অন্তঃপুর পর্ব-১২

0
11

#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
১২. (প্রথমাংশ)

জনাকীর্ণ এজলাসে বসে আছে আফরিন। সাক্ষী হিসেবে সে কি কি বলবে সাজিয়ে গুছিয়ে বলে দিয়েছেন উকিল সাহেব। আফরিন একটু অস্বস্তি বোধ করছে। কখনও এত মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেনি।
অনেক দিন পর নাবিলাকে দেখে আফরিন অবাক হল। কোর্টে এসেছে ঠিক। কিন্তু ওর মন যে এখানে নেই সেটা কাউকে বলে দিতে হবে না। কেমন শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে। আফরিন যে উঠে যেয়ে কথা বলবে সেই সুযোগ পেল না। তার আগেই বিচারক এসে পৌঁছালেন।

আফরিন ফিসফিস করে বলল, “সাদ একটু ভয় ভয় লাগছে।”
“লাগতে দে।”
আফরিন নিশ্বাস ছাড়লো। সব বিষয়েই সাদের খামখেয়ালী ভাব। সাহসের জন্য সে একবার নাবিলার মুখের দিকে তাকাল। চলচ্চিত্রের মতো চোখের প্রদায় ভেসে উঠল পরিত্যক্ত আনসার ক্যাম্পের ঘটনা। মুহূর্তেই তার সুপ্ত রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। আফরিন রাগটাকে কমাতে চাইল না। নির্বিকার চিত্তে বসে থাকা মাসুদের দিকে তাকাতেই রাগের আগুন ঘি পড়ল। আফরিন ভুলে গেল সে ভয় পাচ্ছিল।

নাবিলা, সাদমান, আফরিন তিনজনের বক্তব্যই নেয়া হল। মাসুদের পক্ষের উকিল বেশি সুবিধা করতে পারলেন না। মাসুদ কোনচেয়ে বড় ভুল করেছে নিজের গাড়িটা ওখানে রেখে এসে। ফলে অভিযোগ অর্ধেক প্রমাণিতই ছিল। অতীত বর্তমান মিলিয়ে বাকিটুকু প্রমাণ করতে অভিজ্ঞ উকিলকে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হল না। শুধুমাত্র ধর্ষন চেষ্টার শাস্তি হিসেবেই দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হল মাসুদকে। আর তার বাবা জুয়াড়ি প্রমাণিত হওয়ায় তিন বছরের কারাদণ্ড সাজা পেল।

আফরিন অবাক হয়ে লক্ষ্য করল নাবিলার বাবার হাসিমুখ। যেন যু-দ্ধে জিতেছে। রাফির চোখে স্বস্তির একটা ভাব থাকলেও নাবিলা নির্বিকার। সেই তুলনায় তাদের বাবা একটু বেশীই উচ্ছ্বসিত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা তো দূরের বিষয় লোকটা সাদমান বা আফরিন কারো সাথেই দেখা করল না। কোন এক বিচিত্র কারণে ছেলে মেয়েকে রেখেই উনি চলে গেলেন।

রাফি এসে সাদমানের সাথে হাত মেলাল। আফরিন দু পা এগিয়ে গেল নাবিলার সাথে কথা বলার আশায়। কিন্তু নাবিলার চারদিকে অতো ধ্যান নেই। সে সোজা গাড়িতে যেয়ে বসল। আফরিন থেমে গেল। মেয়েটার মনের এমন অবস্থায় তাকে কী বলবে সে?

সাদমানের সাথে কথা বলা শেষে রাফি চলে যাচ্ছিল। সাদমান নিজেও বাইক আনতে গেছে। কি মনে করে আফরিন রাফিকে ডাকল।
“শুনুন!”
ভিড় ভাট্টার মাঝে রাফি ঐ ধীর আওয়াজটুকু শুনল না। আফরিন এগিয়ে গেল।
“একটু দাঁড়ান।”
রাফি পেছন ঘুরল। আফরিনকে দেখে তার কুঁচকানো কপাল সমান হয়ে এল। এই মেয়েটার কাছে সে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।
“জি?”
“নাবিলা আপু কেমন আছেন?” আফরিন রাফির চোখের দিকে তাকাল।
রাফি সহসাই কোন উত্তর দিতে পারল। ঘুমন্ত মানুষকে দেখে কি তার মানসিক অবস্থা ঠাহর করা যায়? নাবিলার সাথে দিনের বেলা খুব কমই দেখা হয়। হলেও কথাবার্তা খুব একটা হয় না। কেমন আছে নাবিলা?
রাফির অক্ষি তারার চঞ্চল গতি আফরিনকে উত্তরটা বলে দিল।
শান্ত কণ্ঠে আফরিন বলল, “মাসুদকে জেলে ঢোকালেই কি আপু শান্তি পাবেন? উনার ক্ষত ঠিক কীসে সারবে আপনারা কি খোঁজ নিয়েছেন?”
আফরিন দাঁড়াল না। চলে গেল পেছন ঘুরে। রাফি দাঁড়িয়ে থাকল স্থির ভঙ্গিতে।

