অনুভবে তুমি পর্ব-২৩+২৪

0
685

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_২৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অয়ন,তমাল,তানিম,জয়,সানি আর রুদ্র শক্তিশালী একটা গ্যাং এর সাথে যুক্ত আছে।অয়ন এই গ্যাং এর লিডার।অয়নের সাথে আবার তমালের খুব বেশি ভালো সম্পর্ক।অয়ন যেকোন কাজে তমাল কে সাথে নেয়।বলতে গেলে তমালকেও সবাই অয়নের মতোই মান্য করে।তমাল আর অয়নের এই বন্ধুত্ব আবার তানিমের সহ্য হতো না।সে জন্য সে জয়,সানি,আর রুদ্রের সাথে হাত মিলিয়ে আলাদা একটা গ্যাং তৈরি করার স্বপ্ন দেখে।তারা আলাদা একটা আস্তানাও তৈরি করেছে।কিন্তু অয়ন আর তমাল বেঁচে থাকলে এই স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না তানিমের।সেজন্য সে অয়ন আর তমালের মধ্যে নানা ভাবে ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা করে।শেষমেশ কোনো উপাই না দেখে তানিম কয়েকজন সন্ত্রাসকে নিয়ে তমাল কে খুন করে ডোবায় ফেলে দেয়।অতশী সেদিন যে সন্ত্রাস গুলোকে দেখেছিলো এরা সবাই তানিমের নিয়োগ করা সন্ত্রাস ছিলো।আর যে সন্ত্রাস টি অতশীর হাত টেনে ধরে থ্রেড দিচ্ছিলো সে তানিম ছিলো।তানিম অতশীকে প্রথম দেখাতেই একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলো।আর অতশীর পরিচয় শুনে আরো বেশি অবাক হয়ে যায়।তারই বন্ধুর বোন এতো সুন্দরী হবে সে কখনো ভাবতেই পারে নি।তানিম অতশীকে পাওয়ার জন্য অয়নের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করে।অয়ন সহজেই তানিম কে তার ভালো বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে। কারণ তমাল মারা যাওয়ায় সে ভীষণ হতাশা আর দুঃশ্চিন্তায় ভুগছিলো।

এদিকে ইভান সন্ত্রাসীদের এই গ্যাং টাকে ধরার জন্যই তার তিন সহচরী শুভ্র,নিলয়,আর দিশানকে নিয়ে ভার্সিটিতে রোজ রোজ যেতে থাকে।আর তাদের কে ভার্সিটির বড় ভাই বলে পরিচয় দেয়।
ইভানরা সবসময় অতশীদের ডিপার্টমেন্টের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতো।এই ভাবে রোজ রোজ দেখতে দেখতে অতশীকে ভালো লাগতে শুরু করে।কিন্তু মাত্র জয়েন করা নতুন অফিসারের কাঁধে অনেক দায়িত্ব,এই মুহুর্তে প্রেম ভালোবাসায় জড়ানো টা মোটেও ঠিক হবে না।আবার অন্যদিকে তার মনের আবেগকেও কন্ট্রোল করতে পারছিলো না ইভান।সেজন্য সে তার মনের সমস্ত কথাগুলো লিখে পার্সেল আকারে অতশীর বাসায় পাঠিয়ে দিতো।

অয়ন যেদিন জানতে পারলো কেউ একজন তার বোন কে গোপনে চিরকুট পাঠায় সে সেটা তার ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করে।আর বলে যে করেই হোক এই ছেলেকে তার চাই ই চাই।তানিম এই সুযোগ টা কাজে লাগায়।
কিন্তু তানিম ভুলে যায় যে সে একজন সন্ত্রাস।সে যতই অয়নের বন্ধু হোক না কেনো অয়ন জেনেবুঝে কখনোই তার বোনকে একজন সন্ত্রাসীর হাতে তুলে দিবে না।
অয়ন তবুও চেষ্টা করে দেখেছিলো।সে তার বাবা মাকে পাঠায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
কিন্তু অয়ন সেই কথা শোনামাত্র তানিম এর সাথে ভীষণ রাগারাগি করে।তাকে মারধরও করে।

এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন ইভান মৌরির সাথে অয়ন কে দেখে ফেলে।ইভান রাগ করে অয়ন কে ধাক্কা মারে।আর তার পরিচয় জানতে চায়।অয়ন নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে রাখে।কারণ সাথে মৌরি ছিলো।মৌরি তখন তার ভাইয়াকে জানায় সে অয়ন কে পছন্দ করে।তারা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।ইভান কিছুতেই এটা মানতে পারছিলো না।তার ইচ্ছা ছিলো অনেক বড় অফিসারের সাথে তার বোনের বিয়ে দেবে।
কিন্তু মৌরি জানায় সে অয়ন কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।
তখন ইভান অয়নের ফ্যামিলির খোঁজ করতে গিয়ে অয়নের খুঁটিনাটি সব কিছু জেনে ফেলে।অয়ন যে জবের কথা সবাইকে বলতো আসলে সে কোন জব করে না।ইভান মৌরিকে অয়নের ব্যাপারে সবকিছু বলে।কিন্তু মৌরি তবুও অয়ন কে ভুলতে পারে না।তবে ইভান মৌরিকে কড়া পাহাড়ায় রাখে যাতে অয়ন আর তার সাথে মিশতে না পারে।মৌরি তখন চুরি করে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করতে থাকে অয়নের সাথে।আগের মতো আর ফোনে কথা হয় না তাদের।

