#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২৩
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
“কিন্তু তোমার পায়ে কাচের টুকরো ঢুকলো কীভাবে আর কপালই বা ফা*টালে কীভাবে? ”
_তোরা ওকে এভাবে জোঁকের মমতো ধরে বসে আছিস কেন? ওর জ্ঞান ফিরেছে আমাকে বলিস নি কেন!সবগুলো গল্পের আসর বসাইছিস।ও যে এখন পর্যন্ত কিছু খায় নি বেয়া*ক্কেল গুলোর খবর নাই।আঁধার আমার কাছে না গেলে তো জানতেই পারতাম না। বের হহ তোরা।
মায়ের কড়া কথাগুলোতে তারা তিনজন বেড ছেড়ে সোফায় জায়গা দখল করে নিল।মা এসে আমার পাশে বসলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
_কেমন লাগছে এখন? আর পা কাট*লো কিভাবে?
_ফ্রেম ফ্লোরে পড়ে ভে*ঙে গেছিলো হয়তো। আমি বেখেয়ালিতে না দেখে পা’রা দিয়ে দিয়েছি।তখন কপালে কিছু র সাথে লেগেছিলো।
_এতো বেখেয়ালি হলে মেয়েদের চলে না মা। নিজের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো!দেখি হা করো,আবার মেডিসিন নিতে হবে। তাড়াতাড়ি
আমার খাওয়ার মাঝেই আঁধার রুমে ঢুকলেন। মা তাকে দেখেই বললেন
_তোমার খাবার এখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো নাকি নিচে যাবে?নাকি আজকে উপোস থাকার ইচ্ছে আছে!বুড়ি বয়সে আমাকে আর কতো জালাবা তোমরা!
_তুমি নিচে খাবার রেডি করো।আমি শাওয়ার নিয়ে নিচে আসছি।
এ কথা বলে তিনি ওয়াশরুমে দরজা লাগিয়ে দিলেন।
সন্ধ্যার পর নিচ থেকে অনেক শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমার ওয়াশরুম যাওয়া প্রয়োজন কিন্তু রুমের আশেপাশে কেউ নেই যে আমাকে একটু ধরে নিয়ে যাবে।অনেক সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু কারো দেখা নেই।তাই নিজেই চেষ্টা করে উঠলাম। ডান পা টা নাড়ার শক্তি পাচ্ছি না। তারপরও একপায়ের উপর ভর দিয়ে আগানোর চেষ্টা করতেই কাটা জায়গায় প্রচন্ড ব্যথা লেগে পরে যেতে নিলেই একখানা শক্তপোক্ত হাত আমার কোমড় আগলে ধরলো। আমি চোখমুখ খিচে রয়েছি। পায়ের তালু থেকে আবার ব্লি*ডিং হওয়া শুরু হয়েছে। তখনই সেই চিরচেনা গম্ভীর গলার স্বর শুনতে পেলাম,
_তোমার কি একটুও আক্কে*ল জ্ঞান নেই!কাটা পা নিয়ে ফ্লোরে নেমেছো কেন।আমি না ধরলে তো এক্ষুনি পড়ে যেতে।দেখো ব্যান্ডেজ থেকে আবার র*ক্ত গড়াচ্ছে।
আমাকে ধরা অবস্থায় বললেন আঁধার
_আপনাকে ধরতে বলিনি আমি।পড়লে পড়তাম। দেখি ছাড়ুন আমাকে আমি ওয়াশরুমে যাবো।
সে আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আমায় ধরে বেডে বসিয়ে দিলেন। পায়ের ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে কোলে তুলে নিলেন। আমি হক*চকিয়ে উঠলাম। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে বললাম,
_আরে আমাকে ধরে নিলেই তো হতো। নামান।আপনার এরকম ডং আমার বি*রক্ত লাগছে। প্লিজ নামান আমাকে
সে পুনরায় আমাকে অগ্রাহ্য করে ওয়াশরুমের সামনে এনে আমরা নামিয়ে দিয়ে বললেন
_মহারানী আপনাকে যেহেতু আমি ফেলেছি তাই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমার এরকম ডং আপনার বিরক্তি লাগলেও সহ্য করতে হবে।
আমি তো নিজে নিজেই পড়েছি আর উনি ভাবছেন তার ধা*ক্কায় পড়েছি।তাই অনু*শোচনা হচ্ছে তার!
