#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
৩০.
আফরিনের বেশ লজ্জা লজ্জা লাগছে। বিয়ে হলেও বিবাহিত জীবন কেবলই না শুরু হল। আগে ভুলে কয়েকবার চোখাচোখি হত। অস্বস্তি এড়াতে চোখ সরিয়ে নিত আফরিন। সেই লোকটার সাথেই এক ছাদের নিচে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় অবধি। এইভাবেই আচমকা সবকিছু পাল্টে যাবে আফরিন কি ভেবেছিল?
মানুষের জীবন তার নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী খুব কম সময়ই চলে। এমনভাবে সবটা হয় যেন আগে থেকেই এসবের আয়োজন হয়ে আছে। ফলে নিজের মনে বানানো মানুষের খুচরা পরিকল্পনা মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষে যেয়ে জমা হয়।
লজ্জার চেয়েও বেশি এক ধরনের পুলক অনুভব করছে আফরিন। রাফি যখনই তাকে রিনি বলে ডাক দেয় গাল দুটো ভারী হয়ে আসে। যেই লোকটাকে বকতে দুবার ভাবতে হত না, ফটফট করে শক্ত শক্ত কথা বলতে পারত সেই লোকটার চোখের দিকে তাকাতেই এখন তার অদ্ভুত অস্বস্তি ঘিরে ধরে। মন চায় পালিয়ে যাক। ছুটে যেয়ে বসে থাকুক বাড়ির পেছনের ঐ সোনালু গাছের নিচে। তখন কেমন করে মিনিটে দশবার ডাকবে লোকটা? ঘর থেকে বের হলেও দুকান এদিকেই থাকে। একটা রিনি ডাকের অপেক্ষায়। বহুক্ষণ না ডাকলে আফরিন নিজেই অস্থির হয়ে যায়।
আফরিন নিজেকে বকে, ধমকায়। অবুঝ ষোড়শী সে তো নয়। তবু এই মিঠে অস্থিরতা মাঝে মাঝে এত ভাল লাগে!
মিহাদের আচার আচরণের একটা দিক বুঝতে পেরেছে আফরিন। সেটা হল ওর মন মানসিকতার নির্দিষ্ট কোনো ছাঁচ নেই যাতে ফেলে ওকে মাপা যাবে। এক্ষুনি জোরাজুরি মেনে নেয় তো একটু পরই আবার রেগেমেগে চিৎকার চেঁচামেচি করে ওঠে। এই ছুটে যেয়ে বাগানের গাছ উপড়ে ফেলে তো এই তাকে ধরে টানাটানি করে সেই উপড়ানো গাছ আবার লাগিয়ে দিতে।
আজ সারাটা দিন এগুলোই করেছে সে। আফরিন কত বোঝালো, এই সুন্দর গাছগুলো নষ্ট করো না। ফুলগুলো ম-রে যাবে। তারপর কোথায় পাবে? সে কোনো কথা শুনল না। নয়ন তারা গাছ যে কটা ছিল সবগুলো টেনে টেনে তুলে তবে ক্ষান্ত হয়েছে। চেয়ে চেয়ে দেখো ছাড়া আফরিনের আর কোনো উপায় ছিল না।
একটু রাগ দেখিয়েই এসেছে সে মিহাদের সাথে। কীভাবে গাছগুলো নষ্ট করে ফেলল! মাঝে মাঝে এত অবাধ্য হয়ে যায় ছেলেটা। মনটা একটু খারাপ খারাপ লাগছিল। রুমে বসে সিদ্ধান্ত নিল আজকে সারাদিনে মিহাদের সাথে আর কথা বলবে না। এতে যদি এমন কাজ একটু থামায়।
ঘড়িতে চারটা দশ বাজে। ভর দুপুর। বাইরের রোদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। পর্দা টেনে দিয়ে শুয়ে পড়ল আফরিন। একটু ঘুমিয়ে নেবে নাকি?
