অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-২৬+২৭

0
790

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ২৬

অনুভুতি শূন্য হয়ে উঠেছে আয়ান। সবকিছু তাঁর কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। তার চাওয়া সত্যি সত্যি পূর্ণ হতে চলেছে। ভাবতেই শরীর কম্পিত হচ্ছে ক্রমশ। ছোট ছোট একজোড়া হাত তার হাত ধরে হাঁটবে। আধো আধো স্বরে বাবা বলে ডাকবে। স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো ইশরার পায়ের কাছে। খানিকটা কাপড় উন্নুক্ত করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। গভীর ভাবে শব্দময় অধর ছুয়ে দিলো সেখানে। কম্পিত কন্ঠ উচ্চারণ করল.. — “আমার অংশ। আমার সংসার। আমার পূর্ণতা।”
ভাঁজ করা পা সমান করে উঠে দাড়ালো। একদম ইশরার মুখোমুখি। নিজের শব্দহীন কন্ঠে বলল..
— “সত্যি! সত্যি ইশু! আমি সত্যি বাবা হবো। তুমি মজা করছো না-তো?”

ইশরা আয়ানের দুহাত মুঠোয় পুড়ে নিল। এই প্রথম অনুভূতিটা সত্যি অসাধারণ। ইশরারও প্রথমে মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল, তার এই পুচকি পেটের ভেতরে একটা ছোট প্রান বেড়ে উঠছে।
আয়ানের গাল টেনে মৃদু হেসে বলল..– “হ্যাঁ আয়ান। তুমি বাবা হতে চলেছো! ভালোবাসার একটা বড় অংশ পেতে চলেছি আমরা।”
আয়ান ক্লান্তিমাখা চোখে তাকিয়ে রইলো ইশরার মুখপানে।‌ যেন আয়ান নামক কোনো জীবন্ত পাথর ইশরার সামনে অবস্থান করছে। সবটা বোধগম্য হতেই ইশরাকে দৃঢ় ভালোবাসার বান্ধনে মুড়িয়ে নিল বাহুডোরে। সেখান থেকে মাথা না তুলেই বললো..
— “ইশু তুমি জানো না, তুমি আমাকে কি উপহার দিচ্ছো? একটা ইরেকটাইল ডিসফাংশন রোগীর কাছে এটা কোনো বড় পাওয়া তুমি জানো না। আমি সক্ষম ইশরা। তাছাড়া প্রথমবার কোনো পিতা বাসর ঘরে জানতে পারছে, সে বাবা হতে চলেছে। বিশ্বাস করো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি খুশি।”

পরক্ষণেই অন্য উপায়ে নিজের ভেতরের অনুভূতি প্রকাশ করলো সে। ইশরাকে শূন্যতায় তুলে ঘুরাতে শুরু করলো। রুমে এসে থামলো না। ইশরা মাথায় হাতে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল..– “আয়ান অনেক হয়েছে, এবার নামা। মাথা ঘুড়াচ্ছে আমার।”

আয়ানের কর্ণপথে ইশরার কাতর কন্ঠস্বর পৌঁছাতেই ছেড়ে দিল। বেডের উপর বসিয়ে দিল। অসহায় কন্ঠে বলল..

— “স্যরি, আসলে খুশি আত্মহারা হয়ে গেছিলাম। বেশি ঘুড়াচ্ছে। এটা কোন ধরনের সেটাই বুঝতে পারছি না। সময় নেই, সারাদিন মাথা ঘুড়াচ্ছে।”

আয়ানের শার্টের কর্লার টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। ফিসফিসিয়ে বলল..

— “এটা প্রিন্সেস আসার লক্ষ্য।”
মুখ ভার করে রইলো। ভেংচি কেটে বলল..– “প্রিন্স আসবে। একদম কিউট।”

— “আমার বেবী তাই আমি বলছি, প্রিন্সেস আসবে।”

শুরু হয়ে গেল দুজনের ঝগড়া। চেঁচামেচির শব্দ দরজার বাইরে থেকেও শোনা যাবে এমন অবস্থা। ইশরা অভিমানী হয়ে মুখ ভার করে বসে রইল। আয়ান চুলগুলো পেছনে হেলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলল..

