#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ৩৫
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে কারো নিশ্বাস মুখজুড়ে আছড়ে পড়ছে।চোখ খুলে দেখি আঁধার আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।আমার সাথে চোখাচোখি হতেই ঝটপট উঠে দাড়ালেন।আমি উঠে বসতেই তিনি বললেন,
_বোরখা পড়ে রেডি হও। বেরোবো আমি।
তার কথা বিপরীতে বললাম,
_আমাকেও যেতে হবে?
_বোরকা পড়তে বলেছি নিশ্চয়ই তোমায় গাছে চড়ার জন্য নয়!বদল! রুমে তুমি ব্যতীত আর কেউ নেই যে তাকে বলবো!
_আমি বাসায় যাবো। আমাকে এখন সেখানে দিয়ে আসবেন। আমি আপনার সাথে থাকবো না।
একথা বলে আমি দ্রুত নিজের বোরখা পরে নিলাম।
।
।
।
গাড়ি চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর উনি একটা শপিংমল এর কাছে গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলেন। আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো কিন্তু উনি ডোর লক করে রেখে গেলেন।কেমন লাগে!ভেবেছিলাম তার চোখ ফাকি দিয়ে পালাবো কিন্তু তার সব রাস্তা উনি বন্ধ করে গেছেন।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর সে কতগুলো শপিংব্যাগ নিয়ে ফিরলেন। আচ্ছা উনি কি আমাকে ঐ বাড়িটায় ব*ন্দী করে রাখবে বলে এতো ব্যবস্থা করছেন। তার মানে উনার সবটাই অভিনয়। এভাবে আর কতো জ্বালাবেন আমায়!আমি তো তাদের জীবন থেকে চলে যেতে চাইছি তাহলে কেন উনি আমার সাথে এমন করছেন! যাইহোক আমাকে এখান থেকে পা*লাতে হবে। থাকবো না আমি এই বদ লোকের সাথে।
উনি গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পূর্বেই আমি বললাম,
_দাড়ান, আমি নামবো। বমি পাচ্ছে আমার।
উনি ডোর খুলে দিয়ে নিজেও সাথে নেমে দাড়ালেন।আমি এবার নিজের করা পরিকল্পনা কাজে লাগালাম। তাকে ধা*ক্কা মে*রে দিলাম দৌড়। আমাকে আর পায় কে।উনি পিছন থেকে ডাকছিলেন কিন্তু আমি তাকে সম্পূ*র্ণ অগ্রা*হ্য করে ছুটে পালালাম।অনেক টা যাওয়ার পর তার শব্দ আর শোনা যায় নি।
এশার আযান দিচ্ছে। আমি কিছুটা দূর পর্যন্ত এসে একটা গলির মধ্যে ডুকে লু*কিয়ে পড়লাম। এই গলিটা অনেক নিরিবিলি। রাতের অন্ধকারে আরও বেশি নিরিবিলি মনে হচ্ছে
এরকম জায়গায় আমার আগে কখনো আসা পরে নি। গলির সামনের কয়েকটি বন্ধ দোকান ফেলে আসার পর দেখলাম গলিতে ঘরবাড়ি নেই একদম। কেমন যেন আ*তংক কর জায়গা।আমি পনেরো মিনিট যাবত হাটলাম। গালিটাকে আমার তেমন সুবিধার লাগছিলো না। তাই বেড়িয়ে আসতে যাবো তখন ই ঘটলো বিপত্তি।
বের হবার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। কোন চিপা রাস্তা থেকে কোনটায় গেলাম মনে পড়ছে না।এলোমেলো লাগছে সবটা। নিজের চিনা এলাকা হলে সুবিধা থাকে।একদম অপরিচিত জায়গায় আমি পালিয়ে ঠিক করিনি এখন বুঝতে পারছি।সামনে কোনো মানুষ পেলে জিজ্ঞেস করা যেত। কিন্তু এখানে তো কোনো মানুষের চিহ্ন ও নেই।আরও কতটুকু যাওয়ার পর ও কোনো লাভ হয়নি। হাটতে হাটতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে তাই একটু দাড়িয়ে জিরিয়ে নিলাম।
।।
।।