_____________

সেমিস্টার ফাইনাল চলছে। ফলে দম ফেলানোর সময় নেই। তার উপরে হাসপাতালের ডিউটি মিলে আফরিনের শিডিউল একেবারে টাইট হয়ে গেছে। ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে পড়তে পারে না। দুটো খেয়েই যে ঘুম দেয় ওঠে মাঝরাতে। দুটোর দিকে। তারপর থেকে টানা পড়াশোনা করে। ঘুমের চক্র নষ্ট করার কারণে চোখের নিচে কালি জমেছে, গালে ব্রণ হয়েছে। শরীরও বেশ শুকিয়ে গেছে। মোশাররফ হোসেন স্নেহ নিয়ে বকাঝকা করলেও আফসানা বেশ কড়া কন্ঠেই বলেছেন। সাদমান দিয়েছে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট। আফরিন কাউকে বোঝাতে পারে না। চাইলেই কি চাকরি ছেড়ে দেয়া যায়? আবার আরেকটা পাবে কোথায় সে?

ছয় বছর ধরে টিউশনি করছে সে। এসএসসির পর থেকেই শুরু করেছে। এক মাসের জন্যও বাদ দেয়নি। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠে শপিং মলের কাজ শুরু করার পর একটা একটা করে টিউশনি ছেড়ে দিল। এরপর এখন হাসপাতালের চাকরি। জমা হিসেবের খাতাটা খুলল আফরিন। অল্প অল্প করে যেটুকু জমেছে সেটা একেবারেই কম নয়। কখনও কখনও এমনও হয়েছে মাসে দশ বারো হাজার টাকা ইনকাম করতে পেরেছে সে। মোশাররফ হোসেন হাত খরচ দেয়ায় সেগুলো ব্যবহার করতে হয়নি। তাছাড়া আফসানার আদেশ ছিল সে যেন ঐ টাকা খরচ না করে। যা লাগবে সেটা যেন তাদের কাছে চেয়ে নেয়। আফরিন ক্যালেন্ডার দেখল। আর কয়েকদিন পরই টাকাগুলো তুলে ফেলবে। সময় সমাগত।

পরীক্ষার মাঝের এক শুক্রবারে শিশু পার্কে হাঁটতে গেল আফরিন। কয়েকদিনের পরিশ্রমে মাথা ভার হয়ে গেছে। একটু তাজা হওয়ার উদ্দেশ্যে এই সফর। সে জানত না ঐ পথে তার নতুন সফরের আনুষ্ঠানিক শুরু হতে যাচ্ছে।

দেশে ফেরার পর প্রত্যেক শুক্রবারে বউ বাচ্চাকে নিয়ে বের হয় অনিক। আশপাশের পার্কে ঘোরাঘুরি করে। বাড়ির পাশেরগুলো ঘুরে টুরে আজ এসেছে একটু দূরে।
পার্কটা বেশ পুরোনো। আশপাশের প্রাচীর ভেঙে গেছে। নামেই একটা বাউন্ডারি। ভেতরেও তেমন রাইড নেই। তবে বিশাল হাঁটার জায়গা আছে। লিলি এবং মিলি, তার দুই বছর বয়সী মেয়ে দুজন ইচ্ছে মতো ছোটাছুটি করছে। বিথীকে নিয়ে দোলনায় বসে মেয়েদের খেলাধুলা দেখছে অনিক। নিজেকে সুখী সুখী লাগছে।
মিলি দৌড়াতে যেয়ে ধুপ করে পড়ে গেল। সাথে সাথেই লিলি দাঁড়িয়ে পড়ল। বিথী তড়িঘড়ি করে উঠতে চাইলে অনিক হাত ধরে আটকে দিল।
“ছাড়ো। মেয়েটা কাঁদছে দেখছ না!”
“দেখেছি। বসো।”
বিথী বিরক্ত হল, “আশ্চর্য! তাহলে বসে আছো কেন?”
অনিক সামনে ইশারা করল। বিথী তাকিয়ে দেখল একটা মেয়ে তার মিলিকে মাটি থেকে উঠিয়েছে। জামা ঝেড়ে দিচ্ছে চিন্তিত চেহারায়।
অনিক ফিসফিস করে বলল, “এটাই ঐ মেয়ে।”
“কে?”
“আফরিন।”
বিথী এবার অভিব্যক্তি পাল্টে তাকাল।
“ওর বাড়ি এখানেই।”
“হ্যাঁ পাশেই।”

আফরিন বাচ্চা দুটোকে দুর থেকেই দেখছিল। যমজ বাচ্চা দেখতে তার কাছে কি যে অবাক লাগে! একই রকম দুটো মানুষ। কি অদ্ভুত সুন্দর! তার উপর এক জামা পরায় দুজনকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে গেছে। হাসি মুখে ছুটতে ছুটতেই একজন পড়ে গেল। আফরিন ছুটে গেল। মেয়েটা কাঁদতে শুরু করেছে। জামায় লাগা মাটি ঝেড়ে আশপাশে তাকাল আফরিন। এদের বাবা মা আসেনি নাকি?

