস্যা ধরে নেওয়ার কোন মানে হয় না। আর যদি মেকআপ এতই সমস্যা তাহলে আমি বলে দেবো যেন মেকআপ না করে।

স্ত্রীর যুক্তিতে ফারুক সাহেব ভাবালু গলায় বললেন,
__” তুমি তো বেশ ইসলামের রীতিনীতি মেনে চলো তাহলে একটা ধার্মিক মেয়ে কেন দেখছো না ছেলের জন্য? তোমাদের কথা মত বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ততটা ধার্মিক বা পর্দাশীল নয়।
__” মেয়েটা পর্দাশীল না হলেও ইসলামের জ্ঞান রাখে। আমি ওকে নিজ হাতে শিখিয়ে নেব ইনশা আল্লাহ।
বাবা মায়ের কথার মাঝে রাদ বলে উঠলো,
__” পড়াশোনাটাও কি শিখিয়ে দিবে আম্মা?
লিপি বেগম ছেলের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
__” পড়াশোনা না জানলে মেয়েটা বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারত না। তোমার মত বাহ্যিক দিক বিবেচনা করে আমি কোন কাজ করি না। মেয়েটা সেদিন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষদের সামনে লিখতে গিয়ে ঘাবড়ে যায় তাই বলে তাকে মূর্খ ভেবনা।
গতকাল ওদের বাসায় গিয়েছিলাম ওর মা ছিল না অথচ কি সুন্দর করে মেয়েটা আমাদের আপ্যায়ন করল। এরকম নম্র ভদ্র মেয়ে আমার বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য।

মায়ের সাথে না পেরে রাদ চাপা রাগের গনগনে গলায় বলল,
__” তোমার জন্য বিয়েটা করে নিব। কিন্তু এতে ভালো থাকবো কিনা জানিনা।
এই বলে প্রস্থান করে রাদ। সাথে রাদের বড় বোন জান্নাত ও মায়ের উপর ভিষণ বিরক্ত। যেখানে ভাইয়ের মেয়েকে পছন্দ না সেখানে মা কেন এত বাড়াবাড়ি করছে সে বুঝতে পারছে না। তাই মাকে বলল,
__” এখনো সময় আছে আম্মা ভুল সিদ্ধান্ত নিও না। বিয়েটা একবার হয়ে গেলে তখন কিছু করা যাবে না। বিয়ের সাথে দুটো পরিবার জড়িত এটা মনে রেখো।

জান্নাত চলে যাওয়ার পর ফারুক সাহেব নির্বিকার মুখে বললেন,
__” আমার ইচ্ছা ছিল বোনের এতিম মেয়েটাকে বউ করে আনবো। তোমার কারনে পারছি না।
লিপি বেগম অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেলেন,
__” তোমার ভাগ্নি কেমন ধারা মেয়ে সে কথা বলে আমি গুনাহ করতে চাইছি না। তাই আমার সিদ্ধান্ত থেকে আমি একচুলও সরছি না এটা মনে রেখো।
ফারুক সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন,
__” সে আমি খুব ভালো জানি।