ফোনটা হাতে নিতেই রাফির কাছ কল দিতে ইচ্ছে করল। কিন্তু কল দিয়ে বলবেটা কী? এই লোক ইদানিং আঁকাবাঁকা কথা শিখেছে। একটা প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তর দেয় না। থাক। সেধে যেয়ে প্যাঁচাল পাড়ার দরকার নেই।
এই পরিকল্পনাও জলে গেল। কল ততক্ষণে চলে গেছে। অবাধ্য আঙুল কখন, কোন ফাঁকে কল দিয়ে দিয়েছে আফরিন খেয়ালই করেনি! রাফি ওপাশে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। আফরিন ইতস্তত করে বলল, “হ্যালো?”
“হেলেই তো আছি। ফোন দিয়ে কোথায় হারিয়েছ?”
এই যে আরেকটা বিষয়। এত সাবলীলভাবে রাফি কথা বলে! তুমি ডাকে! আফরিনের মনে হয় কত বছর ধরেই না জানি তারা সংসার করছে। কে বলবে এই লোক তাকে ঘরেই ওঠাতে চায় নি?
“ভুলে কল চলে গেছে।”
“মানে?” রাফি ভুরু কুঁচকে বলল।
“কখন হাতে চাপ লেগে কল গেছে খেয়াল করিনি। ইচ্ছে করে কল দিইনি।”
রাফি ফাইলটা বন্ধ করল। নীল রঙের গ্রিন ফাইল।
“এত লুকোচুরি করার কি আছে? হাজবেন্ডের কাছে কল দিতে আবার অজুহাত লাগে? মনে চেয়েছে কল দিবা। বেচারা আঙুলের দোষ দিচ্ছ শুধু শুধু।”
ধরা পড়া চোরের মতো হলো আফরিনের অবস্থা। ভাগ্যিস রাফি তাকে দেখতে পাচ্ছে না! দেখলে নিশ্চিত খোঁচা দিতে ছাড়ত না।
“আজগুবি! কে বলেছে আপনাকে এসব?”
“আমার বুদ্ধি একেবারেই কম না। অল্প স্বল্প আছে। মানুষ চড়িয়ে খাই কি না? তারপর বলো কী অবস্থা তোমার? কেমন আছো?” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল রাফি।
আফরিনের মনে হলো যেন কতকাল তাদের দেখা নেই। অথচ আজকে সকালেই লোকটা হুলুস্থুল বাধিয়েছে সেই ফাইলটা নিয়ে। বলে নীল রঙের ফাইল খুঁজে দাও। আফরিন খুঁজে সারা। হঠাৎ সেদিনের কথা মনে পড়তেই সবুজ ফাইলটা কোত্থেকে বের করল। বারবার বলা সত্ত্বেও রাফি বলে এটা নাকি নীল। সবুজ হলেও সারাজীবন সে নীলই বলবে। কস্মিনকালেও এটাকে সবুজ ফাইল বলবে না। কি অদ্ভুত লোক!
“এই রিনি? কোথায় হারিয়ে গেলে?”
আফরিন ছোট্ট একটা ঢোক গিলল। আচ্ছা রেকর্ডার অন করে রাফির সাথে কথা বললে কেমন হয়? সে চুপ করে থাকলেই লোকটা ডাকবে “রিনি? এই রিনি! কোথায় হারিয়েছ?” তারপর সারাদিন ধরে আফরিন সেটা শুনতে পারবে। রাফি তো জানতেও পারবে না।
“শুনতে পাচ্ছি।”
“তোমার বর কি তোমার আদর যত্ন করে না? মনে হচ্ছে কানে সমস্যা হয়েছে। ডাক্তার দেখাতে হবে।” নরম কণ্ঠে দুঃখ দুঃখ করে বলল রাফি।
আফরিন বিড়বিড় করল, “কি অসভ্য ফাজিল লোক!”
“তোমার সংসার কেমন চলছে? ভাল তো? কোনো সমস্যা হলেই আমাকে বলবে। কোয়ালিফাইড উকিল আমার চেনা পরিচিত আছে। এদিক থেকে ওদিক হলেই তোমার বরের নামে মামলা ঠুকে দেব। ঠিকাছে?”