“থাক কাঁদে না সোনা। কোথাও লাগে নি তো দেখো!”

অনিক কি মনে করে ঝট করে পকেট থেকে ফোন বের করল। মুহুর্তের মাঝেই রাফিকে ফোন দিয়ে বলল, “এই দাদীমা আর তিতলীকে শিশু পার্কে পাঠিয়ে দে। মহিলা কলেজের পাশে।”
“কেন? দাদীমা বাইরে যেতে পারে না।”
“নিয়ে যাস না বলে যেতে পারে না শালা। কবে নিজের দাদীকে নিয়ে হাঁটতে গিয়েছিস বল তো! এখানে বিথী আছে, আমার মেয়েরা আছে দাদীমার ভালো লাগবে। পাঠিয়ে দে। কুইক!”
এক প্রকার হু-মকি দিল অনিক। রাফির বাড়ি থেকে এখানে আসতে বিশ মিনিটে লাগার কথা। দাদীমা এলে তো একটা দারুন সাক্ষাৎকার হয়ে যেত। এমন অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ আর কীভাবেই বা পাবে সে!
ফোন রেখে বিথীকে বলল, “যাও মেয়েদের নিয়ে এসো।”
বিথী আফরিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিলি মিলিকে নিয়ে এল। মাকে দেখে মিলির কান্না আরো খানিকটা বেড়েছে।
মিলির কান্না না থামলে তাকে কোলে নিয়ে অনিক বলল, “তুমি থাকো। আমি আফরিনকে নজরে রাখি। দাদীমাকে পাঠাতে বলেছি।”
বিথী চোখ রাঙিয়ে তাকাল, “কি বললে?”
অনিক নিজের বলা কথাটা আরো কয়েকবার আওড়াল। তিন বারের মাথায় চোখ খিচে দাঁতে জিহ্বা কাঁটল। বিড়বিড় করে বলল, “বন্ধু রে! তোর জন্য এখন আমাকে পরনারীর দিকে তাকিয়ে বউয়ের চোখ রাঙানি খেতে হচ্ছে। তোর বিয়ে দিয়ে আমিও তোর জন্য একই ব্যবস্থা করে দেব। নো টেনশন! বউয়ের ঝাড়ি আমি একা খাবো। তুই খাবি না। তোকে না দিয়ে আমি খেতে পারি? নেভার এভার!”
“বিড়বিড় করছো কেন! পাগল হয়ে গেছ। দাদীমা দেখলেই হল? রাফি ভাইয়ের বাবা মায়ের একটা মত আছে না?”
“না নেই। ও তুমি তো আবার এই কাহিনী জানো না। পরে এক সময় বলব। আপাতত এটুকুই জানো দাদীমা হ্যাঁ বললে ওখানেই রাফি বিয়ে করবে।”

আধা ঘণ্টার কিছু পরে রুমিলা বেগম তিতলীকে নিয়ে এলেন। অনিক যেতে বলেছে শুনেই তিনি বুঝতে পেরেছেন কোন একটা কারণ অবশ্যই আছে। নয়তো অনিক তাকে যেতে বলতো না।

বিকেল তখন প্রায় শেষের ওঠে। সন্ধ্যার মায়া পার্কটাকে মুড়ে নিচ্ছিল। অনিক ইশারা করে আফরিনকে দেখাল। রুমিলা বেগম কিছু একটা ভেবে বললেন, “তোমার মেয়েকে কি কোল থেকে নামিয়ে দিলে কাঁদবে?”
একবার মিলির দিকে তাকাল অনিক। এদিক ওদিক তাকিয়ে বিস্ময় নিবারণে ব্যস্ত তার চোখ জোড়া। একটু আগেই পড়ে যেয়ে কেঁদেছে। কোল থেকে নামালে আবার কাঁদবে।
“হ্যাঁ।”
“তাহলে ঐ মেয়েটার আশপাশে তোমার মেয়েকে রেখে আসো। তোমার মেয়ে যেন তোমাকে না দেখে এমনভাবে এখানে দাঁড়াবে।”
ইতস্তত করলেও রুমিলার আদেশ মেনে নিল অনিক। তিতলী আগা মাথা কিছু না বুঝলেও মনোযোগ দিয়ে সব খেয়াল করছে। এই বুড়ির একেকটা অভিনব কাজ দেখতে তার ভালো লাগে। বিথীও দেখতে চাইছিল দাদীমা কি করেন। তাই সে নিজেও সরে দাঁড়াল।
“এখানে খেলো তো আম্মু! হ্যাঁ এই যে এখানে!” মিলিকে কোল থেকে নামিয়ে আস্তে আস্তে সরে এলো সে। স্লিপারের এপাশে এসে দাঁড়াতেই মিলি আর তাকে খুঁজে পেল না। তারস্বরে কাঁদতে শুরু করল মেয়েটা।