পরের দিনই তমাল কে মারার সেই ফুটেজ টি ভাইরাল হয়,যেখানে অতশীকে একজন সন্ত্রাসের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।অয়ন নিজের বোন কে সেজন্য সবার চোখের আঁড়াল থেকে রক্ষার জন্য গ্রামে নিয়ে যায়।আর সে শহরে ফিরে আসে।
তানিম জানে অয়ন থাকলে কখনোই সে অতশীকে পাবে না।সেজন্য সে রাগ করে তমাল আর অয়নের মারামারির একটা ভিডিও পুলিশ কে দিয়ে দেয়।আর বলে অয়ন ই তমাল কে খুন করেছে।
পুলিশ সেই কথা শুনে অয়ন কে ধরে নিয়ে যায়।

অয়ন জেলে থাকা অবস্থায় মৌরির সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।সেজন্য মৌরি ভীষণ টেনশনে থাকে।পরে অয়নের অন্য আরেকজন বন্ধু জেলখানায় তাকে দেখতে গেলে অয়ন তাকে মৌরির ব্যাপারে বলে।আর তাকে জানিয়ে দিতে বলে অয়ন হঠাৎ করেই অফিসিয়াল কাজে কিছুদিনের জন্য বাহিরে গেছে।মৌরি এইভেবে আর কোনো চিন্তা করে না।কারন সে অয়ন কে অনেক বেশি ভালোবাসে।অয়ন ও মৌরিকে ভালোবাসে কিন্তু তার ব্যাপারে সবকিছু জানলে মৌরি যদি তাকে আর না ভালোবাসে এই ভয়ে মৌরিকে সে কিছুই জানায় নি।

অয়ন জেলে থাকায় তানিম এই সুযোগে অতশী আর তার ফ্যামিলিকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে।তানিম এমন ভাবে অভিনয় করে যে কেউ ধরতেই পারে নি তার মনের কথা।

তানিম অতশীর ফ্যামিলিকে আতংকের মধ্যে রাখার জন্য সন্ত্রাস দিয়ে অতশীকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।পরে আবার নিজেই অতশীকে উদ্ধার করে বীরত্বের পরিচয় দিতে চেয়েছিলো।যাতে করে অতশীর ফ্যামিলির সবাই তানিম কে খুব পছন্দ করে,তারা যেকোন প্রয়োজনে তানিমের কাছে আসে।তানিম সন্ত্রাসগুলোকে বার বার বলেছে অতশীর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।কিন্তু সন্ত্রাস গুলোর মধ্যে লোভ জেগে ওঠে, যার কারনে তারা অতশীকে ধর্ষন করার প্লান করে।ঠিক সেই সময় সেখানে ইভান যায়।কারন ইভান তানিমের এই আস্তানার খবর পেয়ে গেছে ইতোমধ্যে।ইভান যখন দেখলো সন্ত্রাস গুলো অতশীর সাথে খারাপ কিছু করতে চাইছে সেজন্য সে রাগ করে সবাইকে খুন করে ফেলে,যার জন্য তানিমের ব্যাপারে সে কিছুই জানতে পারে না।

ইভান অয়নের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে এই গ্যাং এর ব্যাপারে অনেক তথ্য তার কানে আসে।
ইভান যখন জানতে পারলো অতশী অয়নের বোন তখন সে চিরকুট লেখা বন্ধ করে দেয়।কারন একজন সি আই ডি অফিসার কি করে একজন সন্ত্রাসীর বোনের সাথে সম্পর্ক করতে পারে?

ইভান অতশীর বিয়েতে গিয়েছিলো তানিম কে ধরার জন্য।কারন তানিমের ব্যাপারে অনেক প্রমাণ জোগাড় করতে পেরেছিলো ইভান।তানিমের নতুন আস্তানা খুঁজে পেয়েছে ইভান।যেখানে তার সকল টাকা পয়সা,অস্ত্র আর ও অনেক দরকারি জিনিসপত্র রাখা হয়েছিলো।ইভান ভেবেছিলো চারজনকে এক সাথে ধরবে সেই আস্তানায়।কিন্তু তার আগেই তানিম বাকিদের কে ঠাকায়।তানিম,জয়,সানি আর রুদ্রের আস্তানা সে সেদিনই খুঁজে পেয়েছিলো যেদিন অতশীকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলো।ওটাই ছিলো তানিমের নতুন আস্তানা।কিন্তু আস্তানায় কোনো অস্ত্র বা অন্য কোনো দরকারী সামগ্রী পায় নি ইভান।অয়ন সেগুলো আগেই সরিয়ে ফেলেছে।কারণ অয়নের ধান্দা আবার ছিলো এসব টাকা পয়সার ভাগ সে একাই নিবে।রুদ্র,জয় আর সানিকে কেনো দিতে যাবে?কারন অয়ন জেলে থাকায় তানিমই তো এখন একজন লিডার।
তানিমের বন্ধুরা এজন্য তানিম কে খুন করে ফেলে।আর সকল যন্ত্রপাতি আর টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।এদিকে ইভান তানিমের বিরুদ্ধে সকল প্রমান জোগাড় করে তানিম কে ধরতে এসে জানতে পারলো তানিম মারা গেছে।
ইভান সেই দিনই অভিযান চালিয়ে তানিমের তিনজন খুনির মধ্যে জয় কে ধরে ফেলে।সানি আর রুদ্র এখনো নিরুদ্দেশ।

অতশী তার ভাইয়ার সত্য টা জেনে দৌঁড়ে তার বাসায় চলে এলো।কারণ তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।সে তার ভাইয়ার মুখেই সত্য টা জানতে চায়।
অতশী বাসায় এসে দেখে অয়ন নেই।সেজন্য সে তার মায়ের রুমে চলে গেলো।আর আম্মু আম্মু বলে ডাকতে লাগলো।
অতশীর আম্মু এগিয়ে আসতেই অতশী জিজ্ঞেস করলো,আচ্ছা আম্মু ভাইয়া কি জব করে?কোথায় তার অফিস?