“ঠিকাছে।”
“তোমার বরের নামটা যেন কী?”
“শ্বশুর বাবা দুটো ছাগল আকীকা দিয়ে যে নামটা রেখেছিলেন সেটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আরেকটা নাম রাখতে হবে।”
“কী নাম রাখবে?” রাফির কণ্ঠে কৌতূহল।
“সাইয়েদ মাজনূন।”
“মাজনূন অর্থ কী?”
“পাগল।” খট করে ফোন কেটে দিল আফরিন। রাফি সাথে সাথেই আবার ফোন দিল। আফরিন ফোন সাইলেন্ট করে দিল। এখন ধরলে এই লোক বকবক করতেই থাকবে। তার চেয়ে ঘন্টাখানেক ঘুমানো যাক।
আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই মিহাদ এসে হাত টানাটানি শুরু করল। একটু চোখ লেগেছিল আফরিনের। ধড়মড় করে উঠে বসল সে। মিহাদের সাথে কথা বলবে না ভেবেছিল। কিন্তু এই ক্ষণে এসে সেসব ভুলে গেল। মিহাদ হাত টেনেই যাচ্ছে।
আফরিনের চোখ লাল হয়ে আছে। কাঁচা ঘুম ভাঙ্গার ফল। ঘুম ঘুম কণ্ঠে সে বলল, “কী হয়েছে?”
“চলো চলো।”
“কোথায় যাব?”
“গাছ।”
আফরিনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। গাছ টেনে তুলেছিস এখন ওটা আবার লাগানোর জন্য ছটফট করছিস কেন?
“কী করব? গাছ লাগাবো? লাগাবো না। তোমাকে আমি একশোবার নিষেধ করেছি গাছ উঠিও না। শুনেছ আমার কথা?”
মিহাদ কান্না কান্না কণ্ঠে বলল, “চলো চলো।”
অবাধ্যতা, ঘুম ভাঙানো, জোরাজুরি সব মিলিয়ে আফরিনের মেজাজ খারাপ করানোর যথেষ্ট ছিল। আফরিন শক্ত একটা ধমক দিল, “সর তো! সবসময় এক রকম ভাল লাগে না।”
মিহাদের কি হলো কে জানে। সে আস্তে করে হাত ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ চলে গেল। আফরিনের একটু কেমন যেন লাগল। আর কয়েকবার জোরাজুরি করলে বোধহয় সব ঠিকঠাক লাগত।
মিহাদ যেতেই আবার শুয়ে পড়ল আফরিন। আরো এক ঘন্টা ঘুমাবে সে।
কিন্তু পনের মিনিট ধরে এদিক ওদিক করেও ঘুম এল না। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। মিহাদের চুপচাপ চলে যাওয়াটা চোখে ভাসছে। নিজের উপরই রাগ হলো আফরিনের। ওকে কেন ধমকাতে গেল? মিহাদ যে এতসব বোঝে না এটা কি আফরিন জানে না? জানে। তাহলে? কেন বকল মিহাদকে?
ঝট করে উঠে পড়ল আফরিন। ছেলেটা কোথায় যেয়ে বসে আছে কে জানে।
বাড়ির ভেতরে কোথাও মিহাদ নেই। ওকে পাওয়া গেল বাড়ির পেছনে। সোনালু গাছের নিচে। আফরিন মনে মনে একটু অবাক হলো। সে তো একটু আগে এখানে এসে বসে থাকতে চাইছিল।
তাকে দেখে মিহাদ মুখ ঘুরিয়ে নিল। আফরিন হাসল।
“ভাইয়ের রাগ হয়েছে?”
মিহাদ কথা বলল না। টেনে টেনে ঘাস ছিঁড়তে শুরু করল। আফরিন তার পাশে ঘাসের উপরে বসল।
“মিহাদ ভাইয়ের রাগ হয়েছে?”
