অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব-২৭+২৮

0
585

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২৭
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

_ছাড়ুন আমাকে,একদম ছো*বেন না।আর কি যেন বলেছেন! আমার ছেলেদের সাথে হাসাহাসি করতে ভালো লাগে!তাহলে শুনুন,হ্যাঁ, আমার এই কাজটা ভীষণ ভালো লাগে।আমার মুখ। আমার ইচ্ছা একশো এক বার হাসবো। দাত বত্রিশটা বের করে হাসবো। আপনার তাতে কি? আজাইরা প্যা*চাল করতে আসছে।সরুন, আমাকে ওই রুমে যেতে দিন

একথা বলেই আঁধারের দিকে তাকাতেই জমে গেলাম আমি।নাকের আগা প্রচন্ড লাল হয়ে আছে তার,কপালের রগ গুলো ফুলে আছে।গলার শিরার সাথে কম্পমান কণ্ঠনালী সবাটাই পরোক্ষ করে তাকালাম তার ক্ষুব্ধ অগ্নি*শর্মা চেহারার দিকে।ঢোক গিলে আমতা আমতা করে আরও কিছু বললো তার আগেই সে বলল,

_তোমার ইচ্ছা তাই তো??

_হ্যাঁ, আমার নয়তো আর কার হবে।

আমতাআমতা করে বললাম। আমার কথা শুনে সে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে আসলেন। তার আগানো মোটেও সুবিধার লাগছিলো না আমার।আমি পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম।উনি আমার খুব নিকটে এসেই দাড়ালেন।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আমার গলা থেকে ওড়না টেনে খুলে নিলেন। তার এই কাজে আমি হতবিহ্বল।দু হাতেই নিজেকে কোনো রকম ঢাকার চেষ্টা করে বললাম

_এইগুলা কোন ধরনের অস*ভ্যতামি ? ওড়না দিন।

আমার কথা যেন তার কানেই গেলো না।ওড়না হাতে পেচিয়ে বললেন,

_ওই রুমে যাবা না? ওড়না ছাড়াই এভাবে যাও।

একথা বলে আমার ওড়না কাবার্ডে রেখে তা লক করে দিলেন।

_আশ্চর্য, আপনি আমার ওড়না ওখানে রেখেছেন কেনো? আপনার সমস্যা কোথায়? আমার জিনিস নিয়ে টানাটানি করছেন কেনো?

_বউ আমার,, ইচ্ছেও আমার আর বউয়ের ওড়না টাও আমার।

তার ভাবলে*শহীন উত্তর শুনে বুঝতে পারলাম আজ ওই রুমে আর আমার যাওয়া হবে না।এক রাশ মেজাজ খারাপ নিয়ে বারান্দায় গেলাম শুকাতে দেয়া কাপড় আনতে। এখন এই টি শার্ট আর প্লাজো টাই পরতে হবে।ফ্রেশ হয়ে দেখি রুমের লাইট নিভানো।সোফার উপর টেবিল উঠানো নেই।আমি নিশ্চিন্তে আজ সোফায় ঘুমাতে পারবো। এতোদিন এই হনুমানটা ইচ্ছে করে সোফা আটক করে রাখতো তাই অনিচ্ছায় বেডে ঘুমাতে হতো আমায়।আবছা আলোয় নিজের বালিশখানা চোখে পড়লো। সেটি নিতেই আঁধার আমায় টেনে তার বুকের উপর ফেলে জরিয়ে ধরলো,