আবার হাটতে যাবো তখন টের পেলাম দুটো কুকুর আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।ছোট বেলা থেকেই কুকুর প্রাণী টাকে আমি ভীষণ ভাবে ভয় পাই। আর এখন তো দুইটা।
কোন কিছু না ভেবেই দিলাম দদৌড়। কুকুর গুলো ও আমার পিছনে পরে গেলো। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি কিছু একটার সাথে উস্টা খেয়ে নিচে পড়লাম। আজ হয়তো আর র*ক্ষে নেই। কুকুর কামড় খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে যাবে।ঠিক তখনই রাস্তার পাশের দোকান খোলার শব্দ পাই। তাকিয়ে দেখি তিনজন লোক। দুই জনের হাতে সিগা*রেট। তখন খেয়াল করলাম কুকুর গুলো নেই পিছনে।
সামনের লোক গুলো কে আমার মোটেই সুবিধার মনে হয় নি।বি*শ্রী তাদের চাহনি।আমাকে পড়া থেকে উঠতে দেখে তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো
_মামা,আজকে কি ভাগ্য! পাখি একদম উইড়া উইড়া আমাগো এলাকায় আসছে!
তার কথার ধরনে বুঝতে পারলাম আমাকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে। তার ইংগিত যে খুব খারাপ তা বুঝতেও সময় লাগলো না আমার।
_কি গো ফুলটুসি!ঐ খানে দাড়াইয়া কি ভাবতেছো!আমাগো কাছে আসো। আমাগো আনন্দ দেও।এভাবে বোরকা পইড়া আছো কেন!আমরা খুইলা দিমু তাই!
এইকথা বলেই একজন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
এবার আমার ভীষণ ভয় করছে!আমার নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে!কেন যে পালিয়ে নিজেকে এরকম জঘন্য পরিস্থিতিতে ফেললাম! তার কাছে থাকলে আত্মসম্মান ক্ষুন্ন হতো কিন্তু এখন তো! আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো।
_চলো গো সুন্দরী! তোমারে দিয়া আজ তৃপ্তি মিটিয়ে ছাড়মু নে
একথা বলেই লোকটা আমার হাত ধরতে যাবে তখনই আমি হাতে মুঠোয় নেয়া ধূলো বালি গুলো তার চোখে মেরে আবার ও ছুটে পালালাম।
_ঐ শালিরে ধর।ওর আজকে কি হাল যে করমু।শালি আমার লগে বাটপারি করে!ধর শালিরে!
আমি প্রাণ পনে ছুটছি।নিজেকে কিভাবে বাচাবো সেই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি।
।।
কিছুদূর যাওয়ার পর পিছনে তাদের আসার শব্দ আর পেলাম না।
আরেক টু সামনে যেতেই মেইন রাস্তা দেখতে পেলাম। নিজের কলিজায় এবার পানি এলো। মনে মনে আল্লাহ কে হাজার বার শুকরিয়া জানালাম।
ছুটেই রাস্তার দিকে যাবো তার আগেই একটা হাত আমায় টেনে থাপ্পড় দিলো। থাপ্পড় এর জোর এতটা ছিলো যে আমি ছিটকে পড়লাম। তাকিয়ে দেখি তিনজন লোকই দাঁড়িয়ে বিশ্রী ভাবে হাসছে। থমকে গেলাম আমি। বেচে ফেরার আশাটা মুহূর্তেই নিভে গেলো।গালের ব্যাথাকে উপেক্ষা করে আবার পালাতে গেলাম কিন্তু হলুদ রঙের শার্ট পড়া লোকটা আমার হাত ধরে ফেললো,
_এবার পালাইবি কই,ছেরি?গায়ে তেজ অনেক বেশি তাইনা? তোর তেজ আজকে ভালো মতো মিটামো দেখি কতক্ষণ থাকে এই তেজ।
আমি চিল্লাচ্ছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখানে কোনো মানুষের আনাগোনা নেই একেবারে। তাদের সাথে আর পেরে উঠলাম না। তাদের টানাটানি তে বোরখা পুরো টা খুলে গেছে। হিজাবের টানাটানি তে গলায় ও ব্যাথা পেয়েছি।কিন্তু পিনের কথা মনে আসতেই কৌশলে একটা পিন নিলাম।যেই লোকটা আমার হাত ধরে রেখেছে তার হাতের মধ্যে পিন টা দুই তিন বার ঢুকিয়ে দিতেই সে চিৎকার করে আমার হাত ছেড়ে দিলো।সেই একইভাবে পিছনে ধরে রাখা দুজন কেই পিনের আঘাত করে নিজেকে ছাড়ালাম তাদের কাছ থেকে।