মিহাদ এক পলক তাকাল। আফরিন মুখটা ছোট করে বলল, “সরি। দুষ্টুমি করলে একটু বকা খেতে হয়। গাছগুলো অকারণে টেনে তুললে কেন? এটা কী ভাল কাজ?”
আফরিন আস্তে করে মিহাদের হাত ধরতেই সে ঝিটকা মেরে সরিয়ে নিল। আফরিন ভয় পাওয়ার মতো করে বলল, “আল্লাহ! অনেক রাগ হয়েছে দেখি! কী করলে এই রাগ ভাঙবে? একটা পরোটা ভেঁজে দিলে কমবে? সাথে ডিম ভাজি?”
মিহাদ কথা বলল না।
“তাও কথা বলবে না? আচ্ছা নতুন একটা রুবিক্স কিউব কিনব। কিনে শোকেসে সাজিয়ে রাখব। তিতলিকে খেলতে দেব। তোমাকে দেব না।”
মিহাদ আচমকা আফরিনের বাম হাত টেনে নিয়ে শক্ত করে কামড় বসালো। প্রথমটায় ভয় পেলেও আফরিন বুঝল মিহাদের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এবার ছেলেটা ঠান্ডা হলে হয়।
“কত্ত জোরে কামড় দিলে দেখো তো? আমার লাগে না?”
আফরিনের কণ্ঠে অভিমান। জায়গাটা জ্বালা পোড়া করছে। মিহাদ একবার আফরিনের হাতের দিকে তাকাল। ওখানে ধরতে গেলেই আফরিন বলল, “একদম ধরবি না। ঠিক তো ভাইয়ের মতোই হয়েছিস। নিজের বেলায় আটিঁ কুটি, পরের বেলায় চিমটি কাটি। ফাজিল ছেলে!”
মিহাদ মুখ কুচকে বিড়বিড় করে বলল, “আটিঁ কুটি?”
আফরিন হেসে ফেলল। এই ছেলেটার উপরে রাগ করে থাকার উপায় নেই।
“কী নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে শুনি?”
আফরিন দেখল রাফি এগিয়ে আসছে। সে বলল, “কিছু না।”
“আমাকে বলে আর কিই বা হবে? আমি তো মাজনূন।”
ঐ যে, শুরু হয়ে গেছে। আফরিন মনে মনে প্রমোদ গুনল।
“হ্যাঁ ঠিকই বলেছি।”
“এত বড় কোম্পানি চালাই কেউ কোনোদিন এসব কথা বলতে পারল না। আর তুমি দুদিন দেখে না দেখেই বলে দিলে?”
“দিলাম। এই মিহাদ ওঠো ওঠো। ঘরে চলো।” মিহাদ উঠে আগে আগে চলে গেল।
রাফি ক্লান্ত কণ্ঠে বলল, “এত গরম!”
রাফি উপরে চলে গেলেও আফরিন গেল না। বরফ কুচি দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত বানালো। রুমে যেয়ে দেখল রাফি চিৎ হয়ে দু হাত ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
“শরবতটা খেয়ে নিন।”
রাফি বলল, “রাখো একটু পরে খাই।”
“ঠান্ডা আছে। গরম হয়ে যাবে।”
রাফি উঠে বসল। গ্লাস দেখে বলল, “কীসের শরবত?”
“লেবুর।”
“চিনি দিয়েছ?”
“দিয়েছি।”
“কয় চামচ?”
