অন্তহীন সন্ধ্যা পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
2
অন্তহীন_সন্ধ্যা #সূচনা_পর্ব #মাকামে_মারিয়া

#অন্তহীন_সন্ধ্যা
#অন্তীম_পর্ব
#মাকামে_মারিয়া

বৈশাখের দাবদাহে জ্বলছে পথঘাট, গাছপালা, আর মানুষের মন। হঠাৎ করেই সেই পুড়ে যাওয়া বিকেলটায় সমস্ত আকাশ ঢেকে নেমে এলো এক অপ্রত্যাশিত কালবৈশাখী ঝড়। মেঘে ঢাকা অন্ধকারে চারদিক যেন নিস্তব্ধতার চিৎকারে ভরে উঠল। শুধু প্রকৃতিই নয়, কিছু কালবৈশাখী ঝড় মানুষকেও তছনছ করে দিয়ে যায় চিরদিনের মতো।

প্রধান সড়ক পেরিয়ে বিলের ভেতরকার এক কাঁচা পথে উন্মাদের মতো ছুটে চলেছে ষোলো বছরের এক কিশোরী তিন্নি। তার চোখে ভয়ের অশ্রু, মুখে অপার আতঙ্ক। ঝড়ের হাওয়ায় চুল এলোমেলো, গায়ের ওড়না বার বার উপচে পড়ছে। তীব্র বাতাস তাকে একাধিকবার ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলেও, তিন্নি থেমে থাকেনি। কাদামাখা হাত-পা নিয়ে সে উঠে দাঁড়ায় আবারও অশ্রুজল মুছে সামনে ছুটে চলে।

ছুটতে ছুটতে অবশেষে পৌঁছে গেল কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। হ্যাঁ, ওই তো সামনেই একটু দূরে জমির কিনারায় মাটি কোপাচ্ছে সেই মানুষটা।যার জন্য এই দুঃসহ ছুটে চলা, এই উন্মত্ত প্রলয় উপেক্ষা করে প্রাণপণ ছুটে আসা।

ঝড়ো হাওয়ায় মাথার এলোমেলো চুলগুলো দুলছে কিশোরের, কাঁদা-মাখা হাতে একের পর এক কোপ দিচ্ছে জমিতে। আকাশের কালো মেঘ দেখে তার মধ্যেও ভিষন তাড়া বাড়ি ফেরার।

তিন্নি চোখের পানি আর কাদায় লেপটানো হাতে মুখখানা মুছে নিল। এবার আর দৌড় নয় এক ধরণের নিঃশব্দ আকুলতায়, এক অদ্ভুত শান্ত পায়ে এগিয়ে গেল কিশোরের দিকে। বুকের ভেতর দোলা দিয়ে উঠল হাজারো কথা, কিন্তু ঠোঁটে ধরা পড়ল না একটিও।

কাঁপা কাঁপা শরীরে কিশোরের সামনে দাঁড়াতেই ছেলেটা অবাক হয়ে থাকালো।।চোখে মুখে হাজারো জিজ্ঞেসা। খুব করে ভাবছে মেয়েটা ওমন পাগলাটে কেন? হুটহাট চলে আসে কোথা থেকে!

এদিকে ঝড় বৃষ্টি আসছে অন্য দিকে তিন্নির উপস্থিতি।কিশোর বুঝলো না তাকে এখন কি বলা উচিত! বাড়িতে যেতে বলবে? নাকি জিজ্ঞেস করবে কেনো এসেছে?

না না এসব জিজ্ঞেস করা ভালো হবে না মনে হচ্ছে। মেয়েটা সামনে আসলেই কেমন এলোমেলো হয়ে যায় সে। কোন কথাটা বলা দরকার আর কোনটা বলার দরকার নেই সেটাও বুঝে ওঠে না আর তাই তো চুপ করে থাকা তার কাম্য।

তিন্নি একধ্যানে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো। ভেবেছে আজকে অন্তত কিশোর আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু না তিন্নি বরাবরের মতোই নিরাশ হলো। ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে কিশোরের পাশ ঘেঁষে সবুজ ঘাসে লেপ্টে বসে পড়লো। কিশোরের চোখে মুখে অস্বস্তি। খুব কাছাকাছি বসায় তিন্নির নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে। বুঝাই যায় খুব তাড়াহুড়োতে এসেছে সে। কিন্তু কেন এসেছে? একবার জিজ্ঞেস করবো কি?

কিশোর কিছু জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবতে ভাবতেই তিন্নি ভরাট কন্ঠে বললো ” বৃষ্টিতে ভিজবে আমার সাথে?

কিশোর কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল। এ মেয়ের এমন আবদার গুলো বড়ই মোহনীয়। চোখে মুখে সে কি মায়া নিয়ে আবদার করে। তাকে কি করে ফিরিয়ে দেওয়া যায়?