— “ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, আল্লাহ খুশি হয়ে যা দিবে তাতেই আমরা খুশী। তবে আমার বিশ্বাস প্রিন্সেস আসবে। ”

ইশরা আয়ানের কথণে প্রথমে খুশি হলেও পরক্ষনে মুখ ভার করে রইলো। শুরু হয়ে গেল পূর্বের ন্যায় মারামারি।
________________
কেটে গেছে কয়েকটা মাস। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়েছে সবকিছু। আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেছে ইশরার পেট। তা নিয়ে প্রায় প্রায়ই মন খারাপ করে থাকে ইশরা। তার অবান্তর ধারণা মোটা হওয়ার কারণে তার প্রতি আয়ানের ভালোবাসার ফাটল ধরেছে। তবে আয়ান ইশরার মন খারাপ দূর করে দেয়।
বিছানার মাঝ বরাবর ঘুমিয়ে আছে ইশরা। কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়ে সে। টেবিলের উপরে বই। আয়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক বেলা হয়ে গেছে। ইশরাকে ডাক দিলো না। সে চাইছে না কিন্তু ইশরার ঘুম ভাঙুক। কিছুদিন পরে পরীক্ষা। পরীক্ষা বাদ দিয়ে বেবীর চিন্তা করলে শুধু একটা বছর নষ্ট হবে‌। তাছাড়া পরে বেবী জন্ম নিলে চিন্তা করার বদলে আরো বাড়তে থাকবে, পড়ার সময় হয়ে উঠবে না।

এগিয়ে গেল আয়ান। ইশরার খোলা এলোমেলো চুলের ভাঁজে ছুঁয়ে দিলো। ব্লাঙ্কেটটা বুক পর্যন্ত টেনে দিল। স্মিত হেসে বলল..– “আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরে আমি আমার প্রিন্সেস এর কাছে থাকবো।”
থেমে থাকা পায়ের গতি বাড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে যেতে উদ্দেগ হতেই হাত ধরে টান দিলো ইশরা। ঘুম ঘুম নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে ক্লান্তিমাখা হাঁসি হাসলো। বলল..

— “তুমি অফিসে যাচ্ছো, আমাকে কেন ডাক দিলে না?”
— “এখন তুমি একা নয় ইশুপাখি! দুইজন। তাই সবকিছুই একটু বেশি করতে হবে।”

— “তাই বলে তুমি টাই ছাড়া যাবে?”

কদাচিৎ হাসলো আয়ান। সাদা শার্টের সাথে কোনো টাই নেই। এই দায়িত্বটা শুধু ইশরার। যেদিন ইশরা জেগে থাকে সেদিন টাই বেঁধে যায়। বাকি দিনগুলোতে টাই বিহীন যাতাযাত করে। কাবার্ড থেকে ইশরার পছন্দ সই টাই এনে দিলো আয়ান। ইশরা বেডের কোণে হেলান দিয়ে বসলো। স্বযত্নে আয়ানের গলায় টাই বেঁধে দিল। আয়ানের ললাটে উষ্ণ ভালোবাসা পরশ লাগিয়ে দিলো। ব্যাগটা নিতে চাইলেই বাঁধ সাধল আয়ান। আবেগীয় কন্ঠে বলল..– “টেবিলের উপর রাখার আছে, খেয়ে নিও। নিজের আর প্রিন্সেসের যত্ন নিও।”
— “আমিও তোমার ফেরার অপেক্ষায় থাকবো।” তাড়াতাড়ি এসো..