“দুই চামচ। বেশি চিনি খাওয়া ভাল না।”
রাফি গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আগে তুমি খেয়ে দেখো কি অবস্থা। মিষ্টি না হলে খাবো না।”
আফরিন মনে মনে একটু আহত হলো। সে শরবত নিয়ে এসেছে কোথায় আগ্রহ করে খাবে। তা না! উনার একশ একটা কথা।
এক চুমুক খেয়ে আফরিন বলল, “আমার কাছে তো ঠিকই লাগছে।”
রাফি হাত বাড়িয়ে বলল, “দেখি দাও।”
শরবত পুরোটুকু শেষ করে বলল, “এবার ঠিক আছে। আমি মিষ্টি বেশি খাই। রান্নাঘর থেকে যা দেওয়ার দেবে, ঘরে এসে আর এক চামচ দেবে।”
রাফি এমন গম্ভীর সুরে কথাটা বলল যে আফরিন প্রথমটায় ধরতেই পারল না। ভাবল এটা বুঝি ওর অভ্যেস। কথার শেষটা বুঝতে না পেরে ভুরু কুচকে রাফির দিকে তাকাল। তার মুখের ছোট্ট, বেশি ভদ্র ভদ্র হাসিটা দেখেই আফরিনের টনক নড়ল। ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। তার মুখভঙ্গি দেখে রাফি শব্দ করে হেসে ফেলল।
_______________
আসিফা এক প্রকার লুকিয়ে লুকিয়েই রেস্টুরেন্টে এসেছেন। সেদিন এক ফাঁকে লোকটার নাম্বার নিয়ে রেখেছিলেন। ভাষা শুনে মনে হয়েছিল ভয়ংকর ধরনের লোক। তাই জন সমাগম আছে এমন জায়গা দেখা করার জন্য বেছে নিয়েছেন।
মাহমুদকে হাজার বার বললেও বলবে না কী ঝামেলা পাকিয়েছে। কিন্তু আসিফা আশঙ্কা করছেন ঝামেলাটা বড়সড়। মাথার উপরে এসি চললেও কুলকুল করে ঘামছেন তিনি। কাচের দেয়াল দিয়ে উকি দিয়ে দেখলেন নিচে গাড়িটা আছে নাকি। আছে। একটু স্বস্তি পেলেন। জাফরও আছে। একদম একা একা আসার সাহস করেননি। আবার রাফিকে বলতেও বাঁধছে। ছেলের সাথে তার খুব কম কথা হয়। এখন যেয়ে কী বলবেন তিনি? তোমার বাবা বিশ্রী ধরণের সমস্যা বাধিয়েছে। না না! এই সাহস তার নেই। মাহমুদ নিজের হাতে ব্যবসার সবকিছু ধ্বংস করেছে। দিন রাত এক করে পথে বসা থেকে তাদের বাঁচিয়েছে রাফি। মাহমুদ আবার যদি ওরকম কিছু করে তিনি নিজেই এবার মাহমুদকে ছাড়বেন না।
লোকটা এল হেলতে দুলতে। সাদার উপরে নীল ফুলের কাজ করা পিচ্ছিল ধরনের কাপড়ের শার্ট। সাদাটা আর সাদা নেই। ময়লা হয়ে গেছে। ছেঁড়া, ফাঁটা প্যান্ট। চোখদুটো দেখে মনে হয় এই মাত্র নেশা করে এল। ঠোঁট দুটো পোড়া। কাদের সাথে জড়িয়েছে মাহমুদ জানে। বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে শুরু করলেন আসিফা।
“আপনে মাহমুদের বউ?” প্রথমেই এই প্রশ্ন। লোকটা বসলোও না। দাঁড়িয়েই কথা শুরু করে দিল।
বয়সে মাহমুদ এই লোকের চেয়ে না হলেও দশ বছরের বড়। এর কাছ থেকে আর কেমন ব্যবহারই বা আশা করা যায়।
“জি।”
“আপনার সাথে আমার কোনো লেনাদেনা নাই আপা। আপনের বর যেন আমগো টাকা পয়সা শোদ কইরা দেয় এইটা একটু বইলা দিবেন তারে। ঘুরাইতে ঘুরাইতে আমগো চরকি বানায় ফেলসে শালায়।”
আসিফা তাকালে জিভে কামড় দিয়ে বললেন, “বেয়াদবি নিবেন না। কিন্তু তার জইন্যে একটুও সম্মান আমগো নাই।”
“কী করেছে সে?”
“কী কইতাছি? ট্যাকা মাইরা দিছে।”
“কত টাকা?”
“ছয় লাখ।”
~চলমান~