অনুভবের প্রহর পর্ব-১৯

0
484

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব____১৯

অনুভবের বাক্য শেষ হওয়ার তর সইলো না। তার আগেই প্রহর ধাড়াম করে পড়ে গেল। মুখ দিয়ে ব্যথাতুর আর্তনাদ করে উঠলো। অনুভব লাগেজ নামিয়ে রেখে তড়িৎ গতিতে প্রহরকে টেনে তুলল। ধমকের সুরে বলল,

‘আস্তে হাঁটতে বললাম না?’

‘আস্তেই তো হাঁটছিলাম।’

‘তাহলে পড়লে কিভাবে? এবার খুশি হয়েছ?’

মাথা নিচু করলো প্রহর। সাদা পোশাক থেকে মাটির দাগ মোছার চেষ্টা করলো। সফল হলো না। মিনমিন সুরে বলল,

‘আমি ঠিক আছি। একটুও ব্যথা পাইনি। সত্যি বলছি!’

ক্ষণিকের জন্য অনুভব নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। প্রহরের বলার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে দিল। কয়েক সেকেন্ড মাত্র! প্রহরের চোখে মুখে বিস্ময়ের আবির্ভাব হতে সে চুপসে গেল। আর দাঁড়ালো না। লাগেজ হাতে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলো। তবে হাঁটার গতি একদম কমিয়ে দিল। কিছুদূর যেতে বাম দিকে ঝকঝকে টিনের নতুন এক বাড়ি চোখে পড়লো। সে শ্বাস ফেলে বলল,

‘এসে গেছি।’

_______

জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে অনুভব। কতগুলো বছর পর গ্রামে আসলো। অথচ এই গ্রামেই তার বেড়ে উঠা। শৈশব, কৈশোর কাটানো। বাহিরের এই নিকষ কালো রাতের অন্ধকারে মিশে আছে তার শরীরের গন্ধ। শ্বাস-প্রশ্বাস! কতশত স্মৃতি! সুখস্মৃতি, দুঃখস্মৃতি। যেসব স্মৃতি তাকে বড্ড পীড়া দেয়।

কিছুক্ষণ পর জানালার পাল্লা বন্ধ করে দিয়ে সরে আসলো সে। শরীর হিমশীতল হয়ে গেছে। গ্রামের শীতের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা থাকলেও এতটা আশা করেনি। প্রচন্ড শীত। হাঁড়ে কাঁপুনি ধরানোর জন্য যথেষ্ট! ঘাড়টা বার কয়েক ডানে বায়ে ঘুরিয়ে শোয়ার বন্দোবস্ত করলো। মৃদু একটা শব্দ সৃষ্টি করে দরজা ঠেলে কেউ ভেতরে ঢুকলো। অনুভব তাকিয়ে দেখলো প্রহর। হাতে কিছু একটা ধরে রাখা। হাতের দিকে অনুভবের দৃষ্টি নেই৷ তার দৃষ্টি প্রহরের মুখপানে। লাল বাল্বের আলোয় কেমন মায়াময় লাগছে মুখটা। পাতলা চাদর জড়ানো দেহে দৃষ্টি আটকে গেল তার। চাইলেও চোখ সরিয়ে নিতে পারলো না।

‘চা করেছি। খেয়ে নিন।’

অনুভব অপ্রস্তুত হয়ে কাপটা হাতে নিল। চুপচাপ কাপে চুমুক দিল। চোখ দুটো অস্থির তার। ঘুরেফিরে প্রহরের উপর ন্যস্ত হচ্ছে। প্রহর রুমের চারপাশটায় নজর বুলিয়ে তার পাশে এসে বসলো। যথেষ্ট দূরত্ব রেখে! তবুও অনুভবের মনে হলো প্রহর তার পাশে নয়, তার বুকের উপর বসেছে। এই যে সে বুকের ভেতর কেমন চাপ অনুভব করছে। হৃদয়টা কেমন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। সে তাড়াহুড়ো করে চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে ঠোঁট পুড়িয়ে ফেলল। শব্দ করতে গিয়েও চেপে গেল। প্রহরকে বুঝতে দিল না।

‘কথা বলছেন না কেন?’