অতশীর মুখে হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে তার আম্মু বেশ অবাক হয়ে যায়।তবে তিনি জানান অয়নের চাকরির ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।অতশী তখন তার ভাইয়ার রুমে চলে যায়।আর পুরো ঘর তছনছ করে ফেলে। কিন্তু কোনো ক্লু খুঁজে পায় না।হঠাৎ অয়নের টেবিলের উপর সেই ম্যাপ টা খুঁজে পায় যেটা অয়ন অফিসিয়াল কাজ বলে জানায় সবাইকে।
অতশী ম্যাপ টা হাতে নিয়ে কিছুই বুঝতে পারে না।কারন সেখানে শুধু জেলা আর বিভাগের নাম দেওয়া।আর কিছু কিছু জায়গায় লাল কালি দিয়ে মার্ক করা।অতশী ম্যাপ টা হাতে নিয়ে তার আম্মুর রুমে আসে আর জিজ্ঞেস করে আম্মু ভাইয়া তো সবসময় বলতো এটা অফিসিয়াল কাজের একটা ম্যাপ।
–হ্যাঁ।তা কি হইছে?
–কিন্তু ভাইয়া তো কোনো জবই করে না।
–কি বলছিস এসব?
–হ্যাঁ সত্য বলছি আমি।ভাইয়া আর তার ফ্রেন্ডরা কেউই কোনো জব করে না।তাহলে এরা রোজ সকালে কই যায়?

অতশীর আম্মু অতশীকে ধমক দিয়ে বললো কি সব ভুলভাল বকছিস?মাথা ঠিক আছে তোর?

–হ্যাঁ আমি সত্যি বলছি আম্মু।আমাদের ভাইয়া একজন সন্ত্রাস।সে মানুষ খুন করে।এই বলে অতশী কাঁদতে লাগলো।
অতশীর দাদী দূরে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন এটা।তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলেন না।
অন্যদিকে অতশীর আম্মু উলটো অতশীকেই বকাঝকা শুরু করে দিলো।কেউই এটা বিশ্বাস করলো না।

রাতের বেলা অয়ন বাসায় ফিরতেই অতশী জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া তুই কই থেকে আসলি?
–কই থেকে আবার?অফিস থেকে।
অতশী তখন বললো তুই কিসে জব করিস?
অয়ন সেই কথা শুনে তার আম্মুকে বললো,কি হয়েছে আম্মু?অতশী এমন জেরা করছে কেনো?

অতশীর আম্মু তখন বললো,কি বুঝি হয়েছে ওই ভালো জানে।

অতশী তখন বললো ভাইয়া তুই কি ইভান কে চিনিস?
ইভানের নাম শুনেই অয়ন অতশীর কাছে এগিয়ে এলো।আর বললো,কি করেছে ইভান?তাড়াতাড়ি বল কি করেছে?
–কিছু করে নি।আমি শুধু জিজ্ঞেস করছি তুই চিনিস কিনা?
–না চিনি না।
অতশী তখন বললো মৌরি কে নিশ্চয় চিনিস?
–মৌরি?কোন মৌরি?আমি চিনি না কাউকে।
আর তুই হঠাৎ এদের কথা জিজ্ঞেস করছিস কেনো?
–কারন আছে।কারন যে মুহিব সাহেব তোকে জেল থেকে বের করে এনেছে ওনার ছেলে মেয়ের নাম ই হলো ইভান আর মৌরি।

অয়ন সেই কথা শুনে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।

অতশী তখন তার ভাইয়ার হাত ধরে বললো,ভাইয়া এটা কি সত্যি যে তুই একজন সন্ত্রাস!ইভান আমাকে বলেছিলো কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নি।তুই নিজের মুখে বল প্লিজ।
অয়ন একেবারে থ হয়ে গেলো।তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হলো না। মৌরি যে এডভোকেট মুহিব সাহেবের মেয়ে সে আসলেই জানতো না।যদি জানতো তাহলে অতশীকে রোজ রাজ টিউশনি করাতে ও বাড়িতে পাঠাতো না। অয়ন কি করেছে এটা!নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলো।অয়নের মাথা চক্কর দিতে লাগলো।তাহলে কি ইভান অয়নের ব্যাপারে সবকিছু জেনে গেছে!তাদের আস্তানার খোঁজ পেয়েছে!মৌরি কে আবার বলে নি তো!
অয়ন এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।সাথে সাথে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

–এই ভাইয়া কই যাচ্ছিস?দাঁড়া বলছি।এতো রাতে কই যাচ্ছিস আবার!
অয়ন কোনো উত্তর না দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

অতশী তখন তার আম্মুকে বললো,দেখলে, ভাইয়া কিভাবে ভয় পেয়েছে!আমার কথা বিশ্বাস করো সবাই।ভাইয়া আসলেই একজন সন্ত্রাস।অতশীর আম্মু আর দাদীও এবার ভয় পেয়ে গেলো।অয়ন যদি সত্যি সত্যি সন্ত্রাস হয় তাহলে কি হবে এখন?ওকে তো আবার পুলিশ ধরে ফেলবে।

সারারাত পার হয়ে গেলো অয়ন আর বাসায় ফিরলো না।অতশী অপেক্ষা করছিলো অয়নের জন্য।কিন্তু অয়ন আজ আর বাসায় ফিরলো না।

পরের দিন অতশী ভার্সিটিতে চলে গেলো।যদিও আজ তার যেতে একটুও ইচ্ছা করছে না তবুও গেলো।অতশী সোজা কমন রুমে চলে গেলো।কারন আজ একটু সে তাড়াতাড়ি এসেছে।অতশীর মাথায় এখন শুধু তার ভাইকে নিয়েই চিন্তা।তার ভাইয়া কেনো এমন হলো?কেনো তাকে এরকম পেশা বেছে নিতে হলো?