ইশরার বাক্য ধ্বনি শেষ হওয়ার আগেই রুম প্রস্থান করলো আয়ান। আয়ানের যাওয়ার দিকে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে টেবিলে নিবদ্ধ করলো। একটা প্লেট উবুত করে আরেকটা খাবারের প্লেট ঢেকে রেখেছে।
______________
সূর্যের কিরণ অনেকটা হেলে পড়েছে পশ্চিমে। সূর্যের শেষ রশ্মি শক্তিহীন দূর্বল হয়ে পড়েছে। রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। পাখিরা নিজের যাত্রা শুরু করেছে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্য। আকাশে চাঁদের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। পাখিদের সাথে যোগ দিয়ে সূর্যকে বিদায় দিয়ে রুমে ফিরবে ইশরা। তনয়া এসেছে বাড়িতে। একা একা চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। ৬ মাসের উঁচু পেট নিয়ে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়।
কেটে গেল আরো কিছুক্ষণ সময়। সন্ধ্যার আকাশে সূর্য অনুপস্থিত। লাল রঙের আভার সাথে এক খন্ড মেঘ রয়েছে তাকে সঙ্গ দিতে। চারদিকে আযান পড়ে গেছে। তাই অপেক্ষা করার মতো সময় নেই তার কাছে। পেটে হাত দিয়ে তনয়াকে বলল..

— “আযান পড়েছে। চলো নিচে যাই।”
— “স্যরি ভাবী। আমার খেয়াল ছিলো না। ভাইয়া এসে নির্ঘাত আমাকে বকবে।”
তনয়া এগিয়ে এলো। ইশরার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। অজু করে নামাজ আদায় করে নিলো ইশরা। জায়নামাজ ভাঁজ করে রাখল। কিছুক্ষণ রুমের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পায়চারী করলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার। ইতোহস্ত বোধ করে আয়ানের নাম্বারে ফোন করলো। রিসিভ হলো না। সময় কাটানোর জন্য অনলাইন থেকে কয়েকটা বেবীর ছবি ডাউনলোড করে দেখতে লাগল। বেবীটার মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল..

— “আমার প্রিন্সেসটা কবে আসবে। আচ্ছা এতো কিউট হবে তো?”

আয়নার সামনে দাঁড়ালো কিছুক্ষণ। পেটে হাত রেখে বলল..– “প্রিন্সেস, আমার এতোবড় একটা জায়গায় থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না। তোমার এই ছোট পেটে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না তো?”
নড়েচড়ে উঠলো আয়ান ইশরার ছোট প্রিন্সেস। খুশিতে খিলখিলিয়ে উঠল ইশরা। মুখ ফুলিয়ে শুয়ে পড়লো সে। ফোনে সাতটা ত্রিশে এলার্ম দিয়ে পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।
নিদ্রা ভঙ্গ হলো রাত নয়টার দিকে। নিজের কাছে অতি পরিচিত মানুষকে অনুভব করে ভঙ্গ হয়েছে। পাশে তাকাতেই মস্ত বড় একটা টেডি নজরে এলো তার। টেডির একহাত তার ঢিলেঢালা ফ্রোক বেধ করে উন্নুক্ত পেটে অবস্থান করছে। ইশরার কাছে টেডিটাকে কোনো প্রাণহীন বস্তু লাগছে না। বরং ‌রক্ত মাংসে গড়া মানব লাগছে। ধীরে ধীরে উঠে বসলো সে। টেডিটার গাল টেনে দিলো। নাকের ডগায় নিজের নাক ঘসে দিলো। টেডিটাকে পেয়ে খুশিতে এতোটাই আত্মহারা যে কে টেডিটাকে দিলো, সেটাই ভুলে গেল।

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ২৭

নিঝুম রাত। এক ফালি চাঁদ উঠেছে আকাশ জুড়ে। তার আলোহীন রশ্মি জানালা বেঁধ করে ভেতরে না পৌঁছালেও নিদ্রা নেই ইশরার নয়ন জুড়ে। জানালার কাঁচের ফোকট দিয়ে রাতের আকাশটা বেশ লাগছে তার কাছে। আয়ান নিদ্রাচ্ছন্ন। বিগত রাতগুলোতে প্রচুর জ্বালিয়েছে তাকে। রাতের তার যন্ত্রণা দিনে অফিসের চিন্তা, ছেলেটার এতো ধৈর্য জানত না। ইশরা এই জ্যোস্না হীন নিজুম রাতে আয়ানের নিদ্রা ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছে না। তার ছোট প্রিন্সেস আয়রা পেটের ভেতর থেকে নড়াচড়া করছে। ব্যাথায় কাতর সে। বেবী পেটের ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে নাকি কোনো অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। আয়ানকে ডাকতে চেয়েও ব্যর্থ সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। হাঁটুতে মাথা মুড়িয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো সে।