_আরে,এভাবে নিজের উপর ফেলেছেন কেনো?দেখি ছাড়ুন আমাকে।

_ছাড়ার জন্য ধরি নি। চুপচাপ ঘুমাও।

তার কথা আমার অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

_দম আটকে আসছে আমার এভাবে কিভাবে ঘুমাবো।ঘুম আসবে না আমার।প্লিজ ছা*ড়ুন

আমার মাথাটা এক হাতে তার বুকে জড়িয়ে রেখে বললেন

_সোফায় কথা মাথায় আনার আগে এটা হাজার বার ভাবা উচিত ছিলো। এটা তোমার শা*স্তি। সারারাত এভাবেই ঘুমাতে হবে তোমায়।বেশি পক পক করে আমার রা*গ বাড়িও না নয়তো ব্যাপার টা তোমার জন্যই খারাপ হবে।আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কিসের কথা বলছি।so,ঘুমাও।

তার ঠান্ডা কথার হুমকি তে নড়াচড়া বন্ধ করে দিলাম আমি।ডিপ ডিপ তার হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আমি যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছি। কি হচ্ছে! কেন হচ্ছে!এসব কিছুই জানার আগ্রহ পাচ্ছি না।সময় টা কে অদ্ভুত ভালো লাগছে। তার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে।যা তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন আমার মাঝে।এই অনুভূতির মায়াজাল থেকে একদম বেরোতে ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটাকে বোধহয় আমি ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেললাম তাহলে।



এভাবেই কেটেছে কিছু দিন। আমার আর আঁধারের সম্পর্ক একেবারেই বন্ধুর মতো। তবে সে রেগে গেলে অন্য ব্যাপার। আলো আপু আর ভোর ভাইয়ার সম্পর্কটা অনেক ভালোবাসা ময়।ভাইয়া আপুকে ভীষণ ভালোবাসেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো বাহানায় বাসায় চলে আসেন আপুর সাথে সময় কাটাতে। তাদের খুনসুটি দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।

আপুর ফাইনাল পরীক্ষা আমার ইনকোস পরীক্ষার কিছুদিন পর। তাই আপাতত সে চিন্তা মুক্ত। কিন্তু আমি এক মহা ফ্যাসাদে আছি।বিয়ের ঝামেলার কারণে কিছুই পড়া হয়নি।অথচ কোনো প্রিপারেশন ছাড়াই পরীক্ষা দিতে এলাম।ডিপার্টমেন্টে ঢুকতেই মিম আর বেলার সাথে দেখা,

__কিরে বিশ্বসুন্দরী,, এত দিন পর কোন চিপা থেইকা বাহির হইসোস?

_আরে ভাই,তোরা তো জানোস না অনেক ঝামেলা শেষ কইরে পরীক্ষা দিতে আসছি।এখন সর রুম খুজতে দে আমারে,পরে বলবো,, সর

আমার তাড়া দেখে বেলা বললো,

_এতো প্যারা নিচ্ছোস কেন!তোর রুম ৩০৪ এ পড়ছে।প্রথম সারির সেকেন্ড বেঞ্চে সিট। আমরা খুজে রাখছি তুই মহারানী ভিক্টোরিয়ার মতো বইসা পরীক্ষা দিস।এবার বল,এতদিন হাওয়া হইছিলি কেন??

আমি দুই শয়*তান কোম্পানির ম্যানেজার রে আপুর বিয়ের কথা শুনালাম।

_এদের বিয়ের জন্য আমি কোনো প্রিপারেশন ছাড়াই পরীক্ষা দিতে আসছি,বেলাভূমি। আমি হতাশার সুরে বললাম

_তাহলে এই জন্যই প্রিন্সিপাল স্যার কলেজ এ এতদিনের আসে নাই।কিন্তু আলো আপুর বয়ফ্রেন্ড আর প্রিন্সিপাল স্যার ছেলে তো আলাদা! আপুর কি বিয়ে ভেঙে গেছিলো?