অতশী হঠাৎ খেয়াল করলো ইভান এসেছে ভার্সিটিতে। তা দেখে অতশী কমন রুম থেকে বের হয়ে হলো।অতশীকে দেখামাত্র ইভান দৌঁড়ে এলো অতশীর কাছে।আর তাকে জিজ্ঞেস করলো,তোমার ভাইকে সবকিছু বলে দিয়েছো তাই না?
অতশী কোনো উত্তর দিলো না।
ইভান তখন চিৎকার করে বললো, মৌরি কোথায়?
–মৌরি?আমি কি করে জানবো?
ইভান তখন তাহলে তোমার ভাই কোথায়?
–জানি না।কারণ ভাইয়া কাল রাতে বাসায় আসে নি!
ইভান তখন বললো,আমার বোনের সাথে যদি খারাপ কিছু হয় তোমাদের দুই ভাই বোন কে যে কি করবো সত্যি আমি জানি না।
–আমি কি করেছি!
–কি করেছো মানে!তোমাকে বললাম না এটা একটা সিক্রেট কথা।তবুও বলে দিয়েছো অয়ন কে?
–আপনি অযথাই ভুল বুঝছেন আমাকে।আমি ভাইয়াকে কিছুই বলি নি।শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম ভাইয়া ইভান নামের কাউকে চেনে কিনা?
আর মৌরি কে চেনে কিনা?
ইভান সেই কথা শোনামাত্র দ্রুত ভার্সিটি থেকে চলে গেলো।শুভ্র,নীলয় আর দীশান কে বললো তাড়াতাড়ি চলে আয়।ইভান তার পারিবারিক ব্যাপার মোটেও প্রকাশ্যে আনতে চায় নি।কিন্তু এবার আর কোনো উপাই দেখলো না।যে করেই হোক মৌরিকে খুঁজে বের করতে হবে।

অতশী নিজেও ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।ভাইয়া কেনো এমন পাগলামি করছে!এখন ইভান যদি তার ভাইয়ার সাথে খারাপ কিছু করে!অতশী আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে গেলো।
অতশীর বান্ধুবীরা অনেক ডাকাডাকি করলো।কিন্তু অতশী কারো কথায় কান না দিয়ে চলে গেলো।

অতশী বাসায় গিয়ে নিজের চোখ কে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না।কারন পুরো বাড়ি পুলিশ ঘিরে রেখেছে।

চলবে,

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_২৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অতশীদের পুরো বাসা ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ।অতশী বাসায় ঢুকতে চাইলে তাকে যেতে নিষেধ করলো সবাই।অতশী তখন বললো,এটা আমাদের বাসা।দয়া করে আমাকে ভিতরে যেতে দিন।পুলিশ তখন বললো, সরি ম্যাম, স্যার নিষেধ করেছে।স্যার না আসা পর্যন্ত কেউ ভিতরে যেতে পারবে না।
–মানে কি?কি শুরু করেছেন আপনারা?এই বলে অতশী জোর করেই বাসার ভিতর ঢুকতে ধরলো।
তখন একজন মহিলা পুলিশ অতশীকে টেনে বের করে বললো,স্টপ।বারণ করা সত্ত্বেও ভিতরে ঢুকছেন কেনো?
অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।কেনো এতো পুলিশ?আর কেনোই বা তাকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না?

হঠাৎ সেখানে ইভান আসলো।ইভান এসেই সকল পুলিশ দের উদ্দেশ্যে বললো,অয়ন কে দেখামাত্র গ্রেফতার করবে।সে যেনো পালাতে না পারে।
ইভান কে দেখে অতশী এগিয়ে আসলো।আর বললো,আপনি কি শুরু করেছেন এসব?আমার বাসায় আমাকে ঢুকতে নিষেধ করেছেন?

ইভান তখন ইশারা করে সবাইকে বললো ওনাকে যেতে দাও।
অতশী বাসার ভিতর না গিয়ে ইভান কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।
ইভান তখন অতশীকে ধমক দিয়ে বললো,বেশি কথা না বলে বাসার ভিতর চলে যাও, এই বলে ইভান নিজেও চলে যেতে ধরলো।
হঠাৎ একটি সি,এন,জি এসে দাঁড়ালো ইভানের সামনে।
ইভান ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে সি,এন,জি থেকে বের হয়ে এলো অয়ন।

অয়ন কে দেখামাত্র কয়েকজন পুলিশ তাকে বন্দুক তাক করে ঘেরাও করলো।অয়ন তখন বললো,কেনো আমাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে জানতে পারি কি?