_দেখুন আমি আপনার ধাক্কা*য় পড়িনি। নিজের দোষেই পড়ছি তাই আপনার এতো দয়া দেখানো লাগবে না। এ কথা বলেই আমি ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম।
বের হয়ে দেখি এখনো তিনি দাড়িয়ে আছেন। তাই বললাম,
_আমাকে ধরে নিয়ে চলুন। আসমানে তোলা লাগবে না।
কিন্তু এই বনমোরগের তো ঘাড়ের সব-কয়টা রগই ত্যাড়া। আবার আমায় শূন্যে তুলেই বিছানায় বসিয়ে দিলেন।
_তোমায় আসমানে তুলি নি,কোলে নিয়েছি।পায়ের ব্যান্ডেজ মাত্র লাগিয়েছি বেশিক্ষণ হাটলে আবার ব্লিডিং হবে।তাই আর নিচে নামার দরকার নেই। নিচে মেহমান আছে তাই মা আসবে না এই রুমে। রোজা খাবার নিয়ে আসলে দয়া করে খেয়ে নিবেন, মহারাণী।
এ কথা বলে তিনি নিচে চলে গেলেন।
____
_পিচ্চি জানো তোমার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে তুমি আলোর বরকে দেখতে পেলে না!ছেলে সেই!
মানে কি! আলো আপুর বর কোথা থেকে আসছে! তাই রোজা আপু কে জিজ্ঞেস করলাম,
_আলো আপুর বর কোথা থেকে আসছে। ওই রবিন না ববিন জেলে।
আমার কথা শুনে হেসেই রোজা আপু বললেন,
_আরে ওই হা*রামজাদা না।আজকে আলোকে দেখতে এসেছে।তুমি ছেলের বাবাকে চিনো।তোমাদের ভাসিটির প্রিন্সিপাল এর ছেলে।মামা আর ভাইয়ার নাকি পরিচিত তাই একেবারে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে গেছে তারা।বিয়ে সাত দিন পরে।ঘরোয়া ভাবে এখন বিয়ে হবে। আলোর এক্সাম এর পর রিসিপশন হবে। ততদিন আলো এখানেই থাকবে। আজ আংটি বদল ও হয়ে গেছে।
_আলো আপু রাজি হয়েছে?এতো তাড়াতাড়ি সব কীভাবে হলো?
_আরে হবে না কেনো রাজি!মামার কথার উপর ধ্রুব ভাইয়া কথা বলতে পারে না আর আলো তো দুধভাত। তাছাড়া ছেলে ভালো,শিক্ষিত, বিশ্বাসযোগ্য।নিজের ডিজাইন হাউজ আছে, দুটো কোম্পানির ওনার তাই আলো র না করার রাস্তা নেই।আমাকে ভাত খাইয়ে দিতে দিতেই বললেন রোজা আপু
আমিও চিন্তা মুক্ত হলাম। আগের টার মতো অন্তত চরি*ত্রহীন পুরুষ নয়।loyal মানুষের সাথে কুড়েঘরে থেকেও শান্তি আছে।আপুর মানসিক কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
আমি টিভি দেখার কথা বলে রোজা আপুর সাহায্যে সোফায় এলাম। রোজা আপু আমার সামনে মেডিসিন আর পানি দিয়ে চলে গেছেন। আমিও খেয়ে সোফায় শুয়ে পরলাম। বিছানায় উনার পাশে ঘুমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কতদিন পর তার রাস্তা আর আমার রাস্তা পুরোপুরি আলাদা। তাই এতো আদিক্ষেতা মোটেও আমার ভালো লাগছে না। তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই। পরে তাকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হবে।