নিসুপ্তি উগ্রে কান্নার শব্দ শ্রবণপথে পৌঁছাতেই উঠে বসলো আয়ান। ইশরার এমন অবস্থায় দেখে ভেতরটা কেঁপে উঠলো তার। ইশরার পিঠে হাত রেখে বলল..
— “কি? কি হয়েছে ইশুপাখি। কাঁদছো কেন? এই তো আমি।”
দৃষ্টি তুলে আয়ানের মুখে বন্দী করল। অন্ধকার রুমের ফাঁকে আলোর ব্যবস্থা না থাকলেও তার কাতর কন্ঠস্বর ইশরাকে ছন্নছাড়া করে তুলেছে। ছলছল নয়নে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল..
— “আয়ান, আয়রা পেটে বসে তার মাকে কিক করছে! পৃথিবীতে আসার আগেই এমন করছে; আসলে না জানি কি শুরু করে দেয়।”

ইশরা দূর্বল হাসলো। ইশরাকে বাহুডোরে নিয়ে নিল। একহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, অন্যহাত পেটের উপরে রেখে বলল..– “তোমার পেটে তো এইটুকু জায়গা। সেখানে প্রিন্সেস ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। নড়াচড়া করতে গিয়ে তোমার পেটে আঘাত লাগছে। সে ইচ্ছে করে আঘাত করে নি।”

দ্বি মুহূর্তে অতিবাহিত হওয়ার আগেই আয়ানের হাতটা ছিটকিয়ে সরিয়ে দিল। পেটে হাত দিয়ে বলল..

— “তাই তো বলি বেবী তার মাকে কেন কিক করছে। সে-তো তার মাকে কখনো আঘাত করতেই পারে না। তাহলে কি তোমার ক্ষুধা লেগেছে। আয়ান..

আয়ান ইশরার চিৎকারে কেঁপে উঠলো। করুন সুরে বলল..– “কি?”

— “যাও, আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসো। প্রিন্সেস এখন আইসক্রিম খাবে।”

— “ইশু তুমি পাগল হয়ে গেছো? এইসময় বাইরের খাবার খেতে নেই! বেবী অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

নাকে কান্না জুড়ে দিলো ইশরা। ঠোঁট উল্টে বলল..
— “তুমি আমার বেবীর সাথে হিংসা করছো আয়ান!
আয়ান অসহায় চাওনি দিলো। দুহাত জোর করে বলল, আমি এখুনি আইসক্রিম নিয়ে আসছি। থাম বাবা।”

— “আয়ান! আমি তোমার বাপ হই? ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ!”

আয়ান উত্তর দক্ষিন আকাশ পাতাল না ভেবে দিলো এক দৌড়।
_____________
সময় বারোটা পঞ্চাশ মিনিট। সূর্য মাথার উপরে। সময়টা বসন্তকাল। চারদিকে ফুলে প্রাণ বুলানোর‌ সুভাস বইছে। সেই মন মাতানো সুভাস জানালা বেধ করে ইশরার নাকে এসে পৌঁছেছে। ইশরা ফুলগুলো দেখতে উঁকি ঝুঁকি মারছে জানালার বাইরে অদূরে। মিসেস্ চৌধুরী রিপোর্ট দেখছেন। আয়ান টেবিলের উপর দুহাত ভাঁজ করে ইশরার কান্ড দেখছে। এই নিয়ে বত্রিশ বার ইশরাকে বসতে বলেছে। আয়ানের বলার সাথে সাথে চেয়ারে বসে আবার মিনিট পেরুবার আগেই উঠে জানালার পাশে যায়।

মিসেস্ চৌধুরী রিপোর্ট রেখে ইশরাকে ডাক দিলেন। বাধ্য মেয়ের মতো ইশরা চেয়ারে বসলো। মিসেস্ চৌধুরী ইশরাকে খাবার সাধলেন, খেল না ইশরা। মাথা চুলকে বলল..