~চলমান~

#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
১২. (শেষাংশ)

আফরিন বিরক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করছে। বাচ্চাটা গলা ফাটিয়ে কাঁদছে এজন্য অবশ্যই না। সে বিরক্ত হচ্ছে এই মেয়ের বাবা মায়ের কান্ডজ্ঞান দেখে। দেখল মেয়েটা কান্না কান্না ভাব শুরু করল লোকটা পিছু ঘুরতেই। তবুও রেখে চলে গেল। কি অদ্ভুত!

আফরিন মেয়েটাকে কোলে নিল। তখন কি এই মেয়েটাই ব্যাথা পেয়েছিল? কে জানে। দুজনকে আলাদা করার মতো কোনো চিহ্ন তো সে খেয়াল করেনি।
মেয়েটা কেঁদেই যাচ্ছে। আফরিন নরম কণ্ঠে বলল, “কাঁদে না সোনা। এই যে দেখো তো আমার দিকে দেখো। তাকাও তাকাও!”
মিলির মধ্যে তাকানোর কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না। অনিক যেদিকে চলে গেছে সেদিকে তাকিয়ে সে বাবাকে খুঁজছে। আফরিন বাম হাতে মিলিকে কোল রেখে ডান হাত কাঁধের ব্যাগে ঢোকালো। কিছু পাওয়া যায় নাকি সেই আশায়। যদিও বাচ্চার কান্না থামানোর মতো কিছু নির সে ঘোরাঘুরি করে না। তবুও মেয়েটাকে থামানো যায় এমন কিছু যদি পাওয়া যায় এই আশায় ব্যাগের মধ্যে চিরুনি তল্লাশী চালালো।