___
আঁধারের আজ ভীষণ ব্যস্ততা। প্রিন্সিপাল স্যার এর আসার কথা সে জানতো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তারা বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবে তা তার ধারণার বাহিরে ছিলো। যার দরুন তাকে আজ থেকেই কাজের চাপ সামলাতে হচ্ছে।রাতের খাবার পাট চুকিয়ে সে রুমে এসে দেখে ঐশী সোফায় ঘুমাচ্ছে। এতে তার মেজাজ বিগড়ে গেল।
_এই মেয়ে জীবনে ও শোধ*রাবে না। মানা করার পরও ত্যাড়ামি করবেই। দিন দিন সাহস তার লম্বাই হচ্ছে।ইচ্ছে তো করছে থাপড়ে দাত ফেলে দিতে।কাটা পা নিয়ে লাফালাফি করতেই হবে।
আঁধার গিয়ে ঐশীর পা চেক করে দেখে ঠিক আছে। রক্ত চোয়াচ্ছে না।তাই সে সাতপাঁচ না ভেবে কোলে তুলে নিলো।
ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি।চোখ মেলে হত-বিহবলতার চূড়ান্ত পযার্য়ের চলে গেলাম।কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঁধার কে নিজের খুব কাছে আবিষ্কার করলাম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি,খাড়া নাক,পুরু ঠোঁটের সেই সুদর্শন পুরুষ কে সজ্ঞানে নিজের এতো কাছে দেখে অযাচিত চিন্তা ভাবনা নিজের মস্তিষ্কে বাসা বাধলো। নিজেকে সংযতচিত্তে কিছু বলতে যাবো তার আমায় বিছানায় রেখে বললেন,
_তোমার সাহস কি করে হয় এতো ত্যারা*মো করার। আমার কথা অগ্রাহ্য করছো।তোমায় সোজা কি করে করতে হয় তা এই আঁধার রেজোয়ান চৌধুরীর খুব ভালো করে জানা আছে।
দাতে দাত খিচে সে কথা গুলো বললেন। এমন রে*গে কথা বলার আগা মাথা কিছুই খুঁজে পেলাম না। তাই কোনো রকম জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,
_আমাকে এখনে এনেছেন কেনো!আমি সোফায় ঘুমাবো।এতো দিন যখন সোফায় ঘুমানো তে আপনার সমস্যা হয়নি তবে আজও হবে না
।এইকথা বলে আমি উঠতে যাবো তার আগেই তিনি বিছানায় আমাকে চেপে ধরলেন। কালক্রমে আমি অবাক হওয়াটাও ভুলে যাচ্ছি।আমাদের মাঝের দূরত্ব ক্ষীণ হয়ে এলো।আমার জেদ,রাগ সব এক অজানা অনুভূতিতে রুপান্তর হলো। তার সেই রাগা*ন্বিত দৃষ্টির সাথে আমার দৃষ্টি বিনিময় হলো। চোখে চোখ রেখেই বললেন
_তুমি এখন থেকে এখানেই ঘুমাবে। বিছানা থেকে নামলে পরের পা টাও আমি ভে*ঙে দেব।
#চলবে
#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২৪
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
_আমাকে ছা*ড়ুন। দুদিন পর আপনি এক রাস্তায় আর আমি অন্য রাস্তায় । তাহলে এতো অধিকার দেখাচ্ছেন কেন আপনি?
আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই বললাম।
_প্রথমত তুমি এই মূহুর্তেও আমার বউই আছো।আমাদের পথ আলাদা হবে তার ডিসাইড তুমি একা করবে না।যেদিন তোমায় বিয়ে করেছি সেদিন থেকে তোমার উপর সম্পুর্ন অধিকার আমার রয়েছে সো তোমার বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না, আমার ঠিক কতটুকু অধিকার রয়েছে। আমি আমার অধিকার এর ক্ষু*দ্রাংশ ও এখনো দেখাই নি। তুমি আমাকে সীমা*ল*ঙ্ঘন করতে বাধ্য করো না।পরবর্তীতে সামলাতে পারবেনা।
আমি সত্যিই অবাক হওয়া ভুলে গেছি। তার কথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।কি চায় উনি!বিবশ,বিমূঢ়*তা যেনো আমার শরীর টাকে বোধহীন করে তুলল।তিনি যেন কিয়ৎকাল অপলক দৃষ্টি বিনিময়ে তার নেত্রপল্লব এর তৃ*ষ্ণা মিটাচ্ছেন। আঁধার চটজলদি নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আমায় ছেড়ে দেয়।পাশের বালিশখানি ঠিক করে শুয়ে পরে।
কিন্তু আমায় হৃদয়খানা আদ্রতাশূন্য। সে শুয়ে আছে নড়াচড়া বিহীন। আমি এখনো তার কমকান্ডের কথা ভাবছি।আমার মাঝ থেকে দ্বীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।এই মানুষ টা কেনো বারবার কাছে এসে মনে প্রনয়ের ঝড় তুলে। কেনো আমায় এলোমেলো করে দেয়!এভাবে আমি যে তাকে ভালোবেসে ফেলছি এটা কেনো সে বুঝছে না।আমায় তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ভাবলাম কিছুদিন বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আসবো। তারপর ভাইয়ার বাসায় চলে যাবো। এমনিতেই আড়াই মাস কেটে গেছে। বাকি তিন মাস তাড়াতাড়ি শেষ হলেই মুক্ত। আচ্ছা উনার এতো পরিবর্তন কেন হচ্ছে। উনি কি সম্পর্ক টা কে মেনে নিয়েছেন!না,,তা কি করে হবে!সে তো অন্য জন কে পছন্দ করতো। সে তার প্রেমিকাকে হারিয়ে ফেলেছেন। যদি পায় তখন তো এই সম্পর্ক টা এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। তার থেকে বরং আমি নিজ থেকেই সরে যাই।
হঠাৎ পিছন থেকে তিনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন, আচমকা তার এমন স্পর্শ পেয়ে আমি কেপে উঠলাম।ঘাড়ে উষ্ম নিঃশ্বাস পড়ছে তার। আমি কিছু বলবো তার আগেই আঁধার বললেন,
_sorry,, ঐশ্বর্য। আমি সকালের আচরণ এর জন্য ভীষণ দুঃ*খিত।ছবিটা টেবিলে দেখে কিছু তি*ক্ত স্মৃতি মনে ভয়াবহ রাগ সৃষ্টি করেছিলো। তাই তোমায় আ*ঘাত করেছি।আমায় ক্ষমা করে দাও।
তার কথায় আমার মন ক্ষুন্ন হলো। তার প্রেমিকার ছবি ছিল হয়তো তাই ওইরকম রিয়েক্ট করেছে।
_ক্ষমা চাইতে হবে না।আমি সত্যিই আপনার দারা আ*ঘাতপ্রাপ্ত হইনি।ভুলটা আমারই। ছবিটা হয়তো অতিমূল্যবান ছিল। আমার ধরাটা উচিত হয়নি।দেখি ছাড়ুন আমাকে।
একথা বলে আমি তার হাত সড়ানোর চেষ্টা করতেই তিনি বাধন আরও শক্ত করলেন। এইবার আমার ভীষণ অস*স্তি হচ্ছে।ধুর, কি জালায় পরছি। এর কি সমস্যা। ব্যাটার আসলে চরিত্রেই সমস্যা।মানলাম আমি এখনো তার বউ।তাই বলে এভাবে চিপকে থাকতে হবে! বিয়ের রাতে তো কত কথা শুনিয়েছে।আর এখন বউ বউ বলে মাথা খাচ্ছে!তার তো প্রেমিকা আছে তাহলে কেনো এভাবে ঘ্যাসাঘেসি করে!
আমি তাকে ছাড়াতে না পেরে তার দিকে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি তার চোখে জল চিকচিক করছে। এবার আমার মায়া হলো খুব।আমার চোখে চোখ রেখেই তিনি বললেন,
_তুমি যেই ছবি টা এনেছিলে তা আমার জন্মদাত্রী মায়ের ছিল। এক সময় আমার প্রাণ ছিলো সে।এক মূহুর্ত তাকে ছাড়া আমার চলতো না।ভীষণ ভালোবাসতাম তাকে।
তার কথায় আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।কি বলছেন উনি!
_তাহলে মা!উনার সাথে তো মায়ের চেহারার কোনো মিল নেই।ছবির মেয়েটি যদি আপনার মা হয় তাহলে উনি কি বেচে নেই, ডাক্তার সাহেব?