— “আমার এই ফল খেতে একদম ভালো লাগে না। আমার তো চিপস্, কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম খেতে অনেক ভালো লাগে। সেগুলো আছে?”

— “না সেগুলো নেই। সেগুলো খেলে আপনার প্রিন্সেস আয়রা অসুস্থ হয়ে পড়বে যে। আয়রাকে ভালো রাখতে হলে এইসব খেতে হবে। ওগুলো খাওয়া বন্ধ করে দিন।
ভেতরে ভেতরে অতিশয় ক্ষোভে ফুঁসছে ইশরা। একবার বাড়িতে যাক, তার অবস্থা যদি খারাপ করে না পারি, তাহলে আমার নাম ইশরা নয়। ইশরার ভাবনার মাঝে আবার মুখ খুললেন মিসেস্ চৌধুরী।
আপনি কোন ভেলিভারি করতে চান?”

— “নরমাল ডেলিভারি। আমি সম্পূর্ণ মাতৃত্বে স্বাদ উপভোগ করতে চাই ডাক্তার।”

— “তাহলে খাওয়াটা একটু করিয়ে দিন। নরমাল ডেলিভারির সময় বেবী ও মা; দু’জনেই কষ্ট হবে।”
.
গাড়ি বসে রাগে ফুস ফুস করছে ইশরা। এই আয়ানকে আজ এইটা শাস্তি দিয়েই হবে। ইশরা কি খেতে চায়, খেতে চায় বেবী। তাহলে তার দোষ কোথায়? আয়ানকে জব্দ করার জন্য অন্য উপায় ভেবে রেখেছে ইশরা। আয়ান প্রবেশদ্বার খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। আয়ান উপস্থিতি অনুভব করে জানালার পাশে সেঁটে গেল ইশরা। ইশরার পেট অনেকটা উঁচু হওয়ার কারণে সিট বেল্ট বাঁধে নি। তাই হসপিটালে আসার উদ্দেশ্যে যখন বেরিয়েছিলো, তখন আয়ান এক হাতে জড়িয়ে ধরেছিল। অন্যহাতে ড্রাইভ করেছে। এখন এতোটা দূরে মনে হচ্ছে, মাঝখানে ভারত পাকিস্তানেও এতো বড় বর্ডান নেই। নিজের সিট বেল্ট বাঁধল না। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল..
— “এই এদিকে এগিয়ে বসো।”
ইশরা বসলো না। আয়ান ঠোঁটে দূর্বল হাসির রেখে দেখা গেল। মেয়েটা তার উপরে অভিমান করেছে। গাড়িতে অবস্থান করা ছোট ড্রায়ার থেকে একটা পলিথিনে মোড়ানো প্যাকেট বের করে ইশরার দিকে এগিয়ে দিলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল..– “ইশু, শুভ ঋতু শরৎকাল।”
দ্বি মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার আগেই ফিরে চাইলো ইশরা। ছোট একটা প্যাকেটের মাঝে কয়েকটা কাশফুলের পাপড়ি বন্দী। একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল সে। খুশিতে মুখ চেপে ধরলো। কি করা উচিত তার, সেই ধ্যান হারিয়ে গেল। অস্ফুট স্বরে বলল..– “শরৎ এর কাশফুল!”

— “হম। শরৎ এর কাশফুল। বলেছিলে না, বর্ষার কদম গুচ্ছ শরৎ আর শরৎ এর কাশফুল হেমন্তে।
শীতেই দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেওয়া হয়নি। তাই বসন্তে দিলাম। ভালো লেগেছে?”