কিছুদিন আগে ভৃঙ্গরাজ ফুলের একটা চাবির রিং কিনেছিল আফরিন। সেটাই মুঠোতে চলে এলো। হলুদ রংটা সহসাই চোখে লাগে। সাথে ছিল চাবির ঝুনঝুন শব্দ। আফরিন সেটা খানিক নাড়াতেই মিলি ফোঁপাতে ফোঁপাতে এদিকে তাকালো। আফরিন চমৎকার করে হেসে বলল, “নেবে এটা?”
মিলি ছলছল চোখে আফরিনের দিকে তাকালো। আফরিন ভুরু নাচালো, “নেবে?”
মিলি কিছু না বলে চাবিটা ছো মেরে নিতে চাইলো। বুঝতে পেরে আফরিন হাত সরিয়ে ফেলল, “আগে চোখ মোছ দেখি। না হলে দেবো না।”
মিলি একবার আফরিনের দিকে তাকিয়ে আরেকবার চাবির দিকে তাকিয়ে চোখ মুছল।
আফরিন বলল, “ভদ্র মেয়ে! এবার একটা ক্লোজ আপ হাসি দাও তো! হাসো হাসো!”
মিলির মাঝে হাসার লক্ষণ দেখা গেল না। উল্টো ঠোঁট উল্টে ফেললো সে। আফরিন তড়িঘড়ি করে চাবি এগিয়ে দিলো।
“থাক থাক কাঁদতে হবে না। নাও।” মিলি চাবিটা নিল। আফরিন মনে হাঁফ ছাড়ল। ভালো করতে যেয়ে উল্টো আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।
বেশ অনেক্ষণ যাবৎ কোলে রাখায় হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। তাই পাশের বেঞ্চে মিলিকে বসালো আফরিন। মিলির মনোযোগ চাবির চেয়ে রিংয়ের দিকে বেশি। আফরিন খেয়াল করল সেটা।
“তোমার নাম কী গো?” গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল আফরিন। মিলির কান্না ততক্ষণে থেমে গেছে। গালে শুকিয়ে এসেছে অশ্রু। আফরিন ওড়না দিয়ে সেটা মুছে দিল।
“মিলি।” খেলতে খেলতে উত্তর দিল মিলি।
“তোমার বোনের নাম কি?”
“লিলি।”
“বাবার নাম?”
“অনিত ইসসাম।” আফরিন হাসল। ভুলটাও এই ফুলের মুখে কি দারুন লাগছে!
“আম্মুর নাম?”
“বিতি।”
“আমার নাম শুনবে না?”
মিলি তাকালো না। আফরিন নিজেই আগ্রহী হয়ে বলল, “আফরিন।”
মিলিকে নির্বিকার দেখে আফরিন কিছুটা হতাশ হলো। মিলির পেটে ছোট্ট করে চিমটি দিয়ে বলল, “বলো আমার নাম। আফরিন। বলো।”
মিলি ভুরু কুচকে তাকালো। পেটে চিমটি দেয়ায় সে যে বিরক্ত হয়েছে সেটা বোঝা গেল। আফরিন মুখ ছোট করে বলল, “সরি। আমার নামটা বলো। আফরিন”
মিলি সামনে তাকিয়ে বলল, “আপিন।”
আফরিন বলল, “ছোট করে বলো। বলো রিনি।”
“লিনি।”
আফরিন হেসে ফেলল, “তাহলে তো তোমার বোন হয়ে গেলাম। তোমার নামের সাথে মিল হয়ে গেছে।”
এবার মিলি তাকালো। আফরিনের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসল। আফরিনের বুকের ভেতরে একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। বাচ্চারা পৃথিবীর ফুল। ওদের কান্নাকাটি নামক কাটাকে ভয় পেলেও বাকি সব কিছুই আফরিন পছন্দ করে। এই যে অল্প কয়েকটা দাঁতের হাসি, ভুলভাল উচ্চারণ, অল্পতেই হাসি সবকিছুই কেমন ভণিতাহীন। সরল, মিষ্টি, সুন্দর। তবে তার সাথে কোনো বাচ্চার সম্পর্ক নেই। সাদমানের চাচাতো, খালাতো ভাইবোন কয়েকজন আছে বটে তবে তাদের সাথে আফরিনের যোগাযোগ নেই। তার ধরা ছোঁয়ার মাঝে আছে কেবল বেদে পাড়ার কয়েকজন। আফরিন অপলক তাকিয়ে রয় মিলির দিকে। জীবনে প্রথম কোনো বাচ্চা তার এতো কাছে। ভাবতেই অবাক লাগছে আফরিনের।

রুমিলা আফরিনের চকচকে চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। দৃষ্টিশক্তি কমে এলেও ফুরিয়ে যায়নি। ছানি পড়া চোখে মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয় না। তিনি তাকিয়েই রইলেন। মেয়েটাকে দেখতে ভাল লাগছে।
অনিক ইতস্তত করল। বিথী ছটফট করছে মিলিকে আনার জন্য। রুমিলাকে অনিক বলল, “দাদীমা মিলিকে ওখানে রেখে আসতে বললেন কেন?”
রুমিলা চোখ সরিয়ে নিশ্বাস ছাড়লেন, “আমাদের বাড়ির অবস্থা ছোট বাচ্চার মতোই। যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে শাসন করা, ঠিক ভুল বোঝানো যায় না। সবাই নিজের মতো করে চলে। আমার রাফির বউ হবে বাড়ির এক মাত্র বউ। কতো দায়িত্ব যে সেই মেয়ের ঘাড়ে যাবে ভাবলে আমার নিজেরই মায়া লাগে। তাই যাকে তাকে তো আনা যাবে না ভাই।” চোখের হতাশা মুছে গেল আফরিনের দিকে তাকাতেই। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললেন, “আল্লাহ আমার দোয়া শুনছেন। মেয়েটার নাম যেন কী?”
“আফরিন।”
“আফরিন আফরিন। ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠাবো। তোমার মেয়েকে নিয়ে আসো যাও।” অনিক ছুটে গেলো। রুমিলা বিথীর কাছে যেয়ে বললেন, “বউ মা রাগ কইরো না। বুড়া মানুষ তো উল্টাপাল্টা কাজ করি।” রুমিলা হাসলেন। বিথীর মনে হলো ঐ হাসির পেছনে, চোখের পেছনে লুকিয়ে আছে বর্ষ পুরোনো অভিজ্ঞতা।

তিতলি ভেতরে ভেতরে উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে। এই মেয়ে তার রাফি ভাইয়ের বউ হবে? রাফি ভাইকে যে সে কী পছন্দ করে! মাঝে মাঝে মনে হয় ভাই ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে তাকে একটু জড়িয়ে ধরে তিতলি কাঁদত। তার সাথে এত ভাল ব্যবহার করার জন্য। ভাইয়ের বিয়ে হলে সে যেয়ে তার বউকে জড়িয়ে ধরবে। একই তো হলো।
“দাদী এইটা আমাদের ভাবি?”
“ইনশাআল্লাহ্।” রুমিলা আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েটা মনে হচ্ছে অনিককে বকছে।
“দাদী তাহলে আমি একটু ভাবির সাথে ভাব করে আসি?”
“যা। ভাবি ডাকিস না।”