_মা হচ্ছেন বাবার দ্বদ্বিতীয় স্ত্রী। আমি তার আপন ছেলে নই।আলো হচ্ছে মায়ের একমাত্র মেয়ে।আমার জন্মদায়িনী নারী বেচে আছেন।
_কোথায় তিনি?
_পরবর্তী স্বামীর বাসায়। আমার বয়স যখন প্রায় ছয় বছর তখন বাবাকে ডি*ভোর্স দিয়ে উনি আমাদের ছেড়ে চলে যান তার প্রেমিক পুরুষ এর সাথে। আমি তো তখন তাকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। তাই সারাক্ষণ বাবার কাছে বায়না করতাম তার কাছে নিয়ে দিয়ে আসার জন্য। বাবা আমাকে সামলানোর জন্য মাকে বিয়ে করে আনে। কিন্তু আমি মাকে মোটেই সহ্য করতে পারতাম না। ভাবতাম উনার কারণে হয়তো আমার আপন মা আমায় ছেড়ে চলতে গেছেন। উনি আমার কাছে আসলেই ভাং*চুর করতাম। ভীষণ রেগে যেতাম। একবার তো উনাকে আঘাত পর্যন্ত করে বসেছি।বাবা সেদিন ভীষণ বকা দিয়েছিল।
।একদিন স্কুলের গেটের সামনে আমার আপন মাকে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম তাকে। তিনি আমাকে জোড়েই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো আমার জড়িয়ে ধরা টা তার ভালো লাগেনি।চলেই যাচ্ছিলো। আমি আবার গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে যেতে দিবো না বললাম। সে আমাকে তার থেকে ছাড়ানো চেষ্টা করেও পারছিল না।তার পাশে একটা লোক এসে দাড়াতে তিনি আমাকে জোর করে ছাড়িয়ে গালে কষে দুটো থাপ্পড় মেরে লোকটা সহ চলে গেলেন।আমি বুঝতেই পারলাম না সে আমায় কেনো মারলো।বাসায় গিয়ে বাবা ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম। বাবা আমার কান্নার কারণ শুনে নিজেও কেদেছেন সেদিন।মা সেদিন আমার কাছে সাহস করে এসে জড়িয়ে ধরলেন। আমার চোখের পানি মুছে দিলেন। আমি সেদিন এর পর থেকে তার সাথে খারাপ আচরণ করিনি।তবে সেদিন থেকে ঐ নারীর কোনো জিনিসপত্র দেখলে আমি ভীষণ রেগে যেতাম। ভাংচু*র করতাম।তাই বাবা উনার সব জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেছেন। তুমি কিভাবে ছবিটা পেলে জানি না।সেটা দেখেই তোমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি।
I am really sorry for that..
তার কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। ছোট থেকে আমি ও আমার মায়ের কাছ থেকে অনেক বকা শুনেছি, মা*র খেয়েছি।অভ্যাস হয়ে গেছে মায়ের খারাপ আচরণ এর সাথে তবুও মায়ের সাথে ছিলাম । কিন্তু উনিতো হঠাৎই সবচেয়ে বড় মানসিক আঘাত টা তার প্রিয় মানুষের থেকে পেয়েছেন।উনার ক*ষ্ট টা আমার সাথে মিলে।আপন মায়ের অবহেলা আমাকে সবসময় তিলে তিলে কষ্ট দিতো কাউকে না বলতে পারতাম আর না সেই পাষাণ মাকে বোঝাতে পারতাম। তার অতীত শুনে কেন যেন আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।বারবার আমাকে করা মায়ের অবহেলা গুলো মনে পড়ছে
কেনো যেন আমি তাকে জ*রিয়ে ধরলাম কে*দে দিলাম। কেনো করলাম কাজটা জানি না। তবে আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করছে।কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টেরই পাই নি।
—