পুলিশ তখন বললো আপনি ইভান স্যারের বোন কে কিডন্যাপ করেছেন।সেই অপরাধে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
এদিকে অয়ন কে দেখামাত্র ইভান রাগে দাঁত কটমট করতে লাগলো।

অয়ন তখন হাসতে হাসতে বললো,নিজের বউ কে আমি কেনো কিডন্যাপ করতে যাবো?এই বলে অয়ন ইভানের সামনে এসে দাঁড়ালো।আর সবার সামনে জোরে জোরে করে বললো,মৌরি আমার বিয়ে করা বউ।আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি।
ঠিক তখনি মৌরিও গাড়ি থেকে নেমে এলো।

অতশী নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।সে এসব কি দেখছে?ওদিকে ইভান এতোটাই রেগে আছে যে তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।

মৌরির হাত ধরে অয়ন অতশীর সামনে আসলো।আর বললো,তোর ভাবীকে ঘরে নিয়ে যা।
অতশী চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
অয়ন তখন চিৎকার করে বললো,কথা কানে যায় না?যা রুমে নিয়ে যা।
অতশী সেই কথা শুনে মৌরির হাত ধরে রুমে নিয়ে যেতে ধরলো।

ইভান হঠাৎ কোনো কথা না বলে অতশীর হাত থেকে মৌরির হাত ছেড়ে নিলো আর তাকে টেনে নিয়ে যেতে ধরলো।
অন্যদিকে পুলিশ অয়ন কে নিয়ে যেতে ধরলো।
অয়ন তখন চিৎকার করে বললো, ইভান তোর ক্ষমতা আছে দেখে সেটার অপব্যবহার তুই করতে পারিস না।কোন অপরাধে তুই আমাকে পুলিশে দিচ্ছিস?তোর বোন নিজেই এসেছে আমার কাছে।সে নিজেই বলেছে বিয়ে করতে।এখানে আমার অপরাধ টা কোথায়?

মৌরি ভয়ে কোনো কথাই বললো না।অয়ন তখন বললো মৌরি কথা বলো।এভাবে চুপ করে আছো কেনো?তুমি চুপ করে থাকলে তো আমাকে ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ।
মৌরি তখন বললো, ভাইয়া আমি অয়ন ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না দেখেই এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি।তুমি ওকে ছেড়ে দাও।ওর সাথেই আমি আমার সারাটা জীবন কাটাতে চাই।প্লিজ ভাইয়া।

ইভান সেই কথা শুনে মৌরির হাত ছেড়ে দিলো।ইভানের চোখ মুখের দিকে দেখা যাচ্ছে না।রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে। সে কখনোই ভাবি নি মৌরি এইরকম একটা কাজ করবে।ইভান আর তার বাবা মা সারা রাত মৌরির চিন্তাই ঘুম পাড়তে পারি নি।তারা ভেবেছিলো নিশ্চয় মৌরি কে অয়ন অপহরণ করেছে,নিশ্চয় মৌরি বিপদে আছে।আর এদিকে মৌরি বিয়ে করেছে অয়ন কে।
ইভান তখন সকল পুলিশ দের অর্ডার করলো অয়ন কে ছেড়ে দাও।
অয়ন ছাড়া পাওয়া মাত্র ইভানের কাছে চলে আসলো।আর বললো,আমার গায়ে হাত দিয়েছিলি,মনে আছে?আমি তখন বলেছিলাম এর জবাব তোকে অন্যভাবে দিবো।কেমন লাগলো জবাব টি?আমাকে তোর বোনের আশেপাশে যেতে নিষেধ করেছিলি আমি সেজন্য কাছাকাছি রাখার ব্যবস্থা করলাম। আমাকে যদি ধরার চেষ্টা করিস তাহলে কিন্তু হেডলাইনে সবার আগে তোরই নাম থাকবে।সি আই ডি অফিসার ইভানের বোনের জামাই এখন জেলে।
মিডিয়ার লোক যদি শোনে সি আই ডি অফিসার ইভান এর বোন পালিয়ে বিয়ে করেছে তাহলে তোর মানসম্মানের কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস?
তোর বাবার মাথাও একদম নিচু হয়ে যাবে।তার চেয়ে বরং সবাইকে জানিয়ে দে আমি তোর বোনের হাজব্যান্ড।তোরা নিজের থেকেই আমার সাথে বিয়ে দিয়েছিস।এটাই সবচেয়ে বেশি ভালো হবে।

মৌরি ইভানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি বাবা আর তোমার মানসম্মানের কোনো ক্ষতি করতে চাই নি।কিন্তু তোমরা সবাই যখন আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছো,সেজন্য বাধ্য হয়ে এই কাজটি করতে হলো আমাকে।

ইভান অনেক কষ্টে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।কারন সবার সামনে কিছু বলতে পারলো না সে।তবুও বললো, ভুল যখন করেই ফেলছিস কিছুই করার নাই।তাহলে এক কাজ কর।তুই এখন আমার সাথে বাসায় আয়।পড়ে বড় করে ধুমধামে আবার বিয়ে দিতে চাই তোদের।
মৌরি তখন বললো সত্যি তুমি মেনে নিবে ভাইয়া?আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।

কিন্তু অয়ন সেই কথা শুনে এগিয়ে এলো।আর ইভান কে বললো,কি দারুন বুদ্ধি তোর!একজন সি আই ডি অফিসারের বুদ্ধি যে এতো কম সত্যি আমার জানা ছিলো না।তুই কি ভেবেছিলি আমি তোর ফাঁদে পা দিয়ে মৌরি কে পাঠিয়ে দেবো?কখনোই না।আমি আর নতুন করে বিয়ে করতে চাই না।আর কাউকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করি না।আমি মৌরিকে কিছুতেই তোর সাথে পাঠাবো না।আর মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ওর হাত ছাড়ছি না।এই বলে অয়ন মৌরি কে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
ইভান বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারলো না সে।যেখানে নিজের বোনই অন্যজনের পক্ষ নিচ্ছে সেখানে তার কিছুই করার নাই।