ছাই দিয়ে মাছ ধরার মতো অনিককে ধরল আফরিন।
“কি আশ্চর্য! মেয়েটাকে এভাবে রেখে কোথায় গিয়েছিলেন? ও যে কাঁদবে এটা জানতেন না?”
“জানতাম।” অনিক বলল।
আফরিন দাঁতে দাঁত চাপলো। কেমন অসহ্য লোক! বলে জানতাম!
“তাহলে গিয়েছিলেন কেন?” নিজেকে থামালো আফরিন। অপরিচিত একটা লোকের সাথে এভাবে চোটপাট করা উচিত হবে না।
“খুবই দুঃখিত। একটা জরুরী কাজের জন্য গিয়েছিলাম। কাজটা হয়ে গেছে। আমার মেয়েকে রাখার জন্য ধন্যবাদ।” মিলিকে নিয়ে চলে গেল অনিক। সে যেতেই নিশ্বাস ছাড়লো আফরিন। হাতের মুঠোয় রাখা চাবির দিকে তাকালো। ফুলটা খুলে মিলিকে দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা অনেক পছন্দ করেছিল।
“আসসালামু আলাইকুম!” লম্বা করে কেউ সালাম দিল। অন্যদিকে ধ্যান থাকায় চমকে গেল আফরিন। দেখল একটা চৌদ্দ পনের বছর বয়সী মেয়ে হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে।
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”
“আপনি কিন্তু অনেক সুন্দর। আসলেই।” তিতলি দুপাটি দাঁত বের করে হাসল। আফরিন থতমত খেয়ে গেল। হাসার চেষ্টা করলেও হাসি এল না। এমন আজব পরিস্থিতিতে সে কখনও পড়েনি।
“থ্যাংক ইউ। তোমাকে তো চিনলাম না।”
“এখন চিনবেন না। কয়টা দিন গেলে চিনবেন। আমার নামটা মনে রাখেন। তিতলি। তিতলি মানে জানেন? প্রজাপতি। আপনি অনেক সুন্দর। যাই।” মেয়েটা প্রজাপতির মতো করেই উড়ে চলে গেল। আফরিন নড়চড়হীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

______________

শাশুড়ির জরুরী তলবে কিছুটা অবাকই হলেন আসিফা। একই ছাদের নিচে বসবাস হলেও তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয় মাসে হাতে গোণা কয়েকদিন। তার সাথে যে আসিফার শত্রুতা বা মনোমালিন্য এমন কিছুই না। রুমিলা তার প্রতি কখনও বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন ছিলেন না। আবার নরম ব্যবহারও করেননি কখনও। নিজেই একটা দেয়াল তুলেছিলেন তাদের মাঝে। মাহমুদের সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর সেটা আসিফা বাড়িয়েছেন কেবল। মাঝে মাঝে তার মনে হয় তিনি নির্বাসনে থাকেন। কারো সাথেই কোনো যোগাযোগ নেই।

দরজা হাট করে খোলা ছিল। নক করতে হলো না। ঘরে ঢুকেই মাহমুদকে রুমিলার সামনে বসে থাকতে দেখলেন আসিফা। তার কৌতুহল আরেকটু বাড়ল বৈ কি।

“বসো।” বিছানার পাশের চেয়ার দেখিয়ে দিলেন রুমিলা। অথচ মাহমুদ বিছানায় বসে আছে। সেখানে জায়গারও অভাব নেই। আসিফার মনে হলো শাশুড়ি তার জীবনে আসিফার অবস্থানটা দেখিয়ে দিলেন।

“তোমাদের দুইজনের সাথেই আমার কিছু কথা আছে। আমি শেষ করি তারপর তোমরা যে বলার বলবা।”
মাহমুদ এক পলক স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তার মুখেও কৌতূহল। রুমিলা বলতে শুরু করলেন, “তোমাদের মধ্যে কখনোই বনিবনা হয় নাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে খুটখাট হইতেই পারে। কিন্তু এই খুটখাট তোমাদের পিছু ছাড়ে না। আমার মনে পড়ে না গত ত্রিশ বছরে কবে তোমরা ঝগড়া ঝাটি না করে ভাল মতো একটা দিন পার করছ। কিন্তু আমি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা বলা পছন্দ করি না। এইজন্য তোমাদের কখনো কিছু বলি নাই। কিন্তু তোমাদের ছেলেমেয়ে যে এইজন্য তোমাদের থেকে দূরে চলে গেছে এইটা বোঝো? বউয়ের চোখে তো তাও কষ্ট দেখি। তোর তো কোনো আফসোসই নাই রে মাহমুদ! কী মানুষ করলাম তোরে আমি?” ছেলের দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললেন রুমিলা। মাহমুদ চোখ নামালেন। বিব্রত বোধ করছেন তিনি। আসিফা অবাক হলেন। তার চোখ পড়ে ফেললেন কীভাবে এই বৃদ্ধা মহিলা?