সবাই চলে যাওয়ার পর লিপি বেগম নীরবে বসে রইলেন। নজরাত এর কথা ভাবতে লাগলেন। মেয়েটাকে তার কোন দিক দিয়ে খারাপ বলে মনে হলো না। তবুও পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েতে আগাতে একটু দ্বিধা কাজ করছে।
.
.
ভার্সিটির দুতলার রেলিং ধরে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে রাদ। পাশে তাসনুভা এসে দাঁড়ায়। রাদ টের পেয়েও কিছু বলে না। তার মন ভীষন্নতায় গীরে আছে। তাসনুভা রাদ এর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে বলল,
__” ওদের মধ্যে রিলেশন চলছে! চেয়ে থেকে লাভ নেই।
রাদ তাসনুভার দিকে তাকিয়ে বলল,
__” কাদের কথা বলছিস?
মুখ চোখে বিহ্বল ভাব তার।
তাসনুভা ইশারা করে বলল,
__” ঐ যে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছিস তার কথা বলছি। সামনের যে ছেলেটা ওর সাথে রিলেশনে আছে।
তাসনুভার কথায় রাদ ক্যাম্পাসের বট গাছটার দিকে নজর দিল। ওখানে নাজরাত মেয়েটা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। ওদের কথাই বলল তাসনুভা। অথচ রাদ তাদের এতক্ষণ খেয়ালই করেনি। অনেক সময় আমরা একটা দিকে তাকিয়ে থাকি ঠিক কিন্তু মনে নানা রকম চিন্তাভাবনা চলতে থাকে অথচ যেদিকে আমরা তাকিয়ে আছি সেদিক নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা চিন্তা কিছুই থাকে না। এটাকে অনেকে ধ্যানে মগ্ন হ‌ওয়া বলে। তাই তাসনুভা ভেবেছিল রাদ নজরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাদের সহপাঠী তাসনুভা। একদিন প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল রাদকে। রাদ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।
এরপর থেকে নজরে রাখে রাদ কোন মেয়ের সাথে রিলেশনে যায় কিনা দেখার জন্য। এবং কি তাদের মাঝে ফাটল ধরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে। সে চায় না ভার্সিটির কোন মেয়ে রাদ কে নিজের করে পাক।
তো কয়েক বার দেখলো রাদ নজরাত মেয়েটার সাথে কথা বলতে। অথচ রাদ অন্য কোন মেয়েদের সাথে কথা বলে না। তাই সন্দেহ করে রাদ নজরাতকে পছন্দ করে। আর তাই রাদের কাছে নজরাত কে খারাপ সাজাতে বলল, নজরাত যেই ছেলেটার সাথে কথা বলছে সেই ছেলেটি নজরাত এর বয়ফ্রেন্ড!

একেই তো মুড অফ তার উপর তাসনুভার এসব আজেবাজে কথা। মেজাজটা চ‌ওড়া হয়ে উঠল রাদ এর। তাই মুখটা একটু গম্ভীর করে বলল,
__” ঐ মেয়ের ব্যাপারে জানতে চেয়েছি আমি?
তাসনুভা অস্ফুট গলায় বলল,
__” এমনিতেই বললাম আর কি।
তারপর চোরা চোখে রাদ এর দিকে তাকায়।
রাদ বিরক্ত হয়ে, আর কিছু না বলে চলে যায় এখান থেকে।
তাসনুভা রাদ এর কোন ভাবান্তর বুঝতে পারলো না। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
.
.
ফারুক সাহেবের দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। প্রায় এক বছর হতে চলল বড় ছেলে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে! তাই লিপি বেগম বড় ছেলের জন্য এ বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।আর বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে সাথে একটা প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকতা করছে। তারপর রাদ শাহমাত তাকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চান না লিপি বেগম তাই পড়াশোনা চলাকালীন অবস্থাতেই নিজের পছন্দের পাত্রীর সাথে বিয়ে দিতে চান। ছোট মেয়ে জুঁই ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ছে। বাসায় থেকে পড়াশুনা হবে না বলে হোস্টেলে থাকে সে।

একদিন ছুটির দিনে মিসেস কলি তরিকা বেগম কে নিয়ে রাদ এর বাড়িতে এলেন। লিপি বেগম আপ্যায়নের ত্রুটি রাখলেন না। জান্নাত ও মায়ের সাথে সাথে সবকিছু এগিয়ে দিল।
তারপর বিয়ের কথা উঠলে লিপি বেগম বললেন,
__” আমার ছেলের পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি জানেন তো আপা? তবে কয়েক মাস পরেই ওর মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা। তাই আমি চাইছিলাম এখন বিয়েটা হয়ে থাকবে ছয় মাস পর আমি ব‌উ সাজিয়ে ঘরে তুলবো। এখন আপনার মতামত কি?….

#চলবে ইনশা আল্লাহ।