অতশী তখন ইভানের কাছে গিয়ে বললো, আগে ভালো করে যাচাই করবেন।তারপর তাকে ধরার জন্য পুলিশ পাঠাবেন।ভাইয়া কি বললো শুনছেন তো?শুধু ভাইয়া না, মৌরিও তো বললো সে নিজে এসেছে। ভাইয়ার এতে কোনো দোষ নাই।
ইভান অতশীর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।তারপর আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।

এদিকে মৌরি কে নিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকতেই অয়নের আম্মু আর দাদী এগিয়ে আসলো।অয়নের আম্মু কোনো কথা না বলে হঠাৎ অয়নের গালে ঠাস ঠাস করে দুই টা চড় মারলো।
আর বললো,কি শুরু করেছিস এসব?
বাসার সামনে পুলিশ দিয়ে ভরে গেছে।সন্ত্রাসগিরি কি বাসার মধ্যেও শুরু করেছিস?
কি জবাব দিবো আমি সবাই কে?আমি একজন সন্ত্রাসের মা?
আর এই মেয়ে কে?একে কেনো নিয়ে এসেছিস?
অয়ন কোনো কথা না বলে তার ঘরে চলে গেলো।

অতশী তখন তার আম্মুকে বললো আম্মু অয়ন ভাইয়া বিয়ে করেছে।এর নাম মৌরি।
–বাহঃ দারুন তো।একা একা বিয়েও করে ফেলছে।ভালোই তো।কেউ কিছু বলে না দেখে এতো সাহস বেড়ে গেছে!

অতশী তখন বললো, আসলে আম্মু মৌরিকে ওর বাবা মা বিয়ে দিতে ধরছিলো সেজন্য ওরা চুরি করে বিয়ে করছে।
অতশীর দাদী তখন বললো, তাই বলে আমাদের জানাবে না?তুই সাপোর্ট করছিস এদের?

অতশী তখন বললো যা হবার তা তো হয়েই গেছে এখন বাড়ির বউ টাকে ঘরে ঢুকতে দাও।এই বলে অতশী নিজেই মৌরিকে ঘরে রেখে আসলো।

অয়ন জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
অতশী তখন অয়নের কাছে এসে বললো, ভাইয়া তুই কাজটা ঠিক করিস নি।ইভান আর ওর পরিবারের সবাই অনেক কষ্ট পেয়েছে।এইভাবে না বলে বিয়ে করা মোটেও ঠিক হয় নি।
আম্মু আর দাদীও ভীষণ মন খারাপ করেছে।

অয়ন তখন বললো,এতো দরদ লাগছে কেনো তোর? লেকচার দেওয়া শেষ হলে চলে যেতে পারিস।কারো উপদেশ শুনতে আমার ভালো লাগছে না।অতশী সেই কথা শুনে চলে গেলো।

মৌরি হঠাৎ অয়ন কে জিজ্ঞেস করলো, ব্যাপার কি? সবাই আপনাকে সন্ত্রাস বলছে কেনো?আপনি কি আসলেই একজন সন্ত্রাস?

অয়ন কোনো উত্তর না দিয়ে সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে থাকলো।
মৌরি তখন অয়ন কে জড়িয়ে ধরে বললো সবার মনে কষ্ট দিয়ে আপনার হাত ধরে চলে এসেছি।বুঝতেই পারছেন ও বাড়িতে আর জীবনেও ঢুকতে পারবো না।এমন কোনো কাজ করবেন না যেনো আমাকে সবার কাছে লজ্জিত হতে হয়।সবাই আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।

অয়ন সেই আগের মতোই মন খারাপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার মাথায় নানা ধরনের চিন্তাভাবনা। সে কি করবে এখন?ইচ্ছা করলেও সে এই গ্যাং থেকে বের হতে পারবে না।অয়ন এমন ভাবে বাঁধা পড়ে গেছে যে চাইলেও তাকে তার বস বের হতে দেবে না।এই গ্যাং এ একবার যে নাম লেখায় তাকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেয় না তারা।

অয়নের বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব অয়নের কাঁধে এসে পড়ে।সংসার সামলানোর জন্য সে একটা কোম্পানি তে জয়েন করে।কিন্তু সেই কোম্পানি তে কাজ করতে গিয়ে অয়ন বাজে ভাবে ফেঁসে যায়।তার উপর চক্রান্ত করে ওই কোম্পানির ম্যানেজার। এজন্য পুলিশ ধরতে আসে অয়ন কে।অয়ন পুলিশের নাম শোনামাত্র ভয়ে আঁতকে ওঠে।কারন তখন সে পুলিশ কে ভীষণ ভয় পেতো।সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ম্যানেজারের হাতে পায়ে পড়ে।তখন ম্যানেজার তাকে বলে তার হয়ে কাজ করতে হবে।সে যা বলবে তাই করতে হবে।অয়ন সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়।কারন অয়ন স্বপ্নেও ভাবে নি ম্যানেজার তাকে এমন এক অন্ধকার জগতে ঢেলে দিবে।অয়ন নিজের সংসার সামলানোর জন্য আর জেল খানায় যাওয়ার ভয়ে ম্যানেজারের কথা মতো একটা পেপারে সাইন করে।যেখানে লেখা আছে অয়ন কে ১০ বছরের জন্য কাজ করতে হবে।কিন্তু তার আগেই যদি অয়ন কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে মরতে হবে।গ্যাং এর বস তাকে বাঁচতে দেয় না।

এদিকে মৌরি অয়ন কে আবার জিজ্ঞেস করলো।কি হলো আপনার?উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?

