অপরাজিতা পর্ব-০৪

0
1

#অপরাজিতা

#শারমিন_প্রিয়া

#পর্ব_চার

সারারাত জার্নির পর ভোরে সিলেট কদমতলীতে নামিয়ে দিলো আমাদের। দেশে এই প্রথম এত লং জার্নি করলাম। শরীর বড্ড ক্লান্ত লাগছিল। ভাইকে নিয়ে একটা হোটেলে ঢুকে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। স্বামীর কাছে যাচ্ছি, শ্বশুরবাড়ি এই প্রথম যাচ্ছি—একটু পরিপাটি না হয়ে গেলে খারাপ দেখায়। সকাল সকাল মানুষের আনাগোনা একটু কম। হোটেলের নিরিবিলি একপাশে গিয়ে মুখে একটু ফেস পাউডার, চোখে কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিলাম ঠোঁটে। চুল ঠিক করলাম। রোশানের কাছে কল করলাম কয়েকবার, রিসিভ হলো না। ভাবলাম, ফোন সাইলেন্ট করে হয়তো ঘুমাচ্ছে।

সিলেট থেকে কালিগঞ্জ বাজার নেমে তাদের বাড়ি যেতে হয়—এতটুকু জানি। শুধু গ্রামের নামটা জানি না। সম্ভবত ওই বাজারের পাশেই হবে। কাউকে জিজ্ঞেস করার আগেই দেখি বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিগঞ্জ বলে ডাকছে। উঠে বসলাম ভাই আর আমি। গাড়ি এখনও খালি। দূর-দূরান্তের লোকজন, যারা বাইরে থেকে এসেছে, তারাই একজন দুজন করে উঠছে। আমি আর ভাই একটা সিটে বসা ছিলাম। তখন হেলপার ভাইকে তুলে দিয়ে অন্য সিটে বসিয়ে, একটা সিঙ্গেল মেয়েকে আমার পাশে বসালো।

আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। দেখছি নতুন শহরটাকে। পাশে বসা মেয়েটা কতক্ষণ আমার দিকে সিলেটি ভাষায় কী একটা বলল, আমি বুঝতে পারিনি। ফিরে শুদ্ধ ভাষায় বললাম, “আপনি কী বললেন? আমি বুঝিনি।”

সে তখন হেসে বলল, “ওহ! আপনি তাহলে নন-সিলেটি? আমি আরও সিলেটি মেয়ে ভেবে এই ভাষায় কথা বললাম।”

আমি মুচকি হেসে ফের বাইরে চোখ দিলাম। রোশানের কাছে যাচ্ছি। আমার ভেতরে খুশি লাগছে, আবার কেমন যেন অদ্ভুত ফিল হচ্ছে। মিশ্র এক অনুভূতি। নিজেই বুঝতে পারছি না এর অর্থ।

ফোন চেক করছি বারবার—রোশান কল দিলো কিনা?

মেয়েটা আবার প্রশ্ন করল, “আপু, আপনি কোন ব্র্যান্ডের কাজল ইউজ করেন?”

আচমকা এমন প্রশ্নে চমকে উঠি খানিক। হাসি পায়। অদ্ভুত মেয়ে। প্রথম দেখায় কেউ এসব সব প্রশ্ন করে! হেসে তাকাই তার দিকে। সে বলল, “আসলে চোখ দুটো এত সুন্দর লাগছে তো! কাজলটা ও নিখুঁত, কালো চকচক করছে। আমি কাজল পছন্দ করি, খুব দেই। তাই জিজ্ঞেস করা। নাম বললে আমি এই কাজল কিনব।”

“আমার কাজলটা কোলসাল ব্র্যান্ডের।”

“বাসা কোথায় আপনার? আর যাবেন বা কোথায়?”

বুঝলাম, মেয়েটার সঙ্গে কথা না বললে এরকম প্রশ্ন করতেই থাকবে। তার চেয়ে বরং কথা বলেই সময় যাক। বললাম, “বরিশাল থেকে আসছি।”

“কেন? কোথায় যাবেন?”