প্রহরের গা থেকে মেয়েলি একটা সুভাস এসে কড়াভাবে নাকে লাগছে। মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এর বেশিকিছু দরকার পরে না। অনুভব একটু সরে বসলো। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে ঝটপট উত্তর দিল,

‘তোমার সাথে কিসের কথা? কোনো কথা নেই তো!’

‘অহ! সন্ধ্যায় রান্নাঘরের পাশে ঘুরঘুর করছিলেন। ভাবছিলাম কিছু বলবেন হয় তো।’

অনুভব ঢোক গিলল। ভাগ্যিস প্রহরের দৃষ্টি তার দিকে নেই। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ঘুরঘুর করছিলাম বলতে কি বুঝাতে চাও? হু? তুমি আমার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠোনি যে তোমার সাথে কথা বলার জন্য ঘুরঘুর করতে হবে।’

একটু থেমে বলল,

‘মায়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম!’

‘কিন্তু মা তো তখন রান্নাঘরে ছিল না। আমি আর মামি ছিলাম শুধু।’

অনুভব মিইয়ে গেল। প্রহরের স্বাভাবিক কথার পিঠে বলার মতো কিছু পেল না। গলার স্বর উঁচু করে বলল,

‘রাতের বেলা এত প্রশ্ন কিসের? চুপচাপ ওপাশে ঘুমিয়ে পড়ো।’

‘আমি আজ মায়ের সাথে ঘুমাব।’

‘কি!’

‘মায়ের সাথে ঘুমাব আজ। দক্ষিণের ঘরটাতে। মা নিজেই বললো আজ তার সাথে ঘুমাতে।’

প্রহর উঠে দাঁড়ালো। বের হওয়ার জন্য উদ্যত হতে অনুভব বাহু টেনে ধরলো। ভয়ানক আশ্চর্য হলো প্রহর। সেই আশ্চর্যের আভা চেহারায় ফুটে উঠলো। অনুভব বুঝতে পেরে দ্রুত হাত ছেড়ে দিল। অন্য দিকে চেয়ে বললো,

‘ঠিক আছে। যাও!’

প্রহর নড়চড় হীন। অনুভব ইশারায় আবার যেতে বললো। কিন্তু প্রহর তবুও নড়লো না। তার দৃষ্টি থেকে বিস্ময় ভাব এখনো কাটেনি। যেন প্রবল ঘোরের মধ্যে আছে। অনুভব আর দেরি করলো না। প্রহরকে টেনে বাইরে বের করে দিয়ে বলল,

‘আমি ক্লান্ত অনেক৷ ঘুমিয়ে পড়বো।’

বলে সে দরজা লাগিয়ে দিল। এক্ষুণি কি করতে যাচ্ছিল সে? একটুর জন্য শেষ রক্ষা হয়েছে! হাতের তালুতে তালু ঘঁষে একলাফে কাঠের চৌকিতে শুয়ে পড়লো সে। গলা পর্যন্ত লেপ টেনে শ্বাস ফেলল। অনেকদিন পর আজ বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। প্রহর নেই! এতবড় বিছানা তার। সম্পূর্ণ তার! তবুও ভেতরে শান্তি পেল না। আনন্দিত হলো না। বুকের গহীন থেকে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়ে সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়লো। বড্ড একা লাগতে লাগলো। প্রহরকে না ছুঁয়েও পাশে নিয়ে ঘুমানো একপ্রকার অভ্যাস হয়ে গেছে। এই অভ্যাস কি এ জনমে কাটিয়ে উঠতে পারবে?

চোখ বন্ধ করে বাম কাত ঘুরতে বাঁ দিকের কিডনিতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলো। বেশ কিছুদিন হলো এমন তীব্র ব্যথা হচ্ছে। সবসময় না, হঠাৎ হঠাৎ! আজকের ব্যথা অসহনীয়। দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে রইলো। উপলব্ধি করলো আর দেরি নয়! দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

________

ভোরবেলা অনুভবের ঘুম ভাঙলো প্রচন্ড শোরগোলে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে লক্ষ্য করলো রাতের সেই অসহনীয় ব্যথাটা উধাও হয়ে গেছে। এক হাতে মাথার চুলগুলো গোছগাছ করে বাইরে বের হলো সে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলো বড় মামা হৈচৈ করছে। তাঁর বাম হাতে একটা স্টিলের গ্লাস ধরা। গ্লাস ভর্তি পানি। কথা বলার সাথে সাথে মামার শরীর কাঁপছে। সেই সাথে গ্লাস থেকে ছলকে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা পানি। এই শীতের ভোরে পানি দেখে অনুভবের শরীর শিউরে উঠলো। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল। হাই তুলে জিগ্যেস করলো,

‘মামা কি হয়েছে? চেঁচামেচি করছেন কেন?’