দেখতে দেখতে ছয়দিন কেটে গেছে। আমি যতটা তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছি তিনি তার চেয়ে বেশি আমার পাশে থেকেছেন। আপুর বিয়ের এতো ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমার খেয়াল রাখতে ভুলে নি।তার প্রতিটা কাজ আমাকে মু*গ্ধ করেছে। না চাইতেই তাতে আসক্ত হয়ে পড়েছি আমি।
আজ সন্ধ্যায় আপুর বিয়ে। বিয়েটা যেহেতু ঘোরোয়া ভাবে হবে তাই তেমন কাউকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। তারপরও কম মেহমান হয় নি।সব বাবা মায়ের নিকট আত্নীয়দের আসতে বলা হয়েছে। গায়ে হলুদের দিন এতো বেশি মানুষজন দের দেখি নি যতটা আজ দেখছি।আমি নিজের রুম গোছাচ্ছিলাম। কারন,আপুর রুমে মেহমান ভর্তি তাই রোজা আপু, কলি আপু আর তাদের আরও কাজিন রা মিলে এই রুমের অবস্থা কেরোসিন করে রেখেছে।আপু কেবল গোসলে গেছে। তাই এই আপদ গুলো মাত্র রুম থেকে বিদায় নিছে।রুম গোছানো প্রায় শেষের দিকে তখনই মা রুমে এসেছেন,
_ঐশী, তুমি এখনো গো*সল করো নি যে,আমি আরও তোমার জন্য আর আলোর জন্য লেহেঙ্গা নিয়ে আসলাম।
_এইতো মা, আলো আপু বের হলেই আমি যাচ্ছি।ততক্ষণে আমি রুমটা গুছিয়ে নি মা
__তাড়াতাড়ি করো। এখুনি পা*র্লার এর লোকজন এসে পরবে।
একথা বলে মা চলে গেলেন। আমি ওয়াশরুমের দরজা টোকা দিয়ে বললাম,
_আপু আর কতক্ষন থাকবা বাথরুমে! শেষে দেখা যাবে ভোর ভাইয়া বরযাত্রী নিয়ে চলে এসেছে অথচ তুমি তখনও বাথরুমেই রয়ে গেছো।
বাথরুমে বসেই কবুল বলার ইচ্ছে আছে নাকি!
আপু বের হয়েই আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।আমি তার তাকানো দেখে হেসে দিলাম।
_বড্ড জালাচ্ছিস পাটকাঠি,, ভাইয়ের কাছে নালিশ করতে হবে মনে হচ্ছে!
_তোমার ভাইকে ভয় পাই না গো, আপুউ
তখনই রোজা আপু এসে বললো
_পার্লার এর লোকজন চলে এসেছে আর তোমরা এখনো এখানে। আলো আমি তোর রুম খালি করেছি। ওখানেই তোকে সাজানো হবে।তাড়াতাড়ি লেহেঙ্গা পড়। ঐশী, তুমি এখনো শাওয়ার নেও নি কেন? তুমি সাজতে পরে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।
__আমি উনাদের কাছে সাজবো না, আপু।ভারি মেকাপ আমার ভালো লাগে না।বিয়ে আপুর আমি এতো সেজে কি করবো বলো।আচ্ছা তুমি আপুর ড্রেস পড়তে সাহায্য করো আমি গেলাম
শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে দেখি আপুরা নেই।আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে হালকা সেজে নিলাম। চুল ভিজা তাই ছেড়ে দিলাম।কিন্তু বিপাকে পড়লাম পিছনে ফিতা বাধতে গিয়ে। কিছুতেই নাগালে আসছে না।চুল সামনে এনে চেষ্টা করছি। কিন্তু ফলাফল শূন্য
ভীষণ ব্যস্ততা মধ্যে আছে আঁধার। কিছুক্ষণ আগেও শপিংমল থেকে এসেছে।এখন আবার কিছু জিনিস পত্র আনতে হবে।রুমে গাড়ির চাবি নিতে এসে সে থমকে গেলো। এই মেয়েটা কি তাকে মূহুর্তে মূহুর্তে হৃদযন্ত্রনা দিয়ে মে*রে ফেলবে নাকি!মাথা টা ফাকা ফাকা লাগছে তার। হৃদয়ে অসম্ভব পী*ড়া হচ্ছে।নি*ষিদ্ধ কামনা মনে বাসা বাধছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়াকন্যাকে গভীর ভাবে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।মায়াকন্যা যেন তার মায়ারাজ্যের দুয়ার খুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার পায়ের নূপুরের ঝং*কার কানে বাজছে। মায়াময় মানবীকে আঁধারের শুধাতে ইচ্ছে করছে…..
চলবে