কোনো প্রশ্ন বাদ রাখেনি সে। আমিও কেমন ফ্রি হয়ে গেলাম। তাকে সব বললাম। সে শুনে তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। বলে, “আল্লাহ গো! এত সাহস আপনার! এত দূর থেকে খুঁজে খুঁজে চলে আসছেন! কালিগঞ্জ বাজার আমাদেরও বাজার, আমার বাড়িও ওখানেই। কোন গ্রাম বলুন, আমি চিনতেও পারি।”

জানালাম, “কোন গ্রাম এখনও শিওর না। তার থেকে শুনে বলব।”

” ওকে, আবার কল দিয়ে দেখেন ভাইয়ার কাছে।”

মেয়েটার কথামতো আবার কল দিলাম। সকাল বাজে আটটা। তিনবার রিং হলে রোশান ফোন তুলল। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,

“হ্যাঁ বেবি, বলো? কেমন আছো? কী করছো?”

হেসে বললাম, “সারপ্রাইজ আছে আজ।”

“কি সারপ্রাইজ?”

“আগে বলো, তোমাদের গ্রামের নাম কী?”

“হঠাৎ গ্রামের নাম কেন?”

“আরে বলো না। বলছি তো সারপ্রাইজ!”

“না, না বললে বলব না। আগে বলো, কী সারপ্রাইজ?”

দেখলাম, এরকম করলে বলবে না। সরাসরি বলেই দিলাম। বললাম, “আমি তোমার বাড়ি আসছি। সিলেট নেমে এখন কালিগঞ্জের গাড়িতে বসে আছি। গ্রামের নাম বলো, ওখানে গিয়ে চলে যাব। না না, আমি যাব না। প্রথমবার যাচ্ছি, নিজ থেকে গেলে কেমন দেখায়! বাজারে বসে থাকব। তুমি এসে নিয়ে যেও।”

“কি!” বলে উঠল সে। কণ্ঠে যেন বজ্রপাত। তুমি আগে বলবা না তুমি আসছো? না জানিয়ে কেউ এতদূর আসে?’”

আমি নিঃশব্দ হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম, আমার আসার খবর শুনে সে খুশি হবে—এখন দেখি উল্টো রাগ।
সে বলল,
“তুমি বাজারে এসে দাড়িয়ে থেকো। আমি এসে নিয়ে যাব।”

“ওকে,” বলে ফোন কেটে দিলাম।

যতক্ষণ কথা বললাম, মেয়েটা ততক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল, কি বলছি সেটা খেয়াল করছিল। জিজ্ঞেস করল,
“ভাইয়া কি বললেন?”

“সে বলছে, বাজারে গিয়ে দাঁড়াতে, সে এসে নিয়ে যাবে।”

“আচ্ছা, যেহেতু উনি আমার এলাকার মানুষ, হয়তো আমি চিনতে পারি। উনার নাম?”

“রোশান।রোশান ওর নাম?”

মেয়েটা ঠোঁট উল্টে বলল,
“চিনলাম না। অন্য কোনো নাম আছে?”

“না, এটাই তার নাম।”

“উনাকে একটু দেখতে পারি? কোনো ছবি?”

“নিশ্চয়ই।”

আমি রোশানের আর আমার একসাথে তোলা ছবি দেখালাম।
ছবির দিকে তাকিয়ে মেয়েটা হঠাৎ অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি চোখে চোখ রেখে জানতে চাইলাম, “কি হলো?”

সে হঠাৎ বিষম খেলো। মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হলো আপু?”