এবার দ্রুত ছুটে রাস্তায় উঠলাম। পিছনে ফিরে দেখি হারামি গুলো আবারও আসছে।আমি সামনে পিছনে না ভেবেই আবার ছুটলাম। হিজাবের পিন গেথে যাওয়ার আর চুল খুলার কারণে ছুটতে অসুবিধা হচ্ছিল তাই ছুটতে ছুটতেই হিজাব খুলে গলায় পেচিয়ে নিলাম। আরও কয়েক টা পিন হাতে রাখলাম আক্রমণ করার জন্য।
পিন হাতে সামনে ছুটতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পিছিয়ে গেলাম।আবার ধরা পরলাম। আজ কি তবে সম্মান এই পশুর জাত এর কাছেই বিসর্জন দিতে হবে! তবে আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো নিজেকে বাচানোর!
পিন দিয়ে আক্রমণ করার জন্য সামনে এগিয়ে তাকাতেই ল্যাম্পপোস্ট এর আলোতে সামনে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টিকে দেখে নিজের জান ফিরে পেলাম। কোনো কিছু না ভাবাই ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম সামনে থাকা ব্যক্তিকে।
আঁধার অনেকক্ষন যাব ৎ ঐশী কে খুজেছে। একবার এই দিকে খুঁজে সে পুনরায় আবার এসেছে।কারণ এখানের গলিগুলো খোঁজ করে নি।একটা গলিতে খোঁজ করার পর সে আরেকটা তে যাবে তার পূর্বেই ঐশী কে এই অবস্থায় দেখে তার নিঃশ্বাস আটকে যাবার অবস্থা। পিছনের লোকগুলিকে দেখতেই ঐশীর অবস্থার কারণ সে উপলব্ধি করতে পেরেছে। এবার তার মেজাজ একেবারেই বিগ*ড়ে গেছে। ঐশী তাকে জরিয়ে ধরে থরথর করে কাপছে। লোকগুলো আঁধার কে দেখে পুনরায় আবার সেই গলির দিকে ঢুকে পড়লো।আঁধার ঐশী কে ছাড়িয়ে গলির সামনে গিয়ে তাদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পেল না।রাগে নিজের গাড়িতে জোরে এক লাথি মার*লো।তবুও তার রাগ কমছে না।সামনে দাঁড়িয়ে ঐশী কে কাদতে দেখে রাগ তার আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে
#চলবে
#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ৩৬
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
_ইচ্ছে তো করছে তোমাকে ক*ষে কয়েকটা থা*প্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিতে, বেয়া*দব মেয়ে।আমি ভালো ব্যবহার করছি দেখে এই কতদিনে অতিরিক্ত পাখা গজিয়েছে তোমার!একে তো অ*ন্যায় করো আবার শাসন করলে বলো জামাই তোমার উপর অ*ত্যাচার করে।তোমাকে রোজ দিনে তিন বেলা খাবার এর সাথে থাপ্প*ড় দিতে হবে। তাহলে তোমার মতো ই*ডিয়ট কে মানুষ বানানো যাবে।
কথা গুলো একদমে বলে আমার বা*হু চেপে ধরলেন আঁধার। এতোক্ষন তার সান্নিধ্যে নিজেকে নিরাপদ মনে করলেও তার রাগা*ন্বিত চেহারা দেখে মুহুর্তেই সেই ভাবনা উবে গেল। মনে পড়লো নিজের করা ভু*লের কথা।সাথে নিজের কা*ন্নার গতিও বাড়লো।
_নিজের অব*স্থা দেখেছো!আমি যদি সময় মতো না আসতাম তখন কি হতো!কোনো উত্তর আছে তোমার কাছে??বোকার মতো পালি*য়েছো কেন আমার হাত থেকে?আমি কি তোমায় তুলে এনে খেয়ে ফেলছিলাম! তোমার এই সামান্য ভুলের কারণে আজ কি কি ঘটে যেত, ধারণা আছে তোমার!তোমার কিছু হলে নিজেকে কীভাবে ক্ষমা করতাম আমি!পাগল মেয়ে!