অসম্ভব বলে লাফ দিয়ে আয়ানের কাছে আসার চেষ্টা করলে দমিয়ে দিয়ে সে। পেটের দিকে ইশারা করলো। অতঃপর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ড্রাইভে মন স্থাপন করলো।

__________
বেডের উপরে কসমেটিক্সের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইশরা নিজের মনমতো একটা তুলছে পুর্বের জায়গায় না রেখে অন্য জায়গায় রাখছে। আবার অন্য একটা তুলছে। তার মুখোমুখি আয়ান বসে ঠোঁট চেপে ইশরার কান্ড দেখছে। অর্থাৎ সব সাজগোজের জিনিস খুলো আয়ানের মুখে মাখছে। গত তিন ঘন্টা ধরে এভাবে বসে থাকতে থাকতে অসন্তুষ্ট আয়ান। নাকোচ করলেই ইশরা নাকে চোখে কান্না শুরু করে দিবে, অতঃপর তার মা এসে ..
ইশরাকে ভাবল্যাস হীন বসে থাকতে দেখে বাহুতে নাড়া দিলো আয়ান। মিষ্টি কন্ঠে বলল..

— “ইশু, এই ইশুপাখি তোমার সাজানো হয়েছে?
ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল — “কয়বার বলা লাগে, হয়নি।
এই প্রথমবারই আয়ান জানতে চেয়েছে হয়েছে? আর প্রথমবারেই ঝাঁঝালো উত্তর।”

সাজ শেষ করে আয়ানের গাল চেপে দু’পাশে ঘুড়িয়ে অবলোকন করলো। দুহাতে হাফ ছাড়ার ভাব নিয়ে বলল..
— “কম্পিলিট!
আয়রা দেখো তো, তোমার বাবাকে কেমন লাগছে?”

সাথে সাথে ভেতর থেকে আঘাত করলো ছোট বেবী। ইশরা পেটে চেপে বলল..

— “দেখো প্রিন্সেস এর পছন্দ হয়েছে। তাই কিক করেছে।”

আয়ান সময় নিল না। নিজের সাজগোজ ময় মুখটা ইশরার পেটের উপর রাখলো। নিজে অনুভব করলো সেই চিরপরিচিত অনুভূতি। ইশরা কান ধরে টেনে আয়ানকে তুললো। আঙুল তুলে বলল..– “তুমি আমার পেটে মাথা রেখেছো কেন? বেবীর শরীরে এইসব লেগেছে না।”

— “না ইশুপাখি, আয়ু তার বাবাকে দেখতে চেয়েছে তাই দেখালাম। দেখবে বড় হয়ে আয়রা সাজ পাগল হবে। তার বাবাকে সারাদিন এগুলো দিয়ে সাজাবে🥴।

” সত্যি বলছো তুমি, তাহলে আমার পেটটাকে সাজিয়ে দাও” বলেই আয়ানের হাতে ব্রাশ তুলে দিলো। আয়ান ব্যাধি নয়নে তাকিয়ে রইল। যেন পলক ফেলতে ভুলে গেছে সে।

— “ইশু পেট ধুতে গেলে বেবীর ঠান্ডা লেগে যাবে।”

পুনরায় নাকে কান্না জুড়ে দিলো সে। আয়ানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল..

— “তুমি তো কখনো প্রেগন্যান্ট হয়নি, তাই জানো না কতোটা কষ্ট হয়। বেবী খেতে চায়, তুমি খেতে দাও না। সাজতে চায়, সাজতে দাও না..

ছেলেরা প্রেগন্যান্ট, আদোও কি সেটা সম্ভব কখনো। আয়ান শুধু ফাস্টফুড খেতে বারণ করেছে। আয়ানের ধ্যান ভাঙল ইশরার টানা-টানিতে। হাত ধরে টানতে টানতে বলল..
— “আজকেই অপারেশন করে আয়রাকে তোমার পেটে নিবো। তারপর দেখবো, তুমি কি করো। চলো..

ইশরা পার্সব্যাগ নিয়ে আয়ানের হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নেমে গেল। আয়ান অসহায় হয়ে ইশরার দিকে একবার আর হাতে দিয়ে একবার তাকালো। আচ্ছা যদি অপারেশন করে আয়ানের পেটে বেবী নিয়ে আসে, তখন আয়ানকে বাবা ডাকবে নাকি মা। 😐

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)