‘আর বলিস না! তোর মামি আমায় পাগল বানিয়ে দিবে। দিবে মানে? ইতোমধ্যে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু হেমায়েতপুর যাওয়ার অপেক্ষা। কবে জানি শুনবি “কাশিগলা প্রাথমিক বিদ্যালয়” এর দপ্তরি আসগর সাহেব উন্মাদ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।’

‘হয়েছে টা কি, বলবেন তো!’

‘হওয়ার কিছু বাকি রেখেছে তোর মামি? সারাটাজীবন! সারাটাজীবন এভাবে কেউ কাউকে জ্বালায়? বিয়ের পর থেকে পানি চাইলে বিড়ির প্যাকেট এনে দেবে আর বিড়ি চাইলে পানির গ্লাস ধরিয়ে দেবে। শার্ট চাইলে মাথার তেল এনে দেবে আর তেল চাইলে চিরুনি! আর কত সহ্য করবো, বলতো?’

পাশেই মামি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মামার রাগের মাত্রা ঠাওর করতে পারেননি বোধ হয়। মামি কানে কম শোনে। সেই কমের মাত্রা এতটা নিচে যে মানা যায় না। কিন্তু তার মামা মেনে নিয়েছে। শুধু মেনে নেয়নি। মামিকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। মামির সাথে দু চারটে কথা বলতে গেলে যে কারো গলাব্যথা হয়ে যায়। সেখানে তার মামা কতগুলো বছর ধরে সংসার করছে।

মামা হুঙ্কার দিয়ে বললেন,

‘সকাল সকাল বিড়ির প্যাকেট চাইলাম। গতকাল রাতের বাসী পানি এনে দিল। রাগ হবে না কার বলতো অনুভব?’

‘আপনি এখনো বিড়ি ছাড়েননি মামা?’

অনুভবের কড়া সুরে আসগর সাহেব থতমত খেলেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে গ্লাসটা অনুভবের হাতে ধরিয়ে দিলেন। অহেতুক হাসার চেষ্টা করে বললেন,

‘অনেক বেলা হয়ে গেছে বাবাজী। তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও তোমরা। আমি আসছি!’

আসগর সাহেব দ্রুত উল্টো দিকে হাঁটা ধরলেন। অনুভব মুচকি হাসলো। তার মামাকে ধূমপানের বিষয়ে কিছু একটা বললে সুন্দর মতো এড়িয়ে যায়। তুই থেকে তুমিতে চলে আসে। সে গ্লাসটা মামির হাতে দিল। স্মিত হেসে বলল,

‘মামি, নিরব রাতে ফোন দিয়েছিল?’

‘হ, খাবার রেডি! খাইতে আসো।’

‘বলছিলাম যে, আপনার ছেলে নিরব! নিরবের সাথে রাতে কথা বলেছেন? আমাকে ফোন দিয়েছিল।’

‘ও! তোমার মা? তোমার মা ঘুমাইতেছে। শরীলডা বেশি ভালা না মনে হয়।’

অনুভব হাল ছেড়ে দিল। মামির মুখজুড়ে বিস্তৃত হাসি। কেউ কিছু বললে শুনুক বা না শুনুক মুখে হাসির রেখা ঠিক ফুটে উঠে। মামির বয়স বাড়ছে। কিন্তু চেহারা থেকে বাচ্চামো ভাবটা এখনো যায়নি। জন্মের পর থেকেই এই মানুষটাকে ভীষণ পছন্দ করে অনুভব। ইশারায় মামিকে চলে যেতে বলে সে মায়ের রুমের দিকে এগোল। মায়ের শরীর ভালো নয় বলতে মামি কি বুঝাচ্ছে?