” বৃষ্টি তো আসেনি।

তিন্নি আকাশে দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে মুচকি হাসলো। যেন কিশোরের মুখ থেকে শব্দ বের করতে পেরে এই মূহুর্তে নিজেকে বিজয়ী মনে হচ্ছে।

” তুমি ভিজতে রাজি থাকলেই বৃষ্টিরা এসে আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাবে।

” তোমার অসুখ করলে?

” করুক! তাতে কি? মনের অসুখের খবর তো রাখে না কেউ।

কিশোর চুপসে গেলো। এসব কথাবার্তায় সে অভস্ত্য নয়। এসব কথায় চলে আসলে মনে হয় তাকে কেউ কোনো বেড়াজালে আটকে দিচ্ছে।

দু’চার মিনিটের মতো সমস্ত কিছু নিরব হয়ে গেলো, প্রকৃতির গর্জন, আকাশের ডাক সহ দুটো মানবও। এতোক্ষণের উড়াধুড়া বাতাস থেমে গেলো। আকাশ অন্ধকার থেকে আলোতে নেমে আসতে শুরু করলো। বুঝাই যাচ্ছে বৃষ্টি হবে না। তিন্নি প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে বসা থেকে ওঠে পড়লো। কিশোরের দিকে একটা খাম এগিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো ” প্রকৃতিও চায় না আমরা বৃষ্টিতে ভিজি। হয়তো আর কোনো দিন ভেজা হবে না তোমার সাথে। কিন্তু প্রতিবার আকাশের সাথে আমিও কাঁদব। সে সমস্ত কান্না তোমাকে উৎসর্গ করে গেলাম। ভালো থেকো।

তিন্নি চলে যাচ্ছে। কিশোর এক নয়নে তাকিয়ে আছে সেই চঞ্চলা মেয়েটার দিকে। কি ভিষন আক্ষেপ রেখে গেলো মেয়েটা। কিশোরের বুকের বা পাশটাতে কেমন চিনচিন ব্যথা করছে! এটা কিসের ব্যথা? এমন ব্যথা তো কখনো হয়নি। তবে আজ কেনো? তিন্নি চলে যাচ্ছে, একটু একটু করে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। নীল রঙা জামাটাও ঝাপসা হয়ে আসছে। সাথে ঝাপসা হচ্ছে আর-ও একজনের চোখ।

কিশোর বুঝলো তিন্নি চির বিদায় নিয়েছে। হয়তো এ জনমে আর তিন্নির সাক্ষাৎ সে পাবে না। আচ্ছা তিন্নি আবার আসবে তো হুট করে আমার সামনে?

কিশোরের কঠোর মন ভেঙে চৌচির হলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলো। হাতের খাম টা হাতের মুঠোতেই শক্ত করে চেপে দাঁড়িয়ে রইলো। এই খামে চিঠি আছে কিন্তু কিশোর এই চিঠি কখনোই পড়বে না। এটা এভাবেই থাকবে খুব যত্নে। এটা পড়ে ফেললেই মনে হবে তিন্নি নেই, চিঠি না পড়লেই মনে হবে আস্ত এক তিন্নি সাথে আছে। চিঠিতে কি লেখা আছে সেসব জানার আগ্রহ থাকলেও সাহস নেই। প্রচন্ড বৃষ্টি চলে আসলো হঠাৎই। কিশোরের মনে হলো সে একটু বৃষ্টিতে ভিজবে নিজেকে হালকা করবে কিন্তু না তাকে যে তিন্নি বাঁধা দিলো। খুব করে শাসন করে বললো ” একদম ভিজবে না বলে দিচ্ছি। আমাকে ছাড়া বৃষ্টিতে ভিজবে কতো সাহস তোমার!

কিশোর খামের দিকে তাকিয়ে অশ্রু ভেজা চোখে মুচকি হাসলো। হ্যাঁ এই খামই তো বৃষ্টিতে ভিজতে দিলো না। কিশোর বাড়ির দিকে রওনা হলো, পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে দেখলো তিন্নি নেই, তাকে দেখা যাচ্ছে না। আর চাইলেও তিন্নিকে দেখতে পাওয়া যাবে না ভেবেই কিশোরের বুকের ব্যথাটা বাড়লো। কিশোর ফিসফিস করে আওড়ালো তোমাকে বহুদিন মনে রাখবো তিন্নি।

এই বয়সের প্রেম হোক কিংবা মোহ! সেটা যৌবন অব্দি নিয়ে যাওয়া বড়ই কঠিন। কিশোর বয়সের প্রেম বলতেই আমরা বুঝি আবেগ। কারোটা আবার নিষিদ্ধ অনুভূতি। তিন্নি আর কিশোরের অপ্রেম অধ্যায় এই অব্দি ছিল। এটা ভালোবাসা ছিল নাকি প্রেম ছিল সেটা বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার মস্তিষ্কের।

___________

সিলিং এ ঝুলছে তাহসিন। এখন নয় সেই সকাল থেকেই ঝুলছে। পুলিশ আসতে দেরি হয়েছে কারণ এলাকায় প্রচুর ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। তাহসিন সুইসাইড করেছে। কিন্তু কেনো করছে?

আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী! আমার পাপ আমাকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিয়েছে।”

হ্যাঁ এমন একটা চিরকুট পাওয়া গিয়েছে তাহসিন যেখানে ঝুলছিলো ঠিক তার উল্টো দিকের টেবিলটায়। চিরকুট টা হাতে পেয়েছে জামিয়া। সে বাবার কাছে নিয়ে দিয়েছে। বদিউর চিরকুট টা পুলিশ অব্দি পৌঁছিয়ে দিয়েছে।

থানায় একাধিক মামলায় জড়িত তাহসিন, যেকারণে তার মৃত্যু নিয়ে এক্সট্রা কোনো তদন্ত চললো না। আর যেখানে সুইসাইড নোট লেখা থাকে সেখানে আর কি বা তদন্ত করার থাকে!

তাহসিনের মৃত্যুতে কোনো আহাজারি নেই। কেউ কান্না করছে না। মনে হচ্ছে তার জন্য কান্না করা হারাম। ছেললটার বাবা মায়ের কাছে খবর পৌঁছানো হয়েছে। তার টু শব্দ অব্দি করেনি। করেই বা কি লাভ? আসতেও পারবে না। কারণ প্রকৃতিও চায় না বোধহয় তারা আসুক। রাস্তা ঘাট সব বন্ধ কি ভাবে আসবে!

ঝুম বৃষ্টিতে তাহসিনের লাশের জানাজা হলো। বদিউর চুপিচুপি ফোন করে রাফসানকে জানিয়েছে সবটা। রাফসান অবাক হয়নি।।যেন সে জানতো তাহসিন এমন কিছু করবে।

ঈদগাহ মাঠে পনেরো বিশ জন মানুষ কাক ভেজা হয়ে জানাজায় অংশ নিয়েছে। কুটকুটে অন্ধকারে সর্বশেষ পা ফেলে জানাজায় অংশ নিলো রাফসান। ভেবেছিলো আসবে না কিন্তু তাকে একজন জোর করেই পাঠালো। ছাতা দিয়ে পাঠালেও রাফসান ভিজে ভিজে আসলো। ভিষন মন চাচ্ছে ভিজতে। সেই প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে ভিজতে পারলে আর-ও ভালো লাগতো কিন্তু সে তো তাকে জানাজায় পাঠিয়ে দিলো। মেয়েটার কথাও ফেলতে পারে না। ভিষন ভালোবাসে যে।

শেষ বারের মতো ইমামের ডাক পড়লো রাফসানের উদ্দেশ্যে। মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে হয়। রাফসান বাড়িতে উপস্থিত ছিল না তাই এখন তাকে ডেকে বললো ক্ষমা করতে। রাফসান তিন নাম্বার কাতারে ছিল। শান্ত পায়ে সামনে এসে লাশের খাটিয়ার কাছে দাঁড়ালো। সাদা কাফনে ঢাকা তারই সূদর্শন ভাই-টা। আজ কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে না সে। ড্রাগ নিচ্ছে না। সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে না। মুখেও এলোমেলো বাক্যমালা নেই, চোখ গুলোও কোনো নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টি তে তাকাচ্ছে না। আজ সে শান্ত স্থির।

তাহসিনের চেহারাটা শেষবারের মতো দেখতে মন চাইলো রাফসানের। ইমাম সাব কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দোয়া পড়তে পড়তে মুখের কাফন টা খুলে দিলো। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে। রাফসানের খারাপ লাগছে না। শুধু মনে হচ্ছে চলে গিয়ে ভালো করেছিস। থেকে শুধু শুধু নিজের পাপ গুলো বাড়াচ্ছিলি। কিন্তু আত্মহত্যা তো মহাপাপ ভাই। তুই তওবা কেন করলি না। জানিস আত্মহত্যা তারাই করে যাদের পাপ তাদেরকে আত্মহত্যার দিকে টেনে নিয়ে যায়। যার মানে হলো তোমার পাপ এতো বেশি হয়ে গিয়েছে যে সে পাপের জন্য তুমি আজন্ম পাপ মাথায় নিয়ে ঘুরবে।

জানাজা শেষ করে যে যার মতো গন্তব্যে রওনা হলো। তাহসিন অন্ধকার কবরে একা, বাহিরের প্রকৃতিতে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড। আচ্ছা অন্ধকার কবরে কি তাহসিন ভয় পাবে? না সে ভীতু নয়, সে অনেক চালাক। তা না হলে কি ফারিনের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারতো?