_রবিন ফ্রড ছিলো। চিট করছে আপুর সাথে।তাই তাদের ঠিক হওয়া বিয়ে আপু নিজেই ভেঙে দিসে।

অতঃপর ওদের পুরো কাহিনি এ টু জেড বলে এক্সাম হলে গেলাম।

সন্ধ্যা পরে,,নাস্তা করার পর যে যার যার কাজে ব্যস্ত। বাবা বাসায় নেই।কোম্পানির নতুন ডিল করতে তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়েছে।

নীল ভাইয়া,কলি, রোজা আপু উদয় আর আরাফ ভাইয়কে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে সীমের বিচির খোসা ছাড়াচ্ছে।তারা বেকার সমাজ তাই মেঝো মা তাদের এই কাজ সঁপে দিয়েছেন ।মা আর মেঝো মা আমার পাশেই বসে ফোনে খবর দেখছেন।সন্ধ্যার পর সবসময় ড্রইং রুমে টিভি তে খবর দেখেন কিন্তু আমি পড়ছিলাম তাই আজ ফোনে দেখছেন। মেঝো মা ছোট চাচীর বিপরীত,, একদম আমার শাশুড়ী মায়ের মতো।এই কয়েক দিন আমার তার সাথে খুব গভীর সখ্যতা গড়ে উঠেছে। উনি প্রতিদিন ভাত মেখে তার প্লেট থেকেই আমাকে খাইয়ে দেয়। উদয় আর আরাফ ভাইয়া এই নিয়ে আ*ক্ষেপ করলেও মেঝো মার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমার শাশুড়ী ও এই নিয়ে কিছু বলে না বরং তাকে খুশি ই মনে হয়।মাঝেমধ্যে আমার তাদের নিজের আপন মা মনে হয়।আল্লাহ আমাকে আমার মায়ের অবহেলা পরবর্তীতে এই দুজন মা উপহার দিয়েছেন।

আমার কালকে দুই সাব্জেক্ট একসাথে পরীক্ষা। আমি আর আপু ড্রইং রুমকে পুরাই বইয়ের গোডাউন বানাই ফেলছি।পুরো দমে পড়াশোনা করছি।যাতে কোনো রকম পাশ নাম্বার তুলতে পারি।এখানে খারাপ করলে ফাইনাল দিতে দিবে না। তাই জীবন দিয়েও পাশ নাম্বার তুলতে হবে।

পড়ার মনোযোগ এর বাশ স্বরুপ দরজার কলিং বেল টা এমন ভাবে বাজছে,মনে হচ্ছে,এটা প্রবেশ এর দরজা না টয়লেট এর দরজা ,বাহিরে থাকা ব্যক্তির ইমারজেন্সিতে হাগু পাইসে।বই হাতে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলাম দরজা খুলতে।আরে ভাই আর বাজাইছ না,,দারা,ভিতরে থাকা মানুষ গুলো দরজা খুলতে পায়ে হাইটে আসবে,,প্লেনে উড়ে না।এভাবে কলিং বেলটার প্রান নিস না।

দরজা খুলে একজন সাদা বান্দরনীকে দেখবো ভাবতেই পারিনি।দেখিনি এই মেয়েকে আগে কখনো। আপুর বিয়েতেও আসে নি।মেয়ের ড্রেস-আপ একদম ভালো লাগে নি আমার।এর থেকে কলি আপু ভালো টপস পরে অন্তত গা ঢাকা থাকে।

_কে এসেছে,,ঐশী?

মায়ের কথা শুনে আমি সেই মেয়েটিকে আসতে বলে ড্রইং রুমে গিয়ে দাড়ালাম। মেয়েটি রুমে ড্রইং রুমে এসে মা কে সালাম জানালো।তাদের কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম মেয়েটা সবার পরিচিত। ততক্ষণে বেকার সমাজ ও ড্রইং রুমে উপস্থিত হলো।

আঁধার সিড়ি দিয়ে নামতেই সাদা বান্দরনীটা তাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি সহ বাকিরা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি। এই দৃশ্য কিছুটা কাটার মতো আমার গায়ে বিধলো।হৃদয়ের পী*ড়ন ক্ষানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন যেন মেয়েটাকে এই মুহূর্তে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে ।কে সে!কি হয় আঁধারের! আর এভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো কেন?