“তোমাদের সংসার কোনো সংসার না। ইট দেয়াল গাঁথলেই বাড়ি হয় না। এইটা কোনো বাড়ি না। এইজন্যেই বাড়ির বড় ছেলে বাড়িতে থাকতে চায় না। মেয়ে শান্তি খুঁজতে বাইরে যায়। সেখানেও সেই কষ্টই পায়। আর ছোট ছেলে তো..” রুমিলার গলা কেঁপে উঠল। এই একটা কষ্ট তিনি মৃত্যু পর্যন্ত ভোগ করে যাবেন।
গলা খাঁকারি দিলেন রুমিলা, “যাই হোক। ছেলেমেয়েদের নিয়ে তো তোমাদের কোনো চিন্তা নাই। সেই চাকরি আল্লাহ আমারে দিছে। ভালোই হইছে। শোনো দুইজনেই। আমি রাফির জন্য মেয়ে দেখছি। মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠানো হবে। তোমরা যেয়ে দেখে শুনে বিয়ে ঠিক করে আসবা। তোমাদের কাছে আমি অনুরোধ করছি না, আদেশ করছি। আসল বাপ মা হইলে পরামর্শ চাইতাম। ছেলেকে নিয়ে পরামর্শ দেয়ার মতো যোগ্যতা তোমাদের একজনেরও নাই। মেয়ের মা বাপ যেন রাজি হয় এভাবেই কথা বার্তা বলবা। কবে যাইতে হবে আমি বলে দিবো।”
মাহমুদ, আসিফা দুজনেই ভাল একটা ধাক্কা খেয়েছেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন আসিফা। রুমিলার প্রত্যেকটা কথা সত্য। এজন্যই বোধহয় এত তিতা।
“কিন্তু রাফি তো বিয়ে টিয়ে করতে চায় না।” মাহমুদ বললেন।
খেঁকিয়ে উঠলেন রুমিলা, “তাই এমনেই আমি ওরে মরতে দেখি তাই না? আমার আগে তো ও মরবে রে! ওর জীবনে কী আছে? একটা অবুঝ বোন, প্রতিবন্ধী ভাই ছাড়া ওর নিজের কী আছে? কিচ্ছু নাই। ওর জীবনের সমস্যার কথা তোরা কেউ জানিস? কখনও ভাবছিস? ঐ ছোড়া তোদের সবার সমস্যা ঠিক করতে করতেই মরে যাবে। নিজের সংসার করা লাগবে না। ওর তো আর কোনো জীবন না!” রুমিলা কেঁদে ফেললেন। বড় নাতিটার কথা মনে হলে তার বুকটা ফেটে যায়।
“ধরে বেঁধে বিয়ে দিলেই তো হয়ে গেলো না। মনের ইচ্ছা থাকা লাগে না?” মাহমুদ বিরক্ত হয়ে বললেন। বিয়ে কী এটা কি রুমিলা বোঝেন না? এভাবে জোর করে কি বিয়ে হয় নাকি!
“নাচতে নাচতে করছিলা না তোমরা? সুখে আছ না? ওর চিন্তা আজীবন করো নাই এখনো করা লাগবে না। আমি যতদিন নিশ্বাস নেই এতদিন আমিই করতে পারব। রাফিরে আমি বলব। তারে ধরা বাঁধা লাগবে না। সে আমারে যথেষ্ট সম্মান করে। আমি বললে না করতে পারবে না।”
আসিফার চোখ দুটো জ্বলে উঠল। নিজের সন্তানকে নিয়ে এমন আত্মবিশ্বাস তিনি কখনোই দেখাতে পারবেন না। শাশুড়ির মুখের দিকে তাকালেন তিনি। ঐ ঝুলন্ত চামড়ার মানুষটার মাঝে কী এমন শক্তি লুকিয়ে আছে?
“মেয়ের বায়োডাটা আছে?” আসিফা ধীর কণ্ঠে বললেন।
“কী আছে?”
“বায়োডাটা। খোঁজ খবর?”
“ও ঐসব অনিক দিবে। ওরে বলছি আমি।” রুমিলা চোখ মুছলেন। “শ্বশুর শাশুড়ি হওয়ার প্রস্তুতি নাও। তোমাদের বোকামির জন্য যেন এই বিয়ে হাতছাড়া না হয়। যাও ঘরে যাও।”
মাহমুদ আগে ভাগে উঠে চলে গেলেন। আসিফা ধীর পায়ে উঠলেন। একবার তাকালেন রুমিলার দিকে। কিছু একটা বলতে যেয়েও গিলে ফেললেন। সোজা বের হয়ে গেলেন।