হেসে বলল,
“কিছু না। অনেক সুন্দর পিক তো, অবাক হয়ে গেছি দেখে। আরও থাকলে আরও দেখান।”

আমি তাকে অনেক ছবি দেখালাম। চঞ্চল মেয়েটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল। হাসছে, কিন্তু মনে হচ্ছিল, সেটা জোর করেই।

তিন ঘণ্টার ব্যবধানে গাড়ি কালিগঞ্জ বাজারে এসে থামল। গল্প করতে করতে কখন যে পৌঁছে গেছি, বুঝতেই পারিনি।আসলে যাত্রাপথে সঙ্গী ভালো হলে সময় যেন উড়ে যায়, যাত্রাও হয়ে ওঠে আনন্দময়।

মেয়েটা বলল,” আমি আর নামি। এই নিন আমার নাম্বার। এত দূর থেকে এসেছেন, অচেনা জায়গা—দরকার হলে কল করবেন। আর সমস্যা না হলেও একবার আমার বাড়িতে ঘুরে যাবেন, কেমন?”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
একসাথে গাড়ি থেকে নামলাম। মেয়েটা চলে গেল।

শেষ মুহূর্তের আচরণটা একটু অদ্ভুত ঠেকল। হেসে উড়িয়ে দিলাম। ভাবলাম, মেয়েটা তো শুরু থেকেই অদ্ভুত।

রোশানকে কল করলাম। কয়েকবার রিং হওয়ার পর দেখালো, ফোন সুইচ অফ।হঠাৎ অদ্ভুত লাগতে শুরু করল সবকিছু।আবার মনে পড়ল, যে আমাকে এত ভালোবাসে, সে আমাকে এড়িয়ে যাবে না।অন্ধ বিশ্বাস আমার তার প্রতি।

একটা দোকানে বসলাম আমরা। ভাইয়ের মুখ গোমড়া। বলল,
“কেমন মানুষ দুলাভাই! আমরা প্রথমবার আসছি, আমাদের নিতে আসবে না, ফোনও তুলছে না।”

অনেকক্ষণ বসে থাকলাম। আমার বুক ধুকপুক করতে লাগল। মনে হচ্ছিল, তাহলে কি আমি আবার ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি?কেন সে এমন করবে?

দোকানদার ভাই আমাদের আপ্যায়ন করলেন। শুনলেন আমরা এত দূর থেকে এসেছি। কফি দিলেন, গল্প করলেন।রোশানের নাম বললাম, কিন্তু কেউ চিনতে পারল না। হয়তো তার ডাকনাম ভিন্ন।

ঘণ্টাখানেক পর রোশান কল করল। বলল,
“আমি আসছি বাজারে।”

অবশেষে এল।আমাদের নিয়ে গেল একটা সুন্দর একলা বাড়িতে। চারপাশে সারি সারি ফুলের গাছ, নতুন করে বানানো বাড়ি। একটু দূর দূর অন্য বাড়িগুলো। বাড়ির উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতেই একজন মহিলা, ঠিক মহিলা না মেয়ে বলাই চলে। ছবিতে দেখেছিলাম।চিনলাম সে আমার বড় ননদ। উনি হেসে বের হলেন।

আমি সালাম করলাম। ঘরে ঢুকলাম।

কিন্তু বারবার মনে হতে লাগল—রোশান তার নিজের বাড়িতে না নিয়ে আমাদের এখানে আনল কেন?

ননদ নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ভাই বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিল।

আমি আগে গোসল করলাম। তারপর উঠোনে ডেকে নিয়ে রোশানকে বললাম,
“তোমার বাড়িতে না নিয়ে আমাদের এখানে নিয়ে আসছো কেন?”

“আরে, বাড়িতে মামলা-টামলা চলছে। ঝামেলার মধ্যে ওখানে গিয়ে লাভ নাই। এখানে থাকো। এখান থেকেই আমরা ঘুরব। সব কিছু দেখাব।”

আমার যা সন্দেহ হয়েছিল, তা একদম পাকাপোক্ত হয়ে গেল। আমি শিওর, রোশান কিছু লুকাচ্ছে।হয়তো বাড়িতে বউ আছে, আর আমাকে লুকাচ্ছে।মাথা ঝিনঝিন করে উঠল। আমি আর ভাবতে পারছিলাম না।

আমি জেদ ধরলাম,
“আমাকে তোমার বাড়িতে নেওয়া লাগবেই। আমি যাব। তুমি নিশ্চয়ই কিছু লুকাচ্ছো?”