_________

আসগর সাহেবের দু হাত ভর্তি বাজার। গ্রামের ছোট্ট বাজারের সবচেয়ে বড় রুই মাছটা তিনি আজ কিনেছেন। মাতবর রুহান আলিও আজ তাকে টেক্কা দিতে পারেনি৷ এজন্য ভেতরে ভেতরে বড়ই প্রশান্তি পাচ্ছেন তিনি। গতকাল একমাত্র ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছে। ফুপি এসেছে বাড়িতে৷ তার যত্নাদির কোনো রূপ ত্রুটি যেন না হয়৷ বড় কড়া হুকুম! সেজন্য বোনের পছন্দের মাছটা আজ তিনি কিনেছেন।

দুপাশে ফসলাদি জমি রেখে মাটির রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন তিনি। বাজার টা বাড়ি থেকে একটু দূরে হয়ে গেছে। তাতে কি! বাজারের সবচেয়ে দামি জিনিস তার কবজায়! তিনি ঝলমলে দৃষ্টিতে ডান হাতের দিকে তাকালেন। ব্যাগ মাড়িয়ে রুই মাছের প্রশস্ত লেজটা বের হয়ে আছে। আহা! বড্ড লোভনীয় মাছটা! গলার কাছে তৃষ্ণা অনুভূত হলো তাঁর! বিড়ির তৃষ্ণা! কিন্তু দু হাত ভর্তি বাজার। কোনো হাত তো খালি নেই। জীবনে প্রথম বারের মতো তৃতীয় একটা হাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন তিনি। কি করা যায়? রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিলেন মাছ কেনার এই সুন্দর মূহুর্তটা ধরে রাখা দরকার। এরজন্য বিড়িতে টান দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। আর কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ দুটো ঘাসের উপর নামিয়ে রাখলেন। লুঙ্গি পেঁচানো কোমড় থেকে দিয়াশলাই আর একটা বিড়ি বের করলেন। বিড়ির মাথায় আগুন ধরে মুখে গুঁজলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় স্বর্গীয় অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো। যেন তিনি বিড়ি নয়, অমৃত পান করছেন। বিড়ি খাওয়ার নেশা তাঁর যুবক বয়সে ছিল না। বিয়ের পর যখন মাটি কাটা দলের সাথে যোগ দেয় তখন অন্যদের দেখাদেখি এই নেশা হয়। এরপর কপাল গুণে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে দপ্তরির চাকরিটা হয়ে গেল। আর মাটি কাটা লাগলো না। কিন্তু বিড়ির নেশা গেল না। বড্ড বাজে ও আনন্দের নেশা! ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর। প্রশান্তিতে চোখ বুজলেন।

‘আরে অজগর ভাই যে!’

দপ করে আসগর সাহেবের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। চোখ খুললেন তিনি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলেন কুদ্দুস। হলুদ দাঁতের পাটি বের করে হাসছে। কি বিশ্রী সে হাসি! রাগতে গিয়েও রাগতে পারলেন না তিনি। তাঁর বড্ড বলতে ইচ্ছে হলো,

‘শালা! তুই অজগর, তোর বাপ অজগর। তোর ভাই অজগর। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠি অজগর।’

কিন্তু বলতে পারলেন না। মাতবরের ছোট ভাই বলে কথা। তিনি জোরপূর্বক হাসি টেনে বললেন,

‘হু! কুদ্দুস যে। খবর ভালো?’

‘আর খবর! অজগর ভাই, আপনের বোনের ছেলে নাকি শহরে বিয়ে করিছে। লোকমুখে শুনলেম।’

‘ঠিকই শুনছো।’

‘কিন্তু আপনের বোনের ছেলের যে কঠিন অসুখ সেইটা মেয়ে জানেনি? একবার যে মরতে বইছিল। গেরামের হগ্গলে জানে।’

আসগর সাহেব আর দাঁড়ালেন না। আধ খাওয়া সিগারেটের টুকরো ফেলে দিলেন। দু হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। বাড়ির উঠোনে এসে বুঝতে পারলেন, রুই মাছটা ব্যাগে নেই!

(চলবে)