মৌরির ডাক শুনে অয়ন বর্তমানে ফিরে আসলো।

অয়ন তখন বললো, কে কি বললো তাতে আমার যায় আসে না।মানুষ তো কথা বলবেই। তুমি আমাকে ভালোবাসো আর আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্য কথা।আমরা এখন বিয়ে করেছি।এখন চিন্তা করো কিভাবে নিজের সংসার সাজাবে!
–তার মানে সত্যি আপনি সন্ত্রাস?আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন কেনো?ভাইয়া অনেকবার বলেছিলো আমাকে।আজ আপনার আম্মুও বললো।

অয়ন তখন মৌরির মুখ চেপে ধরে বললো,তুমি অন্তত আমাকে সন্ত্রাস বলো না।সন্ত্রাস শব্দ টা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।
আমাকে শুধু একটু বিশ্বাস করো।আর আমার পাশে থেকো সবসময়।

মৌরি সেই কথা শুনে অয়নের বুকে মাথা রেখে বললো,আপনার পাশে সবসময় থাকার জন্যই সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি।সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।প্লিজ আমাকে কাঁদাবেন না।
অয়ন মৌরির কথা শুনে তাকে তার বুকের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,মৌরি তুমি ভুল প্রফেশনের মানুষ কে চয়েজ করেছো।জানি না কি আছে কপালে?

সেদিন অয়ন অতশীর কথা শুনে তার আস্তানায় গিয়ে সকল সরাঞ্জাম সরিয়ে রেখেছে।কারন ইভান এই আস্তানার খোঁজ পেয়ে গেছে।
হঠাৎ মৌরি ফোন দেয় অয়ন কে।আর জানায় সে বাসা থেকে চলে এসেছে।আর ফিরবে না বাসায়।
অয়ন সেই কথা শোনামাত্র মৌরির কাছে চলে যায়।মৌরি অয়ন কে দেখামাত্র দৌঁড়ে চলে আসে।আর বলে আজকেই তাকে বিয়ে করতে হবে।তা না হলে আর কখনোই তাদের একসাথে থাকা হবে না।কারন ইভান বুঝতে পেরেছিলো অতশী কিছু একটা করেছে যার জন্য পাত্রপক্ষ মৌরিকে পছন্দ করে নি।তখন ইভান আবার দেখায় মৌরিকে।তখন পাত্রপক্ষ বলে আগের বার এই মেয়েকে তারা দেখে নি।তারা অন্য আরেকজন কে দেখেছে।ইভান তখন বলে এটাই আমার বোন মৌরি।আগের বার বাজে সাজের কারনে অন্য রকম লেগেছিলো।
পাত্রপক্ষ এবার পছন্দ করে মৌরিকে।তখন ইভান ঠিক করে আজকেই তাহলে বিয়ে হবে।পাত্রপক্ষও রাজি হয়ে যায়।সেজন্য মৌরি বাসা ছেড়ে পালিয়ে আসে।

অন্যদিকে ইভান অয়নের বাসা থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকেরা তাকে ঘিরে ধরলো।সবার এক প্রশ্ন, স্যার আপনি এ বাসায় কেনো পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছেন?এই বাসার কেউ কি কিডন্যাপ এর সাথে জড়িত।
ইভান কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে সবাই কে এড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
ইভান সোজা তার বাসায় চলে গেলো।বাসায় গিয়েও সেই এক প্রশ্ন।সাংবাদিকেরা ইভানের বাসাতেও এসেছে।ইভান কিছুতেই আর এসব সহ্য করতে পারছিলো না।সে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকলো।এদিকে ইভানের বাবা মা এখনো জানে না মৌরি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে।

ইভান কে এভাবে ঘরের দরজা বন্ধ করা দেখে ইভানের বাবা ইভান কে ডাকতে লাগলো।ইভান দরজা খুলতেই তার বাবা বললো,কি হয়েছে ইভান?মৌরি কই?
ইভান তখন বললো নাই,মরে গেছে।
–মানে?কি বলছো বাবা?
–হ্যাঁ মরেই গেছে।
ইভানের মা সেই কথা শুনে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো আর বললো,কি হয়েছে মৌরির?কোথায় ওই।
ইভান তখন চিৎকার করে বললো,বললাম তো মরে গেছে।বার বার কেনো জিজ্ঞেস করছো ওর কথা?

ইভানের বাবা তখন ইভানের মা কে বললো তুমি রুমে চলে যাও।আমি কথা বলছি ইভানের সাথে।ইভানের মা সেই কথা শুনে চলে গেলো।
ইভানের বাবা তখন আবার জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে মৌরির?
ইভান তখন বললো, বাবা মৌরি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে?
ইভানের বাবা অবাক হয়ে বললো,কি বলছিস এসব?কে সে?ও পালিয়ে না গিয়ে আমাদের কে তো বলতে পারতো।
ইভান তখন বললো,সন্ত্রাসের কথা আর কি বলবে?
এক নাম্বারের সন্ত্রাস সে?যাকে ধরার জন্য আমাদের পুরো টিম অপেক্ষা করছে।তাকে সরাসরি ক্রসফায়ারের পারমিশন দেওয়া হয়েছে।