অল্প অল্প করে কথার লড়াই শুরু হল। একপর্যায়ে তর্কাতর্কি।ভাই ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।তার বোন এসে আমাদের দুজনকে শান্ত হতে বলল।

আমি মাথা দুহাত দিয়ে চেপে বললাম,
“আপা, কিছু লুকানো থাকলে দয়া করে বলুন আমাকে। আমি বুঝতে পারছি, কিছু একটা আছে। কি সেটা জানতে চাই। রোশানের কি আরেকটা বউ আছে বাড়িতে? বলুন প্লিজ। আমার দম বন্ধ লাগছে। সত্যটা না বললে আমার অশান্তি আরও বাড়বে।”

তিনি বললেন,
“শান্ত হও সুমাইয়া। ঘরে চলো।”

“না, ঘরে যাব না। যদি কেউ না বলেন, আমি বাজারে গিয়ে রোশানের ছবি দেখিয়ে সব জানব। তখন আপনাদের মান-সম্মান কোথায় থাকবে?”

“না, এমনটা করো না তুমি। তুমি ঘরে এসো, আমি সব বলছি।”
রোশান বলল, ” আপা! কি করছো এসব?”
আপা বাধা দিলেন রোশানকে, “অনেক হয়েছে৷ এভাবে লুকোচুরি হয় না। সত্য চাপা থাকে না। সামনে আসে। এখন বলে দেওয়াই ভালো। নয়তো সামনে আরও সমস্যা হবে।”

আপা আমার হাত ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলেন। রোশান রাস্তার পাশে করুণ মুখে দাঁড়িয়ে রইল। এক পলক তাকিয়ে ঘরের দিকে চললাম। ওর এরকম মুখ দেখে আমার মোটেও ভালো লাগে না। মায়া লাগে ভীষণ।

আপা আমার হাত ধরে বলতে লাগলেন, “রোশান তোমাকে খুব খুব ভালোবাসে। আমাদের সবার ঊর্ধ্বে গিয়ে সে তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু মানুষের জীবন খুব অদ্ভুত। কখন কাকে ভালো লাগে আর ভালোবেসে ফেলে মানুষ—তা নিজেই টের পায় না। রোশানের জীবনে একটা সত্যি লুকানো আছে। এখন তুমি সেই জিনিসটা ধরে রাখবে, নাকি তোমার প্রতি তার অসীম ভালোবাসা দেখে ওটাকে মেনে নেবে, সেটা তোমার ব্যাপার।”

আমার হৃদপিণ্ড কাঁপতে লাগল। যা শুনতে যাচ্ছি, তা নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে না। তবু দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, “আগে বলুন, শুনি।”

উনি ধীর কণ্ঠে বললেন, “রোশানকে চার বছর আগে বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়া হয়, পরিবারের পছন্দে। তার অতটা আগ্রহ ছিল না। একটা ছেলে আছে, দুই বছরের। তারা বাড়িতে থাকে। সে বউ জানে না তোমার কথা। মূলত এই কারণেই সে তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে না। সে ওকে ভয় পাচ্ছে না, সে ভয় পাচ্ছে তোমাকে হারানোর। তুমি জানার পর যদি তাকে ছেড়ে দাও! তুমি ভাবতেও পারবে না, তোমাকে কতটা ভালোবাসে। একটু বিবেচনা করে দেখো এখন বিষয়টা।”

আমি কতক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকলাম জানি না। চেষ্টা করেও কোনো কথা বের করতে পারলাম না। এই মুহূর্তে আমার কেমন অনুভূতি, আমার ভেতরের অবস্থা—সেটা আমার মতো ভুক্তভোগীরাই জানবে। ভাষায় কখনো প্রকাশ করতে পারব না।

আপা হাতে চাপ দিয়ে বললেন, “তুমি চুপ কেন? কিছু তো বলো।”

থেমে থেমে বললাম, “আপনি জেনেশুনে দুটো মেয়ের ক্ষতি করলেন কেন? আপনি তো জানতেন সে আমাকে বিয়ে করছে। আমার বাড়ির লোক আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাও আপনি কীভাবে দুটো মেয়েকে ঠকাতে পারলেন?”