চলবে

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২৮
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

_কেমন আছো,ধ্রুব? কত বছর পর তোমায় দেখলাম!

আঁধার কে ছেড়ে দিয়েই মেয়েটি কথাটা বলল।আঁধার কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি একটু শকের মধ্যে আছেন। আচ্ছা এই মেয়েটা তার সেই প্রেমিকা নয়তো! নাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু আধার কিছুই বললো না।ব্যাপার টার হিসেব মিলছে না।

_হোয়াট অ্যা প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ,নিদ্রা!এত বছর কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?

আঁধারের কথায় পুরোপুরি sure না হলেও কিছুটা কনফার্ম হয়েছি এই নিদ্রা নামক মেয়েটির সাথে তার অনেক আগে থেকেই পরিচয়। কিন্তু এটাই কি তার প্রেমিকা যার জন্য আমায় বিয়ের দিন কলে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছিলেন।আঁধারের প্রশ্ন শুনে নিদ্রা কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বললো

_ধ্রুব, আমি আসলে বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক ডিপ্রেসড ছিলাম।তাই কাওকে ইনফর্ম করা ছাড়াই মাকে নিয়ে ইউকে চলে গিয়েছি।তাই তোমাদের কাঊকে আর জানানো হলো না

_।আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। হয়তো এ-ই জন্যই তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েছি বার বার।

_I am so sorry, একচুয়ালি আমি বাবার হঠাৎ মারা যাওয়া টা আমার উপর ভীষণ প্রভাব ফেলে। ইউকে যাওয়ার সময় আমার ফোন অন্যান্য জিনিস পত্রের তেমন কোনো খোঁজ খবর ছিলো না।মায়ের অবস্থা টাও আমার মতোই ছিল তাই সারভেন্ট প্যাকিং যা করেছো তাই পেয়েছি। ফোনের খবর তাই আর নেওয়া হয়নি। ফোনের কারণে তোমাদের সবার নাম্বার আর জোগাড় করা হয়নি।মন খারাপ নিয়েই নিদ্রা নামক মেয়েটি বললো

এরপর নিদ্রার সাথে ড্রইং রুমে সবার আলোচনা চলতে থাকলো।আমি আলো আপুর সাথে তার রুমে চলে আসলাম। এখানে পড়াশোনা কিছুই হবে না।নিদ্রা মেয়েটাকে দেখার পর আমার পড়াশোনার মুডটাও চলে গেছে। ভালো লাগছে না কিছুই। মনটা কেমন বিষিয়ে আছে।

_সতীন কে দেখে মন খারাপ, পাটকাঠি?

আপুর হঠাৎ এহেন প্রশ্নে আমি চমকে উঠলাম।

_কি বলছো,আপু?সতীন টা কোথা থেকে আসলো!

_নিদ্রা আপুর কথা বলছি আমি,ভাইয়ার একসময় এর বেস্ট ফ্রেন্ড। মেয়ে ফ্রেন্ড দের মধ্যে নিদ্রা আপু ইই অনেক ক্লোজড ছিল ভাইয়ার।তাদের দেখে তো সবাই গালফ্রেন্ড -বয়ফ্রেন্ডই ভাবতো।নিদ্রা আপু তো প্রায় আমাদের বাসায় আসতো। আপু যদি UK না যেতো তাহলে তো বাবা তাদের বিয়েই দিয়ে দিতো।তবে জানিস তো তুই ভাইয়ের বউ হয়েছিল এতে আমি ভীষণ খুশি। নিদ্রা আপু অনেক উগ্র তাই উনাকে কোনো কালেই আমার পছন্দ ছিল না।তুই ভাইকে টাইট দিয়ে রাখবি নয়তো ভাই তোর সতীনের পাল্লায় পড়ে যাবে।তাই আমি তোকে অগ্রিম সাবধান করে রাখলাম।

আপুর কথা শুনে আমার খারাপ মন টা আরও এক ধাপ বেশি খারাপ হয়ে গেছে।এই কত দিনে আমি তো তাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি।যদি আঁধারের ভালোবাসা নিদ্রা আপু হয় তাহলে আমার একপাক্ষিক ভালোবাসার কি হবে!




খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।নিদ্রা আপু আমার আর আঁধারের অপজিটের চেয়ারে বসেছে।খাবার মাঝেই মা নিদ্রা আপু কে প্রশ্ন করলেন

_তোমার কি বিডিতে কয়েক দিন থাকা পড়বে, নিদ্রা?

_হ্যাঁ, আন্টি। বাবার বিজনেস টা এতো দিন ম্যানেজার দেখাশোনা করছিলো। তাই ওটার কাগজ পত্র, হিসাব নিকাশ চেক করতে আর অনেক গুলো ডিল ফাইনাল করতে প্রায় সপ্তাহ খানিক লাগতে পারে।তাই কালকেই হোটেল এ শিফট হবে আমায়।

_যতদিন বিডিতে আছো,আমাদের বাসায় থাকো।হোটেল এ একা উঠতে হবে না।

_না না আন্টি এতোদিন এখানে থাকলে আপনাদের সমস্যা হবে।

_কারো কোনো সমস্যা হবে না,নিদ্রা। আমার কথা অমান্য করা আমার একদম পছন্দ নয়। তা তুমি নিশ্চয়ই জানো।তাই এ ব্যাপার এ আর কথা বাড়ানোর দরকার নেই।

মায়ের কথা শুনে আলো আপু আমাকে চিমটি কেটে বললো,

_তোমার শাশুড়ী মনে হয় তোমার সতীনকে পারমানেন্ট ভাবে রাখার ব্যবস্থা করছে।তোমার বর তো তোমার হাত থেকে গেলো, পাটকাঠি।

খাবার শেষে প্রায় সবাই চলে গেছে বেকার সমাজ বাদে, আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। আমার জীবন টা শালা সমস্যার গোডাউন।

_পিচ্চি,, তোমার সতীন নিয়ে একদম টেনশন করো না।আমরা সবাই আছি।আগে যেরকম ঐ শাকচুন্নি কে জালাতাম এখন তার তার ডাবল ডোজ দিবো যাতে একদিনেই আউট হয়ে যায়।

নীল ভাইয়ার কথা শুনে আমি সহ বাকিরা হেসে দিলো ।উনি হাজার চিন্তা করা মানুষ কেও হাসাতে পারে।রোজা আপু বলল,

_নীলক্ষেত তুই পারতিও।সেই বার কি ডোজটাই না দিসোছ বেচারির এক সপ্তাহ পেট খারাপ ছিল।

_নিদ্রা আপুর ব্যাগে তেলাপোকা রাখার বুদ্ধিটাও সেই ছিল। আপু তো তা দেখে সারাবাড়ি লাফালাফি করছিলো।

উদয় আর রোজা আপুর কথায় আমি হতবাক। নিদ্রা আপুর সাথে এদের আবার কিসের এতো শত্রুতা। কি সাংঘাতিক!

_লাগবে না ভাইয়া।উনি মেহমান। বেশি দিন থাকবে না।বাদ দাও। পরে অভিশাপ লাগবে।

_হ্যাঁ, তুই তো এখন শাবানার রোল প্লে করবি।তোর জামাই দুই তিনটা বিয়ে করলেও তুই বলবি,,বাদ দাও,, কিছু করলে অভিশাপ লাগবে।

আলো আপুর কথার বিরোধিতা না করেই আমি খাবার টেবিল ত্যাগ করলাম।

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে।আঁধার ডিভানে বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে।আমি খাটের ওপর বসে পড়ছিলাম।অনেক কষ্ট করে মন বসিয়েছি পড়ায়।তখনই নিদ্রা আপু রুমের দরজা ঠেলে ভিতর এ ঢুকলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

_তোমাদের ডিস্টার্ব করিনি তো,ঐশী?