ইভানের বাবা শোনার সাথে সাথে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।তিনি কি শুনছেন এসব?মৌরি কি করে নিজের এতোবড় সর্বনাশ করলো?
ইভান তখন তার বাবাকে বিছানায় শুয়ে দিলো।আর চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।
ইভানের বাবা জাগ্রত হয়েই মৌরি মৌরি বলে চিল্লাতে লাগলো।তার মেয়েকে ফিরে আনতে বললো তার কাছে।
ইভান তখন বললো, বাবা আপনি শান্ত হন।আমি দেখছি কি করা যায়?ইভান সত্যি বুঝতে পারছে না সে কি করবে?কারন অয়নের গ্যাং এর প্রধান কাজ হলো মানুষ খুন করা।কেউ কাউকে মেরে ফেলতে চাইলে তার একটা ছবি আর ঠিকানা এই গ্যাং এর কাছে পাঠিয়ে দেয়।আর এই গ্যাং তাকে মেরে ফেলে।বিনিময়ে অনেক টাকা পাই তারা।এইভাবে একদিনে যে তারা কত লোক কে খুন করে তা কল্পনার বাহিরে।

অয়ন অনেক চেষ্টা করেছে ফিরিয়ে আসতে।কিন্তু তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।অয়ন কে সহ তার পুরো পরিবার কে খুন করা হবে যদি অয়ন এই পেশা ছেড়ে দেয়।
অয়ন মানুষ খুন করতে করতে এখন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।সে রেস্ট নিতে চায়।কিন্তু কিভাবে মুক্ত করবে নিজেকে? একদিকে পুলিশ অন্য দিকে তার বস।পুলিশের হাতে পড়লে সারাজীবন এর জন্য জেল আর বসের হাতে পড়লে ডাইরেক্ট খুন হবে।

তিনদিন পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইভান আবার আসলো অতশীদের বাসায়।কেউ ভাবতেই পারে নি ইভান আবার আসবে।
অতশী নিজেই ইভান কে গেস্ট রুমে বসতে দিলো।আর নাস্তা আনার জন্য চলে যেতে ধরলো। ইভান তখন বললো, অতশী অয়ন কে একটু ডেকে দাও।ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
অতশী সেই কথা শুনে অয়ন কে ডাকতে গেলো।কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে অয়ন আর মৌরি একসাথে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।অতশী সেজন্য ঘুরে আসলো।
ইভান অতশীকে দেখে বললো,কি হলো?অয়ন কই?
–ঘুমাচ্ছে।
–তাহলে ডেকে দাও।
–আপনি গিয়ে ডাকেন।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, তোমার দ্বারা কি কোনো কাজই হয় না?এই বলে ইভান নিজেই চলে যেতে ধরলো।
অতশী তা দেখে বললো,না না যাবেন না।আপনি বসেন।আমিই ডেকে দিচ্ছি।
অতশী তখন আবার গেলো অয়ন কে ডাকতে।কিন্তু রুমে তার ভাই ছিলো না।মৌরি একাই ঘুমিয়ে আছে।

অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।কোথায় গেলো আবার?

হঠাৎ অয়ন পিছন দিক থেকে অতশীর মাথায় টোকা দিয়ে বললো,এ রুমে কি করিস?

অতশী একদম চমকে গেলো।আর বললো,ইভান এসেছে।তোকে ডাকছে।
–ইভান?ইভান কেনো এসেছে?
–তা আমি কি করে বলবো?এই বলে অতশী চলে গেলো।

অয়ন তখন নিজেও বের হলো রুম থেকে।রুম থেকে বের হতেই দেখে ইভান বসে আছে।
অয়ন ইভান কে দেখে তার কাছে এগিয়ে গেলো।আর বললো,
–কি ব্যাপার সি আই ডি অফিসার?
বোনের বাড়িতে এসেছেন?না তদন্ত করতে এসেছেন?

ইভান অয়ন এর কথা শোনামাত্র উঠে দাঁড়ালো।আর বললো,অয়ন লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে গেলাম।আর কোনো ক্রাইম করিস না।আমার বোন কে বিয়ে করেছিস দেখে ভাবিস না তোকে আমি ধরবো না।

–আমি কখন বললাম যে আমাকে তুই ধরবি না?অবশ্যই ধরবি।তবে প্রমান দেখাতে হবে।প্রমাণ ছাড়া তুই আমাকে ধরতে পারবি না।

ইভান তখন বললো আজকের নিউজ কি দেখিস নি?তোদের আস্তানা যে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এখনো খবর পাস নি?অস্ত্র সহ তোদের টিমের ১০ জন কে ধরা হয়েছে।তাদের সবাই কে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।এখন পুলিশের পিটন খেতে খেতে এক দমে সবার নাম বলে দেবে।

অয়ন সেই কথা শোনামাত্র তার মোবাইল টা অন করলো।কারন তার ফোন কাল থেকে অফ আছে।বার বার কে যেনো ফোন করে দেখে মৌরি ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলো।সেই থেকে আর খোলে নি অয়ন।অয়ন বিয়ে করে নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছে।সে ভুলেই গিয়েছে তার আসল পরিচয় কি?

অয়ন ফোন খুলতেই দেখে হাজার টা ম্যাসেজ। কলে না পেয়ে মেসেজ করেছে সবাই।অ
অয়ন তা দেখামাত্র ইভান কে রেখেই সাথে সাথে বের হয়ে গেলো।
ইভান তখন অয়নের হাত ধরে বললো, অয়ন থাম।যাস না এখন।আমার কথা শোন।
অয়ন তবুও চলে গেলো।

#চলবে,