ফারিন রাত জেগে তাহসিনের সাথে প্রেমালাপ করতো। নিজের ঘর নিজের বিছানা নিজের মানুষটা অন্য কারো সাথে মাস্তি করছে। রাফসান সেসব সহ্য করছে। তবে বোকামি করছে ওরা দুজন। তারা ভেবেছে রাফসান ঘুমিয়ে আছে বা রাফসান জানতো না তার স্ত্রী তারই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম করছে।

রাফসান জানতো, তার চোখের পাতায় ঘুম আসতো না। চোখ ভিজে ভিজে আসতো। এপাশ ওপাশ করারও সুযোগ ছিল না। কারণ ওপর পাশেই তো স্ত্রী অন্য একজনের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।

ফারিনকে ডেকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। ফারিন তোমার যদি অন্য কোথায় সম্পর্ক থেকে থাকে তবে তুমি চলে যেতে পারো। ফারিন সেদিন ঠু শব্দ অব্দি করেনি। কিন্তু গভীর রাতে তাহসিনের সাথে ঠিকই আলাপ করছিলো কি ভাবে কি করা যায় সেটা নিয়ে। তাহসিন খুব করে বুঝালো দশ লক্ষ তার চাই। দশ লক্ষ ছাড়া যেন বাড়ি থেকে বের না হয়।

বৃষ্টি কমেনি। রাফসান পাকা রাস্তায় হাঁটছে। ভিজে চুপচুপে। মনে হলো বাড়ি ফিরতে হবে। একজন যে তার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু শরীরটা বড়ই ক্লান্ত লাগছে। এ কিসের ক্লান্ত সে জানে না। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোর নিচে বসে পড়লো। ভাবলো কিছুক্ষন জিরিয়ে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। আশেপাশে কোথাও থেকে মেয়েটার জন্য সোনালু ফুল নিতে হবে। এটা তার আবদার। এই মেয়ের আবদার গুলো ভিষন আনন্দের সাথে পালন করে রাফসান।

কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ নিজের হাতের দিকে তাকালো। এই হাতেই তাহসিনকে থাপ্পড় মেরেছিলো। রাফসান হতাশ হলো, আফসোস নিয়ে বললো থাপ্পড় টা তো সেদিন মারা দরকার ছিল যেদিন তুই আমার স্ত্রীর গায়ে হাত দিয়েছিলি। কি ভেবেছিলি আমি দেখিনি? দেখেছি রে দেখেছি! যে মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আমি মনের খবর বুঝতে পারি সে মেয়েকে তুই আমার চোখের সামনে হলুদ মাখাতে যাস! সেদিনই তোর হাতটা কব্জি অব্দি কেটে দিলে বোধহয় সিলিং এ দড়ি আটকাতে পারতি না। বড্ড ভুল হয়ে গেলো!

আশেপাশের দুই তিন এলাকায় কারেন্ট নেই। সমস্তটা অন্ধকার। জুহা মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছে জানালার পাশে। নদীর স্রোত বেড়ে চলছে ঝড়ের সাথে সাথে। মাঝে মাঝে একটি আকটু ভয়ও করছে। রাফসানের অপেক্ষা বসে আছে মেয়েটা। কখন আসবে সে? সেই সন্ধ্যা থেকে অন্তহীন অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। অপেক্ষা করা সুখের নয়। অপেক্ষারা কষ্ট দেয়,দম বন্ধকর যন্ত্রনা অপেক্ষায়।

একহাতে সোনালু ফুল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো রাফসান। চোখে মুখে আনন্দ, সোনালু ফুল পাওয়ার আনন্দ নাকি জুহাইরাকে খুশি করতে পারবে তাই আনন্দ! নিশ্চয়ই মেয়েটা চিন্তা করছে। করুক, মাঝে মাঝে প্রিয়জনকে চিন্তায় রাখতেও আনন্দ লাগে, বিশাল চিন্তার পর কাছে পেয়ে নাক ফুলিয়ে বকুনি দিবে, সে বকুনি কি যে মিষ্টি। রাফসানের ভিষন লোভ হলো সেই মিষ্টতার স্বাদ নিতে। দ্রুত পায়ে ছুটলো প্রানপ্রিয় স্ত্রীর দিকে। এ যাত্রা মহা আনন্দের। অন্তহীন সন্ধ্যায় অপেক্ষায়মান রমণীর অপেক্ষা যেন শেষ হয় না। এ সন্ধ্যার প্রহর দীর্ঘ হোক, দীর্ঘ হোক সুখ আর মিষ্টতাময় সম্পর্কগুলো।

সমাপ্ত।

( ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)