কমাক্কোল বেডি,,গুরুতরও ডিস্টার্ব করে আবার বলতেসে,”তোমাদের ডিস্টার্ব করিনি তো”।ডং কত!আঁধারের কোনো হেলদোল নেই। সে তার কাজে ব্যস্ত। আরে ভাই,,ল্যাপটপ এ মুখ ডুবাই রাখছোস কেন! সামনে তাকা। দেখ তোর ডারলিং আসছে রুমে।ফুল দিয়া সাগতম জানা।
আমি মুখে পযাপ্ত পরিমাণ হাসি রেখে বললাম,

_একদমি না,আপু।

_পড়ছিলে বুঝি?

চোখেই দেখতেছোস পড়তেছি তারপরও আন্ধার মতোন জিজ্ঞেস করতেছোস কেন!অন্যের জামাই পটানোর ধান্দা(মনে মনে)

_হ্যাঁ আপু, আমার পরীক্ষা তো তাই।

_তোমার পড়ায় ডিস্টার্ব করে ফেললাম। আমি আসলে আঁধারের সাথে বাবার কোম্পানির ব্যাপার এ একটু কথা বলতে এসেছিলাম। if you don’t mind, আমি কি দশ মিনিট কথা বলতে পারি?

আহারে আমার সত্যবাদী মহিলা। এইটুকু বল না যে তোমার জামাইয়ের লগে পিরিত করতে আসছি।গা জ্বলে যাচ্ছে আমার এই মেয়ের নেকামি দেখে।তারপর ও নিজেকে সাভাবিক রেখে বললাম,

_একটু কেন বলবা পুরো কথাই সেরে যাও।তোমার ফ্রেন্ড,কথা বলতেই পারো।এখানে মাইন্ড করার কি আছে!দরজায় দাড়িয়ে আছো কেনো রুমে এসো।বসেই কথা বলো।

আমি বলতে দেরি নিদ্রা আপুর আলোচনা সভা শুরু করতে দেরি হলো না। রাত একটা বেজে চলেছে তারপরও তাদের সেই সভা বহমান। আঁধারও দিব্বি হেসে হেসেই কথা বলছে।আর আমার সামনে থাকলে তার হাসি চিপায় যায় গা।সারাক্ষণ চোখ দুই টারে রাক্ষসের মতো কইরে আমারে ভয় দেখায়,অসভ্য পুরুষমানুষ।




দরজার করাঘাত এ ঘুম ভেঙে গেলো। আলো আপুর গলা শুনতে পেলাম,

_ঐশী, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো।আমার ক্লাস আছে তাই তোকেও আমার সাথে আগে যেতে হবে। বই নিয়ে নিস।ওখানে গিয়ে পড়তে পারবি।

আমি ঘুমঘুম চোখে উঠে বসার চেষ্টা করতেই কোমড়ে টান অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি আঁধার দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছেন তিনি।তাকে ভীষণ সিগ্ধ আর আদুরে লাগছে ।রাতের কথা মনে পড়তেই তার হাত জোর করেই সরিয়ে দিলাম।রাতে এদের আলোচনা শুনতে শুনতে কান পেকে গেছিলো আমার।পড়ার দিকে মন বসাতেই পারিনি। শেষমেস না পেরে মাথার উপর বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।

ব্যাটা ওই নিদ্রার সাথে কি সুন্দর প্রেমালাপ করে এখন আমার কোমড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে, লুচু কোথাকার।তার হাত জোরেই সরিয়ে দিয়েছি ফলে সে পিটপিট করে আমার দিয়ে তাকায়

_কি সমস্যা তোমার? সকাল সকাল আমার হাতের ওপর এভাবে অত্যাচার চালাচ্ছো কেন?দেখছো না ঘুমাচ্ছি!

#চলবে