。。。。。。。。。

রাফি যখন বাড়ি ফিরল তখন সবাই ঘুমে। ঘড়ির কাঁটা বারোকে ছুঁয়েছে আরো খানিকক্ষণ আগে। নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলে গেল রাফি। তিতলি তার জন্য খাবার বেড়ে ঘুমাতে যায়। গোসল করে এসে আগে খেয়ে নেবে। ভীষন ক্ষুধা লেগেছে।
রুমে আলো জ্বালাতেই ঘরের এলোমেলো চিত্র স্পষ্ট হলো। ব্যাচেলরদের ঘর যেমন হয় তার ঘর তেমনই। তিতলিকে সেই নিষেধ করেছে ঘর গোছানোর জন্য। এই এলোমেলো সবকিছুতেই তার অভ্যাস হয়ে গেছে। নতুন করে সাজানোর, পরিপাটি করার জন্য কোনো আগ্রহ আসে না। কী লাভ এত গোছগাছ করে?

শার্ট খুলতেই টেবিলের উপরে সবুজ রঙের স্টিকি নোট নজরে এলো। তিতলি রেখেছে সম্ভবত। এর আগেও এভাবে লিখেছে। “ভাই খেয়ে নিয়েন।” “ভাই তরকারি গরম করতে হবে। একটু ডাক দিয়েন।” এমন সব কথা। তাই আস্তে ধীরে সেদিকে গেল রাফি। কাগজের দিকে তাকাতেই ভুরু কুচকে এলো। তিতলির হাতের লেখা।
“ভাই দাদী আপনার জন্য বসে আছে। আপনি যখনই আসবেন তখনই দাদীর সাথে দেখা করবেন। দাদী বলেছে আপনার সাথে না দেখা করে আজকে ঘুমাবে না। জেগে বসে আছে। এক্ষণ যান।”
রাফি দ্রুত আবার শার্ট পরে নিল। তরতর করে নেমে গেল প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে। ড্রয়িং রুমটা আলো আঁধারিতে ভূতুড়ে দেখাচ্ছে। তার চেয়েও ভূতুড়ে লাগছে দাদীমার ঘরের সামনের ছোট্ট করিডোরটা। রাফি আস্তে করে নক করল, “দাদীমা?”
“খোলা আছে আয়।” রুমিলা স্পষ্ট কণ্ঠে বললেন। গলায় ঘুমের লেশ মাত্র নেই।
“কি আশ্চর্য দাদীমা! তুমি না ঘুমিয়ে বসে আছো কেন? কয়টা বাজে জানো?”
“না জানি না। কয়টা বাজে?”
“সাড়ে বারোটা বাজে।”
“তুমি এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকত পারবা আর আমি। জেগে থাকলেই দোষ?”
“তোমার আর আমার হিসাব এক? তাছাড়া বাড়িতে থাকতে ভাল লাগে না দাদীমা। কেমন দম বন্ধ লাগে।” ক্লান্ত কণ্ঠে বলল রাফি। রুমিলা মায়া চোখে তাকালেন।
“আমার পাশে বস দেখি। আয়।” এক বাক্যেই বসে পড়ল রাফি। বসা থেকে সটান করে শুয়ে পড়ল রুমিলার পায়ের উপর।
“তোর যেন বাড়িতে ভাল লাগে সেই ব্যবস্থা করছি।” রাফির চুকে হাত দিলেন রুমিলা।
রাফি চোখে কৌতুক নিয়ে বলল, “কী করবা? বায়োস্কোপ?”
“তোর বায়োস্কোপ ভাল লাগে?”
“না ভাল লাগলেই কি। জন্ম থেকেই দেখে আসছি।”
“ঐসব বাদ দে। বাড়িতে ভাল লাগার জন্য পিছুটান থাকতে হয়। তোর নাই তাই ভাল লাগে না।”
“কীভাবে পিছুটান বানাবো?”
রুমিলা কয়েক মুহূর্ত সময় নিলেন। রাফির মাথায় হাত রেখেই বললেন, “আমি তোর জন্য মেয়ে দেখেছি। তাকে বিয়ে করে নে।”
রাফি ঝট করে উঠে পড়ল। বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে রুমিলার দিকে তাকাল অবিশ্বাসী চোখে। কণ্ঠে ক্ষোভ নিয়ে বলল, “অসম্ভব!”

~চলমান~