তার কথায় কিছুক্ষণ আগের পরিস্থিতি মনে পড়ে গেল আমার।গায়ে কা*টা দিয়ে উঠলো। শরীরে ভ*য়ংকর কাপু*নি সৃষ্টি হলো।আল্লাহ বড়জোর বাচিঁয়ে দিয়েছেন আমায়।মানুষটি সময় মতো না আসলে কি ঘটতো তা ভাবতেই রীতিমতো ভ*য় করছে!
কিন্তু যা হয়েছে এতে আমার কি দো*ষ! সব দো*ষ তো উনার।উনার কারণেই তো আমি পালিয়েছি।তারপর এই বি*শ্রীরকম ভয়া*নক পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি।কতটা মানু*সিকভাবে আ*ঘাত পেয়েছি। আমার এমন অবস্থায় কোথায় উনি সহানুভূতি দেখাবেন। কিন্তু না!শয়তান ব্যাটা আবার ও রাগ দেখাচ্ছে! থাপ্প*ড় মারার হুম*কি দিচ্ছে। এই অ*সভ্য লোকের সাথে একদম থাকব না।মনে তার প্রাক্তন প্রেমিকা রেখে আবার আমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য উঠে পরে লেগেছে! বেয়া*দব পুরুষ!!
তাই নিজের ভয় ভীতি কে উপেক্ষা করে বললাম,
_আমি আপনার সাথে থাকবো না তাই পালিয়েছি।আপনার সাথে থাকার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।
উনি আমার বাহু তো ছাড়লোই না বরং টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে সীট বেল্ট লাগিয়ে বললেন,
_তোমাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। এতে তোমার ইচ্ছা থাক বা না থাক, আই ডোন্ট কেয়ার।। বলেছি না, তুমি না থাকলেও বেধে রাখবো। এমনি তেই তিন দিনে আমাকে হাফ পাগল বানিয়ে দিয়েছো আর একটু আগে তো পুরোটাই পাগল করে ছেড়েছো।তাই এক মুহূর্তও তোমাকে চোখের আড়াল করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
তার কথা শুনে মুহূর্তেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, প্রতিবাদের ভাষায় বললাম,
_এতো কিসের অধিকার দেখাচ্ছেন আপনি? আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের ছ’মাস পর ডিভোর্স হবার কথা?তাহলে এখন কেন আপনি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইছেন না।আমার সাথে যখন এতোই সংসার করার শখ তাহলে বিয়ের রাতে আমার আত্মসম্মানহানি করে এরকম কুরুচিপূর্ণ আচরণ করছেন কেনো? পরেরদিন তো গরম কফি ঢেলেছেন আমার হাতে!আবার সেদিন আরাফ ভাইয়া র জন্মদিন এর অনুষ্ঠানে একটা সামান্য ব্যাপার এ খারাপ ব্যবহার করেছেন আবার থাপ্পড় ও মেরেছেন!
আপনার কি মনে হয়! এতকিছুর পরও আমি আপনার মতো বদরাগী,বদমেজাজি আর অসভ্য পুরুষ মানুষ এর কাছে থাকবো? আমাকে কি এতোটাই আত্মসম্মানহীন মনে হয়????