“রোশানকে আমি বাধা দিয়েছিলাম, সে বলেছে__ আপা, এই মেয়েকে, আমার চাইই চাই। না পেলে মরে যাব। তুমি সব ঠিক করে দাও। বাধ্য হয়ে করতে হলো। যা হওয়ার হয়েছে, তুমি মেনে নাও সুমাইয়া। তুমি আর রোশান তো বাইরে থাকবে। এই তো কদিন ছুটি শেষ।”

আপাকে বিশ্রী লাগতে শুরু করল আমার কাছে। স্বার্থপর মনে হলো—নিজের ভাইয়ের জন্য অন্য মেয়ের জীবনে এমন খেললেন! আমি উঠে দাঁড়ালাম। ভাই উঠছে কিনা দেখতে গেলে দেখি সে উঠে বসেছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ টলমল করছে, ফোঁটা ফোঁটা করে পানি পড়তে লাগল।

“এখানে আর থাকব না। এখনই চলে যাব,” কেঁদে কেঁদে বললাম ভাইকে।

সে চুপচাপ উঠে শার্ট গায়ে দিল।

এই সময় রোশান ঘরে ঢুকে আমার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিলো।

বলল, “কোথাও যেতে পারবে না এখন।”

আমি কিছু বলার আগেই ভাই পরপর কয়েকটা থাপ্পড় মারল রোশানকে। আচমকা চমকে উঠলাম সবাই। রোশানের বোন চটে গেলেন। কিন্তু রোশান কিছু না বলে উল্টো ভাইয়ের হাত ধরে বলল, “তোমরা যেও না। এখন আনটাইম, গাড়িও পাওয়া যাবে না। প্লিজ মাথা ঠান্ডা করো।”

কোনো কথা না শুনে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। রোশান পেছনে পেছনে আসতে লাগল। একবার আমাকে, একবার ভাইকে বোঝাতে লাগল। শক্ত করে আমার হাত ধরে বলল, “আমার কথাটা শুনো আগে, নয়তো ছাড়ব না।”

“হাত ছাড়ো,” বললাম আমি।

“দেখো সুমাইয়া, পরিবারের পছন্দে আমি বিয়ে করি, বউ মানি, সংসার করি। আমার শেখ ছিলো প্রেম করে বিয়ে করার। কিন্তু প্রেমটা হয়নি। আমার ভালো লাগতো না কাউকে আর যাকে লাগতো তাকে বলার সাহস পেতাম না। আচমকা একদিন তোমাকে দেখে আমি প্রেমে পড়ি, ভালোবাসি। এতটা ভালোবাসি যে, ছলচাতুরী করে তোমাকে সত্যি লুকিয়ে বিয়ে করি। তারপর তোমাকে হারানোর ভয়ে সব লুকিয়ে রাখি। আমি জানি আমার সব অপরাধ, তবু ভালোবাসা আর তোমার প্রতি যে টান, তা একটু দেখো। আমাকে শাস্তি দিও না। প্লিজ। আমি মরে যাব। একটা বাচ্চা আছে, তাকেও ছাড়তে পারব না। তোমাকে ছাড়ার কথা তো ভাবতেও পারব না। এই আর কদিন—প্যারিস চলে যাব। থাকব তুমি আর আমি।”

রোশানের কথা অসহ্য লাগতে লাগল। দুই বউকে একসাথে রাখতে চাচ্ছে! আমি দম বন্ধ হয়ে ম*রে যাব তবু তার বউ আছে জেনে তার সঙ্গে থাকব না।
অন্য একজন মেয়ে উড়ে এসে বসে আমার আগের সংসার নষ্ট করছে—এটা আমি মানতে পারি না।আর আমিও জেনেশুনে কেন আরেকজনের সংসার নষ্ট করব?
ওই মেয়েদের কাতারে আমার নাম লেখাতে চাই না।

চলমান….!