তাছাড়া আপনার তো প্রেমিকা আছেই তারপরও আমাকে ছাড়ছেন না কেন আপনি??
আমি একনাগাড়ে এতো গুলো প্রশ্ন করে হাপিয়ে গেছি। আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমার দিকে ফিরে তার দু’হাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করে বললো,
__ভালোবাসি তোমায়।তাই আজীবন আমার সাথেই থাকতে হবে তোমাকে।বাকী প্রশ্নের উত্তর পরে পাবে।এখন আর একটা কথা মুখ থেকে বের করলে থাপড়িয়ে দাত সব ফেলে দিবো।।
বলেই সে আমার কপালে তার ঠোঁট স্পর্শ করে ড্রাইভ শুরু করলেন ।তার এই কাজে আমি পুরোই শকড হয়ে গেছি।আর তার বলা কথায় তো ভীষণ অবাক! উনি আমাকে ভালোবাসেন!! কীভাবে সম্ভব!! উনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন,, সেই তো তার প্রেমিকা!তাহলে আমাকে কেনো ভালোবাসার কথা বলছেন!! এই ব্যাটার চরিত্রে দোষ আছে।গণহারে ভালোবাসার মানুষ পাল্টাচ্ছেন উনি। বেয়াদ্দপ, অসভ্য, চরিত্রে সমস্যা যুক্ত পুরুষ! এই জন্যই আমি ব্যাটা মানুষদের দেখতে পারতাম না। আর সেই আমিই এই অসভ্য পুরুষে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম! ছ’মাস পর ডিভোর্স জেনেও একতরফা ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে!!ভুল করেছিলাম
।।
।।
।।
।।
মাত্রই গাড়িতে চোখ লেগে এসেছিল কিন্তু রিংটোন এর আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো। মাথাটা এবার প্রচুর ব্যাথা করছে। তাকিয়ে দেখি আঁধারের ফোন বাজছে। কিন্তু ব্যাটা উধাও। আরে ভাই উধাও হবি তো নিজের ফোন নিয়ে উধাও হহ।আরেক জনের বাশ দেওয়ার জন্য এখানে এইটারে রাইখে গেলি কেন। তুই শালা আমি মরলে কবরেও আমারে জালাইতে যাবি।শালা হিটলার,বনমোরগ, শয়তান কোম্পানির ম্যানেজার
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নিদ্রা আপু কল।মেজাজ টা এবার আমার পুরাই খারাপ। এরা প্রেমিক, প্রেমিকা আমার শান্তির বারোটা না বাজাইলে এদের পেটের খাবার হজম হয় না।রিসিভ করবো কি করবো না তা ভাবতেই কল কেটে গেছে। আবার বেজে উঠতেই আমি রিসিভ করলাম,
__ধ্রুব , ঐশীর কোনো খবর পেলে?আমি কালই কল দিতাম তোমায় কিন্তু সময় হয়ে উঠে নি। পেয়েছো কোনো খবর?
নিদ্রা আপুর প্রশ্নে বিরক্ত লাগছে আমার। আরে তোর বয়ফ্রেন্ড আমারে এখানে কিডন্যাপ করে আনছে।আর তুই বেডি এখন জিজ্ঞেস করছ!বিরক্তি নিয়েই বললাম,
_আপু আমি ঐশীই বলছি।আপনার প্রেমিক পুরুষ আমাকে কিডন্যাপ করে নিজের কাছেই রেখেছে। আপনি একটু তাকে বুঝান সে যেন আমার পিছন ছেড়ে আপনাকে বিয়ে করে নেয়
আমার কথার মাঝখানেই নিদ্রা আপু বলে উঠলো,
_কীসের প্রেমিক!, কিসের বিয়ে!তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ঐশী??
__কেন আপনি আঁধারের প্রাক্তন প্রেমিকা না?
আমার প্রশ্ন শুনে নিদ্রা আপু বললেন,
_তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ঐশী। আমি কেন ধ্রুবের প্রাক্তন হতে যাবো!আমি,ধ্রুব আর ভোর তো অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। এখনো আছি।ধ্রুব তো তখন আমাদের ফিমেল ফ্রেন্ডস দের মধ্যে কারো সাথেই রিলেশনশিপ এ ছিলো না।।
আর তাছাড়া তখন তো আমার ফাইজের সাথে রিলেশনশিপ ছিলো। আমরা বিয়ে করেছি যে তিন বছর হবে।তোমার বর তো সবটাই জানে।ও বলে নি তোমায় কিছু?
নিদ্রা আপুর কথায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। আঁধারের প্রেমিকা যদি নিদ্রা আপু না হয়,, তাহলে সে কে!!আমার ভাবনার মাঝেই নিদ্রা আপু আবার বলে উঠলো,
_ঐশী তুমি হয়তো ধ্রুব আর আমার কথাবার্তা আর মেলামেশা দেখে আমাকে ওর প্রেমিকা ভেবে ভুল সন্দেহ করে বসে আছো।আসলে আমাদের ফ্রেন্ডশীপ বন্ডিং টাই এমন।আর আমিও অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম তাই ওখানে এসব কমন ম্যাটার। তুমি হয়তো খেয়াল করছো কিনা জানিনা, আমি কিন্তু ভোরের সাথেও সেইম বিহেভিয়ার করতাম।আচ্ছা এই ব্যাপার নিয়ে কি তোমার আর ধ্রুবর এর মাঝে ঝগড়া হয়েছিল?
আপুর কথায় আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
_না, আপু। অন্য ব্যাপার। আচ্ছা আপু আমার মাথাটা ভীষণ ব্যাথা- করছে।তুমি পরে উনি আসলে কথা বলে নিও।
একথা বলেই আমি কলটা কেটে দিলাম।ভালো লাগছে না। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে
কিছুক্ষণ এর মাঝেই আঁধার ফিরে এসেছে। গাড়িতে উঠে আমাকে তার দিকে ফিরাতেই খেয়াল করলাম তার হাতের জিনিসপত্রগুলো ।তাহলে উনি এতোক্ষণ ডিসপেনসারিতে ছিলেন।
এরপর উনি আমার কাটা স্থান গুলো জীবানু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিলেন। আমি যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছি। উনি আমার গলার স্কার্ফ ধরতেই হুশে ফিরলাম
_আরে স্কার্ফ এ হাত দিচ্ছেন কেন? হাত সরান
বলেই নিজের গলা থেকে তার হাত সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। সে ঘাড়ের কিছুটা অংশ থেকে কাপড় সরিয়ে সেখানেও মলম লাগিয়ে দিয়ে বললেন,
_আই নো, আমরা গাড়িতে আছি তবুও এটা পাবলিক প্লেস।তাই এরকম একটা জায়গায় তোমার সাথে রোম্যান্স করার জন্য গলার কাপড় সরাবো এতটা বেকুব আমি নই।সময় মতো সব সুদে আসলে নিয়ে নিবো।
….
গাড়িটা অনেকক্ষন পর একটা নির্জন জায়গায় এনে তিনি থামালেন। ডোর লক খুলে আমাকে নামতে বলে নিজেও নামলেন।রাতের অন্ধকারে লাইটিং এর কারণে ভীষণ সুন্দর লাগছে জায়গা টা।রাত একটু বেশি তাই তেমন লোকজন নেই। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট থেকে আমরা ডিনার শেষে আবার এই দিক টায় চলে এলাম। অনেক শীতল বাতাস বইছে মনে হচ্ছে মধ্যরাত এর দিকে বৃষ্টি হবে।তার পাশাপাশি হাটছি আমি।গাড়ির সামনে এসে সে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বললেন,
_তোমার সবপ্রশ্নের 95পারসেন্ট উত্তর আজকে পেয়ে যাবে। 50 পারসেন্ট তো তখনই দিয়ে দিলাম। now বাকি 45 পারসেন্ট ও দিয়ে দিবো।
এ কথা বলে সে হাতে থাকা ফোনে একটা ভিডিও ফুটেজ আমার সামনে ধরলেন
#চলবে